ইসরায়েলের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ইসরায়েলের ইতিহাস

ইসরাইলের ইতিহাস বলতে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দক্ষিণে এমন একটি এলাকার কথা বুঝানো হয়, যা কেনান, ফিলিস্তিন অথবা পবিত্র ভূমি হিসেবে পরিচিত এবং যেখানে আধুনিক ইসরায়েলফিলিস্তিন ভৌগলিকভাবে অবস্থিত। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে সংকটপূর্ণ পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় করিডোরের অংশ হিসেবে এই এলাকাটি প্রাচীন মানুষের আফ্রিকা থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পরা ঘটনার সাক্ষী হয়েছে, আনুমানিক ১০ হাজার খ্রিষ্ঠপূর্বে নটিফীয় সংস্কৃতির উদ্ভবকে দেখেছে। আনুমানিক ২০০০ খ্রিষ্ঠপূর্বে ক্যানানীয় সভ্যতার উত্থানের মাধ্যমে এই এলাকাটি ব্রোঞ্জ যুগে প্রবেশ করে, পরবর্তীতে ব্রোঞ্জ যুগের শেষে মিশর এই এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে। লৌহ যুগে ইসরায়েল এবং যিহূদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইহুদী এবং শমরীয় জাতির উদ্ভব ও ইব্রাহিমীয় ধর্মীয় মুল্যবোধের বিকাশে ভূমিকা পালন করে।[][][][][][] এই ভূমি ইহুদী ধর্ম, শমরীয় ধর্ম, খ্রিষ্টান, ইসলাম, দ্রুজ, বাহাই ধর্ম,এবং আরো অন্যান্য ধর্মের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের ইতিহাসের পুরো সময়জুড়েই ইসরায়েলের ভূমি বিভিন্ন জাতির নিয়ন্ত্রণ ও দখলের মধ্যে ছিল। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন জাতিসত্তার আবাসভূমি হয়ে উঠেছিল এই এলাকা।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে আর্থুর সিজিক দ্বারা অঙ্কিত ইসরায়েলের ইতিহাস

পরবর্তী শতক জুড়ে কখনো আসিরীয়, কখনো ব্যাবিলনীয়, এবং কখনো হাখমানেশি সাম্রাজ্য এই এলাকা দখল করে নেয়। এরপর টলেমী এবং সেলেউসিড সাম্রাজ্য হেলেনিস্টিক যুগে এই অঞ্চল দখলের প্রতিযোগিতা চালিয়ে যায়। যাইহোক, হাসমোনীয় বংশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থানীয় ইহুদীরা শতবছর ধরে নিজেদের স্বাধীন রাখতে সক্ষম হয়, যা রোমান প্রজাতন্ত্রের অধীনে পতন ঘটে।[] ১ম এবং ২য় শতাব্দীতে ইহুদী-রোমান যুদ্ধে অনেক ইহুদী নিহত হয়, তাদের উচ্ছেদ করা হয় অথবা দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়।[][][১০][১১] রোমান সাম্রাজ্যের প্রভাবে খ্রিষ্ঠান ধর্মের প্রভাব বাড়তে থাকায় ইহুদীরা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে, ফলে চতুর্থ শতকের পূর্বেই খ্রিষ্টানরাই এই এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায়। যাইহোক, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মুহম্মদের অধীনে আরব উপদ্বীপ জুড়ে ইসলাম ছড়িয়ে পরে। ইসরায়েলের ভূমির উপর বাইজেন্টাইন খ্রিষ্টানদের যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল, ৭ম শতকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল আরবদের বিজয়ের পর সেই নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যায়। ১১ থেকে ১৩ শতক জুড়ে ক্রুসেডের অংশ হিসেবে অঞ্চলটি খ্রিস্টান ও মুসলিম আর্মির মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৩ শতকে ইসরায়েলের ভূমি মঙ্গোলীয় আক্রমণ এবং দখলের শিকার হয়, যদিও স্থানীয়ভাবেই বিশেষত মামলুক সালতানাত রাজ্যের কারণে মঙ্গোলীয়রা পরাজিত হয়। ১৬ শতাব্দী অবধি এই ভূমি মামলুক রাজ্যের অধীন ছিল। পরিশেষে অটোম্যান সাম্রাজ্যের কাছে মামলুক রাজ্যের পতন হয় এবং এই এলাকাটি ২০ শতক অবধি অটোমান প্রদেশের অংশ ছিল।

ইহুদি জাতীয়তাবাদ আন্দোলন জায়নবাদ উনিশ শতকের শেষভাগে (আংশিকভাবে ক্রমবর্ধমান ইহুদি-বিদ্বেষের প্রতিক্রিয়া হিসাবে) আবির্ভূত হয়, যার অংশ হিসাবে আলিয়াহ (ধর্মীয় ও আইনিভাবে ইসরাইলের প্রতিশ্রুত ভূমিতে প্রবাস থেকে ইহুদিদের ফিরে আসার প্রক্রিয়া) বৃদ্ধি পায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির সাথে অটোমান সাম্রাজ্যের সিনাই এবং ফিলিস্তিনের মাঝে একটি স্থানে সংঘর্ষ এবং যুদ্ধ চলে। যেখানে অটোমান সাম্রাজ্যের হেরে যাওয়ার পরিণতি হিসেবে অটোমান সাম্রাজ্যকে বিভক্ত করে ফেলা হয়। ব্রিটিশ সরকার লিগ অব নেশনস থেকে ফিলিস্তিন শাসন করার ম্যান্ডেট (ম্যান্ডেটঃ লীগ অব নেশন থেকে কোনো অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা) অর্জন করে, যা ম্যান্ডাটরী ফিলিস্তিন হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ সরকার প্রকাশ্যে একটি ইহুদিদের জাতীয় বাসস্থান তৈরি করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। আরব জাতীয়তাবাদীরা পূর্বের অটোমান অঞ্চলসমূহের অধিকার দাবি করে এবং ফিলিস্তিনে ইহুদিদের অভিবাসন রোধ করার চেষ্টা করে, ফলে আরব-ইহুদি উত্তেজনা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর আরব ইসরায়েল যুদ্ধের সূচনা হয়, যার ফলে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিদের তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং এর পরে আরব ও মুসলিম দেশসমূহ থেকে ইহুদিদের ইসরায়েলে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের সমগ্র ইহুদিদের প্রায় ৪৩% আজ ইসরায়েলে বসবাস করে, যা বিশ্বের বৃহত্তম ইহুদি সম্প্রদায়। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালে মিশর–ইসরায়েল শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইসরায়েল ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার সাথে ১৯৯৩ সালে ওসলো আই চুক্তি স্বাক্ষর করে, তারপরে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল-জর্ডান শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, এই সংঘাত ইসরায়েলি এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

