ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ভারত সরকারের সরকারি ভাষা দেবনাগরী অক্ষরে হিন্দি এবং ইংরেজি। সংবিধান অনুযায়ী ভারতের কোনো জাতীয় ভাষা নেই।[1] হিন্দি এবং ইংরেজি বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হয়; যেমন, সংসদের কাজে, আইন ও বিচার বিষয়ক কাজে, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের মধ্যে বার্তা প্রেরণে ইত্যাদিতে।[2] রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা আছে তাদের নিজেস্ব সরকারি ভাষা ঠিক করার।[1] মূলত ১৪.৫-২৪.৫% মানুষ হিন্দিতে কথা বলেন, তবে মোটামুটি ৪৫% ভারতীয় হিন্দিভাষী অথবা এর কাছাকাছি ভাষায়। এই ৪৫% জনগণ হিন্দি ভাষা ভাষী রাজ্যে বসবাস করেন। বাকি ভারতীয় ভাষাগুলিতে কমবেশি ১০% করে জনগণ কথা বলেন। [3]
এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন। |
রাজ্যগুলি আইন মোতাবেক তাদের সরকারি ভাষা ঠিক করতে পারে। সংবিধানের এই ধারায় রাজ্যগুলি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবে তাই নয়, রাজ্যের নিজেস্ব বিভিন্ন সরকারি কাজেও তারা সেই ভাষা গুলি ব্যবহার করতে পারবে এবং এই ভাষাগুলোর মাধ্যমে রাজ্য দেশের সাথেও সংযোগ স্থাপন করে।
ভারতের ব্রিটিশ শাসনের সময়ে ইংরেজি তাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় স্তরে ব্যবহার হত। ১৯৫০ সালে সংবিধান গ্রহণের সময় পরিকল্পনা নেওয়া হয় ১৫ বছরের মধ্যে ধিরে ধিরে ইংরেজির বদলে হিন্দিকে বসানো হবে, কিন্তু পরবর্তীকালে আইন প্রণয়ন করে ইংরেজির ব্যবহার বহাল রাখা হয়। পরবর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী হিন্দিকে একক ভাবে সরকারি ভাষা করতে গেলে বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাধা আসতে থাকে। অন্যান্য রাজ্যের সরকারি ভাষাকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দি আজও সরকারি ভাষা হিসাবে চলে আসছে।
ইংরেজি ভাষার ব্যবহার
১৯৫০ সালে সংবিধান মোতাবেক দেবনাগরী অক্ষরে হিন্দি ভাষাকে রাষ্ট্রের সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। যদিও ২৬ জানুয়ারি ১৯৬৫ পর্যন্ত অর্থাৎ আরও ১৫ বছর ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসাবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পরিবর্তনের প্রত্যাশা অ-হিন্দি ভাষাভাষী মানুষের কাছে বিপদ সংকেত পাঠায়, বিশেষত দ্রাবিড়ীয় ভাষাভাষী মানুষের কাছে, যাদের ভাষার সাথে হিন্দির কোন যোগ নেই। এবং এর ফল স্বরূপ সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬৩ গ্রহণ করা হয়। এই আইন বলে ১৯৬৫ পরেও হিন্দির সাথে ইংরেজিকেও সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়। ১৯৬৪ সালের শেষ দিকে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বন্ধ করার একটা প্রচেষ্টা করা হয়। বিক্ষোভ দেখানো হয় মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, পুদুচেরি এবং অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। কিছু বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়েও ওঠে। শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে হয়; এবং আইনটি সংশোধন করা হয়, ঠিক হয় যতদিন পর্যন্ত সকল রাজ্য হিন্দিকে তাদের রজ্যের সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে ততদিন ইংরেজি সরকারি ভাষা হিসাবে বহাল থাকবে এবং সংসদের উভয় কক্ষেই পাশ হতে হবে। তারপর থেকেই কেন্দ্র সরকার হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজিকেও সহায়ক সরকারি ভাষা হিসাবে (“subsidiary/co- official language”) স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। কিন্তু একি সঙ্গে হিন্দির ব্যবহার বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালু রাখা হয়েছে।
রাজ্য পর্যায়ে আরও ২৫টি ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।
সংসদীয় সভার কারজ বিবরণী এবং আইন
