জাতিসংঘ ২০২২ সালকে আন্তর্জাতিক মৎস্য ও কৃষিশিল্প বছর হিসাবে ঘোষণা করে।[1]২০২২ সালে প্রায় সমস্ত কোভিড-১৯ এর জন্য আরোপিত বিধিনিষেধ অপসারণ করা হয় এবং বেশিরভাগ দেশে আন্তর্জাতিক সীমানা পুনরায় চালু করা হয়। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর টিকা প্রদান অব্যাহত ছিল। মহামারী থেকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অব্যাহত ছিল, যদিও অনেক দেশ একটি চলমান মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়। প্রতিক্রিয়া হিসাবে, অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সুদের হার ল্যান্ডমার্ক স্তরে উন্নীত করে। [2] ২০২২ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা আট বিলিয়নে পৌঁছায়। যদিও এই বছরটি দুটি বিধ্বংসী আটলান্টিক হারিকেন ( ফিওনা ও ইয়ান ) এবং এই শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো অসংখ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী ছিল। বছরের শেষের দিকে ওপেনএআই প্রথমবারের মত জনসাধারণের জন্য চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত করে। এর মাধ্যমে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয় । ২০২৩-এ এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, একইসাথে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ এফটিএক্সের পতন ঘটে।
অনেক যুদ্ধ এবং সশস্ত্র সংঘাত ২০২২ সালকে প্রভাবিত করেছিল। মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত বৃদ্ধি এবং টাইগ্রে যুদ্ধ তাদের অঞ্চলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির উপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং প্রতিটিতে ১০,০০০ জনেরও বেশি মৃত্যু ঘটে। ২০২২ সাল ইউক্রেনে রাশিয়ান আক্রমণের জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ইউরোপের বৃহত্তম সশস্ত্র সংঘাত। রাশিয়ার আক্রমণের ফলে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ ইউক্রেনীয় (৮০ লক্ষ অভ্যন্তরীণভাবে উচ্ছেদকৃত জনগোষ্ঠী এবং ৭৭ লক্ষ শরণার্থী ) শরণার্থীতে পরিণত হন। ফলে রাশিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এসময় পারমাণবিক হুমকির জন্ম হয়। রাশিয়া থেকে শত শত কোম্পানি তাদের কার্যক্রম প্রত্যাহার করে নেয় এবং প্রধান ক্রীড়া আয়োজনগুলো থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া হয়।
৫ জানুয়ারী - কাজাখস্তানে২০২২ কাজাখ অস্থিতিশীলতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী আসকার মামিনের মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে। প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ কাজাখস্তানের নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নুরসুলতান নজরবায়েভকে অপসারণ করেন, যিনি ব্যাপকভাবে দেশের প্রধান শক্তি হিসাবে বিবেচিত। [6][7][8]
৬ জানুয়ারী - কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতি টোকায়েভের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কাজাখস্তানে একটি "শান্তিরক্ষা" মিশন মোতায়েন করি হয়, যার মধ্যে রাশিয়ান প্যারাট্রুপার ছিল। [9]
১৬ জানুয়ারী - বিশ্বের ১ নং টেনিস চ্যাম্পিয়ন নোভাক জোকোভিচকেকোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কিত একটি উচ্চ-প্রোফাইল আইনি মামলার কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে নির্বাসিত করা হয়। ফলে তিনি ২০২২ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি । [15][16][17]
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় আনার কারণে মাদাগাস্কার, মালাউই এবং মোজাম্বিকে ১১৫ জনের মৃত্যু হয়।এর কয়েকদিন পর মাদাগাস্কারে ধারাবাহিক বন্যায় ১১ জনের মৃত্যু হয় । [18][19]
বুর্কিনা ফাসোতে একটি অভ্যুত্থানের রাষ্ট্রপতি রচ কাবোরে ক্ষমতা হারান। বুরকিনাবের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের কারণ হিসেবে দেশের অভ্যন্তরে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে। [20][21]
২৮ জানুয়ারী - কোভিড-১৯ মহামারী: বিশ্বব্যাপী পরিচালিত টিকার সংখ্যা ১০০০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। [22]
ফেব্রুয়ারি
৩ ফেব্রুয়ারি - ইসলামিক স্টেট নেতা আবু ইব্রাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাশি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়াযর আটমে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময় নিহত হন । [23]
৪ ফেব্রুয়ারি - চীন এবং রাশিয়া ন্যাটো সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে। দেশ দুটি অকাস নিরাপত্তা চুক্তি সম্পর্কে "গুরুতর উদ্বেগ" প্রকাশ করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। [24]
৫ ফেব্রুয়ারি - ঘূর্ণিঝড় বাটসিরাইয়ের প্রভাবে মাদাগাস্কার, মরিশাস এবং রিইউনিয়ন জুড়ে মোট ১২৩ জন প্রাণ হারান।দুই সপ্তাহ পরে ক্রান্তীয় ঝড় আনায় একই অঞ্চলে ১১৫ জনের মৃত্যু হয়। [26]
৯ ফেব্রুয়ারি - ১৯৯৭ সালের পর যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের জয়েন্ট ইউরোপিয়ান টরাসে ফিউশন শক্তির সবচেয়ে বড় অগ্রগতি সাধিত হয়। সেখানে পাঁচ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে ৫৯ মেগাজুল (১১ মেগাওয়াট শক্তি) উৎপাদিত হয় যা আগের রেকর্ডের দ্বিগুণেরও বেশি। [28]
২৬ ফেব্রুয়ারি - ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন: ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা সুইফট পেমেন্ট সিস্টেম থেকে রাশিয়ান ব্যাঙ্কগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের উপর ব্যবস্থা নিতে এবং রাশিয়ান অভিজাতদের উপর আরও বিধিনিষেধ আরোপ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ায় একটি আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়। [32][33]
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ: পুতিন রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে ন্যাটোর 'আগ্রাসী বক্তব্যের' প্রতিক্রিয়ায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে 'বিশেষ সতর্ক' থাকার নির্দেশ দেন। [34] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের নিন্দা জানায়। [35]
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন: ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের আকাশসীমায় রুশ ফ্লাইট নিষিদ্ধ করে। [36]
একটি সাংবিধানিক গণভোটে , বেলারুশ তার অ-পারমাণবিক অবস্থা প্রত্যাহার করে এবং রাশিয়ান বাহিনীকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় প্রদান করার অনুমতি দেয়। [37][38]
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকারি প্যানেল ( আইপিসিসি) জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অংশ প্রকাশ করে। এটি উপসংহারে পৌঁছে যে অনেক প্রভাব "অপরিবর্তনীয়" হওয়ার পথে। [39][40]
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন: রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা কোনো সমাধান ছাড়াই প্রথম দফা শান্তি আলোচনার জন্য বেলারুশ-ইউক্রেন সীমান্তে মিলিত হন। [41]
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ: ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা এবং উয়েফা রাশিয়ান ক্লাব এবং জাতীয় দলের সব ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ স্থগিত করে। [42]
২০২২ রাশিয়ান আর্থিক সঙ্কট: সুইজারল্যান্ড , মোনাকো , সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়া রাশিয়ার উপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যার মধ্যে রয়েছে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ প্রবর্তন এবং সম্পদ জমা রাখা যা একটি অভূতপূর্ব পদক্ষেপ ছিল। [43][44][45]