Loading AI tools
ফলের প্রকারভেদ (ফলের রাজা) উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আম ম্যাঙ্গিফেরা গণের বিভিন্ন প্রজাতির গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদে জন্মানো এক ধরনের সুস্বাদু ফল[2]। কাঁচা অবস্থায় আমের রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাওয়ার জন্যই এই ফল চাষ করা হয়। এই প্রজাতিগুলোর বেশিরভাগই বুনো আম হিসেবে প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। গণটি অ্যানাকার্ডিয়াসি (Anacardiaceae) পরিবারের সদস্য।[3] আম ভারতীয় উপমহাদেশীয় ফল। এর আদি নিবাস দক্ষিণ এশিয়া।[4][5] সেখান থেকেই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের একটি সাধারণ ফল হয়ে "সাধারণ আম" বা "ভারতীয় আম", যার বৈজ্ঞানিক নামম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা (Mangifera indica), অন্যতম সর্বাধিক আবাদকৃত ফল হিসেবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। ম্যাঙ্গিফেরা গণের অন্যান্য প্রজাতিগুলো (যেমন: হর্স ম্যাঙ্গো, ম্যাঙ্গিফেরা ফ্লোটিডা) স্থানীয়ভাবে আবাদ করা হয়।ধারণা করা হয়, আম প্রায় সাড়ে ৬০০ বছরের পুরনো।
আম | |
---|---|
আপেল আম | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | সপুষ্পক উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | ইয়ুদিকটস |
শ্রেণীবিহীন: | রোসিডস |
বর্গ: | সেপিন্ডেলস |
পরিবার: | অ্যানাকার্ডিয়েসিয়েই |
গণ: | ম্যাঙ্গিফেরা |
প্রজাতি: | এম. ইন্ডিকা |
দ্বিপদী নাম | |
ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা কার্ল লিনিয়াস | |
প্রতিশব্দ | |
Mangifera austroyunnanensis Hu[1] |
আম ফল সারা পৃথিবীতে খুবই জনপ্রিয়, এরকম পছন্দের ফল পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। এমন কোনো জাতি নেই যারা আম পছন্দ করেনা। তাই একে সন্মান দিয়ে ʼফলের রাজাʼ বলা হয়।
আমের জন্মস্থান নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। বৈজ্ঞানিক ‘ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা’ নামের এ ফল ভারতীয় অঞ্চলের কোথায় প্রথম দেখা গেছে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমাদের এ জনপদেই যে আমের আদিবাস— এ সম্পর্কে আম বিজ্ঞানীরা একমত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭-এ আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় আম দেখে ও খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ সময়ই আম ছড়িয়ে পড়ে মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও মাদাগাস্কারে।
চীন পর্যটক হিউয়েন সাঙ ৬৩২ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে বাংলাদেশের আমকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করেন। ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে আফ্রিকায় আম চাষ শুরু হয়। এরপর ১৬ শতাব্দীতে পারস্য উপসাগরে, ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডের কাচের ঘরে, ১৭ শতাব্দীতে ইয়েমেনে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে আম চাষের খবর জানা যায়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আমের আঁটি থেকে গাছ হয়। এভাবেই আম ফলটি বিশ্ববাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।
