Loading AI tools
কলকাতা শহরের দ্রুত গণ পরিবহন ব্যবস্থা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কলকাতা মেট্রো পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও হাওড়া জেলার অংশবিশেষে পরিষেবা প্রদানকারী দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুসারে, কলকাতা মেট্রোর চারটি সক্রিয় রেলপথ রয়েছে, যেগুলি হল দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ৩২.৩৩ কিমি (২০.০৯ মা) দীর্ঘ নীল লাইন, সল্টলেক সেক্টর ৫ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ৯.১ কিমি (৫.৭ মা) এবং এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ৩ কিমির (১.৮৬৪ মা) দুটি পৃথকভাবে পরিচালনীয় শাখার সবুজ লাইন, জোকা থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত ৬.৫ কিমি (৪.০ মা) দীর্ঘ বেগুনি লাইন কবি সুভাষ থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় পর্যন্ত ৪.৮ কিমি (৩.০ মা) দীর্ঘ অরেঞ্জ লাইন। এই ব্যবস্থায় ৫৯.৩৮ কিমি (৩৬.৯০ মা) পথে ব্রডগেজ (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) এবং আদর্শগেজ উভয় বিস্তারযুক্ত ৫০ টি মেট্রো স্টেশন বিদ্যমান, যার মধ্যে ১৭ টি স্টেশন ভূগর্ভস্থ, ২১ টি স্টেশন উত্তোলিত এবং ২ টি স্টেশন ভূমিগত। এছাড়া আরো তিনটি লাইন বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মীয়মান হয়ে রয়েছে। ভারতীয় প্রমাণ সময় ০৫:৪৫ থেকে ২১:৫৫ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু থাকে এবং মেট্রোর ভাড়া ₹৫ থেকে ₹৫০ এরমধ্যে ঘোরাফেরা করে।
কলকাতা মেট্রো | |
---|---|
| |
সংক্ষিপ্ত বিবরণ | |
অবস্থান | কলকাতা মহানগর অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ |
পরিবহনের ধরন | দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা |
লাইনের (চক্রপথের) সংখ্যা | ১ (কার্যকরী) ৩ (আংশিক কার্যকরী আর আংশিক নির্মীয়মাণ) ১(নির্মীয়মাণ) ১ (পরিকল্পিত) |
বিরতিস্থলের (স্টেশন) সংখ্যা | ৫০ (সক্রিয়) ২৯ (নির্মীয়মাণ) ২১(পরিকল্পিত) |
বাৎসরিক যাত্রীসংখ্যা | ১৯.২৫ কোটি (২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ) [1] |
প্রধান কার্যালয় | এইচআরবিসি ভবন, মুন্সি প্রেমচাঁদ সরণি, কলকাতা[2] |
ওয়েবসাইট | |
চলাচল | |
পরিচালক সংস্থা | কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা |
একক গাড়ির সংখ্যা | ৫০ |
রেলগাড়ির দৈর্ঘ্য | ৬ কোচ, ৮ কোচ |
কারিগরি তথ্য | |
মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য | ৫৯.৩৮ কিমি (৩৬.৯ মা) |
রেলপথের গেজ | ১,৬৭৬ মিমি (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) (ব্রড গেজ) লাইন ১, ৩, ৪, ৫, ৬ এর জন্য ১,৪৩৫ মিমি (৪ ফুট ৮ ১/২ ইঞ্চি) (স্ট্যান্ডার্ড গেজ) লাইন ২ জন্য |
গড় গতিবেগ | ৬০–৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৩৭–৫০ মা/ঘ) |
শীর্ষ গতিবেগ | ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৫০ মা/ঘ) |
১৯৮৪ সালে চালু হওয়া কলকাতা মেট্রো ভারতের প্রথম মেট্রো রেল পরিষেবা (দ্বিতীয় মেট্রো পরিষেবা দিল্লি মেট্রো চালু হয় ২০০২ সালে)। প্রাথমিকভাবে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে এর পরিকল্পনা করা হলেও সত্তরের দশকে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়৷ ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে চালু হওয়া কলকাতা মেট্রোর প্রথম ধাপটি ছিলো ভবানীপুর (বর্তমান নেতাজি ভবন) থেকে এসপ্ল্যানেড অবধি দীর্ঘায়িত ছিল। এটি দিল্লি মেট্রো, হায়দ্রাবাদ মেট্রো, চেন্নাই মেট্রো এবং নাম্মা মেট্রোর পর বর্তমানে ভারতের কর্মক্ষম পঞ্চম দীর্ঘতম মেট্রো যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কলকাতা মেট্রোর উত্তর-দক্ষিণ লাইনটি উত্তরে দক্ষিণেশ্বর থেকে দক্ষিণে কবি সুভাষ (নিউ গড়িয়া) পর্যন্ত ৩১.