Loading AI tools
১৪০২ সালের ২০ জুলাই সংঘটিত তৈমুরি সাম্রাজ্য ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যকার যুদ্ধ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আঙ্কারার যুদ্ধ ১৪০২ সালের ২০ জুলাই সংঘটিত হয়।[17] আঙ্কারার নিকটে চুবুকের যুদ্ধক্ষেত্রে উসমানীয় সাম্রাজ্য ও তৈমুরি সাম্রাজ্যের মধ্যে এই যুদ্ধ হয়। তৈমুরিরা এই যুদ্ধে জয়ী হয়। ফলশ্রুতিতে উসমানীয় সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। যুদ্ধের তিন বছর পর তৈমুর বেগ মারা যান। এরপর তৈমুরি সাম্রাজ্যের অবনতি হতে থাকে এবং উসমানীয় সাম্রাজ্য ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হতে থাকে।
আঙ্কারার যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
একটি মুঘল চিত্রকর্মে আঙ্কারার যুদ্ধ[1] | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
তৈমুরি সাম্রাজ্য |
উসমানীয় সাম্রাজ্য সাতি ও দাগনাম রাজ্য জনিমা এস্টেট দুকাগজিনি রাজ্য কাস্ত্রোতি রাজ্য[4] মোরাভিয়ান সার্বিয়া ওয়ালাচিয়া | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
তৈমুর বেগ শাহরুখ মীর্জা মির্জা খলিল সুলতান বেগ মীরান শাহ আবু বকর সুলতান হুসাইন মির্জা পীর মুহাম্মদ বিন জাহাঙ্গির তাজউদ্দিন শাহ-ই শাহান আবুল ফাতেহ |
প্রথম বায়েজিদ যু. বন্দী বায়েজিদের ছেলে: সুলাইমান প্রথম মুহাম্মদ[9][10][11] | ||||||
শক্তি | |||||||
১৪০,০০০ থেকে ৮০০,০০০[12] |
বিতর্কিত | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
প্রায় ৪০,০০০ নিহত[15] | ৪০,০০০[15]-৫০,০০০[16] নিহত |
তৈমুর ছিলেন তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক যিনি চেঙ্গিজ খানের বংশধর ছিলেন।[18] দীর্ঘ লড়াইয়ের পর তিনি তার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।[19][20]
তিনি ১৩৯০ সালে জর্জিয়া, আজারবাইজান এবং ১৩৯৯ সালে মামলুকদের পরাজিত করে সিরিয়া জয় করেন। তার সাম্রাজ্যের সীমানা উসমানীয় সাম্রাজ্য পর্যন্ত পৌছায়। এই দুই শক্তির মধ্যে দ্রুত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয়। তৈমুরের প্রতি অনুগত একটি আনাতোলীয় বেইলিকের কাছে উসমানীয় সুলতান বায়েজিদ কর দাবি করেছিলেন।[15] তৈমুর একে নিজের প্রতি অপমান হিসেবে নেন এবং ১৪০০ সালে উসমানীয় শহর সেবাস্তে হামলা করেন।[15] ১৪০২ সালে উসমানীয়রা ইউরোপে অভিযান চালায়। তৈমুর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর হন। তৈমুরের হামলার ফলে বায়েজিদ ইউরোপ থেকে ফিরে এসে তৈমুরের মুখোমুখি হন। তৈমুর খুব দ্রুত আনাতোলিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন এবং উসমানীয় শহরগুলিতে হামলা চালান।[21] সংঘর্ষের পূর্বে তৈমুর ও বায়েজিদের মধ্যে অনেক বছর উত্তপ্ত পত্রবিনিময় হয়েছিল।[15]
দুই পক্ষের বাহিনীর প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। তৈমুরের এশিয়া মাইনরে হামলার সময় তার বাহিনী পদাতিকবিহীন এবং সকলেই অশ্বারোহী। ফলে তিনি দ্রুত অগ্রসর হতে পেরেছিলেন। তবে পরবর্তীতে বায়েজিদের বেশ কিছু মিত্র তৈমুরের সাথে যোগ দেয়। ১৮৮০ সালে প্রকাশিত "টার্কি ওল্ড এন্ড নিউ: হিস্টিকাল, জিওগ্রাফিকাল এন্ড স্ট্যাটিস্টিকাল" এ সাদারল্যান্ড মেনজিস বলেছেন যে দুই বাহিনীতে প্রায় ১০ লক্ষ সৈনিক ছিল।[22] পিটার ফ্রেডেটের মতে তৈমুর ও বায়েজিদের দলে যথাক্রমে ৮,০০,০০০ ও ৪,০০,০০০ সৈনিক ছিল।[23] রবার্ট হেনলোপেন লেবারটনের মতে তৈমুরের বাহিনীতে ৬,০০,০০০ ও বায়েজিদের বাহিনীতে ১,২০,০০০ সৈনিক ছিল।[24]
