Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কলকাতা মেট্রো লাইন ৩ বা জোকা-এসপ্ল্যানেড মেট্রো হল কলকাতা মেট্রো এর একটি লাইন। এটি দক্ষিণ কলকাতার জোকা থেকে মধ্য কলকাতার এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। এই পথের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১৬.৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৮.২২ কিলোমিটার হল ভূগর্ভস্থ ও ৮.৩২ কিলোমিটার হল উত্তোলিত পথ।[1] এই মেট্রো পথের জোকা থেকে মোমিনপুর পর্যন্ত উত্তোলিত পথে ও মোমিনপুর থেকে বিবাদিবাগ পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ পথে নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে ৬.৫ কিমি জোকা থেকে মাঝেরহাট অংশে পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এই অংশে ৬টি স্টেশন রয়েছে।
কলকাতা মেট্রো লাইন ৩ | |
---|---|
সংক্ষিপ্ত বিবরণ | |
অন্য নাম | জোকা-এসপ্ল্যানেড মেট্রো |
স্থিতি | আংশিক চালু - জোকা - মাঝেরহাট |
মালিক | মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা |
অঞ্চল | কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ |
বিরতিস্থল | |
স্টেশন | ১২ (চালু - ৭) |
পরিষেবা | |
ধরন | উচ্চগতির রেল |
ব্যবস্থা | কলকাতা মেট্রো |
পরিচালক | মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা |
কারিগরি তথ্য | |
রেলপথের দৈর্ঘ্য | ১৬.৭২ কিলোমিটার (১০.৩৯ মা) (মোট) ৬.৫ কিলোমিটার (৪.০ মা) (চালু) |
ট্র্যাকসংখ্যা | ২ |
বৈশিষ্ট্য | উত্তলিত ও ভূগর্ভস্থ |
ট্র্যাক গেজ | ১,৪৩৫ এমএম |
চালন গতি | ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৫০ মা/ঘ) |
১৯৬৯ সালে কলকাতার যানজট সমস্যা সমাধানে মেট্রোপলিটান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (রেলওয়ে) নামে একটি প্রকল্প গৃহীত হয়। এই প্রকল্পের প্রতিবেদনে কলকাতার যানজট সমস্যার সমাধানে দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই বলে জানানো হয়। ১৯৭১ সালে প্রকাশিত প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যানে কলকাতার জন্য মোট ৯৭.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৩ টি মেট্রো লাইনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।[2] যার মধ্যে অন্যতম ছিল দক্ষিণেশ্বর-ঠাকুরপুকুর করিডোর। তবে সেই সময়ে এই রেলপথটি গুরুত্ব পাইনি।[2] বর্তমানে ওই প্রস্তাবিত করিডোর দক্ষিণ অংশ নিয়ে নির্মিত হচ্ছে কলকাতা মেট্রো লাইন ৩।
২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি "২০১০-১১ রেল বাজেট"-এ তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা মেট্রো রেলের নতুন ৪ টি রেলপথের অনুমোদন করেন। এই চারটি রেলপথের মধ্যে অন্যতম ছিল জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো (লাইন ৩)।[3] ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জোকার কাছে জোকা-বিবাদি বাগ মেট্রো প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল।[4] ২০১১-২০১২ রেল বাজেটে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২৬১৯,০২,০০,০০০ টাকা এবং নির্মাণ কাজের জন্য ৯৫২,১৬,০০,০০০ টাকা অনুমোদন করা হয়।[5]
