আওরঙ্গজেব
ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট / From Wikipedia, the free encyclopedia
আওরঙ্গজেব[2] বা ঔরঙ্গজেব[3] (ফার্সি: اورنگزیب) আস-সুলতান আল-আজম ওয়াল খাকান আল-মুকাররম আবুল মুজাফফর মুহি উদ-দিন মুহাম্মাদ আওরঙ্গজেব [4] বাহাদুর আলমগীর, বাদশাহ গাজী, (প্রথম আলমগীর নামেও পরিচিত)।[5] (ফার্সি: محي الدين محمد), (৩ নভেম্বর ১৬১৮ – ৩ মার্চ ১৭০৭)[1] ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪৯ বছর মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রায় সম্পূর্ণ ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছিলেন[6][7][8] তার ফতোয়া-ই-আলমগীরীর শরিয়াহ আইন এবং ইসলামি অর্থনীতির মাধ্যমে।[6][7][9][10] তিনি ছিলেন বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর এবং শাহ জাহানের পরে ষষ্ঠ মুঘল সম্রাট। তিনি সম্রাট শাহজাহানের পুত্র। তিনি একজন দক্ষ সামরিক নেতা ছিলেন[11] যার শাসন প্রশংসার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও তাকে ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত শাসক হিসাবেও বর্ণনা করা হয়েছে।[12] তিনি ইংরেজদের পরাজিত করেছিলেন ইঙ্গ-মুঘল যুদ্ধে।[13][14]
আবু মুজাফ্ফর মহিউদ্দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব আলমগীর | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মুঘল সাম্রাজ্যের বাদশা আওরঙ্গজেব আলমগীর শাহিন শাহ-ই-সল্তনাত আল হিন্দীয়া ওয়াল মগূলীয়া | |||||||||
৬ষ্ঠ মুঘল সম্রাট | |||||||||
রাজত্ব | ৩১শে জুলাই ১৬৫৮ – ৩ মার্চ ১৭০৭ | ||||||||
রাজ্যাভিষেক | ১৩ই জুন ১৬৫৯ শালিমার, দিল্লী | ||||||||
পূর্বসূরি | শাহ জাহান | ||||||||
উত্তরসূরি | মুহাম্মদ আজম শাহ বাহাদুর শাহ | ||||||||
জন্ম | মুহি উদ-দিন মুহাম্মদ[1] (১৬১৮-১১-০৩)৩ নভেম্বর ১৬১৮ দাহোদ, মুঘল সাম্রাজ্য (বর্তমান গুজরাত, ভারত) | ||||||||
মৃত্যু | ৩ মার্চ ১৭০৭ আহমেদনগর, মুঘল সাম্রাজ্য (বর্তমান মহারাষ্ট্র, ভারত) | ||||||||
সমাধি | |||||||||
পত্নী | দিলরাস বানু বেগম | ||||||||
স্ত্রী | নবাব বাই বেগম আওরঙ্গবাদী মহল উদাইপুরী মহল | ||||||||
বংশধর |
| ||||||||
| |||||||||
রাজবংশ | তৈমুরীয় | ||||||||
পিতা | শাহ জাহান | ||||||||
মাতা | মুমতাজ | ||||||||
ধর্ম | ইসলাম |
আওরঙ্গজেব কুরআনের একজন হাফেজ ছিলেন এবং সম্রাট হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাধারণভাবে জীবনযাপন করেছেন।[15][16][17] তিনি টুপি এবং নিজের হাতের লিখা কুরআন বিক্রি করতেন আর রাজ্যের সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন না।[18][19]
মুঘল সম্রাট হিসেবে আওরঙ্গজেবের শাসনকালে বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের সীমানা বহুদূর বিস্তৃত হয়।[20][21] তার আমলে দক্ষিণাঞ্চলে ৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার ভূখণ্ড মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।[22] ১৫ কোটি ৮৯ লক্ষ প্রজাকে তার শাসনাধীন ছিল।[23] তার সময় মুঘল সাম্রাজ্যের বাৎসরিক করের পরিমাণ ছিল ৪৫০ মিলিয়ন ডলার, যা তার সমসাময়িক চতুর্দশ লুইয়ের আমলে ফ্রান্সের বাৎসরিক কর এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছিল।[24] তার শাসনামলে ভারত চীনকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে গড়ে উঠেছিল। যার পরিমাণ ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলার, ১৭০০ সালে সমগ্র পৃথিবীর মাথাপিছু আয়ের এক চতুর্থাংশ।[25]
আওরঙ্গজেব শাসক হিসেবে বিতর্কিত এবং সমালোচিত ছিলেন।[26] তার পূর্বসূরীদের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি উপেক্ষা করে তিনি ভারতে জিজিয়া করের প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি মারাঠা সাম্রাজ্যের শাসক সম্ভাজিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।[27][28] তিনি নবম শিখ গুরু তেগ বাহাদুরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন[29] কারও কারও মতে তার আমলে অনেক হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে তার হিন্দু মন্দির ধ্বংসের বিষয়টি অতিরঞ্জিত।[30][31] শুধু তাই নয় তিনি মন্দির নির্মাণে অর্থ অনুদানও করেছিলেন।[32] তার আমলে তার পূর্বসূরীদের তুলনায় প্রশাসনে মুঘল প্রশাসনের সর্বোচ্চ সংখ্যক হিন্দু কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল।[33] তিনি শিয়া মুসলিম এবং হিন্দুদের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধচারণ করেন।[33] ভারতীয় দার্শনিক শিবলী নোমানী আওরঙ্গজেব পর এক নজর রচনার মাধ্যমে তার উপর উত্থাপিত সকল অভিযোগের জবাব প্রদান করেন।
তার মৃত্যুর পর ভারতের মধ্যযুগীয় যুগ শেষ হয় এবং ইউরোপীয় আক্রমণ শুরু হয়। আওরঙ্গজেবকে প্রায়ই আমিরুল মুমিনিন (বিশ্বাসীদের নেতা) ডাকা হয় এবং উমর ইবনুল খাত্তাব ও সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুবের মত বিশিষ্ট খলিফাদের সাথে তুলনা করা হয়।[34][35]