শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

ইসরায়েল

পশ্চিম এশিয়ার একটি রাষ্ট্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ইসরায়েলmap
Remove ads

ইসরায়েল ( হিব্রু ভাষায়: מְדִינַת יִשְׂרָאֵלমেদিনাৎ য়িস্রা'এল্‌ ; আরবি: دَوْلَةْ إِسْرَائِيل-দাউলাৎ ইস্রা'ঈল্‌) পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি স্বত্বেও বিশ্বের ২৮টি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করেনি। ভৌগোলিকভাবে দেশটি ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ–পূর্ব তীরে ও লোহিত সাগরের উত্তর তীরে অবস্থিত। এর উত্তর স্থলসীমান্তে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্দানফিলিস্তিন (পশ্চিম তীর), পশ্চিমে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর অবস্থিত।[২৩]

দ্রুত তথ্য ইসরায়েল, রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি ...

ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত তেল আবিব হলো দেশটির অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত প্রাণকেন্দ্র ও বৃহত্তম মহানগর এলাকা। [২৪] ইসরায়েল সমগ্র জেরুসালেম শহরকে নিজের রাজধানী হিসেবে দাবী করে আসছে, যদিও এই মর্যাদা সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রই স্বীকার করে না।[২৫] শহরের পশ্চিমভাগ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং এখানে দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি অবস্থিত। [টীকা ২] ইসরায়েলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গুয়াতেমালা ও ইতালি ব্যতীত অন্য ৮৭টি দেশের দূতাবাস তেল আবিব নগর বা জেলায় অবস্থিত (২০২১ সালের তথ্যানুযায়ী)। [২৬] এছাড়া হাইফাবে-এরশেভা এর আরও দুইটি বৃহৎ মহানগর এলাকা।

অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েল একটি অত্যন্ত উন্নত শিল্প -প্রধান রাষ্ট্র এবং স্থূল আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হিসেবে ইসরায়েল বিশ্বের ৩৪তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ইসরায়েল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সদস্যরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে জাপানদক্ষিণ কোরিয়ার সাথে এটি এশিয়ার মোট ৩টি উচ্চ-আয়ের রাষ্ট্রগুলির একটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে এটি বিশ্বের ৩৯টি অগ্রসর অর্থনীতিসমৃদ্ধ দেশগুলির একটি।

ইসরায়েলে প্রায় ৯৩ লক্ষ লোক বাস করে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ; এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪২৫ জন অধিবাসী বাস করে। এদের মধ্যে ৬৭ লক্ষ ইহুদী জাতি ও ধর্মাবলম্বী ও ১৯ লক্ষ আরব জাতিভুক্ত (যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান)। এটিই বিশ্বের একমাত্র ইহুদী সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। এর জনগণ অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত; এখানকার প্রায় অর্ধেক জনগণের (২৫-৬৪ বছর বয়সী) বিশ্ববিদ্যালয় বা তার সমপর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, যা বিশ্বের ৩য় সর্বোচ্চ।[২৭] দেশের জীবনযাত্রার মান গোটা মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ; এশিয়াতে ৫ম ও বিশ্বে ১৯তম।[২৮]

ইসরায়েল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির নিরিখে বিশ্বের সেরা দেশগুলির একটি। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রকাশিত ব্লুমবার্গ নবীকরণ সূচকে ২০১৯,২০২০ এবং ২০২১ সালে ইসরায়েল যথাক্রমে ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সেরা নবীকারক হিসেবে স্থান পেয়েছিল (দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের পরে এশিয়াতে তৃতীয়)। অন্যদিকে মার্কিন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ও আরও কিছু সহযোগী সংস্থার প্রকাশিত বৈশ্বিক নবীকরণ সূচকে দেশটি ২০২০ সালে ১৩তম স্থান লাভ করে। শেষোক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসরায়েলে প্রতি ১০ লক্ষ অধিবাসীর জন্য ৮৩৪১ জন বিজ্ঞানী, গবেষক এবং প্রকৌশলী আছেন, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। ইসরায়েল তার বাৎসরিক বাজেটের প্রায় ৫% বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়নের জন্যে বরাদ্দ করে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। গবেষণামূলক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সহযোগিতার নিরিখে এটি বিশ্বের ১ নম্বর দেশ। ইসরায়েলের বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৩% তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা রপ্তানিতে নিয়োজিত, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। ইসরায়েল প্রতি একশত কোটি মার্কিন ডলার স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হিসেবে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণ করে। জ্ঞানের বিস্তারে দেশটি বিশ্বের ২য় সেরা দেশ; ১৫- ৬৫ বছরের প্রতি ১০ লক্ষ ইসরায়েলির উইকিপিডিয়ায় সম্পাদনার সংখ্যা ৯৪, যা বিশ্বের ৩য় সর্বোচ্চ।[২৯]

ইসরায়েল নিজেকে একটি ইহুদীবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করে। এখানে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। দেশটির এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার নাম ক্নে‌সেত। প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম, ইতিহাস ও রাজনীতি মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলির সাথে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ১৯৬৭ সাল থেকে অর্ধ-শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি-অধ্যুষিত পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা সামরিকভাবে দখল করে আছে। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিকভাবে আধুনিক ইতিহাসের দীর্ঘতম সামরিক দখলের ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়। [fn ৪][৩৩] ২০২১ সালে এসে জাতিসংঘের ১৯২টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৬৪টি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও ২৮টি রাষ্ট্র (মূলত মুসলমান অধ্যুষিত) এখনও ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়নি এবং এর সাথে তাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। [৩৪] তাদের মতে, ইসরায়েল স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের একটি অংশের অবৈধ দখলদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড। তবে নিকটতম দুই আরব প্রতিবেশী মিশরজর্দানের সাথে ইসরায়েল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং দেশ দুইটির স্বীকৃতিও লাভ করেছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাতে ঐতিহাসিক গবেষণা ও দালিলিক যুক্তিপ্রমাণসহ দাবী করা হয় যে ইসরায়েলি সরকার প্রণালীবদ্ধভাবে ইসরায়েলের ইহুদীদেরকে অগ্রাধিকার প্রদান করে এবং অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে। সংস্থাটির মতে ইসরায়েলের আইন, নীতি ও ইসরায়েলের উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের বিবৃতিতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে জনপরিসংখ্যান, রাজনৈতিক ক্ষমতা ও ভূমির উপরে ইহুদী ইসরায়েলিদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার মূল লক্ষ্যটি ইসরায়েলি সরকারের সমস্ত নীতিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। এই লক্ষ্যে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন মাত্রায় তাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গণহারে ভূমি জবরদখল, অব্যাহতভাবে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ ও সুউচ্চ প্রাচীর নির্মাণ করে ফিলিস্তিনিদেরকে ছিটমহলে অবরুদ্ধকরণ ও বলপূর্বক পৃথকীকরণ, তাদের বসবাসের অধিকার ও নাগরিক অধিকার হরণ ও তাদের উপরে দমন-নিপীড়নের মতো কাজগুলি সম্পাদন করে চলেছে। কিছু কিছু এলাকায় এই ধরনের বৈষম্য এতই প্রবল যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ইসরায়েলি সরকারের আচরণগুলি একটি অলিখিত সীমা লঙ্ঘন করেছে এবং এগুলি জাতিবিদ্বেষভিত্তিক পৃথকাবাসন (আপার্টহাইট) ও নিপীড়নের মতো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবার যোগ্য।[৩৫] এর আগে ২০১৭ সালে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দেয় যে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূমি জবরদখল, ছয় লক্ষ ইহুদীর জন্য ২৮০টির মতো (আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে) অবৈধ বসতি স্থাপন, ফিলিস্তিনিদের বাসভূমি থেকে উচ্ছেদের পাশাপাশি অবাধ বৈষম্যমূলক আচরণের দ্বারা প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদেরকে কর্মস্থলে গমন, বিদ্যালয়ে গমন, বিদেশে গমন, আত্মীয়দের সাক্ষাৎ, অর্থ উপার্জন, প্রতিবাদে অংশগ্রহণ, কৃষিভূমিতে কাজ করার ক্ষমতা, এমনকি বিদ্যুৎ ও সুপেয় জলের লভ্যতার মতো মৌলিক অধিকারগুলি প্রণালীবদ্ধভাবে লঙ্ঘন করে চলেছে।[৩৬]

Remove ads

ব্যুৎপত্তি

Thumb
মারনেপ্টাহ স্টেল (খ্রিস্টপূর্ব ১৩ শতক)। বাইবেলের বেশিরভাগ প্রত্নতাত্ত্বিকরা হায়ারোগ্লিফের একটি সেটকে ইজরায়েল হিসাবে অনুবাদ করেন, রেকর্ডে নামের প্রথম উদাহরণ।

ইসরায়েল এবং ইসরায়েলের সন্তান এই নামগুলি ঐতিহাসিকভাবে যথাক্রমে বাইবেলের ইসরায়েলের রাজ্য এবং সমগ্র ইহুদি জাতিকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়েছে। নামটি ইসরায়েল (হিব্রু: יִשְׂרָאֵל, Yīsrāʾēl; সেপ্টুয়াজিন্ট প্রাচীন গ্রিক: Ἰσραήλ, Israēl, "এল (ঈশ্বর) টিকে থাকেন/শাসন করেন", যদিও হোসেয়া ১২:৪ অনুসারে প্রায়ই "ঈশ্বরের সঙ্গে সংগ্রাম" হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়) পিতৃপুরুষ জ্যাকবকে নির্দেশ করে। হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী, তিনি ঈশ্বরের দূতের সঙ্গে কুস্তি করে জয়লাভের পরে এই নামটি পেয়েছিলেন।[৩৭] প্রাচীন মিশরের মেরনেপ্টা স্তম্ভে (খ্রিস্টপূর্ব ১৩শ শতকের শেষের দিকে তারিখযুক্ত) ইসরায়েল শব্দটি একটি সমষ্টি হিসেবে উল্লেখ করার প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়।[৩৮]

Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রাগৈতিহাসিক

ইসরায়েলের লেভান্ট অঞ্চলে মানুষের উপস্থিতি অন্তত ১৫ লাখ বছর আগের, যা উবেইদিয়া নামের প্রাগৈতিহাসিক স্থানে পাওয়া প্রমাণ থেকে জানা যায়।[৩৯] প্রায় ১২০,০০০ বছর আগের স্কুল এবং ক্বাফজেহ হোমিনিন মানুষের প্রথম দিককার আধুনিক রূপের নিদর্শন।[৪০] নাতুফিয়ান সংস্কৃতি খ্রিস্টপূর্ব ১০,০০০ সালের দিকে গড়ে ওঠে,[৪১] যা প্রাচীন আফ্রো-এশীয় ভাষার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।[৪২][৪৩] এরপরে, প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৪,৫০০ সালের দিকে ঘাসুলিয়ান সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে।[৪৪]

ব্রোঞ্জ এবং লৌহ যুগ

"কানানাইটস" এবং "কানান" সম্পর্কে প্রাচীন উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন নিকট প্রাচ্য এবং মিশরীয় পাঠ্যে (প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে); এই জনগোষ্ঠীগুলি রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন নগর-রাষ্ট্র আকারে গঠিত ছিল।[৪৫][৪৬] পরবর্তী ব্রোঞ্জ যুগে (১৫৫০–১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে), কানানের বড় অংশ মিশরের নব রাজ্যের অধীনস্থ রাজ্য হিসেবে ছিল।[৪৭] পরবর্তী ব্রোঞ্জ যুগের পতনের ফলে কানানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং মিশরের এই অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়ে যায়।[৪৮][৪৯]

প্রথমবার "ইসরায়েল" নামটি প্রাচীন মিশরের মেরনেপতাহ স্তম্ভে উল্লেখিত হয়েছে, যা প্রায় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সময়ের একটি শিলালিপি।[৫০][৫১][fn ৫][৫৩] ধারণা করা হয়, ইসরায়েলীয়দের পূর্বপুরুষরা এই অঞ্চলের প্রাচীন সেমিটিক-ভাষাভাষী জনগণের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৫৪]:৭৮–৭৯ আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মতে, ইসরায়েলীয়রা এবং তাদের সংস্কৃতি কানানীয় জনগণের মধ্য থেকেই বিকশিত হয়েছে, যারা ধীরে ধীরে একটি স্বতন্ত্র একেশ্বরবাদী ধর্ম (পরে যা এক ঈশ্বরবাদে রূপান্তরিত হয়) গড়ে তোলে, যার কেন্দ্র ছিল "ইয়াহওয়ে"।[৫৫][৫৬] তারা প্রাচীন হিব্রু ভাষা, যা বাইবেলীয় হিব্রু নামে পরিচিত, ব্যবহার করত।[৫৭] একই সময়ে, প্যালেস্টাইনের বাসিন্দারা দক্ষিণ উপকূলীয় সমতলে বসতি স্থাপন করে।[৫৮][৫৯]

অধিকাংশ আধুনিক গবেষক একমত যে তোরাহ এবং ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লেখিত "এক্সোডাস" বা মিশর থেকে ইসরায়েলীয়দের বের হওয়ার ঘটনা প্রকৃতপক্ষে বর্ণিত আকারে ঘটেনি; তবে এই ঐতিহ্যের কিছু উপাদানের ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে।[৬০][৬১] ইসরায়েল এবং যিহূদার রাজ্যগুলোর প্রাচীন অস্তিত্ব, তাদের বিস্তার এবং শক্তি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যদিও "যুক্ত ইসরায়েল রাজ্য" (United Kingdom of Israel) আদৌ ছিল কিনা তা পরিষ্কার নয়,[৬২][৬৩] ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিকরা একমত যে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য প্রায় ৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে[৬৪]:১৬৯–১৯৫ এবং যিহূদার রাজ্য প্রায় ৮৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৬৫][৬৬] ইসরায়েলের রাজ্য ছিল উভয়ের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ধনী এবং দ্রুতই এটি একটি আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়, যার রাজধানী ছিল সামারিয়া।[৬৭][৬৮][৬৯] ওম্রিদ বংশের শাসনামলে এই রাজ্য সামারিয়া, গালিলি, জর্দান উপত্যকার উঁচু অঞ্চল, শ্যারন সমভূমি এবং ট্রান্সজর্ডানের বৃহৎ অংশ নিয়ন্ত্রণ করত।[৬৮]

প্রায় ৭২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইসরায়েলের রাজ্য নব-অসিরীয় সাম্রাজ্যের হাতে বিজিত হয়।[৭০] যিহূদার রাজ্য, যার রাজধানী ছিল জেরুজালেম এবং যা দায়ূদীয় বংশের শাসনের অধীনে ছিল, প্রথমে নব-অসিরীয় সাম্রাজ্যের এবং পরে নব-বেবিলনীয় সাম্রাজ্যের একটি অধীনস্থ রাজ্যে পরিণত হয়। ধারণা করা হয়, লৌহ যুগ-২ সময়ে এই অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪ লাখ।[৭১] ৫৮৭/৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, যিহূদায় একটি বিদ্রোহের পর, নবূখদনেজার II জেরুজালেম অবরোধ করেন এবং ধ্বংস করেন, পাশাপাশি সোলোমনের মন্দিরও ধ্বংস হয়।[৭২][৭৩] রাজ্যটি বিলুপ্ত হয় এবং যিহূদার অনেক অভিজাত নাগরিককে বাবিলনে নির্বাসিত করা হয়।[৭৪]

শাস্ত্রীয় প্রাচীনত্ব

৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বাবিলন দখলের পর, আকেমেনিড সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সাইরাস দ্য গ্রেট নির্বাসিত যিহূদার জনগণকে তাদের মাতৃভূমি যিহূদায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন।[৭৫][৭৬] প্রায় ৫২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দ্বিতীয় মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন হয়,[৭৫] এবং আকেমেনিডরা অঞ্চলটিকে "ইয়েহুদ মেদিনাতা" প্রদেশ হিসেবে শাসন করত।[৭৭] ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এই অঞ্চল দখল করেন এবং তার মৃত্যুর পর এটি টলেমীয় ও সেলেউসিড সাম্রাজ্যের অধীনে কোয়েলে-সিরিয়া অঞ্চলের অংশ হয়। হেলেনাইজেশনের ফলে সাংস্কৃতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা আনতিওকাস চতুর্থের শাসনামলে তীব্র আকার ধারণ করে এবং ১৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ম্যাকাবীয় বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটে। এই বিদ্রোহ সেলেউসিড শাসন দুর্বল করে এবং দ্বিতীয় শতকের শেষ দিকে হাশমোনীয় যিহূদার স্বাধীন রাজ্য গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা লাভ করে এবং আশপাশের অঞ্চলে প্রসারিত হয়।[৭৮][৭৯][৮০]

Thumb
মৃত সাগর উপেক্ষা করে মাসাদা দুর্গের দৃশ্য, যা প্রথম শতাব্দীর রোমান অবরোধের অবস্থান

৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান প্রজাতন্ত্র এই অঞ্চল আক্রমণ করে প্রথমে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং তারপর হাশমোনীয় গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। যিহূদায় রোমানপন্থী ও পার্থীয়পন্থী দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে হেরোদ দ্য গ্রেট রোমের অধীনস্থ রাজ্যশাসক হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। খ্রিস্টীয় ৬ সালে এই অঞ্চল রোমান প্রদেশ "জুদেয়া" হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। রোমান শাসনের প্রতি উত্তেজনা একাধিক ইহুদি-রোমান যুদ্ধে রূপ নেয়, যা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনে। প্রথম ইহুদি-রোমান যুদ্ধ (৬৬–৭৩ খ্রিস্টাব্দ) জেরুজালেম এবং দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংসের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ও বাস্তুচ্যুতি ঘটায়।[৮১]

১৩২ থেকে ১৩৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বার কখবা বিদ্রোহ নামে পরিচিত দ্বিতীয় একটি বিদ্রোহের মাধ্যমে ইহুদিরা প্রাথমিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করেছিল। তবে, রোমানরা এই বিদ্রোহ নৃশংসভাবে দমন করে, যার ফলে যিহূদার গ্রামীণ এলাকা ধ্বংসপ্রাপ্ত ও জনশূন্য হয়ে যায়।[৮১][৮২][৮৩][৮৪][৮৫] জেরুজালেমকে রোমান উপনিবেশ (এলিয়া ক্যাপিটোলিনা) হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা হয়, এবং যিহূদা প্রদেশের নাম পরিবর্তন করে সিরিয়া প্যালেস্টিনা রাখা হয়।[৮৬][৮৭] জেরুজালেমের আশপাশের অঞ্চল থেকে ইহুদিদের বিতাড়িত করা হয়।[৮৪][৮৮] তবুও, সেখানে একটানা একটি ছোট ইহুদি জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি ছিল, এবং গালিলি ইহুদিদের ধর্মীয় কেন্দ্র হয়ে ওঠে।[৮৯][৯০]

পরবর্তী প্রাচীনত্ব এবং মধ্যযুগ

Thumb
গ্যালিলে তৃতীয় শতাব্দীর কেফার বার'আম সিনাগগ[৯১]

৪র্থ শতকে খ্রিস্টধর্ম রোমান পৈত্তলিক ধর্মকে প্রতিস্থাপন করে। সম্রাট কনস্ট্যানটাইন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ ও প্রচার করেন, এবং থিওডোসিয়াস প্রথম এটিকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন। ইহুদি ও ইহুদিধর্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আইন পাশ হয়, এবং ইহুদিরা গির্জা ও কর্তৃপক্ষের নিপীড়নের শিকার হয়।[৯২] অনেক ইহুদি উন্নত প্রবাসী সম্প্রদায়গুলোতে অভিবাসন করেন, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে খ্রিস্টান অভিবাসন ও ধর্মান্তর ঘটতে থাকে।[৯৩] ৫ম শতকের মধ্যভাগে খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে ওঠে।[৯৪][৯৫] ৫ম শতকের শেষের দিকে সামারিটান বিদ্রোহ শুরু হয়, যা ৬ষ্ঠ শতকের শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে এবং সামারিটান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।[৯৬] ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে সাসানীয় সাম্রাজ্যের জেরুজালেম বিজয় এবং সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্রোহের পর, ৬২৮ সালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে।[৯৭]

৬৩৪ থেকে ৬৪১ খ্রিস্টাব্দে রাশিদুন খিলাফত লেভান্ট অঞ্চল জয় করে।[৯৮][৯৯][১০০] পরবর্তী ছয় শতকে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ উমাইয়া, আব্বাসীয়, ফাতিমীয় খিলাফত এবং পরবর্তীতে সেলজুক ও আইয়ুবীয় বংশের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়।[১০১] এই সময়ে জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়, যা রোমান ও বাইজেন্টাইন সময়ে প্রায় ১০ লাখ থেকে ওসমানী যুগের শুরুতে প্রায় ৩ লাখে নেমে আসে। একই সাথে আরবিয়করণইসলামীকরণের প্রক্রিয়া চলতে থাকে।[৭১][৯৯][১০০][১০২][১০৩] ১১শ শতকের শেষের দিকে ক্রুসেডারদের অভিযান শুরু হয়, যা পোপের অনুমোদিত খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের জেরুজালেম ও পবিত্র ভূমি মুসলিমদের কাছ থেকে দখল করে ক্রুসেডার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ছিল।[১০৪] আইয়ুবীয়রা ক্রুসেডারদের পরাস্ত করে, এবং ১২৯১ সালে মিশরের মামলুক সুলতানরা পুরোপুরি মুসলিম শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।[১০৫]

আধুনিক যুগ এবং জায়নবাদের উত্থান

Thumb
১৮৭০-এর দশকে ওয়েস্টার্ন ওয়ালে ইহুদিরা

১৫১৬ সালে, ওসমানী সাম্রাজ্য এই অঞ্চল দখল করে এবং এটি ওসমানী সিরিয়ার অংশ হিসেবে শাসিত হতে থাকে।[১০৬] ১৫১৭ সালে, তুর্কি ওসমানীরা মামলুকদের পরাস্ত করার পর, ইহুদিদের বিরুদ্ধে দুটি সহিংস ঘটনা ঘটে: ১৫১৭ সালের সাফেদ আক্রমণ এবং ১৫১৭ সালের হেবরন আক্রমণ।[১০৭][১০৮] ওসমানী সাম্রাজ্যের অধীনে, লেভান্ট ছিল একটি বহুসাংস্কৃতিক এলাকা, যেখানে খ্রিস্টান, মুসলিম এবং ইহুদিদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল। ১৫৬১ সালে, ওসমানী সুলতান স্প্যানিশ ইনকুইজিশন থেকে পালিয়ে আসা সেফারদী ইহুদিদের তিবেরিয়াস শহরে বসবাস করার এবং শহরটি পুনর্নির্মাণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।[১০৯][১১০]

ওসমানী সাম্রাজ্যের মিলেট সিস্টেমের অধীনে, খ্রিস্টান এবং ইহুদিরা "ধিম্মি" (অর্থাৎ "সুরক্ষিত") হিসেবে গণ্য হতো, যার বিনিময়ে তারা রাজ্য প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন এবং জিয্যা কর প্রদান করত।[১১১][১১২] অমুসলিম ওসমানী বিষয়বস্তু জন্য কিছু ভৌগোলিক ও জীবনযাত্রার সীমাবদ্ধতা ছিল, তবে এগুলি সবসময় কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হতো না।[১১৩][১১৪][১১৫] মিলেট সিস্টেম অমুসলিমদের ধর্মের ভিত্তিতে স্বশাসিত সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছিল।[১১৬]

Thumb
সুইজারল্যান্ডের বাসেলে প্রথম জায়নবাদী কংগ্রেস (১৮৯৭)

"ফিরে আসার" ধারণাটি ধর্মীয় ইহুদি বিশ্বাসে একটি প্রতীক হয়ে রয়ে গিয়েছিল, যা এই ধারণাকে গুরুত্ব দিয়েছিল যে তাদের ফিরে আসা ঈশ্বরের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করা উচিত, মানুষের ক্রিয়া নয়।[১১৭] প্রখ্যাত সায়নিস্ট ইতিহাসবিদ শ্লোমো আবিনেরি এই সম্পর্কটিকে বর্ণনা করেছেন: "ইহুদিরা ফিরে আসার ভিশনকে এমনভাবে গ্রহণ করেনি, যেমন খ্রিস্টানরা দ্বিতীয় আগমনের প্রতি দেখেছিল।" ধর্মীয় ইহুদি জাতির ধারণা আধুনিক ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের ধারণা থেকে আলাদা ছিল।[১১৮] ওসমানী শাসনকাল থেকে সায়নিস্ট আন্দোলনের সূচনা পর্যন্ত ফিলিস্তিনে ইহুদি জনগণ, যাদের পুরনো ইয়িশুভ বলা হয়, একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ছিল এবং তাদের সংখ্যা পরিবর্তিত হয়েছে। ১৬শ শতকে, ইহুদি সম্প্রদায়গুলো জেরুজালেম, তিবেরিয়াস, হেবরন এবং সাফেদ—এই চার পবিত্র শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ১৬৯৭ সালে রাব্বি ইয়েহুদা হাচাসিদ ১,৫০০ ইহুদি নিয়ে জেরুজালেমে যান।[১১৯] ১৬৬০ সালে ওসমানীদের বিরুদ্ধে একটি দ্রুজ বিদ্রোহ সাফেদ ও তিবেরিয়াস ধ্বংস করে।[১০৬] ১৮শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে, পূর্ব ইউরোপীয় ইহুদিরা, যারা হাসিদীজমের বিরোধী ছিলেন এবং পেরুশিম নামে পরিচিত, ফিলিস্তিনে বসবাস শুরু করেন।[১২০][১২১]

১৮শ শতকের শেষের দিকে, স্থানীয় আরব শেখ যাহির আল-উমর গালিলিতে একটি প্রকৃত স্বাধীন আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। ওসমানী সাম্রাজ্যের শেখকে দমন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। যাহিরের মৃত্যুর পর, ওসমানীরা আবার অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ১৭৯৯ সালে, গভর্নর জায্জার পাসা একরেতে নেপোলিয়নের সৈন্যদের আক্রমণ প্রতিহত করেন, যার ফলে ফ্রান্সকে সিরিয়া অভিযান ত্যাগ করতে হয়।[১২২] ১৮৩৪ সালে, মুফি আলী কর্তৃক আরব কৃষকদের প্রতি ধার্য করা কর ও নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে প্যালেস্টিনীয় আরব কৃষকদের একটি বিদ্রোহ দমন করা হয়; মুফি আলীর সেনাবাহিনী পশ্চাতে চলে যায় এবং ১৮৪০ সালে ব্রিটিশ সমর্থনে ওসমানী শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।[১২৩] তানজিমাত সংস্কারের মাধ্যমে ওসমানী সাম্রাজ্যজুড়ে নতুন আইন ও নীতি কার্যকর করা হয়।

১৮৮১ সালে, আধুনিক ইহুদি অভিবাসনের প্রথম ঢেউ, যা "প্রথম আলিয়াহ" নামে পরিচিত, ওসমানী শাসিত প্যালেস্টিনায় শুরু হয়, যখন ইহুদিরা পূর্ব ইউরোপে পোগ্রাম থেকে পালিয়ে আসছিল।[১২৪] ১৮৮২ সালের মেয় আইন ইহুদিদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়িয়ে দেয় এবং তাদের বাসস্থানের স্থান সীমিত করে দেয়।[১২৫][১২৬] এর প্রতিক্রিয়ায়, রাজনৈতিক সায়নিজম গড়ে ওঠে, একটি আন্দোলন যা প্যালেস্টিনায় একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, এবং এর মাধ্যমে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর ইহুদি প্রশ্নের সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।[১২৭] রাশিয়ার জারিস্ত শাসনে অ্যান্টিসেমিটিজম, পোগ্রাম এবং সরকারি নীতির কারণে ১৮৮২ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে তিন মিলিয়ন ইহুদি অভিবাসন করেন, যার মধ্যে মাত্র ১% প্যালেস্টিনায় গিয়েছিল। যারা প্যালেস্টিনায় গিয়েছিল, তারা মূলত আত্মনির্ধারণ এবং ইহুদি পরিচয়ের ধারণা দ্বারা প্রেরিত ছিল, পোগ্রাম বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নয়।[১১৭]

দ্বিতীয় আলিয়াহ (১৯০৪–১৯১৪) কিশিনেভ পোগ্রামের পর শুরু হয়; প্রায় ৪০,০০০ ইহুদি প্যালেস্টিনায় বসবাস করতে আসে, যদিও প্রায় অর্ধেক পরবর্তীতে চলে যায়। প্রথম এবং দ্বিতীয় অভিবাসন ঢেউয়ের বেশিরভাগ অভিবাসী ছিলেন আথোডক্স ইহুদি।[১২৮] দ্বিতীয় আলিয়াহে সায়নিস্ট সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা কিবুত্জ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা একটি স্বাধীন ইহুদি অর্থনীতি গড়ে তোলার ধারণার উপর ভিত্তি করে, যা কেবলমাত্র ইহুদি শ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল।[১২৯][১৩০] দ্বিতীয় আলিয়াহর যারা ইয়িশুভের নেতাদের মধ্যে পরবর্তীতে পরিণত হন, তারা বিশ্বাস করতেন যে ইহুদি বসতি অর্থনীতি আরব শ্রমের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। এটি আরব জনগণের সঙ্গে বিরোধের একটি প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে নতুন ইয়িশুভের জাতীয়তাবাদী আদর্শ তার সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে ছাড়িয়ে যায়।[১৩১] যদিও দ্বিতীয় আলিয়াহর অভিবাসীরা প্রধানত কমিউনাল ইহুদি কৃষি বসতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল, ১৯০৯ সালে তেল আভিভ প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম পরিকল্পিত ইহুদি শহর হিসেবে। এই সময়ে ইহুদি সশস্ত্র মিলিশিয়াগুলির উত্থান ঘটে, প্রথমটি ছিল বার-গিওরা ১৯০৭ সালে। দুই বছর পরে, বৃহত্তর হাশোমের সংগঠনটি তার পরিবর্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইসরায়েল রাষ্ট্র

প্রতিষ্ঠা এবং প্রাথমিক বছর

Thumb
ডেভিড বেন-গুরিয়ন ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন

১৯৪৮ সালের ১৪ মে, ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন আগে, ইহুদি এজেন্সির প্রধান ডেভিড বেন-গুরিয়ন "এরেথ-ইসরায়েলে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।"[১৩২] পরের দিন, চারটি আরব দেশের সেনাবাহিনী—মিশর, সিরিয়া, ট্রান্সজর্দান এবং ইরাক—যা আগে ছিল ম্যান্ডেটরি প্যালেস্টিনা, সেখানে প্রবেশ করে ১৯৪৮ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করে;[১৩৩] ইয়েমেন, মরক্কো, সৌদি আরব এবং সুদান থেকে সৈন্যরা যুদ্ধের অংশ হিসেবে যোগ দেয়।[১৩৪][১৩৫] আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রতিরোধ করা এবং "তাদের [ইহুদিদের] সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া।"[১৩৬][১৩৭][১৩৮] আরব লীগ জানায় যে, আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং আরও রক্তপাত রোধ করা।[১৩৯]

এক বছরের লড়াইয়ের পর, একটি বিরতি ঘোষণা করা হয় এবং অস্থায়ী সীমান্ত, যা "গ্রিন লাইন" নামে পরিচিত, প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৪০] জর্ডান পশ্চিম তীরে (যেটি পূর্ব জেরুজালেমসহ অন্তর্ভুক্ত) অধিকার করে এবং মিশর গাজা উপত্যকা দখল করে। ৭০০,০০০ এরও বেশি প্যালেস্টিনীয় ইহুদি মিলিশিয়া এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দ্বারা পালিয়ে যায় বা বিতাড়িত হয়—যা আরবিতে "নাকবা" ('দুর্ঘটনা') নামে পরিচিত।[১৪১] এই ঘটনা প্যালেস্টিনিয় আরব সংস্কৃতি, পরিচয় এবং জাতীয় আকাঙ্ক্ষাগুলোর অধিকাংশ ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রায় ১৫৬,০০০ আরব প্যালেস্টিনীয় বাকি থাকে এবং তারা ইসরায়েলের আরব নাগরিক হিসেবে পরিণত হয়।[১৪২]

Thumb
১৯৪৮ সালের যুদ্ধের সমাপ্তি চিহ্নিত করে ১০ মার্চ ১৯৪৯-এ কালি পতাকা উত্তোলন

ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলি রেজুলেশন ২৭৩ অনুযায়ী, ১১ মে ১৯৪৯ তারিখে ইসরায়েলকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়।[১৪৩] রাষ্ট্রের প্রাথমিক বছরগুলোতে, প্রধানমন্ত্রী বেন-গুরিয়ন পরিচালিত লেবার সায়নিজম আন্দোলন ইসরায়েলি রাজনীতিতে প্রাধান্য পায়।[১৪৪][১৪৫] ১৯৪০-এর দশক ও ১৯৫০-এর দশকের প্রথমদিকে ইসরায়েলে অভিবাসনকে সহায়তা করেছিল ইসরায়েলি অভিবাসন বিভাগ এবং সরকারবিহীন মোসাদ লে আলিয়া বেট (অর্থাৎ "অভিবাসন ইনস্টিটিউট বি")।[১৪৬] এটি গোপনীয় অপারেশন পরিচালনা করেছিল এমন দেশগুলোতে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ইউরোপে, যেখানে ইহুদিদের জীবন বিপদের সম্মুখীন ছিল এবং বেরিয়ে আসা কঠিন ছিল। মোসাদ লে আলিয়া বেট ১৯৫৩ সালে বাতিল করা হয়।[১৪৭] এই অভিবাসন "এক মিলিয়ন পরিকল্পনা" অনুযায়ী ছিল। কিছু অভিবাসী সায়নিজ বিশ্বাসে অবিচল ছিলেন বা ভালো জীবনের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার জন্য এসেছিলেন, আবার অনেকে নির্যাতন থেকে বাঁচতে বা তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে এসেছিলেন।[১৪৮][১৪৯]

হোলোকাস্ট পরবর্তী বেঁচে থাকা এবং আরব ও মুসলিম দেশগুলো থেকে ইসরায়েলে ইহুদি অভিবাসীদের প্রবাহের কারণে প্রথম তিন বছরে ইহুদিদের সংখ্যা ৭০০,০০০ থেকে ১৪,০০,০০০ এ পৌঁছায়। ১৯৫৮ সালের মধ্যে, জনসংখ্যা দুই মিলিয়নে পৌঁছে।[১৫০] ১৯৪৮ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে প্রায় ১১,৫০,০০০ ইহুদি শরণার্থী ইসরায়েলে পুনর্বাসিত হন।[১৫১] কিছু অভিবাসী শরণার্থী হিসেবে এসেছিলেন এবং তাদের জন্য অস্থায়ী শিবিরে, যেগুলো মাআবরত নামে পরিচিত, বসবাস করানো হয়েছিল; ১৯৫২ সালের মধ্যে, ২০০,০০০ এরও বেশি মানুষ এই তাঁতের শহরে বাস করছিল।[১৫২] ইউরোপীয় পটভূমির ইহুদিরা প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আগত ইহুদিদের তুলনায় বেশি সুবিধা পেতেন—এই গ্রুপের জন্য নির্ধারিত আবাসন ইউনিটগুলো প্রায়ই ইউরোপীয় ইহুদিদের জন্য পুনরায় নির্ধারিত হতো, ফলে আরব দেশগুলো থেকে সদ্য আগত ইহুদিরা সাধারণত দীর্ঘ সময় শরণার্থী শিবিরে থাকতে বাধ্য হতেন।[১৫৩][১৫৪] এই সময়কালে, খাদ্য, কাপড় এবং আসবাবপত্র কড়া নিয়ন্ত্রণে ছিল, যা "অষ্টেরিটি পিরিয়ড" নামে পরিচিত। সংকট সমাধানের প্রয়োজনীয়তা বেন-গুরিয়নকে পশ্চিম জার্মানির সাথে একটি পুনরায় ক্ষতিপূরণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে, যা হোলোকাস্টের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ গ্রহণের ধারণায় ক্ষুব্ধ ইহুদিদের ব্যাপক প্রতিবাদের সৃষ্টি করে।[১৫৫]

Remove ads

ভূগোল

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
ইসরায়েলের ভূপ্রকৃতি অবস্থান মানচিত্র
Thumb
Thumb
দিন ও রাতের সময়ে ইসরায়েল এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর স্যাটেলাইট চিত্র।

ইসরায়েল পশ্চিম এশিয়াতে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। এই ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে সমভূমি অবস্থিত। ইসরায়েলের দক্ষিণে রয়েছে বিশাল নেগেভ মরুভূমি আর উত্তরে আছে বরফাবৃত পর্বতমালা। দক্ষিণে লোহিত সাগরে এক চিলতে প্রবেশপথ আছে।[১৫৬][১৫৭]

১৯৪৯ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির সীমারেখা অনুযায়ী (এবং ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল দ্বারা দখল করা অঞ্চল বাদে) ইসরায়েলের সার্বভৌম ভূখণ্ডের মোট আয়তন প্রায় ২০,৭৭০ বর্গকিলোমিটার (৮,০১৯ বর্গমাইল), যার দুই শতাংশ জলভাগ।[১৫৮] তবে ইসরায়েল এতটাই সরু (উত্তর-দক্ষিণে ৪০০ কিলোমিটার লম্বা, কিন্তু প্রস্থে সর্বাধিক ১০০ কিলোমিটার) যে ভূমধ্যসাগরে দেশটির বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তার স্থলভাগের দ্বিগুণ।[১৫৯] ইসরায়েলি আইন অনুসারে মোট অঞ্চল (পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান মালভূমি সহ) ২২,০৭২ বর্গকিলোমিটার (৮,৫২২ বর্গমাইল),[১৬০] আর সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ও আংশিক ফিলিস্তিনি শাসিত পশ্চিম তীরসহ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন মোট এলাকা ২৭,৭৯৯ বর্গকিলোমিটার (১০,৭৩৩ বর্গমাইল)।[১৬১]

ছোট আয়তনের সত্ত্বেও, ইসরায়েলে ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বিদ্যমান। দক্ষিণে নেগেভ মরুভূমি থেকে উর্বর জিজরিয়েল উপত্যকা পর্যন্ত এবং উত্তরে গালিলি, কারমেল ও গোলানের পাহাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত ইসরায়েলি উপকূলীয় সমতলভূমি দেশের বেশিরভাগ জনগণের বাসস্থান।[১৬২] কেন্দ্রীয় উচ্চভূমির পূর্বে জর্দান রিফট উপত্যকা রয়েছে, যা ৬,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রেট রিফট ভ্যালির একটি ছোট অংশ। জর্দান নদী হুলা উপত্যকা ও গ্যালিলি সাগর পেরিয়ে মৃত সাগর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়, যা পৃথিবীর নিম্নতম স্থলপৃষ্ঠ। আরও দক্ষিণে আরাভা মরুভূমি রয়েছে, যা লোহিত সাগরের অংশ এলাত উপসাগরে শেষ হয়। নেগেভ ও সিনাই উপদ্বীপে "মাখতেশ" বা "ক্ষয় চক্রাকৃতি" নামে পরিচিত ভৌগোলিক গঠন দেখা যায়, যার মধ্যে মাখতেশ রামন সবচেয়ে বড়, দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার।[১৬৩] ইসরায়েল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে প্রতি বর্গমিটারে সবচেয়ে বেশি উদ্ভিদ প্রজাতির বাসস্থান।[১৬৪] দেশটিতে চারটি স্থলজ বাস্তুসংস্থান রয়েছে: পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় শঙ্কুযুক্ত–স্ক্লেরোফিলাস–বিস্তৃত পাতাবিশিষ্ট বন, দক্ষিণ আনাতোলীয় পার্বত্য শঙ্কুযুক্ত ও পর্ণমোচী বন, আরব মরুভূমি এবং মেসোপটেমিয়ান ঝোপঝাড় মরুভূমি।[১৬৫] ১৯৪৮ সালে বনভূমি দেশের ২% ছিল, যা ২০১৬ সালে বেড়ে ৮.৫%-এ পৌঁছায়। এটি ইহুদি জাতীয় তহবিলের বৃহৎ বনায়ন কর্মসূচির ফল।[১৬৬][১৬৭]

টেকটোনিক্স এবং ভূমিকম্প

জর্ডান রিফট ভ্যালি তৈরি হয়েছে ভূ-পৃষ্ঠের টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে। এটি ডেড সি ট্রান্সফর্ম (ডিএসটি) নামে পরিচিত একটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার অংশ। এই অঞ্চলে আফ্রিকান প্লেট পশ্চিমে এবং আরব প্লেট পূর্বে অবস্থিত। গোলান হাইটস ও জর্ডান আরব প্লেটের অংশ, আর গ্যালিলি, পশ্চিম তীর, উপকূলীয় সমভূমি ও নেগেভ আফ্রিকান প্লেটের অংশ। এই প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে এখানে প্রায়ই ভূমিকম্প হতে পারে। বিশেষ করে, ৭৪৯ ও ১০৩৩ সালে দুটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। এর পর থেকে সঞ্চিত শক্তি একটি বড় ভূমিকম্প (প্রায় ৭.৪ মাত্রার) ঘটানোর জন্য যথেষ্ট।[১৬৮]

সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলো ৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, ৩৬৩, ৭৪৯ এবং ১০৩৩ খ্রিস্টাব্দে ঘটেছিল, যা গড়ে প্রতি ৪০০ বছর পরপর ঘটেছে।[১৬৯] তবে, ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প প্রায় প্রতি ৮০ বছর পরপর আঘাত হানে, যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।[১৭০] যদিও কঠোর নির্মাণ বিধিমালা প্রয়োগ করা হয়েছে এবং সাম্প্রতিককালে নির্মিত ভবনগুলো ভূমিকম্প প্রতিরোধী, ২০০৭ সালের হিসাবে, অনেক সরকারি ভবন এবং ৫০,০০০ আবাসিক ভবন নতুন মানদণ্ড পূরণ করেনি এবং শক্তিশালী ভূমিকম্পের মুখোমুখি হলে সেগুলো ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।[১৭০]

জলবায়ু

Thumb
আইপিসিসি ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলেও ইসরায়েলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।

ইসরায়েলের তাপমাত্রা অনেক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন হয়, বিশেষ করে শীতে। উপকূলীয় অঞ্চলে, যেমন টেল আবিভ ও হাইফায়, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু থাকে, যেখানে শীতে ঠান্ডা এবং বৃষ্টিপাত হয়, আর গ্রীষ্মে গরম ও দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। বেয়ারশেবা ও উত্তর নেগেভে অর্ধ-মরু জলবায়ু থাকে, যেখানে গ্রীষ্মে গরম, শীতে ঠান্ডা এবং বৃষ্টিপাত কম হয়। দক্ষিণ নেগেভ ও আরাবাহ অঞ্চলে মরুভূমির জলবায়ু থাকে, যেখানে গ্রীষ্মে খুব গরম এবং শুষ্ক, আর শীতে তাপমাত্রা মৃদু হয় এবং বৃষ্টিপাত কম হয়। ১৯৪২ সালে তীরাত জ্ভি কিবুতজে ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।[১৭১][১৭২] পর্বত এলাকায় বাতাসে ঠান্ডা থাকতে পারে, এবং ৭৫০ মিটার (২,৪৬০ ফুট) বা তার বেশি উঁচু জায়গায়, যেমন জেরুজালেম, প্রতি বছর কমপক্ষে একবার তুষারপাত হয়।[১৭৩] মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত খুব কম হয়।[১৭৪][১৭৫]

ইসরায়েলটি উষ্ণমণ্ডলীয় ও মাপান্দ্র অঞ্চলের মাঝখানে অবস্থিত, যার ফলে এখানে চারটি ভিন্ন ধরনের ফাইটোজিওগ্রাফিক অঞ্চল রয়েছে। এ কারণে দেশটির উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। ইসরায়েলে ২,৮৬৭টি উদ্ভিদ প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ২৫৩টি প্রজাতি আনা হয়েছে এবং স্থানীয় নয়।[১৭৬] এছাড়া, ইসরায়েলে ৩৮০টি প্রকৃতি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে।[১৭৭]

পানির অভাব থাকা সত্ত্বেও, ইসরায়েল বিভিন্ন পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তি উন্নত করেছে, এর মধ্যে ড্রিপ সেচ পদ্ধতি অন্যতম।[১৭৮][১৭৯] সৌর শক্তির জন্য প্রচুর সূর্যালোক পাওয়া যায়, যা ইসরায়েলকে সৌর শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বে সবার শীর্ষে নিয়ে গেছে—প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পানি গরম করার জন্য সৌর প্যানেল ব্যবহার করা হয়।[১৮০] পরিবেশ সুরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন "সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে", বিশেষ করে সংবেদনশীল জনগণের জন্য।[১৮১]

Remove ads

সরকার এবং রাজনীতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
রাষ্ট্রপতি
আইজ্যাক হারজোগ
Thumb
কনেসেট কক্ষ, যা ইসরায়েলি সংসদ কক্ষ।

ইসরায়েলে সংসদীয় ব্যবস্থা, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এবং সার্বজনীন ভোটাধিকার বিদ্যমান। সংসদ সদস্যদের সমর্থন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান সাধারণত প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারের প্রধান এবং মন্ত্রিসভার প্রধান।[১৮২][১৮৩] রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান, যার দায়িত্ব সীমিত এবং মূলত আনুষ্ঠানিক।[১৮২]

ইসরায়েল ১২০ সদস্যের সংসদ দ্বারা শাসিত, যা কনেসেট নামে পরিচিত। কনেসেটের সদস্যপদ রাজনৈতিক দলগুলোর আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়,[১৮৪][১৮৫] যেখানে নির্বাচনী সীমা ৩.২৫%। এটি বাস্তবে জোট সরকার গঠনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিম তীরে অবস্থিত ইসরায়েলি বসতির বাসিন্দারাও ভোটাধিকার পায়।[১৮৬] ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর কনেসেটের ১২০ সদস্যের মধ্যে ১০ জন (৮%) ছিলেন বসতি স্থাপনকারী।[১৮৭] সংসদীয় নির্বাচন প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অস্থিতিশীল জোট বা অনাস্থা ভোটের কারণে সরকার তার আগেই ভেঙে যেতে পারে।[১৮৮] প্রথম আরব-নেতৃত্বাধীন দল ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৮৯] ২০২২ সাল পর্যন্ত, আরব-নেতৃত্বাধীন দলগুলো কনেসেটের প্রায় ১০% আসন ধারণ করে।[১৯০] কনেসেটের বেসিক ল (১৯৫৮) এবং এর সংশোধনী অনুযায়ী, কোনো দল কনেসেট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না যদি তার উদ্দেশ্য বা কার্যক্রম ইসরায়েলকে ইহুদি জনগণের রাষ্ট্র হিসেবে অস্বীকার করার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়।

ইসরায়েলের মৌলিক নীতিসমূহ সংবিধানের ভূমিকা পালন করে। এই আইনে ইসরায়েল নিজেকে একটি "ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র" এবং "শুধুমাত্র ইহুদি জনগণের জাতি-রাষ্ট্র" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে।[১৯১] ২০০৩ সালে, কনেসেট এই আইনের ভিত্তিতে একটি আনুষ্ঠানিক সংবিধান প্রণয়নের কাজ শুরু করে।[১৫৮][১৯২]

ইসরায়েলের কোনো আনুষ্ঠানিক ধর্ম নেই।[১৯৩][১৯৪][১৯৫] তবে "ইহুদি ও গণতান্ত্রিক" রাষ্ট্র হিসেবে সংজ্ঞায়নের কারণে এটি ইহুদিধর্মের সঙ্গে গভীর সংযোগ বজায় রাখে। ১৯ জুলাই ২০১৮ সালে, কনেসেট একটি বেসিক ল পাস করে, যেখানে ইসরায়েলকে প্রধানত "ইহুদি জনগণের জাতি-রাষ্ট্র" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এতে হিব্রুকে অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং আরবি ভাষাকে একটি "বিশেষ মর্যাদা" দেওয়া হয়।[১৯৬] একই বিল ইহুদিদের জাতীয় আত্ম-নির্ধারণের বিশেষ অধিকার প্রদান করে এবং দেশটিতে ইহুদি বসতি স্থাপনকে "জাতীয় স্বার্থ" হিসেবে উল্লেখ করে। সরকারকে এই স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে ক্ষমতা দেওয়া হয়।[১৯৭]

প্রশাসনিক বিভাগ

ইসরায়েল ছয়টি প্রধান প্রশাসনিক জেলার মধ্যে বিভক্ত, যেগুলোকে হিব্রু ভাষায় "মেহোজোট" বলা হয় (একবচন: মেহোজ)। এই জেলাগুলো হলো সেন্টার, হাইফা, জেরুজালেম, নর্থ, সাউথ এবং তেল আবিব। এছাড়াও পশ্চিম তীরে জুডিয়া ও সামারিয়া এলাকা রয়েছে। পুরো জুডিয়া ও সামারিয়া এলাকা এবং জেরুজালেম ও উত্তর জেলার কিছু অংশ আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃত নয়। জেলাগুলো ১৫টি উপ-জেলায় বিভক্ত, যেগুলোকে হিব্রু ভাষায় "নাফোট" বলা হয় (একবচন: নাফা), এবং সেগুলো আবার ৫০টি প্রাকৃতিক অঞ্চলে বিভক্ত।[১৯৮]

আরও তথ্য জেলা, রাজধানী ...
^a পূর্ব জেরুজালেমে ৩,৬১৭০০ আরব এবং ২৩৩,৯০০ ইহুদি সহ, ২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী.[২০০]
^b শুধুমাত্র ইসরায়েলি নাগরিক।

ইসরায়েলের নাগরিকত্ব আইন

ইসরায়েলি নাগরিকত্ব সম্পর্কিত দুটি প্রধান আইন হলো ১৯৫০ সালের প্রত্যাবর্তন আইন এবং ১৯৫২ সালের নাগরিকত্ব আইন। প্রত্যাবর্তন আইন ইহুদিদের জন্য ইসরায়েলে অবাধে অভিবাসন ও নাগরিকত্ব লাভের অধিকার প্রদান করে। দেশে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পান, যদি অন্তত একজন অভিভাবক নাগরিক হন।[২০১]

ইসরায়েলি আইন ইহুদি জাতীয়তাকে ইসরায়েলি জাতীয়তার থেকে আলাদা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে, এবং ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে "ইসরায়েলি জাতীয়তা" বলে কিছু নেই।[২০২][২০৩] একজন ইহুদি জাতীয় সেই ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত, যিনি ইহুদি ধর্ম পালন করেন এবং তাদের বংশধরেরা।[২০২] ২০১৮ সাল থেকে আইন অনুযায়ী ইসরায়েলকে ইহুদি জনগণের জাতিরাষ্ট্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।[২০৪]

বৈদেশিক সম্পর্ক

Thumb
  কূটনৈতিক সম্পর্ক
  কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত
  সাবেক কূটনৈতিক সম্পর্ক
  কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, কিন্তু সাবেক বাণিজ্য সম্পর্ক
  কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই

ইসরায়েল ১৬৫টি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি হলি সি (ভ্যাটিকান), কসোভো, কুক দ্বীপপুঞ্জ এবং নিয়ুর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।[২০৫] দেশটির ১০৭টি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে। বেশিরভাগ মুসলিম দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।[২০৬] আরব লীগের ২২টি দেশের মধ্যে ছয়টি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধাবস্থা রয়েছে, যা ১৯৪৮ সাল থেকে অবিচ্ছিন্নভাবে বজায় আছে। একইভাবে, লেবাননের সঙ্গেও ২০০০ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের অবসানের পর থেকে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধাবস্থা বজায় রয়েছে। ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত এখনো কোনো চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়নি।

মিশরের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সত্ত্বেও, মিশরীয়দের মধ্যে ইসরায়েলকে এখনো ব্যাপকভাবে শত্রু দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[২০৭] ইরান ইসলামিক বিপ্লবের সময় ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে।[২০৮] ইসরায়েলি নাগরিকরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, সৌদি আরব এবং ইয়েমেন ভ্রমণ করতে পারেন না।[২০৯] ২০০৮–০৯ গাজার যুদ্ধের পর মৌরিতানিয়া, কাতার, বলিভিয়া এবং ভেনেজুয়েলা ইসরায়েলের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে।[২১০] তবে বলিভিয়া ২০১৯ সালে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করে।[২১১]

Thumb
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সাথে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইতিজাক রাবিন এবং ইয়াসির আরাফাত

যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ইসরায়েল রাষ্ট্রকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দুটি দেশ, যারা প্রায় একই সময়ে এই ঘোষণা দিয়েছিল।[২১২] ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয় এবং ১৯৯১ সালে পুনরায় স্থাপিত হয়।[২১৩] যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যে তার "সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার" মনে করে,[২১৪] যা "গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং নিরাপত্তা স্বার্থের" উপর ভিত্তি করে।[২১৫] ১৯৬৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে $৬৮ বিলিয়ন সামরিক সহায়তা এবং $৩২ বিলিয়ন অনুদান দিয়েছে,[২১৬] যা ২০০৩ সাল পর্যন্ত অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।[২১৬][২১৭][২১৮] বেশিরভাগ মার্কিনরা ইসরায়েলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে।[২১৯][২২০] যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক "স্বাভাবিক" হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি পূর্বে ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটিশ ম্যান্ডেট পরিচালনা করেছিল।[২২১] ২০০৭ সালের মধ্যে জার্মানি ইসরায়েল এবং ইসরায়েলি হলোকাস্ট বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ২৫ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছে।[২২২] ইসরায়েল ইউরোপীয় ইউনিয়নের "ইউরোপীয় প্রতিবেশী নীতিতে" অন্তর্ভুক্ত।[২২৩]

তুরস্ক ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও, ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি।[২২৪] তুরস্কের অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে কখনো কখনো আরব ও মুসলিম দেশগুলোর চাপের মুখে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত রাখতে হয়েছে।[২২৫] ২০০৮–০৯ সালের গাজার যুদ্ধ এবং গাজা ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের অভিযানের পর এই সম্পর্ক খারাপ হয়।[২২৬] তবে ১৯৯৫ সাল থেকে গ্রিস এবং ইসরায়েলের সম্পর্ক উন্নত হয়েছে।[২২৭] উভয় দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে, এবং ২০১০ সালে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী গ্রিসের হেলেনিক বিমানবাহিনীর সঙ্গে একটি যৌথ মহড়া পরিচালনা করে। লেভিয়াথান গ্যাসক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে সাইপ্রাস-ইসরায়েলের তেল এবং গ্যাস অনুসন্ধান গ্রিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর সাইপ্রাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।[২২৮] বিশ্বের দীর্ঘতম সাবমেরিন পাওয়ার কেবল, ইউরোএশিয়া ইন্টারকানেক্টর, সাইপ্রাস-ইসরায়েলের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে।[২২৯]

আজারবাইজান মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে একটি, যারা ইসরায়েলের সঙ্গে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।[২৩০] কাজাখস্তানও ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছে।[২৩১] ভারত ১৯৯২ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং সামরিক, প্রযুক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক অংশীদারিত্ব উন্নত করেছে।[২৩২] ভারত ইসরায়েলি সামরিক সরঞ্জামের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এবং রাশিয়ার পরে ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক অংশীদার।[২৩৩] আফ্রিকায় ইথিওপিয়া ইসরায়েলের প্রধান মিত্র, যা রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং নিরাপত্তা স্বার্থের কারণে।[২৩৪]

সামরিক শক্তি

Thumb
ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) হল ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর একমাত্র সামরিক শাখা এবং এটি তার জেনারেল স্টাফের চিফ, রামাতকাল দ্বারা পরিচালিত হয়, যা মন্ত্রিসভার অধীনস্থ। IDF-এ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনী অন্তর্ভুক্ত। এটি ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে হেগানাহসহ অন্যান্য প্যারামিলিটারি সংগঠনকে একত্রিত করে প্রতিষ্ঠিত হয়।[২৩৫] IDF সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তর (অ্যামান)-এর সম্পদও ব্যবহার করে।[২৩৬] IDF বিভিন্ন প্রধান যুদ্ধ এবং সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িত হয়েছে, যা এটিকে বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছে।[২৩৭]

প্রায় সব ইসরায়েলি নাগরিক ১৮ বছর বয়সে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা গ্রহণ করেন। পুরুষরা দুই বছর আট মাস এবং নারীসাধারণত দুই বছর সেবা দেন।[২৩৮] বাধ্যতামূলক সেবার পর, ইসরায়েলি পুরুষরা রিজার্ভ বাহিনীতে যোগ দেন এবং সাধারণত তাদের চিরকালীন রিজার্ভ সেবা দিতে হয়, যা বছরে কয়েক সপ্তাহ হতে পারে, কখনও কখনও তাদের চল্লিশের দশক পর্যন্ত। বেশিরভাগ মহিলাকে রিজার্ভ সেবা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ইসরায়েলের আরব নাগরিকদের (ড্রুজ বাদে) এবং যারা পূর্ণকালীন ধর্মীয় অধ্যয়নে যুক্ত, তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়, যদিও যিশিভা ছাত্রদের অব্যাহতি একটি বিতর্কের বিষয় হয়েছে।[২৩৯][২৪০] যেসব ব্যক্তির বিভিন্ন কারণে অব্যাহতি দেয়া হয়, তাদের জন্য একটি বিকল্প হলো শেরুত লেউমি বা জাতীয় সেবা, যা সামাজিক কল্যাণ কার্যক্রমে সেবা প্রদানের একটি প্রোগ্রাম।[২৪১] ইসরায়েলি আরবদের একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু অংশও সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছায় যোগ দেয়।[২৪২] তাদের বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার মাধ্যমে, IDF প্রায় ১৭৬,৫০০ সক্রিয় সৈন্য এবং ৪৬৫,০০০ রিজার্ভিস্ট বজায় রাখে, যা ইসরায়েলকে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ শতাংশের সামরিক প্রশিক্ষিত নাগরিকদের একটি দেশ করে তুলেছে।[২৪৩]

Thumb
আয়রন ডোম হল বিশ্বের প্রথম অপারেশনাল অ্যান্টি-আর্টিলারি রকেট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী উচ্চ-প্রযুক্তির অস্ত্র ব্যবস্থার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা ইসরায়েলে ডিজাইন এবং তৈরি করা হয়েছে, পাশাপাশি কিছু বিদেশি আমদানি করা অস্ত্রও রয়েছে। অ্যারো মিসাইলটি বিশ্বের কয়েকটি কার্যকরী অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেমের মধ্যে একটি।[২৪৪] পাইথন এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল সিরিজটি ইসরায়েলের সামরিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।[২৪৫] ইসরায়েলের স্পাইক মিসাইলটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপকভাবে রপ্তানি হওয়া অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইলগুলির একটি।[২৪৬] ইসরায়েলের আয়রন ডোম অ্যান্টি-মিসাইল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটি গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ছোঁড়া শত শত রকেট আটকানোর পর বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।[২৪৭][২৪৮] ইয়ম কিপুর যুদ্ধে পর, ইসরায়েল একটি গোয়েন্দা স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।[২৪৯] অফেক প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইসরায়েল একমাত্র সাতটি দেশগুলোর মধ্যে একটি, যারা এ ধরনের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম।[২৫০]

ইসরায়েলকে ব্যাপকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র ধারণকারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়[২৫১] এবং ১৯৯৩ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, রাসায়নিক এবং জীবাণু অস্ত্রও তাদের possession-এ থাকতে পারে।[২৫২][তারিখের তথ্য] ইসরায়েল নিউক্লিয়ার নন-প্রোলিফারেশন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি[২৫৩] এবং এর পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পর্কে একটি অস্পষ্টতা বজায় রাখার নীতি অনুসরণ করে।[২৫৪] ইসরায়েলের নৌবাহিনীর ডলফিন সাবমেরিনগুলি পারমাণবিক মিসাইল বহন করে বলে বিশ্বাস করা হয়, যা দ্বিতীয় আক্রমণ ক্ষমতা প্রদান করে।[২৫৫] ১৯৯১ সালের গালফ যুদ্ধের পর থেকে, ইসরায়েলের সব বাড়িতেই একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা কক্ষ, মেরখাভ মুগান থাকতে বাধ্য করা হয়েছে, যা রাসায়নিক এবং জীবাণু পদার্থের বিরুদ্ধে অগ্রাধিকার পায়।[২৫৬]

ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা থেকে, দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (GDP) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে সামরিক খরচ বরাদ্দ করা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে এটি সর্বোচ্চ ৩০.৩% ছিল।[২৫৭] ২০২১ সালে, ইসরায়েল মোট সামরিক খরচের ক্ষেত্রে বিশ্বের ১৫তম স্থানে ছিল, যা ছিল ২৪.৩ বিলিয়ন ডলার, এবং GDP এর একটি শতাংশ হিসেবে প্রতিরক্ষা খরচের দিক দিয়ে ৬ষ্ঠ স্থানে, ৫.২%।[২৫৮] ১৯৭৪ সাল থেকে, যুক্তরাষ্ট্র একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।[২৫৯] ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত একটি স্মারক চুক্তির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ইসরায়েলকে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ২০%।[২৬০] ২০২২ সালে, ইসরায়েল বিশ্বের ৯ম স্থানে ছিল অস্ত্র রপ্তানি করার দিক দিয়ে।[২৬১] ইসরায়েলের অস্ত্র রপ্তানির বেশিরভাগই নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রকাশিত হয় না।[২৬২] ইসরায়েল নিয়মিতভাবে গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে নিম্ন রেটিং পায়, ২০২২ সালে এটি ১৬৩টি দেশের মধ্যে ১৩৪তম অবস্থানে ছিল।[২৬৩]

আইনি ব্যবস্থা

Thumb
ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট, গিভাত রাম, জেরুজালেম

ইসরায়েলে তিন স্তরের বিচারব্যবস্থা রয়েছে। নিচের স্তরে রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, যা দেশের প্রায় প্রতিটি শহরে অবস্থিত। এর উপরে রয়েছে জেলা আদালত, যা আপিল আদালত এবং প্রথম স্তরের বিচার আদালত হিসেবে কাজ করে; এটি ইসরায়েলের ছয়টি জেলার মধ্যে পাঁচটিতে অবস্থিত। তৃতীয় এবং সর্বোচ্চ স্তর হলো সুপ্রিম কোর্ট, যা জেরুজালেমে অবস্থিত। এটি দ্বৈত ভূমিকা পালন করে—সর্বোচ্চ আপিল আদালত এবং হাই কোর্ট অফ জাস্টিস হিসাবে। হাই কোর্ট অফ জাস্টিস হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি মামলার শুনানি করে এবং নাগরিক বা অ-নাগরিক যে কেউ রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারে।[২৬৪]

ইসরায়েলের আইনব্যবস্থা ইংলিশ কমন ল, সিভিল ল, এবং ইহুদি আইনের সমন্বয়ে গঠিত[১৫৮] এবং এটি স্টারে ডেসিসিস (পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত) নীতির উপর ভিত্তি করে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পদ্ধতি।[২৬৫] মামলাগুলো পেশাদার বিচারকরা পরিচালনা করেন, যেখানে জুরির কোনো ভূমিকা নেই। বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ ইহুদি, মুসলিম, দ্রুজ এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় আদালতের আওতায় পড়ে। বিচারকদের নির্বাচন একটি কমিটির মাধ্যমে হয়, যা ন্যায়বিচার মন্ত্রী নেতৃত্ব দেন।[২৬৬] ইসরায়েলের মৌলিক আইন: মানব মর্যাদা ও স্বাধীনতা মানবাধিকারের সুরক্ষায় কাজ করলেও, এতে সমতা ও বৈষম্যহীনতার সাধারণ কোনো বিধান নেই বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ এবং আদালাহ উল্লেখ করেছে।[২৩০][২৬৭] এনক্লেভ আইন অনুযায়ী, অধিকৃত অঞ্চলের ইসরায়েলি বসতি ও বাসিন্দাদের জন্যও ইসরায়েলের অনেক দেওয়ানি আইন প্রযোজ্য।[২৬৮]

Remove ads

অর্থনীতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
রামাত গানের ডায়মন্ড এক্সচেঞ্জ জেলা
Thumb
তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ

ইসরায়েলকে পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে উন্নত অর্থনৈতিক ও শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ইসরায়েলের জিডিপি ৫২১.৭ বিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু জিডিপি ৫৩.২ হাজার ডলার বলে অনুমান করে, যা বিশ্বে ১৩তম।[২৬৯] এটি নামমাত্র মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে এশিয়ার তৃতীয় ধনী দেশ[২৭০] এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির গড় সম্পদের হিসাবে শীর্ষে রয়েছে।[২৭১] দ্য ইকোনমিস্ট ২০২২ সালে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলকে চতুর্থ সর্বাধিক সফল অর্থনীতি হিসেবে র‌্যাংক করেছে।[২৭২] মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার রয়েছে এবং বিশ্বে এটি ১৮তম অবস্থানে।[২৭৩] সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েল উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে[২৭৪] এবং ২০১০ সালে OECD-তে যোগ দেয়।[২৭৫][২৭৬] বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবাল প্রতিযোগিতা প্রতিবেদনে ইসরায়েল ২০তম[২৭৭] এবং বিশ্ব ব্যাংকের Ease of Doing Business সূচকে ৩৫তম স্থানে রয়েছে।[২৭৮] ইসরায়েলের অর্থনৈতিক তথ্যের মধ্যে গোলান মালভূমি, পূর্ব জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতিগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[২৭৯]

প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, কৃষি ও শিল্প খাতে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে ইসরায়েল খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবে শস্য ও গরুর মাংসের জন্য আমদানির ওপর নির্ভর করে।[১৫৮] ২০২০ সালে ইসরায়েলের আমদানি ৯৬.৫ বিলিয়ন ডলার ছিল, যার মধ্যে কাঁচামাল, সামরিক সরঞ্জাম, বিনিয়োগ পণ্য, অমসৃণ হীরা, জ্বালানি, শস্য এবং ভোগ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত। একই বছরে ইসরায়েলের রপ্তানির পরিমাণ ১১৪ বিলিয়ন ডলার ছিল, যেখানে প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি সরঞ্জাম, সফটওয়্যার, পালিশ হীরা, কৃষিজ পণ্য, রাসায়নিক দ্রব্য, টেক্সটাইল এবং পোশাক রয়েছে।[১৫৮] ব্যাংক অফ ইসরায়েল ২০১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারণ করে, যা বিশ্বে ১৭তম।[১৫৮] ১৯৭০-এর দশক থেকে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা এবং ঋণ গ্যারান্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়ে আসছে, যা তাদের বৈদেশিক ঋণের প্রায় অর্ধেক। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে কম এবং ২০১৫ সালে নেট বৈদেশিক ঋণে ৬৯ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত নিয়ে এটি ঋণদাতা দেশ হিসেবে অবস্থান করে।[২৮০]

ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক স্টার্টআপ কোম্পানির দেশ[২৮১] এবং NASDAQ-এ তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে।[২৮২] এটি বিশ্বের শীর্ষ দেশ স্টার্টআপের সংখ্যা অনুযায়ী মাথাপিছু হারে[২৮৩] এবং "স্টার্টআপ নেশন" নামে পরিচিত।[২৮৪][২৮৫][২৮৬][২৮৭] ইন্টেল[২৮৮] এবং মাইক্রোসফট[২৮৯] তাদের প্রথম বিদেশি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র ইসরায়েলে স্থাপন করেছিল, পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক উচ্চ প্রযুক্তি বহুজাতিক কোম্পানিও দেশটিতে তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র খুলেছে।

ইসরায়েলে কাজের দিন সাধারণত রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার (পাঁচ দিনের কর্মসপ্তাহ) অথবা শুক্রবার (ছয় দিনের কর্মসপ্তাহ) পর্যন্ত নির্ধারিত। শাব্বাত পালন করার কারণে, যেসব স্থানে শুক্রবার কর্মদিবস এবং জনসংখ্যার বেশিরভাগই ইহুদি, সেখানে শুক্রবার "সংক্ষিপ্ত কর্মদিবস" হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সাথে কর্মসপ্তাহের সামঞ্জস্য আনতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।[২৯০]

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

Thumb
হাইফাতে মাতাম হাই-টেক পার্ক

ইসরায়েল সফটওয়্যার, যোগাযোগ এবং জীবনবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি উন্নয়নে সিলিকন ভ্যালির সঙ্গে তুলনীয় হয়েছে।[২৯১][২৯২] ইসরায়েল গবেষণা ও উন্নয়নে মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) শতাংশ হিসাবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম।[২৯৩] ২০২৪ সালের গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে এটি ১৫তম[২৯৪] এবং ২০১৯ সালের ব্লুমবার্গ ইনোভেশন ইনডেক্সে ৫ম স্থানে রয়েছে।[২৯৫] ইসরায়েলে প্রতি ১০,০০০ কর্মচারীর মধ্যে ১৪০ জন বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ এবং প্রকৌশলী রয়েছেন, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।[২৯৬][২৯৭] ২০০৪ সাল থেকে ইসরায়েল ছয়জন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী (মূলত রসায়নে) উৎপাদন করেছে[২৯৮] এবং প্রতি জনসংখ্যার অনুপাতে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত।[২৯৯][৩০০][৩০১] ইসরায়েলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বসেরা ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্থান পেয়েছে: কম্পিউটার বিজ্ঞানে (টেকনিয়ন এবং তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়), গণিত (হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়) এবং রসায়নে (ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট)।[৩০২]

২০১২ সালে, ইসরায়েল ফিউট্রনের স্পেস কম্পেটিটিভনেস ইনডেক্সে বিশ্বের মধ্যে নবম স্থানে ছিল।[৩০৩] ইসরায়েল স্পেস এজেন্সি সকল মহাকাশ গবেষণা কর্মসূচি সমন্বয় করে, যা বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে এবং এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩টি বাণিজ্যিক, গবেষণা এবং গোয়েন্দা স্যাটেলাইট ডিজাইন ও নির্মাণ করেছে।[৩০৪] এর কিছু স্যাটেলাইট বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত মহাকাশ প্রযুক্তির মধ্যে স্থান পেয়েছে।[৩০৫] শাভিত হলো ইসরায়েলের তৈরি একটি মহাকাশ উৎক্ষেপণ যান, যা ছোট স্যাটেলাইটকে নিম্ন পৃথিবীর কক্ষপথে প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।[৩০৬] এটি প্রথম ১৯৮৮ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়, যা ইসরায়েলকে মহাকাশ উৎক্ষেপণের সক্ষমতা অর্জনকারী অষ্টম জাতি হিসেবে স্থান দেয়। ২০০৩ সালে, ইলান রামন ইসরায়েলের প্রথম মহাকাশচারী হন, যিনি স্পেস শাটল কলম্বিয়ার মর্মান্তিক মিশনে অংশ নেন।[৩০৭]

ইসরায়েলে চলমান পানি সংকটের ফলে পানি সংরক্ষণ কৌশল এবং কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ড্রিপ সেচ পদ্ধতি, যা বিশ্বব্যাপী কৃষিতে বিপ্লব এনেছে, ইসরায়েলে উদ্ভাবিত। দেশটি লবণাক্ত পানি শোধন ও পানি পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত শীর্ষে অবস্থান করছে। বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রের পানি শোধনাগার সোরেক ইসরায়েলে অবস্থিত।[৩০৮] ২০১৪ সালে লবণাক্ত পানি শোধন প্রকল্পসমূহ দেশটির ৩৫% পানীয় জল সরবরাহ করত, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৭০%-এ উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।[৩০৯] ২০১৫ সাল নাগাদ গৃহস্থালি, কৃষি এবং শিল্পের জন্য ব্যবহৃত পানির ৫০ শতাংশের বেশি কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত হচ্ছিল।[৩১০] ২০১১ সালে ইসরায়েলের পানি প্রযুক্তি শিল্পের বাজারমূল্য বছরে ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, এবং রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনের ফলে দেশটি এখন পানির নেট রপ্তানিকারক হওয়ার পথে রয়েছে।[৩১১]

Thumb
বেন-গুরিয়ন ন্যাশনাল সোলার এনার্জি সেন্টারে বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্যারাবোলিক ডিশ[৩১২]

ইসরায়েল সৌর শক্তি গ্রহণ করেছে এবং এর প্রকৌশলীরা সৌর শক্তি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক পর্যায়ে রয়েছেন।[৩১৩] দেশটির সৌর শক্তি কোম্পানিগুলি বিশ্বের বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করে।[৩১৪][৩১৫] ইসরায়েলে ৯০% এরও বেশি বাড়ি গরম পানির জন্য সৌর শক্তি ব্যবহার করে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।[১৮০][৩১৬] সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সৌর শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেশটি প্রতি বছর তার বিদ্যুৎ খরচের ৮% সাশ্রয় করে।[৩১৭] এর ভৌগোলিক অক্ষাংশে উচ্চ বার্ষিক সৌর বিকিরণ ইসরায়েলের নেগেভ অঞ্চলে একটি বিশ্ববিখ্যাত সৌর গবেষণা ও উন্নয়ন শিল্পের জন্য আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।[৩১৩][৩১৪][৩১৫] ইসরায়েলে একটি আধুনিক বৈদ্যুতিক গাড়ির অবকাঠামো ছিল, যা দেশের সারা জুড়ে চার্জিং স্টেশনের নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত ছিল;[৩১৮][৩১৯][৩২০] তবে, এর বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি বেটার প্লেস ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যায়।[৩২১]

শক্তি

ইসরায়েল ২০০৪ সালে তার নিজস্ব উপকূলীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন শুরু করে। ২০০৯ সালে তামার গ্যাস ক্ষেত্রটি উপকূলের কাছে আবিষ্কৃত হয়, এবং ২০১০ সালে লেভিয়াথান গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়।[৩২২] এই দুটি গ্যাস ক্ষেত্রের প্রাকৃতিক গ্যাস রিজার্ভ ইসরায়েলকে ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত শক্তির সুরক্ষা দিতে সক্ষম হতে পারে। তামার ক্ষেত্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ২০১৩ সালে শুরু হয়, যেখানে প্রতি বছর ৭.৫ বিলিয়ন ঘন মিটার (বিসিএম) গ্যাস উৎপাদিত হয়।[৩২৩] ২০১৬ সালের হিসাবে, ইসরায়েলের প্রমাণিত প্রাকৃতিক গ্যাস রিজার্ভ ছিল ১৯৯ বিলিয়ন বিসিএম।[৩২৪] লেভিয়াথান গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উৎপাদন ২০১৯ সালে শুরু হয়।[৩২৫]

কেতুরা সান ইসরায়েলের প্রথম বাণিজ্যিক সৌর ক্ষেত্র। ২০১১ সালে অ্যারাভা পাওয়ার কোম্পানি দ্বারা নির্মিত, এই ক্ষেত্রটি সানটেক কোম্পানির তৈরি ১৮,৫০০টি ফটোভোলটাইক প্যানেল নিয়ে গঠিত, যা প্রতি বছর প্রায় ৯ গিগাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।[৩২৬] পরবর্তী ২০ বছরে, এই ক্ষেত্রটি প্রায় ১,২৫,০০০ মেট্রিক টন কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপাদন রোধ করবে।[৩২৭]

পরিবহন

Thumb
বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর

ইসরায়েলের মোট ১৯,২২৪ কিলোমিটার (১১,৯৪৫ মাইল) পেভড সড়ক রয়েছে[৩২৮] এবং দেশটিতে ৩ মিলিয়ন মোটরযান চলাচল করে।[৩২৯] প্রতি ১,০০০ জন মানুষের জন্য মোটরযানের সংখ্যা ৩৬৫, যা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম।[৩৩০] দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে তার সড়কগুলিতে চলাচলকারী ৩০% যানবাহন বৈদ্যুতিক শক্তি দ্বারা চালিত করতে লক্ষ্য স্থির করেছে।[৩৩১]

ইসরায়েলে ৫,৭১৫টি বাস রয়েছে, যা নির্ধারিত রুটে চলাচল করে[৩৩২] এবং এগুলির পরিচালনা বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানি করে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং পুরোনো কোম্পানি হলো এগেড, যা দেশের বেশিরভাগ অংশে সেবা প্রদান করে।[৩৩৩] রেলপথ ১,২৭৭ কিলোমিটার (৭৯৩ মাইল) বিস্তৃত এবং এগুলির পরিচালনা করে সরকারী মালিকানাধীন ইসরায়েল রেলওয়ে।[৩৩৪] ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে বড় ধরনের বিনিয়োগের পর, প্রতি বছর রেলযাত্রীদের সংখ্যা ১৯৯০ সালে ২৫ লাখ থেকে ২০১৫ সালে ৫৩ মিলিয়ন বেড়েছে; রেলপথ প্রতি বছর ৭.৫ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহন করে।[৩৩৪]

ইসরায়েলকে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেবা প্রদান করে: বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর, যা আন্তর্জাতিক আকাশযাত্রার প্রধান কেন্দ্র; রামন বিমানবন্দর; এবং হাইফা বিমানবন্দর। ২০২৩ সালে, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর ২১.১ মিলিয়ন যাত্রীর বেশি সেবা প্রদান করেছে।[৩৩৫] দেশটির তিনটি প্রধান সমুদ্রবন্দর রয়েছে: হাইফা বন্দর, যা সবচেয়ে পুরোনো এবং বৃহত্তম; আশদোদ বন্দর; এবং এইলাত বন্দর, যা লাল সাগরের পাশে অবস্থিত।

পর্যটন

Thumb
মৃত সাগরের তীরে এইন বোকেক রিসোর্ট

ইসরায়েলে পর্যটন, বিশেষ করে ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সমুদ্র সৈকত, প্রাচীন স্থাপনা, ঐতিহাসিক ও বাইবেলের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থান এবং সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশও মানুষকে আকর্ষণ করে। ২০১৭ সালে প্রায় ৩৬ লাখ পর্যটক ইসরায়েল ভ্রমণ করেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। এতে দেশটির অর্থনীতিতে প্রায় ২০ বিলিয়ন শেকেল আয় হয়।[৩৩৬][৩৩৭]

ভূসম্পত্তি

ইসরায়েলে বাড়ির দাম বিশ্বের শীর্ষ তৃতীয় স্থানে রয়েছে,[৩৩৮] যেখানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য গড়ে ১৫০টি মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ লাগে।[৩৩৯] ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ২.৭ মিলিয়ন সম্পত্তি রয়েছে এবং প্রতি বছর ৫০,০০০-এর বেশি নতুন সম্পত্তি যুক্ত হচ্ছে।[৩৪০] তবে বাড়ির চাহিদা সরবরাহের তুলনায় অনেক বেশি, ২০২১ সালের হিসাবে প্রায় ২ লক্ষ অ্যাপার্টমেন্টের ঘাটতি থাকে।[৩৪১] এর ফলে, ২০২১ সালে বাড়ির দাম ৫.৬% বেড়ে যায়।[৩৪২] একই বছরে ইসরায়েলিরা রেকর্ড পরিমাণ ১১৬.১ বিলিয়ন শেকেল ঋণ নিয়ে বাড়ি কেনার জন্য বন্ধক (মর্টগেজ) নিয়েছিল, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৫০% বেশি।[৩৪৩]

Remove ads

জনসংখ্যা

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
১৯৪৮-২০১৫ সালের মধ্যে ইসরায়েলে অভিবাসন। এর মধ্যে দুটি শীর্ষ সময় ছিল ১৯৪৯ এবং ১৯৯০ সালে।

ইসরায়েল বিশ্বের সর্বাধিক ইহুদি জনগোষ্ঠীর দেশ এবং এটি একমাত্র দেশ যেখানে ইহুদিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।[৩৪৪] ২০২৪ সালের ৩১ মে অনুযায়ী, দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৯,৯০৭,১০০ জন। ২০২২ সালে, সরকারের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যার ৭৩.৬% ইহুদি, ২১.১% আরব, এবং ৫.৩% "অন্যান্য" (অ্যারাব নন-খ্রিস্টান এবং যারা কোনো ধর্মের তালিকাভুক্ত নয়) হিসেবে বিবেচিত হয়।[৩৪৫] গত দশকে, রোমানিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী কর্মী ইসরায়েলে বসবাস শুরু করেছে। এদের সঠিক সংখ্যা জানা যায় না, কারণ অনেকে অবৈধভাবে বসবাস করছে।[৩৪৬] তবে ধারণা করা হয় এই সংখ্যা ১,৬৬,০০০ থেকে ২,০৩,০০০ এর মধ্যে।[৩৪৭] ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ৬০,০০০ আফ্রিকান অভিবাসী ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে।[৩৪৮]

ইসরায়েলের প্রায় ৯৩% মানুষ শহরাঞ্চলে বাস করে।[৩৪৯] ৯০% ফিলিস্তিনি ইসরায়েলিরা গ্যালিলি, ট্রায়াঙ্গেল এবং নেগেভ অঞ্চলের ঘনবসতিপূর্ণ ১৩৯টি শহর ও গ্রামে বসবাস করে, বাকি ১০% মিশ্র শহর ও পাড়ায় বসবাস করে।[৩৫০] ২০১৬ সালে OECD এর মতে, ইসরায়েলের গড় আয়ু ছিল ৮২.৫ বছর, যা বিশ্বের মধ্যে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ।[৩৫১] ইসরায়েলি আরবদের গড় আয়ু ৩ থেকে ৪ বছর পিছিয়ে,[৩৫২][৩৫৩] তবুও এটি অধিকাংশ আরব এবং মুসলিম দেশের তুলনায় বেশি।[৩৫৪][৩৫৫] দেশটির জন্মহার OECD এর মধ্যে সর্বোচ্চ এবং এটি একমাত্র দেশ যেখানে প্রতিস্থাপন হারের (২.১) চেয়ে বেশি।[৩৫৬] ১৯৪৮ সাল থেকে ইসরায়েলের জনসংখ্যা ধরে রাখার হার অন্যান্য ব্যাপক অভিবাসনপ্রবণ দেশের তুলনায় সমান বা বেশি।[৩৫৭] ইসরায়েল থেকে ইহুদি অভিবাসন (যাকে ইয়রিদা বলা হয়), প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়, জনসংখ্যাবিদরা এটিকে নগণ্য হিসেবে উল্লেখ করলেও,[৩৫৮] ইসরায়েলি সরকারি মন্ত্রণালয়গুলো এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে।[৩৫৯][৩৬০]

প্রায় ৮০% ইসরায়েলি ইহুদি ইসরায়েলে জন্মগ্রহণ করেছে, ১৪% ইউরোপআমেরিকা থেকে আগত অভিবাসী এবং ৬% এশিয়াআফ্রিকা থেকে আগত অভিবাসী।[৩৬১] ইউরোপ এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা ইহুদি এবং তাদের ইসরায়েলে জন্মগ্রহণ করা বংশধরেরা, যাদের মধ্যে আশকেনাজি ইহুদি অন্তর্ভুক্ত, ইসরায়েলি ইহুদিদের প্রায় ৪৪%। আরব ও মুসলিম দেশ থেকে আসা ইহুদি এবং তাদের বংশধরেরা, যাদের মধ্যে মিজরাহি ও সেফারদি ইহুদি অন্তর্ভুক্ত,[৩৬২] ইহুদি জনসংখ্যার বাকি বড় অংশ তৈরি করে।[৩৬৩]

ইহুদি বিবাহের হার ৩৫% এর বেশি এবং সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সেফারদি ও আশকেনাজি উভয় বংশধরের ইসরায়েলিদের সংখ্যা প্রতি বছর ০.৫% করে বাড়ছে। বর্তমানে স্কুলপড়ুয়া শিশুদের ২৫% এর বেশি উভয় বংশ থেকে এসেছে।[৩৬৪] প্রায় ৪% ইসরায়েলি (প্রায় ৩০০,০০০ জন) "অন্যান্য" হিসাবে চিহ্নিত, যাদের মধ্যে রাশিয়ান বংশোদ্ভূত পরিবার রয়েছে। এদের ইহুদি ধর্মীয় আইনে ইহুদি হিসেবে গণ্য করা হয় না, তবে তারা ল অফ রিটার্ন অনুযায়ী নাগরিকত্ব পেয়েছে।[৩৬৫][৩৬৬][৩৬৭]

সবুজ রেখার (গ্রিন লাইন) বাইরের ইসরায়েলি বসতিতে ৬ লক্ষাধিক (ইসরায়েলি ইহুদি জনসংখ্যার প্রায় ১০%) লোক বাস করে।[৩৬৮] ২০১৬ সালে, ৩৯৯,৩০০ ইসরায়েলি পশ্চিম তীরের বসতিগুলোতে বাস করত,[৩৬৯] যার মধ্যে হেব্রন ও গুশ এতজিয়নের মতো শহর অন্তর্ভুক্ত। পূর্ব জেরুজালেমে ২ লক্ষাধিক[৩৭০] এবং গোলান মালভূমিতে ২২,০০০ জনেরও বেশি ইহুদি বাস করত।[৩৬৯] গাজা উপত্যকার গুশ কাটিফ বসতিগুলোতে প্রায় ৭,৮০০ ইসরায়েলি বাস করত, তবে ২০০৫ সালে সরকারের বিচ্ছিন্নকরণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।[৩৭১]

ইসরায়েলি আরবরা (পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান মালভূমির আরব জনসংখ্যা সহ) মোট জনসংখ্যার ২১.১% বা প্রায় ১৯,৯৫,০০০ জন।[৩৭২] ২০১৭ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৪০% আরব নাগরিক নিজেদের "ইসরায়েলের আরব" বা "ইসরায়েলের আরব নাগরিক" হিসেবে চিহ্নিত করে। ১৫% নিজেদের "প্যালেস্টাইনি", ৮.৯% "ইসরায়েলে প্যালেস্টাইনি" বা "ইসরায়েলের প্যালেস্টাইনি নাগরিক" এবং ৮.৭% শুধুমাত্র "আরব" বলে পরিচয় দেয়। জরিপে আরও দেখা গেছে, ৬০% ইসরায়েলি আরব ইসরায়েল রাষ্ট্র সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখে।[৩৭৩][৩৭৪]

প্রধান শহুরে এলাকা

Thumb
তেল আবিব মেট্রোপলিটন এলাকা দেখুন

ইসরায়েলে চারটি প্রধান মহানগর এলাকা রয়েছে: গুশ দান (তেল আভিভ মহানগর এলাকা; জনসংখ্যা ৩,৮৫৪,০০০), জেরুজালেম (জনসংখ্যা ১,২৫৩,৯০০), হাইফা (৯২৪,৪০০) এবং বেয়ারশেবা (৩৭৭,১০০)।[৩৭৫] ইসরায়েলের বৃহত্তম পৌরসভা হলো জেরুজালেম, যার জনসংখ্যা ৯৮১,৭১১ এবং এলাকা ১২৫ বর্গকিলোমিটার (৪৮ বর্গমাইল)।[৩৭৬] জেরুজালেমের পরিসংখ্যানের মধ্যে পূর্ব জেরুজালেমের জনসংখ্যা ও এলাকা অন্তর্ভুক্ত, যার আন্তর্জাতিকভাবে অবস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[৩৭৭] তেল আভিভ এবং হাইফা ইসরায়েলের পরবর্তী সর্বাধিক জনবহুল শহর, যেখানে জনসংখ্যা যথাক্রমে ৪৭৪,৫৩০ এবং ২৯০,৩০৬।[৩৭৬]

বনী ব্রাক, যা প্রধানত হারেদি জনসংখ্যার জন্য পরিচিত, ইসরায়েলের সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ শহর এবং বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের একটি।[৩৭৮] ইসরায়েলে ১৬টি শহরের জনসংখ্যা ১,০০,০০০-এর বেশি।[৩৭৯] ২০১৮ সালের হিসাবে, ৭৭টি এলাকাকে "পৌরসভা" (বা "শহর") মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে চারটি পশ্চিম তীরে অবস্থিত।[৩৮০]

ভাষা

Thumb
হিব্রু, আরবি এবং ইংরেজিতে রোড সাইন

ইসরায়েলের সরকারি ভাষা হলো হিব্রু। হিব্রু রাজ্যের প্রধান ভাষা এবং এটি জনগণের অধিকাংশ দ্বারা দৈনন্দিনভাবে বলা হয়। ১৯৪৮ সালের পূর্বে, আশকেনাজি ইহুদীদের ঐতিহাসিক ভাষা, ইয়িদ্দিশের প্রতি বিরোধিতা সাধারণ ছিল, যা সায়োনিস্ট আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, যেমন ইয়িশুভ, যারা হিব্রুকে জাতীয় ভাষা হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা করছিলেন।[৩৮১] এই মনোভাবগুলো ইসরায়েলি সরকারের প্রাথমিক নীতিতে প্রতিফলিত হয়, যেখানে ইয়িদ্দিশ থিয়েটার এবং প্রকাশনা কার্যক্রমের উপর বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা ছিল।[৩৮২] ২০১৮ সাল পর্যন্ত, আরবি ছিল একটি সরকারি ভাষা; তবে ২০১৮ সালে এটি "বিশেষ স্থিতি" হিসেবে নামিয়ে আনা হয়। আরবি ভাষা আরব সংখ্যালঘু দ্বারা বলা হয়, এবং আরবি ও হিব্রু আরব বিদ্যালয়ে শেখানো হয়।[৩৮৩]

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইথিওপিয়া থেকে ব্যাপক অভিবাসনের কারণে (ইসরায়েলে প্রায় ১,৩০,০০০ ইথিওপীয় ইহুদি বাস করেন),[৩৮৪][৩৮৫] রাশিয়ান এবং আমহারীয় ভাষা ব্যাপকভাবে কথা বলা হয়।[৩৮৬] ১৯৯০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে এক মিলিয়নেরও বেশি রাশিয়ান ভাষাভাষী অভিবাসী ইসরায়েলে আগমন করেন।[৩৮৭] প্রায় ৭,০০,০০০ ইসরায়েলি ফরাসি ভাষায় কথা বলেন,[৩৮৮] যারা মূলত ফ্রান্স এবং উত্তর আফ্রিকা (মাগ্রেবি ইহুদি) থেকে আগত। ইংরেজি ম্যান্ডেট যুগে একটি সরকারি ভাষা ছিল;[৩৮৯] তবে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর এটি সেই মর্যাদা হারায়, তবে এটি একটি সরকারি ভাষার মতো ভূমিকা পালন করে।[৩৯০][৩৯১] অনেক ইসরায়েলি ইংরেজিতে ভালোভাবে যোগাযোগ করেন, কারণ অনেক টেলিভিশন প্রোগ্রাম ইংরেজিতে সাবটাইটেলসহ প্রচারিত হয় এবং ভাষাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকেই শেখানো হয়। ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় কোর্স প্রদান করে।[৩৯২] [ভালো উৎস প্রয়োজন]

ধর্ম

Thumb
দ্য ডোম অফ দ্য রক এবং ওয়েস্টার্ন ওয়াল, জেরুজালেম

২০২২ সালের হিসাবে, ইসরায়েলের ধর্মীয় সম্পর্কিত আনুমানিক শতাংশ ছিল: ৭৩.৫% ইহুদি, ১৮.১% মুসলিম, ১.৯% খ্রিষ্টান, ১.৬% দ্রুজ এবং ৪.৯% অন্যান্য। ইসরায়েলের ইহুদিদের ধর্মীয় সম্পর্ক ব্যাপকভাবে ভিন্ন: পিউ রিসার্চের ২০১৬ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, ৪৯% নিজেদের হিলোনি (নির্ধারিত) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, ২৯% মাসোর্তি (ঐতিহ্যবাহী), ১৩% দাতি (ধর্মীয়) এবং ৯% হারেদি (অতি-অর্থডক্স) হিসেবে পরিচিত।[৩৯৩] হারেদি ইহুদিদের ২০২৮ সালের মধ্যে ইহুদি জনসংখ্যার ২০%-এরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।[৩৯৪] মুসলিমরা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যারা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৮.১%। প্রায় ১.৯% জনসংখ্যা খ্রিষ্টান এবং ১.৬% দ্রুজ। খ্রিষ্টান জনসংখ্যা প্রধানত আরবি খ্রিষ্টান এবং অ্যারামীয় খ্রিষ্টানদের নিয়ে গঠিত, তবে এতে পোস্ট-সোভিয়েত অভিবাসী, বিদেশী শ্রমিক এবং মেসিয়ানিক ইহুদী যারা খ্রিষ্টানরা এবং ইহুদীরা অধিকাংশ সময়ে খ্রিষ্টান ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করেন, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৩৯৫] অনেক অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠী, যেমন বৌদ্ধ এবং হিন্দু, ইসরায়েলে উপস্থিত রয়েছে, যদিও তাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।[৩৯৬] প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে এক মিলিয়নেরও বেশি অভিবাসীর মধ্যে প্রায় ৩০০,০০০ জনকে ইসরায়েলের প্রধান রাবিনেট ইহুদি হিসেবে গণ্য করেন না।[৩৯৭]

ইসরায়েল পবিত্র ভূমির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সব আব্রাহামিক ধর্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেরুজালেম ইহুদী, মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি এমন কিছু স্থান ধারণ করে যা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন পুরানো শহর, যেখানে পশ্চিম দেয়াল এবং মন্দির পর্বত (আল-আকসা মসজিদ কমপাউন্ড) এবং পবিত্র গবরখানা (চার্চ অফ দ্য হোলি সেপুলচার) অবস্থিত।[৩৯৮] ধর্মীয় গুরুত্বের অন্যান্য স্থানগুলোর মধ্যে নাজরেথ (মেরির অভিষেকের স্থান), তিবেরিয়া এবং সাফেদ (ইহুদীতে চারটি পবিত্র শহরের দুটি), রামলার সাদা মসজিদ (নবী সালেহের মাজার), এবং সেন্ট জর্জের চার্চ এবং আল-খদর মসজিদ, লোড (সেন্ট জর্জ বা আল-খদর মাজার) উল্লেখযোগ্য। পশ্চিম তীরের অনেক ধর্মীয় স্থানও রয়েছে, যার মধ্যে যোসেফের কবর, যিশুর জন্মস্থান, রাচেলের কবর এবং পিতৃপুরুষদের গুহা অন্তর্ভুক্ত। বাহাই ধর্মের প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং বাহাই ধর্মের নেতার মাজার হাইফায় বাহাই বিশ্ব কেন্দ্রের মধ্যে অবস্থিত; ধর্মের নেতা আক্রেতে সমাহিত।[৩৯৯][৪০০][৪০১] মাহমুদ মসজিদটি সংস্কারবাদী আহমদিয়া আন্দোলনের সাথে যুক্ত। কাবাবির, হাইফার মিশ্র ইহুদি ও আহমদী আরবদের পাড়া, দেশের মধ্যে এমন কিছু পাড়ার মধ্যে একটি।[৪০২][৪০৩]

শিক্ষা

Thumb
বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল্টিডিসিপ্লিনারি ব্রেন রিসার্চ সেন্টার

প্রাচীন ইসরায়েলিদের কাছে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এটি তাদের জীবনের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত হতো।[৪০৪] ২০১৫ সালে, ইসরায়েল ওইসিডি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করে, যেখানে ২৫-৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার ৪৯% উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছে, যা ওইসিডি গড় ৩৫%-এর তুলনায় অনেক বেশি।[৪০৫] ২০১২ সালে, দেশের প্রতি ব্যক্তির অনুপাতে একাডেমিক ডিগ্রির সংখ্যায় ইসরায়েল তৃতীয় স্থানে ছিল, যা জনসংখ্যার ২০ শতাংশ।[৪০৬]

ইসরায়েলে শিক্ষার গড় সময়কাল ১৬ বছর এবং সাক্ষরতার হার ৯৭.৮%।[১৫৮] ১৯৫৩ সালের রাষ্ট্র শিক্ষা আইন অনুযায়ী পাঁচ ধরনের স্কুল রয়েছে: সাধারণ ধর্মনিরপেক্ষ, রাষ্ট্র ধর্মীয়, অতি-অর্থডক্স, সাম্প্রদায়িক বসতি এবং আরব স্কুল। এর মধ্যে সাধারণ ধর্মনিরপেক্ষ স্কুল সবচেয়ে বড় এবং বেশিরভাগ ইহুদি ও অ-আরব শিক্ষার্থী এখানে পড়ে, আর আরব জনগোষ্ঠী সাধারণত তাদের সন্তানদের আরবি ভাষার স্কুলে পাঠায়।[৪০৭] তিন থেকে আঠারো বছর বয়সী শিশুদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক[৪০৮] এবং এটি প্রাথমিক (গ্রেড ১–৬), মাধ্যমিক (গ্রেড ৭–৯) ও উচ্চ মাধ্যমিক (গ্রেড ১০–১২) তিনটি স্তরে বিভক্ত। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বাগ্রুট ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, যেখানে গণিত, হিব্রু ভাষা, সাহিত্য, ইংরেজি, ইতিহাস, বাইবেল শিক্ষা এবং নাগরিক শিক্ষার মতো বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জন আবশ্যক।[৪০৯]

ইসরায়েলের ইহুদি জনগোষ্ঠী শিক্ষাগত ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার অর্জন বজায় রেখেছে, যেখানে প্রায় ৪৬% ইসরায়েলি ইহুদি পোস্ট-সেকেন্ডারি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।[৪১০][৪১১] ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ইসরায়েলি ইহুদিদের গড় শিক্ষা বছর ১১.৬, যা বিশ্বের প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম উচ্চ।[৪১২][৪১৩] আরব, খ্রিস্টান এবং দ্রুজ স্কুলগুলোতে বাইবেল শিক্ষার পরীক্ষার পরিবর্তে মুসলিম, খ্রিস্টান বা দ্রুজ ঐতিহ্যের উপর পরীক্ষা নেওয়া হয়।[৪১৪] ২০২০ সালে, ১২তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৮.৭% শিক্ষার্থী ম্যাট্রিকুলেশন সার্টিফিকেট অর্জন করে।[৪১৫]

Thumb
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাউন্ট স্কোপাস ক্যাম্পাস

ইসরায়েলে উচ্চশিক্ষার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, যেখানে মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা আধুনিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।[৪১৬] দেশটিতে রাষ্ট্র-অনুদানপ্রাপ্ত ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৪৯টি বেসরকারি কলেজ রয়েছে।[৪১৭][৪১৮][৪১৯] জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলের জাতীয় গ্রন্থাগার অবস্থিত, যা বিশ্বের বৃহত্তম জুদাইকা এবং হিব্রাইকা সংগ্রহশালা।[৪২০] টেকনিয়ন এবং হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত এআরডব্লিউইউ র‍্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান পেয়ে থাকে।[৩০২] অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়, বেন-গুরিয়ন ইউনিভার্সিটি অব দ্য নেগেভ, বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়, হাইফা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসরায়েলের ওপেন ইউনিভার্সিটি।

Remove ads

সংস্কৃতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ইসরায়েলের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তার জনসংখ্যার বৈচিত্র্য থেকে উদ্ভূত। বিশ্বব্যাপী প্রবাসী সম্প্রদায়ের ইহুদিরা তাদের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যকে তাদের সাথে ফিরিয়ে এনেছিল।[৪২১] স্থাপত্য,[৪২২] সঙ্গীত[৪২৩] এবং রান্নার[৪২৪] সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আরবের প্রভাব বিদ্যমান । ইজরায়েল বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে হিব্রু ক্যালেন্ডারের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। কর্মক্ষেত্র ও স্কুল ছুটি ইহুদি ছুটির দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং শনিবার তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন।[৪২৫]

সাহিত্য

Thumb
সম্যুয়েল ইয়োসেফ অ্যাগনন, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।

ইসরায়েলি সাহিত্য মূলত কবিতা এবং গদ্য যা হিব্রু ভাষায় রচিত হয়েছে। এটি ১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে হিব্রু ভাষাকে কথ্য ভাষা হিসেবে পুনর্জাগরণের একটি অংশ। তবে অন্যান্য ভাষায়ও কিছু সাহিত্য প্রকাশিত হয়। আইনের অধীনে, ইসরায়েলে প্রকাশিত প্রতিটি মুদ্রিত বস্তুর দুটি কপি ইসরায়েলের জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। ২০০১ সালে এই আইন সংশোধন করে এতে অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিং এবং অন্যান্য অমুদ্রিত মাধ্যমও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৪২৬] ২০১৬ সালে জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা দেওয়া ৭,৩০০ বইয়ের মধ্যে ৮৯ শতাংশ ছিল হিব্রু ভাষায়[৪২৭]

১৯৬৬ সালে, সম্যুয়েল ইয়োসেফ অ্যাগনন জার্মান ইহুদি লেখিকা নেলি সাচসের সঙ্গে যৌথভাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[৪২৮] শীর্ষস্থানীয় কবিদের মধ্যে ইয়েহুদা আমিকাই, নাথান আল্টারম্যান, লেয়া গোল্ডবার্গ এবং র‌্যাচেল ব্লুভস্টেইন উল্লেখযোগ্য।[৪২৯] আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত সমসাময়িক ঔপন্যাসিকদের মধ্যে আমোস ওজ, এতগার কেরেট এবং ডেভিড গ্রসম্যান অন্যতম।[৪৩০][৪৩১]

সঙ্গীত এবং নৃত্য

Thumb
জুবিন মেহতা দ্বারা পরিচালিত ইসরায়েল ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রা

ইসরায়েলি সঙ্গীতের মধ্যে মিজরাহী ও সেফার্দিক সঙ্গীত, হাসিদিক মেলোডি, গ্রীক সঙ্গীত, জ্যাজ, এবং পপ রক অন্তর্ভুক্ত।[৪৩২][৪৩৩] ইসরায়েল ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রা সাতাত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে[৪৩৪][৪৩৫] এবং প্রতিবছর ২০০টিরও বেশি কনসার্ট প্রদর্শন করে।[৪৩৬] ইটঝাক পার্লম্যান, পিনচাস জুকারম্যান এবং আফরা হাজা ইসরায়েলে জন্ম নেওয়া আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত সঙ্গীতশিল্পী। ইসরায়েল ১৯৭৩ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর ইউরোভিশন সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে, চারবার প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং দুবার এটি আয়োজিত করেছে।[৪৩৭][৪৩৮] এটাইলেট প্রতি গ্রীষ্মে ১৯৮৭ সাল থেকে তার নিজস্ব আন্তর্জাতিক সঙ্গীত উৎসব, রেড সি জ্যাজ ফেস্টিভাল, আয়োজন করে আসছে।[৪৩৯] দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে "ইসরায়েলের ভূমির গানের" একটি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে।[৪৪০]

সিনেমা এবং থিয়েটার

ইসরায়েলি চলচ্চিত্রগুলো একাডেমি পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য ১০টি চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে। ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি চলচ্চিত্র নির্মাতারা আরব-ইসরায়েলি সংঘাত এবং ইসরায়েলের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের অবস্থান নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন, যেমন মোহাম্মদ বাকরি পরিচালিত ২০০২ সালের জেনিন, জেনিন এবং দ্য সিরিয়ান ব্রাইড।

পূর্ব ইউরোপের ইয়িডিশ থিয়েটারের শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রেখে, ইসরায়েল একটি সমৃদ্ধ থিয়েটার দৃশ্য বজায় রেখেছে। ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হাবিমা থিয়েটার, তেল আবিবে, ইসরায়েলের সবচেয়ে পুরনো রিপার্টরি থিয়েটার কোম্পানি এবং জাতীয় থিয়েটার।[৪৪১] অন্যান্য থিয়েটারের মধ্যে রয়েছে ওহেল, ক্যামেরি এবং গেশের।[৪৪২][৪৪৩]

কলা

ইসরায়েলি ইহুদি শিল্প কাব্বালাহ, তলমুদ এবং জোহারের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ২০শ শতকে আরও একটি শিল্প আন্দোলন ছিল প্যারিস স্কুল, যা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। ১৯শ এবং ২০শ শতকের শুরুর দিকে, ইয়িশুভের শিল্পে বেজালেলের শিল্প প্রবণতাগুলো প্রাধান্য পেয়েছিল। ১৯২০-এর দশক থেকে, স্থানীয় শিল্প দৃশ্যটি আধুনিক ফরাসি শিল্প দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়, যা প্রথম পরিচয় করেছিলেন ইসাক ফ্রেঙ্কেল ফ্রেনেল।[৪৪৪][৪৪৫] প্যারিস স্কুলের ইহুদি মাস্টারদের মধ্যে সাউটিন, কিকোইন, ফ্রেঙ্কেল, এবং চাগাল তাদের পরবর্তী ইসরায়েলি শিল্পের বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।[৪৪৬][৪৪৭] ইসরায়েলি ভাস্কর্য আধুনিক ইউরোপীয় ভাস্কর্য এবং মেসোপটেমীয়, অ্যাসিরীয় ও স্থানীয় শিল্প থেকে প্রেরণা পেয়েছে।[৪৪৮][৪৪৯] আভ্রাহাম মেলনিকভের গর্জনরত সিংহ, ডেভিড পোলুসের আলেকজান্ডার জায়িদ এবং জেভ বেন জভির কিউবিস্ট ভাস্কর্য কিছু বিভিন্ন শাখার উদাহরণ যা ইসরায়েলি ভাস্কর্যের মধ্যে পাওয়া যায়।[৪৪৮][৪৫০][৪৫১]

ইসরায়েলি শিল্পে সাধারণত কিছু উল্লেখযোগ্য থিম দেখা যায়, যেমন সাফেদ এবং জেরুজালেমের মিস্টিক শহরগুলি, টেল আবিবের বোহেমিয়ান ক্যাফে সংস্কৃতি, কৃষি দৃশ্যাবলী, বাইবেলিক কাহিনী এবং যুদ্ধ। বর্তমানে ইসরায়েলি শিল্প আধুনিক প্রবণতাগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে, যার মধ্যে অপটিক্যাল আর্ট, এআই আর্ট, ডিজিটাল আর্ট এবং ভাস্কর্যতে লবণের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই নতুন প্রবণতাগুলি ইসরায়েলি শিল্পকে আরো বৈচিত্র্যময় এবং অভ্যন্তরীণভাবে বিকশিত করেছে।[৪৪৭]

স্থাপত্য

Thumb
বাউহাউস মিউজিয়াম, তেল আবিব

ইহুদি স্থপতিদের অভিবাসনের কারণে ইসরায়েলের স্থাপত্য বিভিন্ন শৈলীর প্রতিফলন ঘটাতে শুরু করেছে। ২০ শতকের শুরুর দিকে, ইহুদি স্থপতিরা পশ্চিমী এবং প্রাচ্য স্থাপত্যের সংমিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন, যা এমন ভবন তৈরি করেছে যা একাধিক শৈলীর সংমিশ্রণে সমৃদ্ধ।[৪৫২] এই একলেকটিক শৈলী পরে আধুনিকবাদী বাউহাউস শৈলীতে পরিণত হয়, যখন নাৎসি অত্যাচারের শিকার হয়ে জার্মান ইহুদি স্থপতিরা (এর মধ্যে এরিখ মেনডেলসনও ছিলেন) ইসরায়েলে আশ্রয় নেন।[৪৫৩][৪৫৪] তেল আবিবের হোয়াইট সিটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত একটি স্থান।[৪৫৫] স্বাধীনতার পর, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, এর মধ্যে অনেকটাই নির্মিত হয়েছিল ব্রুটালিস্ট শৈলীতে, যেখানে কংক্রিটের ব্যবহার এবং মরুভূমির জলবায়ুতে মানিয়ে নেওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।[৪৫৬][৪৫৭]

ইসরায়েলের শহরগুলোতে বেশ কিছু নতুন ধারণা যেমন গার্ডেন সিটি বাস্তবায়িত হয়েছে; তেল আবিবের গেডেস পরিকল্পনা তার বিপ্লবী ডিজাইন এবং স্থানীয় জলবায়ুর সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।[৪৫৮] কিবুতজগুলোর ডিজাইনও আদর্শবাদকে প্রতিফলিত করেছে, যেমন রিচার্ড কাউফম্যান দ্বারা নাহালাল কিবুতজের বৃত্তাকার পরিকল্পনা।[৪৫৯]

গণমাধ্যম

ইসরায়েলের মিডিয়া বহুমাত্রিক, যা বিভিন্ন শ্রেণির দর্শকদের প্রতিফলিত করে। উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বামপন্থী হারেৎজ,[৪৬০] মধ্যপন্থী ইয়েদিওথ আহরোনথ,[৪৬১] এবং কেন্দ্র-ডানপন্থী ইসরায়েল হায়োম।[৪৬২] বিভিন্ন শ্রেণির দর্শকদের জন্য বেশ কয়েকটি বড় টিভি চ্যানেল রয়েছে, যেমন রাশিয়ান ভাষার চ্যানেল ৯[৪৬৩] এবং আরবি ভাষার কান ৩৩।[৪৬৪] ২০২৪ সালের ফ্রিডম হাউস রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের মিডিয়া "জীবন্ত এবং সরকারী নীতির সমালোচনা করার স্বাধীনতা রয়েছে"।[৪৬৫] রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের ২০২৪ সালের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ইসরায়েল ১৮০টি দেশের মধ্যে ১০১তম স্থান অধিকার করেছে, এবং মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।[৪৬৬][৪৬৭] রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স উল্লেখ করেছে যে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স গাজায় ১০০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে হত্যা করেছে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর, ইসরায়েল "ব্লকেড করা এলাকা থেকে রিপোর্টিং নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, যখন অপপ্রচার তার নিজস্ব মিডিয়া পরিবেশে প্রবাহিত হচ্ছে"।[৪৬৭] ৫ মে ২০২৪ তারিখে, ইসরায়েল কাতারের চ্যানেল আল জাজিরার স্থানীয় অফিসগুলো বন্ধ করে দেয়।[৪৬৮] পরে ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের যন্ত্রপাতি কিছু সময়ের জন্য জব্দ করে, বলেছিল যে গাজার ভিডিও স্ট্রিমটি আল জাজিরার কাছে সরবরাহ করা হচ্ছিল; যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হস্তক্ষেপের পর যন্ত্রপাতি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।[৪৬৯][৪৭০][৪৭১]

জাদুঘর

Thumb
বইয়ের মন্দির, জেরুজালেমে ডেড সি স্ক্রলগুলির ভান্ডার

জেরুজালেমের ইসরায়েল মিউজিয়াম ইসরায়েলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান[৪৭২] এবং এটি ডেড সি স্ক্রোলসহ[৪৭৩] একটি বিস্তৃত জুডাইক এবং ইউরোপীয় শিল্প সংগ্রহের বাসস্থান।[৪৭২] ইয়াদ ভাশেম হল হলোকাস্ট সম্পর্কিত তথ্যের বিশ্ব কেন্দ্রীয় আর্কাইভ।[৪৭৪] তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত এএনইউ - মিউজিয়াম অব দ্য জিউশ পিপল একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ মিউজিয়াম যা সারা বিশ্বে ইহুদি সম্প্রদায়ের ইতিহাসকে নিবেদিত।[৪৭৫]

ইসরায়েলে সর্বোচ্চ পরিমাণ মিউজিয়াম রয়েছে প্রতি ব্যক্তি হিসাবে।[৪৭৬] বেশ কিছু মিউজিয়াম ইসলামী সংস্কৃতির প্রতি নিবেদিত, যার মধ্যে জেরুজালেমে অবস্থিত রকফেলার মিউজিয়াম এবং এল. এ. মেয়ার ইনস্টিটিউট ফর ইসলামী আর্ট অন্তর্ভুক্ত। রকফেলার মিউজিয়াম মিডল ইস্টের ইতিহাস থেকে আর্কিওলজিক্যাল অবশিষ্টাংশে বিশেষজ্ঞ এবং এটি পশ্চিম এশিয়ায় প্রথম হোমিনিড জীবাশ্ম খুলি গ্যালিলি ম্যান এর আবিষ্কারের স্থান।[৪৭৭]

রন্ধনপ্রণালী

Thumb
ফ্যালাফেল, হুমাস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং ইসরায়েলি সালাদ সহ একটি খাবার

ইসরায়েলি রান্নায় স্থানীয় পদগুলি ছাড়াও অভিবাসীদের মাধ্যমে আনা ইহুদি রান্নার প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে একটি ফিউশন রান্নার ধরন বিকাশ পেয়েছে।[৪৭৮] এই রান্নায় মিজরাহী, সেফার্দি এবং আশকেনাজি রান্নার উপাদানগুলি গ্রহণ এবং অনুকূলিত হয়েছে। এতে লেভান্টাইন, আরব, মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগরীয় রান্নায় প্রচলিত অনেক খাবার অন্তর্ভুক্ত, যেমন ফালাফেল, হুমুস, শাকশৌকা, কুসকুস এবং জাতার। শ্নিটজেল, পিজ্জা, হ্যামবার্গার, ফরাসি ফ্রাই, চাল এবং স্যালাড সাধারণ খাবার।

প্রায় অর্ধেক ইহুদি জনগণ তাদের বাড়িতে কোশার খাবার খাওয়ার দাবি করেন।[৪৭৯][৪৮০] ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোশার রেস্তোরাঁগুলি মোট রেস্তোরাঁর প্রায় এক চতুর্থাংশ।[৪৭৮] কোশার মাছ, খরগোশ এবং মহিষের পাশাপাশি, শূকরের মাংস—যাকে ইসরায়েলে প্রায়ই "সাদা মাংস" বলা হয়[৪৮১]—উত্পাদিত ও খাওয়া হয়, যদিও এটি ইহুদী ধর্ম এবং ইসলাম উভয়ের পক্ষেই নিষিদ্ধ।[৪৮২]

খেলাধুলা

Thumb
ম্যাকাবি হাইফা এফ.সি. হাইফা শহরের স্যামি ওফার স্টেডিয়ামে ভক্তরা

ইসরায়েলে সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় ক্রীড়াগুলি হল ফুটবল এবং বাস্কেটবল।[৪৮৩] ইসরায়েলি প্রিমিয়ার লিগ দেশটির প্রধান ফুটবল লিগ, এবং ইসরায়েলি বাস্কেটবল প্রিমিয়ার লিগ প্রধান বাস্কেটবল লিগ।[৪৮৪] মাকাবি হাইফা, মাকাবি তেল আভিভ, হাপোয়েল তেল আভিভ এবং বেইতার জেরুজালেম হল ইসরায়েলের বৃহত্তম ফুটবল ক্লাবগুলি। মাকাবি তেল আভিভ, মাকাবি হাইফা এবং হাপোয়েল তেল আভিভ ইউইএফএ চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে এবং হাপোয়েল তেল আভিভ ইউইএফএ কাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছেছিল। ইসরায়েল ১৯৬৪ সালে এএফসি এশিয়ান কাপ আয়োজন এবং জিতেছিল; ১৯৭০ সালে ইসরায়েল জাতীয় ফুটবল দল ফিফা বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছিল, এটি একমাত্র সময় যা তারা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯৭৪ সালের এশিয়ান গেমস, তেহরানে অনুষ্ঠিত, ছিল শেষ এশিয়ান গেমস যেখানে ইসরায়েল অংশগ্রহণ করেছিল, আরব দেশগুলির দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল যারা ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। ইসরায়েল ১৯৭৮ সালের এশিয়ান গেমস থেকে বাদ পড়েছিল এবং এরপর থেকে এশিয়ান ক্রীড়া ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি।[৪৮৫] ১৯৯৪ সালে, ইউইএফএ ইসরায়েলকে মেনে নিতে সম্মত হয় এবং এর ফুটবল দলগুলি এখন ইউরোপে প্রতিযোগিতা করে। মাকাবি তেল আভিভ বাস্কেটবল ক্লাব ছয়বার ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে।[৪৮৬]

ইসরায়েল ১৯৯২ সালে তার প্রথম জয়ের পর থেকে মোট নয়টি অলিম্পিক পদক জিতেছে, যার মধ্যে ২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে উইন্ডসারফিংয়ে একটি সোনালী পদক অন্তর্ভুক্ত।[৪৮৭] ইসরায়েল পারালিম্পিক গেমসে ১০০টিরও বেশি সোনালী পদক জিতেছে এবং অলটাইম পদক গণনায় ২০তম স্থান অর্জন করেছে। ১৯৬৮ সালের গ্রীষ্মকালীন পারালিম্পিক গেমস ইসরায়েলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[৪৮৮] ম্যাকাবিয়া গেমস, যা ইহুদি এবং ইসরায়েলি ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি অলিম্পিক স্টাইলের ইভেন্ট, ১৯৩০-এর দশকে উদ্বোধন হয় এবং তারপর থেকে প্রতি চার বছর পর পর এটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ক্রাভ মাগা, একটি মার্শাল আর্ট যা ইউরোপে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইহুদি গেটো রক্ষকদের দ্বারা উন্নীত হয়েছিল, এটি ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশ দ্বারা ব্যবহৃত হয়।[৪৮৯]

দাবা ইসরায়েলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া। এখানে অনেক শীর্ষস্থানীয় গ্র্যান্ডমাস্টার রয়েছেন, এবং ইসরায়েলি শতারঞ্জি খেলোয়াড়রা বিভিন্ন যুব বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সফলতা অর্জন করেছে।[৪৯০] ইসরায়েল প্রতিবছর একটি আন্তর্জাতিক দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করে, এবং ২০০৫ সালে এখানে বিশ্ব দল দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়।

Remove ads

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads