Loading AI tools
উজবেকিস্তানের সমরকন্দ প্রদেশের রাজধানী ও পর্যটন কেন্দ্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সমরকন্দ (উজবেক ভাষা: Samarqand/Самарқанд সামার্ক্বান্দ্, তাজিক ভাষা: Самарқанд স্যাম্যার্ক্ব্যান্দ্, ফার্সি ভাষা: سمرقند স্যাম্যার্গ্যান্দ্, রুশ ভাষা: Самарканд সামার্কান্দ্,গ্রিক: Σαμαρκάνδη) মধ্য উজবেকিস্তানের সমরকন্দ প্রদেশের রাজধানী। ইসলাম শিক্ষায় উচ্চশিক্ষার জন্য ইসলামিক সেন্টার এবং চীন এবং পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থল পথ সিল্ক রোডের মধ্যবর্তী অবস্থানের জন্য সমরকন্দ বেশ আলোচিত। এ শহরের অবশিষ্ট ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে বিবি খানম মসজিদ সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। রেগিস্তান (ফার্সি ریگستان) এই শহরের প্রাচীণ কেন্দ্র। ২০০১ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ২,৭৫০ বছর পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।
সমরকন্দ | |
---|---|
Location in Uzbekistan | |
স্থানাঙ্ক: ৩৯°৩৯′১৫″ উত্তর ৬৬°৫৭′৩৫″ পূর্ব | |
Country | Uzbekistan |
Province | Samarqand Province |
উচ্চতা | ৭০২ মিটার (২,৩০৩ ফুট) |
জনসংখ্যা (2008) | |
• শহর | ৫,৯৬,৩০০ |
• পৌর এলাকা | ৬,৪৩,৯৭০ |
• মহানগর | ৭,০৮,০০০ |
ওয়েবসাইট | http://www.samarkand.info |
সমরকন্দ শব্দটি এসেছে প্রাচীন ফার্সি ভাষার আসমারা শব্দ থেকে যার অর্থ "পাথর" বা "পাষাণ" এবং সোজিয়ান ভাষার কন্দ শব্দ থেকে যার অর্থ "কেল্লা" বা "শহর"।[1]
খ্রিস্টের জন্মের ২০০০ বছর আগেই সমরকন্দে লোকালয় গড়ে ওঠে। এর অবস্থান চীন থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বাণিজ্যপথের (সিল্ক রোড) মধ্যে হওয়ায়, প্রাচীনকাল থেকে এ শহরটি বেশ সমৃদ্ধ এবং তখন থেকে শহরটি মধ্য এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে প্রাচীন পারস্যের সগদিয়ানা প্রদেশের রাজধানীতে পরিণত হয়। পশ্চিমে গ্রিকদের কাছে এটি মারাকান্দা নামে পরিচিতি লাভ করে। মহাবীর আলেকজান্ডার, যিনি এ অঞ্চলে "ইস্কান্দার" নামে পরিচিত, ৩২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শহরটি বিজয় করেন। এরপর এটি চীন ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করে। ৮ম শতকের শুরুর দিকে আরবেরা এটি বিজয় করে এবং শীঘ্রই এটি ইসলামী সংস্কৃতির একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১২২০ সালে মঙ্গোল শাসক চেঙ্গিস খান শহরটি প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেন। ১৩৬৯ সালে তৈমুর লং সমরকন্দকে তার সাম্রাজ্যের রাজধানী বানালে শহরটির আবার উন্নতি শুরু হয়। ১৫শ শতকে এসে তৈমুরের সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয় এবং ১৪৯৯ সালে উজবেকরা শহরটি দখলে নিয়ে নেয়। উজবেক শাসকেরা ১৬শ শতকে তাদের রাজধানী বোখারায় সরিয়ে নিলে সমরকন্দের গুরুত্ব কমে যায়। ১৭৮৪ সালে এটি বোখারা শহরের আমীরের অধীনে চলে আসে। ১৮৬৮ সালে রাশিয়া শহরটি দখল করে এবং এটি আবার গুরুত্ব পেতে শুরু করে।
এটি জেরফ্শন নদীর পানি দিয়ে সেচকৃত একটি উপত্যকাতে অবস্থিত। এখানে চা, ওয়াইন, বস্ত্র, সার এবং মোটরযানের যন্ত্রপাতি উৎপাদিত হয়। এটি মধ্য এশিয়ার প্রাচীনতম শহর। শহরটি পুরাতন ও নতুন --- দুই অংশে বিভক্ত। শহরের পুরাতন অংশে আছে বহু সৌধ, ১৪শ ও ১৫শ শতকে নির্মিত মসজিদ এবং ১৫শ শতকে নির্মিত মোঙ্গল দিগ্বিজয়ী শাসক তৈমুর লঙের সমাধি। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাচীন ইতিহাসের একটি জাদুঘর অবস্থিত।
সমরকান্দ উত্তর-পূর্ব উজবেকিস্তানের জারেফশান নদী উপত্যকায় অবস্থিত। কারশি থেকে সমরকন্দ ১৩৫ কিমি দূরে অবস্থিত। সড়ক এম৩৭ একে ২৪০ কিলোমিটার দূরের বুখারার সাথে সংযুক্ত করেছে। সড়ক এম৩৯ এটিকে ২৭০ কিলোমিটার দূরের তাশখন্দের সাথে সংযুক্ত করেছে। তাজিকিস্তান সীমানা সমরকান্দ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে, দুশানবে যাওয়ার রাস্তা যা ২১০ কিলোমিটার দূরে। রোড এম৩৯ এটি আফগানিস্তানের মাজার-শরীফের সাথে সংযুক্ত করে, যা ৩৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কপ্পেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী সমরকন্দে একটি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু (সিএসএ) বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গরম, শুকনো গ্রীষ্ম এবং তুলনামূলকভাবে ভেজা, পরিবর্তনশীল শীতের সময় আধা-শুষ্ক জলবায়ু (বিএসকে) এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সীমানা দেয় যা শীত আবহাওয়ার সাথে সাথে উষ্ণ আবহাওয়ার বিকল্প সময়সীমার সাথে থাকে। জুলাই ও আগস্ট মাস বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস এবং এসময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (১০৪ ° ফাঃ) কাছাকাছি থাকে, ডিসেম্বরের থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে বেশিরভাগ বিরল বৃষ্টিপাত হয়। জানুয়ারি মাস বিশেষত ঠাণ্ডা থাকে এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছিল ২২ ° সেলসিয়াসে (−8 ° ফা) নিচে নামে, যা ২০০৮ সালে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।[2]
সমরকন্দ (১৯৮১-২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ২৩.২ (৭৩.৮) |
২৬.৭ (৮০.১) |
৩১.৭ (৮৯.১) |
৩৬.২ (৯৭.২) |
৩৯.৫ (১০৩.১) |
৪১.৪ (১০৬.৫) |
৪২.৪ (১০৮.৩) |
৪১.০ (১০৫.৮) |
৩৮.৬ (১০১.৫) |
৩৫.২ (৯৫.৪) |
২৯.৯ (৮৫.৮) |
২৭.৫ (৮১.৫) |
৪২.৪ (১০৮.৩) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৬.৮ (৪৪.২) |
৯.১ (৪৮.৪) |
১৪.২ (৫৭.৬) |
২১.১ (৭০.০) |
২৬.৪ (৭৯.৫) |
৩২.২ (৯০.০) |
৩৪.১ (৯৩.৪) |
৩২.৯ (৯১.২) |
২৮.৩ (৮২.৯) |
২১.৬ (৭০.৯) |
১৫.৩ (৫৯.৫) |
৯.১ (৪৮.৪) |
২০.৯ (৬৯.৬) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ১.৯ (৩৫.৪) |
৩.৬ (৩৮.৫) |
৮.৫ (৪৭.৩) |
১৪.৯ (৫৮.৮) |
১৯.৮ (৬৭.৬) |
২৫.০ (৭৭.০) |
২৬.৭ (৮০.১) |
২৫.২ (৭৭.৪) |
২০.১ (৬৮.২) |
১৩.৬ (৫৬.৫) |
৮.৪ (৪৭.১) |
৩.৮ (৩৮.৮) |
১৪.৩ (৫৭.৭) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | −১.৭ (২৮.৯) |
−০.৫ (৩১.১) |
৪.০ (৩৯.২) |
৯.৪ (৪৮.৯) |
১৩.৫ (৫৬.৩) |
১৭.৪ (৬৩.৩) |
১৮.৯ (৬৬.০) |
১৭.৪ (৬৩.৩) |
১২.৭ (৫৪.৯) |
৭.২ (৪৫.০) |
৩.৪ (৩৮.১) |
−০.২ (৩১.৬) |
৮.৫ (৪৭.৩) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | −২৫.৪ (−১৩.৭) |
−২২ (−৮) |
−১৪.৯ (৫.২) |
−৬.৮ (১৯.৮) |
−১.৩ (২৯.৭) |
৪.৮ (৪০.৬) |
৮.৬ (৪৭.৫) |
৫.৯ (৪২.৬) |
০.০ (৩২.০) |
−৬.৪ (২০.৫) |
−১৮.১ (−০.৬) |
−২২.৮ (−৯.০) |
−২৫.৪ (−১৩.৭) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৪১ (১.৬) |
৪৬ (১.৮) |
৬৯ (২.৭) |
৬০ (২.৪) |
৩৬ (১.৪) |
৬ (০.২) |
৪ (০.২) |
১ (০.০) |
৪ (০.২) |
১৭ (০.৭) |
৩৪ (১.৩) |
৪৭ (১.৯) |
৩৬৫ (১৪.৪) |
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় | ৮ | ১০ | ১৩ | ১১ | ৯ | ৩ | ২ | ১ | ২ | ৬ | ৮ | ৯ | ৮২ |
তুষারময় দিনগুলির গড় | ৯ | ৭ | ৩ | ০.৩ | ০.১ | ০ | ০ | ০ | ০ | ০.৩ | ২ | ৬ | ২৮ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৭৬ | ৭৪ | ৭০ | ৬৩ | ৫৪ | ৪২ | ৪২ | ৪৩ | ৪৭ | ৫৯ | ৬৮ | ৭৪ | ৫৯ |
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ১৩২.৯ | ১৩০.৯ | ১৬৯.৩ | ২১৯.৩ | ৩১৫.৯ | ৩৭৬.৮ | ৩৯৭.৭ | ৩৬২.৩ | ৩১০.১ | ২৩৪.৩ | ১৭৩.৩ | ১৩০.৩ | ২,৯৫৩.১ |
উৎস ১: Pogoda.ru.net[3] | |||||||||||||
উৎস ২: NOAA (sun, 1961–1990)[4] |
১৯৩৯ সালে সমরকন্দের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১,৩৪,৩৪৬।[5] ২০০৮ সালে শুধু শহরাঞ্চলেই জনসংখ্যা ৫,৯৬,৩০০। এদের বেশির ভাগই ফার্সিভাষী তাজিক জাতির লোক। মধ্য এশিয়ায় বুখারার সাথে সাথে সমরকন্দও তাজিক লোকজনের কাছে একটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান।[6]
অষ্টম শতাব্দীতে মধ্য এশিয়ায় আরবদের বিজয়ের সময় সমরকান্দে ইসলাম প্রবেশ করেছিল (উমাইয়া খেলাফতের সময়)। তার আগে সমরকন্দের প্রায় সমস্ত বাসিন্দা ছিল জরাথ্রুস্টবাদী । এছাড়া অনেক নেস্টোরিয়ান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীও শহরে বাস করত। সমরকান্দ দখলের পরে আরবরা শহরের বাসিন্দাদের ইসলামে ধর্মান্তর করতে থাকে। অষ্টম শতাব্দীতে শুরু করে সমরকান্দে আব্বাসীয় খিলাফত, সামানিদ সাম্রাজ্য, ক্রাখানিদ খানাট, খোয়ারাজম সাম্রাজ্য, তৈমুরিদ সাম্রাজ্য, বুখারার খানাট এবং বুখারার আমিরাত রাজ্য দ্বারা শাসিত হয়েছে, এই মুসলিম যুগেই সমরকন্দের অধিকাংশ মসজিদ, মাদ্রাসা ও মিনারগুলি নির্মিত হয়েছিল।
সমরকান্দের বেশিরভাগ বাসিন্দা মুসলমান, যাদের বেশিরভাগ সুন্নি (হানাফি) এবং সুফিবাদি। সমরকান্দে বসবাসকারী প্রায় সমস্ত তাজিক, উজবেক এবং সমরকান্দিয়ান আরবরা সুন্নি মুসলামন। সমরকান্দের প্রায় ৮০-৮৫% মুসলমান সুন্নি। সমরকান্দের সেই সাথে প্রচুর নাস্তিক, পাশাপাশি যারা অন্যান্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে তারাও রয়েছে। এছাড়া খুব ধর্মনিরপেক্ষ মানুষও রয়েছে।
১৩৯৯ সালের ভারতীয় সমর যুদ্ধের পরে তৎকালীন শাসক তৈমুর সিদ্ধান নেন যে, তার নব্য রাজধানী সামারকান্দে একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করবেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিবি খানম মসজিদ নির্মাণ হয় অত্যন্ত দামী পাথর দিয়ে যা ভারতীয়দের বিপক্ষে যুদ্ধে জয়ের বৈশিষ্ট্য বহন করে। ভারত থেকেও, কারিগর এবং পাথর খোদাইকারী মসজিদের গম্বুজটির নকশা তৈরি করেছিলেন,[7] এটি অন্যান্য ভবনের মধ্যে এটির স্বাতন্ত্র্যতা এনে দিয়েছিল। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এর একটি অংশ ভেঙে পড়ে। যাহোক ১৯৭৪ সালে উজবেকিস্তান সরকার এই মসজিদটি পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করে। ফলে এখন যে মসজিদ দেখা যাচ্ছে তা একেবারেই নতুন এবং এর প্রতিষ্ঠাকালীন কোন কাজ এখন আর অবশিষ্ট নেই। সিয়োব বাজার যা বিবি খান্যমের পাদদেশে অবস্থিত যা ৬০০ বছরের পুরনো।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.