Loading AI tools
উসমানীয় সাম্রাজের সুলতান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সুলতান সুলাইমান কানুনি ( উসমানীয় তুর্কি ভাষায়: سليمان اوّل: সুলাইমানে আউওয়াল) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের দশম ও সবচেয়ে দীর্ঘকালব্যাপী শাসনরত প্রভাবশালী সুলতান, যিনি ১৫২০ থেকে ১৫৬৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উসমানীয় সাম্রাজ্য শাসন করেন।[4] পশ্চিমা বিশ্বে তিনি সুলাইমান দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট নামে, তুরস্কে কানুনি সুলতান নামে এবং আরব বিশ্বে সুলাইমান আল মুহতাশাম নামে পরিচিত। সুলতান সুলায়মান ১৪৯০ সালের ২১ আগস্টে পিতা সুলতান সেলিমের ঔরসে ট্রাবোজন প্রাসাদে জন্মলাভ করেন। তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের পুরাতন সকল নীতিমালা পুনরায় সম্পূর্ণরূপে নবীণকরণ করেন বলেউ তুরস্কে তাকে কানুনি সুলতান (আরবি: سليمان القانوني ) বলা হয়। তিনি ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপে একজন বিশিষ্ট সাম্রাজ্যাধিপতি হিসেবে স্থান লাভ করেন, যার শাসনে উসমানীয় খেলাফতে সামরিক, রাজনৈতিক, আত্মিক ও অর্থনৈতিক শক্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটে।
সুলতান সুলাইমান | |
---|---|
উসমানীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন সুলতান ও কায়সার-ই-রোম আলকানুনি (বিধানকর্তা) ম্যাগনিফিসেন্ট (মহৎ) খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন | |
ইসলামের খলিফা ১০ম উসমানীয় সুলতান | |
রাজত্ব | ২২ সেপ্টেম্বর ১৫২০ – ৬ সেপ্টেম্বর ১৫৬৬ (৪৫ বছর, ৩৪১ দিন) |
তরবারী প্রদান | ৩০শে সেপ্টেম্বর, ১৫২০ |
পূর্বসূরি | প্রথম সেলিম |
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় সেলিম |
জন্ম | [1]:৫৪১ তাবরিজ, তুরস্ক | ৬ নভেম্বর ১৪৯৫
মৃত্যু | ৬ সেপ্টেম্বর ১৫৬৬ ৭১)[1]:৫৪৫ সিগেটভার (Szigetvár), হাঙ্গেরি | (বয়স
সমাধি | |
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
বংশধর |
|
পিতা | প্রথম সেলিম |
মাতা | হাফসা সুলতান |
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
তুগরা |
সুলতান সুলাইমানের সেনাবাহিনী পবিত্র রোম সাম্রাজ্য ও সুবিশাল হাঙ্গেরির পতন ঘটায়। সুলতান সুলাইমান পারস্যের সাফাভি রাজবংশের শাহ প্রথম তাহমাসবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে মধ্য প্রাচ্যের বেশির ভাগ অঞ্চল দখল করেন। এছাড়াও তিনি উত্তর আফ্রিকায় আলজেরিয়া ও লিবিয়াসহ বড় বড় অঞ্চলগুলো দখল করেন। তার শাসনামলে তার অধীনস্থ কাপুদান পাশা (নৌসেনাপতি) খিজির খাইরুদ্দিন বার্বারোসা স্পেনের অ্যাডমিরাল আন্দ্রে দোরিয়ার নেতৃত্বে সম্মিলিত খ্রিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে ১৫৩৮ সালের প্রিভিজার যুদ্ধে বিজয় লাভ করে। এই নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগর থেকে লোহিত সাগর এবং পারস্য উপসাগর পর্যন্ত তাদের আধিপত্য বজায় রাখে। [5] এছাড়াও তার নৌ-বাহিনী তৎকালীন স্পেনের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া পালিয়ে যাওয়া নির্বাসিত মুসলিম ও ইহুদিদের উদ্ধারকার্য পরিচালনা করেন। তিনি ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সবেচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান সুলতান।
উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিস্তারকালে, সুলতান সুলাইমান ব্যক্তিগতভাবে তার সাম্রাজ্যের সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, খাজনা ব্যবস্থা ও অপরাধের শাস্তি ব্যবস্থার বিষয়গুলোতে আইনপ্রণয়নসংক্রান্ত পরিবর্তন আনার আদেশ দেন। তিনি যেসব কানুনগুলো স্থাপন করে গেছেন, সেসব কানুনগুলো উসমানীয় সাম্রাজ্যে অনেক শতাব্দী ধরে প্রচলিত ছিল।[6] সুলতান সুলাইমান যে শুধু একজন মহান রাজা ছিলেন তা নয়, তিনি একজন মহান কবিও ছিলেন। 'মুহিব্বি' (অর্থ:প্রেমিক) নামক ছদ্ম উপনামে তিনি তুর্কি ও ফারসি ভাষায় বহু কালজয়ী কবিতা লিখেছেন। তার শাসনামলে উসমানীয় সংস্কৃতির অনেক উন্নতি হয়। সুলতান সুলাইমান উসমানীয় তুর্কি ভাষা সহ আরো পাঁচটি ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারতেন: আরবি ভাষা, সার্বীয় ভাষা, ফার্সি ভাষা, উর্দু ভাষা এবং চাগাতাই ভাষা (একটি বিলুপ্ত তুর্কি ভাষা)।
উসমানীয় সংস্কৃতির নিয়ম ভঙ্গ করে, সুলাইমান তার হেরেমের রুথেনিয়ান বংশোদ্ভুত দাসী হুররামকে বিবাহ করেন। সে ছিলো একজন অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, কিন্তু বিবাহের পূর্বেই সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। প্রকৃতপক্ষে সুলতান রসুল সা. এর হাদিস মোতাবেক তাকে জ্ঞান ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে হাদিসের আদেশ মোতাবেক আজাদ করে দেন এবং পরবর্তীতে তাকে একজন মুক্ত নারী হিসেবে বিবাহ করেন। হুররাম, সুলতান সুলাইমানের একাধিক পুত্রসন্তান ও একজন কন্যাসন্তানের মাতা। তার গর্ভে শাহজাদা সেলিম জন্ম নেন, যিনি সুলতান সুলাইমানের দীর্ঘ ৪৬ বছরের শাসনামলের পর তার স্থলাভিষিক্ত ও একাদশতম সুলতান পদে অধিষ্ট হন। তার অন্যান্য পুত্রগণ তার মৃত্যুর পূর্বেই মারা যায়; তার মেঝ পুত্র মুহাম্মদ (মেহমেদ) ১৫৪৩ সালে গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং বড় পুত্র শাহজাদা মুস্তাফাকে বিদ্রোহের কারণে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়, এর কারণ হিসেবে উজিরে আজম রুস্তম পাশার ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে ইতিহাসবিদগণ চিহ্নিত করেছেন। তার অন্য দুই পুত্র বায়েজিদ ও সেলিম পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হন। বায়েজিদ বড় ভাইয়ের পথে হাটলে তাকেও তার চার পুত্র সহকারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ফলে সিংহাসনে আরোহনে সেলিমের আর কোন বাধা রইলো না। যদিও সুলাইমান কোনো পুত্রকে উত্তরাধিকার ঘোষণা দেননি, তবুও আর কোন সন্তান বেঁচে না থাকায় শাহজাদা সেলিমই সিংহাসনে অধীষ্ট হন। পণ্ডিতগণ এই সমস্যাটিকে সাম্রাজ্যের পতন বলার চেয়ে 'সঙ্কট ও অভিযোজন' বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।[7][8][9] সুলাইমানের শেষ জীবন উসমানীয় ইতিহাসে খুবই ধুসর ছিল। সুলাইমানের পরের দশকগুলিতে, উসমানীয় সাম্রাজ্য উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলি অনুভব করতে শুরু করে। এ ঘটনাকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের রূপান্তর হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[8][10]:১১
সুলাইমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট (محتشم سليمان মুহতেশেম সুলাইমান) নামে তিনি পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিত ছিলেন। তাকে সুলাইমান দ্য ফার্স্ট (سلطان سليمان أول, Sulṭān Süleymān-ı Evvel, সুলতান সুলাইমান-ই এভ্ভেল), এবং উসমানীয় আইন-ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সুলাইমান দ্য ল' গিভার (قانونی سلطان سليمان, কানুনি সুলতান সুলাইমান, নীতিপ্রণেতা সুলাইমান) নামেও ডাকা হত। [11]
কানুনি (আইনপ্রণেতা) শব্দটি কখন সুলতান সুলাইমানের উপাধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীর উসমানীয় উৎসগুলিতে এ সম্পর্কে কোনো তথ্যই নেই।[12]
পশ্চিমা বিশ্বে একটি ভ্রান্ত ধারণা করা হয় যে, সুলাইমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট ছিলেন "দ্বিতীয় সুলতান সুলাইমান"। কিন্তু সেই ভ্রান্ত ধারণার উপর ভিত্তি করে পক্ষপাতদুষ্ট ঐতিহাসিকগণ কর্তৃক মিথ্যা তথ্য তৈরি করা হয়েছে যে, সুলাইমান চেলেবি নামক ব্যক্তিকে বৈধ সুলতান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[13]
সুলাইমান কৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণ উপকূলে ট্রাবজোনে শাহজাদা সেলিম তথা তদপরবর্তী সুলতান প্রথম সেলিম এর ঔরসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সম্ভবত দিনটি ছিল ৬ নভেম্বর ১৪৯৪ সাল। যদিও এই তারিখটি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত দলিল দস্তাবেজ থেকে জানা যায়নি। [14] তার মা ছিলেন হাফসা সুলতান, যিনি ১৫৩৪ সালে মারা যান।[15] :৯ সাত বছর বয়সে, সুলাইমান ইস্তাম্বুলে তোপকাপি প্রাসাদের মাদরাসায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব এবং সমরতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। যুবক বয়সে পারগালি ইব্রাহিম নামক একজন ক্রীতদাস সাথে তার বন্ধুত্ব হয়, যিনি পরে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মন্ত্রীদের একজন হয়েছিলেন (কিন্তু পরে তাকে সুলাইমানের নির্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল)।[16] সতেরো বছর বয়সে, তিনি প্রথমে কাফা (থিওডোসিয়া) সানজাক এর গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হন, তারপরে মানিসা সানজাকে নিযুক্ত হন। আদ্রিয়ানোপোলেও সংক্ষিপ্ত মেয়াদে তিনি গভর্নর ছিলেন।
পিতা প্রথম উসমানীয় খলিফা ও নবম উসমানীয় সুলতান সেলিম খানের (১৫১২-১৫২০) মৃত্যুর পর, সুলাইমানকে ইস্তাম্বুলে ডাকা হয়। দশম উসমানীয় সুলতান ও ২য় উসমানীয় খলিফা হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুলাইমানের অভিষেকের একটি প্রাথমিক বিবরণ, তার সিংহাসন আরোহণের কয়েক সপ্তাহ পর, ভেনিসীয় দূত বার্তোলোমিও কন্টারিনি কর্তৃক ইউরোপে সরবরাহ করা হয়েছিল এভাবে:
The sultan is only twenty-five years [actually 26] old, tall and slender but tough, with a thin and bony face. Facial hair is evident but only barely. The sultan appears friendly and in good humor. Rumor has it that Suleiman is aptly named, enjoys reading, is knowledgeable and shows good judgment.
পিতার উত্তরাধিকারী হওয়ার পর, সুলাইমান একের পর এক সামরিক বিজয় শুরু করেন, শেষে তা ১৫২১ সালে দামেস্কের উসমানীয় গভর্নরের নেতৃত্বে একটি বিদ্রোহ পর্যন্ত গড়ায়। সুলাইমান দ্রুতই হাঙ্গেরি রাজ্য থেকে বেলগ্রেড অবরোধের প্রস্তুতি নেন — যা এই অঞ্চলে জন হুনিয়াদির শক্তিশালী প্রতিরক্ষার কারণে তার প্রপিতামহ দ্বিতীয় মেহমেদ অর্জন করতে ব্যর্থ হন। হাঙ্গেরিয়ান এবং ক্রোয়েটদের অপসারণের জন্য এটি দখল করা অত্যাবশ্যক ছিল, কেননা আলবেনিয়ান, বসনিয়াক, বুলগেরিয়ান, বাইজেন্টাইন এবং সার্বদের পরাজয়ের পরে, তারাই ইউরোপে উসমানীয়দের বিজয় ঠেকাতে পারা একমাত্র শক্তিশালী শক্তি হিসেবে রয়ে গিয়েছিল। সুলাইমান তার বিশাল বহর দিয়ে নিপূণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকে সত্ত্বেও বেলগ্রেডকে ঘিরে ফেলেন এবং দানিউবের একটি দ্বীপ থেকে একের পর এক ভারী বোমাবর্ষণ শুরু করেন। বেলগ্রেডে ৭০০ জন সৈন্যের শক্তিশালী দূর্গব্যুহ ছিল। কিন্তু হাঙ্গেরি থেকে কোন সাহায্য না পেয়ে, ১৫২১ সালের আগস্টে সুলাইমানের প্রচণ্ড আক্রমণ সামলাতে না পারায় এর পতন ঘটে।[17]:৪৯
খ্রিস্টান জগতের বৃহত্তর শক্তিশালী কেল্লার পতনের ফলে পুরো ইউরোপ জুড়ে ভীতিসঞ্চার হয়ে পড়ে। ইস্তাম্বুলে থাকা পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের দূতকে লিখতে বাধ্য হয় যে, "বেলগ্রেড দখল ঠিক এমন এক নাটকীয় সময়ের গোড়াতে হয়েছে যা পুরো হাঙ্গেরীকে গিলে ফেলে। ইহাই রাজা লুই-এর মৃত্যু, রাজধানী বুদাপেস্ট দখল, ট্রান্স্যালভেনিয়া দখল, সমৃদ্ধশালী রাজ্যের বিনষ্ট হওয়া এবং আশেপাশের জাতিগুলোর ভাগ্যের চাকার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়..."[18]
এ বিজ্যের ফলে হাঙ্গেরি এবং অস্ট্রিয়ার রাস্তা খুলে যায়, কিন্তু সুলাইমান তার পরিবর্তে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ রোডসের দিকে মনোযোগ দেন, যা ছিল নাইটস হসপিটালারের আবাসস্থল। ১৫২২ সালে গ্রীষ্মকালে, পিতা থেকে প্রাপ্ত সুবিশাল নৌবহরের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সুলতান ৪০০ জাহাজে ১ লক্ষ সৈন্যদেরকে নিয়ে সুলতান এশিয়া মাইনরে রোডস দ্বীপের বিপরীতে অবস্থান নেন।[20] তিনি সেখানে মারমারিস দূর্গ নামে একটি প্রকাণ্ড দূর্গ নির্মাণ করেন, যা উসমানীয় নৌবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে কাজে আসে। পাঁচ মাসের রোডস অবরোধের পর (১৫২২), রোডস আত্মসমর্পণ করেন এবং সুলাইমান নাইটস অফ রোডসকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেন।[21] দ্বীপ জয়ের জন্য উসমানীয়দের ৫০,০০০ [22] [19] থেকে ৬০,০০০ [19] যোদ্ধা অসুস্থতার কারণে মারা যায়। খ্রিস্টানরা দাবি করে ৬৪,০০০ সৈন্য যুদ্ধে এবং ৫০,০০০ জন রোগের মারা যায়, যা কল্পনাপ্রসুত ছাড়া আর কিছুই নয়। রোডসের নাইটগণ পরে মাল্টায় তাদের ঘাঁটি গড়ে তুলে নিজেদেরকে নাইটস অফ মাল্টা হিসেবে উত্থান ঘটায়, এখনো তারা সে নামে রয়েছে।
হাঙ্গেরি এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায়, সুলতান মধ্য ইউরোপে তার অভিযান পুনরায় শুরু করেন এবং ২৯ আগস্ট ১৫২৬-এ তিনি মোহাকসের যুদ্ধে হাঙ্গেরির রাজা লুই ২য় (১৫০৬-১৫২৬) কে পরাজিত করেন। রাজা লুইয়ের নিষ্প্রাণ দেহ মহান সুলতান সুলাইমান খানের সামনে রাখা হলে, তিনি দুঃখভরে বলেন: "আমি সত্যিই তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র হয়ে এসেছি; কিন্তু আমার ইচ্ছা তো এটা ছিল না যে, তাকে পুনরায় প্রাণভিক্ষা আর রাজকীয়তার মিষ্টি স্বাদ দেওয়ার আগেই সে এভাবে মস্তকবিহীন হয়ে যাবে।" [24][25] হাঙ্গেরীয় বাহিনীর পতনের মধ্য দিয়ে উসমানীয় সাম্রাজ্য ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত হয়।[26] সুলাইমান যখন হাঙ্গেরিতে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন মধ্য আনাতোলিয়ায় (সিলিসিয়াতে) ইউরুকস উপজাতিরা কালান্দার চেলেবির নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে বসে।
কিছু হাঙ্গেরীয় উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা সুলাইমানের দরবারে পূর্বের চুক্তিগুলো উল্লেখ করে প্রস্তাব দাখিল করেন যে, যেহেতু লুই উত্তরাধিকারী ছাড়া মারা গিয়েছে, তাই হ্যাবসবার্গরা হাঙ্গেরীয় সিংহাসন গ্রহণ করবে। এজন্য পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট প্রথম ফার্দিনান্দ, যিনি প্রতিবেশী রাষ্ট্র অস্ট্রিয়ার শাসক এবং বিবাহ সম্পর্কে রাজা লুই-এর পরিবারের সাথে আবদ্ধ, তিনি হাঙ্গেরির রাজা হতে চান।[27]:৫২ অন্যান্য পদস্থ ব্যক্তিরা দাবী করেন যে, জন জাপোলিয়া হবে রাজা, যিনি সুলতান কর্তৃক সমর্থিত। রোমান সম্রাট চার্লস পঞ্চম এবং তার ভাই ফার্ডিনান্ডের অধীনে, হ্যাবসবার্গরা রাজধানী বুদা পুনরুদ্ধার করে এবং হাঙ্গেরির দখল নেয়। ১৫২৯ সালে এহেন পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, সুলতান সুলাইমান দানিউব উপত্যকা দিয়ে অগ্রসর হন এবং বুদার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেন; পরবর্তী শরৎকালে, তার বাহিনী ভিয়েনা অবরোধ করে। এটি ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী অভিযান এবং পশ্চিমে তার অগ্রসরের শিখর। ১৬,০০০ এর একটি শক্তিশালী গ্যারিসন নিয়ে[28] অস্ট্রিয়ানরা সুলাইমানকে প্রথম পরাজয়ের জন্য অগ্রসর হয়, যা ২০ শতক পর্যন্ত টিকে থাকা তিক্ত উসমানীয়-হ্যাবসবার্গ শত্রুতার বীজ বপন করে। ১৫৩২ সালে সুলতান ভিয়েনা অবরোধের জন্য তার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হয়, কারণ উসমানীয় বাহিনী গুন্স অবরোধের কারণে অবরোধ বিলম্বিত হয় বিধায় ভিয়েনায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই, ফার্দিনান্দ সুলতানের কাছে অপমানিত হলেও, উসমানীয় সেনাবাহিনী বৈরী আবহাওয়ার শিকার হওয়ায় কার্য সিদ্ধি করতে পারে নাই। ফলে অবরোধের সরঞ্জামগুলি পিছনে ফেলে যেতে বাধ্য হয়।[29] :৪৪৪
১৫৪০ সালে, হাঙ্গেরির সংঘাতের পুনর্নবীকরণের ফলে সুলতান সুলাইমানকে ভিয়েনা ব্যর্থতার প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। ১৫৪১ সালে, হ্যাবসবার্গরা বুদা অবরোধ করার চেষ্টা করে, কিন্তু সুলতানের আক্রমণে তারা অপদস্থ ও বিতাড়িত হয়। ১৫৪১ এবং ১৫৪৪ সালে পরপর দুটি অভিযানে উসমানীয়রা প্রচুর হ্যাবসবার্গীয় দুর্গ দখল করে ফেলে।[30]:৫৩ সম্মুখে বিশাল পরাজয় দেখে ফার্দিনান্দ এবং চার্লস সুলাইমানের সাথে তড়িঘড়ি করে পাঁচ বছরের একটি অপমানজনক চুক্তি করতে বাধ্য হয়। ফার্দিনান্দ হাঙ্গেরি রাজ্যের দাবি ত্যাগ করে এবং হাঙ্গেরির যেসব অঞ্চল তার কাছে রয়েছে সেগুলোর জন্য সুলতানকে একটি নির্দিষ্ট বার্ষিক অর্থ প্রদান করতে বাধ্য হয়। চুক্তির প্রতীকী গুরুত্বের জন্য, চুক্তিনামাতে চার্লস পঞ্চমকে 'সম্রাট' হিসেবে নয় বরং 'স্পেনের রাজা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এবং সুলতান সুলাইমানকে প্রকৃত 'সিজার' হিসেবে সম্মানিত করা হয়।[30] :৫৪
১৫৫২ সালে, সুলাইমানের বাহিনী হাঙ্গেরি রাজ্যের উত্তর অংশে অবস্থিত এগার অবরোধ করে, কিন্তু ইস্তভান ডোবোর নেতৃত্বে রক্ষকরা আক্রমণ প্রতিহত এবং এগার দুর্গ রক্ষা করতে সক্ষম হয়। [31]
সুলতান ইউরোপের প্রধান শক্তিদেরকে পদানত ও শায়েস্তা করে মুসলমান ও উসমানীয়দের শক্তি নিশ্চিন্ত করতে সক্ষম হন।
সুলাইমান তার ইউরোপীয় সীমানা স্থিতিশীল করার সাথে সাথে এখন পারস্যের শিয়া সাফাভীয় রাজবংশ দ্বারা সৃষ্ট তৎকালীন বিরাজমান হুমকির দিকে মনোযোগ দেন। বিশেষ করে দুটি ঘটনা উত্তেজনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। প্রথমত, শাহ তাহমাস্প বাগদাদেএ সুলাইমানের অনুগত গভর্নরকে হত্যা করেছিলেন এবং তার স্থলাভিষিক্ত শাহের অনুসারীকে ক্ষমতা দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, বিটলিস-এর গভর্নর দলত্যাগ করেছিলেন এবং সাফাভিদের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিয়েছিলেন।[32] As a result, in 1533, Suleiman ordered his Grand Vizier Pargalı Ibrahim Pasha to lead an army into eastern Asia Minor where he retook Bitlis and occupied Tabriz without resistance. Having joined Ibrahim in 1534, Suleiman made a push towards Persia, only to find the Shah sacrificing territory instead of facing a pitched battle, resorting to harassment of the Ottoman army as it proceeded along the harsh interior.[33] When in the following year Suleiman and Ibrahim made a grand entrance into Baghdad, its commander surrendered the city, thereby confirming Suleiman as the leader of the Sunni Islamic world and the legitimate successor to the Sunni Abbasid Caliphs.[34] Moreover, the fact Suleiman restored the grave of Sunni imam Abu Hanifa also strengthened his credentials and claim to the caliphate.
Attempting to defeat the Shah once and for all, Suleiman embarked upon a second campaign in 1548–1549. As in the previous attempt, Tahmasp avoided confrontation with the Ottoman army and instead chose to retreat, using scorched earth tactics in the process and exposing the Ottoman army to the harsh winter of the Caucasus.[35] Suleiman abandoned the campaign with temporary Ottoman gains in Tabriz and the Urmia region, a lasting presence in the province of Van, control of the western half of Azerbaijan and some forts in Georgia.[36]
In 1553 Suleiman began his third and final campaign against the Shah. Having initially lost territories in Erzurum to the Shah's son, Suleiman retaliated by recapturing Erzurum, crossing the Upper Euphrates and laying waste to parts of Persia. The Shah's army continued its strategy of avoiding the Ottomans, leading to a stalemate from which neither army made any significant gain. In 1554, a settlement was signed which was to conclude Suleiman's Asian campaigns. Part of the treaty included and confirmed the return of Tabriz, but secured Baghdad, lower Mesopotamia, the mouths of the river Euphrates and Tigris, as well as part of the Persian Gulf.[37] The Shah also promised to cease all raids into Ottoman territory.
সুলতান সুলাইমানের পিতা পারস্যের সাথে যুদ্ধকে অগ্রাধিকার দিতেন। কিন্তু সুলাইমান প্রথমে ইউরোপের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং পারস্যের ব্যাপারে শিথিল হন। কেননা তারা নিজস্ব শত্রুদের দ্বারা ব্যস্ত ছিল। সুলাইমান তার ইউরোপীয় সীমান্ত স্থিতিশীল করার পর, শিয়া উপদলের ঘাঁটি পারস্যের দিকে মনোযোগ দেন।সাফাভিদ রাজবংশ দুটি ঘটনার পর সুলাইমানের প্রধান শত্রু হয়ে ওঠে। প্রথমত, শাহ তাহমাসপ সুলাইমানের অনুগত বাগদাদের গভর্নরকে হত্যা করে এবং তার নিজের লোককে ঢুকিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, বিতলিসের গভর্নর সুলাইমানের দলত্যাগ করে সাফাভিদের আনুগত্য করে বসে।[38] :৫১ ফলস্বরূপ, ১৫৩৩ সালে সুলাইমান তার উজিরে আজম পারগালি ইব্রাহিম পাশাকে পূর্ব এশিয়া মাইনরে একটি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সুলতানের নির্দেশক্রমে বিতলিস পুনরুদ্ধার করেন এবং বিনা প্রতিরোধে তাবরিজ দখল করেন। ১৫৩৪ সালে সুলাইমান ইব্রাহিমের বাহিনীর সাথে যোগ দেন। তারা পারস্যকে প্রচণ্ড ধাক্কা মারেন। কিন্তু শুধুমাত্র একটি কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে নিজের মাথা কাটা না পরার জন্য শাহ তাদেরকে বিভিন্ন দুস্কর অঞ্চলে নিয়ে এসে হয়রানি করার আশ্রয় নেন। [39] ১৫৩৫ সালে সুলাইমান বাগদাদে বীরদর্পে প্রবেশ করেন। সুলতান সুলাইমান হানাফি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানিফার মাযার ও আব্দুল কাদের জীলানীর মাজার পুনরুদ্ধার করেন, যা ইরানের শাহ গুড়িয়ে দিয়েছিল।[40] উসমানীয়রা হানাফি মাযহাব ও কাদেরি তরিকতের অনুসারী ছিল।
শাহকে সর্বদা পরাজিত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকে সুলাইমানের। ১৫৪৮-৪৯ সালে তিনি তার দ্বিতীয় অভিযান শুরু করেন। আগের মতই, তাহমাসপ উসমানীয় সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলেন এবং পশ্চাদপসরণ করাকে বেছে নেন। এবং হয়রানি করার জন্য ঝলসে যাওয়া মাটির কৌশল ব্যবহার করে উসমানীয় সেনাবাহিনীকে ককেশাসের কঠোর শীতের অঞ্চলে নিয়ে আসে উন্মোচিত করে।[41] ফলে সুলাইমান তাবরিজ এবং উরমিয়া অঞ্চলে অস্থায়ী উসমানীয় স্বার্থ, ভ্যান প্রদেশে স্থায়ী উপস্থিতি, আজারবাইজানের পশ্চিম অর্ধেকের নিয়ন্ত্রণ এবং জর্জিয়ার কিছু দুর্গের সাথে অভিযান পরিত্যাগ করেন।[36]
১৫৫৩ সালে সুলাইমান শাহের বিরুদ্ধে তার তৃতীয় এবং চূড়ান্ত অভিযান শুরু করেন। শাহের পুত্রের কাছে প্রাথমিকভাবে এরজুরুমের অঞ্চলগুলি হারানোর পরে, সুলাইমান এরজুরুম পুনরুদ্ধার করেন এবং ফোরাত অতিক্রম করে পারস্যের কিছু অংশে বর্জ্য ফেলে প্রতিশোধ নেন। শাহের বাহিনী উসমানীয়দের এড়িয়ে চলার কৌশল অব্যাহত রাখে, যার ফলে একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় যেখান থেকে কোনো সেনাবাহিনীই কোনো উল্লেখযোগ্য লাভ করতে পারেনি। ১৫৫৫ সালে, অমাস্যার শান্তি নামে পরিচিত একটি বন্দোবস্ত স্বাক্ষরিত হয়েছিল যা দুটি সাম্রাজ্যের সীমানা নির্ধারণ করে। এই চুক্তির মাধ্যমে, আর্মেনিয়া এবং জর্জিয়া উভয়ই পশ্চিম আর্মেনিয়া ও পশ্চিম কুর্দিস্তানে ভাগ হয়ে যায়। পশ্চিম জর্জিয়া (পশ্চিম সামসখে) উসমানীয়দের ভাগে পড়ে এবং পূর্ব আর্মেনিয়া, পূর্ব কুর্দিস্তান এবং পূর্ব জর্জিয়া (পূর্ব সামসখ সহ) সাফাভিদের ভাগে পড়ে।[42] উসমানীয় সাম্রাজ্য বাগদাদ সহ সমগ্র ইরাক দখল করে, যা তাদের পারস্য উপসাগরে প্রবেশ করার পথ খুলে দেয়। তখন পারস্যরা তাদের প্রাক্তন রাজধানী তাবরিজ এবং ককেশাসে তাদের অন্যান্য উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলি ধরে রাখে, যেভাবে তারা যুদ্ধের আগে ছিল, যেমন দাগেস্তান ও অন্যান্য অঞ্চল, এখন যা আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত।[43][44]
১৫১৮ সাল থেকে ভারত মহাসাগরে উসমানীয় জাহাজ চলাচল করা শুরু করে। উসমানীয় অ্যাডমিরাল যেমন খাদিম সুলাইমান পাশা, সাইদি আলি রইস [45] এবং কুর্তোগলু খিজির রইসরা থাট্টা, সুরাট এবং জাঞ্জিরায় মুঘল সাম্রাজ্যের বন্দরগুলিতে ভ্রমণ করেতেন বলে জানা যায়। মুঘল সম্রাট আকবর দ্য গ্রেট নিজেই সুলাইমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের সাথে ছয়টি নথি বিনিময় করেছিলেন।[46][47][48]
সুলাইমান পর্তুগিজদের অপসারণ এবং মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে বাণিজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসে তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি নৌ অভিযান পরিচালনা করেন। মুঘল সাম্রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে পর্তুগিজদের উত্থানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য ১৫৩৮ সালে ইয়েমেনের অ্যাদেন উসমানীয়রা দখল করে। [49] যাত্রাপথে, উসমানীয়রা ১৫৩৮ সালের সেপ্টেম্বরে দিউ অবরোধে পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে ব্যর্থ হয়, কিন্তু তারপর এডেনে ফিরে আসে, যেখানে তারা ১০০টি আর্টিলারি দিয়ে শহরটিকে সুরক্ষিত করে।[49][50] এই ঘাঁটি থেকে, সুলায়মান পাশা ইয়েমেনের পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন, এবং রাজধানী সানাও দখল করেন।[49]
লোহিত সাগরের শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, সুলাইমান সফলভাবে পর্তুগিজদের সাথে বাণিজ্য রুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হন এবং ১৬'শ শতক জুড়ে মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে একটি উল্লেখযোগ্য স্তরের বাণিজ্য বজায় রাখেন।[51]
১৫২৬ থেকে ১৫৪৩ সাল পর্যন্ত, সুলাইমান আবিসিনিয়া বিজয়ের সময় আহমদ ইবনে ইব্রাহিম আল-গাজির নেতৃত্বে সোমালি আদাল সালতানাতের সাথে লড়াই করার জন্য ৯০০ জনের বেশি তুর্কি সৈন্যকে মোতায়েন করেন। প্রথম আজুরান-পর্তুগিজ যুদ্ধের পর, উসমানীয় সাম্রাজ্য ১৫৫৯ সালে দুর্বল আদাল সালতানাতকে তার অধীন করে নেন। এই সম্প্রসারণ সোমালিয়া এবং আফ্রিকার হর্নে উসমানীয় শাসনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। এর ফলে পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের ঘনিষ্ঠ মিত্র, অজুরান সাম্রাজ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ভারত মহাসাগরে উসমানী প্রতিপত্তি বৃদ্ধি হয়।[52]
পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির নতুন সামুদ্রিক বাণিজ্য পথের আবিষ্কার উসমানীয় বাণিজ্যের একচেটিয়া এড়িয়ে যাবার পথ খুলে দেয়। ১৪৮৮ সালে পর্তুগিজদের উত্তমাশা অন্তরীপ আবিষ্কার ১৬ শতক জুড়ে মহাসাগরে উসমানীয়-পর্তুগিজ নৌ যুদ্ধের সূচনা দেয়। উসমানীয়দের সাথে মিত্রতা করে অজুরান সালতানাত ভারত মহাসাগরে পর্তুগিজদের অর্থনৈতিক একচেটিয়া আধিপত্যকে অস্বীকার করে একটি নতুন মুদ্রার ব্যবহার করে যা উসমানীয় নীতি অনুসরণ করে, এইভাবে আজুরানরা পর্তুগিজদের ব্যাপারে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করে। [53]
স্থলভাগে একচেটিয়া বিজয়লাভ করার পর, সুলাইমানের কাছে চার্লস পঞ্চমের একটি পত্র পাঠানো হয়। পত্রে সুলতান সুলাইমানকে স্বাগত জানিয়ে লিখা হয়েছিল যে, মোরিয়াতে করোনি দূর্গ (আধুনিক পেলোপনিস, উপদ্বীপীয় গ্রীস) চার্লসের অ্যাডমিরাল আন্দ্রেয়া দোরিয়ার কাছে হেরে গেছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে স্প্যানিশদের উপস্থিতি সুলাইমানকে উদ্বিগ্ন করে তোলে, যারা এটিকে এই অঞ্চলে উসমানীয় আধিপত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী চার্লস পঞ্চম এর অভিপ্রায়ের প্রাথমিক ইঙ্গিত হিসাবে দেখেছিল। ভূমধ্যসাগরে নৌ-প্রধানতা পুনরুদ্ধার করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে, সুলাইমান খিজির খাইরুদ্দিন নামের একজন ব্যতিক্রমী নৌ কমান্ডার নিযুক্ত করেন, যিনি ইউরোপীয়দের কাছে বারবারোসা নামে পরিচিত ছিলেন। আমিরুল বাহর (অ্যাডমিরাল-ইন-চিফ) হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরে, বারবারোসাকে উসমানীয় নৌবহর পুনর্গঠনের জন্য আদেশ করা হয়।
১৫৩৫ সালে, চার্লস পঞ্চম ২৬,৭০০ সৈন্য নিয়ে (এর মধ্যে ১০,০০০ স্প্যানিয়ার্ড, ৮,০০০ ইতালীয়, ৮,০০০ জার্মান এবং ৭০০ জন ভ্যাটিকান সিটির পোপ সেন্ট জনের নাইটস) [54] তিউনিশিয়ায় উসমানীয়দের বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্য একটি পবিত্র সঙ্ঘের নেতৃত্ব দেন। পরবর্তী বছরে ভেনিসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত যুদ্ধ করতে একতাবদ্ধ হলে সুলাইমান চার্লসের বিরুদ্ধে জোট গঠনের জন্য ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রান্সিসের প্রস্তাব গ্রহণ করে নেন।[55] :৫১ ১৫৩৮ সালে, স্প্যানিশ নৌবহর বারবারোসার কাছে প্রেভেজার যুদ্ধ-এ পরাজিত হয়। ফলে লেপান্তোর যুদ্ধ-এ পরাজয়ের আগ পর্যন্ত তুর্কিদের জন্য পূর্ব ভূমধ্যসাগর সুরক্ষিত থাকে।
পূর্ব মরক্কো ও উত্তর আফ্রিকার বিশাল মুসলিম অঞ্চল উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে সংযুক্ত হয়। ত্রিপোলিটানিয়ার বারবারি স্টেটস, তিউনিসিয়া এবং আলজেরিয়া উসমানীয় সাম্রাজ্যের স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশে পরিণত হয়, যা পঞ্চম চার্লসের সাথে সুলাইমানের বিরোধের প্রধান প্রান্ত হিসেবে কাজ করে। চার্লস এটি নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করে। ১৫৪১ সালে তুর্কিরা চার্লসকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।[56] এরপরে উত্তর আফ্রিকার বারবারি জলদস্যুদের জলদস্যুতাকে স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রেক্ষাপট হয়ে দাঁড়ায়। স্বল্প সময়ের জন্য উসমানীয় সম্প্রসারণ ভূমধ্যসাগরে নৌবাহিনীর আধিপত্য রক্ষা করে।
১৫৪২ সালে, ইতালীয় যুদ্ধের সময় হ্যাবসবার্গ শত্রুর মুখোমুখি হলে, ফ্রান্সের রাজা প্রথম ফ্রান্সিস ফ্রাঙ্কো-উসমানীয় জোট পুনর্নবীকরণ করতে আগ্রহী হন। ১৫৪২ সালের প্রথম দিকে, পলিন সফলভাবে জোটের বিশদ আলোচনা করেন। সুলতান সুলাইমান জার্মান রাজা ফার্দিনান্দের অঞ্চলগুলির বিরুদ্ধে ৬০,০০০ সৈন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন, সেইসাথে চার্লসের বিরুদ্ধে ১৫০টি রণতরী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তখন ফ্রান্স ফ্ল্যান্ডার্স আক্রমণ এবং স্পেনের উপকূলে নৌ শক্তি দিয়ে হয়রানি এবং ৪০টি রণতরীর সাহাজ্যে লেভান্ত অপারেশনের জন্য তুর্কিদের সহায়তা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।[57] সুলাইমান বারবারোসার অধীনে ১০০টি রণতরী দিয়ে ফ্রান্সকে পশ্চিম ভূমধ্যসাগরে সহায়তার জন্য পাঠান। বারবারোসা ফ্রান্সে পৌঁছানোর আগে নেপলস এবং সিসিলি উপকূল দখল করেন, যেখানে ফ্রান্সিস টুলনকে উসমানীয় অ্যাডমিরালের নৌ সদর দফতর করেছিলেন। একই অভিযানে বারবারোসা ১৫৪৩ সালে ফ্রান্সের নিস দখল করেন। ১৫৪৪ সাল নাগাদ, প্রথম ফ্রান্সিস এবং পঞ্চম চার্লস এর মধ্যকার শান্তি চুক্তি ফ্রান্স-উসমানীয় জোটের অস্থায়ী অবসান ঘটায়।
ভূমধ্যসাগরের অন্যত্র, ১৫৩০ সালে নাইট হসপিটালাররা যখন নাইটস অফ মাল্টা হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন মুসলিম নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের কর্মকাণ্ড দ্রুত উসমানীয়দের ক্রোধ বাড়িয়ে তুলে। সুলতান মাল্টা থেকে নাইটদের বিতাড়িত করার জন্য আরেকটি বিশাল সেনাবাহিনীকে একত্রিত করে পাঠান। উসমানীয়রা ১৫৬৫ সালে মাল্টা আক্রমণ করে। ফলে মাল্টার গ্রেট সিজ শুরু হয়। এটি ১৮ মে শুরু হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলেছিল এবং সেন্ট মাইকেল এবং সেন্ট জর্জের হলের মাত্তেও পেরেজ ডি'অ্যালেসিওর ফ্রেস্কোতে স্পষ্টভাবে চিত্রিত করা হয়। প্রথমে এখানে রোডস যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হয়। মাল্টার বেশিরভাগ শহর ধ্বংস হয়ে যায় এবং অর্ধেক নাইটবাহিনী যুদ্ধে নিহত হয়; কিন্তু স্পেন থেকে একটি ত্রাণ বাহিনী যুদ্ধে প্রবেশ করে, যার ফলে ১০,০০০ উসমানীয় সৈন্যের ক্ষতিসাধন হয় এবং স্থানীয় মাল্টিজ নাগরিকরা স্বাধীনতা লাভ করে। [58]
যদিও সুলতান সুলাইমান পশ্চিমে "ম্যাগনিফিসেন্ট" হিসাবে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যে সর্বদা কানুনি সুলাইমান বা "আইনদাতা" ( قانونی ) হিসেবে বিরাজ করতেন। সাম্রাজ্যের আইন ছিল শরীয়াহ বা পবিত্র আইন নির্ভর, যা ইসলামের ঐশ্বরিক আইন হওয়ায় তা পরিবর্তন করার ক্ষমতা সুলতানের হাতে ছিল না, কিন্তু কিছু স্বতন্ত্র ক্ষেত্র সুলাইমানের ইচ্ছার আওতাভুক্ত ছিল, যেগুলো قانون নামে পরিচিত ( قانون , ক্যানোনিকাল আইন)। সেগুলো হল ফৌজদারি আইন, জমির মেয়াদ এবং কর দেওয়ার মতো ক্ষেত্রগুল।[59] :২৪৪ তিনি তার পূর্ববর্তী নয়জন উসমানীয় সুলতানের জারি করা সমস্ত রায় সংগ্রহ করেন। সদৃশ্য আইনগুলি বাদ দিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্যগুলো বেছে নিয়ে, তিনি ইসলামের মৌলিক আইন লঙ্ঘন না হয় এমন সতর্কতাসহ একটি একক আইনি কোড জারি করেন।[60]:২০গ্র্যান্ড মুফতি আবুস সউদ এফেন্দি সমর্থিত এই কাঠামোর মধ্যেই সুলাইমান দ্রুত বাড়ন্ত সাম্রাজ্যের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে আইনী সংস্কার করেছিলেন। কানুনি আইন যখন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে, তখন আইনের কোড কানুন -ই ওসমানী ( قانون عثمانی ) নামে পরিচিত হয়, (উসমানীয় আইন)। সুলাইমানের এই আইন তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে জারী ছিলো। [60] :২১
সুলতানগণ তাদের সাম্রাজ্যের ইহুদি প্রজাদের রক্ষা করার জন্যও বহু শতাব্দী ধরে ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৫৫৩ বা ১৫৫৪ সালের শেষের দিকে, তার প্রিয় ডাক্তার এবং ডেন্টিস্ট, স্প্যানিশ ইহুদি মোসেস হ্যামনের পরামর্শে সুলতান একটি ফরমান ( فرمان ) জারী করেন। তা ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ইহুদিদের বিরুদ্ধে রক্তপাতের নিন্দা করা। [61] :১২৪ উপরন্তু, সুলাইমান নতুন ফৌজদারি এবং পুলিশ আইন প্রণয়ন করেন। নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য জরিমানা নির্ধারণ করেন এবং সেইসাথে মৃত্যু বা অঙ্গহানির মোকাদ্দামাগুলি হ্রাস করার চেষ্টা করেন। কর আরোপের ক্ষেত্রে পশু, খনিজ, বাণিজ্যের মুনাফা এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্ক সহ বিভিন্ন পণ্য ও পণ্যের উপর কর আরোপ করা হয়। কর ছাড়াও, যে কর্মকর্তারা দুর্নীতি করতেন তাদের জমি ও সম্পত্তি সুলতান কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়ে যেত।
সুলতানের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ছিল শিক্ষা ক্ষেত্র। ধর্মীয় সংগঠনগুলির অর্থায়নে মসজিদকেন্দ্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সেই সময়ের খ্রিস্টান দেশগুলির তুলনায় বহু আগে থেকেই মুসলিম ছেলেদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম চালু করে। রাজধানীতে, সুলাইমান মেকতেব (مكتب,প্রাথমিক বিদ্যালয়) সংখ্যা বাড়িয়ে চল্লিশটি করেন, সেখানে শিক্ষার্থীদেরকে ইসলামী নীতির পাশাপাশি পড়ালিখা শেখান হত। উচ্চ শিক্ষায় ইচ্ছুক যুবকরা আটটি মাদরাসা (مدرسه, কলেজ) এর মধ্যে যে কোনো একটিতে ভর্তি হতে পারত, এসব মাদরাসায় অধ্যয়নের জন্য যে সব বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল তা হল ব্যাকরণ, অধিবিদ্যা, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা এবং জ্যোতিষশাস্ত্র, বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা, কোরআন, হাদিস, ফিকহ। উচ্চতর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বলা হত মাদরাসা, যেখানকার স্নাতকোত্তীর্ণগন ইমাম (امام) বা শিক্ষক হয়ে ছড়িয়ে পড়তেন। শিক্ষাকেন্দ্রগুলি বেশিরভাগই মসজিদের আঙ্গিনা জুড়ে তৈরি হত। অনেকগুলি কমপ্লেক্সের সমন্বয়ে শিক্ষাকেন্দ্রগুলি ছিল। কমপ্লেক্সগুলিতে থাকত লাইব্রেরি, স্নানাগার, রান্নাঘর, বাসস্থান এবং জনসাধারণের সুবিধার জন্য হাসপাতাল ও মুসাফিরখানা। [63]
সুলাইমানের পৃষ্ঠপোষকতায়, উসমানীয় সাম্রাজ্য তার সাংস্কৃতিক বিকাশের স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে। শত শত রাজকীয় শৈল্পিক সমাজের লোকজন (যাদের اهل حرف এহল-ই হিরেফ বলা হত, "প্রতিভাবান সম্প্রদায়") রাজকীয় আসন, তোপকাপি প্রাসাদে সমাদৃত হয়েছিল। একটি শিক্ষানবিশ প্রোগ্রামের পর, শিল্পী এবং কারিগররা তাদের আপন আপন ক্ষেত্রে পদমর্যাদায় অগ্রসর হতে পারত এবং ত্রৈমাসিক-বার্ষিক কিস্তিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ মজুরি দেওয়া হত। টিকে থাকা বেতন রেজিস্টারগুলি আজও সুলাইমানের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতার বিস্তৃতির সাক্ষ্য দেয়, 1526 সালের প্রাচীনতম নথিতে ৬০০ সদস্যের ৪০টি সমিতির তালিকা করা আছে৷ এহল-ই হিরেফ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রতিভাবান কারিগরদেরকে সুলতানের দরবারের প্রতি আকৃষ্ট করে, ইসলামী বিশ্ব এবং ইউরোপের সাম্প্রতিক বিজিত দেশ উভয় অঞ্চলের আরবি, তুর্কি এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটে সাম্রাজ্যে।[64] দরবারের কারিগরদের মধ্যে ছিল চিত্রকর, বই বাঁধাইকারী, লোমের কারিগর, অলংকারিক এবং স্বর্ণকার। পূর্ববর্তী শাসকরা যেখানে পার্সিয়ান সংস্কৃতিতে প্রভাবিত ছিলেন (যেমন, সুলাইমানের পিতা, সেলিম প্রথম, ফার্সি ভাষায় কবিতা লিখতেন), সেখানে সুলাইমানের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতা দেখা যায় যে, উসমানীয় সাম্রাজ্য তার নিজস্ব শৈল্পিকতায় জোরদার করেছে।[65]
সুলাইমান নিজে একজন দক্ষ কবি ছিলেন, তিনি মুহিব্বি (محبی, "Lover") ছদ্মনামে (nom de plume) ফারসি ও তুর্কি ভাষায় লিখতেন। সুলাইমানের কিছু কথা তুর্কি প্রবাদে পরিণত হয়ে গিয়েছে, তন্মধ্যে সুপরিচিত একটি হল লক্ষ্য সবার এক হলে কী, গল্প কিন্তু বহু। 1543 সালে যখন তার ছোট ছেলে শাহজাদা মেহমেদ মারা যায়, তিনি সে বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি চলমান ক্রোনগ্রাম তৈরি করেন: Peerless among princes, my Sultan Mehmed.[66][67] সুলাইমানের নিজের কাজ ছাড়াও, ফুজুলি এবং বাকি সহ সুলাইমানের শাসনামলে অনেক মহান প্রতিভা সাহিত্যিক জগতকে উজ্জীবিত করেছিল। সাহিত্যিক ইতিহাসবিদ ই.জে.ডব্লিউ. গিব লক্ষ্য করেছেন যে "কোনও সময়ে, এমনকি তুরস্কেও, এই সুলতানের শাসনামলের চেয়ে কবিতাকে বেশি উৎসাহ দেওয়া হয়নি"।[66] সুলাইমানের সবচেয়ে বিখ্যাত লিখা হল:
The people think of wealth and power as the greatest fate,
But in this world a spell of health is the best state.
What men call sovereignty is a worldly strife and constant war;Worship of God is the highest throne, the happiest of all estates.[68]
— Mansel, 84
সুলাইমান তার সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি ধারাবাহিক স্থাপত্য উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্যও বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। সুলতান সেতু, মসজিদ, প্রাসাদ এবং বিভিন্ন দাতব্য ও সামাজিক স্থাপনা সহ একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে কনস্টান্টিনোপলকে ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নির্মাণ করেছিলেন সুলতানের প্রধান স্থপতি মিমার সিনান, যার অধীনে উসমানীয় স্থাপত্য তার শীর্ষে পৌঁছেছিল। সিনান সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে তিন শতাধিক স্মৃতিস্তম্ভের প্রকৌশলী ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে তার দুটি মাস্টারপিস স্থাপনা, সুলাইমানিয়ে এবং সেলিমিয়ে মসজিদ - পরবর্তীটি সুলাইমানের পুত্র সেলিম দ্বিতীয়ের শাসনামলে আদ্রিয়ানোপলে (বর্তমানে এদির্নে) নির্মিত হয়েছিল। সুলাইমানের সবচেয়ে বড় অবদান হল কাবাসহ মক্কা ও মদিনা সংস্কার। কথিত আছে বেলগ্রেড, রোডস ও বাগদাদ জয় করার পর সুলতান একদা রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, রসুল সা তাকে বলছেনঃ
«إذا ما فتحت قلاع بلجراد ورودس وبغداد، فقم بإعمار مدينتي [69]» |
অনুবাদঃ তুমি বেলগ্রেড, রোডস ও বাগদাদের জয়ের পর আমার মদিনাকে পুণঃনির্মান করো। শীঘ্রই, সুলতান দুটি পবিত্র মসজিদের জমি পুনর্গঠন এবং তাদের জন্য আবাসন প্রকল্পের উন্নয়নের আদেশ দেন। এমনকি তিনি তার নিজের সম্পদ থেকে তীর্থযাত্রীদের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য একটি দাতব্য এনডোমেন্ট প্রতিষ্ঠা করার অনুরোধ জানিয়ে একটি উইল রেখে যান। তার মৃত্যুর পর তার কন্যা মিহিরিমাহ সুলতান তার ইচ্ছা পূরণ করেন এবং আইন জুবায়দা খনন করে আরাফাত থেকে মক্কা পর্যন্ত পানির বন্দোবস্ত করে দেন। তাছাড়া সুলতান দামেস্কে একটি কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন, জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদের ডোম অফ দ্য রক এবং জেরুজালেম শহরের দেয়াল (যা জেরুজালেমের পুরানো শহরের বর্তমান দেয়াল) সংস্কার করেন। বর্তমান আল-আকসা মসজিদ সুলাইমানের সংস্কারের নমুনা।[70]
সুলায়মানের তিনজন সুপরিচিত সঙ্গী ছিলেন:
সুলায়মানের তিন সঙ্গীর মোট আট সন্তান ছিল:
হুররাম সুলতান সুলাইমানের প্রিয়তম প্রমোদ দাসী (উপপত্নী) ও পরবর্তীকালে তার বৈধ স্ত্রী এবং শাহজাদা মুস্তাফা ও শাহজাদা মুরাদ ব্যতীত বাকি সকল সন্তানের জন্মদাত্রী।[76] সুলতানের প্রিয়তম হওয়ায় পশ্চিমা কূটনীতিকরা, তার সম্পর্কে প্রাসাদের বিভিন্ন গুজবকে লক্ষ্য করে, তাকে " Russelazie" বা "Roxelana" বলে সম্বোধন করে।[77] তিনি একজন অর্থোডক্স পুরোহিতের কন্যা, তাকে ক্রিমিয়া থেকে তাতাররা বন্দী করে ইস্তাম্বুলে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি করে। সুলাইমানের প্রিয় হয়ে উঠায় হুররাম প্রাসাদ ও শহরের পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেন।[78]:৮৬ হুররামকে কেন্দ্র করে সুলতান দুটি প্রাচীন নীতি ভঙ্গ করেন। তা হলো― ক্রীতদাসীকে বিবাহ করা এবং আজীবন প্রাসাদে থাকতে দেওয়া। নীতি অনুযায়ী সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারীরা যখন উপযুক্ত বয়সে পরিণত হবে তাদেরকে সাম্রাজ্যের প্রত্যন্ত প্রদেশগুলিকে শাসন করতে হবে, এবং সে সময় ওই উত্তরাধিকারী সিংহাসনে ফিরে না আসা পর্যন্ত তার জন্মদাত্রীকেও ওই অঞ্চলেই বসবাস করতে হবে। [79] :৯০ সুলাইমান হুররামের জন্য এই নীতি তুলে নেন।
সুলতান সুলাইমান তার "মুহিব্বি" নামক ছদ্মনাম ব্যবহার করে হুররেম সুলতানের জন্য নিম্নোক্ত কবিতাটি লিখেছিলেন:
আমার নিঃসঙ্গ কুলুঙ্গির সিংহাসন
আমার সম্পদ, আমার ইশক, আমার চাঁদনী।
আমার অন্তরঙ্গম, আস্থাভাজন, অস্তিত্ব
হৃদয়ের সুলতান, আমার একমাত্র ভালবাসা।
সুন্দরীদের মাঝে সর্বোত্তম...
আমার বসন্ত, নন্দিত প্রেম, দিনের বেলা,
আমার প্রিয়তমা, হাসির পাতা...
আমার গুল্ম, মিষ্টি, আমার গোলাপ,
এ জগতে মোর একমাত্র প্রতাপ...
ইস্তাম্বুল, আমার কারামান, আনাতোলিয়ায় মোর ধরাধাম,
আমার বাদাখশান, আমার বাগদাদ আর খোরাসান।
আমার সুকেশী রমণী, হেলানো ভুরুর প্রণয়,
আর দুষ্টুমিভরা চোখের প্রেম...
আমি সর্বদা তোমারই গুণ গাবো
আমি
এই ভগ্ন হৃদয়ের প্রেমিক,
অশ্রুভরা চোখের মুহিব্বি,
আমিই তো সুখী।"[80]
পারগালি ইব্রাহিম পাশা সুলাইমানের বাল্যবন্ধু ছিলেন। ইব্রাহিম মূলত পারগা (এপিরাসের) এলাকার খ্রিস্টান পরিবারের সন্তান ছিলেন। ছোটকালেই তিনি দেভশিরমে পদ্ধতিতে প্রাসাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেন। ১৪৯৯-১৫০৩ উসমানীয়-ভেনিশিয়ান যুদ্ধের সময় এক অভিযানে তিনি বন্দী হন। ১৫১৪ সালে তাকে সুলাইমানের দাস হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। [81] ইব্রাহিম ইসলাম গ্রহণ করলে সুলাইমান তাকে রাজকীয় খাসকামরা সহকারী নিযুক্ত করেন, তারপর তাকে খাসকামরা প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দেন। [82] :৮৭ ইব্রাহিম পাশা ১৫২৩ সালে উজিরে আজম পদে অধিষ্ঠিত হন এবং সমস্ত সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হন। সুলাইমান ইব্রাহিম পাশাকে রুমেলিয়ার বেইলার বে (প্রথম সারীর সামরিক গভর্নর-জেনারেল) সম্মান প্রদান করেন ও ইব্রাহিমকে ইউরোপের সমস্ত উসমানীয় অঞ্চলের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করেন। ১৭'শ শতাব্দীর একজন ক্রোনিকারের মতে, কেউ কেউ ইব্রাহিমকে সুলতানের নিরাপত্তার ভয়ে এই ধরনের উচ্চ পদে পদোন্নতি না দিতে বলেছিলেন; যার উত্তরে সুলাইমান বলেছিলেন যে, তার শাসনামলে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ইব্রাহিমকে কখনই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না।
তবুও ইব্রাহিম অবশেষে সুলতানের অনুগ্রহ থেকে বাদ পরে যান। উজিরে আজম পদে তার তেরোতম বছরের সময়, ক্ষমতায় দ্রুত উত্থান এবং বিপুল সম্পদের সঞ্চয় সুলতানের দরবারের ইব্রাহিমের অনেক শত্রু তৈরি হয়। ফার্সি সাফাভিদ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি অভিযানের সময় ইব্রাহিমের ঔদ্ধত্য ও ধৃষ্টতার অভিযোগ সুলতানের কাছে অভিযোগ পৌঁছে: বিশেষ করে তার সার আসকার সুলতান (سرعسكر سلطان) উপাধি গ্রহণকে সুলাইমানের প্রতি গুরুতর অপমান হিসাবে দেখা হয়।[83]
অর্থমন্ত্রী (দফতরদার ) ইস্কেন্দার চেলেবির সাথে ও অন্যান্য সভাসদদের সাথে ঝগড়ার কারণে ইব্রাহিমের প্রতি সুলাইমানের সন্দেহ আরো খারাপভাবে বেড়ে যায়। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দিয়ে ইব্রাহিম সুলতানকে দিয়ে দফতরদার ইস্কান্দার চেলেবির মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করতে রাজি করাতে সক্ষম হলেও সন্দেহ থেকে নিজেকে মুক্ত করাতে পারেন নাই। তবে মৃত্যুর আগে, ইবরাহিমের সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগই ছিল চেলেবির শেষ কথা।[83] এ কথাগুলি সুলাইমানকে ইব্রাহিমে আনুগত্যের ব্যাপারে ভাবিয়ে তোলে।[83] ইব্রাহিম উত্তরসূরি হিসেবে শাহজাদা মুস্তাফাকে সরাসরি সমর্থন করেন। এটি তার এবং হুররাম সুলতানের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি করে, যিনি তার ছেলেদের সিংহাসনে বসাতে চাইতেন। ইব্রাহিম অবশেষে সুলতান এবং তার স্ত্রীর রোষানলে পড়ে যান। সুলাইমান তার কাজির সাথে পরামর্শ করলে কাজি সাহেব ইব্রাহিমকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পরামর্শ দেন। সুলতান ঘাতকদের নিয়োগ করে ঘুমের মধ্যে ইব্রাহিমকে গলা টিপে হত্যা করার নির্দেশ দেন।[84]
সুলতান সুলাইমানের দুই স্ত্রী (হুররাম এবং মাহিদেভরান) ছয়জন পুত্রের জন্ম দিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে চারজন ১৫৫০ এর দশক পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তারা হলেন মোস্তফা, সেলিম, বায়েজিদ ও জাহাঙ্গীর । এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ্যপুত্র হুররামের গর্ভজাত নয়, বরং মাহিদেভরানের ছেলে। হুররেম জানতেন যে মোস্তফা সুলতান হলে তার নিজের সন্তানদের গলা টিপে হত্যা করা হবে। মুস্তাফাকে সকল ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং সে পারগালি ইবরাহিম পাশা দ্বারা সমর্থিত ছিলেন, যিনি এই সময় সুলাইমানের উজিরে আজম ছিলেন। অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রদূত বাসবেক মুস্তফার "উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক উপহার" সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে নোট করেন, "সুলাইমানের তার সন্তানদের মধ্যে মুস্তাফা নামে একটি পুত্র রয়েছে, তিনি দুর্দান্ত শিক্ষিত ও বিচক্ষণ এবং শাসন করার বয়সী, কেননা তার বয়স ২৪ বা ২৫ বছর; ইশ্বর যেন এমন শক্তির কোনো বর্বরকে আমাদের কাছে আসতে না দেন"।[85] উত্তরাধিকারী মনোনীত করার ষড়যন্ত্রে হুররামকে সাধারণত আংশিক দায়ী করা হয়, যদিও এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ নেই।[86] যদিও তিনি সুলাইমানের স্ত্রী ছিলেন, তবে তিনি কোনো সরকারীভাবে জনসাধারণের ভূমিকা পালন করেননি। তবে হুররামকে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে বেগ পাননি। সাম্রাজ্যে টানাপড়েনের ফলে, সুলতান প্রথম আহমেদের শাসনামল পর্যন্ত, উত্তরাধিকারী মনোনীত করার কোনো আনুষ্ঠানিক উপায় ছিল না। ফলে উত্তরাধিকারের সময় নাগরিক অশান্তি এবং বিদ্রোহ এড়াতে প্রতিযোগী রাজকুমারদের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। নিজের পুত্রদের মৃত্যুদন্ড এড়ানোর চেষ্টায়, হুররাম মুস্তাফার সিংহাসনে আরোহণকে সমর্থনকারীদের নির্মূল করতে তার প্রভাব ব্যবহার করে।[68]
এইভাবে হুররেমের দ্বারা দৃশ্যত ক্ষমতার লড়াইয়ের মাঝেই,[87] সুলাইমান ইব্রাহিমকে বিদ্রোহীর জেরে মৃত্যু দেন এবং তার সহানুভূতিশীল জামাতা রুস্তেম পাশাকে স্থলাভিষিক্ত করেন।১৫৫২ সাল নাগাদ, যখন পারস্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়, তখন সুলতান রুস্তম পাশাকে এই অভিযানের কমান্ডার-ইন-চিফ নিযুক্ত করেন। তখনই মুস্তাফার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। রুস্তম সুলাইমানের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোকদের একজনকে সুলাইমানের দরবারে অভিযোগ করতে পাঠান যে, যেহেতু সুলতান নিজে সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন না, তাই সৈন্যরা একজন শাহজাদাকে সিংহাসনে বসানোর সময় এসেছে বলে ভেবে বসে; একই সময়ে তিনি গুজব ছড়ান যে, শাহজাদা মোস্তফাও ধারণাটি গ্রহণযোগ্য মনে করেন। পরের গ্রীষ্মে পারস্যে তার প্রচারণা থেকে ফিরে আসার পর, মুস্তাফার সিংহাসন দাবি করার পরিকল্পনার বিষয়টি তাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং তিনি তাকে এরেগ্লি উপত্যকায় তাঁবুতে ডেকে পাঠান। [88] মুস্তাফা বলেন যে, "নিজেকে যে অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে তিনি সেগুলি থেকে নিজেকে পরিষ্কার করতে সক্ষম হবেন এবং তিনি এলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই"।[89]
মোস্তফার সামনে দুটি পন্থা থাকে: হয় সে হত্যার ঝুঁকি নিয়ে তার বাবার সামনে হাজির হবেন, অথবা, তিনি উপস্থিত হতে অস্বীকার করবেন। দ্বিতীয় পন্থা বেছে নিলে সত্যিই বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনা হবে। শেষ পর্যন্ত, মোস্তফা তার পিতার তাঁবুতে প্রবেশ করাই বেছে নেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তার অনুগত সেনাবাহিনীরা তাকে রক্ষা করবে। রাষ্ট্রদূত বাসবেক, একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে মুস্তাফার শেষ মুহূর্তগুলি বর্ণনা করেন। মোস্তফা তার সাথে দেখা করার জন্য তাঁবুতে প্রবেশ করলে, সুলাইমানের নপুংসক জল্লাদরা মোস্তফাকে আক্রমণ করে এবং দীর্ঘ লড়াইয়ের মোস্তাফা সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তাদের ঠেকাতে সক্ষম হন। শেষমেষ তাকে ধনুকের রশি পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়।[90]
সৎ ভাইয়ের হত্যার খবর পাওয়ার কয়েক মাস পর জাহাঙ্গীর শোকে সন্তপ্ত হয়ে মারা যান বলে জানা যায়।[91] :৮৯ বেঁচে থাকা দুই ভাই সেলিম এবং বায়েজিদকে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের হুকুমত দেওয়া হয়। কয়েক বছরের মধ্যে, ভাইদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, এবং প্রত্যেকে তার অনুগত বাহিনী দ্বারা সমর্থিত হন। পিতার সেনাবাহিনীর সহায়তায়, সেলিম ১৫৫৯ সালে কোনিয়াতে বায়েজিদকে পরাজিত করেন, পরবর্তীকালে বায়েজিদ তার চার পুত্রসহ সাফাভিদের কাছে আশ্রয় নিতে যান। কূটনৈতিক আদান-প্রদানের পর, সুলতান সাফাভিদ শাহের কাছে বায়েজিদকে হস্তান্তর বা মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান এবং বিপুল পরিমাণ সোনার বিনিময়ে, শাহ ১৫৬১ সালে একজন তুর্কি জল্লাদকে দিয়ে বায়েজিদ ও তার চার ছেলেকে গলা টিপে হত্যা করার অনুমতি দেন,[91] :৮৯ পাঁচ বছর পর সিংহাসনে সেলিমের উত্তরাধিকারের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়।
১৫৬৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, মহান সুলতান সুলাইমান ইস্তাম্বুল থেকে হাঙ্গেরিতে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দিয়ে যাত্রা করেন। হাঙ্গেরির সিগেটভারের যুদ্ধে উসমানীয়দের বিজয়ের আগেই তিনি মারা যান।[4]:৫৪৫ উজিরে আজম দ্বিতীয় সেলিম এর সিংহাসনে বসার পূর্বে তার মৃত্যু গোপন রেখেছিলেন। অসুস্থ সুলতান সুলাইমান তার ৭২ বছর বয়স হবার দুই মাস আগে তার তাঁবুতে মারা যান। সুলতানের মৃতদেহ দাফনের জন্য ইস্তাম্বুলে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু তার হৃদপিণ্ড, যকৃত এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সিগেটভারে তারবেকে সমাহিত করা হয়। সুলাইমানের উপরে নির্মিত মাজারটি পবিত্র স্থান এবং তীর্থস্থান হিসাবে বিবেচিত। মৃত্যুর পরবর্তী দশকের মধ্যে মাযারের কাছাকাছি একটি মসজিদ এবং সুফি ধর্মশালা তৈরি করা হয়। জায়গাটি কয়েক ডজন বেতনভুক্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক সুরক্ষিত। [92]
At the time of Suleiman's death, the Ottoman Empire was one of the world's foremost powers.[93] Suleiman's conquests had brought under the control of the Empire the major Muslim cities (Mecca, Medina, Jerusalem, Damascus, Cairo and Baghdad), many Balkan provinces (reaching present day Croatia and Austria), and most of North Africa. His expansion into Europe had given the Ottoman Turks a powerful presence in the European balance of power. Indeed, such was the perceived threat of the Ottoman Empire under the reign of Suleiman that Austria's ambassador Busbecq warned of Europe's imminent conquest: "On [the Turks'] side are the resources of a mighty empire, strength unimpaired, habituation to victory, endurance of toil, unity, discipline, frugality and watchfulness ... Can we doubt what the result will be? ... When the Turks have settled with Persia, they will fly at our throats supported by the might of the whole East; how unprepared we are I dare not say."[94]
Even thirty years after his death, "Sultan Solyman" was quoted by the English playwright William Shakespeare as a military prodigy in The Merchant of Venice (Act 2, Scene 1).
Suleiman's legacy was not, however, merely in the military field. The French traveler Jean de Thévenot bears witness a century later to the "strong agricultural base of the country, the well being of the peasantry, the abundance of staple foods and the pre-eminence of organization in Suleiman's government".[95] The administrative and legal reforms which earned him the name Law Giver ensured the Empire's survival long after his death, an achievement which "took many generations of decadent heirs to undo".[96]
Through his personal patronage, Suleiman also presided over the Golden Age of the Ottoman Empire, representing the pinnacle of the Ottoman Turks' cultural achievement in the realm of architecture, literature, art, theology and philosophy.[6][97] Today the skyline of the Bosphorus and of many cities in modern Turkey and the former Ottoman provinces, are still adorned with the architectural works of Mimar Sinan. One of these, the Süleymaniye Mosque, is the final resting place of Suleiman and Hürrem Sultan: they are buried in separate domed mausoleums attached to the mosque.
However, after his death, the Ottoman Empire entered into a state of decline and stagnation during the reign of Sultan Selim II and later (not so great) sultans. The Ottoman conquests of Europe were ended permanently by major defeats such as the Battle of Lepanto and the Battle of Vienna. As the years passed, the Ottoman Empire slowly turned into a shadow of its former glory, becoming known as the "sick man of Europe", where the Christian powers gradually regained their might, gaining new technologies and weapons for their armies until the Empire's dissolution by the reign of Mehmed VI, the last Sultan of the Ottoman Empire, who was removed after World War I, which allowed the empire's total dismemberment as even the Muslim provinces became independent or part of colonial empires and Atatürk opted for a republican Turkish nation state.
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.