Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তৈমুরি সাম্রাজ্য (ফার্সি: تیموریان) বা গুরকানি (ফার্সি: گورکانیان, গুরকানিয়ান) ছিল একটি পারস্যায়িত[৪][৫] তুর্ক-মঙ্গোল সাম্রাজ্য। এটি বর্তমান ইরান, ককেসাস, মেসোপটেমিয়া, আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া, পাকিস্তান, সিরিয়া ও তুরস্ক জুড়ে বিস্তৃত ছিল।
তৈমুরি সাম্রাজ্য
| |||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৩৭০–১৫০৭ | |||||||||||||||||||||||||||||
পতাকা | |||||||||||||||||||||||||||||
তৈমুরের মৃত্যুকালে তৈমুরি সাম্রাজ্য (১৪০৫) | |||||||||||||||||||||||||||||
রাজধানী | |||||||||||||||||||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | |||||||||||||||||||||||||||||
ধর্ম | ইসলাম | ||||||||||||||||||||||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||||||||||||||||||||||
আমির | |||||||||||||||||||||||||||||
• ১৩৭০–১৪০৫ | তৈমুর (প্রথম) | ||||||||||||||||||||||||||||
• ১৫০৬–১৫০৭ | বদিউজ্জামান মীর্জা (শেষ) | ||||||||||||||||||||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | মধ্যযুগ | ||||||||||||||||||||||||||||
• তৈমুরের অভিযানের সূচনা | ১৩৬৩ | ||||||||||||||||||||||||||||
• তৈমুরি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা | ৯ এপ্রিল ১৩৭০ | ||||||||||||||||||||||||||||
• পশ্চিমমুখী সম্প্রসারণের সূচনা | ১৩৮০ | ||||||||||||||||||||||||||||
২০ জুলাই ১৪০২ | |||||||||||||||||||||||||||||
• সমরকন্দের পতন | ১৫০৫ | ||||||||||||||||||||||||||||
• হেরাতের পতন | ১৫০৭ | ||||||||||||||||||||||||||||
• মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা | ২১ এপ্রিল ১৫২৬ | ||||||||||||||||||||||||||||
আয়তন | |||||||||||||||||||||||||||||
১৪০৫ est.[২][৩] | ৪৪,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৭,০০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ |
সম্রাট তৈমুর বেগ এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। ১৪৬৭ সালে আগ কোয়ুনলুদের কাছে সাম্রাজ্যের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেও রাজবংশের উত্তরসুরিরা ছোট ছোট রাজ্য শাসন করতে থাকেন। এসব রাজ্য তৈমুরি আমিরাত নামে পরিচিত ছিল। ১৬শ শতাব্দীতে ফারগানার তৈমুরি শাহজাদা বাবর এখানে ছোট রাজ্য স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তৈমুর ১৩৬৩ সাল থেকে শুরু করে মধ্য এশিয়ার বিশাল অংশ জয় করেছিলেন। তিনি মাওয়ারাননহর ও খোয়ারিজম জয় করেছেন। ১৩৬০ এর দশকে তিনি পশ্চিম চাগাতাই খানাতের উপর নিয়ন্ত্রণ পান। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি খানের অধীনস্থ ছিলেন তবে বাস্তবে খানরা তাঁর উপর নির্ভরশীল ছিল। ১৫শ ও ১৬শ শতাব্দীতে পশ্চিম চাগাতাই খানরা তৈমুরি শাসকদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল।
