Loading AI tools
চিত্রের ক্রম যা আন্দোলনের ছাপ প্রদান করে উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চলচ্চিত্র এক প্রকারের দৃশ্যমান বিনোদন মাধ্যম। চলমান চিত্র তথা "মোশন পিকচার" থেকে চলচ্চিত্র শব্দটি এসেছে। এটি একটি বিশেষ শিল্প মাধ্যম। বাস্তব জগতের চলমান ছবি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করে বা এনিমেশনের মাধ্যমে কাল্পনিক জগৎ তৈরি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। চলচ্চিত্রের ধারণা অনেক পরে এসেছে, ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে। আর এনিমেশন চিত্রের ধারণা এসেছে আরও পরে। বাংলায় চলচ্চিত্রের প্রতিশব্দ হিসেবে ছায়াছবি, সিনেমা, মুভি বা ফিল্ম শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়।
চলচ্চিত্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ। যে সংস্কৃতিতে তা নির্মিত হয় তাকেই প্রতিনিধিত্ব করে চলচ্চিত্রটি। শিল্পকলার প্রভাবশালী মাধ্যম, শক্তিশালী বিনোদন মাধ্যম এবং শিক্ষার অন্যতম সেরা উপকরণ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে চলচ্চিত্রের। ছায়াছবির সাথে ভিজ্যুয়াল বিশ্বের সমন্বয় থাকায় সাধারণ মানুষের সাথে সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। অন্য কোন শিল্পমাধ্যম সাধারণের সাথে এতোটা যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম নয়। অন্য ভাষার চলচ্চিত্রের ডাবিং বা সাবটাইটেল করার মাধ্যমে নিজ ভাষায় নিয়ে আসার প্রচলনও রয়েছে।
প্রথাগতভাবে চলচ্চিত্র নির্মিত হয় অনেকগুলো একক ছবি তথা ফ্রেমের ধারাবাহিক সমন্বয়ের মাধ্যমে। এই স্থিরচিত্রগুলি যখন খুব দ্রুত দেখানো হয় তখন দর্শক মনে করেন তিনি চলমান কিছু দেখছেন। প্রতিটি ছবির মাঝে যে বিরতি তা একটি বিশেষ কারণে দর্শকের চোখে ধরা পড়ে না। ধরা না পড়ার এই বিষয়টাকে দৃষ্টির স্থায়িত্ব বলে। সহজ কথা বলা যায়, ছবির উৎস সরিয়ে ফেলার পরও এক সেকেন্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগ সময় ধরে দর্শকের মনে তার রেশ থেকে যায়। এভাবে চলমান ছবির ধারণা লাভের বিষয়টাকে মনোবিজ্ঞানে বিটা চলন নামে আখ্যায়িত করা হয়।
কৃত্রিমভাবে দ্বিমাত্রিক চলমান ছবি তৈরির কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৮৬০-এর দশকে। তখন জোট্রোপ এবং প্র্যাক্সিনোস্কোপ নামক যন্ত্র দিয়ে এ ধরনের ছবি তৈরি করা যেতো। একেবারে সাধারণ আলোক যন্ত্রের (ম্যাজিক লণ্ঠন) উন্নতি সাধন করে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল। এগুলোর মাধ্যমে ধারাবাহিক কতগুলো স্থিরচিত্র একটার পর একটা এতো দ্রুত পরিবর্তন করা যেতো যে দর্শকের চোখে পরিবর্তন খুব একটা ধরা পড়তো না। ছবিগুলোকে খুব যত্ন সহকারে ডিজাইন করতে হতো যাতে কোন খুঁত না থাকে। এই ধারণাটিই পরবর্তীকালে এনিমেশন চিত্র নির্মাণের মূলনীতি হয়ে দেখা দিয়েছিলো।
স্থির চিত্রগ্রহণে সেলুলয়েড ফিল্ম আসার পর চলমান বস্তুর সরাসরি ছবি তোলা সম্ভব হলো। প্রাথমিক যুগে একটি ড্রামের মধ্যে বেশ কিছু ছবি লাগিয়ে ড্রামটিকে জোড়ে ঘুরানো হতো। একটা বিশেষ দিক থেকে দর্শক ড্রামের দিকে তাকালে চলমান চিত্র দেখতে পেতো। ড্রামের গতি ছিল সাধারণত সেকেন্ডে ৫ বা ১০ বার এবং ড্রামগুলো কয়েনের মাধ্যমে অর্থ আদায় করতো। ১৮৮০'র দশকে চলচ্চিত্র ক্যামেরা উদ্ভাবিত হয়। এর মাধ্যমে অনেকগুলো স্থিরচিত্রকে একটি মাত্র রিলে সংরক্ষণ করা যেতো। এই রিলগুলোকে পরবর্তীতে চলচ্চিত্র রূপে দেখানো হতো প্রজেক্টরের মাধ্যমে। প্রজেক্টরের আলো রিলের উপর ফেলা হতো এবং রিলের ছবিগুলোকে বিবর্ধিত করে একটি বড় পর্দার উপর ফেলা হতো যা দর্শকরা দেখতে পেতো। প্রথম দিককার চলচ্চিত্রগুলো সবই ছিল বাস্তব ঘটনার সরাসরি দৃশ্যায়ন এবং প্রদর্শন। সেখানে কোন সম্পাদনা বা চলচ্চিত্ররূপী উপস্থাপনার সুযোগ ছিল না।
১৮৯৪ সালের দিকেই ডিকসন শব্দ এবং ছবি একসাথে ধারণের পরীক্ষা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার সে প্রচেষ্টাকে এড়িয়ে গিয়ে নির্বাক চলচ্চিত্র প্রাধান্য বিস্তার করে এবং জনমনে বিশেষ ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতকের শেষ পর্যন্ত নির্বাক চলচ্চিত্রই ছিল একমাত্র চলমান শিল্প মাধ্যম। বিংশ শতকের শুরুতে চলচ্চিত্র বর্ণনামূলক ধারায় রূপ নিতে শুরু করে। অনেকগুলো দৃশ্যকে একসাথে জোড়া লাগিয়ে এবং প্রত্যেকটির জন্য বর্ণনাভঙ্গি নির্দিষ্ট করে, প্রচার করা হতে থাকে। ধীরে ধীরে দৃশ্যগুলোকে বিভিন্ন আক্র এবং কোণ থেকে নেয়া অনেকগুলো শটে ভাগ করা হয়। এছাড়া চলমান ক্যামেরার মাধ্যমে চলচ্চিত্র গল্প ফুটিয়ে তোলার কৌশল আবিষ্কৃত হয়। তখনও ছবি নির্বাক ছিল। কিন্তু, প্রতিটি শটের সাথে মিল রেখে সঙ্গীত এবং বাজনা বাজানোর জন্য সিনেমা হলে বা মঞ্চে অর্কেস্ট্রা দল থাকতো। বড় বড় প্রযোজনা কোম্পানিগুলো এসবের ব্যবস্থা করতো।
হলিউডের উত্থানের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্র বিকশিত হয়ে উঠলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইউরোপে এই শিল্পটি ততোটা বিকশিত হয়ে উঠতে পারেনি। অবশ্য ১৯২০-এর দশক থেকে সের্গে আইজেনস্টাইন, এফ ডব্লিউ মার্নো এবং ফ্রিৎস ল্যাং এর মতো ইউরোপীয় পরিচালকরা ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ, চার্লি চ্যাপলিন, বুস্টার কিটন প্রমুখ মার্কিন পরিচালক ও অভিনেতাদের সাথে মিলে ইউরোপে চলচ্চিত্র বিস্তারের কাজ শুরু করেন। এই দশকেই প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে চলচ্চিত্রের শটগুলোর সাথে ঐকতান বজায় রেখে শব্দ, সঙ্গীত এবং কথোপকথন যুক্ত করা সম্ভব হয়। উদ্ভব হয় সবাক চলচ্চিত্রের। ইংরেজতে এগুলোকে "টকিং পিকচার" বা সংক্ষেপে "টকি" (talky) বলা হতো।
এর পরে চলচ্চিত্র শিল্পে সবচেয়ে বড় সংযোজন ছিল "প্রাকৃতিক রঙ" যুক্ত করা। শব্দ যুক্ত করার পর খুব দ্রুত নির্বাক চলচ্চিত্র এবং মঞ্চের বাদ্য-বাজনা বিলীন হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সাদাকালোর বদলে চলচ্চিত্র রঙের ব্যবহার করার প্রচলন অনেক ধীরে ধীরে হয়েছে। এর মূল কারণ ছিল রঙিন চলচ্চিত্রের খরচ এবং সামঞ্জস্য। প্রথমদিকে সাদা-কালো এবং রঙিন চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম ছিল। কিন্তু ক্রমাগত বেশি বেশি রঙিন চলচ্চিত্র নির্মিত হতে থাকে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় রঙিন চলচ্চিত্রই প্রাধান্য বিস্তার করে। কারণ প্রযোজকরা বুঝতে পারছিলেন, রঙিনের দিকে দর্শকদের ঝোঁক বেশি। আরও একটি কারণ ছিল, টেলিভিশন ১৯৬০-এর দশকের আগে রঙিন হয়নি। তাই টিভির সাদাকালোকে হারানোর জন্য চলচ্চিত্র রঙের সংযোজন আবশ্যক ছিল। ১৯৬০-এর দশকের পরে রঙিন চলচ্চিত্রই নির্মাতাদের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠে।