জানা যায়, মোগল সম্রাট আকবর ভারতের শাহবাগের দাঁড়ভাঙায় এক লাখ আমের চারা রোপণ করে উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের আম বাগান সৃষ্টি করেন। আমের আছে বাহারি নাম বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ। গোলাপখাস,ফজলি, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি, গোপালভোগ, কল্পনা,মোহনভোগ জিলাপিভোগ, লক্ষণভোগ, মিছরিভোগ, বোম্বাই, চৌসা,ক্ষীরভোগ, বৃন্দাবনী, চন্দনী, হাজিডাঙ্গ, সিঁদুরা, গিরিয়াধারী, বউভুলানী, জামাইপছন্দ, বাদশভোগ, রানীভোগ, দুধসর, মিছরিকান্ত, বাতাসা, মধুচুসকি, রাজভোগ, মেহেরসাগর, কালীভোগ, সুন্দরী, আম্রপালি, পানবোঁটা, দেলসাদ, কালপাহাড়সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওয়া যায় প্রায় ৩০০ জাতের আম। তবে অনেকগুলো এখন লুপ্তপ্রায়।
পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম আছে। আমের প্রায় কয়েকশ জাত রয়েছে।[6] যেমন: ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসাপাত, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপুরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী আম রূপালি ইত্যাদি। আমের ফলের আকার, আকৃতি, মিষ্টতা, ত্বকের রঙ এবং ভেতরের ফলের বর্ণ (যা ফ্যাকাশে হলুদ, সোনালি বা কমলা হতে পারে) জাতভেদে পরিবর্তিত হয়।[4] ভারতের মালদহ , মুর্শিদাবাদ-এ প্রচুর পরিমাণে আম চাষ হয়ে থাকে। আম ভারত ,হাইতি, ফিলিপাইন ও পাকিস্তানের জাতীয় ফল,[7] এবং বাংলাদেশের জাতীয় গাছ।[8][9] বাংলাদেশের রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম চাষ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।
ইংরেজি শব্দ Mango (বহুবচন "Mangoes" বা "Mangos") পর্তুগিজ শব্দ, Manga, মালয় শব্দ, manga এবং দ্রাবিড় ভাষাসমূহ (তামিল) শব্দ, mankay থেকে উদ্ভূত, যেখানে man অর্থ "আমের গাছ" এবং kay অর্থ "ফল"।[10] mango নামটি ১৫শ এবং ১৬শ শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারতের সাথে ইংল্যান্ডের মশলার ব্যবসার সময় বিকশিত হয়েছিল।[10]
বাংলায় আম শব্দটি সংস্কৃত ‘আম্র’ থেকে উদ্ভূত এবং বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘আম’ অর্থ — অম্র, আম্র, চূত, ফলের রাজা নামে পরিচিত ফলবিশেষ প্রভৃতি।[11]
আম গাছ সাধারণত ৩০-৪০ মিটার (১১৫-১৩০ ফিট) লম্বা এবং সর্বোচ্চ ১০ মিটার (৩৩ ফিট) ব্যাসার্ধের হয়ে থাকে। আম গাছ বহু বছর বাঁচে, এর কিছু প্রজাতিকে ৩০০ বছর বয়সেও ফলবতী হতে দেখা যায়। এর প্রধান শিকড় মাটির নিচে প্রায় ৬ মিটার: (২০ ফিট) গভীর পর্যন্ত যায়। আম গাছের পাতা চিরসবুজ, সরল, পর্যায়ক্রমিক, ১৫-৩৫ সে.মি. লম্বা এবং ৬-১৬ সে.মি. চওড়া হয়ে থাকে; কচি পাতা দেখতে লালচে-গোলাপী রঙের হয়। আমের মুকুল বের হয় ডালের ডগা থেকে, মুকুল থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে।
পাকা আমের আকার, আকৃতি, রঙ, মিষ্টতা এবং গুণগত মান জাতভেদে বিভিন্নরকম হয়ে থাকে।[4] আমগুলো জাতভেদে হলুদ, কমলা, লাল বা সবুজ বর্ণের হতে পারে।[4] ফলটি একক ত্বকবিশিষ্ট, লম্বাকৃতির বীজত্বক থাকে। বীজত্বক পৃষ্ঠ তন্তুযুক্ত বা লোমশ হতে পারে এবং পাল্প থেকে সহজে আলাদা করা যায় না।[4] ফলগুলো বৃত্তাকার, ডিম্বাকৃতির বা বৃক্ক আকারের হয়ে থাকে। দৈর্ঘ্যে একেকটি আম ৫–২৫ সেন্টিমিটার (২–১০ ইঞ্চি) এবং ওজনে ১৪০ গ্রাম (৫ আউন্স) থেকে ২ কিলোগ্রাম (৫ পা) হয়ে থাকে।[4] ফলত্বক চামড়ার মতো, মোমের আস্তরণযুক্ত, মসৃণ এবং সুগন্ধযুক্ত, রঙ সবুজ থেকে হলুদ, হলুদ-কমলা, হলুদ-লাল বা পুরোপুরি পাকলে লাল, বেগুনি, গোলাপী বা হলুদের বিভিন্ন শেডের মিশ্রণযুক্ত।[4]
