জিজিয়া কর
অমুসলিমদের উপর ইসলামী কর / From Wikipedia, the free encyclopedia
জিজিয়া (আরবি: جزية, প্রতিবর্ণীকৃত: jizyah, আইপিএ: [dʒizja], জিজ়্য়াঃ) হলো ইসলামি রাষ্ট্রে ইসলামি আইনের অনুকূলে স্থায়ীভাবে বসবাসরত অমুসলিমদের জনপ্রতি বাৎসরিক ধার্যকৃত কর।[1][2][3] মুসলিম ফকীহগণের অভিমত এই যে, অমুসলিমদের মধ্যে করদাতাকে প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, কর্মক্ষম পুরুষ হতে হবে।[4] এই কর থেকে মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, উন্মাদ, দাসদের নিস্কৃতি দেয়া হয়েছে।[5][6][7][8][9] পাশাপাশি মুস্তামিন – মুসলিম দেশে আশ্রয় নেওয়া অমুসলিম বিদেশী, [5][10] সামরিক বাহিনীতে যোগদানে ইচ্ছুক অমুসলিম [1][6][11][12] এবং কর প্রদানে অসমর্থ ও অক্ষদের এই কর থেকে নিস্কৃতি দেওয়া হয়েছে।[6][13][14]
হাদিসেও জিজিয়া কর সম্পর্কে উল্লেখ আছে, কিন্তু পরিমাণ উল্লেখ নেই।[15] ফকীহগণ এই বিষয়ে একমত যে, পূর্বে মুসলিম শাসকরা বাইজেন্টাইন এবং সাসানীয় সাম্রাজ্যে এটি আদায় করতেন।[10][16][17][18][19]
ইসলামি ইতিহাসে এর প্রয়োগ বিভিন্ন রকম দেখা যায়। অনেক সময় জিজিয়াকে খারাজ এর সাথে সাধারণ কর হিসাবে আদায় করা হয়েছে।[20][21][22] এবং ইসলামি রাজনীতিতে রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস ছিল।[23] জিজিয়া কর করদাতার সামর্থ্য অনুসারে বাৎসরিকভাবে নির্ধারিত হত।[24] বিভিন্ন সময় স্থান, কাল ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ভিন্ন সময় ধার্যকৃত কর এর পরিমাণ ভিন্ন হয়েছে।[1][25][26][27][28]
এ প্রসঙ্গে কুরআনের সুরা তওবার ২৯ আয়াতে বলা হয়েছে,
“তোমরা লড়াই করো আহলে কিতাবের সেসব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দীন (জীবনব্যবস্থা) গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিযিয়া দেয়।”[কুরআন ৯:২৯][29]
উসমানীয় তুরস্কে ১৯শ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত জিজিয়া বলবৎ ছিল। মুসলমানদের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বিভাগে যোগদান করতে হতো বলে তার পরিবর্তে অমুসলমানদের ওপর একটি কর ধার্য করা হয়। কিন্তু সকল ধর্মের নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক পেশা প্রবর্তিত হওয়ার পর এই করেরও বিলোপ হয়। মধ্য যুগে পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম শাসিত দেশেও অমুলমানদের ওপর জিজিয়া কর ধার্য করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে আকবর এটা রহিত করেন, কিন্তু সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে এটা পুনঃপ্রবর্তিত হয়।