জোকা মেট্রো স্টেশন থেকে তারাতলা মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোপথে ২০২২ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর প্রথম বার ট্রেনের মহড়া দৌড় শুরু হয়েছিল।[6] কলকাতা মেট্রো লাইন ৩-এর জোকা-তারাতলা মেট্রোপথে দেড় মাসের মহড়া দৌড়ের পরে ২০২২ সালের ১০ই নভেম্বর বৃহস্পতিবার ওই পথে মেট্রোর যাবতীয় পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হয়েছিল। উত্তর সীমান্ত রেলের ভারপ্রাপ্ত রেলওয়ে সেফটি কমিশনার লতিফ খানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল জোকা থেকে তারাতলা পর্যন্ত ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোপথে ট্রেন চালানোর যাবতীয় পরিকাঠামো পরীক্ষা করেছিল।[7] রেল ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে জোকা-তারাতলা মেট্রোপথে মেট্রো পরিষেবা চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র প্রদান করেছিল।[8] [9] অবশেষে ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাট থেকে লাইনটির সূচনা করেন। ২ জানুয়ারি ২০২৩ এ যাত্রি চলাচল শুরু হয়। কোভিড মহামারীর জন্য অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা যায়নি, তাই বর্তমানে একটিমাত্র ট্রেন পরিষেবা দিচ্ছে।
তারপর দীর্ঘ অপেক্ষর পর অবশেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ৬ই মার্চ ২০২৪ মাঝেরহাট স্টেশন উদ্বোধন করেন। ১৫ মার্চ ২০২৪ এ যাত্রি চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু কর হয়েছে।
১৬.৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন ৩ সুড়ঙ্গ ও উত্তোলিত রেলপথ নিয়ে গঠিত। রেলপথটির জোকা-মাঝেরহাট বিভাগটি উত্তোলিত রেলপথ এবং মাঝেরহাট-এস্প্লানেট বিভাগটি সুড়ঙ্গ রেলপথ ব্যবহার করে। সুড়ঙ্গযুক্ত অংশগুলি মোটামুটি দৈর্ঘ্যে ৬ কিলোমিটার ( মাইল) দীর্ঘ।
রেলপথের দক্ষিণ প্রান্তের এই অংশটি রেলপথ দ্বারা গঠিত। এই অংশে রেলপথটি দক্ষিণে জোকা থেকে উত্তরে মাঝেরহাট পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অংশের দক্ষিণ প্রান্তিক জোকা থেকে আইআইএম জোকা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই অংশের রেলপথ মাঝেরহাট স্টেশনের পরে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করবে। সুড়ঙ্গ ডায়মন্ড হারবার রোডের নিচে দিয়ে বিস্তৃত হবে। খিদিরপুর মোড় হয়ে মেট্রো চলে যাবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। সেখান থেকে পারক স্ট্রিট হয়ে এসপ্ল্যানেড চলে যাবে মেট্রো। উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর পার্ক ষ্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেড স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে মাঝেরহাট-এসপ্ল্যানেড বিভাগের অংশটি। এই অংশের রেলপথের দক্ষিণ প্রান্তে মাঝেরহাট এবং উত্তর প্রান্তে এসপ্ল্যানেড স্টেশন অবস্থিত।[10]
সমান্তরাল দুটি ৬ কিলোমিটার (৩.৭ মা) দীর্ঘ সুড়ঙ্গ[10] সুড়ঙ্গ খননকারী যন্ত্র (টিবিএম) দ্বারা নির্মিত হবে, যার প্রতিটি অভ্যন্তরীণ ব্যাস মিটার ( ফুট ইঞ্চি)। সুড়ঙ্গ দুটি ডায়মন্ড হারবার রোডের প্রায় ১৫ থেকে ১৮ মিটার নিচে দিয়ে নির্মিত হবে।[11]
৬ কিলোমিটার (৩.৭ মাইল) সুড়ঙ্গ দুটি তিনটি প্রধান সুড়ঙ্গ বিভাগ দ্বারা নির্মিত হবে: একটি ভিক্টোরিয়া স্টেশন[11] থেকে মোমিনপুর পর্যন্ত একটি ৩.২৭ কিলোমিটার (২.০৩ মা) দীর্ঘ সুড়ঙ্গ, অন্যটি ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত ২.১৯ কিলোমিটার (১.৩৬ মা) দীর্ঘ সুড়ঙ্গ।
প্রথম পর্বের জন্য (জোকা - মাজেরহাট) ট্র্যাক ভারতেই তৈরী হয়েছে। ১০৮০ গ্রেড শক্ত মাথা রেল প্রথমবারের মতো দেশে তৈরী করে ব্যবহৃত হয়েছে যা এর আগে জাপান বা ইউরোপ থেকে আনা হতো। রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড এই রেলের বরাত দিয়েছে জিন্দাল ইস্পাত এবং শক্তি কোম্পানিকে। লখনৌ এ অবস্থিত রেলের গবেষণা ডিজাইন এবং মানক সংস্থা , তার সঙ্গে গুরগাঁও অবস্থিত রেল ইন্ডিয়া কারিগরি এবং অর্থনৈতিক পরিষেবা সংস্থা পূর্ণ মান পরীক্ষণের মাধ্যমে এর ছাড়পত্র দেয়। এই ট্র্যাক প্রায় ঘন্টায় ২৫০ কিমি গতির ট্রেন চালনায় সক্ষম। [12]
রেলপথে মোট ১২ টি নতুন স্টেশন নির্মিত হবে এবং এর মধ্যে ২ টি স্টেশন আন্তঃবিনিময় স্টেশন হিসাবে নির্মিত হবে। সমস্ত স্টেশন পুরোপুরি সিসিটিভির অধীনে থাকবে।
এই লাইনটি ৩ টি পর্যায়ে নির্মিত হচ্ছে-
লাইন ৩ | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
নং | স্টেশনের নাম | অবস্থান | পর্যায় | খোলা হবে | সংযোগ | বিন্যাস | স্থানাঙ্ক | মন্তব্য |
১ | ডায়মন্ড পার্ক | জোকা | ৩ | পরিকল্পিত | বিবেকানন্দ মিশন স্কুল বাস স্টপ | উত্তোলিত | ||
২ | আইআইএম | |||||||
৩ | জোকা | জোকা | ১ | চালু | জোকা বাস ডিপো | উত্তোলিত | ডায়মন্ড পার্ক নামেও পরিচিত | |
৪ | ঠাকুরপুকুর | ঠাকুরপুকুর | ||||||
৫ | সখেরবাজার | বেহালা | শিলপাড়া নামেও পরিচিত | |||||
৬ | বেহালা চৌরাস্তা | |||||||
৭ | বেহালা বাজার | |||||||
৮ | তারাতলা | অজন্তা সিনেমা , পাঠকপাড়া | পাঠকপাড়া নামেও পরিচিত | |||||
৯ | মাঝেরহাট | মাঝেরহাট, মিন্ট | মাঝেরহাট স্টেশন | |||||
১০ | মোমিনপুর | মোমিনপুর | ২ | নির্মাণাধীন | মোমিনপুর বাস স্টপ | উত্তলিত | ||
১১ | খিদিরপুর | খিদিরপুর | খিদিরপুর স্টেশন | উত্তোলিত | ||||
১২ | ভিক্টোরিয়া | ময়দান | হেস্টিংস ট্রাম স্টপ | হেস্টিংস নামেও পরিচিত | ||||
১৩ | পার্ক স্ট্রিট | পার্ক স্ট্রিট | পার্ক স্ট্রিট বাস স্টপ | |||||
১৪ | এসপ্ল্যানেড | এসপ্ল্যানেড | কলকাতা মেট্রো লাইন ১
এসপ্ল্যানেড বাস স্টেশন (ডাব্লুবিটিসি, সিটিসি, এসবিএসটিসি, এনবিএসটিসি) |
আন্তর্জেলা বাস টার্মিনাস। ধর্মতলা / চৌরঙ্গী নামেও পরিচিত |
কলকাতা মেট্রো লাইন ৩ এর সমগ্র অংশে তৃতীয় রেল দ্বারা ৭৫০ ভোল্ট ডিসি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে।
কলকাতা মেট্রো লাইন ৩ এর জন্য একটি মাত্র ডিপো রয়েছে। এই ডিপো দক্ষিণ কলকাতার জোকাতে ৬২ একর জমিতে অবস্থিত।[13] এটি লাইন ৩ এর জোকা মেট্রো স্টেশনের সঙ্গে একটি উত্তোলিত রেলপথ দ্বারা সংযুক্ত রয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.