১৩৮০ সালে তৈমুর পশ্চিমে অভিযান শুরু করে ইলখানাতের বিভিন্ন উত্তরসূরি রাজ্যে হামলা চালান। ১৩৮৯ সাল নাগাদ তিনি হেরাত থেকে কার্তিদের উৎখাত করেন এবং পারস্যের মূল ভূখণ্ডের দিকে অগ্রসর হন। তিনি ১৩৮৭ সালে ইস্ফাহান জয় করেন। ১৩৯৩ সালে মুজাফফরি রাজবংশ উৎখাত হয় এবং জালাইরিরা বাগদাদ থেকে বিতাড়িত হয়। ১৩৯৪-৯৫ সালে তিনি কিপচাক খানাত উপর বিজয় অর্জন করেন। তিনি জর্জিয়া অভিযান চালান। এরপর ককেসাসে তার সার্বভৌমত্ব স্থাপিত হয়। তিনি ১৩৯৮ সালে মুলতান ও দিপালপুর জয় করেন। তিনি দিল্লি আক্রমণ করেছিলেন। ১৪০০-১৪০১ সালে তিনি আলেপ্পো, দামেস্ক ও পূর্ব আনাতোলিয়া জয় করেছিলেন। ১৪০১ সালে তিনি বাগদাদ হামলা করেন। ১৪০২ সালে উসমানীয়দের সাথে তিনি আঙ্কারার যুদ্ধে জয়ী হন। উসমানীয় সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধের ফলে তিনি তৎকালীন মুসলিম শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী শাসকে পরিণত হন। তিনি সমরকন্দে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন।
তৈমুর তাঁর ছেলে ও নাতিদের বিভিন্ন সরকারি দায়িত্বে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেন। ১৪০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর অনেক শাসক কার্যত স্বাধীন হয়ে পড়ে। তবে তৈমুরি শাসকরা মধ্য এশিয়াসহ পারস্য, মেসোপটেমিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি অঞ্চলে প্রভাবশালী ছিলেন। এ সত্ত্বেও ১৪৩০ এর দশক নাগাদ আনাতোলিয়া ও ককেসাসের এলাকা তাঁদের হাতছাড়া হয়। পারস্যের শহরগুলিতে যুদ্ধজনিত ক্ষয়ক্ষতির কারণে সমরকন্দ ও হেরাত পারস্য সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়ে উঠে।[৬]
১৫০০ সাল নাগাদ বিভক্ত তৈমুরি সাম্রাজ্য নিজেদের অধিকাংশ অঞ্চল হারিয়ে ফেলে। পারস্য, ককেসাস, মেসোপটেমিয়া ও পূর্ব আনাতোলিয়ায় শিয়া মতাবলম্বী সাফাভি রাজবংশের নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়। মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল মুহাম্মদ শাইবানির নেতৃত্বে উজবেকরা দখল করে নেয়। শাইবানি ১৫০৫ ও ১৫০৭ সালে সমরকন্দ ও হেরাতের সমৃদ্ধ শহর অধিকার করেছিলেন। তিনি বুখারা খানাতের প্রতিষ্ঠা করেন। তৈমুরের বংশধর বাবর ১৫২৬ সালে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭শ শতাব্দী নাগাদ প্রায় সমগ্র ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করেছিল। পরবর্তীতে ১৮৫৭ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের বিলুপ্তির মাধ্যমে তৈমুরি রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে।
তৈমুরিরা মূলত বারলাস গোত্র থেকে উদ্ভূত। এটি ছিল তুর্ক-মঙ্গোল উৎসের গোত্র।[৭] তারা পারস্য সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছিল[৮] এবং ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে তৈমুরি সাম্রাজ্যে তুর্ক-মঙ্গোল উৎস এবং পার্সিয়ান সংস্কৃতির দ্বৈত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।[৯][৯][১০]
