আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে ফয়সাল ইবনে তুর্কি ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল সৌদ (আরবি: عبد العزيز بن عبد الرحمن آل سعود) ১৫ জানুয়ারি ১৮৭৬[1] – ৯ নভেম্বর ১৯৫৩) আরব বিশ্বে সাধারণভাবে আবদুল আজিজ[2] বা ইবনে সৌদ[3] বলে পরিচিত। তিনি আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা ও সৌদি আরবের প্রথম বাদশাহ।[4]

দ্রুত তথ্য আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ, সৌদি আরবের বাদশাহ ...
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ
Thumb
বাদশাহ আবদুল আজিজ
সৌদি আরবের বাদশাহ
রাজত্ব২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ – ৯ নভেম্বর ১৯৫৩
বায়াত২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩২
উত্তরসূরিসৌদ বিন আবদুল আজিজ
নজদ ও হেজাজের বাদশাহ
রাজত্ব৮ জানুয়ারি ১৯২৬ – ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩২
পূর্বসূরিআলী বিন হুসাইন
নজদের সুলতান
রাজত্ব৩ নভেম্বর ১৯২১ – ২৯ জানুয়ারি ১৯২৭
নজদ ও হাসার আমির
রাজত্ব১৩ জানুয়ারি ১৯০২ – ৩ নভেম্বর ১৯২১
জন্ম(১৮৭৫-০১-১৫)১৫ জানুয়ারি ১৮৭৫
রিয়াদ, নজদ আমিরাত
মৃত্যু৯ নভেম্বর ১৯৫৩(1953-11-09) (বয়স ৭৮)
তাইফ, সৌদি আরব
সমাধি
আল আউদ কবরস্থান, রিয়াদ, সৌদি আরব
দাম্পত্য সঙ্গী
দেখুন
  • ওয়াজা বিনতে মুহাম্মদ
    তারফা বিনতে আবদুল্লাহ
    লুলুয়া বিনতে সালিহ
    আল জাওহারা বিনতে মুসাইদ
    অন্যান্য
বংশধর
পূর্ণ নাম
আবদুল আজিজ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে ফয়সাল ইবনে তুর্কি ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সৌদ
রাজবংশআল সৌদ
পিতাআবদুর রহমান বিন ফয়সাল
মাতাসারাহ আল সুদাইরি
ধর্মইসলাম (সুন্নি)
বন্ধ

ইবনে সৌদ ১৯০২ সালে রিয়াদে তার পূর্বপুরুষদের জয় করতে সক্ষম হন। ১৯২২ সালে তিনি নজদে নিজের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং ১৯২৫ সালে হেজাজ জয় করেন। তার বিজিত অঞ্চলগুলো নিয়ে ১৯৩২ সালে সৌদি আরব রাজ্য গঠন করা হয়। বাদশাহ থাকাকালীন সময়ে সৌদি আরবে তেল আবিষ্কার হয় এবং উন্নতির সূচনা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সৌদি আরব বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল রপ্তানিকারী দেশ হয়ে উঠে। তার অনেক সন্তান ছিল। তাদের মধ্যে ৪৫ জন ছেলে।[5] তার পরবর্তী সৌদি বাদশাহ সকলেই তার সন্তানদের মধ্য থেকে মনোনীত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যযুক্তরাষ্ট্রের সাথে তিনি সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন ও পরিবার

ইবনে সৌদ ১৮৭৬ সালের ১৫ জানুয়ারি মধ্য আরবের নজদ অঞ্চলের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন।[6][7] দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্রের শেষ শাসক আবদুর রহমান বিন ফয়সাল ছিলেন তার বাবা। আল সৌদ তথা তার পরিবার মধ্য আরবে পূর্বের ১৩০ বছর ধরে শক্তিশালী ছিল। তারা ওয়াহাবি মতাদর্শের সমর্থক ছিলেন। সৌদিরা আরব উপদ্বীপের অনেকাংশ জয় করে প্রথম সৌদি রাষ্ট্র গঠন করেছিল। পরে ১৯ শতকের প্রথমদিকে উসমানীয় শাসনাধীন মিশরের হাতে তা ধ্বংস হয়ে যায়। [8] ইবনে সৌদের মা সারাহ আল সুদাইরি ছিলেন সুদাইরি গোত্রের সদস্য[9][10]

১৮৯০ সালে আল সৌদের দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ আল রশিদ রিয়াদ জয় করে নেয়। এসময় ইবনে সৌদ ১৫ বছর বয়স্ক ছিলেন।[11] তিনি ও তার পরিবার বেদুইন গোত্র আল মুরাহর কাছে আশ্রয় নেন। পরে আল সৌদের সদস্যরা কাতার চলে যান এবং সেখানে দুই মাস অবস্থান করেন।[12] তাদের পরবর্তী গন্তব্য বাহরাইনে তারা সংক্ষিপ্ত সময় ছিলেন। শেষপর্যন্ত তারা কুয়েতে অবস্থান নেন এবং এক দশকের মত সেখানে অবস্থান করেন।[12]

১৯০১ সালের বসন্তে ইবনে সৌদ ও তার সৎ ভাইসহ কিছু আত্মীয় নজদে অভিযানে বের হন। আল রশিদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গোত্র তাদের লক্ষ্য ছিল। এসব অভিযান লাভজনক দেখা দেয়ার পর এতে আরো অনেকেই অংশ নেয়। অভিযানকারীদের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। তবে পরের মাসগুলোতে তা কমে গিয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

হেমন্তে দলটি ইয়াবরিন মরূদ্যানে শিবির স্থাপন করে। রমজান চলার সময় তারা রিয়াদ আক্রমণ করে তা রশিদিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯০২ সালের ১৫ জানুয়ারি ইবনে সৌদ চল্লিশ জনের একটি দল নিয়ে দুর্গ আক্রমণ করে তা দখল করে নেন।[13] শহরের রশিদি গভর্নর আজানকে হত্যা করা হয়। সৌদিদের দুর্গ দখলের এই ঘটনা তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্রের সূচনা করে।

ক্ষমতায় আরোহণ

Thumb
বাদশাহ ইবনে সৌদের চিঠি; ১৯৩০ সালে পারস্য উপসাগরে নিযুক্ত ইউকের প্রধানকে।

রিয়াদ জয়ের পর আল সৌদের অনেক প্রাক্তন সমর্থক ইবনে সৌদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার সাথে যোগ দেয়। ইবনে সৌদ ক্যারিশমাটিক নেতা ছিলেন। তিনি তার লোকদের অস্ত্র সরবরাহ করেন। পরের দুই বছর তিনি ও তার বাহিনী নজদের প্রায় অর্ধেক রশিদিদের কাছ হেকে ছিনিয়ে নেয়।

১৯০৪ সালে আল রশিদের সদস্য আবদুল আজিজ বিন মুতিব উসমানীয় সাম্রাজ্যের কাছে সামরিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা চান। উসমানীয়রা সেনাপ্রেরণ করে তাদের সহায়তা করে। ১৯০৪ সালের ১৫ জুন ইবনে সৌদের বাহিনী উসমানীয়-রশিদি জোট বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে পরাজিত হয়।

তার বাহিনী পুনরায় জড়ো হয় এবং উসমানীয়দের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে শুরু করে। পরের দুই বছরে তিনি প্রতিপক্ষের রসদ বন্ধ করে দিতে সক্ষম হন ফলে তারা পিছু হটে। রাওদাত মুহান্নার জয়ের মাধ্যমে ১৯০৬ সালের অক্টোবরের শেষ নাগাদ নজদ ও কাসিম অঞ্চলে উসমানীয়দের উপস্থিতির অবসান ঘটে।

১৯১২ সালে ইবনে সৌদ নজদ ও আরবের পূর্ব উপকূলে তার অভিযান সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ইখওয়ান নামক বাহিনী গঠন করেন। একই বছর যাযাবর বেদুইনদেরকে বিভিন্ন কলোনিতে বসতি স্থাপন করার নীতি চালু করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার ইবনে সৌদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ব্রিটিশ প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ারকে বেদুইনরা স্বাগত জানায়।[14] আরব অঞ্চল জয় করে স্থিতিশীল করতে সক্ষম অন্যান্য আরব শক্তিগুলোর সাথেও অনুরূপ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। ১৯১৫ সালের ডিসেম্বর দারিনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে আল সৌদের অধীনস্থ ভূখণ্ড ব্রিটিশ নিরাপত্তার অধীনে আসে এবং সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে সৌদি রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যাওয়া হয়।[15] বিনিময়ে ইবনে সৌদ উসমানীয়দের মিত্র রশিদিদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে থাকেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর প্রথমে হেজাজের আমির শরিফ হুসাইন বিন আলিকে সমর্থন দিয়েছিল এবং ১৯১৫ সালে তার কাছে টি ই লরেন্সকে প্রতিনিধি করে পাঠানো হয়। সৌদি ইখওয়ান হুসাইনের সাথে সংঘর্ষ শুরু করে। দারিনের পর তিনি অস্ত্র ও রসদ মজুদ করেন যার মধ্যে মাসিক ৫০০০ পাউন্ড অর্থ ছিল।[16] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইবনে সৌদ ব্রিটিশদের কাছ থেকে আরো সাহায্য পান। ১৯২০ সালে তিনি আল রশিদের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযান শুরু করেন। ১৯২২ সাল নাগাদ তারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।

