হাদিস
ইসলামের নবীর বাণী ও শিক্ষার সংকলন / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইসলামে হাদিস, (আরবি: حديث: হ্যদীথ়) যার আক্ষরিক অর্থে "কথা" অথবা "বক্তৃতা" [1] বা আসার/আছার (আরবি: أثر আথ়ার) যার আক্ষরিক অর্থে "ঐতিহ্য"[2] বলতে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ সা– এর কথা, কাজ ও নীরব অনুমোদন বুঝানো হয়, যা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের শৃঙ্খলের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অন্য ভাষায়, মুহাম্মাদ সা. যা বলেছিলেন; যা করেছিলেন এবং যে কাজ দেখার পর নীরবতা অবলম্বন করেছিলেন, তাই হাদিস। হাদিস হলো পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা সরূপ। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে: "তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্য আপনি দ্রুত ওহী আবৃত্তি করবেন না; কারণ এর সংরক্ষণ এবং পাঠ আমাদের দায়িত্বে। অতঃপর আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠ অনুসরণ করুন। এরপর তা ব্যাখ্যা করা আমাদের দায়িত্ব।" [3] [4]
হাদিসকে ইসলামি সভ্যতার 'মেরুদন্ড' বলা হয়[5] এবং ইসলামে ধর্মীয় আইন ও নৈতিক দিকনির্দেশনার উৎস হিসাবে হাদিসের কর্তৃত্ব কুরআনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।[6] মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, হাদিসের শাস্ত্রীয় কর্তৃত্ব এসেছে মূলত কুরআন থেকে। কারণ কুরআনে মুসলিমদের মুহাম্মদ সা.–কে অনুকরণ করতে ও তার রায় মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (যেমন ২৪:৫৪, ৩৩:২১ নং আয়াতে )। এ জন্যই মুসলমানরা হাদিসকে ইসলামি আইনশাস্ত্রের চারটি উৎসের একটি মনে করে ( অপর তিনটি হল: কুরআন, ইজমা ও কিয়াস)।[7]
কুরআনে ইসলামি আইন সম্পর্কিত আয়াতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। হাদিসে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার বিবরণ (যেমন: গোসল বা অজু )[8] থেকে শুরু করে সালাতের সঠিক ধরন ও দাসদের প্রতি দানশীলতার গুরুত্ব পর্যন্ত সব কিছুরই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।[9][10] এভাবে শরীয়তের (ইসলামি আইন) নিয়মের "বৃহৎ অংশ" কুরআনের সাথে সাথে হাদিস থেকে নেওয়া হয়েছে।[11][টীকা 1]
হাদিস মূলত আরবি শব্দ, যার অর্থ বক্তৃতা, প্রতিবেদন, হিসাব, বর্ণনা ইত্যাদি।[13][14]:৪৭১ পবিত্র কুরআনের বিপরীতে সমস্ত মুসলমান বিশ্বাস করেন না যে, হাদিস (বা অন্তত সব হাদিস নয়) ঐশ্বরিক উদ্ঘাটন।[15] বরং কিছু মুসলিম বিশ্বাস করে, ইসলামি নির্দেশনা শুধুমাত্র কুরআনের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত এবং এভাবে তারা হাদিসের কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করেন। অনেকে দাবি করেন যে, বেশিরভাগ হাদিসই বানোয়াট,[16] যা ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছে এবং এগুলোর জন্য মুহাম্মাদ সা.-কে মিথ্যাভাবে দায়ী করা হয়েছে।[17][18][16] তবে তাদের এই ধারণা ও বিশ্বাস বৃহত্তর ইসলামি সমাজে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং হাদিসের প্রামাণ্যতা বিষয়ে যুগে যুগে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে।[7]
কিছু হাদিসে সন্দেহজনক ও এমনকি পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্যে হাদিসের প্রমাণীকরণ ইসলামে অধ্যয়নের একটি প্রধান ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।[19] শাস্ত্রীয় আকারে একটি হাদীসের দুটি অংশ আছে: সনদ ( বা বর্ণনাকারীদের শৃঙ্খল, যারা হাদিস বর্ণনা করেছেন) মতন ( হাদিসের মূল পাঠ)।[20][21][21] [22][23] স্বতন্ত্র হাদিসকে মুসলিম ধর্মগুরু ও আইনবিদগণ "সহিহ" (প্রমাণিক), "হাসান" ( মধ্যম মানসম্পন্ন) এবং "জয়িফের" (দুর্বল) মতো শ্রেণীতে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন।[24] যাহোক, ভিন্ন দল ও ভিন্ন আলেম একটি হাদিসকে ভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করতে পারেন।
সুন্নি ইসলামের পণ্ডিতদের মধ্যে হাদিস শব্দটি শুধুমাত্র মুহাম্মদের কথা, উপদেশ, অনুশীলন ইত্যাদিই নয়; এটি তাঁর সাহাবীদের কথা, উপদেশ ও অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত করে।[25][26] শিয়া ইসলামে হাদিস হলো, সুন্নাহের মূর্ত প্রতীক, যা মুহাম্মাদ সা. ও তার পরিবার আহল আল-বাইতের (বারো ইমাম ও মুহাম্মদের সা. কন্যা ফাতিমা) কথা, কাজ ও অনুশীলন।[27]