পাকা অক্ষত আম থেকে মিষ্টি স্বাদযুক্ত সুবাস পাওয়া যায়।[4] বীজত্বকের ভিতরে ১–২ মিমি (০.০৩৯–০.০৭৯ ইঞ্চি) পুরু পাতলা আস্তরণযুক্ত একটি একক বীজ থাকে যা ৪–৭ সেমি (১.৬–২.৮ ইঞ্চি) লম্বা। আমগুলোতে অ-পুনরুদ্ধারযোগ্য বীজ থাকে যা ঠাণ্ডায় জমে বা শুকিয়ে গেলে তা থেকে আর চারা উৎপন্ন হয় না।[12] আমের বীজ থেকে সহজেই চারা জন্ম নেয় ও বেড়ে উঠে। সাধারণত অঙ্কুরোদগমের হার সর্বাধিক থাকে যখন পরিপক্ক ফল থেকে বীজ নেওয়া হয়।[4]
ভারতীয় উপমহাদেশে আম কয়েক হাজার বছর ধরে চাষাবাদ চলছে,[13] পূর্ব এশিয়াতে আমের প্রচলন হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫ম-৪র্থ শতাব্দী থেকে এবং চাষাবাদ শুরু হয় আরো পরে খ্রিষ্টাব্দ ১০ম শতাব্দী দিকে[13]। ভারতীয় উপমহাদেশ এবং পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশের পর পৃথিবীর অন্য যেসব দেশে ভারতীয় উপমহাদেশের মত জলবায়ু রয়েছে, যেমন: ব্রাজিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা মেক্সিকোতে আরো অনেক পরে আমের প্রচলন ও উৎপাদন শুরু হয়।[13] মরোক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ১৪ শতকে আমের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন।[14]
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত উষ্ণ প্রধান জলবায়ুর অঞ্চল গুলোতে আমের চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি আম উৎপাদন হয় শুধুমাত্র ভারতেই[15][16][17]। এর পর অন্যান্য যেসব দেশ আম উৎপাদন করে তার মধ্যে আছে চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা প্রভৃতি। আম খুব উপকারী ফল।
বাংলাদেশে চাঁপাইনবাবগন্জ জেলা আমের জন্য বিখ্যাত। "কানসাট আম বাজার" বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ আম বাজার হিসেবে পরিচিত। মকিমপুর, চককির্ত্তী, লসিপুর, জালিবাগান, খানাবাগান সহ বিশেষ কিছু জায়গায় অত্যন্ত সুস্বাদু এবং চাহিদা সম্পূর্ণ আম পাওয়া যায়।
আমের নাম | পরিপক্বতার সময় |
---|---|
গোবিন্দভোগ | ২৫শে মের পর থেকে |
গোলাপখাস | ৩০শে মের পর থেকে |
গোপালভোগ | ১লা জুনের পর থেকে |
রানিপছন্দ | ৫ই জুনের পর থেকে |
হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত | ১২ই জুনের পর থেকে |
ল্যাংড়া | ১৫ই জুনের পর থেকে |
লক্ষ্মণভোগ | ২০শে জুনের পর থেকে |
হাড়িভাঙ্গা | ২০শে জুনের পর থেকে |
আম্রপালি | ১লা জুলাই থেকে থেকে |
মল্লিকা | ১লা জুলাই থেকে থেকে |
ফজলি | ৭ জুলাই থেকে থেকে |
আশ্বিনা | ২৫শে জুলাই থেকে |
আমের কয়েক শতাধিক জাত রয়েছে যাদের নামকরণ করা হয়েছে। আমের বাগানে পরাগায়নের সময় জন্য প্রায়শই বেশ কয়েকটি নতুন জাত জন্মে। অনেক পছন্দসই জাতগুলো মনোএমব্রায়োনিক হয় এবং কলমের মাধ্যমে তা প্রচার করতে হয়, নতুবা সেগুলো চারা উৎপন্ন করে না। একটি সাধারণ মনোএমব্রায়নিক জাত 'আলফোনসো', যা 'আমের রাজা' হিসেবে বিবেচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য।[19]
একটি জলবায়ুতে ভালো জাত অন্য কোথাও লাগালে ব্যর্থ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপঃ 'জুলি' একটি ভারতীয় জাত যা জ্যামাইকাতেও ব্যবসাসফল, তবে ফ্লোরিডায় এটিকে চাষ করতে হলে প্রাণঘাতী ছত্রাকজনিত রোগ অ্যানথ্রাকনোজ থেকে বাঁচতে বার্ষিক ছত্রাকনাশক চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। এশীয় আমগুলো অ্যানথ্রাকনোজ প্রতিরোধী।
