Loading AI tools
সাবেক রাষ্ট্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চাগতাই খানত (মঙ্গোলীয়: Tsagadaina Khaanat Ulus/Цагаадайн Хаант Улс) ছিল মধ্যযুগের একটি মঙ্গোল খানত।[৫][৬] চেঙ্গিস খানের দ্বিতীয় পুত্র চাগতাই খান ছিলেন এই খানতের প্রথম শাসক।[৭] পরবর্তীতে তার বংশধররা রাজ্য শাসন করেছেন। প্রথমে এটি মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ১২৫৯ সালের পর মঙ্গোল সাম্রাজ্যের ভাঙনের সময় এটি স্বাধীন হয়। ১৩০৪ সালে চাগতাই খানত ইউয়ান রাজবংশের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেয়।[৮] ১৪শ শতাব্দীর মধ্যভাগে চাগতাই খানত ভেঙে পশ্চিম চাগতাই খানত ও মোগলিস্তান খানাতে বিভক্ত হয়। ১৩শ শতাব্দীতে খানত আমু দরিয়া থেকে আলতাই পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[৯]
চাগতাই খানত Цагаадайн Хаант Улс | |||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১২২৫ – ১২৪০ এর দশক (সমগ্র) ১৩৪০ এর দশক –১৩৭০ (পশ্চিম) ১৩৪০ এর দশক-১৬৮০ এর দশক (পূর্ব) | |||||||||||||||||
চাগতাই খানত (সবুজ), আনুমানিক ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দ | |||||||||||||||||
অবস্থা | যাযাবর সাম্রাজ্য মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিভাজন | ||||||||||||||||
রাজধানী | আলমালিক, কারশি | ||||||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | তুর্ক[১][২] | ||||||||||||||||
ধর্ম | শামানবাদ বৌদ্ধধর্ম তেংরিবাদ খ্রিস্টধর্ম ইসলাম | ||||||||||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||||||||||
খান | |||||||||||||||||
• ১২২৫–১২৪২ | চাগতাই খান | ||||||||||||||||
আইন-সভা | কুরুলতাই | ||||||||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | মধ্যযুগ | ||||||||||||||||
১২২৫ | |||||||||||||||||
• চাগতাইয়ের মৃত্যু | ১২৪২ | ||||||||||||||||
• চাগতাই খানত পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে বিভক্ত হয় | ১৩৪০ এর দশক | ||||||||||||||||
• পশ্চিম সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি | ১৩৭০ | ||||||||||||||||
• পূর্ব সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি | ১৬৮০ এর দশক | ||||||||||||||||
আয়তন | |||||||||||||||||
১৩১০ বা ১৩৫০ est.[৩][৪] | ৩৫,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৪,০০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||||||||
মুদ্রা | দিরহাম, কেবেক ও পুল | ||||||||||||||||
| |||||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | কিরগিজিস্তান চীন উজবেকিস্তান তাজিকিস্তান কাজাখস্তান আফগানিস্তান পাকিস্তান তুর্কমেনিস্তান মঙ্গোলিয়া ভারত |
চাগতাই খানত ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল। কিন্তু ১৩৭০ সাল নাগাদ পশ্চিম অংশ তিমুরীয় সাম্রাজ্যের অংশে পরিনত হয়। পূর্ব অংশ চাগতাই খানদের অধীনে ছিল। তবে তারা এসময় তিমুরের উত্তরসুরিদের সাথে মিত্রতা বা যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। শেষপর্যন্ত ১৭শ শতাব্দীতে চাগতাই খানতের অবশিষ্ট অংশ আফাক খোজার অধীনস্থ হয়।
চেঙ্গিস খানের তৃতীয় ছেলে ওগেদাই খান তার উত্তরসূরি হন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বালখাশ হ্রদের পূর্ব থেকে মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন। কনিষ্ঠ পুত্র তোলুই খান উত্তর মঙ্গোলিয়ার দায়িত্ব পান। চাগতাই খান মাওয়ারাননহর ও কাশগরের এলাকা লাভ করেন। তিনি বর্তমান উত্তর পশ্চিম চীনের আলমালিকে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন।[১০]
চীন জয় করার পূর্বে ওগেদাই মারা যান। এরপর তার স্ত্রী তুরগেন খাতুন পাঁচ বছর রাজপ্রতিভূ ছিলেন। পরবর্তীতে তার ছেলে গুয়ুক খান ক্ষমতাসীন হন। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়টি কুরুলতাই কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছিল। তবে এতে গোল্ডেন হোর্ডের বাতু খান উপস্থিত ছিলেন না।[১১] গুয়ুক খানের মৃত্যুর পর বাতু খান বারকা খানকে প্রেরণ করেন। এরপর ওগেদাইয়ের উত্তরাধিকারের ধারা তোলুইয়ের পুত্র মংকে খানের হাতে আসে।[১২] ওগেদাইয়ের উত্তরসুরিদের মধ্যে যারা বিরোধিতা করেনি তাদের জায়গীর প্রদান করে বাকিদের বাদ দেয়া হয়।[১৩]
১২৪২ সালে চাগতাই মারা যান। প্রায় একই সময়ে তার ভাই ওগেদাইও মারা গিয়েছিলেন। এরপর প্রায় ২০ বছর চাগতাই খানাত কেন্দ্রীয় মঙ্গোল সরকারের উপর নির্ভরশীল ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার খানদেরকে নিজ ইচ্ছায় নিয়োগ বা পদচ্যুত করত। মাওয়ারাননহরের শহরসমূহ খানাতের সীমানার অন্তর্ভুক্ত হলেও খাগান কর্তৃক নিযুক্ত কর্মকর্তারা শাসন করতেন।[১৪]
চাগতাইয়ের নাতি আলগুর শাসনামলে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়। তিনি কুবলাই খান ও আরিক বোকের মধ্যকার গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে আরিক বোকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তিনি নতুন অঞ্চল জয়ে করে খাগানের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন।[১৫] চাগতাইদের অনেকে প্রথমে কুবলাই খানকে সমর্থন করে। কিন্তু ১২৬৯ সালে তারা ওগেদাই বংশীয়দের সাথে যোগ দেয়।[১৬]
আলগুইয়ের উত্তরসূরি গিয়াসউদ্দিন বারাক কুবলাই খানের গভর্নরকে শিনজিয়াং থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। দ্রুত তার সাথে কাইদুর সংঘর্ষ শুরু হয়। কাইদু এসময় গোল্ডেন হোর্ডের সমর্থন পান এবং চাগতাইদের উপর হামলা করেছিলেন।[১৭] বারাক এসময় মাওয়ারাননহরে আটকা পড়েন এবং কাইদুর অধীনতা মেনে নেন।[১৮] একই সময় তার সাথে ইলখানাতের ইলখান আবাকা খানের বিরোধ দেখা দেয়। বারাক তার উপর আক্রমণ করে পরাজিত হন এবং মাওয়ারাননহরে ফিরে আসে। এর অল্প কিছু কাল পর তার মৃত্যু হয়।[১৯]
পরবর্তী কয়েকজন চাগতাই খান কাইদু কর্তৃক নিযুক্ত হন।[২০] তিনি বারাকের ছেলে দুওয়াকে একপর্যায়ে শাসক নিয়োগ দেন। দুওয়া ইতিপূর্বে কাইদুর সাথে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।[২১] ১৩০১ সালে কাইদুর মৃত্যুর পর দুওয়া তার উত্তরসুরিদের সাথে মিত্রতা ভঙ্গ করেন। তিনি ইউয়ান রাজবংশের সাথে শান্তি স্থাপন করে ইউয়ান রাজদরবারে কর পাঠান। তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চাগতাই খানাত প্রায় স্বাধীন ছিল।[২২]
দুওয়ার বেশ কয়েকজন ছেলে ছিল। তাদের অনেকে খান হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কেবেক মুদ্রা ব্যবস্থা সংস্কার করেন এবং কারশি ও তারমাশিরিনে রাজধানী স্থাপন করেন। কেবেক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দিল্লি সালতানাতের উপর হামলা করেন। একটি বিদ্রোহে তারমাশিরিনের পতন ঘটে। পরবর্তী বছরগুলিতে খানাতে ক্রমাগত অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়। ১৩৪৬ সালে একটি বিদ্রোহের সময় গোত্রপ্রধান আমির কাজাগান কর্তৃক কাজান খান ইবনে ইয়াসাওর নিহত হন।.[২৩]
১৩৪০ এর দশকে চাগতাই খানাত দুই অংশে বিভক্ত হয়।[২৪] পশ্চিমাঞ্চলে মুসলিম গোত্রের আধিক্য ছিল এবং এখানে কারাউন আমিরদের আধিপত্য স্থাপিত হয়। চেঙ্গিস খানের বংশের সাথে সংযোগ রক্ষার জন্য আমিররা চাগতাইয়ের কয়েকজন বংশধরকে ক্ষমতায় বসান। তবে তারা শুধু নামে প্রধান ছিলেন। মূল ক্ষমতা তাদের হাতে ছিল না। খানাতের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ চাগতাই বংশীয় তুগলুত তিমুরের অধীনে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হত। পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ অঞ্চল মোগলিস্তান নামে পরিচিত ছিল। এখানকার বাসিন্দারা ছিল মঙ্গোল জাতিসত্ত্বার এবং তারা মূলত বৌদ্ধধর্ম ও মঙ্গোলীয় শামান মতবাদের অনুসারী ছিল।
১৩৬০ এর দশকে তুগলুগ তিমুরের মাধ্যমে দুই অংশ সংক্ষিপ্তকালের জন্য একত্রীত হয়েছিল। তিনি মাওয়ারাননহরে দুইবার হামলা করে নিজ কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। ১৩৬৩ সালে তার মৃত্যু হয়। এরপর তার উত্তরসুরিদের হাতে শুধু পূর্বাঞ্চলের নেতৃত্ব ছিল। অন্যদিকে মাওয়ারাননহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এসময় আমির হুসাইন ও তৈমুরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। তৈমুর আমির হুসাইনকে পরাজিত করে মাওয়ারাননহরের কর্তৃত্ব পান।[২৫]
পরবর্তী কয়েক শতাব্দী নাগাদ খানাতের পূর্বাঞ্চল তুগলুক তিমুরের বংশধরদের হাতে ছিল। তবে তারা এসময় অনেক রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ইয়ারকেন্ত খানাত ছিল শেষ চাগতাই খানাত। ১৬৭৮ থেকে ১৬৮০ সালের মধ্যে তা জুনগার খানাত কর্তৃক বিজিত হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.