৩৬৫ কিলোমিটার প্রসারিত ও মোট স্টেশনের সংখ্যা ২৬ টি। এবং নোয়াপাড়ার পর থেকে বরানগর হয়ে লাইনটি দক্ষিণেশ্বর অবধি সম্প্রসারিত হয় ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১এ। এই লাইনে ভূগর্ভস্থ ও উড়াল, উভয় প্রকার ষ্টেশন রয়েছে। প্যারিস মেট্রোর মতো কলকাতা মেট্রোতেও দেশের বিভিন্ন মণীষী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে স্টেশনের নামকরণ করা হয়ে থাকে। পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলের মেট্রো ভবনে কলকাতা মেট্রোর সদর কার্যালয় অবস্থিত।
২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতা মেট্রোর দ্বিতীয় লাইন হিসাবে পূর্ব-পশ্চিম লাইনের সেক্টর ৫ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ৫.৮ কিলোমিটার পথ খোলা হয় যেখানে মোট ৬ টি স্টেশন ছিল এবং প্রতিটি স্টেশন রেলপথ সহ উত্তোলিত ভাবে নির্মিত। ২০২১ সালে এটি ফুলবাগান অব্দি সম্প্রসারিত হয় এবং ২০২২ সালে শিয়ালদহ অব্দি। এই ২টি স্টেশন ভূগর্ভস্থ।
মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা, এবং কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন এই রেল পরিষেবার কর্ণধার ও পরিচালক৷ ২০১০ সালের ২৯শে ডিসেম্বর কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে ভারতীয় রেলওয়ের ১৭তম ক্ষেত্র বলে চিহ্নিত হয়৷ এটি পুরোপুরিভাবে ভারতীয় রেল মন্ত্রকের অধিকৃত ও নিহিত৷ এটিই একমাত্র মেট্রো পরিষেবা যা ভারতীয় রেলের অধীনস্থ এবং ভারতীয় রেলের একটি ক্ষেত্রীয় রেলওয়ের মর্যাদা ভোগ করে। দৈনিক ৩০০ টি ট্রেন যাত্রায় ৭,০০,০০০-এর অধিক যাত্রী পরিষেবা ভোগ করেন৷
বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর একাধিক সম্প্রসারণ প্রকল্প ও নতুন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।
কলকাতা শহরের জন্য একটি পূর্ব-পশ্চিম রেলপথ সংযোগ হিসাবে “ইস্ট-ওয়েস্ট টিউব রেলপথ” ১৯২১ সালে ব্রিটিশ রাজ আমলে হার্লি হিউ ডালরিম্পল হে দ্বারা প্রস্তাবিত হয়, তবে শেষ পর্যন্ত ১৯২৩ সালে তহবিলের অভাবে এটি নেওয়া হয়নি।[3] যদিও প্রাথমিক প্রচেষ্টা করা হয় ১৯১৯ সালে, মানুষকে সময়মতো তাদের কর্মস্থলে পৌঁছানোর সুবিধা দিতে। সিমলাতে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সেপ্টেম্বরের অধিবেশনে স্যার ডব্লু ই ক্রাম একটি কমিটি গঠন করেন কলকাতার জন্য একটি মেট্রো লাইনের প্রস্তাব করে। এই লাইনটি হুগলি নদীর নিচে একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে পূর্বের বাঘমারি এবং হাওড়ার সালকিয়া বেনারস রোডকে সংযুক্ত করার কথা ছিল। নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলিত £৩৫,২৬,১৫৪ বা প্রায় ৪.২৮ কোটি (বর্তমান বিনিময় হারের ভিত্তিতে), এবং প্রস্তাবিত সময়সীমা ছিল ১৯২৫-২৬ সাল। প্রস্তাবিত লাইনটি ১০.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ (বর্তমান পূর্ব-পশ্চিম করিডোরের চেয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার কম), যা বঘমারীতে ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে এবং বেনারস রোডে ভারতীয় রেলকে সংযুক্ত করবে। তিনি তখন উত্তর-দক্ষিণ লাইনের কথাও উল্লেখ করেন। ১৯২২ সালে রব জে কুক অ্যান্ড হ্যামন্ড প্রকাশিত তাঁর বই কলকাতা টিউব রেলওয়েতে সমস্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। রেলপথটিতে সম্পূর্ণ ভ্রমণের জন্য টিকিটের দাম ধরা হয় তিন আনা।[4][5]