বর্তমান বিশ্ববাজারে কৃষক 'টমি অ্যাটকিনস' আধিপত্য বিস্তার করেছে, এটি 'হ্যাডেন' এর চারা থেকে উৎপন্ন যা ১৯৪০ সালে দক্ষিণ ফ্লোরিডায় প্রথম ফল দিয়েছিল এবং প্রথমদিকে ফ্লোরিডার গবেষকরা বাণিজ্যিকভাবে এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[20] বিশ্বব্যাপী উৎপাদক এবং আমদানিকারকরা এর দুর্দান্ত ফলন এবং রোগ প্রতিরোধ, শেলফ লাইফ, পরিবহনযোগ্যতা, আকার এবং আবেদনময় রঙের জন্যএই জাতটিকে আলিঙ্গন করে নিয়েছেন।[21] যদিও টমি অ্যাটকিন্স চাষ বাণিজ্যিকভাবে সফল, খাবার জন্য গ্রাহকরা আলফোনসোর মতো অন্য জাতগুলোকেও পছন্দ করতে পারেন।[19][21]
সাধারণত পাকা আমে কমলা-হলুদ বা লালচে খোসা থাকে এবং সরস হওয়ায় এটি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত থাকে, তবে রপ্তানি করার সময় প্রায়শই সবুজ খোসাযুক্ত কাঁচা আম বাছাই করা হয়। পাকানোর জন্য ইথিলিন ব্যবহার করা হলেও রপ্তানি করা অপরিপক্ব আমের প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের মতো রস এবং স্বাদ নেই।
নিম্নে কিছু দেশি জাতের নাম উল্লেখ করা হলোঃ
আয়ুর্বেদ ও ইউনানি পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা আম ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা আম এমনকি কাঁচা আম মহৌষধ। কচি পাতার রস দাঁতের ব্যথা উপশমকারী। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরনো আমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালা-যন্ত্রণা উপশম করে। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমের পাতার চূর্ণ ব্যবহৃত হয়।
২০১৯ সালে, বিশ্বব্যাপী আমের উৎপাদন (রিপোর্টে ম্যাঙ্গোস্টিন এবং পেয়ারা অন্তর্ভুক্ত ছিল) ছিল প্রায় ৫৬ মিলিয়ন টন, যার মধ্যে শুধু ভারতেই হয়েছে বিশ্বের মোট ৪৬% (২৬ মিলিয়ন টন) (টেবিল দেখুন)।[18] ইন্দোনেশিয়া, চীন এবং মেক্সিকো পরবর্তী বৃহত্তম উৎপাদক দেশ ছিল।
পাইকারি পর্যায়ে আমের দাম আকার, জাতের বিভিন্নতা এবং অন্যান্য কারনে কমবেশি হয়। ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত সমস্ত আমের জন্য কৃষি বিভাগের রিপোর্টকৃত এফওবি দাম বাক্সপ্রতি (৪কেজি/বাক্স) আনুমানিক ৪.৬০ মার্কিন ডলার (গড় সর্বনিম্ন দাম) থেকে ৫.৭৪ মার্কিন ডলার (গড় সর্বোচ্চ দাম) পর্যন্ত ছিল।[22]
আম সাধারণত মিষ্টি, যদিও স্বাদ এবং গড়ন বিভিন্ন জাতের বিভিন্নরকম; যেমন আলফানসো আম নরম, কোমল, সরস, অনেকটা অতিপক্ব বরইয়ের মত, অন্যদিকে টমি অ্যাটকিনস (আমের একটি জাত) শক্ত, কতকটা ফুটি বা অ্যাভোকাডোর মত ও আঁশযুক্ত।[23]
ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি আম থেকে চাটনি, আচার, আমসত্ত্ব, মোরব্বা, জ্যাম, জেলি ও জুস তৈরি হয়। তবে কাঁচা অবস্থায়, আচার বানিয়ে বা রান্না করে খেলে সংবেদনশীল মানুষদের ঠোঁট, মাড়ি বা জিহ্বায় ডার্মাটাইটিস (চর্মরোগ) হবার সম্ভাবনা রয়েছে।[24]
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান | |
---|---|
শক্তি | ২৫০ কিজু (৬০ kcal) |
১৫ g | |
চিনি | ১৩.৭ |
খাদ্য আঁশ | ১.৬ g |
০.৩৮ g | |
০.৮২ g | |
ভিটামিন | পরিমাণ দৈপ%† |
ভিটামিন এ সমতুল্য লুটিন জিয়াক্সানথিন | ৭% ৫৪ μg৬% ৬৪০ μg২৩ μg |
থায়ামিন (বি১) | ২% ০.০২৮ মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন (বি২) | ৩% ০.০৩৮ মিগ্রা |
নায়াসিন (বি৩) | ৪% ০.৬৬৯ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ৪% ০.১৯৭ মিগ্রা |
ভিটামিন বি৬ | ৯% ০.১১৯ মিগ্রা |
ফোলেট (বি৯) | ১১% ৪৩ μg |
কোলিন | ২% ৭.৬ মিগ্রা |
