Loading AI tools
ইংরেজ ক্রিকেটার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ফ্রেডেরিক রিচার্ড ফ্রেডি ব্রাউন, সিবিই (ইংরেজি: Freddie Brown; জন্ম: ১৬ ডিসেম্বর, ১৯১০ - মৃত্যু: ২৪ জুলাই, ১৯৯১) পেরুর লিমায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ শৌখিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা, প্রশাসক, ধারাভাষ্যকার ও দল নির্বাচক ছিলেন।[1] ১৯৩১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও, ১৯৩০-৩১ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩১ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সারে ও ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেন ফ্রেডি ব্রাউন। প্রকৃত অল-রাউন্ডার হিসেবে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন এবং ডানহাতে মিডিয়াম পেস বা লেগ ব্রেক ও গুগলি বোলিংয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছেন তিনি।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ফ্রেডেরিক রিচার্ড ব্রাউন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | লিমা, পেরু | ১৬ ডিসেম্বর ১৯১০|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৪ জুলাই ১৯৯১ ৮০) র্যামসবারি, উইল্টশায়ার, ইংল্যান্ড | (বয়স|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম, লেগ ব্রেক গুগলি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | অল-রাউন্ডার, অধিনায়ক, প্রশাসক, ধারাভাষ্যকার, দল নির্বাচক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৬১) | ২৯ জুলাই ১৯৩১ বনাম নিউজিল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ৩০ জুন ১৯৫৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ |
১৯৩৩ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন তিনি। তবে এরপর থেকেই তার খেলোয়াড়ী জীবনে উত্থান-পতন ঘটতে থাকে। নর্দাম্পটনশায়ারের অধিনায়কসহ ১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ডের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড দলের নির্বাচকমণ্ডলী এবং ১৯৫৩ সালে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি মনোনীত হন। এ সময়েই ইংল্যান্ড দল অ্যাশেজ করায়ত্ত্ব করে। এরপর তিনি ক্রিকেট প্রশাসনে জড়িয়ে পড়েন। তন্মধ্যে দলের বিদেশ সফরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি হন। ১৯৪২ সালে ক্রিটে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অভিযানের স্বীকৃতিস্বরূপ এমবিই এবং ১৯৮০ সালে ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের প্রেক্ষিতে সিবিই পদবীতে ভূষিত হন তিনি।
পেরুতে অবস্থানকারী বিশিষ্ট ইংরেজ ব্যবসায়ী রজার গ্রাউন্ডস ব্রাউনের সন্তান ছিলেন ফ্রেডি ব্রাউন। রজার ক্ষুরধার ক্রিকেটার ছিলেন। লিমা ক্রিকেট ও ফুটবল ক্লাবের পক্ষে ১৯২৬-২৭ মৌসুমে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন ও ৫/৫০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।[2] ব্রাউনের বোন অ্যালাইন মহিলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বামহাতি ব্যাটার ছিলেন। তার পুত্রদ্বয় রিচার্ড ফিলিপ ও ক্রিস্টোফার ফ্রেডরিক মাইনর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।[3][4] ব্রাউন স্বভাবজাত বামহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। তবে, শৈশবকালে তার কার্যকরী ডানহাতেও সফলকাম ছিলেন যা সৌভাগ্যবশতঃ তার ক্রিকেট জীবনে প্রভাববিস্তার করেনি।[5]
