Loading AI tools
পাকিস্তানি বিচারক; কুরআন, হাদিস, ইসলামি আইন ও ইসলামি অর্থনীতির নেতৃস্থানীয় পণ্ডিত উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মুহাম্মদ তাকি উসমানি (উর্দু: محمد تقی عثمانی; জন্ম: ৩ অক্টোবর ১৯৪৩) এস.আই., ও.আই., একজন পাকিস্তানি বিচারক; কুরআন, হাদিস, ইসলামি আইন, ইসলামি অর্থনীতি ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের একজন নেতৃস্থানীয় পণ্ডিত।[1] তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত ইসলামি আদর্শ পরিষদের সদস্য,[2] ১৯৮১ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত ফেডারেল শরিয়ত কোর্ট এবং ১৯৮২ থেকে ২০০২ পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরিয়ত আপিল বিভাগের বিচারক ছিলেন।[3][4] ২০২০ সালের জরিপে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।[5] ইসলামি জ্ঞানে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য তাকে শাইখুল ইসলাম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।[6] তাকে সমসাময়িক দেওবন্দ আন্দোলনের প্রধান বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তার মতামত ও ফতোয়াকে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা সহ বিশ্বব্যাপী দেওবন্দি আলেমরা চূড়ান্ত শব্দ হিসেবে গ্রহণ করে।[7] ২০২১ সাল থেকে তিনি পাকিস্তানের দেওবন্দি মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[8] তার পিতা শফি উসমানি ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি, যিনি দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে সপরিবারে পাকিস্তানে চলে যান।
উসমানি দারুল উলুম করাচি, করাচি বিশ্ববিদ্যালয়, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং ১৯৬০ থেকে দারুল উলুম করাচিতে শিক্ষকতা শুরু করেন, বর্তমানে তিনি দারুল উলুম করাচির সভাপতি।[9][3] তিনি ১৯৬৭ থেকে উর্দু সাময়িকী আল বালাগ এবং ১৯৭৬ থেকে ইংরেজি সাময়িকী আল বালাগ আন্তর্জাতিক সম্পাদনা করছেন।[3] ইসলামি আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি একজন কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি ওআইসির অঙ্গসংগঠন আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্য ও সাবেক সহ-সভাপতি এবং মক্কায় অবস্থিত বিশ্ব মুসলিম লীগের সদস্য।[9] ১৭ বছর বয়সে রচিত ইসলাম ও যুক্তির নিরিখে জন্ম নিয়ন্ত্রণ তার প্রথম গ্রন্থ।[10] আরবি, ইংরেজি ও উর্দুতে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ১৪৩টি বইয়ের লেখক; ইসলামি অর্থনীতিতে অবদানের জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিত যাতে তিনি পাকিস্তান এবং বিদেশে অর্থ ও ব্যাংকিং শিল্পকে ইসলামিকরণের জন্য অগ্রণী প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।[9][7] ১৯৯৮ সালে তার রচিত ইসলামি অর্থায়নের ভূমিকাকে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।[9] ইসলামি অর্থনীতিতে তার ব্যাপক কাজের ফলে তাকে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের বাহরাইন ভিত্তিক ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাকাউন্টিং এবং অডিটিং সংস্থার সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।[9] ২০১৪ সালে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি মনোনীত হন।[11] তিনি মিজান ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি সহ এক ডজনেরও বেশি ইসলামি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[12][7] ইসলামি অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১৪ সালে তিনি ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক পুরস্কার লাভ করেন।[13] তার তত্ত্বাবধানে মাআরিফুল কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ সম্পন্ন হয়। তিনি ইংরেজি ও উর্দু, উভয় ভাষায় কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা রচনা করেছেন, যা দ্য নোবেল কুরআন ও তাওযীহুল কুরআন নামে প্রকাশিত। উলুমুল কুরআন সহ কুরআন অধ্যয়নে এগুলো তার প্রধান অবদান।[1] ফিকহ শাস্ত্রে তার বিখ্যাত কাজের মধ্যে ফতোয়ায়ে উসমানী, ফিকহুল বুয়ু, ফিকহি মাকালাত, ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক সমস্যা, বুহুস ফি কাজায়া ফিকহিয়া মুআসিরা অন্যতম।[14] ৬ খণ্ডে সমাপ্ত সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম তার সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা।[15] তার তত্ত্বাবধানে হাদিস বিশ্বকোষ আল মুদাওয়ানাতুল জামিয়া সংকলিত হয়।[16] হাদিস শাস্ত্রে তার অন্যান্য কাজের মধ্যে ইনআমুল বারী, দরসে তিরমিযী, হাদিসের প্রামাণ্যতা অন্যতম।[17] জনসেবায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে তাকে পাকিস্তানের বেসামরিক পুরস্কার সিতারা-ই-ইমতিয়াজ প্রদান করা হয়।[18] ২০১০ সালে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ তাকে অর্ডার অব ইন্ডিপেন্ডেন্সে ভূষিত করেন।[19] ২০২২ সালে তিনি আমেরিকান আন্তর্জাতিক আস্তিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ডক্টর অব লেটার্স পান।[20]