প্রাগৈতিহাসিক কাল

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
স্খুল গুহা

গালীল সাগরের কাছে আধুনিক ইসরায়েলের এলাকা উবেদিয়াতে ১.৫ মিলিয়ন বছর আগে প্রাচীন মানুষের বসবাসের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।[১২] ইরনে পাথর দিয়ে হস্তনির্মিত প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু (ফ্লিন্ট টুল) আবিষ্কৃত হয়েছে; যা আফ্রিকার বাইরে আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন পাথর দিয়ে তৈরী বস্তু। ১.৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে এইভাবে পাথর নির্মিত বস্তুর কৌশলকে একিলীয় প্রযুক্তি বলা হয়; যা ইসরায়েলে বসবাসকারী বাইজাত রুহামা গ্রুপ এবং গেসের নোট ইয়াকভ গ্রুপ নামক আরো দুইটি প্রাচীন মানুষের গ্রুপ ব্যবহার করত বলে অনুমান করা হয়।[১৩]

কার্মেল পর্বতের এল-তাবুন এবং এস স্খুল স্থানে[১৪] নিয়ান্ডারথাল এবং প্রাচীন মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। এখানের পর্বতের শিলার স্তরে স্তরে স্ট্রেটিগ্রাফি রেকর্ড থেকে ৬ লক্ষ বছরের মানুষের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানা যায়।[১৫]আদিম পুরাপ্রস্তর যুগ থেকে আজকের মানব বিবর্তনের প্রায় ১০ লক্ষ বছরের ইতিহাস এই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন থেকে জানা যায়।[১৬] অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পুরাপ্রস্তরযুগীয় এলাকার মধ্যে আছে কেসেম এবং ম্যানট গুহা। আফ্রিকার বাইরে শারীরিকভাবে সবচেয়ে আধুনিক মানুষের প্রাচীনতম জীবাশ্ম স্খুল ও কাফেজ হোমিনিডসের যারা ইসরায়েলের উত্তর অংশে আজ থেকে ১,২০,০০০ বছর আগে বাস করত।[১৭] প্রায় ১০ হাজার খ্রিষ্ঠপূর্বে নটিফীয় সংস্কৃতি এই এলাকায় বিদ্যমান ছিল।[১৮]

ক্যানান

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতকে ক্যানানীয় ভাস্কর্য, সিংহ এবং সিংহী খেলায় রত। বর্তমানে ইসরায়েলের জাদুঘরে অবস্থিত।
Thumb
ক্যানীয় সভ্যতার সময়ে গেট, তেল দান

প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন থেকে অনুমান করা হয় ক্যানীনীয়রা মধ্য ব্রোঞ্জ যুগে (২১০০-১৫৫০ খ্রিষ্ঠপূর্ব) বসবাস করতেন।[১৯] সেখানে সম্ভবত স্বাধীন অথবা আধা স্বাধীন রাজ্য এবং শহর ছিল। শহরগুলোর চারপাশে পাথর দিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যুহ নির্মাণ করা হয়, যা কালক্রমে মাটি পরে ঢিবিতে পরিণত হয়। মধ্য লৌহ যুগের শেষ দিকে মিশরে অবস্থিত নীল বদ্বীপের কাছে ক্যানীনীয়রা বসতি স্থাপন করে, তারা ক্যানানের সাথেও গভীর সংযোগ বজায় রেখেছে। সেইসময় হাইকসোস বংশ (ক্যানিনীয়/এশীয় অরিজিন) মিশরের উত্তরাংশের বেশিরভাগ জায়গায় শাসন করত। খ্রিষ্ঠপূর্ব ১৬ শতকে তাদের বিতাড়ণ করা হয়।[২০]

শেষ লৌহ যুগে (১৫৫০-১২০০ খ্রিষ্ঠপূর্বে) নব্য মিশরীয় সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রিত ক্যানীয় অধীনস্ত রাজ্য ছিল, যা গাজা শহর থেকে শাসিত হত।[২১] ১৪৫৭ খ্রিষ্টপূর্বে, মিশরীয় সেনাবাহিনী ফারাও থুতমোস ৩ এর নির্দেশে ও কাদেশের রাজার নেতৃত্বে মেগিদো যুদ্ধে ক্যানিয় রাজ্যের বিদ্রোহীদের দমন করে।

শেষ ব্রোঞ্জ যুগের একটা সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে সভ্যতাগুলো পতন হতে থাকে।[২২] ক্যানানে তৈরী হয় বিশৃঙ্খলা এবং মিশরীয় নিয়ন্ত্রণের সমাপ্তি ঘটে।[২৩][২৪] প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে হাজর, বেইট শেন, মেগিদো, এক্রন, ইসদুদ এবং আস্কালনের মত শহরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।[২৫] সেই সময় দুইটা গ্রুপের আবির্ভাব হয়, তারা ব্রোঞ্জের পরিবর্তে লোহার তৈরী যন্ত্রপাতি/অস্ত্র ব্যবহার করত। এভাবেই ব্রোঞ্জ যুগের সমাপ্তি ও লৌহ যুগের সুচনা হয়। গ্রুপ দুইটির একটি হল সমুদ্রের মানুষেরা, বিশেষত পলেষ্টীয়রা। তারা এজিয়ান সমাজ থেকে এখানে স্থানান্তরিত হয় এবং দক্ষিণ তীরবর্তী এলাকায় বসবাস শুরু করে। অপর গ্রুপটির নাম হল ইস্রায়েলীয়। তারা ক্যানানের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে পরে বসবাস করতে থাকে।[২০]

প্রাচীন ইসরায়েল ও যিহুদা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা (প্রথম লৌহ যুগ)

ইসরায়েলের বাসিন্দাদের নাম উল্লেখ করে (ysrỉꜣr হিসেবে) মিশরের ফারাও মেরনেপ্তাহের (আনুমানিক ১২০৯ খ্রিষ্ঠপূর্ব) (২য় রামেসিসের পুত্র) প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে সবচেয়ে পুরাতন নথিবদ্ধ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, "ইসরায়েল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এবং তার বংশধরেরা অত্যন্ত কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে।"[২৬]