১৯৪৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের তদনীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায় কলকাতার ক্রমবর্ধমান ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে শহরে একটি ভূগর্ভস্থ রেলপথ নির্মাণের কথা বিবেচনা করেন। এই মর্মে একটি ফরাসি বিশেষজ্ঞ দলকে দিয়ে সমীক্ষা চালানো হলেও, কোনো সুসংহত সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি।[6] দিল্লি ও অন্যান্য শহরগুলিতে শহরের উপরি ক্ষেত্রফলের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভর হলেও কলকাতার ক্ষেত্রে তা মাত্র ৪.২ শতাংশ ফলে সমস্যার দ্রুত সমাধানের পরিকল্পনা করা শুরু হয়৷ এরপর ১৯৬৯ সালে কলকাতার ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে মেট্রোপলিটান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (রেলওয়ে) নামে একটি প্রকল্প গৃহীত হয়। এই প্রকল্পের প্রতিবেদনে কলকাতার ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই বলে জানানো হয়। ১৯৭১ সালে প্রকাশিত প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানে কলকাতার জন্য মোট ৯৭.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাঁচটি মেট্রো লাইনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।[6] এই পাঁচটির মধ্যে তিনটিকে বেছে নেওয়া হয়৷ এগুলি হলো:[7][8]
এই তিনটি পথের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপিত হয় ব্যস্ততম উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত ১৬.৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট দমদম-টালিগঞ্জ লাইনটির উপর।[6] ১৯৭২ সালের ১ জুন প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। আনুমানিক ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রস্তাবিত লাইনটির কাজ পুরোপুরিভাবে সম্পূর্ণ করে দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়৷ [9]
ভারতের প্রথম মেট্রো[10] হিসেবে কলকাতা মেট্রোটি খুবই প্রাথমিক স্তরের যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কাট এন্ড কভার পদ্ধতি শিল্ড টানেলিং পদ্ধতি এইগুলি মূলত এই পর্যায়ে ব্যবহার করা হয় ফলে কলকাতা মেট্রো দীর্ঘতর প্রচেষ্টা-সফল পদ্ধতির মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়, তবে দিল্লি মেট্রোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি। সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার দিকেই লক্ষ্য রাখা হয়। ফলস্বরূপ কলকাতা মেট্রো প্রস্তাবের অনুমোদন পাওয়ার পরেও ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সুরঙ্গ রেলপথের কাজ সম্পূর্ণ করতে প্রায় ২৩ বছর সময় অতিবাহিত হয়। [8][11]
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। ১৯৭৩-৭৪ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়।[6][12] প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ১৯৭৭-৭৮ সালে অর্থের জোগান বন্ধ থাকা, ভূগর্ভস্থ পরিষেবাগুলির স্থানান্তরণ, আদালতের নানা স্থগিতাদেশ, কাঁচামালের অনিয়মিত সরবরাহ ইত্যাদি কারণে প্রকল্প রূপায়ণে অযথা দেরি হতে থাকে।১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই তারা জনবহুল অঞ্চলের নীচে, নিকাশি নালার জল সরবরাহ লাইন ইন বৈদ্যুতিন তার টেলিফোনের তার ট্রামলাইন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খালগুলি অতিক্রম করে কাট অ্যান্ড কভার পদ্ধতিতে মেট্রোর কাজ এগিয়ে যেতে থাকে। এই সময় এনআইকেইএক্স হাঙ্গেরীয়ান কো-অপারেশন বুদাপেস্ট কোম্পানিটি এই প্রযুক্তি প্রদান করে। [13] অবশেষে তদানীন্তন রেলমন্ত্রী আবু বারকাত আতাউর গণী খান চৌধুরীর বিশেষ উদ্যোগ, কর্মদক্ষতা, ও কূটনৈতিক দূরদৃষ্টির ফলে প্রকল্পের কাজে দ্রুততা আসে। ওই বছরই রাজস্ব থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেট্রো বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয় এবং নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং তার সরকার এই বিল পাশ করান। [14]
