Loading AI tools
অঞ্চল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সিলেট অঞ্চল (সিলেটি নাগরী: ꠍꠤꠟꠐ), হচ্ছে একটি ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চল যা ভারত উপমহাদেশের পূর্ব অংশে অবস্থিত এবং বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে সুরমা উপত্যকা এবং ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার তিনটি জেলা। ১৯৪৭ সালে, সিলেটে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। গণভোটের ফলাফল অনুযায়ী সিলেট পূর্ববাংলার পাকিস্তানি প্রদেশে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। র্যাডক্লিফ লাইন যখন টানা হয়েছিল, তখন আবদুল মাতলিব মজুমদারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কমিশনের দ্বারা বরাক উপত্যকা ভারতকে দেওয়া হয়েছিল। বাঙ্গালীর ইতিহাস গ্রন্থের প্রণেতা নিহার রঞ্জন রায় বলেন, দক্ষিণ আসাম/উত্তর-পূর্ব বাংলা বা বরাক উপত্যকা সংস্কৃতি থেকে শুরু করে ভূগোলের প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গিতে বঙ্গের বৃহত্তর সুরমা/মেঘনা উপত্যকা থেকে সম্প্রসারিত।[1]
সিলেট অঞ্চল ꠍꠤꠟꠐ | |
---|---|
অঞ্চল | |
ব্যুত্পত্তি: শ্রীহট্ট | |
ডাকনাম: জালালাবাদ | |
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল | |
দেশসমূহ | বাংলাদেশ |
এলাকা | সিলেট বিভাগ, বাংলাদেশ |
আয়তন | |
• মোট | ১৮,৭৩৮.৪ বর্গকিমি (৭,২৩৪.৯ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,৩৫,২২,৮৭২ |
• জনঘনত্ব | ৭২০/বর্গকিমি (১,৯০০/বর্গমাইল) |
(সিলেট বিভাগ ও বরাক উপত্যকার জনসংখ্যা) | |
বিশেষণ | সিলেটি |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
আইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০) | |
ভাষা | সিলেটি |
অন্যান্য ভাষা | বাংলা, অসমীয়া, খাসি, কুকি, মেইতেই, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, গারো, ত্রিপুরি |
সিলেট, এই নামটি শ্রীহট্ট বা সহজভাবে শিলহট এর একটি রোমানীকরণ রূপ৷ এই নামের উৎপত্তি দুটি সংস্কৃতমূল শব্দ 'শিল' (যার অর্থ পাথর) এর হট্ট (যার অর্থ হাট বা বাজার) এর সমন্বয়েগঠিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়৷ এই দুটি শব্দের সাথে পারিপার্শ্বিক পাহাড়ি ও টিলাবেষ্টিত ভূমি এবং ভূমিপ্রকৃতির সাথে সঠিকভাবে মিলে যায়৷ সিলেটে পর্যাপ্ত পরিমানে পাথর ও নুড়ি পাওয়া যায় এবং সেখানকার গৌড় সাম্রাজ্যের হিন্দু রাজা গোবিন্দ বহিঃশত্রুর হাত থেকে তার রাজধানীকে রক্ষা করতে পাথরের প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়৷ সময়প্রবাহে শিলহট্ট শব্দটি থেকে অন্ত্যাক্ষর বিলোপের দ্বারা শিলহট শব্দটি রূপ পায়৷[2] ষোড়শ শতাব্দীতে সিলেট অঞ্চলে ব্রিটিশদের আগমনের ফলে নামটি পরিবর্তিত হয়ে 'সিলেট' হয়ে যায়৷ ইংরাজী বানানে 'SYLHET' রাখা হয় পার্শ্ববর্তী শহর শিলচর (ইংরাজী বানান SILCHAR) এর সাথে বিশেষ পার্থক্য তেরীর জন্য৷ ঘটনাক্রমে স্থানীয় সিলেটি উপভাষাতে এই নামটিই বেশি পারচলিত হয়ে ওঠে, এবং তা সরকারীভাবেও গৃৃহীত হয়৷ স্বরলোপের ফলে পরবর্তীতে সিলেটি ভাষাতে তা আবার সিলট (সিলেটি বর্ণমালায় ꠍꠤꠟꠐ) নাম নিলেও তা দাপ্তরিকভাবে প্রচলিত নয়৷[3] এছাড়াও ইউরোপীয়ানরা এই অঞ্চলকে সিরোটে বা সিলহাট বলেও অভিহিত করতো বলে জানা যায়৷