১৯৬০ এর দশকে স্টুডিও পদ্ধতির পতনের পর কয়েক দশক জুড়ে চলচ্চিত্র জগতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে চলচ্চিত্র শিক্ষা গুরুত্ব অর্জন করে। নব হলিউড, ফরাসি নবকল্লোল এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র স্কুলের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটি ত্বরান্বিত হয়। আর ১৯৯০-এর দশকের পর ডিজিটাল প্রযুক্তি চলচ্চিত্র নির্মাণের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠে।
এই চলচ্চিত্রের সুসংক্ষিপ্ত, সুষ্ঠু এবং পদ্ধতিগত ধারণা তৈরি করার নামই চলচ্চিত্র তত্ত্ব। এসব তত্ত্বের মূল উদ্দেশ্য চলচ্চিত্রকে একটি শিল্প হিসেবে অধ্যয়নের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা। Ricciotto Canudo ১৯১১ সালে প্রকাশিত তার "The Birth of the Sixth Art" নামক মেনিফেস্টোতে প্রথম চলচ্চিত্র তত্ত্বের উল্লেখ করেন। এরপরে ফর্মালিস্ট তত্ত্ব দিয়ে এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন Rudolf Arnheim, Béla Balázs এবং Siegfried Kracauer। এই তাত্ত্বিকেরা চলচ্চিত্রকে দেখেছেন বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন একটি প্রকৃত শিল্প মাধ্যম হিসেবে। André Bazin এই তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, চলচ্চিত্রের সার্থকতা যান্ত্রিক উপায়ে বাস্তবতাকে পুনঃনির্মাণ করার মধ্যে নিহিত। বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা কখনও চলচ্চিত্রের লক্ষ্য হতে পারে না। এই চিন্তাধারার ফলে চলচ্চিত্র রিয়েলিস্ট তথা বাস্তবিকতা তত্ত্বের জন্ম হয়। বর্তমানে Lacan এর মনোবিশ্লেষণ এবং Ferdinand de Saussure এর সেমিওটিক্স এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র নতুন কিছু তত্ত্বের জন্ম হয়েছে। এগুলো হল মনোবিশ্লেষণমূলক চলচ্চিত্র তত্ত্ব, স্ট্রাকচারালিস্ট চলচ্চিত্র তত্ত্ব, নারীবাদী চলচ্চিত্র তত্ত্ব ইত্যাদি।
ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে চলচ্চিত্রের আবির্ভাব হয়। ১৯০০ এর দশকের প্রথম দিকে চলচ্চিত্রের প্রথমদিকের শৈল্পিক সমালোচনার আবির্ভাব হয়। চলচ্চিত্র সমালোচনার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় দ্য অপটিক্যাল ল্যান্টার্ন এণ্ড সিনেমাটোগ্রাফ নামক সাময়িকীতে, পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে বায়োস্কোপ পত্রিকা চলচ্চিত্র সমালোচনা প্রকাশ করে।[1]
প্রাচীনকাল থেকে শিল্প হিসেবে সংগীত, সাহিত্য, চিত্রকর্মের অস্তিত্ব থাকলেও চলচ্চিত্র তুলনামূলকভাবে নতুন ধরনের শিল্প। এজন্য চলচ্চিত্র নিয়ে প্রথমদিককার রচনাগুলোতে এটা নিয়েই যুক্তি দেখানো হত যে চলচ্চিত্রকেও শিল্প হিসেবে সম্মান করা যেতে পারে। ১৯১১ সালে রিকশিওত্তো ক্যানুডো একটি ইসতেহার লেখেন যেখানে চলচ্চিত্রকে ষষ্ঠ শিল্প (পরবর্তীতে "সপ্তম শিল্প") হিসেবে দাবি করা হয়।[2] এরপরও কয়েক দশক ধরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত শিল্পের চেয়ে চলচ্চিত্রকে কম সম্মানের শিল্প হিসেবে মূল্যায়ন করা হত।[3]
বিষয়বস্তু, পরিপ্রেক্ষিত, পটভূমি আর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে যেকোন সাহিত্য মাধ্যমেরই ধরন নির্দিষ্ট করা যায়। চলচ্চিত্রেরও এরকম কিছু ধরন রয়েছে যাদেরকে ইংরেজিতে জনরা (genre) বলে। এই ধরনগুলো মূলত সারণীকরণের মাধ্যমে করা হয়। ধরন দিয়ে একটি চলচ্চিত্রকে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। একটি চলচ্চিত্র আবার একাধিক ধরনের মধ্যে পড়তে পারে। জনপ্রিয় কিছু ধরনের মধ্যে রয়েছে হরর, রোমাঞ্চ, অ্যাকশন, থ্রিলার, ঐতিহাসিক, মহাকাব্যিক, রূপকথা, অপরাধ, কমেডি ইত্যাদি।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.