কৃত্তিবাসী রামায়ণ
রামায়ণের একটি বাংলা অনুবাদ / From Wikipedia, the free encyclopedia
পঞ্চদশ শতাব্দীর বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝা কর্তৃক বাংলা ভাষায় অনূদিত রামায়ণ কৃত্তিবাসী রামায়ণ বা শ্রীরাম পাঁচালী নামে পরিচিত। কৃত্তিবাসী রামায়ণ-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি পাঁচালীর আকারে পয়ার ছন্দে রচিত এবং মূল সংস্কৃত রামায়ণের আক্ষরিক অনুবাদ নয়। উপরন্তু কৃত্তিবাস রামায়ণ-বহির্ভূত অনেক গল্প এই অনুবাদে গ্রহণ করেছিলেন। তদুপরি, তিনি বাংলার সামাজিক রীতিনীতি ও লৌকিক জীবনের নানা অনুষঙ্গের প্রবেশ ঘটিয়ে তিনি বাল্মীকি-রামায়ণ উপাখ্যানের বঙ্গীকরণ করেন, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত বাল্মিকী রামায়ণ অপেক্ষা ভিন্ন। যেমন রামায়ণের মূল রচয়িতা বাল্মিকী তাঁর রচনায় রামচন্দ্রকৃত দুর্গাপূজার কথা উল্লেখ করেন নি, এমনকি রামায়ণের অন্য কোনো অনুবাদেও তা দেখা যায় না। কিন্তু কৃত্তিবাস ওঝা তার রামায়ণে এটি কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি রামায়ণের চরিত্রগুলো তৎকালীন সাধারণ বঙ্গীয় সমাজের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন, যা বাল্মিকী রামায়ণে বর্ণিত একই চরিত্রের সাথে একই রকম নয়।
কৃত্তিবাসী রামায়ণ | |
---|---|
শ্রীরামপাঁচালী | |
সম্পূর্ণ নাম | শ্রীরামপাঁচালী |
অপর নাম | কৃত্তিবাসী রামায়ণ |
রচয়িতা | কৃত্তিবাস ওঝা |
পৃষ্ঠপোষক | "গৌড়েশ্বর" |
ভাষা | বাংলা |
রচনাকাল | খ্রিস্টীয় ১৪শ-১৫শ শতাব্দী |
রচনাস্থল | ফুলিয়া গ্রাম (অধুনা নদিয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ) |
পুথি | বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পুথি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথি, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথি |
প্রধান পুথি | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথি (সংখ্যা২০৮) |
প্রথম মুদ্রিত সংস্করণ | ১৮০২ |
বর্গ | মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য, ভাবানুবাদ |
Verse form | পয়ার ও ত্রিপদী |
বিষয় | রামায়ণ |
Setting | প্রাচীন ভারত |
চরিত্র | রাম, লক্ষ্মণ, সীতা, রাবণ, বিভিষন,অঙ্গদ,সুষেন, সুগ্ৰীব,ওহিরাবন,মহিরাবন,ধুম্র,ধুমাষ্ম,অকম্পন,তরনী সেন,প্রহস্থ,দেবান্তক,নরান্তক,এশিরা,অতিকায়,নল,নীল,কুম্ভ,নিকুম্ভ,হনুমান |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, এই কাব্যে "প্রাচীন বাঙালি সমাজই আপনাকে ব্যক্ত করিয়াছে।" বাঙালি সমাজে এই বইটি ব্যাপক জনপ্রিয় এবং বাংলার ঘরে ঘরে পঠিত। কয়েক শতাব্দী ধরে বইটি নানাভাবে পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে। ১৮০২ সালে উইলিয়াম কেরির প্রচেষ্টায় শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে কৃত্তিবাসী রামায়ণ প্রথম পাঁচ খণ্ডে মুদ্রিত হয়। এরপর ১৮৩০-৩৪ সালে জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের সম্পাদনায় দুখণ্ডে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বর্তমানে কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রাপ্ত মোট ২,২২১ টি হস্তলিখিত পুঁথি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে।[1]