Loading AI tools
হাওড়া নগরের একটি অঞ্চল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সাঁতরাগাছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলার হাওড়া শহরের একটা অঞ্চল। এটি কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) অধিক্ষেত্রের একটা অংশ ও হাওড়া পুরসভার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সাঁতরাগাছি জংশন রেলওয়ে স্টেশন যেটা দক্ষিণ পূর্ব রেলপথের জংশন স্টেশন। সাঁতরাগাছি জংশন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একটি ব্যস্ত স্টেশন। হাওড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন থেকে সাঁতরাগাছি স্টেশনের দূরত্ব রেলপথে ৭ কিলোমিটার। সাঁতরাগাছি স্টেশনে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দূরপাল্লার ট্রেন ও সমস্ত প্রকার ট্রেনের ইঞ্জিনের কারশেড। সাঁতরাগাছি তে অবস্থিত কলকাতা সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস। এই স্টেশনের নিকটে রয়েছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে যা কলকাতার প্রবেশপথ ও হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ সংযুক্ত করে এবং ন্যাশনাল হাইওয়ের মাধ্যমে দিল্লি ও মুম্বাই এর সাথে সড়ক পথে সংযুক্ত। সাঁতরাগাছি তে অবস্থিত ব্যক্তিমালিকানায় রেলের পণ্যবাহী বগি তৈরির কার্যালয়সহ কয়েকটি শিল্প কারখানা এবং বিস্তৃত রেল কলোনি। হাওড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন এর বিকল্প হিসেবে সাঁতরাগাছি জংশন রেলওয়ে স্টেশন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। বড়ো একটা হ্রদের জন্যেও জায়গাটা জনপ্রিয়, সাঁতরাগাছি ঝিল নামে পরিচিত এই জলাশয়ে শীতের মাসগুলিতে পরিযায়ী পাখির ভিড় জমে।
সাঁতরাগাছি সাঁত্রাগাছি | |
---|---|
হাওড়ার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল | |
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান, ভারত | |
স্থানাঙ্ক: ২২.৫৮০১৭° উত্তর ৮৮.২৬৯৬৩° পূর্ব | |
দেশ | India |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | হাওড়া |
অঞ্চল | বৃহত্তর কলকাতা |
সরকার | |
• ধরন | মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন |
• শাসক | হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন |
ভাষা | |
• সরকারী | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন | ৭১১ ১০৪ |
টেলিফোন কোড | +91 33 |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | ISO 3166-2:IN |
যানবাহন নিবন্ধন | পশ্চিমবঙ্গ |
লোকসভা কেন্দ্র | হাওড়া |
বিশ শতকের শুরুতে, সাঁতরাগাছি এক বিরাট গ্রাম ছিল, যার একাংশ ছিলহাওড়া পুরসভার ভিতর।[1] এক কিংবদন্তির বয়ান অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে চৌধুরীরা হলেন বসবাসকারী প্রধান পরিবার, যারা বরেন্দ্র ব্রাহ্মণ ছিলেন,[2] এখন থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে ওই জায়গায় বসবাস শুরু করেন।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] তাদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যান্য বরেন্দ্র পরিবারও সেই জায়গায় চলে এসেছিল। সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের নামাঙ্কন হয়েছিল এই জায়গার নামেই, যদিও এই জায়গাটা অন্য একটা রেল স্টেশন রামরাজতলার কাছাকাছি। রামরাজতলা জায়গাটাকে এই গ্রামের অঞ্চলের এক-চতুর্থাংশ হিসেবে মনে করা হোত।
সাঁতরাগাছিতেই ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সরকারি অনুদানের সহায়তায় হাওড়া জেলার স্থানীয় ভাষার বিদ্যালয়।[1] পরবর্তীকালে বিদ্যালয়টি "সাঁতরাগাছি মধ্য ইংরেজি স্কুল"-এর সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং একে একটা ইংরেজি ও বাংলা দ্বিভাষিক বিদ্যালয়রূপে তৈরি করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে এই বিদ্যালয়কে সান্ত্রাগাছি কেদারনাথ ইনস্টিটিউশনে রূপান্তরিত করা হয়।[3] হাওড়া জেলার প্রথম বালিকা বিদ্যালয়ও ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় ব্যবস্থাপনায় সরকার থেকে সামান্য অনুদান পেয়ে সাঁতরাগাছিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[1]
সাঁতরাগাছিতে উন্নত মানের ওল উৎপাদন হয় (ওল: বাংলা: ওল)।[1] এই অঞ্চলে নানা রকমের এমোরফোফালাস পাওনিফোলিয়াস রয়েছে (আরুম পরিবারের হাতি-পায়ের ইয়াম)। যার নাম অনুযায়ী এই জায়গাটার নামকরণ হয়েছে সাঁতরাগাছি।[1][4]
সাঁতরাগাছির অবস্থান ২২.৫৮০১৭° উত্তর ৮৮.২৬৯৬৩° পূর্ব[5]
সাঁতরাগাছির চতুর্দিকে হাওড়ার অন্যান্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চল হল - রামরাজাতলা, জগাছা, বাকসাড়া, উনষানি এবং গড়পা।
রেলপথসমূহ
আরও দেখুন: সাঁতরাগাছি জংশন রেলওয়ে স্টেশন
বর্তমান দক্ষিণ পূর্ব রেল, আগে যার নাম ছিল বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ে, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে হাওড়া স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল।[6] ওই সময় ভারী রপ্তানি পণ্য চলাচলের জন্যে সাঁতরাগাছি থেকে শালিমার রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৩ মাইল অর্থাৎ ৫ কিমি স্বল্প দৈর্ঘের শাখা লাইন তৈরি করা হয়েছিল, পরে ওখান থেকে বড়ো বড়ো স্টিমারের মাধ্যমে নদী পার করে কলকাতার খিদিরপুর ডক পর্যন্ত মালপত্র নিয়ে যাওয়া হোত।[6]
দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের মধ্যে সাঁতরাগাছি হল প্রধান কোচিং ইয়ার্ড। পঞ্চাশের বেশি স্বল্প ও দূরপাল্লার ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ এখান থেকে করা হয়। এখানে প্রথম শ্রেণির ফ্ল্যাট রেল ইয়ার্ডে একটা ডিজেল লোকোমোটিভ শেড, একটা ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ শেড, ওয়াশিং ও সারাই লাইন এবং রেলওয়ে টার্নটেবল আছে।
সাতঁরাগাছি রেল স্টেশন এখন একটা রেলওয়ে জংশন। হাওড়া স্টেশনের ভিড় কমানোর জন্যে আগামী তিন-চার বছরে সাঁতরাগাছি জংশন রেলওয়ে স্টেশনকে একটা সম্পূর্ণ আকারের টার্মিনালে পরিণত করার পরিকল্পনা আছে যাতে আরও বেশি ট্রেন এখান থেকে প্রস্তুত করা ও ছাড়া যায়।[7]
স্থলপথসমূহ
সাঁতরাগাছি কোনা এক্সপ্রেসওয়েরও লাগোয়া, যে রাস্তা একদিকে বিদ্যাসাগর সেতুর মাধ্যমে কলকাতা এবং অন্যদিকে বাকি জাতীয় সড়ক ৬ (ভারত) ও জাতীয় সড়ক ২ (ভারত)-এর সঙ্গে সংযুক্ত।
রাজ্য পরিবহন দফতর, এইচআরবিসি এবং কেএমডিএ যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প হল ১২.৩৮ একর অর্থাৎ ৫.০১ হেক্টর জমির ওপর বিস্তৃত কলকাতা সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস। যেখানে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি জমি এবং এই কাজ করার সুবিধে দিয়েছে। হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি) ছিল প্রকল্প রূপায়ণের কর্তৃপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ মে টার্মিনাসটি উদ্বোধন করেন। এই টার্মিনাসে ১৬৯ বাস, ১০০ অন্যান্য যান এবং ৮৫ দ্বিচক্র যান পার্কিং করতে পারে।
উচ্চ বিদ্যালয়সমূহ
ছাত্রছাত্রীদের জন্যে সাঁতরাগাছিতে অনেক মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। স্যার আশুতোষ মুখার্জি এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড়ো বিদ্যালয় সাঁতরাগাছি কেদারনাথ ইন্সটিটিউশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।[8] অন্যান্য সরকারি বিদ্যালয় হল - সাঁতরাগাছি কেদারনাথ ইন্সটিটিউশন (গার্লস), সুরেন্দ্রনাথ গার্লস হাই স্কুল, সাঁতরাগাছি ভানুমতি বালিকা বিদ্যালয়, জগাছা গার্লস হাই স্কুল, এসই রেলওয়ে মিক্সড হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, সাঁতরাগাছি মিক্সড হাই স্কুল এবং সাঁতরাগছি রেলওয়ে কলোনি হাই স্কুল, জগাছা হাই স্কুল ইত্যাদি। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আছে সেন্ট মেরিজ কনভেন্ট স্কুল, মারিয়াজ ডে স্কুল এবং ঊষা মার্টিন স্কুল। সিবিএসই বোর্ড অনুমোদিত একটা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শাখাও এখানে আছে।
মহাবিদ্যালয়সমূহ
মহাবিদ্যালয়ের মধ্যে এখানে আছে ডা. কানাইলাল ভট্টাচার্য কলেজ এবং হাওড়া গার্লস কলেজ।
সাঁতরাগাছি ঝিল হল একটা জলাশয়,[9] যার অবস্থান সাঁতরাগাছি রেলওয়ে স্টেশনের পাশে।[10] বিশেষ করে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে শীতে মাসগুলোতে এই জলাশয় অসংখ্য পরিযায়ী পাখিদের আকর্ষণ করে। এই সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে, কেননা, কলকাতার আলিপুর পশুশালার জলাশয় পরিযায়ী পাখিরা গন্তব্য হিসবে এড়িয়ে যেতে আরম্ভ করছে।[11] উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সারস ক্রেনসদৃশ পাখি,[11] হিমালয়ের উত্তরাংশ থেকে গাডোয়াল, নর্দার্ন শোভেলার, নর্দার্ন পিন্টেল, গার্গেনি,[12] এবং কটন পিগমি হাঁস, নব-বিল্ড পাতিহাঁসের মতো অনেক স্থানীয় পরিযায়ী পাখি এখানে এই ঋতুতে আসে।[12] যাইহোক, এখানে লেসার হুইসিলিং পাতিহাঁসের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি।[12]
এই জলাশয় অঞ্চলটার মালিক হল দক্ষিণ পূর্ব রেল, যদিও পশ্চিমবঙ্গের বন দফতরও এই জায়গার দেখভাল করে।[10][12] প্রতি বছর পরিযায়ী পাখিদের যখন আসার সম্ভাবনা হয় তার আগেই বন দফতর জলাশয় এর কচুরিপানা পরিষ্কার করে, আবার পাখিদের উপযুক্ত পরিবেশ যেখানে আছে সে জায়গা ছেড়ে দেয়।[12][13] স্থানীয় বাসিন্দা, বন দফতর এবং রেল কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় পাখিদের জন্যে উপযুক্ত পরিবেশের উন্নয়ন চলছে।[12][13]
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন মন্ত্রণালয় এই জলাশয় কে একটা বন্য প্রাণ সংরক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত করতে উদ্যোগ নিচ্ছে।
সাঁতরাগাছির দালাল পুকুর অঞ্চলে তিব্বতিবাবার আশ্রম আছে: তিব্বতিবাবা ছিলেন ভারতের একজন বাঙালি দার্শনিক সাধু।[15] ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার ভক্ত ও শিষ্যেরা এই আশ্রমের নাম দিয়েছিল তিব্বতিবাবা বেদান্ত আশ্রম। আশ্রমের জন্যে জমিটা কিনেছিলেন বিষ্ণুপদ চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। তিব্বতিবাবা নিজে আশ্রমের জন্যে প্রথম ইট গেঁথেছিলেন। কলকাতার এন্টালি অঞ্চলের একজন মানুষ পরবর্তীকালে আশ্রমের জন্যে আরও জমি কিনেছিলেন।[16][16][17][18]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.