শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
সিলেটি ভাষা
ইন্দো-আর্য পরিবারের ভাষা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
সিলেটি ভাষা বা সিলোটি ভাষা (সিলেটি নাগরি: ꠍꠤꠟꠐꠤ silɔʈi) বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এবং ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকা ও হোজাই জেলায় প্রচলিত একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সিলেটি ভাষার ভিত্তি পূর্বাঞ্চলীয় হওয়ায় এবং বাংলা ভাষার প্রমিত রীতির ভিত্তি নদীয়া তথা পশ্চিমাঞ্চলীয় আঞ্চলিক বাংলা হওয়ায়, বাংলা ভাষার মূল রীতির সাথে এর যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়।[৩][৪][৫] অনেক ভাষাবিদ এটিকে বাংলার উপভাষা হিসেবে বিবেচনা করেন, অনেকে এটিকে একটি স্বাধীন ভাষা বলে মনে করেন।
Remove ads
Remove ads
নাম
বৃহত্তর সিলেট জেলার নাম থেকে সিলেটি নামটির উৎপত্তি, যা এই অঞ্চলের উপভাষা বা ভাষাকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।[৬] গ্রিয়ারসনের (১৯০৩) মত অনুসারে, সিলেটের নাম অনুসারে ইউরোপীয়রা এখানকার স্থানীয় ভাষাকে সিলেটিয়া নামে অভিহিত করত।[৭] যদিও সেই সময়ের ভাষাভাষীরা এটিকে জৈন্তিয়াপুরি, পূর্ব শ্রীহট্টীয়া বা উজানিয়া হিসেবে ডাকত।[৭]
সিলেটি ভাষা সিলেট্টি, সিলেটি বাংলা, ছিলটি, সিলোটীয়া ইত্যাদি নামেও পরিচিত।[৮]
Remove ads
ইতিহাস
এ ভাষার প্রচলন শুধু সিলেটেই সীমাবদ্ধ নয়, ভারতের আসাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের বহু সংখ্যক লোকের মুখের ভাষা সিলটী। গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল ও অধ্যাপক মুহম্মদ আসাদ্দর আলীর মতে জটিল সংস্কৃত-প্রধান বাংলা বর্ণমালার বিকল্প লিপি হিসেবে ‘সিলটী নাগরী’ লিপির উদ্ভাবন হয়েছিল খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। গবেষকদের ধারণা, ইসলাম প্রচারক সুফী দরবেশ এবং স্থানীয় অধিবাসীদের মনের ভাব বিনিময়ের সুবিধার জন্যে নাগরী লিপির উদ্ভাবন হয়েছিল। এই নাগরী বা সিলেটি ভাষা শুধু ভারত বা বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সিলেট অঞ্চল এবং ভারত ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ভাষা ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাত লক্ষেরও বেশি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Remove ads
বর্ণমালা

সিলেটে প্রাচীনকাল হতে বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের মত বাংলা লিপিতে লেখালেখি হলেও মধ্যযুগে ইসলামের আগমনের পর বাংলার পাশাপাশি সিলেটি নাগরী লিপি প্রচলিত হয়। তবে বর্তমানে নাগরী লিপি তেমন চোখে পড়ে না, লেখার জন্য এখন শুধু বাংলা বর্ণমালাই ব্যবহৃত হয়। ভারতের বিহার রাজ্যের কৈথী লিপির সঙ্গে সিলেটি নাগরী লিপির সম্পর্ক রয়েছে। যদিও এর প্রকৃত উৎপত্তি সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। তবে সর্বপ্রাচীন খোঁজ পাওয়া পাণ্ডুলিপিটি আনুমানিক ১৫৪৯ অথবা ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে লেখা। (যদিও পাণ্ডুলিপিতে তারিখ লিপিবদ্ধ ছিল, কিন্তু লেখা থেকে তা পরিষ্কার নয়)
সিলেটি নাগরী লিপিতে ৩৩টি হরফ বা বর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে স্বরবর্ণ ৫টি, ব্যঞ্জনবর্ণ ২৭টি, অযোগবাহবর্ণ বা ধ্বনিনির্দেশক চিহ্ন ১টি।
টোন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সিলেটি একটি টোনাল উপভাষা। ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহ সাধারণত টোনাল হয় না। সিলেটিতে দু’রকমের টোনাল বৈপরীত্য আছে: মহাপ্রাণতা লোপ পাওয়ার দরুন উচ্চ টোনের উদ্ভব এবং অন্যত্র সমতল বা নিরপেক্ষ টোন। [৯]
ধারণা করা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলোর মহাপ্রাণতা লোপ পাওয়ার ফলে এই টোনের উদ্ভব হয়েছে। সিলেটি ভাষার সহাবস্থানের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে অন্যান্য তিব্বতি-বর্মী ভাষার সঙ্গে যেমন ককবরক, রেয়াঙের বিভিন্ন উপভাষা যেগুলো টোনাল প্রকৃতির। যদিও ওই সমস্ত টোনাল ভাষা থেকে আভিধানিক উপাদান সরাসরি ঋণ করার কোনও প্রমাণ নেই, তথাপি ওই সমস্ত তিব্বতি-বর্মী ভাষাভাষী আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যারা সিলেটিকে কমবেশি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান সিলেটি টোনের উদ্ভবের পিছনে একটি কারণ হতে পারে।
Remove ads
ধ্বনিতত্ত্ব
তুলনা
Remove ads
শ্রেণিবিভাগ
অমৃতা দাস সিলেটি ভাষার বৈচিত্র্যকে দুটি দলে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। পূর্ব-সিলেট পশ্চিম গ্রুপ এবং সিলেট-কাছার গ্রুপ।[১০]
সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষার বৈচিত্র্য বা বিভিন্ন উপভাষিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন পশ্চিম সিলেটের উপভাষা, উত্তর-পূর্ব সিলেটের উপভাষা, উত্তর সিলেটের উপভাষা, শহরের উপভাষা (সিলেটিয়া/নাগরিয়া)। ময়মনসিংহের উপভাষার মতো সিলেট বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলে প্রচলিত উপভাষা।[১১]
শাহেলা হামিদ উল্লেখ্য করেন যে, প্রায়শই ভুলভাবে বলা হয় যে সমগ্র জেলার ভাষা অভিন্ন এবং শ্রীহট্টিয়া শব্দটি দিয়ে জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণের উপভাষায় ভুলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।[১২]
Remove ads
উপভাষা বৈচিত্র
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সিলেটি ভাষার উপভাষাসমূহ (সিলেটি: ꠍꠤꠟꠐꠤ ꠛꠥꠟꠤꠘ) বলতে সিলেটি ভাষা বৈচিত্রের দুটি গ্রুপ নিয়ে গঠিত, পূর্ব-সিলেট পশ্চিম গ্রুপ এবং সিলেট-কাছার গ্রুপকে নির্দেশ করে।[১০] বেশিরভাগ উপভাষাগুলিকে ইন্দো-আর্য হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হলেও এদের তিব্বত-বর্মন ভাষার মতো টোনল বা স্বরীয় বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।[১৩]
২০০৫ সালে, শাহেলা হামিদের একটি গবেষণায় সিলেট সদর, সিলেট শহর, দক্ষিণ সিলেট (মৌলভীবাজার), হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জে সিলেটি ভাষার বৈচিত্র্যকে প্রদর্শন করে।[১২] তবে বর্তমানে প্রাপ্ত তথ্যাদি নির্দেশ করে যে, হবিগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিম সুনামগঞ্জে প্রচলিত উপভাষা সিলেটি নয় বরং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর উপভাষার সাথে এই অঞ্চলের উপভাষা অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।[১৪]
ভৌগোলিক সীমানা
সিলেটি ভাষার ভৌগোলিক সীমানা একভাষিক নয়, তবে এটি অন্যান্য স্বরীয় ভাষা যেমন ককবরক, রেয়াং ইত্যাদির সাথে সহ-অবস্থান করে।[১৩] সিলেটি ভাষার বৈচিত্র্যগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।[১০]
দক্ষিণ-পশ্চিম গোষ্ঠী: হবিগঞ্জ - সুনামগঞ্জ জেলার কিছু অঞ্চল এই গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত।
উত্তর-পূর্ব গোষ্ঠী: সিলেট, মৌলভীবাজার ও বরাক উপত্যকা এই গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত।[১০]
- হবিগঞ্জ (প্রাচীন: তরফ রাজ্য)
- সুনামগঞ্জ (প্রাচীন: লাউড় রাজ্য)
- মৌলভীবাজার (প্রাচীন: ইটা রাজ্য)
- সিলেট সদর (প্রাচীন: গৌড়/জৈন্তিয়া রাজ্য)
- বরাক উপত্যকা (করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, কাছাড়)
Remove ads
ধর্মীয় বৈচিত্র
কতিপয় শব্দচয়ন এবং অভিবাদন জানানো হিন্দু, মুসলিম এবং ধর্মীয় শাস্ত্র দ্বারা প্রভাবিত অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়ে থাকে।[১০]
হিন্দু ভাষাভাষীরা বেশিরভাগই সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত ঋণ শব্দ ব্যবহার করেন।
মুসলিম ভাষাভাষীরা বেশিরভাগই ফার্সি ও আরবি ভাষা থেকে উদ্ভূত ঋণ-শব্দ ব্যবহার করেন।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads