শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
আকেমেনীয় সাম্রাজ্য
প্রাচীন ইরাণীয় সাম্রাজ্য (৫৫০-৩৩০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
আকেমেনীয় সাম্রাজ্য বা আকেমেনীয় সাম্রাজ্য[১৯], যাকে পারস্য সাম্রাজ্য[১৯] অথবা প্রথম পারস্য সাম্রাজ্য[২০] নামেও ডাকা হয় (প্রাচীন ফার্সি: 𐎧𐏁𐏂, Xšāça, আক্ষ. অনু.), একটি ইরানীয় সাম্রাজ্য ছিল, যা আকেমেনীয় বংশের সাইরাস মহান কর্তৃক খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আধুনিক ইরানে কেন্দ্রীভূত এই সাম্রাজ্যটি ইতিহাসের সেই সময় পর্যন্ত বৃহত্তম ছিল, যার আয়তন ছিল ৫.৫ নিযুত বর্গকিলোমিটার (২.১ নিযুত বর্গমাইল)।
![]() | এই নিবন্ধটির শিরোনাম পরিবর্তন করে হাখমানেশি সাম্রাজ্য করার অনুরোধ করা হয়েছে ও তা নিয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে। অনুগ্রহ করে, আলোচনা সমাপ্ত হওয়ার আগে এই নিবন্ধটি স্থানান্তর করবেন না। |
Remove ads
এই সাম্রাজ্যটি পশ্চিমে বলকান অঞ্চল এবং মিশর থেকে শুরু করে, পশ্চিম এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল, উত্তর-পূর্বে মধ্য এশিয়ার বিস্তৃত এলাকা এবং দক্ষিণ-পূর্বে দক্ষিণ এশিয়ার সিন্ধু উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[১৬][২১][২২]
খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকের দিকে, ইরানীয় মালভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত পারসিস অঞ্চলে পার্সীয়রা বসতি স্থাপন করে।[২৩] এখান থেকেই সাইরাস ক্ষমতায় উঠে আসেন এবং মিডীয় সাম্রাজ্য, লিডিয়া ও নব্য ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে আকেমেনীয় বংশের শাসনে একটি নতুন সাম্রাজ্যের সূচনা করেন।
আধুনিক যুগে, আকেমেনীয় সাম্রাজ্য একটি সফল কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য স্বীকৃত হয়েছে। এটি বহুসাংস্কৃতিক নীতি অনুসরণ করত, উন্নত পরিকাঠামো যেমন সড়কব্যবস্থা ও সংগঠিত ডাকব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, শাসিত অঞ্চলজুড়ে সরকারি ভাষা প্রয়োগ করত এবং দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও বৃহৎ, পেশাদার সেনাবাহিনী পরিচালনা করত। পরবর্তী বহু সাম্রাজ্য এই শাসনব্যবস্থা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।[২৪]
খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ সালে, মেসিডোনীয় সাম্রাজ্যের আলেকজান্ডার মহান আকেমেনীয় সাম্রাজ্য দখল করেন। তিনি সাইরাসের একজন প্রশংসক ছিলেন। এই জয় ছিল তার সাম্রাজ্য বিস্তারের এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।[২৫][২৬] আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর হেলেনীয় যুগ শুরু হয়। এসময় আকেমেনীয় সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চল টোলেেমীয় রাজ্য এবং সেলুসিড সাম্রাজ্যের শাসনে আসে, যা ত্রিপারাদিসুসের বিভাজনের (খ্রিস্টপূর্ব ৩২১) মাধ্যমে মেসিডোনীয় সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রায় এক শতাব্দী পর, ইরানের মধ্য মালভূমির অভিজাতরা ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে পার্থীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।[২৩]
Remove ads
উত্পত্তি
আকেমেনীয় সাম্রাজ্যের নামটি এসেছে সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কাইরাস মহান-এর পূর্বপুরুষ আকেমেনিস (Achaemenes) থেকে। Achaemenid শব্দের অর্থ হলো "আকেমেনিস/আকেমেনেস-এর বংশজাত" (প্রাচীন ফার্সি: 𐏃𐎧𐎠𐎶𐎴𐎡𐏁;[২৭] এটি একটি বাহুব্রিহি যৌগিক শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ "বন্ধুত্বপূর্ণ মনোবৃত্তির অধিকারী")।[২৮] আকেমেনিস ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের আনশানের একজন ক্ষুদ্র শাসক এবং আশুরিয় সম্রাটের অধীনস্থ এক অনুগত রাজা।[২৯]
খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৮৫০ সালের দিকে, যাযাবর জনগোষ্ঠী যারা পরবর্তীতে এই সাম্রাজ্য গড়ে তোলে, তারা নিজেদের পার্সা নামে অভিহিত করত এবং তাদের ক্রমাগত পরিবর্তনশীল অঞ্চলকে পার্সুয়া বলত, যা প্রধানত পার্সিস অঞ্চলের আশেপাশে কেন্দ্রীভূত ছিল।[২৩] "পারস্য" নামটি গ্রিক ও লাতিন ভাষায় স্থানীয় পার্সিস অঞ্চল থেকে আগত জনগণের দেশের নামের উচ্চারণভেদ। (প্রাচীন ফার্সি: 𐎱𐎠𐎼𐎿)।[২৯] পার্সীয় ভাষায় 𐎧𐏁𐏂 Xšāça শব্দটির আক্ষরিক অর্থ "রাজ্য",[৩০] যা এই বহুজাতিক রাষ্ট্র দ্বারা গঠিত সাম্রাজ্য বোঝাতে ব্যবহৃত হতো।[৩১]
Remove ads
ইতিহাস
কালরেখা

শাসনব্যবস্থা
সারাংশ
প্রসঙ্গ

কাইরাস মহান আকেমেনীয় সাম্রাজ্যকে একটি বহু-রাষ্ট্রভিত্তিক সাম্রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন, যা চারটি রাজধানী শহর—পাসারগাদে, বাবিলন, শূশা এবং একবাতানা—থেকে শাসিত হতো। আকেমেনীয়রা অঞ্চলভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান করত, যার কাঠামো ছিল সত্রাপি ব্যবস্থা। সত্রাপি ছিল একটি প্রশাসনিক একক, যা সাধারণত ভৌগোলিক ভিত্তিতে গঠিত হতো। একজন ‘সত্রাপ’ বা গভর্নর অঞ্চলটির শাসক ছিলেন; একজন 'সেনাপতি' সামরিক নিয়োগ তদারকি করতেন এবং শৃঙ্খলা রক্ষা করতেন; আর একজন 'রাষ্ট্রসচিব' সরকারিভাবে নথিপত্র রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। সেনাপতি ও রাষ্ট্রসচিব উভয়েই সরাসরি সত্রাপ ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাবদিহি করতেন। বিভিন্ন সময়ে সাম্রাজ্যে ২০ থেকে ৩০টি সত্রাপি ছিল।
কাইরাস মহান একটি সংগঠিত সেনাবাহিনী গঠন করেন, যার মধ্যে পার্সীয় অমরবাহিনী নামে পরিচিত ১০,০০০ প্রশিক্ষিত সৈন্যের একটি ইউনিট অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৩২] তিনি সাম্রাজ্যজুড়ে একটি উদ্ভাবনী ডাকব্যবস্থাও চালু করেন, যা চাপারখানা নামে পরিচিত একাধিক রিলে স্টেশনের উপর ভিত্তি করে গঠিত ছিল।[৩৩]