১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এসপ্ল্যানেড - ভবানীপুর (নেতাজি ভবন) ৩.৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট রুটে ভারতের প্রথম তথা এশিয়ার পঞ্চম মেট্রো পরিষেবা কলকাতা মেট্রোর উদ্বোধন করেন।[6]তপন কুমার নাথ এবং সঞ্জয় শীল মহাশয় এই সময়ে কলকাতার প্রথম মেট্রো চালানোর দায়িত্বে ছিলেন। পরপর ওই বছরই ১২ নভেম্বর চালু হয় দমদম - বেলগাছিয়া ২.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট রুটটিও। উল্লেখ্য, এটিই কলকাতা মেট্রোর দীর্ঘতম স্টেশন দূরত্ব।[6] ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল টালিগঞ্জ অবধি ৪.২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো সম্পসারিত হলে এসপ্ল্যানেড থেকে টালিগঞ্জ অবধি ১১টি স্টেশন নিয়ে ৯.৭৯ কিলোমিটার পথের কাজ সম্পূর্ণ হয়।[6]
২২ নভেম্বর ১৯৯২ তারিখে দমদম-বেলগাছিয়া অংশটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ এই বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র অংশটি খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। টালিগঞ্জ অবধি সম্প্রসারণের দীর্ঘ আট বছর পরে ১৩ আগস্ট, ১৯৯৪ তারিখে দমদম-বেলগাছিয়া শাখাটিকে ১.৬২ কিলোমিটার সম্প্রসারিত করে শ্যামবাজার অবধি নিয়ে আসা হয়। সেই বছরের ২ অক্টোবর তারিখে ০.৭১ কিলোমিটার এসপ্ল্যানেড-চাঁদনি চক শাখাটি চালু হয়। শ্যামবাজার-শোভাবাজার-গিরিশ পার্ক (১.৯৩ কিলোমিটার) ও চাঁদনি চক-সেন্ট্রাল (০.৬০ কিলোমিটার) শাখাদুটি চালু হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ তারিখে। গিরিশ পার্ক থেকে সেন্ট্রালের মধ্যবর্তী ১.৮০ কিলোমিটার পথ সম্পূর্ণ হয় ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ তারিখে। এর ফলে বর্তমান মেট্রোলাইনটির কাজ সম্পূর্ণ হয়।
২০০৯ সালে টালিগঞ্জ (বর্তমানে মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশন) স্টেশন থেকে গড়িয়া বাজার মেট্রো স্টেশন (বর্তমানে কবি নজরুল স্টেশন) পর্যন্ত সম্প্রসারিত নতুন মেট্রোপথের সূচনা করা হয়। ২০১৩ সালে দমদম থেকে নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত সম্প্রসারিত নতুন মেট্রোপথের সূচনা করা হয়।
নোয়াপাড়ায় একটি নতুন চার-প্ল্যাটফর্ম ইন্টারচেঞ্জ স্টেশন নির্মান করা হয়। এটি লাইন ১ এবং লাইন ৪ এর মধ্যে একটি ইন্টারচেঞ্জ স্টেশন হিসাবে কাজ করবে। আপাতত, মাত্র দুটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহৃত হচ্ছে, তবে একবার লাইন ৪ চালু হয়ে গেলে, চারটি প্ল্যাটফর্মই চালু হবে।[15][16] বর্তমান এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনটি লাইন ১ এবং লাইন ২ এর মধ্যে ইন্টারচেঞ্জ এর জন্য ব্যবহারিত। এরপর লাইন ৩ চালু হলে, সেটির সাথে ইন্টারচেঞ্জ এর জন্য ব্যবহারিত হবে।[17][18]
লাইন সংখ্যা | লাইন | পরিচালনাগত প্রান্তিক | স্টেশন | দৈর্ঘ্য (কিলোমিটার) | প্রথম উদ্বোধন | শেষ সম্প্রসারণ | রোলিং স্টক | ট্র্যাক গেজ (মিমি) | বিদ্যুত | গড় ফ্রিকোয়েন্সি (মিনিট) | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১ | নীল লাইন | দক্ষিণেশ্বর | দমদম | কবি সুভাষ | ২৬ | ৩২.৩৩ | ২৪ অক্টোবর ১৯৮৪ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | আই.সি.এফ., সি.আর.আর.সি. ডালিয়ান | ১,৬৭৬ মিলিমিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) | ৭৫০ ভোল্ট ডিসি | ০৫ |
২ | সবুজ লাইন | সল্টলেক সেক্টর ৫ | শিয়ালদহ | ৮ | ৯.১ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ১১ জুলাই ২০২২ | বি.ই.এম.এল | ১,৪৩৫ মিলিমিটার (৪ ফুট ৮ ১⁄২ ইঞ্চি) | ১০ | ||
এসপ্ল্যানেড | হাওড়া ময়দান | ৪ | ৪.৮ | ৬ মার্চ ২০২৪ | - | |||||||