অন্যমতে, আফ্রো-এশীয় ভাষাসমূহের অন্তর্গত হিব্রু ভাষাতে সেলেট(হিব্রু লিপিতে שלט) শব্দের অর্থ রক্ষিত বা অঙ্গীকারবদ্ধ৷ একই ভাষাপরিবারভুক্ত আরবী উপদ্বীপীয় ভাষাগুলির মাধ্যমে তা গৃহীত বলে কেউ কেউ মনে করেন৷[4] উপর্যুক্ত মতটির সঠিক কোনো তথ্যপ্রমাণ বা ভিত্তি বা কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি৷
সিলেটের অপর একটি বহুল প্রচলিত নাম হলো শ্রীহট্ট, যা শিলহট্ট থেকে এসেছে৷ ঘটনাক্রমে শিল বা শিলা শব্দটি শ্রী শব্দটি থেকে এসেছে যার অর্থ সৌন্দর্য৷ শিল শব্দটি শ্রী থেকে এসছে এই অনুমানটা এই কারণেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে কারণ এটি পূর্বে কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো যার অর্থও সুন্দর, এবং মোঘল আমলে কামরূপে সিলেটের এই নামই প্রচলিত ছিলো৷ মোঘল সাম্রাজ্যকালে এক সময় বাংলা সুবাহের রাজধানী হিসাবে সিলেটকে নির্ণীত করা হয়েছিলো৷[5]
১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে শাহ জালালের সিলেট বিজয়ের পর রাজা গোবিন্দের রাজ্যের নাম রাখা হয় জালালাবাদ এবং সুলতান শামসুদ্দীন ফিরুজ শাহের লক্ষণাবতীর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন৷ নামটি ছিলো ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত, যা ইসলামী সাম্রাজ্যের দাপ্তরিক ভাষাও বটে৷ এটি দুটি তথা জালাল (ফার্সি লিপিতে جلال), যা একটি আরবি শব্দ ও অর্থ সম্রাট এবং আবাদ (ফার্সি লিপিতে آباد), যার অর্থ বাসভূমি বা আবাসস্থল৷ নামটি মুঘলদের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও প্রস্তাবিত ছিলো, যদিও নামটি সিলেট শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো ও সমগ্র অঞ্চলটিকে কখনই ঐ নামে অভিহাত করা হতো না৷ দীর্ঘদিনের অব্যবহারে নামটি স্থানীয়দের কাছে অপ্রিয় ছিলো ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ঐ অঞ্চলের নাম পুনরায় সিলেট নামে রূপান্তরিত করা হয়৷ সাম্প্রতিককালে সিলেট শহরের সাতটি ওয়ার্ড সমন্বিত একটা থানার নাম জালালাবাদ থানা৷[6]
ঐতিহাসিকদের মতে, সিলেট ছিলো আসাম ও বঙ্গদেশের দুই রাজ্য কামরূপ ও হরিকেলের মধ্যবর্তী একটি বিস্তৃতাংশ৷ এটি ছিলো মূলত ব্রাহ্মণদের বাসস্থল ও তাদের অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক কেন্দ্র৷ প্রথম সহস্রাব্দে এখানে বৌদ্ধ ধর্ম খুব প্রভাবশালী ছিলো৷ প্রাক মধ্যযুগীয় সেন বংশ ও দেব বংশের শাসনকাল থেকে হিন্দু ধর্ম ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে৷[7][8] উভয় রাজবংশ ও তাদের রাজত্বকালের প্রমাণ পাওয়া যায় উক্ত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন শিলালিপি ও তাম্রলেখ থেকে৷[9] হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত থেকে জানা যায় যে, কৌরবশ্রেষ্ঠ ও জ্যেষ্ঠভ্রাতা দুর্যোধন সিলেটের হবিগঞ্জ অঞ্চলের রাজপরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন৷ পুরাণে উল্লেখ আছে যে, মধ্যম পাণ্ডব অর্জুন অশ্বমেধ যজ্ঞ ও রাজ্যবিস্তারের জন্য প্রেরিত ঘোড়া সিলেটের জয়ন্তীয়াতে বন্দী হলে তিনি এই অঞ্চলে তার মেধাশ্ব পুনরুদ্ধারে আসেন ও তা এই এখানকার রাজকুমারীর থেকে পুনরুদ্ধার করে রাজ্যবিস্তার করেন৷[10] এই অঞ্চলেই রয়েছে সতীদেবীর পৃথিবীতে পতিত ৫১টি পীঠের দুটি পীঠ, যা দেবী দুর্গারই অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ শ্রীশৈল ও জয়ন্তীতে পতিত দেবীর গ্রীবা ও বাম তালু হলো দুটি শক্তিপীঠ৷ এটি ছিলো একাধিক ছোটো ছোটো রাজ্যের পুঞ্জস্থল, সেগুলি ছিলো - তরফ রাজ্য, গৌড় রাজ্য, লাউড় রাজ্য, জয়ন্তীয়া রাজ্য, ইটা রাজ্য প্রভৃৃতি৷ বিভিন্ন প্রত্নস্থলের লেখ থেকে রাজনগরের নিকট পঞ্চগাঁওতে একটি প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপস্থিতির খোঁজ পাওয়া যায়৷[11] তরাই অঞ্চল ছিলো প্রাচীন ইটা রাজ্যের সদর দপ্তর৷
চতুর্দ্দশ শতাব্দী থেকে সিলেটে ইসলামি সংস্কৃতির প্রভাব বাড়তে থাকে৷ ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে লক্ষণাবতীর সুলতান শামসুদ্দীন ফিরুজ শাহ তার সৈন্যবাহিনী সহ স্থানীয় হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দকে পরাস্ত করেন৷ জনশ্রুতি অনুযায়ী সিলেটবাসী মুসলিম বুরহানুদ্দিন কুহাফা তার পুত্রের জন্ম উপলক্ষে গরুদান করতে বাধ্য হন৷[12][13] রাজা গোবিন্দ অশুচি ভেবে ক্ষুব্ধ হন এবং ফলস্বরূপ নবজাতককে হত্যা করেন ও বুরহানুদ্দিনের ডান হাত কেটে ফেলেন৷[14] সেনাধ্যক্ষ ও তার ৩১৩ সহযোদ্ধার সৈন্যদল মধ্যপ্রাচ্যের সুফি মিশনারী পরিচালিত শাহ জালালের অধীনস্থ ছিলো৷[13] এরপর শ্রীহট্টে সাম্রাজ্য জালালাবাদ তথা শাহ জালালের রাজধানী হিসাবে নামাঙ্কিত হয় এবং তা গৌড়-লক্ষণাবতী সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়৷ [15] শামসুদ্দীন ফিরুজ শাহের ভাইপো সিকন্দর খান গাজীকে সিলেটে প্রথম মুসলিম উজির হিসাবে নিযুক্ত করা হয়, এছাড়া তিনি যুদ্ধকালে অন্যতম প্রধান ছিলেন৷ ফিরুজ শাহের মৃৃত্যু অবধি সিকন্দরই তার অধীনে থেকে সিলেটের শাসনভার নেন, যদিও কিছুদিনের মধ্যে তার নৌকাডুবিতে মৃৃত্যু হয়৷[16] তিনি স্বয়ং শাহ জালালের দ্বারা নিয়োগকৃৃত হায়দার গাজীর দ্বারা অনুসৃত হন৷[3][17]
১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে লক্ষণাবতীর শেষ সুলতান আলাউদ্দিন আলি শাহকে পরাজিত করার পর উক্ত অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করেন শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ৷ তিনি দশ বছরের মধ্যে বাংলায় একটি সংযুক্ত ও স্বায়ত্ত্বশাসিত শাহী বাংলা প্রতিষ্ঠা করেন৷ জালালাবাদে টাকা তৈরীর জন্য একটি টাঁকশাল খোলা হয়৷ বাঙালি মুসলমান সমাজ সিলেটের উর্বর জমিতে ব্যপক চাষাবাদের ফলে প্রতিপত্তি বাড়াতে থাকেন৷ সুযোগ সুবিধা ও নৈস্বর্গিক শোভার কারণে বহিরাগত তুর্কি, পশতুন, আরব ও পারসিকরা এই স্থানে এসে বসতি স্থাপন করেন৷[18] শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের মৃৃত্যুর পর বাংলার শাসনভার নেন সিকান্দার শাহ৷
এই সময় অনেক মসজিদ যেমন গয়ঘর মসজিদ, শংকরপাশা শাহী মসজিদ ছাড়াও শাহ জালাল ও তার সহযোদ্ধা ও সহচরদের একাধিক দরগা নির্মান করা হয়েছিলো৷ আরো বলা যায়, এই সময়ে ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে চৈতন্য মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেন, যার আদিবাড়ি ছিলো গোলাপগঞ্জ এবং বানিয়াচঙে৷ হিন্দুসমাজ বিশ্বাস করে যে শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগে শ্রীচৈতন্য অবতার রূপে ধরাধামে ফেরত আসেন৷ ১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দে রাজকুমার সখি সালামত নামে এক পারসিক অভিজাত ব্যক্তি এসফাহন থেকে সিলেট জেলার পৃৃথিমপাশা গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন, যা বর্তমানে কুলাউড়া উপজেলার অন্তর্গত৷ অভিজাত ব্যক্তি হওয়ার দরুন তার পুত্র ইসমাইল খান লোধিকে মোঘলরা জায়গীর করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নবাব উপাধিতে ভূষিত করেন৷
১৩০০ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই অঞ্চলটি স্বাধীন রাজ্যের মর্যাদা পায় ও মান রাখা হয় মুয়াজ্জমাবাদ৷
৩রা মার্চ ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দের শেষ সুলতান দাউদ খান কররানীর সাথে মোঘলদের তুকারয়ের যুদ্ধ সংঘটিত হয় (যা মোগলমারির যুদ্ধ নামেও পরিচিত), ফলস্বরূপ বাংলার সাম্রাজ্য থেকে ওড়িশা হাতছাড়া হয়ে যায়৷ যুদ্ধ শেষে কটক চুক্তির মাধ্যমে সুলতান ওড়িশা বাদে সমগ্র বিহার ও বাংলা মোঘলদের হস্তান্তর করেন৷ ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮০ বছর বয়সে মোঘল সেনাধ্যক্ষ মুনিম খানের মৃৃত্যুতে এই চুক্তি পুনরায় ভঙ্গ হয়৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সুযোগ বুঝে দাউদ খানবাংলাতে অনুপ্রবেশ করে ও বাংলাকে আকবরের সাম্রাজ্য থেকে মুক্ত করেন৷ ১২ই জুলাই ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মোঘলরা কররানী সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন৷ খান জাহান ১ এর নেতৃৃত্বে তারা রাজমহলের যুদ্ধে জয় লাভ করেন ও দাউদ খান বিতাড়িত হন৷ পাশতুন ও স্থানীয় জমিদাররা বারো ভুঁইয়ার এক ঈসা খানের নেতৃৃত্বে মোঘলদের প্রতিরোধ করেন৷ পরে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরের শাসনকালে বাংলা মোঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয় ও নাম রাখা হয় সুবাহ বাংলা৷[19]
হামিদ কুরেশি খান (যিনি সামশের খান নামেই অধিক পরিচিত) ছিলেন মুয়াজ্জমাবাদের শেষ সুলতান এবং শাহ কামাল কোহাফার বংশধর৷ জালালাবাদের পতনের পর সামশের খান ফৌজদারী নবাব পদে যুক্ত হন এবং ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে এপ্রিল বাংলার নবাব সরফরাজ খানের সাথে গিরিয়ার যুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে পর্যন্ত ঐ পদেই বহাল থাকেন৷[20] মোঘলরা ১৬২০র মধ্যে মুয়াজ্জমাবাদ তথা সিলেট দখল করেন৷ সিলেট সুবাহ বাংলার একটি সরকার হয়ে ওঠে৷ এটির আটটি মহল্লা ছিলো, যথা - প্রতাপগড়, বহুয়া, জয়ন্তীয়া, হাবিলি, সরাইল, লাউড়, হরিনগর৷ জেলাটি বার্ষিক ১৬৭,০০০ টাকা কর প্রদান করতো৷[21] মোঘলরাও এই অঞ্চলে অনেক মসজিদ ও ঈদগাহ নির্মান করেন৷ সপ্তদশ শতকে ঔরঙ্গজেবের সময়কালে স্থানীয় ফৌজদার ফারহাদ খানের নেতৃৃত্বে তৈরী সিলেট শাহী ঈদগাহটি আজ অবধি ঐ অঞ্চলের সর্ববৃৃহৎ৷
সিলেট ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনস্থ হয় ও বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত হয়৷ ব্রিটিশদের কাছে সিলেট ছিলো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ উত্তর-পূর্ব ভারত ও উচ্চ মায়ানমার অঞ্চলে সহজে যাওয়ার জন্য এই পথই ছিলো সবচেয়ে ভালো৷ ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম এই সিলেটেরই শাহী ঈদগাহে ব্রিটিশ বিরোধী বাঙালীদের উত্থান ঘটে যখন জেলা পরিদর্শক রবার্ট লিন্ডসে দলনেতা সৈয়দ মহম্মদ হাদিকে গুলি করে হত্যা করেন৷ দলনেতা হাদির ভাই সৈয়দ মহম্মদ মহদীকেও তার অন্যান্য সহচরদের সাথে খুন করা হয়৷ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের মালিনীছড়াতে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়৷[22]
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী সিপাহী বিদ্রোহের সময় ৩০০ জন সিপাহীর একটি দল ৩৪ বেঙ্গল পদাতিক রেজিমেন্টের হাবিলদার রজব আলীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট আসে। ও পৃৃথিমপাশার নবাব বাড়িতে নবাব গাউস আলি খানের নিকট আশ্রয় নেয়৷[23] অবিভক্ত সিলেটের বড়লেখার কাছাকাছি লাতু বাজারেে ইংরেজ সেনাপতি মেজর বাইংয়ের সাথে প্রবল যুদ্ধ হয় এবং মেজর বাইং নিহত ও পরাজিত হয়।[24]
১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে সিলেট পৌরসভা স্থাপিত হয়৷[25] শতবাধা ও বিরোধের পরও ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাঙালি প্রধান শ্বাসন একক হওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ সিলেট অঞ্চল আসামের অন্তর্গত করা হয় এবং কারণ হিসাবে আসামের অর্থনৈতিক উন্নতিকে দেখানো হয়৷[26] আসামের সিলেট ও বন্দর শহর চট্টগ্রামকে যুক্ত করার জন্য ঊনবিংশ শতকে আসাম-বাংলা রেলওয়ে স্থাপন করা হয়৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাগের সময় সিলেটকে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ যদিও তা ১৯১২ অবধি স্থায়িত্ব লাভ করে কিন্তু সিলেটকে আবার বাংলা থেকে আলাদা করে আসামে মুখ্য অধ্যক্ষের শ্বাসনাধীন প্রদেশে পরিণত করা হয়৷[27] ১৯২০ বঙ্গাব্দের মধ্যে সিলেটকে বাংলার সাথে যুক্ত করতে সিলেট পিপলস' এসোসিয়েশন, সিলেট-বাংলা পুণর্মিলন লীগ প্রভৃৃতি সংগঠন গড়ে ওঠে, যা স্থানীয় বাঙালীদের বাংলায় যুক্ত হওয়ার বৃৃহত্তর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করে৷[28]
সিলেটে ও সিলেটের বাইরে আসামে বাঙালি-সিলেটি মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য থাকার জন্য ব্রিটিশ আসামে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ দলটি প্রথম নির্বাচনে জয়ী হয়৷
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ আসামের মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ|গোপীনাথ বড়দলুই সিলেটকে পূর্ব বাংলা|পূর্ববঙ্গে ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷[29] ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সিলেট গণভোট এর মাধ্যমে সিলেটের অধিকাংশ, প্রায় ৬৫% পাকিস্তান অধিরাজ্যের পূর্ব বাংলার সাথে যুক্ত করা হয়৷ আবদুল মতলিব মজুমদারের প্রতিনিধিদলের নেতৃৃত্বে বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলা ও অবশিষ্ট করিমগঞ্জ জেলা কাছাড় জেলা হিসাবে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷[30][31][32] ১৯৪৭ এ ৬ই জুলাইয়ের গণভোটে ২৩৯৬১৯ টি ভোট পূর্ববঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ও ১৮৪০৪১ টি ভোট আসামে থাকার পক্ষে পড়েছিলো৷[33] গণভোটটি ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ এর তৃতীয় ধারার নিবন্ধ দ্বারা স্বীকৃৃত৷
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্দ্ধে ব্রিটিশ শাসনকালে নানকার বাদ্রোহ নামে একটি শ্রমিক বিদ্রোহ ঘটে যা জমিদারদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলো৷[34] বিদ্রোহ চলাকালীন স্থানীয় চাষীরা নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয় ও ৬ জনের পর্যন্ত মৃত্যু হয়৷ পাকিস্তান অধিরাজ্যের কাছে জমিদারী ব্যবস্থার পতন ঘটাতে ও চাষিদের নিজেদের জমিতে নিজের সুবিধা মতো ব্যবহার করতে দেওয়ার অধিকারের দাবীতে বিয়ানীবাজার অঞ্চলে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষিত হয় যা সমগ্র পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে৷[34][35]
শ্রীহট্ট অঞ্চলের অধিকাংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও একটি বড়ো অংশ ভারত অধিরাজ্যের আসাম প্রদেশে রয়ে যায়৷ ফলে ঐ বরাক উপত্যকা অঞ্চলের বাঙালীদের আসামীকরণ করার প্রক্রিয়া চলার ফলে তারা তাদের সিলেটি ঐতিহ্য হারাতে বসে৷ অপরপক্ষে পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত সিলেট অঞ্চলে বাংলা ভাষার প্রচলন ও বাংলা ভাষায় সমস্ত কিছু পাঅয়ার দাবী জোরদার হয় ও একটি বড়ো জনসমীকরণের মাধ্যমে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন সংগঠিত হয়৷ সিলেটিরাও উর্দু ভাষার সাথে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃৃৃতি দেওয়ার দাবী তুলতে থাকে৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন বহু অবাংলা ভাষার ছাপাখানা নষ্ট করা হয় যার মধ্যে সিলেটি নাগরী লিপি ছিলো অন্যতম৷[36] বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে এই সিলেট অঞ্চলের কৃৃতিত্ব অপরিসীম৷ বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সেনাধ্যক্ষ মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর বাড়ি ছিলো সিলেটেরই সুনামগঞ্জে৷ তারই নির্দেশে রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও কারখানায় কামান তৈরী হতো৷ জনার্দন কর্মকার দ্বারা নির্মিত একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক কামান আজও ঢাকায় সংরক্ষিত রয়েছে৷[11] পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যুগ্ম লড়াই সিলেটের যুদ্ধ নামে পরিচিত৷ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ থেকে ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে ঘটে যাওয়া এই যুদ্ধ পাকিস্তানকে নতিস্বীকার করতে বাধ্য করে ও সিলেটের মুক্তি ঘটে৷ অপরপক্ষে ভারতে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে আসাম সরকার অসমীয়া ভাষাকে আসামের সব জেলাতে বাধ্যতামূলক করার একটি প্রতিবেদন আনে৷ এর বিরূদ্ধে বরাকের সিলেটিরা চরম বিরোধ, তীব্র আন্দোলন প্রদর্শন করে৷ ১৯৬১র ১৯শে মে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে আন্দোলন চলাকালীন ১১ জন শহিদ হন এর পর বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয় আসাম সরকার৷ ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ৬বছর ব্যাপী বাঙালি বিরোধী আসাম আন্দোলন[37] হয়, যা নথিভুক্ত ভোটারদের বৈধতা যাচাই সম্বন্ধে আলোড়ন সৃৃষ্টি করে৷ এই আন্দোলন আসাম সরকারকে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আটকাতে এবং আসামের মূলনিবাসী ও ভূমিপুত্রদের আইনগত, প্রশাসনিক ও সাংস্কৃৃতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাপ সৃষ্টি করে অসমীয়া জনগোষ্ঠী৷ মূলনিবাসী তত্ত্ব দেওয়া হলেও তা ছিলো আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠ অসমীয়া জাতির সংরক্ষণের পথ৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির সময়কালকে শেষসীমা ধরে তার পরবর্তী সময়ে আসা অনুপ্রবেশকারীদের অবৈধ বলে ধরা হবে, এই প্রস্তাব দেওয়া হয়৷[38]
বিবাহের ক্ষেত্রে সিলেটি হিন্দু ও মুসলিম উভয়ই তাদের বিশেষ পুরানো ধর্মীয় রীতি নীতিই পালন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন৷[39] সিলেটের অনন্য সংস্কৃতি এবং সিলেটি ভাষা (ꠍꠤꠟꠐꠤ) বাংলার বাকী অন্যান্য জায়গা থেকে আলাদা। শুধু সিলেটি জাতি পরে বাংলাদেশীরা বাংলা ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক রীতিতে কথা বলে। কিন্তু একাডেমিক ভাবে সিলেট সহ সারা বাংলাদেশে প্রমীত বাংলা ভাষাই ব্যবহৃত হয়। সিলেটের ধামাইল বা ধামালি গান ও নাচগুলি বিশ্বে চর্চিত, তার মধ্যে জলধামাইল ও বউধামাইল বিশেষ চর্চিত৷
সিলেট অঞ্চল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্টিত৷ বাংলাদেশে সিলেটের অংশটি তুলনামুলক বৃহত্তর ও ১২২৯৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, প্রশাসনিকভাবে যা সিলেট বিভাগ নামে পরিচিত৷ অপরপক্ষে ভারতে সিলেটের অংশটি তুলনামুলক ক্ষুদ্রতর ও ৬৯২২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, প্রশাসনিকভাবে যা দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকা বিভাগ নামে পরিচিত৷
জেলা | উন্নয়ন ব্লক | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
কাছাড় জেলা |
| ||||||
হাইলাকান্দি জেলা |
| ||||||
করিমগঞ্জ জেলা |
|
জেলা | উপজেলা | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
হবিগঞ্জ জেলা | |||||||
মৌলভীবাজার জেলা | |||||||
সুনামগঞ্জ জেলা | |||||||
সিলেট জেলা |
সিলেট অঞ্চলটি বাংলাদেশের উত্তর পূর্বে অবস্থিত সিলেট বিভাগ ও ভারতের উত্তর পূর্বে অবস্থিত আসাম রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থিত বরাক উপত্যকা বিভাগের মধ্যে বন্টিত এবং সিলেট অঞ্চলের সর্বমোট জনসংখ্যা হলো প্রায় ১.৩৫ কোটি৷ সিলেটিরা এই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ ও মুখ্য জনগোষ্ঠী৷ সিলেটিরা হলো বাঙালি ভিন্ন অন্য একটি জাতি এবং তাদের রয়েছে বাঙালিদের থেকে ভাষাগত বৈচিত্র, ঐতিহাসিক ও ভৌগলিকভাবে ভিন্নতা৷[40][41]
এই অঞ্চলে স্থানীয় সিলেটিরা ছাড়াও উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আগত প্রচুর বাঙালি কাজেরসূত্রে এখানে বসবাস করেন৷ সিলেটের ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অসমীয়া জাতির লোক বসবাস করেন৷
সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে অন্যান্য আদিবাসীদের উপস্থিতি দেখা যায়৷ সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, গারো, জয়ন্তিয়া, ত্রিপুরী, গারো জনগোষ্ঠীর লোক বাস করেন আর বরাকের পাহাড়ি অঞ্চলে এছাড়াও কুকি, মৈতৈ প্রভৃতি জাতির লোক বাস করেন৷
বাংলাদেশের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা৷ তাছাড়া সিলেট অঞ্চলে সিলেটি ভাষা প্রচলিত, একইভাবে বরাকে বাংলা ভাষা মান্যতাপ্রাপ্ত সরকারী ভাষা৷ এছাড়া এই অঞ্চলে ভূমিজ গারো ভাষা, হাজং ভাষা, কুকি ভাষা, জয়ন্তিয়া ভাষা, খাসি ভাষা, মৈতৈ মণিপুরী ভাষা, অসমীয়া ভাষা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা প্রভৃৃতি ভাষার লোক বাস করেন৷ এছাড়াও বহিরাগত চাকমা ভাষা, ককবরক ভাষা ও হিন্দি ভাষার লোক বাস করেন৷
এই অঞ্চলের মাদ্রাসাগুলিতে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে আরবি ভাষা শেখানো হয়৷ এই ভাষাটি মুসলিমদের কাছে প্রধান ধর্মীয় ভাষা হিসাবে পরিগণিত হয় এবং ইসলামিক ছত্রছায়ায় কোরান, হাদিস, সুন্নাহ বুঝতে ব্যবহার হয়৷ মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী সিলেটীদের সহায়তায় আবরির প্রচলন ও আরবি জানা সিলেটির সংখ্যা বৃৃদ্ধি পেয়েছে৷ সিলেটি মুসলিমদের অধিকাংশই আরবি লিপি ও উচ্চারণশৈলীর ওপর সরকারী বা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে শিক্ষা নেয়৷ বিভিন্ন মুসলিম ধর্মসভা যেমন সাপ্তাহিক জুমা বা নামাযের সময় সিলটি ও আরবিতে খুতবা দেওয়া হয়৷ ঐতিহাসাকভাবে সিলেট বিজয়ের পর শাহী বাংলাতে দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে আরবি ভাষা ও সহদাপ্তরিক ভাষা হিসাবে ফার্সি ভাষার প্রচলন ছিলো৷
বিভিন্ন মাদ্রাসাতে তৃৃতীয় ভাষা হিসাবে উর্দু পড়ানো হয়৷ কওমি মাদ্রাসাগুলিতে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়, যখানে উর্দু ভাষাতে লেখা দেওবন্দি ধারা অনুসরণ করা হয়৷
বাংলাদেশের সিলেট বিভাগে ৮১.১৬% মুসলিম, ১৭.৮০% হিন্দু, ০.০৬% খ্রিস্টান, ০.০২% বৌদ্ধ ও ০.৯৬% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস৷
আবার বরাক উপত্যকাতে ৪৮.১৪% মুসলিম, ৫০% হিন্দু, ১.৬০% খ্রিস্টান, ০.০৪% বৌদ্ধ ও ০.২২% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষবাস করেন৷
সমগ্র সিলেটে মুসলিম ধর্ম সংখ্যা গরিষ্ঠ৷ প্রায় ৭০% লোক ধর্মে মুসলিম৷ সুন্নি ইসলাম হলো বৃহত্তম সম্প্রদায়, তাদের মধ্যে বেশির্ভাগই হানাফি পন্থাভুক্ত বিদ্যালয়গুলিকে অনুসরণ করে, বাকীরা শাফিঈ ও আহলাস সাহিহ্কে অনুসরণ করেন৷[42] এখানে প্রচুর লোক বেরলভীর সমতুল্য সুফিবাদকে অনুসরণ করেন৷ জকিগঞ্জ উপজেলায় বসবাসকারী আব্দুল লতিফ চোধুরীর প্রভাব এখানে বেশি, যিনি শাহ জালালের শিষ্য শাহ কামাল কুহাফা-এর বংশধর ছিলেন৷[43] তাবলিগ জামাতের অংশ জামেয়া লুথফিয়া আনোয়ারুল উলুম হামিদনগর মাদ্রাসার সাথে ঘটে যাওয়া দেওবন্দি আন্দোলন এই অঞ্চলে অধিক চর্চিত৷
সিলেটে শিয়া মুসলিমরা খুব কম সংখ্যায় বাস করেন৷ তারা শিয়া ইসলামী অনুষ্ঠান আশুরার সময় তারা পৃথিমপাশার শিয়া জমিদারবাড়িতে একত্রিত হন৷
হিন্দুধর্ম হলো সিলেট অঞ্চলে প্রচলিত দ্বিতীয় বৃৃহত্তম ধর্ম, যা মূলত হিন্দু বাঙালিরা পালন করে থাকে৷ বাঙালি ছাড়াও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও ত্রিপুরীদের দ্বারাও অল্পসংখ্যায় পালিত হয়৷ সিলেট বিভাগে পূর্ববঙ্গের সর্বাধিক ঘনত্বযুক্ত হিন্দুদের বাস এবং দুটি শক্তিপীঠের পীঠস্থান৷
অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদিয় হলো, খ্রিস্টধর্ম (রোমান ক্যাথোলিক বিশপ, সিলেট এবং সিলেট প্রেসবিটারিয়ান সভা সহ), কা নিয়ম খাসি, সনমাহি ধর্ম ও কুকি ইহুদি ধর্ম৷
১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে গুরু নানকের সিলেট ভ্রমণের পরে তার প্রবর্তিত শিখধর্ম এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে৷ কাহ্ন সিংহ নাভা মহাশয়ের মতে ঐ সময়ে শ্রীহট্টে গুরুদ্বারা সাহিব সিলেট স্থাপিত হয়৷[44] শিখ গুরু তেগ বাহাদুর দুবার এই গুরুদ্বারাটি পরিদর্শনে আসেন এবং গুরু গোবিন্দ সিংহ একাধিক বার এখানে হুকুমনামা (সর্বশক্তিমানের প্রতি শিখেদের আবাহন) করেছিলেন৷ ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে আসামের ভূমিকম্পে এই গুরুদ্বারাটি ভেঙে যায়৷
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.