Thumb
মেরনেপ্তাহ স্তম্ভ। মুলধারার প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে এই স্তম্ভেই "ইসরায়েলের" নাম প্রথমবারের মত লিখিত ভাবে উঠে এসেছে।

প্রত্নস্থানে পাওয়া প্রমাণ থেকে দেখা গিয়েছে যে, প্রথম লৌহ যুগের সময়কালে প্রাথমিকভাবে সামারিয়াতে জেরুজালেমের উত্তর পাশে জর্ডান নদীর দুই তীরেই ক্যানানের পাহাড়ের উপর শতাধিক গ্রাম তৈরী করা হয়েছে। এই গ্রামে ৪০০ জন মানুষের বাসস্থান ছিল, যারা প্রায় সবাই আত্মনির্ভরশীল ছিলেন।[২৭][২৮] তারা আয় করতেন গবাদিপশুর পাল চরিয়ে, শস্য চাষ করে এবং আঙ্গুর অথবা জয়তুন লাগিয়ে এবং কিছু অর্থনৈতিক লেন-দেনের মাধ্যমে।[২৯] মৃৎশিল্প খুব সাধারণ ছিল এবং সেখানে কোন নকশা করা হতো না। [২০] লেখালেখির চল ছিল এবং এর মাধ্যমে খুব ছোট করে হলেও তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা যেত। [৩০] উইলিয়াম জি ডিভার সেই সময়ের ইসরায়েল নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে পরিণত হয়ে উঠেছে, এটি কোনো নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর তুলনায় বরং একটি সুগঠিত রাষ্ট্রের ন্যায় গুণাগুণ প্রদর্শন করেছিল।[৩১]

আধুনিক বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ইস্রায়েলীয় এবং তাদের সংস্কৃতির উদ্ভব কেনান জনগোষ্ঠী থেকে হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বহুঈশ্বরে বিশ্বাস কিন্তু এক গৃহদেবতাকে পূজা করা ইস্রায়েলীয়রা একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করা শুরু করে। তাদের জাতীয় ঈশ্বরের নাম হয় ইয়াহওয়েহ্[৩২][৩৩][৩৪] এমসি নাটের মতে, "এটাই সবচেয়ে যৌক্তিক যে, প্রথম লৌহ যুগের বিকাশের সাথে সাথে একটি জনগোষ্ঠী নিজেদের 'ইস্রায়েলীয়' বলে পরিচয় দেওয়া এবং নিজেদের কেনান জনগোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র মনে করা শুরু করে। এই স্বতন্ত্র মনে করার চিহ্ন স্বরুপ ইস্রায়েলীয়রা কেনান অধিবাসীদের সাথে তাদের বিবাহ নিষেধাজ্ঞা জারী করে। পরিবারের ইতিহাস, পূর্বপুরুষের বংশের ধারা নিয়ে গবেষণা এবং তারা যে স্বতন্ত্র ধর্ম প্রবর্তন করছে; তার উপরে আলাদাভাবে জোর দেয়।[৩৫]

পলেষ্টীয়দের রান্নার যন্ত্রপাতি, তাদের খাদ্যতালিকায় শূকরের মাংসের উপস্থিতি এবং স্থানীয়ভাবে তৈরী মাইসিনীয় কুমার শিল্পের নানা নির্দশন থেকে প্রতীয়মান হয় যে পলেষ্টীয়রা অন্য জায়গা থেকে আগত। পলেষ্টীয়দের দ্বারা সুনির্মিত বড় শহরগুলো দেখে বুঝা যায় তাদের সমাজ জটিল ও সে সমাজে শ্রেণিগত কাঠামো ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল।[২০][৩৬]

ইসরায়েল এবং যিহূদা (দ্বিতীয় লৌহ যুগ)

Thumb
The Tel Dan stele contains the earliest reference to the House of David
Thumb
Khirbet Qeiyafa, an early 10th century fortified city overlooking the Elah Valley, associated by scholars with the kingdom of David
Thumb
The Stepped Stone Structure, City of David, Jerusalem

১০০০ খ্রিষ্ঠপূর্ব থেকে ৯০০ খ্রিষ্ঠপূর্বে ইস্রায়েলী রাজ্য যিহূদাঈস্রায়েলের উদ্ভব হয়। হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী এই দুইটি রাজ্য একটি যুক্তরাজ্য হিসেবে শৌল, ডেভিড এবং সলোমন দ্বারা শাসিত হত। বলা হয় সলোমনের তত্ত্বাবধানেই প্রথম মন্দির নির্মিত হয়েছিল। প্রত্নতাত্বিকদের মধ্যে এই ধরনের যুক্তরাজ্য ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে।[Notes ১][৩৭][৩৮] এই ধরনের যুক্তরাজ্যের অস্তিত্বের প্রশ্নে মানুষ দুই দলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। একটি পক্ষ বাইবেলের কথাকে যুক্তরাজ্য থাকার পক্ষে শক্ত প্রমাণ হিসেবে ধরে নেয়,[৩৯] এবং অপর পক্ষে এরকম রাজ্য ছিল কিনা প্রশ্নে সন্দিহান এবং তাদের মতে এরকম যুক্তরাজ্য থাকলেও তার আকার যা প্রস্তাব করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক ছোট ছিল।[৪০][৪১]

Thumb
ইসরায়েল এবং যিহুদা যুক্তরাজ্য

ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এই বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, আনুমানিক ৯০০ খ্রিষ্ঠপূর্বে ইসরায়েলের উত্তর অংশের রাজ্যের অস্তিত্ব[৪২][৪৩] এবং আনুমানিক ৮৫০ খ্রিষ্ঠপূর্বে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল যিহূদা রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল।[৪৪][৪৫] দুই রাজ্যের মধ্যেই ইসরায়েল রাজ্য সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধশালী ছিল এবং শীঘ্রই আঞ্চলিক ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিল।[৪৬] অমরিড বংশের রাজত্বকালে, এটি সামারিয়া, গ্যালিলী, জর্ডান উপত্যকা, শারন এবং ট্রান্সজর্ডানের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত।[৪৭] এ রাজ্যের রাজধানী শমরিয়া ছিল, যেখানে লৌহ যুগে পূর্ব ভুধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় স্থাপনা দেখা যেত।[৪৮][৪৯] অম্রি তাদের রাজধানী সামারিয়াতে স্থাপন করার পূর্বেই ইস্রায়েল রাজ্যের রাজধানী শেচেহম, পেনুয়েল এবং তিরজাহের মধ্যে স্থানান্তরিত করা হয়। বারবার সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই রাজ্যের শাসক পরিবর্তিত হত। যিহুদা রাজ্য ছোট হলেও অধিকতর স্থিতিশীল ছিল। ডেভিডিক বংশ চারশত বছর ধরে এই রাজ্যকে শাসন করেছে। এই রাজ্যের রাজধানী সর্বদা জেরুজালেম ছিল। নাগেভের উত্তর অঞ্চলে জুডিয় পর্বতমালা, শেফেলার বেশিরভাগ জায়গা এবং বীরশেবা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করত।[৫০]

