Loading AI tools
বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আব্দুল কাদের মোল্লা (১৪ আগস্ট ১৯৪৮[8] – ১২ ডিসেম্বর ২০১৩[9]) ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত[2] ও সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী।[10][11] তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল[2][12] ও দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে দুইবার সংসদ নির্বাচন করে পরাজিত হন।[13]
আব্দুল কাদের মোল্লা | |
---|---|
জন্ম | আব্দুল কাদের মোল্লা ১৪ আগস্ট ১৯৪৮ |
মৃত্যু | ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ ৬৫) | (বয়স
সমাধি | আমিরাবাদ, ফরিদপুর |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | সাংবাদিকতা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
নিয়োগকারী | দৈনিক সংগ্রামের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক |
প্রতিষ্ঠান | জামায়াতে ইসলামী[1], আল বদর[2][3][4] |
পরিচিতির কারণ | রাজনীতি, সাংবাদিকতা[তথ্যসূত্র প্রয়োজন], যুদ্ধাপরাধ |
অপরাধের অভিযোগ | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ, ধর্ষণ ও গণহত্যার অভিযোগ।[5][6][7] |
অপরাধের শাস্তি | মৃত্যুদণ্ড |
স্বাক্ষর | |
[[File:|150px]] |
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের জন্য আনীত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে দোষী সাব্যস্ত করে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার স্বাধীনতাবিরোধী বাহিনী আল বদরের সদস্য মোল্লাকে ৩৪৪ জন নিরীহ ব্যক্তি হত্যা[2][14] ও অন্যান্য অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।[15]
এই রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে। গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। এর ফলশ্রুতিতে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ শুরু হয় শাহবাগ আন্দোলন এবং এর অনুসরণে একসময় দেশটির অনেক স্থানেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।[3][16] মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের আরো একটি দাবি ছিল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রেখে ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস (সংশোধন) বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়।[17] ৩ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ তার সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে এবং ৪ঠা মার্চ কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে রায়ের বিরুদ্ধে তাকে খালাস দেওয়ার জন্য আপিল করা হয়। ১লা এপ্রিল আপিলের শুনানি শুরু হয় এবং শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন করাদণ্ডের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ডাদেশের নির্দেশ দেন।[17] উল্লেখ্য, এটিই মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দণ্ডের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে করা আপিলের প্রথম রায়।[10]
আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালে ফরিদপুরের আমিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৬ সালে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নের সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র রাজনৈতিক শাখা ইসলামি ছাত্র সংঘে যোগ দেন[18] এবং পরবর্তীতে কলেজ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং একই বছর স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি ইসলামি ছাত্র সংঘের শহীদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন।[2][13][19]
তবে ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের আগের দিন তার সন্তানদের দাবি অনুসারে, কাদের মোল্লা ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।[20]
১৯৭১ সালে জামায়াত নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কারণ তারা বিশ্বাস করত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশকে ভাগ করে আলাদা করলে এটি ইসলামের বিরুদ্ধে যাবে। সুতরাং ইসলামি ছাত্র সংঘের সদস্য হিসেবে কাদের মোল্লা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরে যোগ দেন।[2][3][4] কিন্তু বাংলাদেশ যুদ্ধে জয় লাভ করে স্বাধীনতা অর্জন করে ও নতুন সরকার রাজনীতি থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৭৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের হাতে নিহত হওয়ার পর, নতুন সরকার জামায়াতকে পুনরায় রাজনীতি করার অনুমতি প্রদান করে। কাদের মোল্লা দলে সক্রিয় হতে থাকেন। তিনি দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।[3] তার জনপরিচিতির জন্য তিনি বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন।[21]
২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরোদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয়। ১৩ জুলাই, ২০১০ তারিখে কাদের মোল্লাকে পল্লবী থানা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।[17]
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল তার বিরোদ্ধে যুদ্ধাপরাধ অভিযোগের তদন্ত শুরু করে এবং ২০১১ সালের ১ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের এবং সর্বোপরি মানবতাবীরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। ২৮শে ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেন এবং ২০১২ সালের ২৮শে মে ট্রাইব্যুনাল-২ খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী ছয়টি অভিযোগের বিচারকাজ শুরুর নির্দেশ দেন।[22]
১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার বিষয়ে ২০০৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব পাশ হয়। সংসদে গৃহীত প্রস্তাবের বাস্তবায়নে সরকার বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী অভিযুক্তদের তদন্ত এবং বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত ঘোষণাটি আসে ২০০৯ সালের ২৫শে মার্চ।[23] [24]
২০১০ সালে মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয় এবং ২০১২ সালের মে মাসে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে তার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়।[25] কাদের মোল্লাকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা, ধর্ষণ ও ঢাকার মিরপুর এলাকায় গণহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আলবদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে ৩৪৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।[2][14][26]
রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যেসব অভিযোগ আনেন সেগুলো হলো[11][17],
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩-এর ২০(৩) ধারা অনুযায়ী প্রমাণসাপেক্ষে কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। একই সাথে তাকে বাড়তি ১৫ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। রায়ে বলা হয়, এই ১৫ বছর তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর যখন থেকে জেলে অবস্থান করছেন তখন থেকে কার্যকর হবে।[27] পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষ সব্বোর্চ শাস্তি চেয়ে ও কাদের মোল্লা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে শুনানি শেষে সব্বোর্চ আদালত তাকে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ অভিযোগের জন্য মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন, চতুর্থ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পূর্বের খালাসের রায়ের পরিবর্তে যাবজ্জীবন এবং বাকী অভিযোগে পূর্বের রায়ই বহাল রাখা হয়।[11]
কাদের মোল্লার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকার শাহবাগ মোড়ে একটি বড় ধরনের আন্দোলন শুরু হয়।[28][29] যে আন্দোলনের প্রধান দাবী ছিল, সকল যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে আন্দোলন সাড়া দেশে ছড়িয়ে পড়ে।[30][31] হাজার হাজার জনতা শাহবাগ একত্র হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ও এই আন্দোলনকে ২০১৩-র শাহবাগ আন্দোলন বলা হয়।[32]
আন্দোলন শুরু হওয়ার পর, দশ হাজারেরও বেশি মানুষ ২৪ ঘণ্টা শাহবাগ অবস্থান করে ও তারা ঘোষণা দেয় যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা শাহবাগ ত্যাগ করবেন না।[33] এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে জামায়াতও একটি আন্দোলন শুরু করে যাদের দাবি ছিল, কাদের মোল্লাসহ তাদের দলের সমস্ত নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রথমদিকে ২০০০ সালে গঠিত চার দলীয় জোটের[34] অন্যতম শরিক জামায়াতকে সমর্থন করে। বিএনপি শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কে মন্তব্য করে, সরকারের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবির এই আন্দোলন থেকে সুবিধা নেওয়া উচিত নয়।[35]
শাহবাগ বিক্ষোভের ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাব কাদের মোল্লার সদস্যপদ বাতিল করে[21] ও আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ব্যবস্থা করা হয় যাতে ১৭ই সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন।[10][11]
জামায়াতের সদ্যসরাও বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে এবং তারা এই বিচারকে সরকারের রাজনৈতিক বিচার বলে অবহিত করে। তারা তাদের আন্দোলনকে ঢাকার ধর্মঘট বলে উল্লেখ করে ও ঢাকার সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে কাদের মোল্লাকে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে তার শাস্তি কার্যকর হয়।[1][36] তাঁর মৃতদেহ তার নিজ গ্রাম ফরিদপুরের আমিরাবাদের পারিবারিক কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।[37][38]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.