তাকি উসমানি ১৯৪৩ সালের ৩ অক্টোবর মোতাবেক ১৩৫২ হিজরির ৫ শাওয়াল বর্তমান ভারতের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দের উসমানি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[21] তার পিতা শফি উসমানি ও দাদা ইয়াসিন উসমানি। তিনি ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফফানের বংশধর। একারণে তার নামের সাথে উসমানি শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তার বংশের আরেকটি উপাধি মিয়াজী, অর্থ শিক্ষক। তার পিতা ও দাদা উভয়ই দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষক ছিলেন।[22] তার মায়ের নাম নাফিসা খাতুন। পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ।[23] তার পিতা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সদস্য হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। এজন্য নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে ইসলামি সংবিধান তৈরির লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে তিনি সপরিবারে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। তখন তাকি উসমানির বয়স হয়েছিল পাঁচ বছর।[24] ১ মে দেওবন্দ থেকে যাত্রা শুরু করে তারা ৬ মে করাচিতে পৌঁছেন।[25]
দেওবন্দ থাকাবস্থায় ফুফু আম্মাতুল হান্নানের পারিবারিক মক্তবে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়।[26] পাকিস্তানের করাচিতে হিজরত করার পর শিক্ষালাভের জন্য বাড়ির কাছে কোনো মাদ্রাসা না থাকায় পরিবারেই তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছিল। উর্দু ভাষার প্রথম কিতাব হিসেবে মায়ের কাছে তিনি বেহেশতী জেওর ও সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া পড়েছেন।[27] পিতার কাছে ফার্সি ভাষার জ্ঞান লাভ করেন। পরবর্তীতে তার পিতা দারুল উলুম করাচি প্রতিষ্ঠা করলে সেখানেই ভর্তি হন। কিছুদিন উর্দু ও ফার্সি অধ্যয়নের পর ১৩৭২ হিজরির ৫ শাওয়াল তিনি দরসে নেজামি বিভাগে অধ্যয়ন শুরু করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল আট বছর। ১৯৫৯ সালে মাদ্রাসার সর্বকালের সর্বোচ্চ ফলাফল লাভ করে তিনি দরসে নেজামির সর্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি তার পিতার তত্ত্বাবধানে ফিকহশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে তিনি দারুল উলুম করাচি থেকে ফিকহ শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্থনীতি ও রাজনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৬৭ সালে আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া ইংরেজি সাহিত্যেও তিনি পারদর্শিতা অর্জন করেছেন।[28]
তার শিক্ষকদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হলেন তার পিতা শফি উসমানি, যিনি পাকিস্তানের প্রধান মুফতি ছিলেন। তার সহিহ বুখারীর শিক্ষক হলেন মুফতি রশিদ আহমদ। তার অন্যান্য শিক্ষকগণের মধ্যে রয়েছেন: ওয়ালি হাসান টঙ্কি, সলিমুল্লাহ খান, আকবর আলী, মুহাম্মদ রেআয়তুল্লাহ, সাহবান মাহমুদ, শামসুল হক প্রমুখ।[29] এছাড়াও তিনি ইদ্রিস কান্ধলভি, রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি ও জাকারিয়া কান্ধলভির কাছ থেকে হাদিস বর্ণনার অনুমতি পেয়েছেন। আত্মশুদ্ধি অর্জনে তিনি আশরাফ আলী থানভীর খলিফা আব্দুল হাই আরেফীর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন। মৃত্যুর দশদিন আগে আরেফী তাকে খেলাফত প্রদান করেন। তার মৃত্যুর পর তিনি থানভীর আরেক খলিফা মাসিহুল্লাহ খানের শরণাপন্ন হন।[30]
তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত পাকিস্তানের সাংবিধানিক উপদেষ্টা সংস্থা ইসলামি আদর্শ পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত তিনি ফেডারেল শরিয়ত কোর্টে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরিয়ত আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে যোগ দেন, ২০০২ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।[31] ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদের বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য ছিলেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক ইকোনমিক্সের সদস্য ছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ছিলেন।[31] তিনি পাকিস্তানের অর্থনীতি ইসলামীকরণ কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ পর্যন্ত তিনি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[31] এছাড়াও তিনি যেসকল ইসলামি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শরিয়া বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তার মধ্যে রয়েছে: নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ডাউ জোন্স ইসলামিক ইনডেক্স, জেদ্দা ভিত্তিক সৌদি আমেরিকান ব্যাংক, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ইসলামিক হাউস অব ব্রিটেন পিএলসি, দুবাই ভিত্তিক এইচএসবিসি আমানাহ ফাইন্যান্স, দুবাই ব্যাংক, আবুধাবি ইসলামিক ব্যাংক, লুক্সেমবার্গ ভিত্তিক রবার্ট ফ্লেমিং ওসিস ফান্ড, বাহরাইন ভিত্তিক সিটি ইসলামিক ইনভেসমেন্ট ব্যাংক, সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সুইস রি-তাকাফুল, পাকিস্তান ভিত্তিক ব্যাংক ইসলামি, পাক-কুয়েত তাকাফুল, পাক-কাতার তাকাফুল, জেএস ইনভেস্টমেন্টস ইসলামিক ফান্ড, জেএস ইসলামিক পেনশন সেভিংস ফান্ড। তিনি যেসকল ইসলামি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শরিয়া বোর্ডের সদস্য ছিলেন তার মধ্যে রয়েছে: বাহরাইন ভিত্তিক এবিসি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউনাইটেড ব্যাংক অব কুয়েতের ইসলামি ইউনিট, সৌদি আরব ভিত্তিক আল-বারাকা গ্রুপ, পাকিস্তান ভিত্তিক ব্যাংক অব খাইবার, ফয়সাল ব্যাংক লিমিটেড।[31]
১৯৬০ থেকে তিনি দারুল উলুম করাচিতে শিক্ষকতা শুরু করেন, বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও শায়খুল হাদিস।[3][32][31] তিনি ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের বাহরাইন ভিত্তিক ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাকাউন্টিং এবং অডিটিং সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[9] ২০১৪ সালে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পান।[11] আব্দুর রাজ্জাক ইস্কান্দারের মৃত্যুর পর ২০২১ সালের ১৫ জুন তিনি পাকিস্তানের দেওবন্দি মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের সভাপতির দায়িত্ব পান।[8] তিনি ওআইসির অঙ্গসংগঠন আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্য ও সাবেক সহ-সভাপতি এবং মক্কায় অবস্থিত বিশ্ব মুসলিম লীগের সদস্য।[9] তিনি রয়্যাল আল আল-বাইত ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক টথের ফেলো।[31] ১৯৯১ থেকে তিনি সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস পাকিস্তানের সভাপতি। তিনি আরিফ হাবিব ইনভেস্টমেন্টস-পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফান্ড, বাহরাইন ভিত্তিক আর্কাপিটা ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড এবং মিজান ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের সভাপতি। এছাড়াও তিনি জেদ্দা ভিত্তিক ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের ইউনিফাইড শরিয়াহ বোর্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গাইডেন্স ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের শরিয়া বোর্ডের সদস্য।[31]
১২ বছর বয়সে দৈনিক জং পত্রিকায় তাকি উসমানির তিনটি লেখা প্রকাশিত হয়। লেখা তিনটির শিরোনাম ছিল: নারীসমাজ ও কাব্যচর্চা, সহশিক্ষা, নোটে ছবি প্রসঙ্গ।[33] তার পিতা শফি উসমানি রমজান মাসে তাহাজ্জুদের জামাত সম্পর্কিত একটি ফতোয়া প্রদানের জন্য তাকে তথ্য-উপাত্ত জমা করার দায়িত্ব দেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তার পিতার অনুমতিক্রমে ফতোয়াটি তিনি নিজেই রচনা করেন, যা তার পিতার সত্যায়ন সহকারে প্রকাশিত হয়। এটি ছিল তার প্রথম ফিকহি রচনা, তখন তার বয়স হয়েছিল ১৫ বছর।[34] ইমদাদুল ফাতাওয়ার নতুন সংস্করণ প্রকাশ উপলক্ষে তার পিতার নির্দেশে তিনি ১৯৫৯ সালে কিতাবের লেখক আশরাফ আলী থানভীর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী রচনা করেন, এটি ছিল কিতাবে মুদ্রিত তার প্রথম রচনা।[35] ১৭ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শাসনামলে প্রচারিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ইসলাম ও যুক্তির নিরিখে জন্ম নিয়ন্ত্রণ রচনা করেন, এটি তার রচিত প্রথম গ্রন্থ।[36] এসময় তিনি আরবি সাহিত্যের একটি ভূমিকাও সংকলন করেন, যা তিনি করাচিতে আবুল হাসান আলী হাসানী নদভীকে দেখিয়ে আনার পথে হারিয়ে যায়।[37] ১৯৬৭ সালে শফি উসমানি দারুল উলুম করাচি থেকে একটি মাসিক পত্রিকা হিসেবে আল বালাগ প্রকাশ করেন, তখন থেকে তাকি উসমানি এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[38] ১৯৭৬ থেকে তিনি এর ইংরেজি সংস্করণ আল বালাগ আন্তর্জাতিক সম্পাদনা করছেন।[3] আরবি, ইংরেজি ও উর্দুতে তার রচিত ও তার বক্তৃতা, প্রবন্ধ থেকে সংকলিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪৩।[7] তার মধ্যে রয়েছে:[39]
শিরোনাম | মূল নাম | প্রকাশকাল | ভাষা |
---|---|---|---|
তাফসির শাস্ত্র | |||
তাওযীহুল কুরআন | آسان ترجمہ قرآن, توضیح القران | ২০০৮ | উর্দু |
দ্য নোবেল কুরআন: মিনিং উইথ এক্সপ্লেইনেটোরি নোটস | The Noble Quran: Meaning With Explanatory Notes | ২০০৭ | ইংরেজি |
উলুমুল কুরআন | علوم القرآن | ১৯৭৬ | উর্দু |
হাদিস শাস্ত্র | |||
তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম | تکملة فتح الملهم بشرح صحیح مسلم | ১৯৮৪ | আরবি |
দরসে তিরমিযী | درس ترمذی | ১৯৮০ | উর্দু |
তাকরিরে তিরমিযী | تقریر ترمذی | ১৯৯৯ | উর্দু |
ইনআমুল বারী | انعام الباری | ২০০৯ | উর্দু |
হাদিসের প্রামাণ্যতা | The Authority of Sunnah | ১৯৯০ | ইংরেজি |
আল মুদাওয়ানাতুল জামিয়া | المدونة الجامعة | ২০১৮ | আরবি |
ফিকহ শাস্ত্র | |||
উসুলুল ইফতা | أصول الإفتاء وآدابه | ২০১০ | আরবি |
ফতোয়ায়ে উসমানী | فتاوی عثمانی | ২০০৪ | উর্দু |
ফিকহি মাকালাত | فقہی مقالات | ২০১২ | উর্দু |
বুহুস ফি কাজায়া ফিকহিয়া মুআসিরা | بحوث في قضايا فقهية معاصرة | ২০০৪ | আরবি |
ফিকহুল বুয়ু | فقہ البیوع | ২০১৪ | আরবি |
মাযহাব কী ও কেন? | تقلید کی شرعی حیثیت | ১৯৭৬ | উর্দু |
ইসলাম ও যুক্তির নিরিখে জন্ম নিয়ন্ত্রণ | ضبط ولادت عقلی اور شرعی حیثیت سے | ১৯৬১ | উর্দু |
ইসলামি অর্থনীতি | |||
ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতি | An Introduction To Islamic Finance | ১৯৯৮ | ইংরেজি |
ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক সমস্যা | اسلام اور جدید معاشی مسائل | ২০০৮ | উর্দু |
ইসলাম এবং আধুনিক অর্থনীতি ও ব্যবসায়নীতি | اسلام اور جدید معیشت و تجارت | ২০১১ | উর্দু |
সুদ নিষিদ্ধ : পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের ঐতিহাসিক রায় | The Historic Judgment on Interest Delivered in the Supreme Court of Pakistan | ২০০০ | ইংরেজি |
সুদবিহীন ব্যাংকিং | غیر سودی بینکاری | ২০০৯ | উর্দু |
ইসলামি রাজনীতি | |||
ইসলাম ও আধুনিক রাজনীতি | اسلام اور سیاسی نظریات | ২০০৮ | উর্দু |
ইসলাম ও রাজনীতি | اسلام اور سیاست حاضرہ | ২০০৯ | উর্দু |
ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রা. | حضرت معاویۃ اور تاریخی حقائق | ১৯৭১ | উর্দু |
বিবিধ | |||
ইসলাম ও আধুনিকতা | اسلام اور جدت پسندی | ১৯৯০ | উর্দু |
কাদিয়ানি ফিৎনা আওর মিল্লাতে ইসলামিয়া কা মাওকিফ | قادیانی فتنہ اور ملت اسلامیہ کا مؤقف | ১৯৭৪ | উর্দু |
তাকি উসমানি কখনো সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত হন নি, তবে তিনি বুদ্ধিভিত্তিকভাবে রাজনীতিতে অবদান রেখেছেন, তার সম্পাদিত আল বালাগের সম্পাদকীয়তে তার রাজনৈতিক চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।[40] তার পিতা শফি উসমানি পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী ছিলেন এবং এ আন্দোলনকে সমর্থন করে প্রতিষ্ঠিত জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা ছিলেন।[41] ১৯৭০ এর দশকে পাকিস্তানে নতুন সংবিধান রচনার তোড়জোড় শুরু হলে তিনি আল বালাগে এই সম্পর্কে ইসলামি সংবিধানের মর্মকথা এবং সংবিধানের ইসলামি ধারাসমূহ শীর্ষক দুটি সম্পাদকীয় লিখেন, যা যথাক্রমে ১৯৭১ সালের মার্চ ও এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।[40] তিনি আবদুল হক আকরবীর তত্ত্বাবধানে ১৯৭৩ সালে গৃহীত পাকিস্তানের সংবিধানের খসড়া পর্যালোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং এর জন্য কিছু সংশোধনমূলক প্রস্তাবনা তৈরি করেন, যা জাতীয় পরিষদের সদস্য আব্দুল হক আকরবীর মাধ্যমে সংসদে উপস্থাপিত হয়, যার মধ্যে কিছু প্রস্তাবনা গৃহীত হয়।[42] ইসলামের রাজনৈতিক তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে তিনি ইসলাম ও রাজনীতি রচনা করেন, এই গ্রন্থে তিনি রাজনীতি কেন্দ্রিক বিভিন্ন মতবাদ ও ইসলামের সাথে তার সংঘর্ষ এবং রাষ্ট্রের পরিচিতি, ইসলামি রাষ্ট্রের ধারণা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছেন।[43] আধুনিক রাজনীতিতে মুসলমানদের প্রচেষ্টা, নির্বাচন, ভোট, মুসলিমদের ঐক্য ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে তিনি ইসলাম ও আধুনিক রাজনীতি রচনা করেন।[44] ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ইতিহাস ও চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করে তিনি দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রা. এবং আশরাফ আলী থানভীর রাজনৈতিক চিন্তাধারা নামে প্রকাশিত।[45] ১৯৭৪ সালে আহ্মদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে পাকিস্তানে খতমে নবুয়ত আন্দোলন শুরু হলে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং তাদের বিচারিক ক্ষমতাও প্রদান করেন। এই কমিটি উভয় পক্ষ থেকে তাদের মতামতের সাপেক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ আহ্বান করেন। পাকিস্তানের আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে মুসলিমদের পক্ষ থেকে এবিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য তাকি উসমানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।[46] তাকি উসমানি এ বিষয়ে প্রায় দুইশো পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ রচনার করেন, যা মিল্লাতে ইসলামিয়া কা মাওকিফ নামে প্রকাশিত। ২৯ ও ৩০ আগস্ট এটি সংসদে উপস্থাপিত হয়। উভয় পক্ষের যুক্তি প্রমাণ পর্যালোচনার পর সংবিধান সংশোধন করে আহ্মদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়।[47]
২০১৯ সালে ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করলে তাকি উসমানি আরব ও মুসলিম বিশ্বকে কাশ্মীরি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বিজেপি সরকারের এই প্রচেষ্টার নিন্দা করে বলেন, "মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মান্ধতায় নিমজ্জিত ভারতের ফ্যাসিবাদী সরকার প্রত্যেক সপ্তাহে শত-শত মুসলমানকে হত্যা করে এবং মুসলিম কাশ্মীরকে শাসন করে সেখান থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করে তাদের জায়গায় মূর্তিপূজকদের বসিয়ে এটিকে আরেকটি ফিলিস্তিন বানাতে চায়।"[48] ২০২১ সালে তালেবানদের কাবুল বিজয়কে স্বাগত জানিয়ে তাকি উসমানি বলেন, "কাবুলে তালেবানদের শান্তিপূর্ণ প্রবেশ, তাদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা আমাদের মক্কা বিজয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। এটা বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করেছে যে, আল্লাহর উপর ভরসা করার শক্তির সামনে উচ্চ প্রযুক্তির কোনো শক্তি দাঁড়াতে পারে না। সবার জন্য একটি শিক্ষা।"[49] ২০২২ সালের এপ্রিলে তিনি নারীশিক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে আফগানিস্তানের আমির হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা বরাবর একটি চিঠি লিখেন।[50] ২০২২ সালের ২৮ জুলাই এক রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি আফগানিস্তানে ভ্রমণ করেন এবং আফগান সরকারের সাথে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান, নারীশিক্ষা, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন।[51] ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদ কর্তৃক আয়োজিত পয়গামে পাকিস্তান জাতীয় সম্মেলনে তিনি তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের সশস্ত্র কার্যক্রমের সমালোচনা করে একটি ফতোয়া জারি করেন, যা সম্মেলনে উপস্থিত সকল ঘরনার আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এই ফতোয়ায় তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোনও সশস্ত্র কার্যকলাপ একটি "বিদ্রোহ" ও "হারাম" এবং ইসলামি আইন অনুসারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।[52] ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর তিনি হুরমতে মসজিদে আকসা কনফারেন্সে যোগদান করেন। ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হামাসের সমর্থনে এই কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। এতে তিনি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের অধিকারকেই নাকোচ করে দেন এবং হামাস যুদ্ধাদের মুজাহিদ আখ্যা দিয়ে এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।[53]
২০১৯ সালের ২২ মার্চ পাকিস্তানের করাচিতে তাকি উসমানির গাড়িবহরে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় তিনি বেঁচে গেলেও তার ২ নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন।[54] এই হামলার তদন্তে ২০২৪ সালের ২০ জানুয়ারি করাচি থেকে এক প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীকে আটক করে কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট।[55] ২০২১ সালের ৮ জুলাই তাকি উসমানির একান্তে সাক্ষাৎ প্রার্থী এক ব্যক্তিতে তল্লাশি করে পকেট থেকে ছুরি উদ্ধার করা হয়, এই ঘটনাকে তাকি উসমানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[56]
১৯৭৭ সালে মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক ক্ষমতায় আসার পর তার প্রচেষ্টায় পাকিস্তানে ইসলামিকরণ শুরু হয়, তিনি ইতিপূর্বে গঠিত পাকিস্তানের সাংবিধানিক উপদেষ্টা সংস্থা ইসলামি আদর্শ পরিষদে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করেন। তিনি তাকি উসমানিকে এই পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। তাকি উসমানি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত এই পরিষদের দায়িত্ব পালন করেন।[2] এই পরিষদের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে তিনি হুদুদ অধ্যাদেশের খসড়া তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন, যাতে পাকিস্তানি দণ্ডবিধিতে কিছু ফৌজদারি অপরাধের জন্য শরিয়া আইনের প্রবর্তন করা হয়।[9] ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের নতুন সংবিধান রচনার পর পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে একটি ইসলামি শাখা খোলার দাবি উঠতে থাকে। তাকি উসমানিও ১৯৭৪ সালে আল বালাগে এবিষয়ে একটি রূপরেখা প্রস্তাব করেন।[57] মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক ক্ষমতায় আসার পর তার ইসলামিকরণের অংশ হিসেবে ফেডারেল শরিয়ত কোর্ট এবং পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে শরিয়ত আপিল বিভাগ গঠিত হয়। তিনি ১৯৮১ সালে তাকি উসমানিকে ফেডারেল শরিয়ত কোর্টের বিচারক এবং ১৯৮২ সালে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে শরিয়ত আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন, ২০০২ পর্যন্ত তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।[3][4] সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে তিনি ১৯৯২ সালে পাকিস্তানে সব ধরনের সুদ নিষিদ্ধ করে দেওয়ার ঐতিহাসিক রায়ে প্রভাবশালী ছিলেন।[9] পরবর্তীতে তার এই রায়টি সুদ নিষিদ্ধ: পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের ঐতিহাসিক রায় নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়। তাকি উসমানি তার লিখিত নুকুশে রফতেগাঁ গ্রন্থে তার বিচারক হওয়ার ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী একটি চিঠির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ জিয়া উল হকের নিকট এবিষয়ে সুপারিশ করেছিলেন।[58]
ইসলামি অর্থনীতিতে অবদানের জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিত যাতে তিনি পাকিস্তান এবং বিদেশে অর্থ ও ব্যাংকিং শিল্পকে ইসলামিকরণের জন্য অগ্রণী প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।[9] তিনি এক ডজনেরও বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।[7] ১৯৯৮ সালে তার রচিত ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতিকে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যবহৃত অর্থায়নের বিভিন্ন উপকরণ সহ ইসলামি অর্থনীতির মৌলিক নীতিগুলি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।[9] ১৯৯৮ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি অর্থনীতির উপর লেকচার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হন।[59] একই বছর তিনি ভূমি অধিগ্রহণের সীমা নির্ধারণ করে আনা সরকারের ভূমি সংস্কারকে অনৈসলামিক ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন। তার মতে, শরিয়াহ আইন বৈধ মালিকানার কোন সীমাবদ্ধতা রাখে নি। এটি যেকোনো ব্যক্তিকে বৈধ উপায়ে অর্জিত অনির্দিষ্ট সংখ্যক জমি এবং সম্পত্তির মালিক হতে দেয়।[60] উসমানি ইসলামি অর্থায়নের শেষ লক্ষ্যকে ন্যায় ভিত্তিক এবং সুদমুক্ত একটি ব্যবস্থা তৈরি হিসেবে কল্পনা করেছেন। তিনি এই লক্ষ্য অর্জনের দিকে শিল্পের অগ্রগতির অভাব হিসেবে যা দেখেন তার সমালোচনা করেন এবং ইসলামি অর্থায়ন নিয়ে তিনি সাধারণত প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করেন। তার বই সুদবিহীন ব্যাংকিং হলো ইসলামি অর্থায়নের সমালোচনা করে জারি করা বিভিন্ন আলেমদের আইনি রায়ের প্রতিক্রিয়া।[9] ২০০৮ সালে তিনি ৮ খণ্ডে ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকাশ করেন, খণ্ড অনুসারে এ গ্রন্থের আলোচ্য বিষয় যথাক্রমে: পুঁজিবাদ সমাজতন্ত্র ও ইসলাম, ইসলামের ভূমিব্যবস্থাপনা, ইসলামী ব্যাংকিং রুপরেখা ও প্রয়োজনীয়তা, ক্রয় বিক্রয়ের ইসলামী পদ্ধতি, ইসলামের দৃষ্টিতে ক্রয় বিক্রয়ের আধুনিক পদ্ধতি, আধুনিক কিছু ব্যবসা ও তার শরয়ী বিধান, ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ ও তার প্রতিকার, ব্যবসা ও লেনদেনের ইসলামী বিধান।[61] ২০১১ সালে ইসলাম এবং আধুনিক অর্থনীতি ও ব্যবসায়নীতি নামে তার আরেকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, যা মূলত এবিষয়ে তার প্রদত্ত একটি কোর্সের সংকলন।[61] ২০১৪ সালে তিনি আধুনিক ব্যবসায়িক পদ্ধতি ও প্রকারের আধুনিক পরিভাষাগুলোকে চার মাযহাবের প্রচলিত ফিকহি পাঠ্য এবং উদাহরণের আলোকে ব্যাখ্যা করে ফিকহুল বুয়ু নামে ২ খণ্ডের একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন।[62]
২০২০ সালের ২০ এপ্রিল একটি মামলার রায় প্রদানে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট যাকাত ও বায়তুল মাল বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি দেশের বাস্তবতার ভিত্তিতে বিদ্যমান যাকাত ব্যবস্থাকে সংস্কার করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, "সরকারী পর্যায়ে যাকাত পরিচালনার জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল যা বর্তমানে নেই।" তার মতামত আদালতের রেকর্ডে রাখার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ৪ মে, প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের নেতৃত্বে থাকাকালীন তাকি উসমানিকে যাকাতের বিষয়ে তার মতামতের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন যে এই ধরনের মতামত পড়া হয়েছে এবং নির্দেশনার জন্য যথেষ্ট উপাদান পাওয়া গেছে।[63][64] তিনি করাচিতে একটি ইসলামি অর্থনীতি সেন্টারও প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা দেশের ব্যবসায়ী শ্রেণিকে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক তাদের ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনার জন্য সেবা প্রদান করে।[65]
ইসলামি আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি একজন কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি ওআইসির অঙ্গসংগঠন আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্য ও সাবেক সহ-সভাপতি।[9] ছাত্রজীবন থেকে তিনি ওয়ালি হাসান টঙ্কির অধীনে ফতোয়ার কাজ শুরু করেন এবং দারুল উলুম করাচি থেকে তিনি অসংখ্য ফতোয়া প্রদান করেন, যা ফতোয়ায়ে উসমানী নামে একত্রে প্রকাশিত হয়।[59] ২০০৪ সালে তার রচিত ২ খণ্ডের বুহুস ফি কাজায়া ফিকহিয়া মুআসিরা প্রকাশিত হয়, যা আধুনিক ইসলামি আইনশাস্ত্র সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনা করে।[66] ২০১১ সালে তিনি ফতোয়া প্রদানের নীতি ব্যাখ্যা করে উসুলুল ইফতা রচনা করেন, যা এবিষয়ে একটি পাঠ্যবই হিসেবে পঠিত হয়।[67] আধুনিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনারে তিনি যেসকল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন তার সমষ্টি হলো ফিকহি মাকালাত, যা ২০১২ সালে ৬ খণ্ডে প্রকাশিত হয়।[68]
তিনি তার পিতা শফি উসমানির রচিত বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ মাআরিফুল কুরআনের সংকলনে খানিকটা অংশগ্রহণ করেন, তার মধ্যে তিনি তিনটি সূরা যথা: সোয়াদ, ছফফাত, যুখরুফের তাফসির রচনা করেন এবং তার পিতা তা সম্পাদনা করেন।[69] মাআরিফুল কুরআনের রচনা সমাপ্ত হলে তিনি পিতার নির্দেশে এর একটি ভূমিকা রচনার কাজ শুরু করেন, তার এই ভূমিকাটি কলেবরে বৃহৎ হওয়ায় তা উলুমুল কুরআন নামে একটি স্বতন্ত্র বই আকারে প্রকাশিত হয় এবং এর একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ মাআরিফুল কুরআনের ভূমিকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[70] পরবর্তীতে তার তত্ত্বাবধানে মাআরিফুল কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ সম্পন্ন হয়।[71] এ কাজ সম্পন্ন করতে তিনি ইংরেজি ভাষায় কুরআন অনুবাদ করেন এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাও জুড়ে দেন, যা দ্য নোবেল কুরআন: মিনিং উইথ এক্সপ্লেইনেটোরি নোটস নামে ২০০৭ সালে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়।[72] উর্দু ভাষায় প্রচলিত কুরআনের বিভিন্ন অনুবাদ পর্যালোচনা করে তিনি উর্দু ভাষায়ও একটি অনুবাদ ও ব্যাখ্যা রচনায় হাত দেন যা আসান তরজমায়ে কুরআন নামে ৩ খণ্ডে প্রকাশিত হয়।[73]
তিনি ১৯৮৯ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে হাদিসের প্রামাণ্যতার উপর একটি বক্তব্য দেন, যা পরবর্তীতে হাদিসের প্রামাণ্যতা নামে প্রকাশিত হয়।[74] শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর থেকে তিনি দারুল উলুম করাচিতে হাদিসের পাঠদান শুরু করেন। সুনান আত-তিরমিজীর উপর দেওয়া তার পাঠ থেকে ৩ খণ্ডে দরসে তিরমিযী ও ২ খণ্ডে তাকরিরে তিরমিযী সংকলিত হয়।[75] সহীহ বুখারীর উপর দেওয়া পাঠ থেকে সংকলিত হয় ৮ খণ্ডের ইনআমুল বারী।[75] শাব্বির আহমদ উসমানি ফাতহুল মুলহিম নামে সহীহ মুসলিমের একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা শুরু করেন, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এর তিন খণ্ড রচনা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। পিতার নির্দেশে তাকি উসমানি ১৯৭৬ সালের ২৫ মে গ্রন্থটির বাকি অংশ রচনায় হাত দেন। ১৯৯৪ সালের ৪ আগস্ট কাজটি সমাপ্ত হয়। যা তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম নামে প্রকাশিত, এটি তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবেও সমাদৃত।[76] তার তত্ত্বাবধানে আল মুদাওয়ানাতুল জামিয়া নামে ৪০ খণ্ডে সমাপ্য একটি আন্তর্জাতিক হাদিস বিশ্বকোষ সংকলনের কাজও শুরু হয়, ২০১৮ সালে এর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়।[16]
তিনি আশরাফ আলী থানভীর দুই খলিফা আবদুল হাই আরিফী ও মাসিহুল্লাহ খানের সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তাদের উত্তরসূরী মনোনীত হন।[77] তিনি করাচিতে দীর্ঘ সময় ধরে মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সাপ্তাহিক বয়ান দিয়ে থাকেন।[78] তার এসকল বয়ানের সংকলন ইসলাহী খুতুবাত নামে ১৪ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।[79] এছাড়াও আধ্যাত্মিকতা, সমাজ ও ব্যক্তি সংশোধন নিয়ে তার রচনার মধ্যে ফরদ কি ইসলাহ, যিকর ও ফিকর, খুতুবাতে উসমানী, ইসলাহে মোয়াশারাহ অন্যতম।[80]
১৯৫১ সালে তিনি পিতার সাথে সৌদি আরবে হজ্জে গমন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পিতার সাথে ভারতে তার জন্মস্থান দেওবন্দে যান।[81] তিনি পুনরায় সৌদি আরবে ১৯৬৩ সালে উমরা ও ১৯৬৪ সালে হজ্জে গমন করেন।[82] পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন দেশে দাওয়াতি ভ্রমণ করেছেন। এসকল ভ্রমণে তিনি প্রত্যেক দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি খুব নিকট থেকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং ভ্রমণবৃত্তান্তে তার আলোকপাত করেন।[83] তার এসব ভ্রমণকাহিনী প্রথমে আল বালাগে প্রকাশিত হত। তার ভ্রমণকাহিনী নিয়ে রচিত প্রথম গ্রন্থ জাহানে দীদাহ।[84] এতে ইরাক, মিশর, সৌদি আরব, জর্ডান, সিরিয়া, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, কাতার, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ভারত, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্সের ভ্রমণ বৃত্তান্ত স্থান পেয়েছে।[84] দুনিয়া মেরে আগে তার দ্বিতীয় ভ্রমণকাহিনী। এতে স্পেন, ব্রুনাই, তুরস্ক, পশ্চিমের দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, জার্মানি, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশের ভ্রমণ বৃত্তান্ত স্থান পেয়েছে।[84] সফর দর সফর তার ভ্রমণকাহিনীর তৃতীয় সংকলন। এতে স্থান পেয়েছে সিরিয়া, ইরান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, আলবেনিয়া, রাশিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড এবং ভারতের ভ্রমণকাহিনী।[84]
২০০৪ সালে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম প্রদত্ত আমির মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম পুরস্কার লাভ করেন।[85] ২০১০ সালে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ তাকে অর্ডার অব ইন্ডিপেন্ডেন্সে ভূষিত করেন।[19] ২০১১ সালে উপসাগরীয় আর্থিক শিল্পের অন্যতম প্রধান পুরস্কার ইসলামিক বিজনেস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অ্যাওয়ার্ডসের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আসরে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।[86] একই বছর তিনি জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ পুরস্কার লাভ করেন।[85] ২০১৪ সালে তিনি ইসলামি অর্থনীতির সর্বোচ্চ পুরস্কার ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক পুরস্কার লাভ করেন।[13] শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ইসলামিক ফাইন্যান্স ফোরাম অব সাউথ এশিয়া পুরস্কারের ২০১৬ আসরে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।[87] ২০১৭ সালে তাকে পাকিস্তানের সিওএমএসএটিএস বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ইসলামিক ফাইন্যান্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডসে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।[88] ২০১৯ সালে দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ জন মুসলিম ২০২০-এ তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন।[5] জনসেবায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে তাকে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার সিতারা-ই-ইমতিয়াজ প্রদান করা হয়।[18] ২০২২ সালে তিনি আমেরিকান আন্তর্জাতিক আস্তিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ডক্টর অব লেটার্স পান।[89] নানা সময় বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ তাকে মূল্যায়ন করে যেসকল মন্তব্য করেছেন তার মধ্যে রয়েছে:
অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলামিক ওয়ার্ল্ডে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[9] ২০০২ সালে দারুল উলুম করাচির শিক্ষক লোকমান হাকিম মুহাম্মদ তাকি আল উসমানি: আল-কাজী আল-ফকিহ ওয়া আল-দাঈয়াহ আল-রাহালাহ শিরোনামে একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন, যা দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত হয়।[95] ২০১১ সালে মালয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শায়খ মুহাম্মদ তাকি উসমানির "বুহুস ফি কাজায়া ফিকহিল মুআসিরা"-এর মাধ্যমে তার ফিকহি দৃষ্টিভঙ্গি শীর্ষক পিএইচডি অভিসন্দর্ভ প্রকাশিত হয়।[96] ২০১৭ সালে তাকি উসমানি ইঁয়াদে নামে একটি আত্মজীবনী রচনা করেন, যা বাংলা ভাষায়আমার জীবনকথা শিরোনামে অনূদিত হয়েছে।[97] ২০১৮ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত আধুনিক ইসলামি কর্তৃত্ব ও সামাজিক পরিবর্তন শীর্ষক গ্রন্থের ৯ম অধ্যায়ে তার জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[98] ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুনান আম্পেল স্টেট ইসলামিক ইউনিভার্সিটি সুরাবায়ার একটি স্নাতক অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল মুহাম্মদ মুফতি তাকি উসমানি কর্তৃক কুরআনের সূরা আল বাকারার ইংরেজি অনুবাদে নির্দেশমূলক বক্তৃতা।[99] একই বছর তুরস্কের ডিকল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্নাতকোত্তর অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল মুহাম্মদ তাকি উসমানি ও তার আইনশাস্ত্র।[100] ২০২০ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত ব্যবসা ও প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে বিকল্প বাণিজ্যিক ও অপারেশনাল সমাধান: মুফতি তাকি উসমানির অবদান শীর্ষক লেকচার প্রদান করা হয়।[101] ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া থেকে তাকি উসমানির উপর গবেষণা করে ইউসুফ আজিম সিদ্দিকী পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন, তার অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল সম্মিলিত ইজতিহাদের সাথে শরিয়া অনুগত অর্থায়ন, তুলনামূলক অধ্যয়নে প্রয়োগকৃত বিক্রয় চুক্তির নিয়ম শনাক্তকরণে মুফতি তাকি উসমানির অবদান।[102] ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল তাকি উসমানি আল জাজিরাতে প্রচারিত রমজানে শরিয়া আইন ও জীবন শীর্ষক একটি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন এবং তাতে ইসলাম সংরক্ষণ ও প্রসারে ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় পণ্ডিতদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।[103]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.