চিলির সেন্ট পিটার্স স্কুলে অধ্যয়ন করেন তিনি। সেখানে তিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। ১৯২১ সাল থেকে মেইডেনহেডের সেন্ট পিরান্স স্কুলে দক্ষিণ আফ্রিকান অল-রাউন্ডার অব্রে ফকনারের কাছ থেকে গুগলি বোলিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।[6] ১৯২৫ সালে কেমব্রিজের দ্য লেজ স্কুলে স্থানান্তরিত হন। বিদ্যালয়ের ব্যাটিং ও বোলিং গড়ে উভয় বিভাগেই সেরা ছিলেন।[5] কেমব্রিজের সেন্ট জোন্স কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৩০ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে প্রথম খেলতে নামেন।[5]
১৯৩০ সালে অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে ৫২ রান তুলেন।[7] পরের খেলায় ফ্রি ফরেস্টার্সের বিপক্ষে লেগ স্পিন বোলিং করে ৫/৯ লাভ করেন।[8] ওভালে সারের বিপক্ষে ১৫০ রানের প্রথম শতরানের সন্ধান পান। এ সময়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে ২৫৭ রান তুলেন। দ্য স্যাফ্রন্সে এইচ. ডি. জি. লেভেসন গাওয়ার একাদশের বিপক্ষে পরের ইনিংসেই তুলেন ১৪০ রান। ঐ মৌসুম শেষে কেমব্রিজ দলের ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থানে ছিলেন তিনি।[5]
১৯৩১ সালে কেমব্রিজের পক্ষে খেলা চালিয়ে যান তিনি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে তিনি ৫/১৫৩ লাভ করেন। এ খেলাতেই ইফতিখার আলি খান পতৌদি অপরাজিত ২৩৮* রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন।[5] সারে দলের পক্ষে যোগ দেন ও মৌসুম শেষে ২২.৬৫ গড়ে রান খরচায় ১০৭ উইকেট পান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে খেলার জন্য তাকে মনোনীত করা হয়। পুরো সিরিজটিই বৃষ্টিবিঘ্নিত ছিল। ব্যাট হাতে অংশ না নিলেও তিন উইকেট লাভ করেন ও একটি ক্যাচ নেন। ১৯৩২ সালে ২০.৪৬ গড়ে ১২০ উইকেট ও ৩২.৪২ গড়ে ১,১৩৫ রান সংগ্রহ করেন তিনি।[9][10] ওভালে মিডলসেক্সের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজস্ব সেরা ২১২ রানের ইনিংস খেলেন। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক মন্তব্য করে যে, ভীতিহীন বর্ণাঢ্যময় ব্যাটিংশৈলীর উপস্থাপনা ঘটিয়েছেন তিনি। এ মাঠে তিনি দুই ছক্কা, একটি পাঁচ ও পনেরোটি চারের মার ছিল।[5] ব্রাউন লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি তিন উইকেটসহ ১ ও ২৯ রান তুলেন। এরপর ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে এমসিসি দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে সারে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ডগলাস জারদিনের অধিনায়কত্বে তিনি বহুল বিতর্কিত বডিলাইন টেস্টের কোনটিতেই অংশ নেননি। তবে তিনি কেবলমাত্র রাজ্যদলের বিপক্ষে খেলাগুলোয় অংশ নেন।[11][12] নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে অংশ নেন। ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ৮৩ মিনিটে ৭৪ রানের ইনিংস খেললেও ইংল্যান্ড দলের ১৯৩৩তম খেলা থেকে বাদ পড়েন।
১৯৩২ সালে ১০০ উইকেট ও ১০০০ রান সংগ্রহ করে ডাবল লাভ করেন।[5] ফলশ্রুতিতে ১৯৩৩ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন ফ্রেডি ব্রাউন। ১৯৩৩ সালের পর ক্রিকেটে কম অংশগ্রহণ করেন। তবে, ১৯৩৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে অংশগ্রহণের জন্য পুনরায় আমন্ত্রিত হন। এক ছক্কা ও ৮ চার সহযোগে ৫৭ রান এবং ৩/৮১ ও ১/১৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এরপর তিনি আবারও দল থেকে বাদ পড়েন ও ধারণা করা হয়েছিল যে, তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের হয়তোবা সমাপ্তি ঘটেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার দুই সপ্তাহ পূর্বে সমারসেটের বিপক্ষে নিজস্ব সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান ৮/৩৪।[13]
