Loading AI tools
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুরু একটি বড় আকারের আক্রমণ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ হলো ইসরায়েল এবং হামাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যকার একটি সামরিক সংঘাত। এটি ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ শুরু হয়, যখন হামাস ও ফিলিস্তিনের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ২০২৩ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড (বঙ্গানুবাদ: আল-আকসা প্লাবন অভিযান) নামে একটি বড় আকারের আক্রমণ শুরু করে।[lower-alpha 12][8] এটির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অপারেশন আয়রন সোর্ডস (বঙ্গানুবাদ: লৌহ তরবারি অভিযান) শুরু করে এবং গাজায় আক্রমণ করে।[9] এটি ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত এবং ১৯৭৩ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর এই অঞ্চলে সবচেয়ে বিস্তৃত যুদ্ধ।[10]
এই নিবন্ধটি একটি বর্তমান ঘটনাসমূহ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। ঘটনা অগ্রগতি হিসেবে এই নিবন্ধে তথ্য দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। প্রাথমিক সংবাদ প্রতিবেদনগুলি অবিশ্বস্ত হতে পারে। এই নিবন্ধের শেষ হালনাগাদগুলো সর্বাধিক বর্তমান তথ্য প্রতিফলিত নাও করতে পারে। (৭ অক্টোবর, ২০২৩) |
২০২৩ ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত | |||||||
গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি নিয়ন্ত্রিত অংশ গাজায় ইসরায়েল দ্বারা আক্রান্ত এলাকা ইসরায়েলের ভিতরে বাস্তচ্যুত এলাকা ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি যোদ্ধা প্রবেশের সর্বোচ্চ সীমা
ইসরায়েলের বাস্তচ্যুত করার সতর্কতাপ্রাপ্ত এলাকা
আরও বিস্তৃত মানচিত্রের জন্য এখানে দেখুন। | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
ফিলিস্তিন অঞ্চলে তাদের মিত্ররা:
|
ইসরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি (অনেকসময়) | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
|
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইওভ গ্যালান্ট হারজি হালেভি ইয়ারন ফিঙ্কেলম্যান কোবি শবতাই | ||||||
জড়িত ইউনিট | |||||||
আল-কাসসাম ব্রিগেড[6] ন্যাশনাল রেসিস্টেন্স ব্রিগেড |
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলি পুলিশ | ||||||
শক্তি | |||||||
৪০,০০০+[7] | ৫,২৯,৫০০ | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
গাজা উপত্যকা:[lower-alpha 1]
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে:[lower-alpha 3]
পশ্চিম তীর:[lower-alpha 4]
অন্যান্য:
|
ইসরায়েল:[lower-alpha 3]
| ||||||
মিশর:
|
সঙ্কটটি ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত ও গাজা–ইসরায়েল সংঘাতের একটি অংশ। সঙ্কটটি ২০২৩ সালে ব্যপক সহিংসতার দ্বারা প্রভাবিত হয়। ২০২৩-এ ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বৃদ্ধি ও ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণেদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলীয় বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা, জেনিনে সংঘর্ষ, ২০২১-এ সংঘাতের ফলে আল-আকসা মসজিদ ও গাজায় প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনি ও ৩২ জন ইসরায়েলী নিহত হওয়া; হামাস এই ঘটনাগুলোকে আক্রমণের ন্যায্যতা হিসেবে উল্লেখ করে এবং গাজার বাইরের ফিলিস্তিনিদেরকে "দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে" যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জরুরি অবস্থা ও যুদ্ধ ঘোষণা করেন[11][12][13] এবং কিছু বিরোধী দল জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের আহ্বান জানায়।[14]