উসমানীয় বাহিনীতে তার পুত্র, গাজি, জ্যানিসারি, আনাতোলিয়ান মুসলিম[25] এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় (বলকান খ্রিস্টান[25]) সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিল।[26]
নিকোপলিসের যুদ্ধে সুলতান বায়েজিদের কাছে বন্দী হওয়া জোহান স্কিলিটবারগার বলেছেন তৈমুরের বাহিনীতে ১৬,০০,০০০ এবং বায়েজিদের বাহিনীতে ১৪,০০,০০০ সৈনিক ছিল।[27] ডেভিড নিকোলের "আর্মিস অব দ্য অটোমান টার্কস" গ্রন্থে তৈমুরের বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ১,৪০,০০০ ও বায়েজিদের বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা সর্বোচ্চ ৮৫,০০০ লিখেছেন।[28]
তৈমুরের বাহিনী এসময় উসমানীয়দেরকে পিছু হটতে বাধ্য করে। বায়েজিদকে তার সেনাপতি প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিয়ে তৈমুরের বাহিনীকে নিজেদের এলাকায় আসতে প্রলুব্ধ করে তাদের উপর হামলা চালানোর জন্য বায়েজিদকে পরামর্শ দেয়। কিন্তু বায়েজিদ আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে সামনে অগ্রসর হন। তৈমুরের বাহিনী গোপনে দক্ষিণপশ্চিমে অগ্রসর হয়। তবে উসমানীয়রা এই বিষয়ে জানতে পারেনি। তৈমুরের বাহিনী উসমানীয়দের পরিত্যক্ত তাবু ও পানির উৎস ব্যবহার করে সেখানে শিবির স্থাপন করে।[29]
উসমানীয়দের হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। তৈমুরি বাহিনী তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে পাল্টা হামলা চালায়। উসমানীয় মিত্র সার্বিয়ান রাজপুত্র স্টেফান লাজারেভিচ ও তার যোদ্ধারা ওয়ালাচিয়ান বাহিনীর সাথে তৈমুরের বাহিনীর ভেতর তিনবার প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। সার্বিয়ানরা বায়েজিদের এক ছেলেকে রক্ষা করে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। তৈমুর সার্বিয়ানদের লড়াই প্রশংসা করেছিলেন।[30][31] তৈমুর যুদ্ধের সময় পানির উৎসকে চুবুকের খাড়ির দিকে প্রবাহিত করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে উসমানীয়রা পানি থেকে বঞ্চিত হয়। চাতাল পাহাড়ে শেষ লড়াইটি সংঘটিত হয়। উসমানীয়রা তৃষার্ত ও ক্লান্ত অবস্থায় যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল। বায়েজিদ তার কিছু সৈনিককে নিয়ে নিকটস্থ পর্বতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে শীঘ্রই তিনি তৈমুরের হাতে বন্দী হন। তিন মাস পরে বন্দী অবস্থায় তিনি মারা যান।[16] উসমানীয় বাহিনীর কারাই তুর্কি ও আনাতোলীয় বেইলিকের সৈনিকদের অনেকে পক্ষ ত্যাগ করে তৈমুরের বাহিনীতে যোগ দেয়ায় উসমানীয়রা দুর্বল হয়ে পড়ে।[32]
এই যুদ্ধ উসমানীয়দের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। এর ফলশ্রুতিতে বায়েজিদের ছেলেদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। এরপর ১১ বছর এই গৃহযুদ্ধ চলমান ছিল। বায়েজিদ ছিলেন কোনো যুদ্ধে বন্দী একমাত্র উসমানীয় সুলতান। ফলে উসমানীয় ইতিহাসেও এই যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল।[33]
ধারণা করা হয় যে যুদ্ধের সময় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৫০,০০০ তুর্কি নিহত হয়েছিল।[16]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.