রয়্যাল আর্মি সার্ভিস কোরে কমিশন লাভ করেন ব্রাউন। ১৯৪১ সালে ক্রিট থেকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে মুক্ত করতে প্রভূতঃ সহায়তা করেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৪২ সালে রাণীর জন্মদিনের নববর্ষের সম্মাননায় এমবিই পদবীতে ভূষিত হন। কায়রোয় লিন্ডসে হ্যাসেটের সাথে একযোগে ক্রিকেট খেলায় অংশ নেন। কিন্তু, ১৯৪২ সালে তব্রুকে বিল বোসের সাথে ধৃত হন ও যুদ্ধের বাদ-বাকী সময় যুদ্ধবন্দী হিসেবে ইতালি ও জার্মানির শিবিরে অবস্থান করেন।[1] সেখানে তারা ক্রিকেট, বেসবল ও রাগবি খেলা আয়োজন করেন। ১৯৪৫ সালে মার্কিনীদের হাতে মুক্ত হবার পর তিনি ৬০ পাউন্ডের (৩০ কিলোগ্রাম) অধিক ওজন হারান।[14]
যুদ্ধের পর তিনি মিডিয়াম পেস সীমার হিসেবে আবির্ভূত হন। ডনকাস্টার কয়লা খনিতে কল্যাণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন ক্রিকেট খেলা আয়োজন করতেন। কয়লা খনি জাতীয়করণ করার পর ব্রাউন তার চাকরি হারান। ১৯৪৯ সালে নর্দাম্পটনশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের (নর্দান্টস) অধিনায়ক ও সহকারী সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।[15] ১৯৪৯ সালে ২৪.৪৭ গড়ে ১,০৭৭ রান ও ২৭.০০ গড়ে ১১১ উইকেট লাভ করে নিজের খেলোয়াড়ী জীবনের পুণরুজ্জ্বীবন ঘটান তিনি। ১৯৪৯ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে নর্দান্টসের অবস্থান ছিল সর্বশেষ সপ্তদশ স্থানে। সেখান থেকে দলকে ১৯৪৯ সালে ষষ্ঠ স্থানে নিয়ে যান।[16] ফলশ্রুতিতে, ব্রাউনকে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে শেষ দুই টেস্টে ইংল্যান্ড দলকে পরিচালনা করেন। দুই উইকেট ও চার ক্যাচ নিয়ে ০-০ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করান। ১৯৫০ সালে ৩৮.২০ গড়ে ১,১০৮ রান ও ২৮.৩৮ গড়ে ৭৭ উইকেট পান তিনি।[9][10]
১৯৫০-৫১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে জর্জ মান ও নরম্যান ইয়ার্ডলিকে দলের অধিনায়ক মনোনীত করা হয়। ব্রাউনকেও এ দায়িত্বের জন্য বিবেচনায় আনা হয় ও লর্ডসে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায় অধিনায়কত্ব করেন। দলীয় সংগ্রহ ১৯৪/৬ থাকা অবস্থায় ক্রিজে নামেন ও দুই ঘণ্টার মধ্যে ১৩১ রানের মধ্যে ব্যক্তিগত ১২২ রান তুলেন। তন্মধ্যে বিশাল এক ছক্কা হাঁকান যা লর্ডস প্যাভিলিয়নের মধ্যে গিয়ে পড়ে। এরপর তিনি দ্রুততার সাথে তিন উইকেট লাভ করেন ও একই দিন বিকেলে সফরকালীন অধিনায়কের দায়িত্ব লাভের প্রস্তাবনা পান।[17] এ সময়ে তিনি টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে মাঝারীসারির অবস্থানে ছিলেন। ২৩.৩০ গড়ে ২৩৩ রান ও ৪০.৭৯ গড়ে ১৪ উইকেট পান।[18][19] ঐ সময়ে ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব সৌখিনতার পর্যায়ে ছিল। তবে, তার অধিনায়কত্ব লাভের অবস্থান ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলার জন্য ব্রাউন দলের অধিনায়কত্ব করেন। তখন ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে ছিল। শেষ টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয় যা অস্ট্রেলিয়ায় দলের নড়বড়ে অবস্থার কথা তুলে ধরে।
১৯৫০-৫১ মৌসুমে ব্রাউনের অধিনায়কত্বে ইংল্যান্ড দলকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রেরিত দূর্বলতম দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জন কে মন্তব্য করেন যে, অ্যালেক বেডসার ও লেন হাটনের ন্যায় তারকা খেলোয়াড়বিহীন ইংল্যান্ড দলের মূল্যমান ক্লাব দলের তুলনায় খানিকটা শ্রেয়তর ছিল।[20] ইংল্যান্ড দল ৪-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে পরাজিত হয়েছিল। স্বান্তনাসূচক একমাত্র জয়টি এসেছিল চূড়ান্ত টেস্টে। দলের দূর্বল ক্রীড়াশৈলী স্বত্ত্বেও চল্লিশ বছর বয়সী ব্রাউন ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। অন্যদের কাছ থেকে তেমন সহায়তা না পেলেও তার একাগ্রতার অস্ট্রেলীয় সমর্থকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। অপ্রত্যাশিতভাবে ২৬.২৫ গড়ে ২১০ রান ও ২১.৬১ গড়ে সিরিজে ১৮ উইকেট পান। সিরিজে ব্যাটিং গড়ে হাটন, রেগ সিম্পসনের পর এবং বোলিং গড়ে বেডসার ও ট্রেভর বেইলির পিছনে অবস্থান করেছিলেন।[21]
তার এই দৃঢ়প্রত্যয় স্বত্ত্বেও অধিনায়ক হিসেবে ব্রাউন অসফল ছিলেন। এছাড়াও সর্বাপেক্ষা বড় ভুল করেন হাটনকে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন ঘটিয়ে। নিচেরসারির ব্যাটিং অর্ডারকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তাকে এক থেকে ছয় নম্বরে সরিয়ে আনেন। ফলশ্রুতিতে, হাটন প্রথম দুই টেস্টেই তিনবার সহযোগী ব্যাটসম্যানকে রান আউটের শিকারে পরিণত করেছিলেন।[11] ‘কে’ সফরের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেন যে, অমর্যাদাজনক ক্রীড়াশৈলীর দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকারী হিসেবে যা সমালোচকদের কাছ থেকে কোন সহানুভূতি কুড়ায়নি।[22] দলের দূর্বলমানের ফিল্ডিংও সমালোচকদের চোখ এড়ায়নি। ফলশ্রুতিতে, দলটি ‘ব্রাউনের গরু’ ডাকনামে আখ্যায়িত হয়েছিল।[23] তবে, বিল ও’রিলি ব্রাউন সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, তিনি খেলোয়াড় ও অধিনায়ক উভয় দায়িত্বেই নিঃস্বার্থভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ও অস্ট্রেলীয় সমর্থকদের কাছ থেকে শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন।[24]
উলুঙ্গাব্বায় প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয় ঝঞ্চাময় বৃষ্টিপাতে ও মাঠ ভেসে যায়। অস্ট্রেলিয়া ২২৮ রান তুলে ও বেডসার ও বেইলির সহায়তায় ব্রাউন ২/৬৩ পান। পরিবর্তিত পরিবেশে ৬৮/৭ তুলে ইনিংস ঘোষণার ন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন। ভেজা পিচ শুকানোর পূর্বেই অস্ট্রেলিয়া দলকে দ্বিতীয়বার মাঠে নামান। নিশ্চিতরূপেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে পড়ে। দলীয় অধিনায়ক লিন্ডসে হ্যাসেট ৩২/৭ করে ইনিংস ঘোষণা করলে ইংল্যান্ডকে পুনরায় মাঠে নামতে হয়। ব্রাউন ভুলবশতঃ সময়ের সদ্ব্যবহারের ন্যায় সুযোগটি হাতছাড়া করেন। পরদিন সকালে ইংল্যান্ড ১২২ রানে অল-আউট হলে ৭০ রানে পরাজিত হয়।[25][26]
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ১৯৪ রানে অল-আউট হয়। ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৫৪/৫ থাকা অবস্থায় ব্রাউন মাঠে নামেন ও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ তুলে ইংল্যান্ডকে ১৯৭ রানে নিয়ে যান। এ ইনিংসে দর্শকদের হৃদয়-মন জয় করেন তিনি। ইয়ান জনসনের বলে সোজা ছক্কা ও কভার অঞ্চলে চারের ফুলঝুড়ি ছড়ান। বল হাতেও সফলতা দেখান। ৪/২৬ নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১৮১ রানে গুটিয়ে দিলে ইংল্যান্ড মাত্র ১৫০ রান তুলতে সক্ষম হয়। ফলশ্রুতিতে দলটি ২৮ রানে পরাজিত হয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।[27] তৃতীয় টেস্টে ব্রাউন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৯ রান তুললেও আরেকটি পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে বাধ্য হন। তিনি যখন মাঠে নামেন তখন দলের সংগ্রহ ছিল ১৩৭/৪। বেইলি ও ডগ রাইটের আঘাতপ্রাপ্তির ফলে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ অনেকাংশেই দূর্বল হয়ে পড়ে। তবে বেডসার ও অভিষিক্ত জন ওয়ারের সহায়তায় ৪৪ ওভার বোলিং করতে হয় তাকে। ৪/১৫৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়লেও অস্ট্রেলিয়া দল ৪২৬ রান তুলে। আবারও অল-আউট হলে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ব্যবধানে জয়ী হয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে।[28]
সিরিজের বাদ-বাকী সময়টুকু পাল্টা রোমাঞ্চকর অবস্থায় কাটে। চতুর্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ২৭৪ রানে জয় পায়। তবে, চূড়ান্ত টেস্টে স্বান্তনাসূচক জয় পেয়ে কিছুটা বীরত্ব প্রদর্শন করতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড দল। চতুর্থ টেস্ট চলাকালে মোটর দূর্ঘটনার শিকারে পরিণত হয়ে ব্রাউনকে হাসপাতালে যেতে হয় ও খেলা চালিয়ে যেতে অক্ষম হন। তিনি সহঃ অধিনায়ক ডেনিস কম্পটনকে খেলা পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করতে বাধ্য হন। ১৯২৪-২৫ মৌসুমে জ্যাক হবসের পর কম্পটনই প্রথম পেশাদার ইংল্যান্ড দলনায়ক মনোনীত হন।[29] মেলবোর্নের চূড়ান্ত টেস্টে ব্রাউন শারীরিক সুস্থতা ফিরে পান। এ টেস্টেই ব্রাউন তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান ৫/৪৯। একপর্যায়ে তিনি ৩/০ পেয়েছিলেন। ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয় পেলে ১৯৩৮ সালের পর প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া টেস্টে পরাজিত হয়।[30][31]
ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ব্রাউন ৬২ রানে অনবদ্য ইনিংস খেলেন।[32] ব্যাসিন রিজার্ভে নিম্নমূখী রানের খেলায় ৪৭ ও অপরাজিত ১০* রান করেন। ইংল্যান্ড দল ৬ উইকেটে পরাজিত করে নিউজিল্যান্ডকে ও ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।[33]
দলে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের দলনেতা হিসেবে খেলেন ও টেস্ট দল নির্বাচক হন।[34] প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা জয়লাভ করে ও দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড ১০ উইকেটে বিজয়ী হয়। তৃতীয় টেস্টের নিম্নমূখী রানের খেলায় ২১১ রানের মধ্যে ব্রাউন করেন ৪২ রান। ঐ টেস্টে ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে জয় পায় ও ড্র হওয়া চতুর্থ টেস্টে ৩/১০৭ বোলিং পরিসংখ্যান করেন। পঞ্চম টেস্টে ৪০ রান করেন ব্রাউন।[35] চার উইকেটে জয় পেয়ে ইংল্যান্ড ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ী হয়। ১৯৫১ সালে ৩৩.৫৭ গড়ে ৯৪০ রান ও ২৩.৩৭ গড়ে ৬৬ উইকেট পান তিনি।[9][10] ১৯৫২ সালে ডাবলের কাছাকাছি ছিলেন। ২৮.২৩ গড়ে ১,০৭৩ রান ও ২৪.৭৭ গড়ে ৯৫ উইকেট লাভ করেন।[9][10] ৪১ বছর বয়সে ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কত্ব থেকে নিজ নাম প্রত্যাহার করে অবসর গ্রহণ করেন ও পেশাদার ক্রিকেটার হাটন তার স্থলাভিষিক্ত হন।[5]
১৯৫৩ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বশেষ অংশগ্রহণ করেন ফ্রেডি ব্রাউন। ২৪.৯৭ গড়ে ৮৪৯ রান তুলেন ও ২০.৭৪ গড়ে ৮৭ উইকেট পান।[9][10] দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি মনোনীত হন ও লেন হাটনের অনুরোধক্রমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪২ বছর বয়সে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামেন।[36] রে লিন্ডওয়াল জানান যে, ইংরেজ খেলোয়াড়দের অধিকাংশই ব্রাউনকে অধিনায়ক হিসেবে ডাকতেন এমনকি নতুন অধিনায়ক হাটনও তাকে অধিনায়করূপে সম্বোধন করেন।[37] প্রথম ইনিংসে ১৪ বল মোকাবেলা করে ২২ রান তুলেন। লিন্ডওয়াল বলেন যে, তিনি উইকেটের উভয় প্রান্ত থেকেই চমৎকার নিশানায় লেগ-ব্রেক বল ছুঁড়েছেন এবং ৪/৮২ পান।[38] ক্যাচ নেয়ার প্রচেষ্টাকালে হাটনের আঙ্গুল ভেঙ্গে গেলে ব্রাউন মাঠের দায়িত্ব নেন।[39] খেলাটি ড্রয় পরিণত হয়। এটিই তার সর্বশেষ টেস্ট ছিল। ১৯৫৩ মৌসুম থেকে কার্যতঃ ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তবে, ১৯৬১ সাল পর্যন্ত মাঝে-মধ্যে তাকে মাঠে দেখা যেতো।[9][10] এরপর তিনি প্রশাসক, বিদেশ সফরে ব্যবস্থাপক ও বিবিসি রেডিওতে টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে রেডিও ধারাভাষ্যকর্মের সাথে যুক্ত হন। ১৯৫৪ সালে নিজ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ক্রিকেট মাস্কেটির’ প্রকাশ করেন।
ব্রাউন দুইবার ইংল্যান্ড দলের বিদেশ সফরে ব্যবস্থাপকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান যাতে টেস্ট সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে ড্র হয়। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরে দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪-০ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজে পরাজিত হয়। তন্মধ্যে, অস্ট্রেলিয়ায় ইয়ান মেকিফের বোলিংয়ের ধরনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করার ইচ্ছা পোষণ করলে দলীয় অধিনায়ক পিটার মে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালান। ম্যাকিফের বোলিং সর্বত্র অবৈধরূপে আখ্যায়িত করা হচ্ছিল। তবে, অস্ট্রেলীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান প্রত্যুত্তরে ইংল্যান্ডের নিজেদের ঘর সামলানোর কথা বলেন। তিনি টনি লক ও পিটার লোডারের বোলিংয়ের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন।
রাজনৈতিক কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল করা হলে ১৯৭০ সালে বিশ্ব একাদশ দলের ব্যবস্থাপক মনোনীত হন ব্রাউন।[40] ১৯৭১-৭২ মৌসুমে এমসিসির সভাপতি হন।[1] এরপর জাতীয় ক্রিকেট সংস্থা ও ইংরেজ বিদ্যালয় ক্রিকেট সংস্থায় কাজ করেন। ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি থাকাকালে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট সঙ্কটকালীন ইংল্যান্ডের দলনেতা টনি গ্রেগকে পদচ্যুত করেন। ১৯৮০ সালে রাণীর জন্মদিনের সম্মাননার তালিকায় অনুর্ভূক্ত হন ও ক্রিকেটে অসামান্য অবদান রাখায় সিবিই পদবীতে ভূষিত হন।[41]
তরুণ অবস্থায় লেগ-স্পিনার ছিলেন তিনি। কিন্তু যুদ্ধের পর তার বোলিং মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে রূপান্তরিত হয়।[5] তার বিশাল হাতে বল নিয়ে টার্ন থেকে কাটে পরিণত করতে সক্ষমতা দেখাতে পারতেন। ব্যাটসম্যানের মুখোমুখি হবার চেয়ে উইকেট পেতেই অধিক পছন্দ করতেন। তবে মাঝে-মধ্যে বলের দিক ও নিশানা থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতেন।[5] পেস বোলার হিসেবে তিনি অধিকতর নিখুঁত বোলিং করতেন। সেরা ব্যাটসম্যানকেও আটকাতেন ও পরিণত জুটি হবার পূর্বেই ভেঙ্গে ফেলতে নিপুণতা দেখাতেন।[5] শক্ত দেয়াল প্রাচীর গড়ার অধিকারী অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক লিন্ডসে হ্যাসেটকে আউট করতে সক্ষম ছিলেন তিনি। অবস্থা বুঝে কিংবা ব্যাটসম্যানের দূর্বলতা লক্ষ্য করে লেগ-স্পিন বোলিং করতেন। কখনোবা একই ওভারে উভয়ের সংমিশ্রণ ঘটাতেন। চমৎকারভাবে ক্যাচ মুঠোবন্দী করতেন। একটি টেস্টের উভয় ইনিংসে কিথ মিলারকে কট এন্ড বোল্ড করেন। ফলশ্রুতিতে, অস্ট্রেলীয় অল-রাউন্ডার তাকে ‘সি এন্ড বি’ ডাকনামে অভিহিত করতেন। ওজন, উচ্চতা ও শক্তিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে যথাসম্ভব বলকে আঘাত করতেন। একবার লর্ডসের প্যাভিলিয়নে ছক্কা হাঁকান তিনি। প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরিগুলো পীড়াদায়ক বাউন্ডারির সংমিশ্রণ ছিল। এভাবেই তিনি দর্শকদের কাছে নিজের জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।[5]
আঠারো বছর বয়সী ব্রায়ান ক্লোজের ১৯৫০-৫১ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে প্রথম অভিষেক হয় ও দূর্বল ক্রীড়াশৈলীর কারণে দল থেকে বাদ পড়েন। ক্লোজ তার ঐ সফরের অভিজ্ঞতার বিষয়ে মত বিনিময় করলেও ব্রাউন প্রকৃতপক্ষেই কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।[42] ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যবস্থাপক হিসেবে ফ্রেড ট্রুম্যানের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.