আল রশিদের পরাজয়ের ফলে সৌদি অঞ্চল দ্বিগুণ হয়। কারণ হাইলের যুদ্ধের পর ইবনে সৌদ ইকাব বিন মুহায়ার নেতৃত্বে আল জওফ জয়ের জন্য যোদ্ধা প্রেরণ করেন। এর ফলে ব্রিটিশদের সাথে আরো সুবিধাজনক চুক্তি করতে সক্ষম হন। ১৯২২ সালে উকাইরে তাদের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ব্রিটিশরা তার অনেক অঞ্চল অর্জন মেনে নেয়। বিনিময়ে ইবনে সৌদ অত্র এলাকায় ব্রিটিশ অঞ্চলগুলোকে, বিশেষত উপসাগরীয় এলাকাগুলো মেনে নিতে সম্মত হন। ব্রিটিশ ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য যাতায়াতের জন্য এসব এলাকা ব্রিটিশদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

১৯২৫ সালে ইবনে সৌদের বাহিনী শরিফ হুসাইনের কাছ থেকে মক্কা জয় করে নেন। ফলে ৭০০ বছর ধরে চলা হাশিমি শাসনের অবসান ঘটে। ১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি মক্কা, মদিনাজেদ্দার নেতৃস্থানীয়রা ইবনে সৌদকে হেজাজের বাদশাহ হিসেবে ঘোষণা করেন।[17] ১৯২৭ সালের ২০ মে ব্রিটিশ সরকার জেদ্দার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর মাধ্যমে দারিনের চুক্তি বিলুপ্ত হয় এবং ব্রিটিশরা ইবনে সৌদকে নজদহেজাজের স্বাধীন শাসক হিসেবে মেনে নেয়।

আন্তর্জাতিক সমর্থন ও স্বীকৃতির মাধ্যমে ইবনে সৌদ তার ক্ষমতা সংহত করতে থাকেন। ১৯২৮ সাল নাগাদ তার বাহিনী মধ্য আরবের অধিকাংশ জয় করে নেয়। তবে একসময় অভিযানে আপত্তি করায় ইখওয়ানআল সৌদের মধ্যে সম্পর্কে ভাঙন ধরে। লন্ডনের সাথে চুক্তিবদ্ধ মধ্য আরবের অংশগুলো সৌদি নিয়ন্ত্রণে ছিল না। উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে ১৯২৭ সালে একপর্যায়ে ইখওয়ান বিদ্রোহ করে। দুই বছর লড়াইয়ের পর ১৯২৯ সালে সাবিলার যুদ্ধের মাধ্যমে ইবনে সৌদ তাদের দমন করতে সক্ষম হন।

১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবনে সৌদ তার শাসনাধীন অঞ্চলগুলোকে সৌদি আরব হিসেবে একীভূত করেন এবং নিজেকে এর বাদশাহ ঘোষণা করেন।[18] ১৯৩৮ সালে মাসমাক দুর্গ থেকে মুরাব্বা প্রাসাদে তার দরবার স্থানান্তর করা হয়।[19] ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এই প্রাসাদ তার বাসস্থান ও সরকারি দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।[20]

তেল ও ইবনে সৌদের শাসন

১৯৩৮ সালে স্ট্যান্ডার্ড অয়েল অব নিউইয়র্কের আমেরিকান ভূতাত্ত্বিকরা সৌদি আরবে তেলের সন্ধান পায়। নতুন পাওয়া তেলসম্পদ ইবনে সৌদের জন্য ব্যাপক প্রভাব ও ক্ষমতা বয়ে আনে। তিনি অনেক যাযাবর গোত্রকে পারস্পরিক লড়াই বন্ধ করে স্থায়ী বসতি স্থাপন করত বাধ্য করেন। তিনি ওয়াহাবিবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করেছেন। পূর্বে থাকা উত্তম অনেক ধর্মীয় প্রথা বাদ দেয়া হয়। ১৯২৬ সালে মক্কাগামী মিশরীয়দের একটি দল শিঙা বাজানোর কারণে সৌদি বাহিনী তাদের মারধর করলে ইবনে সৌদ মিশর সরকারের কাছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯২৭ সালে ইবনে সৌদ শুরা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এর সদস্য বৃদ্ধি করে ২০জন করা হয় এবং বাদশাহর ছেলে ফয়সাল বিন আবদুল আজিজকে এর সভাপতি করা হয়।[21]

বৈদেশিক যুদ্ধ

ইবনে সৌদ সৌদি আরবের কাছাকাছি গোত্রগুলোর কাছ থেকে আনুগত্য আদায়ে সফল ছিলেন। উসমানীয় সাম্রাজ্যের সময়কার সবচেয়ে প্রভাবশালী ও রাজকীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত আল ফারাইহাতের প্রিন্স শেখ রশিদ আল খুজাইয়ের সাথে তিনি মজবুত সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শরিফ হুসাইনের আগমনের আগে শেখ রশিদ ও তার গোত্র পূর্ব জর্ডান নিয়ন্ত্রণ করত। ইবনে সৌদ প্রিন্স রশিদ ও তার অনুসারীদেরকে হুসাইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সমর্থন দেন।[22]

১৯৩৫ সালে ইজ্জউদ্দিন আল কাসসামকে প্রিন্স রশিদ সমর্থন দেন। আল কাসসাম ও তার অনুসারীরা জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। ১৯৩৭ সালে তারা জর্ডান ত্যাগ করতে বাধ্য হলে প্রিন্স রশিদ, তার পরিবার ও অনুসারীদের একটি দল সৌদি আরব চলে আসে। রশিদ সেখানে বেশ কয়েকবছর ইবনে সৌদের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন।[22][23][24][25]

পরের বছরগুলো

Thumb
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের (ডানে) সাথে বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের বৈঠক। পাশে দোভাষী কর্নেল বিল এডি উপস্থিত রয়েছেন। ইয়ল্টা সম্মেলনের পর ইউএসএস কুইনসি জাহাজে এই বৈঠক হয়। পাশে দাঁড়ানো ফ্লিট এডমিরাল উইলিয়াম ডি লেহি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইবনে সৌদ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তিনি মিত্রশক্তির পক্ষের সমর্থক ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।[26] তবে ১৯৩৮ সালে ইরাকে একটি প্রধান ব্রিটিশ পাইপলাইনের উপর আক্রমণে জার্মান রাষ্ট্রদূত ফ্রিটজ গ্রোবার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে ইবনে সৌদ তাকে আশ্রয় দেন।[27] ১৯৩৭ থেকে তিনি ব্রিটিশদের কম গুরুত্ব দিচ্ছেন এমন বলা হচ্ছিল।[28]

যুদ্ধের শেষপর্যায়ে ইবনে সৌদ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে সাক্ষাত করেন। তন্মধ্যে ১৯৪৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের সাথে সাক্ষাত তিন দিন স্থায়ী হয়।[29] তাদের এই বৈঠক সুয়েজ খালের গ্রেট বিটার লেকে ইউএসএস কুইনসি জাহাজে অনুষ্ঠিত হয়।[29][30] দুই দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কের ভিত্তি এখানে নির্মিত হয়েছিল।[31]

১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কায়রোর পঞ্চাশ মাইল দক্ষিণে ফাইয়ুন মরূদ্যানের গ্র্যান্ড হোটেল ডু লাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের সাথে তার বৈঠক হয়।[32] সৌদিরা এতে ফিলিস্তিন সমস্যার উপর গুরুত্বারোপ করে। তবে এই আলোচনা সফল হয়নি।

১৯৪৮ সালে সৌদি আরব ১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধে অংশ নেয়। তবে সৌদি আরবের অবদান প্রতীকি হিসেবে বিবেচিত হয়।[26]

রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিলাসবহুল উদ্যান, গাড়ি, প্রাসাদের ব্যাপারে আগ্রহী হলেও ইবনে সৌদ পারস্য উপসাগর থেকে রিয়াদ হয়ে জেদ্দা পর্যন্ত রেলপথ নিয়ে আগ্রহ দেখান। তার অনেক উপদেষ্টা একে অনর্থক হিসেবে দেখেছিলেন। এদিকে তেল কোম্পানি আরামকো ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে রেলপথ নির্মাণ করে। তেলের মুনাফা থেকে এর ব্যয় নির্বাহ করা হয়। ১৯৫১ সালে রেলপথের নির্মাণ সমাপ্ত হয় এবং ইবনে ইবনে সৌদের মৃত্যুর পর তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার শুরু হয়। এর ফলে রিয়াদের পক্ষে আধুনিক শহর হয়ে উঠা সক্ষম হয়। তবে ১৯৬২ সালে সড়ক নির্মাণ হলে রেলপথ যাত্রী হারা হয়ে যায়।[33]

ব্যক্তিগত জীবন

Thumb
১৯৩৪ সালে ইবনে সৌদ
Thumb
ইবনে সৌদ ও ইরাকের বাদশাহ প্রথম ফয়সাল, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ।

ইবনে সৌদ বিভিন্ন গোত্রে ২২ টি বিয়ে করেছেন। তার সন্তান সংখ্যা প্রায় একশত এবং তাদের মধ্যে ৪৫ জন ছেলে রয়েছে।

পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক

ইবনে সৌদ তার ফুফু জাওহারা বিনতে ফয়সালের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি ইবনে সৌদের গুরুত্বপূর্ণ প্রেরণাদাতা ছিলেন এবং তাকে তাদের পারিবারিক ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের জন্য ইবনে সৌদকে কুয়েত থেকে নজদ ফেরার উৎসাহ যুগিয়েছেন। জাওহারা ইসলামের উপর অনেক বেশি শিক্ষিত ছিলেন এবং ইবনে সৌদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত উপদেষ্টাদের অন্যতমও ছিলেন। ইবনে সৌদ তার কাছ থেকে সাবেক শাসকদের অভিজ্ঞতা এবং গোত্র ও ব্যক্তির ঐতিহাসিক ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। বাদশাহ ইবনে সৌদের সন্তানরাও জাওহারাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। ১৯৩০ সালে তিনি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইবনে সৌদ প্রতিদিন তার সাথে সাক্ষাত করতেন।[34]

ইবনে সৌদ তার বড় বোন নুরা বিনতে আবদুর রহমানের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ইবনে সৌদের মৃত্যুর কয়েক বছর পূর্বে নুরা মারা যান।[35]

হত্যাচেষ্টা

১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ হজ পালনের সময় কয়েকজন সশস্ত্র লোক বাদশাহ ইবনে সৌদকে হত্যার চেষ্টা করে।[36] তবে তিনি হামলায় অক্ষত ছিলেন।[36]

দৃষ্টিভঙ্গি

রাষ্ট্র ও জনগণের মূল্যবোধ সম্পর্কে ইবনে সৌদ বলছেন “আমাদের রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য দুটি বিষয় অপরিহার্য...ধর্ম ও পূর্বপুরুষদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অধিকার।"[37]

আমানি হামদানের মতে নারী শিক্ষা বিষয়ে ইবনে সৌদের আচরণ উৎসাহজনক। সেন্ট জন ফিলবির সাথে সাক্ষাতে ইবনে সৌদ বলেছিলেন "নারীদের জন্য পড়ালেখা অনুমতি রয়েছে।"[38]

তার দুই ছেলে, ভবিষ্যত বাদশাহ সৌদ ও তার পরবর্তী বাদশাহ ফয়সালের প্রতি তার শেষ বক্তব্য ছিল, "তোমরা ভাই, ঐক্যবদ্ধ হও।"

মৃত্যু ও জানাজা

১৯৫৩ সালের অক্টোবর বাদশাহ ইবনে সৌদ হৃদযন্ত্রের সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।[39] সেবছরের ৯ নভেম্বর (২ রবিউল আওয়াল ১৩৭৩ হিজরি) তাইফে প্রিন্স ফয়সালের প্রাসাদে তিনি মারা যান।[6][40][41] তাইফের আল হাওয়িয়ায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রিয়াদের আল আউদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।[6][42]

প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট জন ফস্টার ডুলাস বলেছেন যে একজন মুখপাত্র হিসেবে তিনি তার অর্জনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।[43]

সম্মাননা

ইবনে সৌদ ১৯৩৫ সালে অর্ডার অব দ্য বাথ,[44] ১৯৪৭ সালে লিজিওন অব মেরিট ও ১৯৫২ সালে অর্ডার অব মিলিটারি মেরিট (হোয়াইট ডেকোরেশনসহ) লাভ করেছেন।[45]

আরও দেখুন

  • কিং অব দ্য স্যান্ডস (২০১২-এর চলচ্চিত্র) - নাজদাত আনজৌর পরিচালিত ইবনে সৌদের জীবনভিত্তিক চলচ্চিত্র

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.