সমগ্র অঞ্চলে তুর্ক-মঙ্গোলরা চাগাতাই ভাষা ব্যবহার করত।[১১] তবে ফার্সি ছিল এই যুগের প্রধান ভাষা। তৈমুর পারস্য সংস্কৃতির অনুরুক্ত ছিলেন।[১২] তার অধিকৃত অধিকাংশ অঞ্চলে ফার্সি ভাষা প্রশাসন ও সাহিত্যের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠে। রাষ্ট্রীয় দপ্তর দিওয়ানের ভাষা ছিল ফার্সি এবং দপ্তরের লিপিকারদেরকে তাদের জাতি নির্বিশেষে ফার্সি বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হত।[১৩] ফার্সি তৈমুরি সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রভাষা হয়ে উঠে[১০][১৪] এবং শাসনকার্য, সাহিত্যের ভাষায় পরিণত হয়।[১৫] তবে তৈমুরি পরিবারের কথ্য ও মাতৃভাষা ছিল চাগাতাই ভাষা।[১৬] অন্যদিকে আরবি ভাষা জ্ঞান তথা বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্মীয় বিষয়ের ভাষা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।[১৭]
তৈমুরি যুগে ফার্সি সাহিত্য সমৃদ্ধি লাভ করে।[১৮] শাহরুখ মীর্জা ও তার ছেলে উলুগ বেগ পার্সিয়ান সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।[৯] তৈমুরি যুগের ফার্সি সাহিত্যের মধ্যে শরফউদ্দিন আলি ইয়াজদি কর্তৃক ফার্সি ভাষায় লেখা তৈমুরের জীবনী "জাফরনামা" ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এই গ্রন্থটি তৈমুরের জীবদ্দশায় তার দাপ্তরিক জীবনীলেখক নিজামউদ্দিন শামির রচিত "জাফরনামা" গ্রন্থকে ভিত্তি করে রচিত। জামি ছিলেন তৈমুরি যুগের সবচেয়ে খ্যাত কবি। পাশাপাশি তৈমুরি সুলতান উলুগ বেগ লিখিত বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা ফারসিতে রচিত হয়েছে। তবে তার অধিকাংশ লেখা আরবি ভাষায় রচিত।[১৯] তৈমুরি শাসক বাইসুনকুর ফার্সি মহাকাব্য শাহনামার একটি নতুন সংস্করণ তৈরীর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এটি বাইসুনকুরের শাহনামা নামে পরিচিত।
তৈমুরিরা তুর্ক সাহিত্যের বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। চাগাতাই ভাষায় এসময় সাহিত্য গড়ে উঠে। চাগাতাই কবিদের মধ্যে ছিলেন মীর আলি শের নাওয়াই, হুসাইন বাইকারা ও সম্রাট বাবর। তারা অন্য তুর্কভাষী কবিদেরকে আরবি ও ফারসির পাশাপাশি চাগাতাই ভাষায় লেখালেখির উৎসাহ দিয়েছেন।[৬][২০][২১][২২] চাগাতাই ভাষার সমৃদ্ধ নিদর্শনসমূহের মধ্যে সম্রাট বাবর রচিত আত্মজীবনী বাবরনামা অন্যতম।[২৩]
তৈমুরি যুগে পার্সিয়ান চিত্রকর্মের সমৃদ্ধ যুগের সূচনা হয়।[২৪] শিল্পীরা পারস্যের শিল্পকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে থাকেন।[২৫]
তৈমুরি স্থাপত্যে সেলজুকদের অনেক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ভবনের অলঙ্করণের জন্য এই যুগে টারকোয়েজ ও নীল টাইলসের ব্যবহার হত।[২৬] মধ্য এশিয়ায় তিমুরি স্থাপত্য ইসলামি শিল্পের সর্বোচ্চ নিদর্শন ছিল। তৈমুর ও তার উত্তরসুরিদের নির্মিত স্থাপনা ইলখানাতের প্রভাব হ্রাস করে। স্থাপত্যের মধ্যে সমরকন্দে অবস্থিত তৈমুরের মাজার গোর-এ-আমির অন্যতম।[২৭] এছাড়াও রয়েছে শহরের কেন্দ্রস্থল রেগিস্তানে অবস্থিত মাদ্রাসা, মসজিদ ও উলুগ বেগের মানমন্দির[২৭][২৭]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.