৩ | পার্পেল লাইন | জোকা | মাঝেরহাট | ৭ | ৭.৭৫ | ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬ মার্চ ২০২৪ | আই.সি.এফ. | ১,৬৭৬ মিলিমিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) | ৫০ | ||
৬ | কমলা লাইন | কবি সুভাষ | হেমন্ত মুখোপাধ্যায় | ৫ | ৫.৪ | ৬ মার্চ ২০২৪ | - | ২৫ | ||||
মোট | ৫০ | ৫৯.০৮ |
লাইন সংখ্যা | লাইন | প্রান্তিক | প্রত্যাশিত / প্রথম চালু | স্টেশন | দৈর্ঘ্য
(কিমি) | |
---|---|---|---|---|---|---|
২ | সবুজ লাইন | শিয়ালদহ | এসপ্ল্যানেড | ২০২৫ | ০ | ২.৭ |
৩ | পার্পেল লাইন | মোমিনপুর | এসপ্ল্যানেড | ২০২৮[19] | ৫ | ৭.৩৩ |
৪ | হলুদ লাইন | দমদম ক্যান্টনমেন্ট | বারাসাত | ২০২৪ (নোয়াপাড়া - দমদম ক্যান্টনমেন্ট) ও (দমদম ক্যান্টনমেন্ট - জয় হিন্দ) | ১০ | ১৬.৮৭৬ |
৬ | কমলা লাইন | ভি আই পি বাজার | জয় হিন্দ | ২০২৪ (ভি আই পি বাজার - বেলেঘাটা) ২০২৬ (পুরো লাইন)[20] | ১৯ | ২৪.৮ |
মোট | ৩৪ | ৫২.২০৬ |
লাইন সংখ্যা | লাইন | প্রান্তিক | প্রত্যাশিত কাজ চালু | স্টেশন | দৈর্ঘ্য
(কিমি) | |
---|---|---|---|---|---|---|
২ | সবুজ লাইন | সল্টলেক সেক্টর ৫ | তেঘরিয়া | - | ৫ | ৬.৫ |
৩ | পার্পেল লাইন | জোকা | ডায়মন্ড পার্ক | ২ | ৩.৩৯ | |
৫ | গোলাপী লাইন | বরানগর | ব্যারাকপুর | ১১ | ১২.৪ | |
মোট | ১৮ | ২২.২৯ |
অবস্থান | লাইন | স্টেশন | দৈর্ঘ্য (কি মি) |
---|---|---|---|
চালু | লাইন ১ (পূর্ণ) + লাইন ২ (বেশীরভাগ) + লাইন ৩ (বেশীরভাগ) + লাইন ৬ (আংশিক) | ৫০ | ৫৯.০৮ |
নির্মাণাধীন | লাইন ২ (খানিক) + লাইন ৩ (বেশীরভাগ) + লাইন ৪ (পূর্ণ) + লাইন ৬ (বেশীরভাগ) | ৩৭ | ৫২.২০৬ |
পরিকল্পিত | লাইন ২ (বেশীরভাগ) + লাইন ৩ (আংশিক) + লাইন ৫ (পূর্ণ) | ১৮ | ২২.২৯ |
মোট | ৯৪
(১০২ টি, আন্তঃবদল একাধিকবার নিলে) |
১২২.৬৮৬ |
দমদম থেকে নোয়াপাড়া (২.০৯ কিমি) পর্যন্ত কাজটি ১০.৭.২০১৩ তারিখে চালু হয় এবং বরানগর (২.৩৮ কিলোমিটার) হয়ে দক্ষিণেশ্বর অবধি চালু আছে। ২২২.৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দমদম থেকে দক্ষিণেশ্বর (৬.২০ কিমি) অবধি মেট্রোর উত্তরমুখী সম্প্রসারণ ও অনুমোদিত হয় ২০১০-১১ সালে এবং রেল বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। লাইন ৫ আন্তঃবদল সহ নোয়াপাড়া থেকে বারাসাত অবধি আরভিএনএল দ্বারা নির্মিত হচ্ছে। এই বিভাগটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খোলার কথা থাকলেও, তা সম্ভব হয়নি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই অংশের যাত্রী সংখ্যা হবে আনুমানিক ৫৫,০০০ জন।[21]
আনুমানিক ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কলকাতা মেট্রোর বিদ্যমান ভারতীয় রেলওয়ের সংকেত ব্যবস্থা থেকে যোগাযোগ ভিত্তিক ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় উন্নীত কররা পরিকল্পনার প্রস্তাবটি কলকাতার মেট্রো রেলওয়ে সম্প্রতি ভারতীয় রেল প্রেরণ করে, যাতে দুটি ট্রেন মধ্যে সময়ের ব্যবধানটি ৫ মিনিট থেকে হ্রাস করে মাত্র ৯০ সেকেন্ডে করা যায়। ভারতীয় রেল প্রস্তাবটি এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং সংকেত ব্যবস্থার কাজ ২-৩ বছরের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।[22]
হুগলি নদীর জলের তলদেশে মেট্রো লাইনের মাধ্যমে কলকাতাকে হাওড়ার সাথে সংযুক্ত করার জন্য ৪৮৭৪.৬ কোটি টাকার ($৭৫০ মিলিয়ন) প্রকল্প পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নির্মিত হয়েছে।[23] এই মেট্রো লাইনের দৈর্ঘ্য ১৪.৬৭ কিলোমিটার (৮.৯ কিমি ভূগর্ভস্থ এবং ৫.