পার্সেপোলিস প্রশাসনিক সংরক্ষণাগার থেকে আকেমেনীয় শাসনব্যবস্থার বহু দিক জানা যায়। এগুলো ১৯৩০-এর দশকে পার্সেপোলিস থেকে আবিষ্কৃত হয়। অধিকাংশ দলিল প্রাচীন এলামীয় ভাষায় লেখা; এখন পর্যন্ত দশ হাজারের বেশি কিউনিফর্ম নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। আরামাইকে প্রায় এক হাজার বা তার বেশি মূল দলিল রয়েছে।[৩৪] এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি প্রাচীন পারস্য ভাষায় লেখা ফলক শনাক্ত হয়েছে।[৩৫]
এই পার্সেপোলিস আর্কাইভে বহু সিলমোহর ও সিলের ছাপ পাওয়া গেছে। এসব নথিপত্র পার্সেপোলিসে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে (খ্রিস্টপূর্ব ৫০৯–৪৫৭) প্রশাসনিক কার্যক্রম ও তথ্য প্রবাহের প্রমাণ উপস্থাপন করে।
সামরিক বাহিনী
সারাংশ
প্রসঙ্গ
যদিও আকেমেনীয় সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল পার্সিস অঞ্চলে এক ক্ষুদ্র ক্ষমতা হিসেবে, কাইরাস মহান-এর নেতৃত্বে এটি এক বিশাল সাম্রাজ্যে রূপ নেয়। কাইরাস একটি বহু-রাষ্ট্রভিত্তিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন, যেখানে আঞ্চলিক শাসকদের, অর্থাৎ সত্রাপদের, নিজ নিজ নিযুক্ত অঞ্চলে সত্রাপি নামে পরিচিত প্রশাসনিক ইউনিটে তাঁর প্রতিনিধিত্বে শাসনের অনুমতি দেওয়া হতো। এই শাসনব্যবস্থার মূলনীতি ছিল প্রতিটি সত্রাপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা বা রাজাকে আনুগত্য ও বাধ্যতা প্রদর্শন এবং কর-সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলা।[৩৬]
পারস্যের শাসনাধীন জাতিগুলোর জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, বিপুল ভৌগোলিক পরিসর এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্রমাগত ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে একটি পেশাদার সেনাবাহিনী গঠন করা অপরিহার্য হয়ে ওঠে—যাতে একদিকে শান্তি বজায় রাখা যায় এবং অপরদিকে বিদ্রোহ বা বহিরাগত হুমকির সময় রাজকীয় কর্তৃত্ব বলবৎ রাখা যায়।[২৩][২৪][৩২]
কাইরাস একটি শক্তিশালী স্থলসেনা গঠন করেন এবং তা ব্যবহার করে তিনি বাবিলোনিয়া, লিডিয়া এবং এশিয়া মাইনর-এ তার সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। পরে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র কাম্বিসেস দ্বিতীয় সেই বাহিনী ব্যবহার করে মিশরে প্সামতিক তৃতীয়-র বিরুদ্ধে অভিযান চালান।
কাইরাস একটি নৌবাহিনী গঠনের সুযোগ পাওয়ার আগেই সাম্রাজ্যের একটি স্থানীয় ইরানীয় বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে যুদ্ধে নিহত হন।[৩৭] পরবর্তীতে এই দায়িত্ব নেন দারিয়ুস প্রথম, যিনি পার্সীয়দের জন্য একটি রাজকীয় নৌবাহিনী গঠন করেন। এই নৌবাহিনী সাম্রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে—কালো সাগর, এইজিয়ান সাগর, পারস্য উপসাগর, আয়োনীয় সাগর এবং ভূমধ্যসাগর—বিভিন্ন সমুদ্রফ্রন্টে শত্রুদের মোকাবেলায় ব্যবহৃত হতো।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Remove ads
ঐতিহ্য
সারাংশ
প্রসঙ্গ

আকেমেনীয় সাম্রাজ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ঐতিহ্যের উপর গভীর প্রভাব রেখে গেছে এবং পরবর্তী বিভিন্ন সাম্রাজ্যের গঠন ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গ্রিক ও পরবর্তীকালে রোমানরাও পারস্য শাসনব্যবস্থার সেরা দিকগুলো গ্রহণ করেছিল।[৩৮] পারস্যের শাসনব্যবস্থার মডেল বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছিল আব্বাসীয় খিলাফতের সম্প্রসারণ ও পরিচালনায়—যার শাসনকালকে প্রায়শই 'ইসলামের সোনালি যুগ' হিসেবে বর্ণনা করা হয়। প্রাচীন পার্সীয়দের মতোই, আব্বাসীয়রা তাদের বিস্তৃত সাম্রাজ্যের কেন্দ্র গড়ে তোলে মেসোপটেমিয়ায় (নবনির্মিত বাগদাদ ও সামাররা শহরে, যেগুলো বাবিলনের নিকটবর্তী)। তারা পারস্যীয় অভিজাতদের সহায়তা গ্রহণ করে এবং পারস্য ভাষা ও স্থাপত্যকে ইসলামী সংস্কৃতিতে ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করে।[৩৯]
আধুনিক পশ্চিমা ইতিহাসে আকেমেনীয় সাম্রাজ্যকে গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোর বিরোধী শক্তি হিসেবে দেখা হয় গ্রিক-পারস্য যুদ্ধসমূহে এবং বাবিলনে বন্দী ইহুদিদের মুক্তি দেওয়ার কারণে। এই সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক প্রভাব শুধু তার ভূখণ্ডগত বা সামরিক প্রভাবেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এর সাংস্কৃতিক, সামাজিক, প্রযুক্তিগত ও ধর্মীয় প্রভাবও সুদূরপ্রসারী ছিল। উদাহরণস্বরূপ, অনেক এথেনীয় নাগরিক আকেমেনীয় রীতিনীতি গ্রহণ করেছিল এবং পারস্পরিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে অংশ নিয়েছিল,[৪০] যাদের কেউ কেউ পারস্য রাজাদের দ্বারা নিযুক্ত বা মিত্রও ছিলেন।
কাইরাসের ফরমানের প্রভাব ইহুদি-খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে এবং এই সাম্রাজ্য জরথুস্ত্রীয় ধর্মকে পূর্বদিকে চীন পর্যন্ত বিস্তার করতে সহায়তা করেছিল। এই সাম্রাজ্য ইরানের রাজনীতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ধারাকেও প্রভাবিত করেছিল।[৪১]
ইতিহাসবিদ আর্নল্ড জে. টয়েনবি আব্বাসীয় সমাজকে আকেমেনীয় সমাজের একটি "পুনঃসম্পৃক্তি" বা "পুনর্জন্ম" হিসেবে বর্ণনা করেন, কারণ পারস্য, তুর্কি ও ইসলামী শাসন ও জ্ঞানের মিশ্রণে পারস্যীয়তাবাদী সংস্কৃতি বিস্তৃত ইউরেশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সেলজুক, অটোমান, সাফাভীয় ও মুঘল সাম্রাজ্যর মাধ্যমে।[৩৯]
ইতিহাসবিদ বার্নার্ড লুইস লেখেন:
ইরানীয়দের অবদান সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান, এমনকি আরবি কবিতায়ও—যেখানে আরবি ভাষায় রচিত কবিতায় ইরানীয় উৎসের কবিরা বিশাল অবদান রেখেছেন। এক অর্থে, ইরানীয় ইসলাম হল ইসলামের দ্বিতীয় আগমন, একটি নতুন ইসলাম, যাকে কখনও কখনও 'ইসলাম-ই-আজম' বলা হয়। এই পারস্যীয় ইসলামই নতুন অঞ্চল ও জাতির মাঝে ছড়িয়ে পড়ে: প্রথমে মধ্য এশিয়ায় এবং পরে মধ্যপ্রাচ্যে, যে দেশটি পরবর্তীতে ‘তুরস্ক’ নামে পরিচিত হয়; এবং অবশ্যই ভারতে। অটোমান তুর্কিরা ইরানীয় সভ্যতার