শিবলী নোমানী
ব্রিটিশ ভারতীয় কবি, দার্শনিক, ইতিহাসবেত্তা, জীবনীকার, সাহিত্য সমালোচক, বাগ্মী ও ইসলামি পণ্ডিত / From Wikipedia, the free encyclopedia
শিবলী নোমানী (উর্দু: شبلی نعمانی; ১ জুন ১৮৫৭ – ১৮ নভেম্বর ১৯১৪; শিবলী নামে পরিচিত[1]) ছিলেন বিভাগপূর্ব ভারতের একজন কবি, দার্শনিক, ইতিহাসবেত্তা, প্রাবন্ধিক, জীবনীকার, সাহিত্য সমালোচক, বাগ্মী এবং ইসলামি পণ্ডিত। তিনি উর্দু ভাষায় আধুনিক ইতিহাস লিখনধারা'র জনক হিসেবে বিবেচিত।[2][3] তাকে উর্দু সাহিত্যের পঞ্চভিত্তির একজন ধরা হয় এবং উর্দু সাহিত্যে তিনিই প্রথম ঐতিহাসিক সমালোচক। সাহিত্যের সকল শাখায় তার পদচারণা রয়েছে। আলিগড় কলেজে অধ্যাপনা জীবনের শুরুতে সৈয়দ আহমদ খানের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি আলিগড় আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেন। পরবর্তীতে তিনি এই আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে নদওয়াতুল উলামার সাথে যুক্ত হন।[4] তিনি দেওবন্দি মতাদর্শের সমর্থক ছিলেন।[5] তিনি ইসলামের অতীত ঐতিহ্যকে ঠিক রেখে আধুনিক চিন্তাধারার সাথে সমন্বয়ের প্রয়াস পেয়েছিলেন। ১৯১০ থেকে ১৯৩৫ পর্যন্ত উর্দুতে যে ইসলামি সাহিত্য সৃষ্টি হয় অনেকাংশেই তা শিবলীর প্রাচীন ও আধুনিকের সমন্বয় সাধনের ফল।[6] শেষজীবনে রচিত সীরাতুন নবী তার সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা। বিদ্যাবত্তার স্বীকৃতি স্বরুপ উসমানি খেলাফত তাকে ‘তমঘায়ে মজিদি’ এবং ব্রিটিশ সরকার ‘শামসুল উলামা’ উপাধি প্রদান করে।
শামসুল উলামা, তমঘায়ে মজিদি আল্লামা শিবলী নোমানী | |
---|---|
شبلی نعمانی | |
অধ্যাপক, মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ | |
কাজের মেয়াদ ১৮৮২ – ১৯৯৮ | |
শিক্ষাসচিব, দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা | |
কাজের মেয়াদ ১৯০৫ – ১৯১৩ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | (১৮৫৭-০৬-০১)১ জুন ১৮৫৭ আজমগড়, উত্তরপ্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১৮ নভেম্বর ১৯১৪(1914-11-18) (বয়স ৫৭) |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
দাম্পত্য সঙ্গী | মাজিদুন্নেসা (বি. ১৮৭৬) |
সন্তান | ৩ |
ওয়েবসাইট | shibliacademy |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
পিতামাতা |
|
আখ্যা | সুন্নি |
বংশ | রাজপুত |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন |
|
প্রধান আগ্রহ | |
উল্লেখযোগ্য কাজ | |
শিক্ষক |
|
ঊর্ধ্বতন পদ | |
শিষ্য
| |
যার দ্বারা প্রভাবিত
| |
যাদের প্রভাবিত করেন | |
সাহিত্যকর্ম | সীরাতুন নবী (১৯১৪) |
তিনি ১৮৫৭ সালে আজমগড়ে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে কয়েকটি মাদ্রাসায় পড়ার পাশাপাশি তিনি আহমদ আলী সাহারানপুরির নিকট হাদিস অধ্যয়ন করেছেন। ১৮৮২ সালে আলিগড় কলেজে তার অধ্যাপনা জীবনের শুরু। অধ্যাপনা জীবনে সৈয়দ আহমদ খান ও টমাস ওয়াকার আর্নল্ডের সাথে সুসম্পর্কের কারণে তিনি উপকৃত হয়েছিলেন। ১৮৮৩ সালে তিনি একটি জাতীয় স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে শিবলী জাতীয় কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৮৮৮ সাল থেকে প্রবন্ধ ও কবিতা রচনার মাধ্যমে তার সাহিত্য সাধনা শুরু হয়। ১৮৯২ সালে তিনি তুরস্ক সহ কয়েকটি মুসলিম দেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি আলিগড়ে অধ্যাপনা করেছেন। এসময়ে তিনি আল মামুন, সীরাতুন নোমান, আল ফারুকের মত জীবনী সাহিত্য সৃষ্টি করেন। সৈয়দ আহমদ খানের মৃত্যুর পর তিনি আলিগড়ের অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ১৯০১ সালে তিনি দাইরাতুল মাআরিফ নামক গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন। একইসাথে তিনি আঞ্জুমানে তারাক্কিয়ে উর্দুর মহাসচিব ছিলেন। আল গাজ্জালী, ইলমুল কালাম সহ পাঁচটি গ্রন্থ রচনা করেন এখানে। সেখানে তিনি একটি প্রাচ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও সম্পন্ন করেছিলেন। হায়দ্রাবাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে ১৯০৫ সালে তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় চলে এসে শিক্ষা সচিব হিসেবে যোগদান করেন। তার আমলে নদওয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার আনয়ন করেন। ১৯০৬ সালে তিনি তার বিখ্যাত ফার্সি কাব্যগ্রন্থ শেরুল আজম রচনা করেন। এসময়ে তিনি আন নদওয়া নামক একটি উচ্চমানের সাহিত্য পত্রিকাও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৩ সালে নদওয়া থেকে পদত্যাগ করে তিনি মাদরাসাতুল ইসলাহ ও দারুল মুসান্নিফীন প্রতিষ্ঠা করেন। এসময়ে তিনি সীরাতুন নবী রচনার কাজ শুরু করেন। ২ খণ্ড রচনার পর ১৯১৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার অন্তিম ইচ্ছানুসারে তারই ছাত্র সুলাইমান নদভী ৭ খণ্ডে এটি সমাপ্ত করেন। সর্ব-ইসলামবাদের সমর্থক হিসেবে তিনি উসমানি খেলাফতের সমর্থন করতেন। ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলিমের ঐক্য প্রত্যাশী হিসেবে তিনি কংগ্রেসের সমর্থক এবং মুসলিম লীগের সমালোচক ছিলেন। ১৯৯২ সালে তার সম্মানে পাকিস্তান সরকার একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। তার জীবনকর্মের উপর সুলাইমান নদভীর রচিত হায়াতে শিবলী অন্যতম।