ভারতীয় সংবিধান সংসদীয় কারজ বিবরণীর ক্ষেত্রে এবং আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন ভাষা ব্যবহার করা হবে তার উপর স্পষ্ট বিভাজিকা তৈরি করেছে। সংবিধানানুযায়ী সংসদের যেকোনো কাজ হিন্দি অথবা ইংরেজিতে করা যায়। ইংরেজির ব্যবহার ১৫ বছরের পর্বের পরই শেষ হয়ে গেছিলো, যদিও সরকারি ভাষা বিষয়ক আইন, ১৯৬৫ মোতাবেক আজও তার বৈধতা আছে। একি সঙ্গে কোনো ব্যক্তি যদি হিন্দি বা ইংরেজিতে তার বক্তব্য পেশ করতে অপারগ হন তাহলে তিনি স্পিকারের অনুমতি নিয়ে তার মাতৃভাষায় তার বক্তব্য পেশ করতে পারবেন। তবে আইনের ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা গেছে। সংবিধান অনুযায়ী একটি ভারিক্কি সম্পণ্য ভাষায় আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে ইংরেজিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যদিও সংসদ চাইলে অন্য ভাষায় করতে পারে। আজ পর্যন্ত সংসদ এই বিশেষ ক্ষমতার ব্যবহার করেনি। কদাচিৎ ক্ষেত্রে কোন বিল বা আইন আনার আগে হিন্দিতে তর্জমা করা হয়েছে, তাছাড়া ইংরেজিকেই আইন রচনার ভাষা হিসাবে রাখা হয়েছে।
বিচার সংক্রান্ত কাজ
সংবিধান অনুসারে দেশের সর্বচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্টের সকল কাজ ইংরেজিতে করতে হবে। সংসদ চাইলে আইন করে এর পরিবর্তন করতে পারে, যদিও আজ পর্যন্ত করা হয়নি। কিছু কিছু হাইকোর্টে রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়ে হিন্দিকে ঐচ্ছিক ভাষা হিসাবে রাখা হয়েছে, যেমন রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার।
প্রশাসনিক কাজ
কেন্দ্র সরকার আইন বলে সকল কাজে হিন্দির ব্যবহার বৃদ্ধির কথা ভাবছে। সরকারি ভাষার আইন অনুসারে জনগণের জন্য করা সকল প্রসাশনিক নথিপত্র হিন্দি এবং ইংরেজিতে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি আইন বিষয়ক আইন কেন্দ্র সরকারের সকল কার্যালয় গুলোর মধ্যে বার্তা প্রেরণ এবং কথোপকথনের জন্য হিন্দির ব্যবহারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে কেবল মাত্র তামিলনাড়ুতে অবস্থিত কার্যালয়গুলো বাদ দিয়ে, সেখানে এই আইন বলবত নয়। যদি প্রয়োজন হয় তবে তা অন্য আঞ্চলিক ভাষায় তর্জমা করার কথাও বলা হয়েছে। তবে একি কার্যালয় গুলির মধ্যে বিভিন্ন কাজের জন্য হিন্দির ব্যবহার বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। বিভিন্ন নথিপত্রে নোট এবং চিরকুট রাখার জন্য হিন্দি অথবা ইংরেজির ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। একি সঙ্গে যে কোন অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে ভারতে ব্যবহৃত যে কোন ভাষায় দরখাস্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বাস্তবায়ন
ভারত সরকার হিন্দির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। দক্ষিণ ভারতে হিন্দির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য “দক্ষিণ ভারত হিন্দি প্রচার সভা” (প্রধান কার্যালয়ঃ চেন্নাই) নামে একটি সংঘ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও বেঙ্গালুরু, তিরুবন্তপুরম, মুম্বাই, কলকাতা, গুয়াহাটি, ভূপাল, দিল্লি এবং গাজিয়াবাদে হিন্দির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য আঞ্চলিক কার্যালয় খোলা হয়েছে, যাতে কেন্দ্র সরকারের কার্যালয়গুলিতে হিন্দির ব্যবহার বৃদ্ধি হয়। হিন্দি ব্যবহার বাড়ানোর বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করা হয়েছে। সরকারি ভাষা নিয়ে “কেন্দ্রীয় হিন্দি কমিটি” গঠন করা হয়েছে ১৯৬৭ সালে। এবং সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে ১৯৭৬ সালে। এর কাজ পর্যায়ক্রমিক ভাবে রাষ্ট্রপতির এবং কাছে কতটা অগ্রগতি হয়েছে তাই নিয়ে তথ্য পেশ করা। প্রতিটি শহরে অন্তত ১০টি কেন্দ্র সরকারের দপ্তর এবং একটি হিন্দি প্রচার কমিটি স্থাপন করা হয়েছে। কোন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী সম্পূর্ণ হিন্দিতে তার কাজ করলে আর্থিক পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র সরকারের কার্যালয়ে হিন্দি সেল গঠন করা হয়েছে।
অষ্টম তফসিলভুক্ত ভাষাসমূহ
ক্রম. | ভাষা | রাজ্য/সম্প্রদায় |
---|---|---|
১. | অসমীয়া | আসাম |
২. | বাংলা | পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, ঝাড়খণ্ড, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ |
৩. | বোড়ো | আসাম |
৪. | ডোগরি | জম্মু ও কাশ্মীর |
৫. | গুজরাতি | গুজরাত, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ |
৬. | হিন্দি | বিহার, চণ্ডীগড়, ছত্তিশগড়, দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড |
৭. | কন্নড় | কর্ণাটক |
৮. | কাশ্মীরি | জম্মু ও কাশ্মীর |
৯. | কোঙ্কণী | গোয়া, মহারাষ্ট্র |
১০. | মৈথিলী | বিহার |
১১. | মলয়ালম | কেরল, লাক্ষাদ্বীপ, পুদুচেরি |
১২. | মৈতৈ (মণিপুরী) | মণিপুর |
১৩. | মারাঠি | মহারাষ্ট্র, গোয়া, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ |
১৪. | নেপালি | সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ |
১৫. | ওড়িয়া | ওড়িশা |
১৬. | পাঞ্জাবি | চণ্ডীগড়, দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব |
১৭. | সংস্কৃত | উত্তরাখণ্ড |
১৮. | সাঁওতালি | বিহার, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশা রাজ্যের অন্তর্গত ছোট নাগপুর মালভূমিতে বসবাসকারী সাঁওতাল উপজাতিদের মধ্যে প্রচলিত। |
১৯. | তামিল | তামিলনাড়ু, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পুদুচেরি |
২০. | তেলুগু | অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, পুদুচেরি |
২১. | উর্দু | জম্মু ও কাশ্মীর, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, বিহার |
ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে বর্তমানে ব্যবহৃত ভাষাসমূহ
নং | রাজ্য | সরকারি ভাষা | সহকারী সরকারি ভাষা |
---|---|---|---|
১. | অন্ধ্রপ্রদেশ | তেলুগু[5] | |
২. | অরুণাচল প্রদেশ | ইংরেজি | |
৩. | আসাম | অসমীয়া[6] | বাংলা (বরাক উপত্যকার তিন জেলায়[7] ) |
৪. | বিহার | হিন্দি[8] | উর্দু (নির্বাচিত অঞ্চলে প্রয়োজনে)[9] |
৫. | ছত্তিশগড় | হিন্দি[10] | ছত্তিশগড়ি |
৬. | গোয়া | কোঙ্কণী[11] | মারাঠি[4]:২৭[12] |
৭. | গুজরাত | গুজরাটি | |
৮. | হরিয়ানা | হিন্দি[13] | পাঞ্জাবী[14] |
৯. | হিমাচল প্রদেশ | হিন্দি[15] | ইংরেজি |
১০. | ঝাড়খণ্ড | হিন্দি | উর্দু |
১১. | কর্ণাটক | কন্নড় | ইংরেজি[16] |
১২. | কেরল | মালয়লম | ইংরেজি |
১৩. | মধ্যপ্রদেশ | হিন্দি[17] | |
১৪. | মহারাষ্ট্র | মারাঠি | |
১৫. | মণিপুর | মৈতৈ মণিপুরী[18] | ইংরেজি |
১৬. | মেঘালয় | ইংরেজি[19] | খাসি এবং গারো[20] |
১৭. | মিজোরাম | মিজো, ইংরেজি এবং হিন্দি | |
১৮. | নাগাল্যান্ড | ইংরেজি | |
১৯. | ওড়িশা | ওড়িয়া | ইংরেজি[21] |
২০. | পাঞ্জাব | পাঞ্জাবি | |
২১. | রাজস্থান | হিন্দি | ইংরেজি |
২২. | সিকিম | ইংরেজি[22][23] | সিকিমি, গুরুং, লেপচা, লিম্বু, মাগার, মুখিয়া, নেওয়ারি, রাজ, শেরপা এবং তামাং |
২৩. | তামিলনাড়ু | তামিল | ইংরেজি |
২৪. | তেলেঙ্গানা | তেলুগু এবং উর্দু | |
২৫. | ত্রিপুরা | বাংলা, ইংরেজি এবং ককবরক[24][25] | |
২৬. | উত্তরপ্রদেশ | হিন্দি | উর্দু[26] |
২৭. | উত্তরাখণ্ড | হিন্দি | |
২৮. | পশ্চিমবঙ্গ | বাংলা এবং ইংরেজি |
নং | কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | সরকারি ভাষা | সহায়ক সরকারি ভাষা |
---|---|---|---|
১. | আন্দামান ও নিকবোর দ্বীপপুঞ্জ | হিন্দি, ইংরেজি | বাংলা |
২. | চণ্ডীগড় | ইংরেজি | |
৩. | দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ | ইংরেজি এবং হিন্দি[27] | গুজরাটি |
৪. | দিল্লি | হিন্দি | পাঞ্জাবি এবং উর্দু[28] |
৫. | লাক্ষাদ্বীপ | মালয়লম এবং ইংরেজি[9] | |
৬. | পুদুচেরি | তামিল | তেলুগু এবং মালয়লম[29][30] |
৭. | জম্মু ও কাশ্মীর | উর্দু, হিন্দি, কাশ্মীরি | |
৮. | লাদাখ | হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি |
টীকা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.