ভিটামিন সি | ৪৪% ৩৬.৪ মিগ্রা |
ভিটামিন ই | ৬% ০.৯ মিগ্রা |
ভিটামিন কে | ৪% ৪.২ μg |
খনিজ | পরিমাণ দৈপ%† |
ক্যালসিয়াম | ১% ১১ মিগ্রা |
লৌহ | ১% ০.১৬ মিগ্রা |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩% ১০ মিগ্রা |
ম্যাঙ্গানিজ | ৩% ০.০৬৩ মিগ্রা |
ফসফরাস | ২% ১৪ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ৪% ১৬৮ মিগ্রা |
সোডিয়াম | ০% ১ মিগ্রা |
জিংক | ১% ০.০৯ মিগ্রা |
| |
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল |
আম রান্নায় বহুল ব্যবহৃত একটি ফল। টক, কাঁচা আমের ভর্তা, চাটনি ও আচার বানানো হয়।[25] ডাল এবং বাঙালি রন্ধনশৈলীতে অন্যান্য খাবারে ব্যবহার করা হয়, অথবা লবণ, মরিচ বা সয়া সসের সাথে কাঁচা খাওয়া যেতে পারে। আমের পানা নামে গ্রীষ্মকালীন এক ধরনের পানীয় আম থেকেই তৈরি হয়। আমের পাল্প থেকে জেলি তৈরি করে বা লাল রঙা ডাল এবং কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না করে ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়। আমের লাচ্ছি দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে বেশ জনপ্রিয়,[26] যা পাকা আম বা আমের পাল্পের সাথে মাখন/দুধ ও চিনির সাথে মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়। পাকা আম তরকারিতেও ব্যবহৃত হয়।আমরস চিনি বা দুধের সাথে আম দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় পানীয়, যা চাপাটি বা পুরির সাথে খাওয়া হয়। পাকা আম থেকে নেওয়া পাল্পম্যাঙ্গাদা নামক মোরব্বা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। "অন্ধ্র আভাকায়া" কাঁচা, পাল্পসমৃদ্ধ এবং টক আমের সাথে মরিচের গুঁড়ো, মেথি বীজ, সরিষার গুঁড়ো, লবণ এবং চিনাবাদাম তেলের সাথে মিশিয়ে তৈরি এক ধরনের আচার। ডাল প্রস্তুতিতেও আম অন্ধ্র প্রদেশে ব্যবহৃত হয়। গুজরাটিরা চান্ডা (মসলাযুক্ত, মিষ্টি আমের তৈরি খাবার) বানাতে আম ব্যবহার করে।
আম মোরব্বা (ফল সংরক্ষণ পদ্ধতি), মুরাম্বা (মিষ্টি, পাকা আমের তৈরি খাবার), আমচুর (শুকনো এবং চূর্ণ কাঁচা আম), এবং আচার (একটি মসলাযুক্ত সরিষা তেল ও এলকোহল মিশ্রিত খাবার) তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। পাকা আমগুলো প্রায়শই পাতলা করে কেটে খোসা বাদ দেওয়া হয় এবং তারপর কাটা হয়। প্রাপ্ত বারগুলো কিছু দেশে প্রাপ্ত শুকনো পেয়ারার বারের মতো। ফলটি খাদ্যশস্য পণ্যগুলোতে (যেমন মুসেলি এবং ওট গ্রানোলাতে) মেশানো হয়। প্রায়শই হাওয়াইয়ে আমকাঠ প্রস্তুত করা হয়।
কাঁচা আম ব্যাগুং (বিশেষত ফিলিপাইনে), মাছের সস, ভিনেগার, সয়া সস, বা লবণ (কেবল লবণ বা মসলা মিশিয়ে) দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টি, পাকা আমের টুকরাগুলো শুকনো করে (কখনও কখনও বীজহীন তেঁতুলের সাথে মিলিয়ে ম্যাঙ্গোরাইন্ড তৈরি করে) খাওয়াও জনপ্রিয়। আম দিয়ে আমের রস, আমের মধু বানানো যায় এবং আইসক্রিম এবং শরবতের প্রধান ও স্বাদ সৃষ্টির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
আমকে এছাড়াও রস, স্মুথি, আইসক্রিম, ফলের বার, র্যাসপাডোস (raspados), অ্যাগুয়াস ফ্রেস্কাস (Aguas frescas), পাই (pies), এবং মিষ্টি চিলি সস, অথবা চ্যাময় (Chamoy) এর সঙ্গে মিশিয়ে মিষ্টি ও মসলাযুক্ত চিলি পেস্ট তৈরিতে করতে ব্যবহার করা হয়। এটি ঝাল মরিচের গুঁড়ো এবং লবণ মেশানো কাঠি বা তাজা ফলের সংমিশ্রণের একটি প্রধান উপাদান হিসেবে জনপ্রিয়। মধ্য আমেরিকায় কাঁচা আমকে হয় নুন, ভিনেগার, গোল মরিচ এবং ঝাল সসের সাথে মিশ্রিত করে খাওয়া হয় অথবা পাকার পর বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়।
আমের টুকরার ভর্তা করা হয়, আবার একটি আইসক্রিম উপর চূড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিংবা দুধ এবং যেমন বরফ সঙ্গে মিশ্রিত করে মিল্কশেক প্রস্তুত করা হয়। মিষ্টি আঠালো ভাতে নারকেল দিয়ে স্বাদ বাড়ানো হয়, তার পরে ডেজার্ট হিসেবে পাকা আম পরিবেশন করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে আমের ফিশ সস এবং রাইস ভিনেগার সহকারে আচার বানানো হয়। আমের সালাদে ফিস সস এবং শুকনো চিংড়ি সহযোগে কাঁচা আম ব্যবহার করা যেতে পারে। কনডেন্সড মিল্ক সহ আমকে চাঁচা বরফের চূড়া হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
একটি কাঁচা আমে ৮৪% পানি বা জল, ১৫% কার্বোহাইড্রেট, ১% প্রোটিন এবং নগন্য ফ্যাট (টেবিল) থাকে।
সাধারণ আমের প্রতি ১০০গ্রাম(৩.৫ওজ) এ শক্তি মান ২৫০ কিলোজুল (৬০ কিলোক্যালরি)। টাটকা আমে দৈনিক ভ্যালু হিসেবে শুধুমাত্র ভিটামিন সি এবং ফলিক অ্যাসিড উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে যার পরিমাণ যথাক্রমে ৪৪% এবং ১১% (টেবিল)।
আমের খোসায় এবং পাল্পের মধ্যে ট্রাইটারপিন, লুপোলের মতো অসংখ্য ফাইটোকেমিক্যালস উপস্থিত রয়েছে।[27] গবেষণায় দেখা গেছে আমের খোসার রঞ্জক কণিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যারোটিনয়েডস, যেমন প্রোভিটামিন এ যৌগ, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন, আলফা-ক্যারোটিন,[28][29] এবং কোয়েরসিটিন, কেম্পফেরল, গ্যালিক অ্যাসিড, ক্যাফেইক অ্যাসিড, ক্যাটিচিন এবং ট্যানিনের মতো পলিফেনল রয়েছে। [30][31] আমের মধ্যে ম্যাঙ্গিফেরিন নামে একটি অনন্য জ্যান্থোনয়েড রয়েছে।[32]
ফাইটোকেমিক্যাল এবং পুষ্টি উপাদানগুলো আমের জাতভেদে বিভিন্ন পরিমাণে থাকে।[33] আমের পাল্প থেকে ২৫ টিরও বেশি ক্যারোটিনয়েড শণাক্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে ঘনতম বিটা ক্যারোটিন ছিল, যা বেশিরভাগ আমের জাতে হলুদ-কমলা রঙের পিগমেন্ট হিসেবে কাজ করে।[34] আমের পাতাগুলোতেও জ্যান্থোনয়েড, ম্যাঙ্গিফেরিন এবং গ্যালিক এসিডসহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পলিফেনল উপাদান রয়েছে।[35]
ইউজ্যানথিন পিগমেন্ট, যা ভারতীয় হলুদ নামে পরিচিত, বেশিরভাগই আমের পাতা খাওয়ানো গবাদি পশুর প্রস্রাব থেকে উৎপাদিত হয় বলে মনে করা হয়; গবাদি পশুর অপুষ্টি এবং সম্ভাব্য উড়ুশিয়োল বিষক্রিয়ার কারণে ১৯০৮ সালে এরূপ করা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।[36] ইউজ্যানথিনের এই অনুমিত উৎসটি একটি একক, উপাখ্যানীয় প্রমাণের উপর নির্ভরশীল বলে মনে হয় এবং ভারতীয় আইনসমূহ এ জাতীয় কাজকে নিষিদ্ধ করে না। [37]
আমের স্বাদ প্রধানত টারপিন, ফিউরানোন, ল্যাকটোন এবং অ্যাস্টার শ্রেণির বিভিন্ন উদ্বায়ী জৈব রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণে সৃষ্ট। বিভিন্ন জাতের আমে বিভিন্ন ধরনের উদ্বায়ী রাসায়নিক পদার্থ বা একই ধরনের তবে বিভিন্ন পরিমাণের উদ্বায়ী রাসায়নিক পদার্থ থেকে স্বাদ সৃষ্টি হয়।[38] সাধারণভাবে, নয়াবিশ্বে আমের জাতগুলো বেশিরভাগই δ-3-carene, একটি মনোটারপিন ফ্লেভারযুক্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ; অন্যদিকে, অন্যান্য মনোটারপিনের উচ্চ ঘনত্ব যেমন (Z)-ocimene এবং myrcene, পাশাপাশি ল্যাকটোন এবং ফিউরানোনসের উপস্থিতি প্রাচীন বিশ্বের জাতের অনন্য বৈশিষ্ট্য।[39][40][41] ভারতে 'আলফানসো' অন্যতম জনপ্রিয় জাত। 'আলফানসো' আমের মধ্যে ল্যাকটোনস এবং ফিউরানোনগুলো পাকার সময় সংশ্লেষিত হয়; যেখানে টারপিনস এবং অন্যান্য স্বাদকুঁড়িগুলো অপরিপক্ক এবং পাকা উভয় ফলেই উপস্থিত থাকে।[42][43][44] আম পাকায় জড়িত বলে ইথিলিন সবার নিকট পরিচিত, একটি ফল পাকানোর হরমোন, আমের ভেতরে স্বাদের পরিবর্তন ঘটায়, যা বাইরে থেকে প্রয়োগেও কার্যকর।[45][46] আমের স্বাদ সৃষ্টির রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে প্রচুর পরিমাণে তথ্য থাকা সত্ত্বেও এই রাসায়নিক গুলোর জৈব সংশ্লেষণ কীভাবে হয় তা নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করা হয়নি; আজ অবধি কেবল স্বাদযুক্ত জৈব-সংশ্লেষণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী এনজাইমগুলোকে এনকোডিং করে এমন কয়েকটি প্রধান জিন সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়েছে।[47][48][49][50]
আমের পাতা, কাণ্ড, নরম কাষ্ঠ এবং ত্বকের তৈলাক্ত পদার্থের (আঠা) সাথে স্পর্শের ফলে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের মধ্যে ডার্মাটাইটিস এবং অ্যানাফাইল্যাক্সিস হতে পারে।[4][51][52] যাদের সাথে এরূপ ডার্মাটাইটিস হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, তাদের মধ্যে উরুশিয়োল দ্বারা প্ররোচিত (একটি অ্যালার্জেন পদার্থ যা বিষ আইভি, বিষ ওক, বা বিষ সামাকের মধ্যে পাওয়া যায়) ব্যক্তির আমের ডার্মাটাইটিসের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।[53] অন্যান্য আমের যৌগগুলোর মধ্যে সম্ভবত ম্যাঙ্গিফেরিন, ডার্মাটাইটিস বা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী।[4] আমের অ্যালার্জেন এবং উরুশিয়োলের মধ্যে বিরূপ-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।[54] সংবেদনশীল ব্যক্তিরা নিরাপদে খোসা ছাড়ানো আম খেতে বা আমের রস পান করতে নাও পারেন।[4]
আমের গাছে যখন বসন্তে ফুল ফোটে, অ্যালার্জিযুক্ত স্থানীয় লোকেরা ফুলের পরাগ বাতাসে ছড়ানোর হওয়ার আগেই শ্বাসকষ্ট, চোখ চুলকানি বা মুখের ফোলাভাব বুঝতে পারেন।[4] সেক্ষেত্রে, অ্যালার্জিক বস্তুটি সম্ভবত ফুল থেকে বাষ্প হয়ে যাওয়া তেল।[4] আম পাকার মৌসুমের শুরুতে আমের গাছের – প্রাথমিকভাবে নরম কাঠ, পাতা এবং ফলের ত্বক[4] অংশগুলোর সাথে স্পর্শ হওয়া – হাওয়াইতে উদ্ভিদের ডার্মাটাইটিসের একটি সাধারণ কারণ।[55]
জেনেটিক বিশ্লেষণ এবং মেঘালয়ের দামালগিরির কাছে পাওয়া প্যালিওসিন যুগের আম গাছের পাতার জীবাশ্মের সঙ্গে আধুনিক আম তুলনা করে জানা যায় আম গণের উৎপত্তি ছিল ভারতীয় এবং এশীয় মহাদেশীয় প্লেটের সংযোগস্থলে, ভারতীয় উপমহাদেশে, প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছর আগে।[56] সম্ভবত ২০০০ খ্রিস্টপূর্বের প্রথম দিকে ভারতে আম চাষ করা হত।[57] খ্রিস্টপূর্ব ৪০০-৫০০ অবধি আমকে পূর্ব এশিয়ায় আনা হয়েছিল, ১৪ ই শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে সোয়াহিলি উপকূলে আম পাওয়া যেত,[58] এবং ১৫ শতকে ফিলিপাইনে এবং ১৬শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ পরিব্রাজকরা ব্রাজিলে আম নিয়ে এসেছিলেন।[59]
মালাবার অঞ্চলের ডাচ কমান্ডার হেন্ডরিক ভ্যান রিডি তাঁর ১৬৭৮ সালের হর্টাস মালাবারিকাসে গ্রন্থে অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন উদ্ভিদ হিসেবে আমের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।[60] যখন ১৭শ শতাব্দীতে আমেরিকান উপনিবেশগুলোতে প্রথম আম আমদানি করা হয়েছিল, তখন সংরক্ষণের অভাবে এগুলোর আচার বানাতে হয়েছিল। অন্যান্য ফলগুলোরও আচার বানানো হয়েছিল এবং সেগুলো "আম" এর নামেই পরিচিত ছিল, বিশেষত বেল মরিচ এবং ১৮শ শতাব্দীতে, "ম্যাংগো" শব্দটি ক্রিয়াপদে পরিণত হয়েছিল যার অর্থ ছিল "আচার বানানো"।[61]
আম একটি বিবেচনা করা হয় বিবর্তনীয় কালবৈষম্য হিসেবে (একযুগের বস্তু, ব্যক্তি, ঘটনা ইত্যাদিকে ভুল করে অন্য যুগের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা), যেখানে বিলুপ্ত বিবর্তনীয় জীবের মাধ্যমে বীজ ছড়িয়ে পড়ে- যেমনভাবে হয়েছিল প্রাণীজগতের স্তন্যপায়ীরা। [62]
আম ভারতের জাতীয় ফল।[63][64] এটি বাংলাদেশেরও জাতীয় গাছ।[65][66] ভারতে, আমের ফলন ও বেচাকেনা মার্চ-মে মাসে হয় এবং এসকল খবর বার্ষিক সংবাদ সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত হয়।[19]
দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতির সাথে আমের চিরাচরিত সম্পর্ক রয়েছে। মৌর্য সম্রাট অশোকের নির্দেশে সাম্রাজ্যের রাস্তাগুলোতে ফলদ এবং ছায়া বহনকারী গাছ লাগানোর বিষয়ে তাঁর নির্দেশাবলীতে উল্লেখ রয়েছে:
"রাস্তায় বট-গাছগুলো আমার দ্বারা রোপিত হয়েছিল, যাতে তারা গবাদি পশু এবং পুরুষদের ছায়া সরবরাহ করতে পারে, (এবং) আমের চারা রোপণ করা হয়েছিল।"
মধ্যযুগীয় ভারতে, ইন্দো-পার্সিয়ান কবি আমির খসরু আমকে"নাঘজা তারিন মেওয়া হিন্দুস্তান" - "হিন্দুস্তানের সবচেয়ে সুন্দর ফল" বলে অভিহিত করেছিলেন। দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির দরবারে আম খাওয়া হতো এবং মুঘল সাম্রাজ্যে ফলকে বিশেষভাবে পছন্দ করা হত: বাবর তাঁরবাবরনামায় আমের প্রশংসা করেছিলেন, শের শাহ সুরি মুঘল সম্রাট হুমায়ূনের বিরুদ্ধে তাঁর বিজয়ের পরে চাউসা জাতটির উদ্বোধন করেছিলেন।। উদ্যানচর্চায় মুঘল পৃষ্ঠপোষকতার ফলে বিখ্যাত তোতাপুরী জাত, যা ইরান এবং মধ্য এশিয়ায় রপ্তানি করা প্রথম জাত ছিল, সেটি সহ হাজার হাজার আমের জাতের কলম করা শুরু হয়েছিল। বলা হয় আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) বিহারের দ্বারভাঙ্গার লাখি বাগে ১০০, ০০০ গাছসমৃদ্ধ একটি আম বাগান করেছেন।[67] জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান লাহোর ও দিল্লিতে আমের বাগানে করার এবং আমের তৈরি মিষ্টান্ন বানানোর আদেশ দেন।[68]
জৈন দেবী অম্বিকাকে ঐতিহ্যগতভাবে একটি আমের গাছের নিচে বসে উপস্থাপন করা হয়।[69] আমের ফুল সরস্বতী দেবীর পূজায়ও ব্যবহৃত হয়। আমের পাতাগ ভারতীয় বাড়ির ফটক এবং দরজা সাজাতে এবং বিয়ে ও গনেশ চতুর্থীর মতো উৎসবের সময় ব্যবহার করা হয়। আমের মোটিফ এবং পাইসলেগুলো বিভিন্ন ভারতীয় সূচিকর্মে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং কাশ্মীরি শাল, কাঞ্চিপুরম এবং সিল্ক শাড়িতে পাওয়া যায়। তামিলনাড়ুতে আমকে মিষ্টতা এবং স্বাদের জন্য তিনটি রাজকীয় ফলগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হয় যার বাকি দুটি হল কলা এবং কাঁঠাল।[70] ফলের এই ত্রয়ীকে মা-পালা-ভাজাই বলা হয়। ধ্রুপদী সংস্কৃত কবি কালিদাস আমের প্রশংসায় গেয়েছিলেন।[71]
সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় জনগণের প্রতি চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের ভালবাসার প্রতীক হিসাবে আম চীনে জনপ্রিয় হয়ে উছিল।[72]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.