একটি রূপ নিয়ে যান ভিয়েনার প্রাচীর পর্যন্ত। [...] ত্রয়োদশ শতাব্দীর মহামোঙ্গল আক্রমণের সময় পর্যন্ত, ইরানীয় ইসলাম কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল না; বরং ইসলামের মধ্যেই এটি একটি প্রভাবশালী উপাদানে পরিণত হয়। মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের ইসলামি শক্তি ও সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রগুলো ছিল সেই দেশগুলোতে, যেগুলো হয় ইরানীয় ছিল, অথবা অন্তত ইরানীয় সভ্যতার দ্বারা চিহ্নিত ছিল ... ভারতের মতো অঞ্চল, মধ্য এশিয়া, ইরান ও তুরস্ক ছিল এই ইরানীয় সভ্যতারই অংশ।[৪২]
জর্জ উইলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেল তাঁর The Philosophy of History গ্রন্থে পারস্য সাম্রাজ্যকে "প্রথম সাম্রাজ্য যা বিলুপ্ত হয়েছে" এবং তার জনগণকে ইতিহাসের "প্রথম ঐতিহাসিক জনগোষ্ঠী" হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁর মতে:
পারস্য সাম্রাজ্য আধুনিক অর্থে একটি সাম্রাজ্য—যেমন জার্মানিতে ছিল, অথবা নেপোলিয়নের শাসনাধীন বিশাল সাম্রাজ্য। এটি ছিল বহু রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত, যেগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে কেন্দ্রের অধীন ছিল। সমগ্র সাম্রাজ্যের জন্য প্রণীত আইনগুলো তাদের নিজস্ব সামাজিক-রাজনৈতিক রীতিকে অক্ষুণ্ণ রেখেছিল, বরং তা সংরক্ষণ করত। প্রতিটি জাতি ছিল স্বতন্ত্র সংবিধান, ভাষা, জীবনযাপন ও অস্ত্রধারণের পদ্ধতির অধিকারী। আলোর মতো এই সাম্রাজ্য প্রত্যেক জাতিকে তাদের নিজস্ব স্বরূপে জ্বেলে তোলে—এইসব ভিন্নতা একত্রে সহাবস্থান করত একটি ন্যায়সঙ্গত শাসনের অধীনে ... এটি ছিল এক ঐক্যবদ্ধ জনগোষ্ঠীর সমষ্টি, যাদের প্রত্যেককে তাদের স্বাধীনতা প্রদান করা হতো। ফলে একে অপরের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষের যে বর্বরতা ছিল, তা বন্ধ হয়েছিল।[৪৩]
আমেরিকান ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক উইল ডুরান্ট ২১ এপ্রিল ১৯৪৮ সালে তেহরানে ইরান–আমেরিকা সোসাইটি-র এক ভাষণে, “সভ্যতার ইতিহাসে পারস্য” শীর্ষক বক্তব্যে বলেন:
হাজার হাজার বছর ধরে পারস্যবাসীরা সৌন্দর্য সৃষ্টি করে চলেছেন। খ্রিস্টের জন্মের ষোল শতক আগেও এই অঞ্চল থেকে অথবা এর আশপাশ থেকে... আপনি ছিলেন এক ধরনের সভ্যতার জলবিভাজিকা, যেখান থেকে রক্ত, চিন্তা, শিল্প ও ধর্ম পূর্ব ও পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে... আমি আপনার আকেমেনীয় যুগের কৃতিত্ব পুনরায় বর্ণনা করব না। তখন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের আকারের একটি সাম্রাজ্য পেল এক সুশৃঙ্খল সরকার, দক্ষ প্রশাসন, দ্রুত যোগাযোগের জাল, মানুষের ও পণ্যের নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা, যা আমাদের সময়ে কেবল রোম সাম্রাজ্যের শিখরেই সম্ভব হয়েছিল।[৪৪]
Remove ads
শাসকবৃন্দ
Remove ads
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads