Loading AI tools
উত্তর সুদান এবং দক্ষিণ মিশরের অঞ্চল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নুবিয়া নীলনদের তীরবর্তী একটি অঞ্চল যা নীল নদের প্রথম জলপ্রপাত (দক্ষিণ মিশরের আসওয়ানের ঠিক দক্ষিণে) এবং নীলনদের নীল এবং সাদা অংশের মিলনস্থলের মাঝখানে রয়েছে (মধ্য সুদানের অবস্থিত খার্তুমের দক্ষিণে) বা আরো পরিষ্কার করে বললে আল দাব্বাহতে।[2][3] এখানে কেরমা সম্রাজ্য প্রায় ২৫০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ফারাও প্রথম থুতমুস-এর অধীনে মিশরের নতুন রাজ্য দ্বারা বিজিত হওয়া অবধি প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত বর্তমান ছিল, তাই এটি প্রাচীন আফ্রিকার দিককার সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল। নুবিয়া বেশ কয়েকটি সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল, সর্বাধিক উল্লেখযোগ্যভাবে কুশ রাজ্য, যা পিয়ের রাজত্বকালে, খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে মিশর জয় করেছিল এবং এক শতাব্দী পরে মিশরীয় ষড়বিংশ রাজপরিবার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দেশকে তার পঁচিশতম রাজবংশ হিসাবে শাসন করেছিল ()।
খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে ইথিওপিয়ার আকসুম রাজ্যের আক্রমণের ফলে কুশের পতন ঘটেছিল এবং নোবাতিয়া, মাকুরিয়া এবং আলোদিয়ার তিনটি খ্রিস্টান রাজত্বের উত্থান ঘটেছিল, শেষ দুটি আবার প্রায় এক সহস্রাব্দ স্থায়ী ছিল। তাদের পতনের ফলে কেবল ষোড়শ শতাব্দীতে নুবিয়ার উত্তরাঞ্চল উসমানীয় সেনাবাহিনী দ্বারা এবং দক্ষিণাঞ্চল সেন্নার সালতানাত দ্বারা বিজিত হয়ে নুবিয়ার বিভক্তকরণের সূচনাই করেনি, একিসাথে নুবীয়দের দ্রুত ইসলামীকরণ এবং আংশিক আরবিকরণেরও সুচনা করেছিলো। উনিশ শতকে নুবিয়া আবার মিশরের খেদিভাতদের দ্বারা ঐক্যবধ্য হয়েছিল। বর্তমানে নুবিয়া অঞ্চলটি মিশর এবং সুদানের মধ্যে বিভক্ত।
প্রাচীন নুবিয়ার সম্পর্কিত প্রত্নতাত্ত্বিক বিজ্ঞানকে নুবীয়বিদ্যা (ইংরেজি: Nubiology) বলা হয়।
নুবিয়া নামটি নোবা জনগষ্ঠীর নাম থেকে এসেছে। যাযাবর এই গোষ্ঠীটি মেরোয়ে রাজ্যের পতনের পরে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিল। নোবা জনগোষ্ঠী একটি নীলো-সাহারা ভাষায় কথা বলত, যেটি প্রাচীন নুবীয় ভাষার পূর্বপুরুষ ছিল। প্রাচীন নুবীয় ভাষা প্রধানত ৮ম এবং ১৫তম শতাব্দী মধ্যকার সময়ে প্রচলিত ধর্মীয় লিপিগুলিতে ব্যবহার হতো। চতুর্থ শতাব্দীর আগে এবং ধ্রুপদী প্রাচীনকাল জুড়ে নুবিয়া কুশ নামে পরিচিত ছিল, বা ধ্রুপদী গ্রীসে ইথিওপিয়া (এথিওপিয়া) নামে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ঐতিহাসিকভাবে, নুবিয়ার লোকেরা নুবীয় ভাষাগোষ্ঠীর কমপক্ষে দুটি ভাষায় কথা বলত, যে ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত হলো নোবিইন (প্রাচীন নুবীয় ভাষার বংশধর), কেনুজি-ডঙ্গোলা, মিডোব এবং অন্যান্য ভাষা যা নুবা পর্বতমালার উত্তরের অংশে দক্ষিণ কোর্দোফানে প্রচলিত ছিল। অন্তত ১৯৭০ অবধি, নিয়ালার উত্তরে দারফুরে বিরগিদ ভাষাটি কথিত ছিল, তবে এখন বিলুপ্ত। তবে দক্ষিণ ও মধ্য নুবিয়ার (যা উচ্চ নুবিয়া নামেও পরিচিত) প্রাচীন কেরমা সংস্কৃতির ভাষাগত পরিচয় অনিশ্চিত, কারও কারও মতে এটি আফ্রো-এশীয় ভাষাসমূহের কুশিটীয় শাখার অন্তর্ভুক্ত ছিল,[4][5] এবং আরও সাম্প্রতিক অন্যান্য গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কেরমা সংস্কৃতি বাস্তবে নীলো-সাহারা ভাষাপরিবারের পূর্ব সুদানি শাখার অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং কেরমার উত্তরে উত্তর (বা নিম্ন) নুবিয়ার অন্যান্য লোকেরা (যেমন সি-গ্রুপ সংস্কৃতি এবং ব্লেমাইয়েস) দক্ষিণ (বা উচ্চ) নুবিয়া থেকে পূর্ব সুদানি ভাষার বিস্তারের আগে পর্যন্ত কুশিটীয় ভাষায় কথা বলতো।[6][7][8][9]
নীল নদের অববাহিকায় অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নুবিয়াকে প্রধান তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিলো: উচ্চ, মধ্য এবং নিম্ন নুবিয়া। নিম্ন নুবিয়া বলতে বোঝায় ভাটির দিকের অঞ্চল আর উচ্চ নুবিয়া বলতে বোঝায় উজানের দিকের অঞ্চল। নিম্ন নুবিয়া নীলনদের প্রথম ও দ্বিতীয় জলপ্রপাতের মাঝে অবস্থিত যা বর্তমান মিশরের সীমানায় অবস্থিত। মধ্য নুবিয়ার অবস্থান দ্বিতীয় ও তৃতীয় জলপ্রপাতের মাঝে। উচ্চ নুবিয়া তৃতীয় জলপ্রপাতের দক্ষিণে অবস্থিত।[10]
নিম্ন আর উচ্চ নুবিয়া উভয় স্থনেই প্রাগৈতিহাসিক মানব বসতির প্রমাণ পাওয়া যায়।মিশরীয়রা নুবিয়াকে “তা-সেতি” বা “ধনুকের ভূমি” বলতো, এর কারণ ছিল নুবিয়ানদের ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শিতা।[11] আধুনিক পণ্ডিতদের কাছে এটি নুবিয়া নামেই অধিক পরিচিত।নীলনদের তৃতীয় জলপ্রপাতের দক্ষিণে অবস্থিত উর্বরভূমিকে প্রাক-কেরমা সংস্কৃতি বলা হয়।
৫ম সহস্রাব্দে যে জনগোষ্ঠী এখানে আবাস স্থাপন করেছিলো যাদের বর্তমানে নুবিয়ান বলা হয়, তারা নিওলিথিলিক বিপ্লবে অংশ নিয়ে ছিল। সাহারার পাথরে প্রাপ্ত ছবিগুলোকে পশুভিত্তিক সমাজের প্রতিক মনে করা হয়, যেগুলো পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলজুড়ে এবং নীলের অববাহিকায় এখনো দেখা যায়।
[12] নাবতা প্লায়াতে আবিষ্কৃত মেগালিথিকে প্রাচীনতম জেতির্বিদ্যাবিষয়ক যন্ত্র মনে করা হয়, যার বয়স স্টোনহেঞ্জ থেকেও ২০০০ বছর বেশি। [13]
নাবাতা প্লায়াতে পরিলক্ষিত এই জটিলতা এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের ভিন্ন উপলগ্ধীই সম্ভাবত নিওলিথিলিক সমাজের ভিত্তি গড়েছিলো নাবাতাতে এবং প্রাচীন মিশরীয় রাজ্যে [14] ৩৫০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে, দ্বিতীয় নুবিয়ান(এ-গ্রুপ) সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে [15] এই সভ্যতার লোকেদের সাথে মিশরীয়দের বাণিজ্যিক সম্বন্ধ ছিলো।নুবিয়ানদের কবরে প্রাপ্ত মিশরীয় সামগ্রির সম্ভার থেকে এই বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।মিরশীয় পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল স্বর্নালংকার, তামার সামগ্রী ,ধারালো যন্ত্রপাতি ও পালঙ্ক, সিলমোহর, বিভিন্ন ফুলদানী ইত্যাদি।[16]
দ্বিতীয় নুবিয়ান সভ্যতা আনুমানিক ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সমাপ্ত হয়। এটি মিশরের প্রথম রাজবংশ দ্বারা ধ্বংশপ্রাপ্ত হয়। [17]
জর্জ রেইস্নারের মতে এর উত্তরসুরি ছিল বি-গ্রুপ সংস্কৃতি, যদিও অধিকাঙ্গশের মতে এই সংস্কৃতির কোন অস্তিত্বই ছিল না এবং অঞ্চলটি ৩০০০ থেকে ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে পরিত্যাক্ত হয়।[18][19] যদিও এর কারণ অজানা, তবে মনে করা হয় মিশরীয় দখলদারিত্ব এবং ধ্বংসযজ্ঞ এই পরিত্যাগের কারণ।ধারণা করা হয় নুবিয়া ৩১০০ অব্দের বহু আগে থেকেই মিশর এবং প্রান্তীয় আফ্রিকার বাণিজ্য করিডোর ছিল। মিশরীয়রা প্রান্তিক অঞ্চলের থেকে আসা হস্তিদন্ত ব্যবহার করতো যা নুবিয়া হইয়ে আসতো।
হায়ারোগ্লিফাসে নুবিয়া | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
Ta-seti T3-stj Curved land[20] | |||||||||
Setiu Stjw Curved land of the Nubians[21] | |||||||||
Nehset / Nehsyu / Nehsi Nḥst / Nḥsyw / Nḥsj Nubia / Nubians | |||||||||
Nubia |
একটি ব্যাখ্যা হলো গ্রুপ এ এর নুবিয়ানরা এবং মিশরের প্রথম দিককার ফেরাউনেরা একি ধরনের রাজকীয় প্রতীক ব্যবহার করতো।নুবিয়া আর উচ্চ মিশরের পাথর চিত্র এই দাবিটি সমর্থন করে।প্রাচীন মিশর একাদিকবার নুবিয়ার অঞ্চলগুলো দখল করে ঞ্জের প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করেছিলো। বদলে নুবীয়না মিশরের ২৫তম রাজবংশের আমলে মিশর দখলের প্রয়াস স চালায়।
যদিও দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক অধিকাংশ সময় শান্তিপূর্ন ছিল এবং তারা বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হতো।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১৯৬০-১৯৬৪ সালে আধুনা সুদানের আবু সিম্বেলের কাছে কুসতুলে খনন কার্য চালান এবং মিশরের ফারাওদের সাথে সম্পর্কিত প্রত্নসামগ্রী খুজে পান। এই থগেকে উইলিয়াম সিদ্ধান্ত নেন মিশর আর নুবিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি একি ছিল।[22][23][24][25]
যদিও অধিকাংশ পণ্ডিত এই ধারণার সাথে একমত নন।[26] কারণ সম্প্রতি জানা গিয়েছে সামগ্রিগুলো মিশরীয়,নুবিয়ান নয়। [27][28][29][30][31]
আরও সাম্প্রতিক এবং বিস্তৃত গবেষণাগুলি নির্ধারণ করেছে যে পৃথক মৃৎশিল্পের শৈলী, সমাধির ভিন্ন পদ্ধতি, ভিন্ন সমাধি সামগ্রী এবং স্থান গুলির বিন্যাস সবই ইঙ্গিত দেয় যে নাকাদ মানুষ এবং নুবিয়ান এ-গ্রুপের লোকেরা ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এসেছিল। ক্যাথরিন বার্ড আরও বলেছে যে "নাকাডা সাংস্কৃতির কবরগুলিতে খুব কম সংখ্যক নুবিয়ান নৈপুণ্যের পণ্য রয়েছে, যা সূচিত করে যে মিশরীয় জিনিসগুলি নুবিয়ায় রফতানি করা হয়েছিল এবং এ-গ্রুপের কবরগুলিতে দাফন করা হয়েছিল, উত্তর দিকে এ-গ্রুপের পণ্য খুব একটা পছন্দের ছিল না।"[32]
খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ সালে, নুবিয়ার প্রথম মিশরীয় বাণিজ্য মিশনের বিবরণীতে উল্লেখীত হয়েছিল। আসওয়ান থেকে, প্রথম জলপ্রপাতের ঠিক উপরে, তৎকালীন মিশরীয় নিয়ন্ত্রণের সীমা ছিল। মিশরীয়রা নুবিয়ার মধ্যদিয়ে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকা থেকে স্বর্ণ, ধূপ, আবলুস, তামা, হাতির দাঁত এবং বিদেশী প্রাণী আমদানি করতো। মিশর এবং নুবিয়ার মধ্যে বাণিজ্য বাড়ার সাথে সাথে সম্পদ এবং স্থিতিশীলতাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। মিশরীয় ৬ ষ্ঠ রাজবংশের দ্বারা, নুবিয়া একাধিক ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়েছিল। এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে নুবিয়ান সি-গ্রুপ লোকেরা,[33] যারা ২৫০০ - ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে শিখরে উঠেছিলো, তারা আরেকটি অভ্যন্তরীণ বিবর্তন নাকি আক্রমণকারী ছিল। এ-গ্রুপ এবং সি-গ্রুপের মৃৎশিল্পগুলির মধ্যে সুনির্দিষ্ট মিল রয়েছে, সুতরাং এটি বিলুপ্ত গ্রুপের প্রত্যাবর্তন বা হারানো শিল্পের অভ্যন্তরীণ পুনর্জাগরণ হতে পারে। এই সময়ে, সাহারা মরুভূমি মানুষের সাপোর্ট করার জন্য খুব শুষ্ক হয়ে উঠছিল, এবং সম্ভবত সাহারান যাযাবরদের আকস্মিকভাবে আগমন হয়েছিল। সি-গ্রুপের মৃৎশিল্পগুলি সাদা রঙের ইনফিল এবং মনমুগ্ধকর জ্যামিতিক লাইন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
মিশরের মধ্য রাজ্যের সময় (খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২০৪০- ১৬৪০), মিশর উত্তর নুবিয়ার বাণিজ্য রুটের উপর আরও নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষিণ নুবিয়ার সাথে সরাসরি বাণিজ্যে প্রবেশের জন্য নুবিয়ায় রাজ্য বিস্তার শুরু করে। তারা দ্বিতীয় জলপ্রপাতের নীচে নীল নদীর ধারে দুর্গের একটি শৃঙ্খল তৈরি করেছিল। এই গ্যারিসনে স্থানীয় নুবিয়ার লোকদের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছিলো বলে মনে হয়, তবে এই সময়ের মধ্যে খুব কম যোগাযোগ হয়েছিল।[34] সি-গ্রুপের একটি সমসাময়িক কিন্তু স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ছিল প্যান গ্রাভ সংস্কৃতি, তাদের অগভীর কবরগুলির কারণে তাদেরকে এ নাম দেওয়া হয়েছে। প্যান কবরগুলি নীল নদের পূর্ব তীরের সংলগ্ন, তবে প্যান গ্রাভস এবং সি-গ্রুপের মাছে অবশ্যই যোগাযোগ ছিলো। তাদের মৃৎশিল্পগুলির সি-গ্রুপের তুলনায় আরও সীমাবদ্ধ চরিত্র দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, সাধারণত জ্যামিতিক স্কিমগুলির মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে ফাঁকা জায়গা থাকে।মিশরের মধ্য রাজত্বকালীন, "মেদজয়কে" আর মেদজা জেলা বলে উল্লেখ করা হতো না। বরং একটি গোত্র বা লোকদের বংশকে বোঝাতো জেলার কী ঘটেছিল তা জানা যায়নি, তবে, মিশরের প্রথম মধ্যবর্তী সময়কালের পরে, নুবিয়ার অন্যান্য জেলাগুলিকে আর লিখিত রেকর্ডে উল্লেখ করা হয়নি।[35] লিখিত বিবরণগুলি মেদজয়দেরকে যাযাবর মরুভূমির মানুষ হিসাবে বর্ণনা দেয় ।সময়ের সাথে সাথে তাদের মিশরীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীতে, মেদজয় নুবিয়ার মিশরীয় দুর্গগুলিতে গ্যারিসন সেনা হিসাবে দায়িত্ব পালন করতো এবং মরুভূমিকে এক ধরনের গেন্ডামেরিন হিসাবে টহল দিতো।[36] তাদের সহযোগী মেদজয় উপজাতি এই অঞ্চলে মিশরীয় সম্পদগুলিকে আরও আক্রমণ করতে বাধা দেওয়ার আশায় এটি করা হয়েছিল।[37] পরে, এরা হাইকসদের বিরুদ্ধে কামোসের প্রচারের সময়ও ব্যবহৃত হয়েছিল[38] এবং মিশরীয় রাষ্ট্রকে সামরিক শক্তিতে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।[39]
মিশরের অষ্টাদশ রাজবংশের নিউ কিংডম যুগে এর , মেদজযয়েইয়েরা ছিলো এক অভিজাত আধাসামরিক পুলিশ বাহিনী।[37] তখন থেকে এই শব্দটি আর কোনও জাতিগত গোষ্ঠীকে বোঝায় না এবং সময়ের সাথে সাথে নতুন অর্থটি সাধারণভাবে পোলিশিং পেশার সমার্থক হয়ে ওঠে। একটি অভিজাত পুলিশ বাহিনী হওয়ায় মেদজয় প্রায়শই মূল্যবান অঞ্চলগুলি বিশেষত রাজকীয় এবং ধর্মীয় কমপ্লেক্সগুলি রক্ষা করতে ব্যবহৃত হত। যদিও থিবেস এবং আশেপাশের অঞ্চলে রাজবাড়ী এবং সমাধিগুলির সুরক্ষার জন্য এরা সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য, তবুও মেদজয় উচ্চ এবং নিম্ন মিশরে সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত হত বলে জানা যায়।
কিছু মিশরীয় ফেরাউন নুবিয়ান বংশোদ্ভূত হতে পারে। অ্যামনেমহেট প্রথম, দ্বাদশ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার, " মা নুবিয়ার হতে পারে"।[40][41] মেন্টুহোটেপ দ্বিতীয়, একাদশ রাজবংশের," সম্ভবত নুবিয়ান বংশোদ্ভূত"।
[42] তবে, ইয়ুরকোর মতে, "নুবিয়ান বংশের মিশরীয় শাসকরা সংস্কৃতিগতভাবে মিশরীয় হয়ে উঠেছিলেন; ফেরাউন হিসাবে তারা সাধারণত মিশরীয় মনোভাব প্রদর্শন করেছিল এবং সাধারণ মিশরীয় নীতি গ্রহণ করেছিল”।.[43] আহমোস-নেফেরতারিকয়ে কিছু বিদ্বান যেমন মার্টিন বার্নাল নূবিয়ান বংশোদ্ভূত বলে মনে করেছিলেন কারণ তার কালো রঙের ত্বক বেশিরভাগ চিত্রে চিত্রিত হয়েছে। তবে জয়েস টাইল্ডসলে, সিগ্রিড হোডেল-হোয়েনস এবং গ্র্যাসিলা গেষ্টোসো সিঙ্গারের মতো পণ্ডিতদের যুক্তি ছিল যে তার গায়ের রঙ পুনরুত্থানের দেবী হিসাবে তার ভূমিকার পরিচায়ক, যেহেতু কালোই উভয়ই মিশরের উর্বর ভূমির ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের রঙ।.[44]:৯০[45][46]
মিশরের সংস্কৃতি দ্বারা কুশ রাজ্য গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল,[47][48][49] আমুন এদের প্রধান দেবতা এবং এরা মিশরীয় শিল্প ও লেখার পদ্ধতি ব্যবহার করতো।[50] কাশ্তা এবং পাইয়ে উভয়ের সময়েই নুবিয়ার সাংস্কৃতিক মিশরীয়করণ সর্বোচ্চ স্তরে ছিল।[51]
নুবিয়ার মিশরীয় আধিপত্যের সময়ে অভিজাত নুবিয়ান পরিবারের সন্তানদের মিশরে শিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল এবং তারপরে আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য কুশদের আমলাতান্ত্রিক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এই নুবিয়ান অভিজাতরা অনেক মিশরীয় রীতিনীতি গ্রহণ করেছিল এবং তাদের সন্তানদের মিশরীয় নাম দিয়েছিল এবং কিছু নুবিয়ার রীতিনীতি এবং বিশ্বাসের ধারাবাহিকতা সত্ত্বেও মিশরীয়করণ ধারণা, অনুশীলন এবং প্রতিকে প্রাধান্য পেয়েছিল।[52] তবুও, কুশীয় সংস্কৃতি কেবল নুবিয়ার পরিবেশে মিশরের সংস্কৃতি ছিল না। কুশীয়রা তাদের নিজস্ব ভাষা তৈরি করেছিল, যা প্রথমে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফস দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছিল, তারপরে তাদের নিজস্ব বর্ন দ্বারা এবং অবশেষে একটি কার্শ স্ক্রিপ্ট দিয়ে। তারা মিশরীয় দেবদেবীদের উপাসনা করতো, কিন্তু নিজেদের দেবতাদের ত্যাগ করেনি। তারা তাদের রাজাদের পিরামিডে কবর দিতো, কিন্তু মিশরীয় পদ্ধতিতে নয়।[53]
মিশরের পঁচিশতম রাজবংশের এর পতনের পরে মিশর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, নুবিয়ার মিশরীয় সংস্কৃতি ৪৫ খ্রিস্টপূর্বে রানী আমনিশাখেতে-এর অধিগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। তিনি সাময়িকভাবে মিশরীয় সংস্কৃতির ক্ষতিতে করায়ত্ত্ব করেছিলেন, কিন্তু তারপরেও তা পরীক্ষা করা যায় নি।.[51]
প্রাক-কের্মা সংস্কৃতির সময় থেকে, অঞ্চলটির একত্রিত করে প্রথম রাজ্য উত্থিত হয়েছিল। কেরমা এ অনুমিত রাজধানীর জন্য এর কেরমা সংস্কৃতি নামকরণ করা হয়েছিল, এটি নীল অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন নগর কেন্দ্র ছিল[54] এবং কথা বলতো হয় কুশিটিক ভাষায় অথবা কুশিটিকের শাখা ভাষায় [4][5] অথবা, সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, পূর্ব সুদানিক শাখার নীলো-সাহারান ভাষায় কথা বলতো.[6][7] খ্রিস্টপূর্ব ১0৫০ সাল নাগাদ কের্মার রাজারা স্মৃতিচিহ্ন প্রাচীর ও কাদামাটির ইটের কাঠামোর জন্য শ্রম সংগঠিত করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলেন। তাদের পরবর্তীকালের সম্পত্তি এবং বৃহত্তর সমৃদ্ধ সমাধিও ছিল। জর্জ অ্যান্ড্রু রিজনার কেরমাতে খননকৃত সাইটগুলি খুঁজে পেয়েছিল এবং নুবিয়ার আর্কিটেকচার যেমন বৃহত্তর সমাধি এবং প্রাসাদের মতো কাঠামো পেয়্বছিলেন। এক পর্যায়ে, কেরমা মিশর জয় করার খুব কাছাকাছি এসেছিলেন। মিশর কুশের রাজ্য এর হাতে মারাত্মক পরাজয় ভোগ করেছিল।[55][56]
ব্রিটিশ মিউজিয়াম এবং মিশরের প্রত্নতাত্ত্বিক যৌথ দলের প্রধান ডেভিসের মতে, আক্রমণটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, যদি কেরমা বাহিনী মিশরে না থাকতে এবং মিশর ত্যাগ বেছে নিয়েছিল, তবে তারা সম্ভবত এটি ভাল উদ্দেশ্যে করেছিলো এবং জাতির বিলুপ্তি এনেছিলো মিশরের নতুন রাজ্যের এর অধীনে মিশরীয় শক্তি পুনরুদ্ধারিত হলে (খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩২-১০৭০) মিশরীয়রা আরও দক্ষিণে প্রসারিত হতে শুরু করে। মিশরীয়রা কেরার রাজ্য এবং রাজধানী ধ্বংস করেছিল এবং মিশরীয় সাম্রাজ্য চতুর্থ জলপ্রপাত পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়।
থুতমোজ প্রথম এর রাজত্বের শেষের দিকে (খ্রিস্টপূর্ব ১৫২০) উত্তর নুবিয়ার সমস্ত অংশকে একত্রিত করা হয়েছিল। মিশরীয়রা নাপাটা এ একটি নতুন প্রশাসনিক কেন্দ্র তৈরি করেছিল এবং এই অঞ্চলটিকে স্বর্ণ ও ধূপ তৈরি করতে ব্যবহার করেছিল।[57][58] নুবিয়ার সোনার উৎপাদন মিশরকে মধ্য প্রাচ্যের মূল্যবান ধাতুর প্রধান উৎস হিসাবে গড়ে তুলেছিল। দাসদের আদিম কাজের শর্তগুলি ডায়োডরাস সিসুলাস দ্বারা রেকর্ড হয়েছিল, যিনি পরবর্তী সময়ে কিছু খনি দেখেছিলেন।[59] প্রাচীনতম মানচিত্রগুলির মধ্যে একটি হ'ল নুবিয়ার একটি সোনার খনির মানচিত্র, তুরিন পাপিরাস মানচিত্র খ্রিস্টপূর্ব ১১৬০ অবধি; এটি প্রথম দিকের বৈশিষ্ট্যযুক্ত রাস্তার মানচিত্রগুলির মধ্যে একটি।[60]
পঞ্চদশ রাজবংশের কুশীয় রাজাদের উৎস অজানা।[61][62] সম্ভবত কুশে মিশরীয় বসতি স্থাপনকারী বা কর্মকর্তাদের বংশ থেকেতাদের উদভব।[63][64] তাদের মিশর বিজয়ের পরে, "তারা অবশ্যই নিজেদের মিশরীয় হিসাবে পরিচিত করেছিল এবং তাদের পিরামিডে কবর দেওয়া শুরু করেছিল ।[64] মিশরীয়রা নেপাটা অঞ্চল থেকে বের হয়ে এলে তারা একটি স্থায়ী উত্তরাধিকার রেখেছিল যা দেশীয় রীতিনীতিতে মিশে যায়, কুশের রাজ্য গঠন করে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এই এলাকায় বেশ কয়েকটি সমাধি খুঁজে পেয়েছেন যা স্থানীয় নেতাদের বলে মনে হয়। মিশরীয়রা নুবিয়ার সীমানাটি বিভক্ত করার পরপরই সেখানে কুশীয়দের দাফন করা হয়েছিল। কুশের কিংডম মিশরের চেয়ে দীর্ঘকাল টিকে ছিল, খ্রিস্টপূর্ব ৭২ সালের দিকে পাইয়ের নেতৃত্বে তারা মিশরে আক্রমণ করেছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব ৮ ম শতাব্দীতে মিশরের পঁচিশতম রাজবংশ হিসাবে মিশরকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল।[65] কূশীয়রা প্রায় ১০০ বছর ধরে তাদের উত্তরের প্রতিবেশীদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, অবশেষে আক্রমণকারী আশেরিয়া দের সাথে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে তাদের পিছনে ফেলে দেওয়া হয়, এই অভিযান মিশরের আসিরিয়ান বিজয় এবং নামে পরিচিত। যদিও আসিরিয়ানরা তাদের আক্রমণের পরপরই মিশর ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তবে সসাম্তিক প্রথম এর অধীনে স্থানীয় মিশরের ছাব্বিশ তম রাজবংশ কুশীয়দের স্থায়ীভাবে মিশর থেকে বের করে দিতে পেরেছিল। কুশাইট সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারীরা তাদের রাজধানী নাপাটা এবং পরে মেরো তে স্থাপন করেছিল এই যুগের নুবিয়ান রাজাদের মধ্যে, তাহারকা সম্ভবত সবচেয়ে সুপরিচিত। একজন পুত্র এবং প্রতিষ্ঠাতা ফেরাউনের তৃতীয় উত্তরসূরি, পাইয়ে, তিনি মেমফিসে এ মুকুট গ্রহণ করেন। [66] আশেরিয়ানরা নিম্ন মিশরের দিকে অগ্রসর হওয়ার আগে তাহারকা নুবিয়া এবং মিশর উভয়ের উপরেই শাসন করেছিলেন, কর্ণক মিশরীয় মন্দির পুনরুদ্ধার করেছিলেন, এবং নতুন মন্দির এবং নুবিয়ার পিরামিড নির্মাণ করেছিলেন ।[67][68][69][70]
তাহারকার উত্তরসূরি তান্তমণি মিশর পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাকে নুবিয়ায় তাড়া করা হয়েছিল। তবে উচ্চ মিশরের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ৬৫৬ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এই তারিখে, নেচারোর এক নেটিভের পুত্র প্যাসামটিক প্রথম, একজন আদি মিশরীয় শাসক, যিনি প্রাথমিকভাবে আশুরবানীপালের প্রতিনিধি হিসাবে শাসন করেছিলেন, থিবেসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন.[71][72] খ্রিস্টপূর্ব ৫৯০ এর দশকে সাইট রাজাদের সাথে শত্রুতার পরে কুশ ও উচ্চ মিশরের মধ্যকার শেষ সম্পর্কগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।[73]:১২১–১২২
অব্যাহত ষড়যন্ত্রের কারণে, একটি মিশরীয় অভিযান ৫৯২ সালে কুশের রাজধানী নাপাতাকে পদচ্যুত করলে কুশির রাজধানীটি মেরোতে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে কুশি রাজ্য আরও ৯০০ বছর টিকে ছিল। পার্সিয়ানরা নুবিয়া আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল বলে মনে করা হয়।[51]
মেরো (৮০০ খ্রিস্টপূর্ব) দক্ষিণ নুবিয়ার নীল নদের পূর্ব তীরে প্রায় সুদানের শেন্দির নিকটে কাবুশিয়ার স্টেশনের উত্তর-পূর্বে খার্তুম এর উত্তর-পূর্বে ২০০কিলো জুড়ে অবস্থিত। সেখানকার লোকেরা অনেক প্রাচীন মিশরীয় রীতিনীতি সংরক্ষণ করেছিল, তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাছিল অনন্য। তারা প্রথমে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফস ব্যবহার করে এবং পরে ২৩ টি চিহ্ন সহ বর্ণানুক্রমিক লিপি ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব লেখার আকার তৈরি করেছিল।[74] রাজা আরাকামণি-কে মেরোতে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।
সম্ভবত ক্যাম্বাইসিস দ্বিতীয় এর সময় থেকে (সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৫৩০ সাল) এবং আরও সম্ভবত দারিয়াস প্রথম (৫৫০-৪০০ খ্রিস্টপূর্ব) এর সময় থেকে অচামেনিডরা কুশন রাজ্য দখল করেছিল। তাঁর শিলালিপিতে কুশকে ( কুয়েয়া ) লিখেছে।[75][76]
স্ট্রাবো রোমান সাম্রাজ্য এর সাথে সংঘর্ষের বর্ণনা দেয় যেখানে স্ট্র্যাবোর মতে রোমানরা পরাজিত হয়েছিল নুবিয়ায়, কুশীয় অগ্রযাত্রা অনুসরণ করে, গাইস পেট্রোনিয়াস (তৎকালীন মিশরের এক প্রিফেক্ট) একটি বিশাল বাহিনী প্রস্তুত করে দক্ষিণে যাত্রা করেছিল। রোমান বাহিনী থিবেসের নিকটবর্তী কুশীয় সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিল এবং তাদেরকে কুশীয় ভূখণ্ডের প্যাসেলচিসে (মহররাকা) ফিরে যেতে বাধ্য করেছিল। এরপরে পেট্রোনিয়াস কুশীয়দের কাছে একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর এবং নির্দিষ্ট দাবি করার জন্য ডেপুটিদের প্রেরণ করেছিলেন।
স্ট্রাবোর মতে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কুশীয়রা "বিবেচনার জন্য তিন দিন কাঙ্ক্ষিত" ছিল। যাইহোক, তিন দিন পরে, কুশ কোনও প্রতিক্রিয়া জানায় না এবং পেট্রোনিয়াস তার সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয় এবং মহাররাকার দক্ষিণে কুশিট শহর প্রেমিনস (আধুনিক করানগ) নিয়ে যায়। সেখান থেকে তিনি দক্ষিণে মেরোয়ের পরে কুশের দ্বিতীয় রাজধানী নাপাটায় দক্ষিণে এগিয়ে গেলেন। পেট্রোনিয়াস নেপাটা আক্রমণ করে এবং তাকে বরখাস্ত করে, যার ফলে কুশি রাণীর পুত্র পালিয়ে যায়। স্ট্রাফো নাপাতে কুশীয়দের পরাজয়ের বর্ণনা দিয়ে বলেছিলেন যে "তিনি (পেট্রোনিয়াস) রাজ্যের বাসিন্দাদের বন্দী করেছিলেন"। [77]
এই সময়ের মধ্যে, অঞ্চলের বিভিন্ন অংশ পৃথক পৃথক নেতা বা সেনাপতিদের নিয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রত্যেকটি ভাড়াটে ছোট সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে। তারা তখন নুবিয়া এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করেছিল এবং পুরো অঞ্চলকে দুর্বল ও অনিরাপদ করে ফেলেছিল। মেরো শেষ পর্যন্ত তাদের দক্ষিণে রাজা এজানা এর অধীনে নতুন উঠতি আকসুমের রাজ্যের এর মাধ্যমে পরাজয়ের মুখোমুখি হন।
মেরোটিক ভাষা এর শ্রেণিবিন্যাস অনিশ্চিত; এটি মিশরীয় ভাষা এর মতো আফ্রোয়েশিয়াটিক ভাষাগুলির অন্যতম বলে ধারণা করা হয়েছিল, তবে এখন একে পূর্ব সুদানিক ভাষা বলে মনে করা হয়।
খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর কোনও সময় এই অঞ্চলটি নোভা দ্বারা বিজিত হয়েছিলো, যেখান থেকে নুবিয়া নামটি পেতে পারে; আর একটি সম্ভাবনা হ'ল এটি সোনার মিশরীয় নাম থেকে এসেছে।[78] সেই থেকে রোমানরা এই অঞ্চলটিকে নোভাটিয়া হিসাবে উল্লেখ করে এসেছে।
মুকুট যিনি ৩৫০ বা ৪০০ খ্রিস্টাব্দে মেরোইটিক রাজবংশ পতন এবং ৬০০ খ্রিস্টাব্দে নুবিয়ার খ্রিস্টান রাজত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্যে শাসন করেছিলেন। ব্রিটিশ মিশরবিদ ডব্লু ডাব্লিউ বি) দ্বারা নিম্ন নুবিয়ার বলানা সমাধিতে এটি ১১৮ সালে পাওয়া গিয়েছিল। এমেরি]]
প্রায় ৩৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে, অঞ্চলটি আকসুমের রাজ্য দ্বারা আক্রমিত হয়েছিল এবং মেরোইটিক কিংডম ভেঙে যায়। অবশেষে, তিনটি ছোট খ্রিস্টান রাজ্যগুলি এটি প্রতিস্থাপন করেছিল: উত্তরতম নোভাটিয়া নীল নদ এর প্রথম এবং দ্বিতীয় জলপ্রপাতের মধ্যে ছিল, যার রাজধানী পাচোরাসে (আধুনিক দিনের ফারাস, মিশর ); মাঝখানে ছিল মাকুরিয়া, যার রাজধানী ওল্ড ডঙ্গোলা এ ছিল; এবং দক্ষিণে ছিল আলোদিয়া, এর রাজধানী সোবার (নিকটে খার্তুম) সাথে ছিল। নোভাটিয়ার রাজা সিল্কি ব্ল্লেমাইস কে চূর্ণ করেছিলেন, এবং প্রায় ৫০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তালমিসের (আধুনিক কল্যাশ) মন্দিরের দেয়ালে খোদাই করা একটি গ্রীক লিপিতে তাঁর বিজয় রেকর্ড করেছিলেন।
বিশপ আলেকজান্দ্রিয়ার অ্যাথানাসিয়াসএর ৩৭৩ সালে মৃত্যুর আগে মার্কসকে ফিলি কে বিশপ হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন, যেখানে খ্রিস্টধর্ম চতুর্থ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল, এফিসের জন মিয়াফিসাইট যাজক রাজা জুলিয়ান নামে একজন এবং তাঁর নোভাতিয়ার রাজকর্মচারীদের প্রায় ৫৫৫ সালের দিকে ধর্মান্তরিত করেছিলেন। ইফিসের জন আরও লিখেছেন যে, আলোদিয়ার রাজ্যটি প্রায় ৫৬৯-এর দিকে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। তবে, বাইক্লারামের জন লিপিবদ্ধ করেছেন যে মাকুরিয়া একই বছর ক্যাথলিক ধর্ম তে ধর্মান্তরিত হয়েছিল, ইঙ্গিত দিয়েছিল যে এফিসের জন ভুল হতে পারে। আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রিক অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্ক এর জনগণের সাক্ষ্য সম্পর্কে আরও সন্দেহ প্রকাশিত হয়েছে, যাতে বলেছে যে ৭১৯ সালে নুবিয়ার গির্জা পূর্বের অর্থোডক্সের কাছ থেকে তাঁর আনুগত্য স্থানান্তর করেছিল কপটিক অর্থোডক্স চার্চ এর কাছে ।
সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে, মাকুরিয়া এই অঞ্চলে প্রভাবশালী শক্তি হিসাবে আভির্ভুত হয়েছিল। আরব মিশর অধিগ্রহণের পরে ইসলামএর দক্ষিণে প্রসার বন্ধ করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। বেশ কয়েকটি ব্যর্থ আগ্রাসনের পরে নতুন মুসলিম শাসকরা দোঙ্গোলার সাথে বাক্ত্ত নামক একটি চুক্তিতে সম্মত হন, নুবিয়ান্রা বার্ষিক অর্থ প্রদানের মাধ্যমে আসওয়ানে ইসলামী গভর্নরকে শ্রদ্ধা জানান।[79] এই চুক্তি ছয়শত বছর ধরে স্থায়ী ছিল; এটি গ্যারান্টিযুক্ত যে কোনও পলাতক দাস নুবিয়ায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।[79] এই পুরো সময়কালে, নুবিয়ার প্রধান রফতানি পণ্য ছিল খেজুর এবং দাস,[79] যদিও হাতির দাঁত এবং সোনার বিনিময়ে মিশরীয় সিরামিক, টেক্সটাইল এবং গ্লাসও বাণিজ্যও প্রচলিত ছিল।[80] সময়ের সাথে সাথে আরব ব্যবসায়ীদের আগমন নুবিয়ার সাথে ইসলামের পরিচয় ঘটায় এবং ধীরে ধীরে এটি খ্রিস্টান মুক্ত হয়ে যায়; তদুপরি, দাসদের বার্ষিক শ্রদ্ধা বাধাগ্রস্থ হওয়ার পরে, মিশরীয় মামলুক শাসক ১২৭২ সালে আক্রমণ করেছিলেন এবং নুবিয়ার অর্ধেকের উপরে নিজেকে সার্বভৌম ঘোষণা করেছিলেন।[79] ১৩৭২ সালের কাসার ইব্রিম এ এক বিশপের বিশদ রেকর্ড রয়েছে, তার লেখাটি ফারাসে অবস্থিত এটি অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এটাও স্পষ্ট যে ১৩১৭ সালে ডঙ্গোলার ক্যাথেড্রাল একটি মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছিল।[81]
মিশর ও সুদানের দিকে, আরব এবং নুবিয়ানদের আগমন ১৫০৪ সালের দিকে (নুবিয়ার সর্বশেষ রাজত্বের পতনের পরে) নুবিয়ান পরিচয় দমন করতে ভূমিকা রেখেছে। নুবিয়ান জনসংখ্যার বেশিরভাগ অংশ বর্তমানে মুসলিম এবং আরবি ভাষা তাদের আদিবাসী নুবিয়ান ভাষা ছাড়াও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। নুবিয়ার অনন্য বৈশিষ্ট্যটি তাদের সংস্কৃতিতে প্রদর্শিত হয় (পোশাক, নৃত্য, ঐতিহ্য এবং সংগীত)।
১৪শ শতকে দনগোলান শাসনের পতন ঘটে এবং অঞ্চলটি বিভক্ত ও আরব প্রধান অঞ্চলে পরিণত হয়।পরবর্তি শতকে অঞ্চলটি একাধিক আরব অভিযানের সাক্ষী হয় এবং কিছু ক্ষুদ্র রাজ্যও প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৬শ শতকে সেন্নার আমলে নুবিয়া মিশরের অধীনে আসে। ১৯শ শতকের গোড়ার দিকে মোহাম্মদ আলীর সাসনকালে সমগ্র নুবিয়া মিশরের অধীনে আসে এবং পরবর্তিতে ইঙ্গ-মিশরীয় অধিরাজ্যে পরিণত হয়।
ঐপনিবেসিক যুগের শেষে ১৯৫৩ সালে মিশর আরব প্রজাতন্ত্র এবং ১৯৫৬ সালে সুদান প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, নুবিয়া মিশর আর সুদানের মাঝে বিভিক্ত হয়ে পড়ে।
৭০এর দশকের গোড়ার দিকে, আসুওয়ান বাধ তৈরির মাধ্যমে নাসের হৃদ বানানো হয় এবং অসংখ্য মিশরীয় এবং সুদানিজ নুবিয়ানিকে জোরপূর্বক অন্যত্র পুনঃবাসিত করা হয়।[82] নীলনদের পশ্চিমতীরে আসও্যানের উত্তরে এলফেটিন দ্বীপে নুবায়ান গ্রামগুলো বর্তমানে অবস্থিত, অনেক নুবিয়ান এখন কায়রোর মতো বড় শহরগুলোতে বসবাস করে।[82]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.