আসিরীয় আক্রমণ

Thumb
নব্য আসিরীয় সাম্রাজ্য বিস্তৃত রাজ্যসীমানা

আসিরীয় রাজা ৩য় তিগলাথ পাইলেসার ৭৩২ খ্রিষ্ঠপূর্বে ইসরায়েল রাজ্যের উত্তর অংশে আক্রমণ করেন।[৫১] এই অঞ্চলের রাজধানী সামারিয়াকে বহু বছর ধরে অবরুদ্ধ করে রাখার পরে প্রায় ৭২০ খ্রিষ্ঠপূর্বের দিকে এই রাজ্যের পতন হয়।[৫২] আসিরীয় ইতিহাস অনুসারে দ্বিতীয় সারগন সামারিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এবং ইসরায়েলের ২৭২৯০ জন অধিবাসীদের মেসোপটেমিয়ায় তাড়িয়ে দেয়।[৫৩] যদিও ব্যাবিলনীয় বর্ণনা অনুসারে সালামান্সের এই শহর দখল করে এবং হিব্রু বাইবেলের মতে ইসরায়েলের পতন তার রাজত্বকালে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।[৫৪] আসিরীয় নির্বাসনের এই আখ্যান থেকে ইহুদীদের নিখোঁজ দশ বংশের ধারণার ভিত্তিমুল গঠিত হয়। পরাজিত রাজ্যের জায়গায় জায়গায় আসিরীয়িরা বিভিন্ন বিদেশী দের নিয়ে এনে আবাসস্থল করার সুযোগ করে দেয়।[৫৫] তবে শমরীয়রা দাবী করে, তারা আসিরীয়দের দ্বারা নির্বাসিত হয় নি বরং তারা প্রাচীন সামারিয়ায় বসবাসরত ইস্রায়েলীয়দের বংশধর।

Thumb
সিলোম অভিলিখন এর আনুপুঙ্খিক তথ্য

এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ধ্বংসপ্রাপ্ত ইসরায়েল থেকে দলে দলে শরনার্থী যিহুদাতে চলে আসতে থাকে। ফলে জেরুজালেমে জনসমাগম এবং বিভিন্ন মৌলিক চাহিদার অভাব পূরণ করা অনিবার্য হয়ে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় পানির অভাব মিটানোর জন্য যিহুদার তৎকালীন রাজা হেজিকিয়াহ (যিনি ৭১৫-৬৮৬ খ্রিষ্ঠপূর্ব অবধি শাসন করেছেন) সিলোম টানেল খনন করেন।[৫৬] এই টানেলের মাধ্যমে রাজ্যটি অবরুদ্ধ করলেও পানির সরবরাহ ঠিক রাখা যেত এবং এর খননকার্যের কথা বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৫৭] খননকর্মীরা হিব্রু ভাষায় এই টানেলের কথা একটি ফলকে লিখে রেখেছে। ১৮৮০ সালে টানেলের ভিতরে এই ফলকটি আবিষ্কৃত হয়। সিলোম অভিলিখন নামে পরিচিত ফলকটি তুরস্কের ইস্তাম্বুল আর্কিওলজি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।[৫৮] হেজেকির শাসনামলে সারগনের পুত্র সেনাচেরিব যিহুদাকে দখল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হনআসিরীয় তথ্য অনুসারে ৪৬ টা দুর্ভেদ্য শহর তিনি ধ্বংস করে দেন এবং জেরুজালেমকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরবর্তীতে অনেক উপঢৌকন সম্মান হিসেবে পাওয়ার পর তিনি যিহূদার রাজধানী জেরুজালেম দখল না করে চলে যান।[৫৯] সেনাচেরিব তার রাজধানী নিনেভেতে যিহুদার শহর ল্যাচিসে বিজয়ের কৃতিত্বকে খোদাই করে রাখেন।

Thumb
"হেজেকিহ ... যিহূদার রাজা" - জেরুজালেমের মাটি থেকে উদ্ধার হওয়া প্যালিও হিব্রু বর্ণমালায় লিখিত রাজ সিল

বিশ্বাস করা হয়, এই সময়টিতেই চারজন ভিন্ন ভিন্ন "নবীর" উদ্ভব হয়। ইসরায়েলের দুইজন নবী হোসিয়া এবং আমোস এবং যিহুদার দুইজন নবী মিকাহইসাইয়া। এ মানুষগুলো মূলত সমাজে বিভিন্ন সমালোচনা জারি রাখত, আসিরীয় হুমকি সম্পর্কে সতর্কতা তৈরি করত এবং ধর্মীয় মুখ্য পাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করতো। তাদের এভাবে সচেতনতার সৃষ্টির ধরনকে বাক স্বাধীনতার একটি ধরনের চর্চা হিসেবে দেখা যেতে পারে এবং ইসরায়েল ও যিহুদাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় তাদের সরব উপস্থিতি ছিল।[৬০][৬১] তারা শাসক এবং সাধারণ জনগোষ্ঠীকে বুঝানোর চেষ্টা করত ইজরায়েলের জনগণ অনৈতিক কাজে বারংবার জড়িত হচ্ছে। যার ফলে ক্রোধান্বিত ঈশ্বর আসিরীয় আক্রমণ হিসেবে এইধরনের শাস্তি দিচ্ছেন। তাই এই চারজন নবী সবাইকে আহ্বান করত সবাই যেন ঈশ্বর নির্ধারিত নৈতিকতার চর্চা করে।[৬২]

জোসিয়ার (৬৪১-৬১৯ খ্রিষ্ঠপূর্ব) শাসনামলে দ্বিতীয় বিবরণী বই হয় পুনঃআবিষ্কৃত হয়েছে অথবা প্রথমবারের মত লিখা হয়েছে। এই বইয়ে একজন ঈশ্বরের পথ অনুসরণ করে কিভাবে সঠিকরূপে জীবনযাপন করতে হয়, তার শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। একইসাথে যিহুদার অতীত নায়ক যেমন জসুয়া, ডেভিড ও সলোমনের নানান বীরত্বপূর্ণ কথা নিয়ে বই লেখা হয়েছিল৷ এই বইগুলোর লিখনশৈলী দেখে মনে হয় একজনই এই বই লিখেছেন। এই গল্পতেও নৈতিকভাবে জীবনধারণ করার কথা এবং এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু বইগুলোর সাথে দ্বিতীয় বিবরণীর সংযোগ আছে; তাই অতীত বীরদের এ গল্পগুলোকে দ্বিতীয় বিবরণীয় বলা হয় এবং বিবেচনা করা হয় যিহুদাতে একেশ্বরবাদের উদ্ভবের পিছনে এই গল্প এবং ধর্মীয় পুস্তক গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই বিশ্বাসের উদ্ভব ঠিক সে সময় হয়েছিল যখন আসেরিয়িরা ধীরে ধীরে তাদের কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলছিল এবং ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের উত্তোত্তর বৃদ্ধি হচ্ছিল। ফলে যিহূদার ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছিল। যা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবিত হয়। [৬৩]

ব্যবিলনীয় সময়কাল (৫৮৭-৫৩৮ খ্রিষ্টপূর্ব)

Thumb
The route of the exiles to Babylon

৬৩০ থেকে ৬০১ খ্রিষ্টপূর্বের মধ্যে যিহুদা নব্য ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের উপর নির্ভরশীল উপনিবেশিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ৬০১ খ্রিষ্টপূর্বে যিহুদার রাজা জেহোইয়াকিম ব্যবিলনের প্রধান শত্রু মিশরের সাথে মিত্রতা তৈরী করেন। যিহুদার রাজার এ মিত্রতা তৈরীর ব্যাপারে যীহুদার নবী জেরেমিয়াহ তীব্র আপত্তি জানান।[৬৪][৬৫] জেহোইয়াকিমের কাজের শাস্তি হিসেবে ব্যবিলনীয়রা ৫৯৭ খ্রিষ্টপূর্বে জেরুজালেমকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। সম্পূর্ণ শহর আত্মসমর্পণ করে।[৬৪][৬৬] এই পরাজয়ের ইতিহাস বিজয়ী ব্যবিলনীয়রা রচনা করেছিল[৬৭][৬৮] নেবুচান্দেজার জেরুজালেম লুট করে জেহোইয়াকিম পুত্র রাজা জেহোইয়াচিন এবং অন্যান্য প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গদের বন্দী করে ব্যবিলনে নিয়ে যান। জেহোইয়াচিনের চাচা জেদেকিয়াহকে পুতুল রাজা হিসেবে জেরুজালেমের সিংহাসনে বসানো হয়।[৬৪][৬৯] কিছু বছর পর জেদেকিয়াহ ব্যবিলনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তখন ব্যবিলন থেকে জেরুজালেমকে দখল করতে সেনাবাহিনী পাঠানো হয়।[৬৪]

৫৮৭ অথবা ৫৮৬ খ্রিষ্টপূর্বে ব্যবিলনের রাজা দ্বিতীয় নেবুচন্দজার জেরুসালেম দখল করে নেন। প্রথম মন্দির ধ্বংস করে ফেলেন এবং পুরো শহর লুণ্ঠন করে নেন।[৬৪][৭০][৭১] যিহুদা রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায় এবং এর বেশিরভাগ নাগরিককে ব্যবিলনে নির্বাসিত অথবা বন্দী করা হয়। সার্বভৌম যিহুদা রাজ্য ব্যাবিলনের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। যার নাম দেওয়া হয় ইয়েহুদ। নতুন প্রদেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয় মিযপাহতে। যা ধ্বংস হয়ে যাওয়া জেরুজালেমের উত্তরে অবস্থিত।[৭০] বন্দী অবস্থায় রাজা জেহোইয়াচিন কী ধরনের খাবার খেতেন, তার ধারণা পাওয়া যায় কিছু ট্যাবলেট থেকে। যা পরবর্তীতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ব্যবিলনের মাটি খুড়ে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে পরবর্তীতে ব্যবিলনীয়রা মুক্ত করে দেন। বাইবেল ও তালমুদ উভয় থেকেই জানা যায় ডেভিডিক বংশের উত্তরাধিকার ও ব্যবিলনীয় ইহুদী জাতির নেতা হিসেবে "রস গালুত" (নির্বাসিতদের নেতা) বংশ আত্মপ্রকাশ করে। আরব এবং ইহুদী তথ্য অনুসারে রস গালুত পরিবার আজকের ইরাকে ১৫০০ বছর ধরে বসবাস করত; যার সমাপ্তি ঘটে এগার শতকে।[৭২]

দ্বিতীয় মন্দির সময়কাল

সারাংশ
প্রসঙ্গ

পারস্যের সময়কাল (৫৩৮-৩৩২ খ্রিষ্টপূর্ব)

Thumb
Obverse of Yehud silver coin
Thumb
Silver coin (gerah) minted in the Persian province of Yehud, dated c. 375-332 BCE. Obv: Bearded head wearing crown, possibly representing the Persian Great King. Rev: Falcon facing, head right, with wings spread; Paleo-Hebrew YHD to right.

৫৩৮ খ্রিষ্টপূর্বে পারস্যের হাখমোনেশী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মহান কুরুশ ব্যবিলনকে পরাজিত করে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। সাইরাস একটি ঘোষণাপত্র জারী করেন। যেখানে ব্যবিলনীয়দের দ্বারা দাসত্বের শিকার হওয়া সকল ইহুদীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া হয়। (দেখুন সাইরাসের চোঙ)। বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে ব্যাবিলনে নির্বাসিত ইহুদিদের মধ্যে জেরুবেলের নেতৃত্বে ৫০,০০০ ইহুদি মন্দির নির্মাণের জন্য জেরুজালেমে যাত্রা শুরু করে। এরপর ৫১৫ খ্রিষ্টপূর্বে দ্বিতীয় মন্দির নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয় [৭৩] ইষ্রানেহমিয়ার নেতৃত্বে ৫০০০ জন ইহুদীর আরেকটি দল ৪৫৬ খ্রিষ্টপূর্বে যিহূদাতে প্রত্যাবর্তন করেন। এরজার হাতে এই অঞ্চলে ধর্মীয় অনুশাসন বাস্তবায়নের দায়িত্ব এবং নেহমিয়ার হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা পরিচালনার ভার পারস্যের রাজা সমর্পণ করে। এই শহরটিকে সুরক্ষার দেওয়ালগুলোর পুনরায় নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয়। [৭৪] এই দেশটি ৩৩২ খ্রিষ্টপূর্ব পর্যন্ত ইয়েহুদ নামে হাখমানেশী সাম্রাজ্যের একটি নতুন প্রদেশে পরিণত হয়।

অনুমান করা হয় তোরাহর চূড়ান্ত বিষয়বস্তু পারস্যের সময় কালেই (সম্ভবত ৪৫০-৩৫০ খ্রিষ্টপূর্বে) লিখিত হয়েছে। এই বিষয়বস্তুতে পূর্বের পাঠ কে সমন্বয় ও নতুন করে আরামীয় লিপিতে (যা আসুরী বর্ণমালা হিসেবে পরিচিত) সম্পাদনা করা হয়।[৭৫] ইস্রায়েলীয়রা এ বর্ণমালা ব্যবহারের জ্ঞান ব্যবিলন থেকে অর্জন করেছে। এভাবেই তাদের জীবনধারা থেকে ক্যানানীয় লিপির ব্যবহার বিলুপ্ত হয়ে যায়। আজকের হিব্রু লিপি আরামীয় লিপিরই আধুনিক সংস্করণ। হিব্রু বর্ষপঞ্জির সাথে ব্যবিলনীয় বর্ষপঞ্জির বহু মিল রয়েছে।[৭৬]

ব্যবিলনে বিপুল সংখ্যক ইহুদীদের নির্বাসনের সময় অন্য অনেকেই যিহুদাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেছিল। বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে প্রথম মন্দিরের সময়কালে যারা অভিজাত সম্প্রদায় ছিল তাদের যিহুদাতে প্রত্যাবর্তনের কারণে সেখানে ইতোমধ্যে বসবাস করা মানুষজন চিন্তিত হয়ে পরে।[৭৭][৭৮] যেহেতু প্রত্যাবর্তন করা ইহুদীদের পিছনে পারস্যের ক্ষমতাধর রাজার সমর্থন ছিল, তারা শীঘ্রই এই অঞ্চলে বিশাল জমির মালিক হয়ে যেতে থাকে। স্থানীয় লোকজনকে প্রত্যাবর্তিত ইহুদীরা তাড়িয়ে দেবে এই ভয়ে খুব সম্ভবত তারা দ্বিতীয় মন্দির নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল।[৭৭] যিহুদার শাসনে ধর্মরাষ্ট্রের অনুশাসন প্রভাব বিস্তার করেছিল, যা প্রধান পুরোহিতের[৭৯] বংশধরের দ্বারা পরিচালিত হত এবং পারস্য নিযুক্ত যিহুদার একজন প্রশাসক থাকত, তিনি পারস্যের বিভিন্ন আইন কানুন বাস্তবায়ন করতেন এবং ট্যাক্স সংগ্রহ করে পারস্যে পাঠানোর দায়িত্ব পালন করতেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইহুদীরাই যিহুদাতে শাসনের দায়িত্ব পেতেন॥[৮০]

মিশরের আসওয়ার নিকটবর্তী এলিফেন্টাইন দ্বীপে পারস্যদের দ্বারা অনুমোদিত ইহুদী সেনাবাহিনীর একটি রক্ষী দল অবস্থান করতে থাকে। এখানে তাদের কার্যক্রম গুলো প্যাপিরাসে লিপিবদ্ধ করা হত। ২০ শতকের প্রারম্ভে ১৭৫ প্যাপিরাস নথি আবিষ্কৃত হয়। যার মধ্যে একটির নাম "পাসওভার প্যাপিরাস"। এই চিঠির মাধ্যমে রক্ষীসেনাদের কিভাবে পাসওভার উৎসব উদ্‌যাপন করা হবে তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।[৮১]

হেলেনীয় সময়কাল (৩৩৩-৬৪ খ্রিষ্টপূর্ব)

৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বে ম্যাসেডোনিয়া রাজ্যের রাজা মহান আলেক্সান্ডার পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এই এলাকাটি দখল করে নেন। তার হঠাৎ মৃত্যুর পর ৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বে তারই সেনাপতি এই সাম্রাজ্যকে ভাগ করেন। এতে করে যিহূদিয়া সেলেউসিড সাম্রাজ্য ও মিশরের টলেমিক রাজ্যের মধ্যে সীমান্তবর্তী রাজ্যে পরিণত হয়।[৮২] টলেমীয় শাসনের একশত বছর পর ২০০ খ্রিষ্টপূর্বে পানীয়াম যুদ্ধের সময় সেলেউসিড সাম্রাজ্য যিহূদিয়াকে দখল করে নেয়। হেলেনিস্টিক শাসকগণ সাধারণত ইহুদী সংস্কৃতি এবং তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মান করত।[৮৩][৮৪] সেলেউসিড সাম্রাজ্যের সামন্ত রাজ্য হিসেবে যিহূদিয়া শাসিত হতে থাকে যার শাসক ছিলেন ইসরায়েলের প্রধান পুরোহিত। তিনি বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকারের সূত্রে এই পদের অধিকারী হতেন।[৮৫] তা সত্ত্বেও এই রাজ্যের ইহুদীদের ধর্মাচরণ ও জীবনযাত্রায় হেলেনীয় সাম্রাজ্যের প্রভাব পরতে থাকে, যা গ্রিক, হেলেনীয় আচরণকে গ্রহণ করে নেওয়া ইহূদী ও কট্টোর ইহুদীদের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্বকে প্রকট করে তোলে। এই দ্বন্দ্বই পরবর্তীকালে প্রধান পুরোহিত কে হবে এবং পবিত্র শহর জেরুজালেম কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে এই প্রশ্নে সংঘাতের জন্ম দেয়।[৮৬]

চতুর্থ এন্টিওকাস এপিপানস এই মন্দিরটিকে ইহুদিদের পরিবর্তে গ্রিকদের প্রার্থনার স্থান হিসেবে রুপান্তর করেন, নিষিদ্ধ করেন ইহুদিদের ধর্ম চর্চা এবং কঠোরভাবে হেলেনীয় প্রথা ইহুদীদের উপর চাপিয়ে দেন। এরমাধ্যমে কয়েক শতক ধরে হেনেনীয়রা ধর্মীয় সহনশীলতার যে দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছিলেন তার সমাপ্তি ঘটে। ১৬৭ খ্রিষ্টপূর্বে মোদিন এলাকায় গ্রিক ঈশ্বরের প্রতি পশু বলি (কুরবানী) চলাকালীন উপস্থিত একজন সেলেউসিড সরকারি কর্মকর্তা ও হেলেনীয় প্রথা গ্রহণ করে নেওয়া ইহুদী ধর্মযাজককে হত্যা করা হয়। হত্যাকারী ছিলেন ম্যাথিয়াস নামক হাসমোনীয় বংশের একজন ইহুদী ধর্মযাজক। এই হত্যার মাধ্যমেই মাক্কাবীয় বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। এই বিদ্রোহের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন ম্যাথিয়াস পুত্র জুদাস মাক্কাবীয়াস; যিনি একাধিকবার সেলেউসিড সেনাদের পরাজিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬৪ খ্রিষ্টপূর্বে তিনি জেরুজালেম দখল করে নেন এবং দ্বিতীয় মন্দিরে ইহুদীদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রথার অনুশীলন ফিরিয়ে আনেন। এই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ইহুদীরা হানুক্কাহ নামে উৎসব পালন করে।[৮৭][৮৮]

জুদার মৃত্যুর পরে তার ভাই জোনাথান এপহুস এবং সাইমন থাসি যিহুদাতে হাসমোনীয় রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন এবং রাজ্যটিকে সামরিক শক্তিতে ক্ষমতাবান করার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। যদিও হাসমোনীয় রাজ্য কোনো স্বাধীন রাজ্য ছিল না। সেটি তখনো সেলেউসিড সাম্রাজ্যের অধীনস্থ রাজ্য ছিল। তবুও সেলেউসিড সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, পার্থিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধ এবং রোমান প্রজাতন্ত্রের উত্থানের সময় তাদের সাথে জুদার ভ্রার্তৃগণ সম্পর্কস্থাপনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাসমোনীয় রাজ্যের ভিত্তি মজবুত ও স্থিতিশীলতাকে সুসংহত করেন। হাসমোনীয় নেতা জন হাইরক্যানাস স্বাধীন হতে সক্ষম হন যিহূদার এলাকার আয়তন দ্বিগুণ করেন। তিনি ইদোম দখল করে নেন। সেখানের ইদোম অধিবাসীদের তিনি ইহুদীবাদে দীক্ষিত করেন। স্কাইথোপোলিস এবং শমরকে দখল করার পর তিনি শমরীয় মন্দির ধ্বংস করে ফেলেন।[৮৯] হাইরক্যানাস প্রথম হাসমোনীয় নেতা ছিলেন যিনি এই ভূখণ্ডের জন্য স্বতন্ত্র মুদ্রা চালু করেন। পরবর্তীতে তার পুত্ররা, রাজা প্রথম আরিস্ট্রোবুলাস এবং আলেক্সান্ডার জানিয়াসের নেতৃত্বে হাসমোনীয় যিহূদা একটি রাজ্যে পরিণত হয় এবং তার আয়তন ক্রমাগত সম্প্রসারিত হতে থাকে। সম্প্রসারিত হতে হতে এর সীমানা বিস্তৃত হয় উপকূলীয় সমভূমি, গালীল ট্রান্সজর্দানের কিছু এলাকা অবধি।[][৯০][৯১][৯২] কিছু গবেষকের মতে হাসমোনীয় বংশ ইহুদীয় বাইবেলের ক্যানন চুড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠার কাজ করেন।[৯৩]

হাসমোনীয় শাসন চলাকালীন ইহুদীবাদী প্রধান সামাজিক আন্দোলন ফারেজী, সাদুসিস এবং রহস্যময় এসিনসের উদ্ভব ঘটে। সিনাগগের আশেপাশে ফারেজী ঋষি সেমিয়ন বেন শিটাচ ইহুদীদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।[৯৪] যা রাব্বানী ইহুদীবাদ উদ্ভবের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আলেক্সান্ডার জানিয়াসের স্ত্রী রাণী সালোম আলেক্সান্দ্রার মৃত্যু হয় ৬৭ খ্রিষ্টপূর্বে। তার মৃত্যুর পর এই ভূখণ্ডের সিংহাসনের অধিকারী কে হবে- এই দ্বন্দ্বে তারই দুই পুত্র দ্বিতীয় হাইরক্যানাস এবং দ্বিতীয় আরিস্ট্রোবুলাস নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। দুই দলই নিজেদের পক্ষে পম্পের সাহায্য কামনা করেন। যা রোমানদের এই রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দেয়।[৯৫]

আদি রোমান যুগ (৬৪ খ্রিষ্টপূর্ব-২য় শতক (খ্রিষ্টাব্দ))

Thumb
মৃত সাগরের পাণ্ডুলিপি থেকে টেম্পল স্ক্রল এর অংশ, যা এসিনস কর্তৃক লিখিত হয়েছে

৬৪ খ্রিস্টপূর্বে রোমান জেনারেল পম্পে সিরিয়া জয় করেন এবং জেরুসালেমে হাসমোনীয় গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেন, দ্বিতীয় হাইরক্যানাসকে প্রধান পুরোহিত হিসাবে পুন:পদায়ন ও যিহূদিয়াকে রোমান সামন্ত রাজ্যে পরিণত করেন। ৪৭ খ্রিষ্টপূর্বে আলেকজান্দ্রিয়া অবরোধের সময় দ্বিতীয় হাইরক্যানাস প্রেরিত ৩,০০০ জন ইহুদি সেনা ইডোম বংশদ্ভুত অ্যান্টিপেটারের নের্তৃত্বে জুলিয়াস সিজার ও তাঁর পরামর্শদাতা ক্লিওপেট্রার প্রাণ রক্ষা করে। জুলিয়াস সিজার অ্যান্টিপেটারের বংশধরকে যিহূদিয়ার রাজা করেন।[৯৬] ৩৭ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ৬ খ্রিষ্টাব্দ অবধি রোমানদের অধীনস্থ ইডোম বংশোদ্ভুত হেরোড বংশের এন্টিপেটারের বংশধরেরা যিহূদীয়া শাসন করতে থাকে। দ্বিতীয় মন্দিরকে হেরড দ্য গ্রেট পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্মীয় স্থাপনায় বিস্তৃত করেন। যা ইতিহাসে হেরোডের মন্দির হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। সেই সময় সমগ্র রোমান সাম্রাজ্য জুড়ে মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ ইহুদী জনগোষ্ঠী ছিল; যার বিরাট অংশ উত্তর আফ্রিকা এবং আরবে বসবাস করত।[৯৭]

আগস্তুস ৬ খ্রিষ্টাব্দে যিহূদীয়াকে রোমান প্রদেশে পরিণত করেন এবং শেষ ইহুদি রাজা হেরড আর্কিলাসকে জোড়পূর্বক বিতাড়িত করে রোমানকে যিহুদার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন। রোমানদের করারোপের বিরুদ্ধে জুদাস অব গালীলের নের্তৃত্বে একটি ছোট বিদ্রোহ সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী কয়েক দশক ধরে গ্রিক-রোমান এবং যিহূদার জনগোষ্ঠীর মধ্যে কালিগুলার মূর্তি সিনাগগ এবং ইহূদী মন্দিরে স্থাপন করার প্রশ্নে এবং বিভিন্ন কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে।[৯৮][৯৯] ৬৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জসুয়া বেন গ্যামলা ইহুদি ছেলে শিশুদের জন্য একটি বিধান জারী করেন। বিধান মতে, প্রতিটা ইহুদি বালককে ৬ বছর বয়স থেকে পড়াশোনা শুরু করতে হবে। পরবর্তী কয়েক শতক জুড়ে এই বিধানটি ইহুদি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছিল।[১০০] দ্বিতীয় মন্দিরের পরবর্তী সময়কালকে বিবেচনা করা হয় সামাজিক অস্থিরতা এবং ধর্মীয় অশান্তির এক যুগ হিসেবে; যেখানে ইহুদীরা প্রত্যাশা করতো একজন মাসিয়াহ এসে সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন।[১০১]

ইহুদি-রোমান যুদ্ধ

Thumb
The Arch of Titus in Rome depicts the Roman triumph celebrating the fall of Jerusalem in 70 CE

৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইহূদী-রোমান যুদ্ধ (৬৬-৭৩ খ্রিষ্টাব্দ) সংগঠিত হয়। রোমান সরকারের দমনপীড়ন নীতি, কিছু লোকের অধিকতর ধনী হওয়া পক্ষান্তরে জনসাধারণ তীব্র দারিদ্র্যের শিকার হওয়া, একইশহরে ইহূদী ও প্যাগানরা থাকায় তাদের মধ্যে মতের অমিল হওয়া এবং রোমান ও ইহুদিদের মধ্যে ধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিণামই হল এই যুদ্ধ।[১০২] যুদ্ধরত ইহুদিরা তাদের রাজ্যের নাম রাখে "ইসরায়েল"। [১০৩] যদিও ইহুদিরা প্রাথমিকভাবে বিজয় হয়েছিল কিন্তু তাদের পরস্পরবিরোধী অভিপ্রায়ের জন্য গোটা ইহুদি সম্প্রদায় নানান দল উপদলে বিভক্ত হয়ে পরে, এতে করে প্রাদেশিক সরকার ভেঙে পরে। এই অনৈক্যকে কাজে লাগিয়ে রোমান সেনা তাদের ভবিষ্যত সম্রাট ভেসপাসিয়ান এবং তার পুত্র টাইটাসের নের্তৃত্বে ইহুদীদের একের পর এক দুর্গ, তাদের খাদ্যের রসদ এবং শহরগুলো ধ্বংস করে ফেলে। ৭০ খ্রিষ্টাব্দে ৫ মাসের বর্বোরোচিত অবরুদ্ধের পর জেরুজালেম এবং দ্বিতীয় মন্দির সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলা হয়।[১০৪]

এই যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফলাফলে ইহুদীদের জনসংখ্যায়, ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্র প্রভাবিত হয়েছিল। অনেক ইহুদী মারা গিয়েছিল, অনেককে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, জোড়পূর্বক তাদের ঘর থেকে বিতাড়িত এবং অনেককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।[১০৫] জেরুজালেমে অবস্থিত দ্বিতীয় মন্দির ছিল ইহুদিদের সকল ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার, প্রথা পালনের কেন্দ্রবিন্দু। দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ইহুদী বিশ্বাসকে টিকে থাকার জন্য নানারকম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সাজুসেজ নামে ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের একটি ফেরকা আচার প্রথা পালনের জন্য সম্পূর্ণভাবে মন্দির নির্ভর ছিল। মন্দির ধ্বংসের কারণে এই গোষ্ঠীটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।[১০৬] ফারেসিজ নামে ইহুদীদের আরেকটি ফেরকা মন্দির নির্ভর প্রার্থনার চেয়ে তোরাহ পাঠ এবং মৌখিক প্রার্থনাতে বেশি জোড় দেওয়ায় যুদ্ধে পরাজয় উত্তর পরিস্থিতিতে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল। ইয়োহান বেন জাক্কাই নামে এই ফেরকার একজন ধর্মগুরু রোমানদের তরফ থেকে ইয়েভেনে একটি বিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি পেয়েছিলেন। এখানের শিক্ষাক্রম রাব্বানিক ইহুদীবাদের মৌলিক নীতি, প্রার্থনার কাঠামো এবং প্রথা পালনের নিয়মাবলীর ভিত্তি স্থাপন করেছিল যা পরবর্তীতে ইহুদীবাদ চর্চার মুলধারায় পরিণত হয়।[১০৭][১০৮][১০৯][১১০]

রোমান সাম্রাজ্য জুড়ে ইহুদীদের উপর নানান আক্রমণের দরুণ ১১৫ থেকে ১১৭ খ্রিষ্টাব্দ অবধি ইহুদীরা সংঘবদ্ধ হয়ে রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে থাকে। যা ইতিহাসে কিটোস যুদ্ধ নামে পরিচিত। লিবিয়া, মিশর সাইপ্রাস এবং মেসোপটেমিয়ার ইহুদীরা এই যুদ্ধে অংশ নেয়। দুইদিক থেকেই সংঘর্ষের কারণে এই বিদ্রোহ একটি নির্বিচার গণহত্যায় পরিণত হয়। সাইপ্রাসে জনসংখ্যা এতটাই কমে যায় যে, নতুন ঔপনিবেশিককে (সেটেলার) নিয়ে আসা হয় এবং ইহুদিদের সেখানে বসবাস করা নিষিদ্ধ করা হয়। [১১১]

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.