দ্বিতীয় রামসেস
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দ্বিতীয় রামসেস (জন্ম আনু. খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৩; মৃত্যু জুলাই বা আগস্ট ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব; শাসনকাল ১২৭৯–১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব), যিনি মহান রামসেস হিসেবেও পরিচিত, মিশরের উনবিংশতম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও রাজা ছিলেন। প্রায়শই তাকে মিশরীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে মহান, সবচেয়ে উদযাপিত ও সবচেয়ে শক্তিশালী ফারাও হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৫] তার উত্তরসূরিগণ এবং পরবর্তী মিশরীয়রা তাকে "মহান পূর্বপুরুষ" বলে সম্বোধন করতেন। দ্বিতীয় রামসেস ক্যানানে মিশরীয় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে লিভ্যান্টে বহুসংখ্যক সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণে নুবিয়াতেও তিনি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন বলে বাইত আল-ওয়ালি এবং জারফ হুসেইনের রচনায় উল্লেখ পাওয়া যায়।
Ramesses II দ্বিতীয় রামসেস | |
---|---|
"Ramesses the Great" "মহান রামসেস" | |
![]() অল্প বয়সী মেমনন (আনু. ১২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), একটি মূর্তি যা দ্বিতীয় রামেসেসকে চিত্রিত করে, থিবেস এর রামেসিয়াম থেকে। বর্তমানে লন্ডন ব্রিটিশ মিউজিয়াম-এ প্রদর্শন করা হচ্ছে। | |
ফারাও | |
রাজত্ব | ১২৭৯–১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব (১৯তম রাজবংশ) |
পূর্ববর্তী | প্রথম সেটি |
পরবর্তী | মারনেপ্টাহ |
রাজকীয় পদবী | |
সঙ্গীs |
|
ছেলে-মেয়ে |
|
পিতা | প্রথম সেটি |
মাতা | রানী তুইয়া |
সমাধি | কেভি৭ |
স্মৃতিস্তম্ভ |
১৪ বছর বয়সে, রামসেসের পিতা দ্বিতীয় সেটি রামসেসকে প্রিন্স রিজেন্ট বা ভবিতব্য রাজা হিসেবে নিয়োগ দেন।[৫] ঐতিহাসিকগণের ধারনামতে, তিনি তার কৈশোরের শেষার্ধে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন এবং ১২৭৯ থেকে ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত মিশর শাসন করেন।[৬] মৃত্যুকালে তার বয়স কত ছিল তা নিয়ে নানান মত রয়েছে; খুবসম্ভব তা ৯০ বা ৯১ বছর সম্ভাব্য হিসেবে ধরা হয়।[৭][৮] দ্বিতীয় রামসেস তার শাসনকালে ফারাওদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার সেড উৎসব উৎযাপন করার সৌভাগ্য লাভ করেন।[৯] মৃত্যুর পর, তাকে ভ্যালি অব দ্য কিংসের একটি সমাধিতে কবরস্থ করা হয়;[১০] পরবর্তীতে তার দেহকে একটি রাজ সংগ্রহশালায় স্থানান্তর করা হয়, যেখানে ১৮৮১ সালে তা আবিষ্কৃত হয়, এবং বর্তমানে এটি কায়রো জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।[১১]
তার রাজত্বকালের প্রথমার্ধে তিনি নগর, মন্দির এবং সৌধ নির্মাণে মনযোগী ছিলেন। তিনি নীল ডেল্টায় তার নতুন রাজধানী এবং সিরিয়ায় তার অভিযানের প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পাই-রামসেস নামে একটি নগরী স্থাপন করেন। গ্রিক উৎসে তিনি "অজিম্যান্ডিয়াস" নামে পরিচিত,[১২] রামসেসের সিংহাসনের নামের একটি অংশের গ্রিক প্রতিবর্ণীকরণ থেকে, Usermaatre Setepenre, যার অর্থ "রা-এর ন্যায়বিচার রা এর শক্তিশালী নির্বাচন"।[১৩]
নির্বাসনের ফারাও রাজা হিসেবে
মূসা (আঃ) গল্পে ফারাও-এর পরিচয় নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে, কিন্তু অনেক পণ্ডিতই মনে করেন নির্বাসন হয় রাজা প্রথম সেতি বা রাজা দ্বিতীয় রামসেস এর সময় ।[১৪] বাইবেল (যাত্রাপুস্তক ১:১১) নিশ্চিত করে যে মূসা (আঃ) এর সময় ইস্রায়েলেরা “ফেরাউনের জন্য পিথোম ও রামসেস শহর” তৈরি করছিল।[১৫] মিশরীয় নথিগুলি নিশ্চিত করে যে ১৯ তম রাজবংশের রাজারা লেভান্টে একটি বড় সামরিক কর্মসূচি শুরু করে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, রাজা সেতি একটি নতুন গ্যারিসন শহর তৈরি করেন। এরপর দ্বিতীয় রামসেস তার ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষক আতুমকে উত্সর্গীকৃত একটি দ্বিতীয় শহরও তৈরি করেছিলেন, যার নাম পার আতুম। এই দুটি শহর সম্ভবত বাইবেলের রামসেস এবং পিথম।[১৬]
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে দ্বিতীয় রামসেস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
পার্সি বিশে শেলি'র কবিতা "অজিম্যান্ডিয়াস" এর মূল বিষয়বস্তু হল রামসেস। ডিওডোরাস সিকালাস তার একটি ভাস্কর্যের মূলে লেখেন যে: "আমি হলাম রাজাদের রাজা, অজিম্যান্ডিয়াস। কেও যদি জানে আমি কত মহান এবং কোথায় আমি শায়িত আছি, তবে সে আমার কোন একটি কর্মকে অতিক্রম করে দেখাক।"[১৭] শেলীর কবিতায় এই উক্তিটি উল্লেখিত রয়েছে।
রামসেসের জীবন অনেক কাল্পনিক চরিত্র রুপায়নে উৎসাহিত করেছে, যার অন্যতম হল ফরাসি লেখক ক্রিশ্চিয়ান জ্যাকের রচিত ঐতিহাসিক ধারাবাহিক উপন্যাস "রামেসিস সিরিজ"; সচিত্র উপন্যাস ওয়াচমেন, যাতে আর্দ্রিয়ান ভেইডট নামক চরিত্র দ্বিতীয় রামসেসকে তার অযিম্যান্ডিয়াস নামক অলটার-ইগোকে উৎসাহিতকরণে ব্যবহার করে।; নরম্যান মিলার'র উপন্যাস এন্সিয়েন্ট ইভিনিং, যা ব্যপকভাবে দ্বিতীয় রামসেসের জীবনের উপর ভিত্তি করে রচিত, যদিয়ও তা ছিল নবম রামসেসের শাসনকালে মিশরীয় জীবনযাত্রার দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী; এবং অ্যানি রাইস'র বই দ্য মামি, অর রামসেস দ্য ড্যাম্নড (1১৯৮৯), যাতে রামসেস ছিল মূল চরিত্র।
এক্সোডাসের ফারাও রাজাদের মধ্যে দ্বিতীয় রামসেস হলেন অন্যতম চরিত্র। ১৯৫৬ সালের টেন কমান্ডমেন্টস চলচ্চিত্রে ইউল ব্রাইনার রামসেসের চরিত্রে অভিনয় করেন, এখানে রামসেসকে প্রধান খলচরিত্র হিসেবে দেখানো হয়।[১৮] এনিম্যাটেড চলচ্চিত্র দ্য প্রিন্স অব ইজিপ্ট (১৯৯৮), এতেও রামসেসের চরিত্র রূপায়িত হয়েছে(কণ্ঠ র্যালফ ফিয়েনেস), যেখানে তাকে নবী মুসার পালক ভাই ও ছবির মূল খলনায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে। অতি সম্প্রতি, জয়েল এডগারটন ২০১৪ সালের চলচ্চিত্র এক্সোডাস: গডস অ্যান্ড কিংস তে রামসেসের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
দ্য টেন কমান্ডমেন্টস: দ্য মিউজিকাল (২০০৬) চলচ্চিত্রে কেভিন আর্লি রামসেস চরিত্রে অভিনয় করেন।
আরও দেখুন
- আবু সিম্বেল
- কাদেশের যুদ্ধ
- ফারাওয়ের তালিকা
- মিশরের ১৯তম রাজবংশের পরিবার বৃক্ষ
- অজিমেন্ডিয়াস
- রামিসিয়াম
- ইসলাম ও রামসেস
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.