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অন্তত ৫,০০০ টি ক্ষেপণাস্ত্রের রকেট ব্যারেজ ও ভূখণ্ডে পরিবহনে উপযোগী যানবাহন সহ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে খুব ভোরে সহিংসতা শুরু হয়েছিল। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারাও গাজা–ইসরায়েল বেষ্টনী ভেদ করে জোরপূর্বক গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে এবং কাছাকাছি ইসরায়েলীয় জনবসতি ও সামরিক স্থাপনায় প্রবেশ ও আক্রমণ করে; ইসরায়েলের মতে আক্রমণের দ্বারা কমপক্ষে ১,২০০ জন ইসরায়েলীয়কে হত্যা করা হয়েছিল। সংঘাতের শুরু থেকে ইসরায়েলীয় বেসামরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অসংখ্য ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে একটি সঙ্গীত উৎসবে একটি গণহত্যার ঘটনা রয়েছে যার ফলে কমপক্ষে ২৬০ জন নিহত হয়েছিল। ফিলিস্তিনি মুজাহিদরা গাজা উপত্যকায় শিশুসহ ইসরায়েলীয় সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকদের বন্দী করেছিল।[15]
সংরক্ষিত সৈনিকদের যুদ্ধে যোগদান ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে মুজাহিদদের নির্মূল করার পর, ইসরায়েল ঘনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকায় কৌশলগত ভবন ও সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা মাধ্যমে প্রতিশোধ নিয়েছিল। এই হামলায় আবাসিক ভবন, মসজিদ ও হাসপাতাল সহ বেসামরিক অবকাঠামোতে গোলাবর্ষণের ২০ টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। গাজার হামাস সরকারের মতে, প্রথম তিন দিনের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ও ২৬০ জন শিশু সহ অন্তত ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দুকযুদ্ধে ও বিমান হামলায় নিহত হয়েছিল; আইডিএফ জানিয়েছে যে তারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে "১,৫০০ এরও বেশি সন্ত্রাসী"কে হত্যা করেছে। রাষ্ট্রসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, যে শত্রুতা শুরু হওয়ার পর থেকে ২,০০,০০০ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা গাজার মোট জনসংখ্যার এক-দশমাংশ। ইসরায়েল ইতিমধ্যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় খাদ্য, জল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করার পর মানবিক সংকটের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে।[16]
যথারীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশ সহিংসতার জন্য ফিলিস্তিনের নিন্দা করে, যখন কিছু আরব ও মুসলিম দেশ সহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের পক্ষে মন্তব্য করেন এবং হামলায় ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে দায়ী করেন।[17][18]
২০০৬ সালে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার, ২০০৬ সালে নির্বাচনের পর হামাসের দ্বারা গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ এবং ২০০৭ সালে ফাতাহের সাথে গৃহযুদ্ধের পর থেকে গাজা উপত্যকা ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাত জটিল হতে শুরু করে। [19] গাজা উপত্যকা ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েলি এবং মিশরীয় অবরোধের অধীনে রয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গাজা উপত্যকাকে বছরের পর বছর ধরে স্থায়ী হওয়া বিশ্বের বৃহত্তম "উন্মুক্ত কারাগার" বলে অভিহিত করেছে। [20] উপরন্তু, গাজা বিশ্বের বাকি অংশের কার্যত বিচ্ছিন্ন এবং খাদ্য, পানি ও বিদ্যুতের মতো সম্পদের সরবরাহ প্রায় সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। [21] যেহেতু অবরোধ ফিলিস্তিনিদের জন্য গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করে, [22] তাই হামাস নিজের আক্রমণের অন্যতম কারণ হিসেবে এই অবরোধকে উল্লেখ করেছে। [23]
হামাস নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভুমিতে আকস্মিক আক্রমণের নাম দেয় আল-আকসা প্লাবন। এর জবাবে ইসরায়েল ঘোষণা করে যে তারা অপারেশন সোর্ড নামে একটি পাল্টা আক্রমণ চালাবে। ৭ অক্টোবরের ফিলিস্তিনি আক্রমণের সূচনা ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের ৫০ তম বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে। এই দিনটি উপলক্ষে এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। [24] বিভিন্ন বার্তা সংস্থা ও পর্যবেক্ষকরা চলমান সংঘাতকে তৃতীয় ইন্তিফাদা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। [25]
এই আকস্মিক আক্রমণটি ইয়োম কিপপুর যুদ্ধের ৫০ তম বার্ষিকীতে এবং ইহুদিদের সিমচাট তোরাহ ও সাব্বাথ উৎসবের সময় সংঘটিত হয়। [26] [27] হামলার আগে, ২০২৩ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল, যার মধ্যে উভয় পক্ষের যোদ্ধা এবং বেসামরিক লোক অন্তর্ভুক্ত ছিল, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের হামলায় ৩২ জন ইসরায়েলি এবং দুই বিদেশী নাগরিক নিহত হয়েছিল। [28] [29]
ইজ্জউদ্দিন আল-কাসাম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ একটি ধারণকৃত বার্তায় বলেছেন যে "আল-আকসা মসজিদের অপবিত্রতা" এবং এই বছর ইসরায়েলের শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও আহত করার প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই হামলাটি করা হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি আরবদের "দখলকারদের বিতাড়িত করা এবং অবরোধ ভেঙ্গে ফেলার" আহ্বান জানানো হয়। [30] হামাস নেতা সালেহ আল-আরোরি বলেছেন যে এই অভিযানটি "দখলদারী অপরাধের" প্রতিক্রিয়া ছিল এবং যোদ্ধারা আল-আকসা মসজিদ ও ইসরায়েলের হাতে বন্দী হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে রক্ষা করছে। [31] উপরন্তু, ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদের একজন মুখপাত্র বলেছেন যে তারা ইসরায়েলি নাগরিকদের বেসামরিক হিসাবে দেখেন না এবং বলেছেন, "আমরা বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করি না। এটি একটি সামরিক সমাজ। তারাই তাদের সরকার বেছে নেয়।" [32]
অনুমান করা হয় যে ১৯৬৭ সাল থেকে, ইসরায়েল ৮ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। ৪০ শতাংশ ফিলিস্তিনি পুরুষ তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময় ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী হয়েছেন। [33] ২০২৩ সালের হিসাবে, ১৭০ জন শিশু সহ ইসরায়েলি কারাগারে আনুমানিক ৪,৪৪৯ থেকে ৫,২০০ জন ফিলিস্তিনি রয়েছেন। [34] [35] এই বন্দীদের মধ্যে কয়েকজনকে ইসরায়েলের সন্ত্রাস আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। [36] বন্দি সংকটের বিষয়ে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয়পক্ষ আবেগগতভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে, যেমন অনেক বন্দী যাদের ফিলিস্তিনিরা নায়ক হিসাবে দেখে তাদের ইসরায়েলিরা সন্ত্রাসী হিসাবে বিবেচনা করে। [33]
২০০৬ সালে, হামাস ইসরায়েলি সৈনিক গিলাদ শালিতকে বন্দী করে এবং ১,০০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে ইসরাইলকে বাধ্য করে, যাদের মধ্যে অনেকেই ইসরায়েলে সন্ত্রাসবাদ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। [36] বর্তমানে, হামাস জানিয়েছে যে তারা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্যই ইসরায়েলিদের জিম্মি করেছে। [34]
ইসরায়েলের সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। ইসরায়েলি রাজনীততে ঐতিহাসিকভাবে "শান্তিবাদী" সামাজিক গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি প্রাধান্য পেয়েছিল যেগুলি ২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে ফিলিস্তিনিদের সাথে একটি শান্তি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। [37] ২০০০-২০০৫ সালের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পর তাদের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। দ্বিতীয় ইন্তিফাদা অধিক সহিংসতায় পরিপূর্ণ ছিল, যেখানে ইসরায়েলিদের মতো ফিলিস্তিনিরাও পরস্পর আক্রমণে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘাতের কারণে উভয়পক্ষে শান্তি আলোচনার দ্বার বন্ধ হয়ে যায়।
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী নেতা, যিনি রেকর্ড ছয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। নেতানিয়াহু ১৯৯৬ সালের ইসরায়েলের সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ১৯৯৯ সালে পরাজিত হলেও দুই দশক পরে ২০০৯ সালে, ইসরায়েলি সংসদ নেসেট নেতানিয়াহুর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পুনর্নিযুক্তির অনুমোদন দেয় এবং নেতানিয়াহু ২০১৩, ২০১৫, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০২১ সালে নাফতালি বেনেট এবং ইয়ার ল্যাপিডের নেতৃত্বে একটি জোট সরকার গঠিত হয়েছিল, কিন্তু নেতানিয়াহু ২০২২ সালের নির্বাচনে জয়ী হন ও ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২-এ আবার প্রধানমন্ত্রী হন এবং জোট সরকারটি ভেঙে যায়। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ডানপন্থী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর, সরকার ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণকে ত্বরান্বিত করে। ২০২৩ সালে, নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থী সরকারের নেতায় পরিণত হন, যা প্রধান বিচারিক সংস্কারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ সহ রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার দিকে জন্ম দেয়। [38] [39] [40]
হামাস ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলের গ্রীষ্মকালীন সময় প্রায় ৬ টা ৩০ মিনিটে[41] "অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড" শুরু করার ঘোষণা দেয়, এই বলে যে এটি ২০ মিনিটের ব্যবধানে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে ৫,০০০ টিরও বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলী সূত্র জানায় যে গাজা থেকে অন্তত ৩,০০০ টি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। রকেট হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছিল।[42][43][15][44] গাজা উপত্যকার আশেপাশের এলাকায় এবং গেদেরা, হার্জলিয়া, তেল আবিব ও অ্যাশকেলন সহ শ্যারন সমভূমির শহরগুলিতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। বিয়ার শেভা, জেরুসালেম, রেহোভৎ, রিশন লেজিওন এবং পালমাচিম বিমান ঘাঁটিতেও বিমান হামলার সাইরেন সক্রিয় করা হয়েছিল।[45][46][47] ঊর্ধ্বতন সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ "মুসলমানদের সর্বত্র আক্রমণ শুরু করার" আহ্বান সহ হামাস অস্ত্রের আহ্বান জারি করেছিল।[15] ফিলিস্তিনি যোদ্ধারাও গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি নৌকাগুলিতে গুলি চালায়, যখন গাজা পরিধি বেষ্ঠনির পূর্ব অংশে ফিলিস্তিনি ও আইডিএফ-এর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।[45]
আক্রমণটি ইহুদিদের সিমচাত তোরাহের দিনে করা হয়ে ছিল, যা ইসরায়েলীদের কাছে সম্পূর্ণ বিস্ময়কর বলে মনে হয়েছিল।[46]
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’কে সক্রিয় করা হয়েছিল।[45] প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট তেল আবিবে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদর দফতরে নিরাপত্তা মূল্যায়ন পরিচালনা করেন।[47][44] ইয়োভ গ্যালান্ট পরবর্তীতে হাজার হাজার সংরক্ষিত সৈনিকদের একত্রিত করার অনুমোদন দিয়েছিলেন[41][44] এবং গাজা সীমান্তের থেকে ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) মধ্যবর্তী এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন।[48] তিনি আরও বলেন যে হামাস তার আক্রমণ শুরু করে "একটি গুরুতর ভুল করেছে" এবং অঙ্গীকার করেন যে "ইসরায়েল জিতবে"।[49] আইডিএফ "যুদ্ধের জন্য প্রস্তুততার রাষ্ট্র"-এর ঘোষণা করে।[43] আরও বলা হয় যে, সংরক্ষিত সেনাদের শুধু গাজাতেই নয়, পশ্চিম তীরে এবং লেবানন ও সিরিয়ার সীমান্তে মোতায়েন করা হবে।[50] গাজা উপত্যকার আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির ভিতরে থাকতে বলা হয়েছিল, অন্যদিকে দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলর বেসামরিক নাগরিকদের "আশ্রয়কেন্দ্রের নিকট থাকার" নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।[44] গাজা উপত্যকার আশেপাশের সড়কগুলি আইডিএফ দ্বারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল,[49] এবং তেল আবিবের সড়কগুলিও অবরুদ্ধ করা হয়েছিল।[44]
আইডিএফ জানায় যে তারা ফাইটার জেট ব্যবহার করে গাজায় লক্ষ্যবস্তুতে হামলা শুরু করেছে, [43] এটি হামাসের ১৭টি সামরিক ঘাঁটি এবং চারটি অভিযান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (অপারেশনাল কমান্ড সেন্টার) আঘাত করেছে বলে জানা গেছে। [48] গাজা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ১১ তলাবিশিষ্ট ফিলিস্তিনি অট্টালিকাও হামলার শিকার হয়েছিল। সে ভবনের ছাদে হামাসের রেডিও স্টেশন ছিল। ইসরায়েল দুটি হাসপাতালেও হামলা চালায়। এ হামলায় একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক ও একজন শুশ্রূষাকারিণী নিহত হন। [44]
রাতারাতি ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ৪২৬টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। [51] [ গাজার বেইত হানুন শহরের বেশিরভাগ এলাকা সেদিন বিমান হামলার ফলে সমতল ভূমিতে রূপ নেয়, [52] এছাড়া গাজার আল-আমিন মুহাম্মদ মসজিদ ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। [53] [54] বিভিন্ন হাউজিং ব্লক, টানেল, হামাস কর্মকর্তাদের বাড়ি এবং ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী ভবন ওয়াতান টাওয়ারকেও লক্ষ্যবস্তুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। [55] [56] এদিন একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের ১৯ জন সদস্য (নারী ও শিশু সহ) নিহত হন; [57] বিমান হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানান যে তাদের এলাকায় কোনো "জঙ্গিদের" অবস্থান ছিল না এবং হামলার আগে তাদের সতর্কও করা হয়নি। [58]
১৯৭৩ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোষণা করে। [59] [60] আইডিএফ জানায় যে দুটি জিম্মি পরিস্থিতি "মীমাংসা" করা হয়েছে। [61] আইডিএফ জানায় যে তারা ফিলিস্তিনি বাহিনীর কাছ থেকে ২২টি অবস্থান সুরক্ষিত করেছে কিন্তু এখনও সেডরোট এবং কাফার আজা সহ আরও আটটি স্থানে লড়াই চলছে। একটি প্রধান সড়কে বন্দুকযুদ্ধের পর আশকেলনের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে একটি গাড়িতে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী নিহত হন। [62] ইসরায়েলি বাহিনী সেডরোট থানা পুনরুদ্ধার করে,এবং দশ যোদ্ধাকে হত্যা করে। [63] একই সময়ে, আরও ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ম্যাগেন শহরে প্রবেশ করেছে বলে জানা যায়। [64]
গাজা স্ট্রিপের কাছাকাছি বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, [62] [64] এবং নেতানিয়াহু নিখোঁজ এবং অপহৃত নাগরিকদের বিষয়ে সরকারের পয়েন্ট ম্যান হিসেবে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাল হিরশকে নিযুক্ত করেন। [65] আইডিএফ জানায় যে তারা প্রায় ৩,০০,০০০ সংরক্ষিত সৈন্য স্থল হামলার জন্য গাজার কাছাকাছি প্রস্তুত রেখেছে। [52]
সেদিন আইডিএফ পশ্চিম তীরে একটি লকডাউন আরোপ করেছিল। [66]
আইডিএফ রাতারাতি গাজা উপত্যকায় ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া শরণার্থী শিবির সহ ৫০০ টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে বলে জানা যায়, যার ফলে শিশু সহ "ডজনখানেক" হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। [67] আইডিএফ জানায় যে তারা গাজার সীমান্তের চারপাশে ইসরায়েলি শহরগুলির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। আইডিএফ জানায় সেডরোট-এ "জঙ্গিদের" বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। [68] হামাস বলেছে যে ইসরায়েল যদি "অগ্রসর সতর্কতা ছাড়াই বেসামরিক বাড়িঘরে" বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখে তবে তারা ইসরায়েলি জিম্মিদের "মৃত্যুদণ্ড" দেবে। [69]
এদিন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট গাজা উপত্যকায় একটি "সম্পূর্ণ" অবরোধ ঘোষণা দেন। এর ফলে ইসরায়েল গাজার অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবে এবং খাদ্য ও জ্বালানি প্রবেশে বাধা দেবে। তিনি মন্তব্য করেন যে "আমরা 'মানব প্রাণীর' বিরুদ্ধে লড়াই করছি এবং আমরা সেই অনুযায়ী আচরণ করছি।" [70] ইসরায়েলি জ্বালানি মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ পরে বলেন "একটি বিদ্যুতের সুইচ চালু করা হবে না, একটি কলও করতে দেওয়া হবে না, এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত একটি জ্বালানী ট্রাকও প্রবেশ করবে না।" [71] হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই আদেশকে "ঘৃণ্য" বলে অভিহিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে "যুদ্ধাপরাধ করার দায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।"[72] [73] আইডিএফ জানায় গাজা উপত্যকার আশেপাশের ১৫টি এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। [74]
হামাস এদিন বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের একটি টার্মিনাল, তেল আবিব এবং জেরুজালেমের দিকে রকেট ছুঁড়ে। [52]
ইসরায়েলি বাহিনী কাফার আযা অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে এবং সেখান থেকে হামাসের হামলায় নিহতদের মৃতদের সংগ্রহ করতে শুরু করে। তারা দাবি করে যে, হামলাকারীরা নিহতদের মৃতদেহ ধ্বংস করেছে, তাদের বাড়িতে নারী ও শিশুদের শিরশ্ছেদ করেছে। তারা ৪০ জন শিশুসহ প্রায় ১০০ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানায়। [75] [76] [77] [78] [79] [80] [81]
আইডিএফ জানায় যে তারা ৩,৬০,০০০ জন সংরক্ষিত সৈন্যকে গাজার কাছাকাছি মোতায়েন করেছে এবং গাজার আল-দারাজ এবং আল-ফুরকান এলাকার পাশাপাশি গাজা বন্দরে বিমান হামলা শুরু করেছে। আইডিএফ গাজা শহরের আল-কারামা এবং রিমাল এলাকাগুলিকেও ব্যাপকভাবে ধ্বংস করেছে। সে এলাকায় যেখানে হামাস-চালিত সরকারের মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া সংস্থা এবং সাহায্য সংস্থাগুলির অবস্থান ছিল। [82] ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলি গাজা ও মিশরকে সংযুক্তকারী রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়েও আঘাত করেছিল, যার ফলে রাফাহ ক্রসিং বন্ধ হয়ে যায় এবং গাজা চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। [83] খান ইউনিসে অবস্থিত হামাস নেতা মুহাম্মদ দেইফের পারিবারিক বাসভবনেও হামলা হয়, এতে তার বাবা, ভাই এবং অন্তত দুইজন আত্মীয় নিহত হয়। [82]
ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ঘোষণা করেন যে মন্ত্রণালয় বেসামরিক নিরাপত্তা দলকে, বিশেষ করে সীমান্ত সম্প্রদায়, মিশ্র ইহুদি-আরব শহর এবং পশ্চিম তীরের বসতিতে অবস্থানরত ইহুদিদের সশস্ত্র করার জন্য ১০,০০০ রাইফেল কিনছেএবং তা দ্রুত বিতরণ করবে।
হামাস যোদ্ধারা আশকেলনের একটি শিল্পাঞ্চলে প্রবেশ করে। সেখানে আইডিএফ-এর সাথে সংঘর্ষে তাদের অন্তত তিনজন সদস্য নিহত হয়। [82] এদিন তেল আবিব ও আশকেলনে রকেট ছোড়া হয়। [82]
ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকটি ভবনে আঘাত হানে এবং ধ্বংস করে দেয়, [84] ইসরায়েল দাবি করে যে এটি একটি অস্ত্র কারখানা এবং হামাসের প্রশিক্ষণ গ্রাউন্ড। [85]
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ গাদি আইজেনকোট এবং রন ডার্মারকে পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়ে মন্ত্রিসভার নেতৃত্বে ইসরায়েল একটি জরুরি যুদ্ধকালীন সরকার গঠন করে। [86]
এদিন আশকেলনে রকেট ছোড়া হয়। [82] সেডরোট শহরে এদিনও হামলা অব্যাহত থাকে।
গাজা উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি শেষ হয়ে যায়, এবং ইসরায়েল কর্তৃক গাজা উপত্যকা অবরোধের কারণে, সমস্ত গ্যাস এবং অন্যান্য ধরণের জ্বালানী সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। [88] [89]
গাজা সিটি বন্দরে সাদা ফসফরাস আর্টিলারি প্রজেক্টাইল দিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ করা হয়। [90] [91]
ইসরায়েল জানায় যে তারা হামাসের অভিজাত নুখবা বাহিনী, তাদের কমান্ড সেন্টার এবং হামাসের একজন সিনিয়র নৌ অপারেটিভের বাসভবনে বোমা হামলা চালিয়েছে। এ ভবনগুলো অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে। দুটি ছোট সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডারও বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। [71]
সেডরোট-এ রকেট হামলায় চারজন আহত হয়েছে এবং সাতটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়। [92]ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন ভবন এবং আশেপাশের এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে যায় এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায় যে গাজায় মৃতের সংখ্যা ১,৪৯৯ জনের বেশি পৌঁছেছে, যার মধ্যে ৪৪৭ জন শিশু এবং ২৪৮ জন মহিলা রয়েছেন। [93]
ইসরায়েলের জ্বালানি ও অবকাঠামো বিষয়ক মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন যে হামাসের হাতে অপহৃত জিম্মিরা নিরাপদে তাদের দেশে ফিরে না আসা পর্যন্ত গাজা অবরোধ তুলে নেওয়া হবে না। [94]
দিনের শুরুতে, আইডিএফ গাজা শহর সহ ওয়াদি গাজার উত্তরে অবস্থানরত বাসিন্দাদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার সতর্কতা জারি করে। তারা বাসিন্দাদের দক্ষিণ গাজার দিকে সরে যেতে নির্দেশ দেয়। [95] [96] উত্তর গাজা থেকে ১১ লাখ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশকে জাতিসংঘ অসম্ভব বলে অভিহিত করে। জাতিসংঘ একটি বিবৃতিতে গাজায় "বিধ্বংসী মানবিক পরিণতি" সম্পর্কে সতর্ক করে। [97] সরিয়ে নেওয়ার আদেশ জারি হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই, জাতিসংঘসহ [98] সেবা সংস্থাগুলোকে রাফাহতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। [95] এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস অথরিটি ফর রিফিউজি অ্যাফেয়ার্স উত্তর গাজার বাসিন্দাদের "নিজের বাড়িতে অবিচল থাকতে এবং দখলদারিত্বের দ্বারা পরিচালিত এই জঘন্য মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের মুখে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে" আহ্বান করে। [99] ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস একটি বিবৃতি জারি করে বলে যে, সরিয়ে নেওয়ার এ আদেশটি "আপত্তিজনক" এবং "চিকিৎসা সেবা এবং মানবতার উপর আক্রমণ"। [100] হামাস দাবি করে যে ইসরায়েলি বিমান হামলায় উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে আসা অন্তত ৭০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। [101]
সন্ধ্যায়, আইডিএফ জানায় যে তার স্থল বাহিনী গাজায় স্থানীয়ভাবে অভিযান শুরু করেছে। তারা বলেছে যে তারা হামাস "জঙ্গিদের" উপর হামলা করছে এবং তাদের আক্রমণের সময় ইসরায়েলি জিম্মিদের সন্ধান করছে। [102] [103]
ইসরায়েলের সতর্কতার পর গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাসিন্দারা পালাতে থাকেন। [104] আইডিএফ জানায় যে তারা হামাসের শীর্ষ কমান্ডার মুরাদ আবু মুরাদকে বিমান হামলায় হত্যা করেছে। [105] ইসরায়েল গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য ৬ ঘন্টার সময় বেঁধে দেয় এবং যাতায়াতের পথ নির্দিষ্ট করে দেয়।[106] তবে এদিনও গাজার বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা অব্যাহত থাকে।
গাজার সিভিল ডিভেন্সের সদরদপ্তরে ইসরায়েলি হামলায় ৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হন। [107]
ইসরায়েল গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করে। [108]গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেদিনের হামলায় খান ইউনিস, রাফাহ এবং দেইর-আল-বালাহ এলাকায় প্রায় ৭০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায়, যাদের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরাও রয়েছেন। [109]
গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ঘটনাকে ইসরায়েলি হামলা বলে অভিহিত করে, এবং৷ হামাস এ ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ বলে আখ্যা দেয়।[110] তারা এ ঘটনায় অন্তত ৫০০ জনের নিহত হওয়ার তথ্য জানায়। [111] তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এ ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে। আইডিএফ জানায়, ইসরায়েলের হাইফা শহরকে লক্ষ্য করে ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদের ছোঁড়া একটি লক্ষ্যচ্যুত ক্ষেপণাস্ত্র সে হাসপাতালে আঘাত করেছিল। [112] ইসলামি জিহাদের মুখপাত্র এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
৭ থেকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে একজন ১৩ বছর বয়সী শিশুসহ ১১ ফিলিস্তিনি যুবক অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়। [113] [114] [115]
সকালে, হিজবুল্লাহ শেবা ফার্মস অঞ্চলে রকেট ও শেল নিক্ষেপ করে; জবাবে আইডিএফ আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করে এবং দক্ষিণ লেবাননে একটি সামরিক ড্রোন পাঠায়। [116] [117] হামলার ফলে ভাঙা কাঁচের আঘাতে দুই লেবানীয় শিশু আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। [51]
মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে, একজন পুলিশ ইসরায়েলি পর্যটক এবং তাদের মিশরীয় গাইডদের উপর হামলা চালিয়ে দুই ইসরায়েলি এবং একজন মিশরীয়কে হত্যা করে এবং তৃতীয় একজন ইসরায়েলিকে আহত করে। পরে সে পুলিশ সদস্যকে মিশরীয় পুলিশ আটক করে। [118]
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ ১২ বিমানবাহী রণতরীকে ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ডের নেতৃত্বে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ড্যানিয়েল বাইম্যান ও আলেকজান্ডার পালমারের মতে, আক্রমণগুলি ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন সংক্ষেপে পিএলও) পতন এবং ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে প্রধান শক্তি কেন্দ্র হিসাবে হামাসের উত্থানকে প্রদর্শিত করে। তাঁরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, যে যদি স্থিতাবস্থা বজায় থাকে তবে ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার আরও পতন ঘটবে।[119] ঘটনাটি ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে, যা কিছু পর্যবেক্ষক ক্ষমতাসীন সরকারের অভ্যন্তরীণ ভিন্নমত, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলকে আরও গভীর করার প্রচেষ্টার উপর বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য দায়ী করেছেন,[120] কিছু ভাষ্যকার পিএলওকে একপাশে রেখে হামাসকে উত্থাপন করার জন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন[121] ও তাঁকে দায়ী হিসেবে বর্ণনা করেছেন।[122]
ইসরায়েলীয় বিশ্লেষক সেথ ফ্রান্টজম্যানের মতে, এই হামলা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতের একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিল। এটি গাজায় রকেট ছোঁড়া ও সীমান্ত আক্রমণ উভয়ের উল্লেখযোগ্য ব্যবপ্তি ও প্রসারণে উপনীত হয়েছিল। এই ঘটনাটি পূর্ববর্তী সংঘাত থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে সরে আসাকে চিহ্নিত করে, যা সাধারণত উত্তেজনার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির সঙ্গে পর্যায়ক্রমে অগ্রগতি অনুসরণ করে।[123] এটিকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ, ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলা,[124] ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের রমজান আক্রমণ, ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের পার্ল হারবার আক্রমণ[125] এবং তেত আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করা হয়।[126][127][128] ভিয়েত কং তেত আক্রমণের মতো, হামাসের আক্রমণ ছুটির দিন সকালে ঘটেছিল, আক্রমণ "একযোগে সর্বত্র" হয়েছে বলে মনে হয়েছিল এবং গেরিলা বাহিনীর পক্ষে সম্ভব বলে মনে করা যায় না এমন ক্ষমতা প্রদর্শন করা হয়েছিল।[129]
দ্য টাইমস অব ইসরায়েল-এর একটি বিশ্লেষণে, সংবাদপত্রটি লিখেছে যে "হামাস সহিংসভাবে বিশ্বের দৃষ্টি ফিলিস্তিনিদের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছে এবং ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে মার্কিন-মধ্যস্থতাতে একটি যুগান্তকারী চুক্তি অর্জনের গতিতে মারাত্মক আঘাত করেছে।"[130] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে যে ইসরায়েল ও সৌদির মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা ম্লান হয়ে গিয়েছে, সৌদি আরবের বিবৃতি উদ্ধৃত করে যে দেশটি ক্রমাগত "দখলদারিত্ব, ফিলিস্তিনি জনগণের বঞ্চিত ও তাদের ন্যায্য অধিকার এবং এর পবিত্রতার বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত উস্কানির পুনরাবৃত্তির ফলে পরিস্থিতির বিস্ফোরণের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছিল।"[131][132] আনন্দবাজার পত্রিকা -এর একটি বিশ্লেষণে, সংবাদপত্রটি লিখেছে যে " ইজ়রায়েল এবং সৌদি আরবের" মধ্যে শান্তি চুক্তির সূত্রে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বা পশ্চিম তোরে যে বিশেষ ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল, সেই সুযোগ হাতছাড়া হল হামলার কারণে।"[133]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.