৭৭ কিমি উত্তোলিত) হওয়ার কথা ছিল। এই লাইনটি কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন (কেএমআরসি) নামে একটি পৃথক সংস্থা তৈরি করছে। তবে, ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে এই লাইনের কাজগুলি কলকাতার মেট্রো রেলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এখন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সর্বাধিক অংশীদারত্ব ভারতীয় রেল এর অধীনে রয়েছে এবং বাকি অংশটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য জাপান ব্যাংক থেকে ঋণ হিসাবে রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর আগে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন করার জন্য দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডকে নিয়োগ করে, তারপরে তহবিলের কারণে সরকারকে প্রকল্পটি স্থগিত রাখতে হয়। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন কলকাতায় প্রথম মেট্রো পরিষেবা উদ্বোধন করেন তখন জলের তলদেশে মেট্রো রেলের পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়। রুটটি ১২ টি স্টেশন (৬ টি উত্তোলিত, ৬ টি ভূগর্ভস্থ) নিয়ে গঠিত এবং একটি সুড়ঙ্গের মাধ্যমে নদী অতিক্রম করবে। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে রেলপথটি নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়।
লাইন ২-এর নির্মাণ কাজ ২০০৯ সালের মার্চ মাসে শুরু হয়। তবে জমি অধিগ্রহণ ও বস্তি স্থানান্তরের সমস্যার কারণে প্রকল্পটি বেশ কয়েকবার স্থগিত হয়। জুন, ২০১৬ সালে রেলপথের নকশার একটি পুনর্নির্মাণ করা হয়, যার ফলে রেলপথের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৬.৫৫ কিমি (ভূগর্ভস্থ ১০.৮১ কিমি, ৫.৭৭ কিমি উত্তোলিত)। লাইন ১ এবং লাইন ৩ এর সাথে প্রস্তাবিত সংযোগটি এসপ্ল্যানেডে থাকবে। বৈদেশিক মুদ্রার লোকসান সহ সাথে বিলম্বের ফলে প্রকল্পের নির্মাণ খরচ ৮০% ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ₹৯০০০ কোটি ($১.৫ বিলিয়ন ডলার) পৌঁছেছে।[7]
মহাকরণ (লাল দিঘি) এবং হাওড়া স্টেশনের মধ্যে হুগলি নদীর তলদেশে মেট্রো চলছে – ভারতের প্রথম জলের নিচে চলাচলকারী মেট্রো। লাইনটি সল্টলেক সেক্টর ৫ এবং সল্টলেক স্টেডিয়ামের মধ্যে উত্তোলিত পথে এবং বাকি অংশটি ভূগর্ভস্থ পথে নির্মিত। স্থানান্তর বা আন্তঃবদল স্টেশনগুলি শিয়ালদহ এবং হাওড়ায় অবস্থিত। সল্টলেক সেক্টর ৫ থেকে তেঘোরিয়ায় (হলদিরাম) পর্যন্ত একটি নতুন উত্তোলিত পথের অনুমোদিত হয়েছে। ₹৬৭৪ কোটি ব্যয়ে এই সম্প্রসারিত ৫.৫ কিলোমিটার অংশটি নির্মিত হবে।[24] তবে এখন পরিকল্পনাটি পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সল্টলেক সেক্টর ৫ থেকে লাইনটি প্রসারিত করা হবে।[25] তেঘোরিয়া (হালদিরাম) থেকে যাত্রীরা লাইন ৬ দ্বারা (ভিআইপি রোড স্টেশন) দমদম বিমানবন্দরে যেতে পারবেন।[25]
২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি লাইনটি সল্টলেক সেক্টর-৫ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত রেল মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল উদ্বোধন করেন, নির্মাণ শুরুর ১১ বছর পরে।[26] বর্তমানে এই রুট সল্টলেক সেক্টর ৫ থেকে শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশন অবধি চালু আছে। ৬ মার্চ ২০২৪, প্রধাণ্মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান এর উদ্বোধন করেন এবং আশা করা হচ্ছে যে শীঘ্রই (২০২৫) শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশন থেকে এসপ্ল্যানেড অংশে মেট্রো রেল চলাচল শুরু করবে এবং সল্টলেক সেক্টর-৫ থেকে হাওড়া ময়দান পুরো অংশ চালু হবে।
কলকাতা মেট্রো লাইন ৩ বা জোকা-এসপ্ল্যানেড মেট্রো হল কলকাতা মেট্রো এর একটি আংশিক চালু আংশিক নির্মাণাধীন লাইন। এটি দক্ষিণ কলকাতার জোকা থেকে মধ্য কলকাতার এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। এই পথের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১৬.৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৮.২২ কিলোমিটার হল ভূগর্ভস্থ ও ৮.৩২ কিলোমিটার হল উত্তলিত পথ।[27]। এই মেট্রো পথের জোকা থেকে মোমিনপুর পর্যন্ত উত্তলিত পথে ও মোমিনপুর থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পথে নির্মাণ করা হবে।
এই যাত্রাপথে জোকা থেকে তারাতলা চালু হয় ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ এবং মাঝেরহাট পর্যন্ত সম্প্রসারণ হয় ৬ মার্চ ২০২৪ এ। ২০২৮ সাল নাগাদ বাকিটা চালু হবে।
কলকাতা মেট্রো লাইন ৪ বা নোয়াপাড়া-বারাসাত মেট্রো নোয়াপাড়া, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বারাসাতকে যুক্ত করবে।[28] এই পথের মোট দৈর্ঘ্য ১৭.১৩ কিলোমিটার এবং এই মেট্রো পথে ১০ টি মেট্রো স্টেশন তৈরি হবে।[29]
নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দরের কাজ খুব শীঘ্রই শেষ হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বিমানবন্দর থেকে নিউ ব্যারাকপুরের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
বরানগর এবং ব্যারাকপুর এর মাঝে নির্মিত হবে বরানগর-ব্যারাকপুর মেট্রো বা কলকাতা মেট্রো লাইন ৫। এই ১২.৪০ কিমি পথে মোট ১১ টি মেট্রো স্টেশন থাকবে।
নিউ গড়িয়া স্টেশন থেকে শুরু হয়ে ইএম বাইপাস বরাবর কালিকাপুর, আনন্দপুর, রুবি, ভিআইপি বাজার, পরমা আইল্যান্ড, চিংড়িঘাটা হয়ে ডানদিকে বেঁকে নিকোপার্ক সেক্টর ফাইভ, টেকনোপলিস, নিউ টাউন হয়ে ভিআইপি রোডের ওপর হলদিরাম ছুঁয়ে মেট্রো পৌঁছবে দমদম বিমানবন্দরে। ৩২ কিলোমিটার রেলপথে মোট ২৬টি স্টেশন তৈরি হবে।[30] পুরো রাস্তায় মেট্রো যাবে মাটির ওপর দিয়ে এলিভেটেড ট্র্যাকে শুধু মাত্র বিমানবন্দর এর কাছে এসে এই মেট্রো লাইন সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করবে এবং বিমান বন্দরটি মাটির নিচে নির্মাণ করা হবে। বিমানবন্দর স্টেশনটি নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতানৈক্য মিটতেই এ বার এই প্রকল্পের জন্য কাজের বরাত দিয়ে দিল রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড. ২২ অক্টোবর তিনটি ঠিকাদার সংস্থাকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার বরাত দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য ২০১১-২০১২ আর্থিক বছরের বাজেটে মোট ১৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রেল বোর্ড. আরভিএনএল এবং মেট্রো কর্তাদের আশা, নভেম্বর থেকেই কাজ শুরু করে দেবে ওই তিন ঠিকাদার সংস্থা. কাজ শুরুর তিন বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষ হয়ে যাবে বলেও তাদের আশা.
৬ মার্চ ২০২৪, প্রধাণ্মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিউ গড়িয়া থেকে রুবি পর্যন্ত মেট্রো উদ্বোধন করেন।
এর ফলে এখন এক টিকিটে হাওড়া ময়দান থেকে রুবি পর্যন্ত যাত্রা করা সম্ভব।
মেট্রো পরিকাঠামোো বিনির্মাণ একটি অত্যন্ত জটিল কাজ। কারণ, এই কাজে একযোগে প্রয়োগ করতে হয় সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রের একাধিক আধুনিক প্রযুক্তি। ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারগণ তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও বিদেশ থেকে আহরিত জ্ঞানকে সম্বল করে ভারতে প্রথম কয়েকটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটান কলকাতা মেট্রো সংস্থাপনকালে।
সমগ্র রেকটি ভেস্টিবিউল-বেষ্টিত। রোলিং স্টক সরবরাহ করে চেন্নাইয়ের আইসিএফ এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে বেঙ্গালুরুর এনজিইএফ। এই রোলিং স্টকগুলি অদ্বিতীয়, কারণ ডবলিউএজি-৬ সিরিজের কয়েকটি লোকোমোটিভ ছাড়া এগুলি ভারতের একমাত্র এন্ড-মাইন্টেড ক্যাব দরজা-বিশিষ্ট।
কলকাতা মেট্রোর ভূগর্ভস্থ রেল পরিষেবার জন্য আইসিএফ এই কোচগুলি বিশেষ নকশায় নির্মিত করে সরবরাহ করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
এই সকল অত্যাধুনিক কলাকৌশলবিশিষ্ট কোচগুলির নকশা ও নির্মাণ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও উচ্চমানের। সুরক্ষা ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিবেচিত হয়। কোনওরকম কারিগরি সহযোগিতা ছাড়াই যা লব্ধ হয়ে থাকে। সমগ্র ব্যবস্থাটি ২৩৫৬ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন।
২০১২ সালে রাইট্স শহরতলি অঞ্চলগুলিকে কলকাতা শহরের সাথে সংযোগ করার জন্য ১৬টি নতুন রুট নিরীক্ষণ করে। মূল রুটগুলি হ'ল:[31]
২০০৮ সালে, কলকাতা মেট্রো রেল মহিলাদের জন্য দুটি সম্পূর্ণ কোচ সংরক্ষণের করার ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এই ব্যবস্থাটি অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয় এবং প্রচুর যাত্রীদের (মহিলা সহ) অসুবিধার কারণ হয়ে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনাটি মেট্রো কর্তৃপক্ষ বাতিল করে দেয়।
এখন প্রতিটি কোচের মধ্যে আসনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মহিলা, প্রবীণ নাগরিক এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। কোচের প্রতিটি প্রান্তে ৪ টি আসন বিভাগ প্রবীণ নাগরিকদ ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত এবং কোচের মাঝের দুটি দরজার মধ্যবর্তী আসন বিভাগ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।
প্র না এবং শা প্র আসন (৩) | দরজা ⇅ | সাধারণ আসন (৮) | দরজা ⇅ | মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন (৮) | দরজা ⇅ | সাধারণ আসন (৮) | দরজা ⇅ | প্র না এবং শা প্র আসন (৩) |
করিডোর/দাঁড়িয়ে থাকার এলাকায় | ||||||||
প্র না এবং শা প্র আসন (৩) | দরজা ⇅ | সাধারণ আসন (৮) | দরজা ⇅ | মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন (৮) | দরজা ⇅ | সাধারণ আসন (৮) | দরজা ⇅ | প্র না এবং শা প্র আসন (৩) |
মেট্রো রেলের ভাড়া নির্দিষ্ট নয়। দুরত্ব অনুসারে এই ভাড়া পরিবর্তিত হয়ে থাকে। একটি ত্রিবার্ষিক বিরতির পর সর্বশেষ ১ অক্টোবর ২০০১ তারিখে মেট্রোর ভাড়া পর্যালোচিত হয়েছিল। বর্তমানের ভাড়া কাঠামোটি নিম্নরূপ:
জোন | দুরত্ব (কিলোমিটারে) | ভাড়া (টাকায়) |
---|---|---|
১ | ০ – ২ | ৫.০০ |
২ | ২ – ৫ | ১০.০০ |
৩ | ৫ – ১০ | ১৫.০০ |
৪ | ১০ – ২০ | ২০.০০ |
৫ | ২০ – ৩০ | ২৫.০০ |
১৯৮৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত চৌম্বকীয় টিকিটিং স্ট্রিপ সিস্টেমটি ব্যবহার করার পরে, কলকাতা মেট্রো ২০১১ সাল থেকে সেন্টার ফর রেলওয়ে ইনফরমেশন সিস্টেমস (সিআরআইএস) দ্বারা রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) টোকেন চালু করেছিল। পুরানো চৌম্বকীয় স্ট্রিপ রিডার গেটগুলি নতুন আরএফআইডি পাঠক দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়।
বিঃদ্রঃ: ^ ফেব্রুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত তথ্য।
২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে লাইন ১ ( কবি সুভাষ-দক্ষিণেশ্বর মেট্রোরুটে) যাত্রী হয়েছে, ১৭.৯৪ কোটি, লাইন ২ (ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয়) যাত্রী হয়েছে ১.২২ কোটি আর লাইন ৪ (জোকা-তারাতলা রুটে) এক বছরে যাত্রী হয়েছে মাত্র ১.৩৪ লাখ। মোট যাত্রী ১৯.২৫ কোটি, যা আগের অর্থবর্ষে ছিল ১৭.৬৯ কোটি।[39]
যেহেতু কলকাতা মেট্রোটি ১৯৭০-এর দশকে নির্মিত হয়েছিল, তখন কিছু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ছিল। টানেলের মাপ এবং ভারতীয় রেলের অধীনে থাকার কারণে, কলকাতা মেট্রো ১,৬৭৬ মিলিমিটার (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) ব্রডগেজ বোগির উপর মিটার গেজ শেল (২.৭ মিটার চত্তড়া) বেছে নেওয়া হয়।[40]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.