Loading AI tools
ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কুরআন মজিদ অথবা কুরআ-ন মাজী-দ বা কোরআন (আরবি: القرآن আল্-কুর্'আ-ন্[টী১]) ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, যা আল্লাহর বাণী ।[1] এটিকে আরবি শাস্ত্রীয় সাহিত্যের সর্বোৎকৃষ্ট রচনা বলে মনে করা হয়।[2][3][4][5] কুরআনকে প্রথমে অধ্যায়ে (আরবিতে সূরা) ভাগ করা হয় এবং অধ্যায়গুলো (সূরা) আয়াতে বিভক্ত করা হয়েছে।
কুরআন | |
---|---|
আরবি: ٱلْقُرْآن, প্রতিবর্ণীকৃত: আল-ক্বুর্'আ-ন্ | |
তথ্য | |
ধর্ম | ইসলাম |
ভাষা | ধ্রুপদী আরবী |
যুগ | ৬১০–৬৩২ খ্রিষ্টাব্দ |
অধ্যায় | ১১৪ (তালিকা) সূরা দেখুন |
শ্লোক | ৬,৩৪৮ (বিসমিল্লাহ সহ) ৬,২৩৬ (বিসমিল্লাহ বাদে) আয়াত দেখুন |
পূর্ণ পাঠ্য | |
বাংলা উইকিসংকলনে কুরআন |
এই কিতাব আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল এর মাধ্যমে ইসলামিক নবি মুহাম্মাদ এর কাছে মৌখিকভাবে ভাষণ আকারে কুরআনের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন,[6][7] দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে সম্পূর্ণ কুরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় ৬০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর যখন মুহাম্মাদের বয়স ৪০ বছর[8] এবং অবতরণ শেষ হয় মুহাম্মাদের তিরোধানের বছর অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে।[1][9][10] মুসলমানরা বিশ্বাস করে থাকেন কুরআন হচ্ছে মুহাম্মদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অলৌকিক ঘটনা যা তার নবুয়তের প্রমাণস্বরূপ[11] এবং ঐশ্বরিক বার্তা প্রেরণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায় যা আদম থেকে শুরু হয়ে মুহাম্মাদের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। তবে সুফিবাদের অনুসারীরা বিশ্বাস করে থাকেন মুহাম্মাদের সকল কর্মকান্ড উম্মতের কাছে বোধগম্য করে তোলার জন্যই কুরআন অবতীর্ণ করা হয়। কুরআনের আয়াতসমূহে কুরআন শব্দটি ৭০ বার এসেছে।[12]
ইসলামি ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি ইসলামের নবি মুহাম্মাদের নিকট অবতীর্ণ হয়। ইসলামের অনুসারীরা কুরআনকে একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলে বিশ্বাস করে। কুরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে। আয়াত বা পঙ্ক্তি সংখ্যা ৬,২৩৬ টি; মতান্তরে ৬,৬৬৬ টি। এটি মূল আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়।[13][14][15][16] মুসলিম চিন্তাধারা অনুসারে কুরআন ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে সর্বশেষ এবং গ্রন্থ অবতরণের এই ধারা ইসলামের প্রথম বাণীবাহক আদম থেকে শুরু হয়। কুরআনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যার সাথে বাইবেলসহ অন্যান্য ধর্মীয়গ্রন্থের বেশ মিল রয়েছে, অবশ্য অমিলও কম নয়। তবে কুরআনে কোনো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা নেই। ইসলামি ভাষ্যমতে কুরআন অপরিবর্তনীয় এবং এ সম্পর্কে মুসলিমরা কুরআনের সূরা আল-হিজরের (১৫ নং সূরা), ৯ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করে থাকে, এবং তা হল:
“ | আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।[17] | ” |
কুরআনে কুর'আন শব্দটি কয়েকটি অর্থে প্রায় ৭০ বার এসেছে। আর, আরবি ব্যাকরণে 'কুর'আন' শব্দটি একটি 'মাসদার', যা ভাববাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৭৫:১৭,১৮ আয়াতে এটি,(قرأ) ক্বারা'আ ('পাঠ করা', 'আবৃত্তি করা' বা 'অনুসরণ করা') ক্রিয়ার ভাববাচক বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই ক্রিয়াপদটিকেই কুরআন নামের মূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।[18] এই শব্দটির মাসদার (الوزن) হচ্ছে غفران তথা গুফরান। এর অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত ভাব, অধ্যবসায় বা কর্ম সম্পাদনার মধ্যে একাগ্রতা। উদাহরণস্বরুপ, (غفر) নামক ক্রিয়ার অর্থ হচ্ছে 'ক্ষমা করা'; কিন্তু এর আরেকটি মাসদার রয়েছে যার যা হলো (غفران), এই মাসদারটি মূল অর্থের সাথে একত্রিত করলে দাঁড়ায় ক্ষমা করার কর্মে বিশেষ একাগ্রতা বা অতি তৎপর বা অতিরিক্ত ভাব। সেদিক থেকে কুরআন অর্থ কেবল পাঠ করা বা আবৃত্তি করা নয় বরং একাগ্র ভঙ্গীতে পাঠ বা আবৃত্তি করা। কুরআনের মধ্যেও এই অর্থেই কুরআন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনের সূরা আল-কিয়ামাহের (৭৫ নং সূরা) ১৮ নং আয়াতে এই শব্দটি উল্লেখিত আছে:"অতঃপর, আমি যখন তা পাঠ করি (ক্বুরা'নাহু), তখন আপনি সেই পাঠের (কুরআ'নাহ্) অনুসরণ করুন।"[19]
কুরআনে যেখানেই এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে সেখানেই এর যথার্থ বিশেষ্য বা বিশেষণ পাওয়া যায়। ক্বারা'আ ক্রিয়াপদ কুরআনে পুনঃপুনঃ ব্যবহৃত হয়েছে। ১৭:৯৩ আয়াতে এর অর্থ 'পাঠ করা'; কিন্তু এর বহুল প্রচলিত অর্থটি হল,'আবৃত্তি করা' (তিলাওয়াঃ),৭৫: ১৬,১৭। মুহাম্মাদ-এর আবৃত্তি সমন্ধেও এই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি তাঁর নিজের উপর অবতীর্ণ ওহি আবৃত্তি করেন (৭:২০৪; ১৬:৯৮; ১৭:৪৫; ৮৪:২১; ৮৭:৬)। শব্দটি মুমিনদের আবৃত্তি সমন্ধেও ব্যবহৃত হয়েছে , তারা সালাতে ওহি আবৃত্তি করেন (৭৩:২০)। এ থেকে বোঝা যায়, কুরআন শব্দের অর্থ হল 'আবৃত্তি করা' যা মুহাম্মদ আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত হয়ে আবৃত্তি করেছেন (৭৫:১৮; ৮৬:৬) এবং মানুষের সম্মুখেও আবৃত্তি করেছেন। যদিও কুরআন বলতে সাধারভাবে তাঁর উপর অবতীর্ণ ওহির সমষ্টিকে বুঝায়। তবে শব্দটি (কুরআন) তাঁর উপর অবতীর্ণ পৃথক পৃথক ওহি (১০ঃ১৫; ১২ঃ৩; ৭২ঃ১; ২ঃ১৮৫) সমন্ধে বা খন্ডে খন্ডে অবতীর্ণ (১৭ঃ১০৬; ২০ঃ১; ৭৬ঃ২৩; ২৫ঃ৩২ ; ৫৯ঃ২১) আল্লাহর ওহি সমন্ধে বলা হয়েছে যা তিঁনি আল্লাহ কর্তৃক পেয়েছিলেন (২৭ঃ৬; ২৮ঃ৮৫)।
আল-কিতাব (গ্রন্থ বা পুস্তক) শব্দটি আল-কুরআনের প্রতিশব্দ হিসাবে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। আল-কিতাব সমন্ধে বলা হয়েছে "ইহা এক বরকতময় রাত্রিতে (৪৪:২) অবতীর্ণ হইয়াছে" (৪০:২; ৪৫:২)। ১৫:১ আয়াতে বলা হয়েছে, "এইগুলি আল-কুরআন এবং সুস্পষ্ট অর্থবোধক আল-কিতাবের অলৌকিক নিদর্শনসমূহ।" বিষয়বস্তু হিসেবে কুরআনকে প্রায়ই 'যি'কর' বলা হয়েছে। এখানে এর অর্থ উপদেশ, সাধারণ বাণী (২১:২৬,৪২; ৩৮:৮৭)। যি'করকে 'অবতীর্ণ' (২১:৫০; ৩৮:৮) এবং 'মহান পবিত্র গ্রন্থ' (৪১:৪১) বলা হয়েছে। আবার ৩৬:৬৯ আয়াতে কুরআন সমন্ধে বলা হয়েছে, " এ তো কেবল এক উপদেশ ও স্পষ্ট কুরআন মাত্র"। ২১:৭ আয়াতে আহ্'লুল-কিতাবকে আহ্'লুয যি'কর বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আল-হি'কমাঃ শব্দটি উল্লেখ করা যেতে পারে। ২ঃ১২১,১৫১; ৩ঃ১৬৪; ৬২ঃ২ -এ আল-কিতাবের সাথে হি্'কমাঃ উল্লেখ করা হয়েছে। ২:২৩৯; ৪:১১৩-এ কুরআনের সঙ্গে হিকমতের অবতীর্ণ হওয়ার উল্লেখ আছে। কুরআনে, কুরআনকে "আল-ফুরকা'ন"-ও বলা হয়েছে।
"সূরা(سورة)" শব্দটি আরবি সূর (নগর প্রাচীর) হতে গৃহীত একবচনজ্ঞাপক যোগ করিয়া গঠিত। সূরার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নির্দিষ্ট অংশকে আয়াত বলা হয়। হিব্রু 'ওত' শব্দের ন্যায় ইহা বিশেষ অর্থে নিদর্শন, বিশ্বাসের নিদর্শন (২ঃ২৪৮; ৩ঃ৪১; ২৬ঃ১৯৭) বিশেষত আল্লাহর অস্তিত্ব ও ক্ষমতার নিদর্শন (১২ঃ১০৫; ৩৬ঃ৩৩) বুঝায়। তাই এটি দ্বারা অলৌকিক ঘটনাকেও (মুজিজা) বুঝায় (৩:৪৯; ৪৩:৪৬)। মুহাম্মদ যে আল্লাহর নবী এর প্রমাণস্বরুপ মক্কার পৌত্তলিকরা তার নিকট অলৌকিক ক্রিয়া (মু'জিযাঃ) দেখানোর দাবী করত। যেহেতু প্রেরিত ওহিগুলোই তার অন্যতম মু'জিযাঃ (৬:১৫৮; ৭:২০৩; ২০:১৩৩; ২৯:৫০) সেজন্যই এগুলোর নাম আয়াত হয়েছে। আয়াতগুলো উর্ধ-জগত হতে (২:৯৯; ২৮:৮৭) আল্লাহর নবীর নিকট (২:২৫২; ৩:৫৮; ৪৫:৫) পাঠানো হত এবং পূর্ববর্তী নবীগনের ন্যায় (২৮:৫৯) তিনিও উহা লোকদেরকে আবৃত্তি করে শোনাতেন (২:১৫১; ৩:১৬৪; ৬৫:১১)।
আরও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তাঁর আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা করেন, (২ঃ১৮৭) ; "তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে" (৩:১১৩); "আর কাফিররা ছাড়া আমার আয়াতসমূহকে কেউ অস্বীকার করে না।" (২৯ঃ৪৭)। আবার কিছু যায়গায় গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আয়াতসমূহের প্রতিই দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে। যেমন,"আর আমি এতে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি"(২৪ঃ১); "একটি কিতাব যাহা আমি পাঠাইয়াছি, যেন তাহারা ইহার আয়াতগুলি সমন্ধে চিন্তা করিতে পারে" (৩৮ঃ২১); "এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত" (১০ঃ১; ৩১ঃ১) ; "এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত" (১২ঃ১; ২৬ঃ১; ২৮ঃ১) ; "এ হল কিতাব ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াতসমূহ" (১৫ঃ১) ; "এইগুলি আল-কু'রআন ও স্পষ্ট বিবরণদানকারী" (কিতাব) (২৭ঃ১)। "একটি কিতাব যার আয়াতগুলি দৃড়রূপে প্রথিত ", (১১ঃ১, ১৩,১)। কিতাবে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ এবং বিভিন্ন অর্থবোধক আয়াতসমূহ আছে (৩ঃ৭)। যেমন, "আমি যে আয়াত রহিত করি কিংবা ভুলিয়ে দেই, তার চেয়ে উত্তম কিংবা তার মত আনয়ন করি
" (২ঃ১০৬)। "যদি আমি এক আয়াত অন্য আয়াত দ্বারা বদল করি (১৬ঃ১০১)।
এইসব বিবরণ হতে মুহাম্মদ (সা.) এর উপর অবতীর্ণ ওহীর বিষয়বস্তু সমন্ধে জানা যায় "উহা সুরক্ষিত ফলক বা লাওহে মাহ্'ফুজ' হইতে অবতীর্ণ হইয়াছে" (৮৫ঃ২২)। " ইহা একটি সুরক্ষিত পুস্তকে রহিয়াছে" (৫৬ঃ৭৯)। "ইহা আমার নিকট মূল কিতাবে রহিয়াছে" (৪৩ঃ৪; ৩ঃ৭)। আল-কুরআন সমন্ধে বলা হয়েছে, "ইহা একটি উপদেশ-গ্রন্থ যাহা সম্মানিত, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এবং পবিত্র পত্রসমূহে মহান ন্যায়নিষ্ঠ লেখকদের হস্তে লিপিবদ্ধ" (৮০; ১১-১৬)। ৫২ঃ৮২ আয়াতে বিস্তারিত পত্রে লিখিত কিতাবের শপথ করা হয়েছে এবং ৬৮ঃ১ -এ বলা হয়েছেঃ "কলম ও যাহা দ্বারা লেখা হয় তাহার শপথ" এবং ৯৬ঃ৪-৫ এ বলা হয়েছে "কলম দ্বারা তিনি মানবকে শিক্ষা দিয়েছেন যাহা সে জানিত না" তাঁকে আরও বলা হয়েছে, "তোমার রাব্ব- এর কিতাব হইতে যাহা তোমার প্রতি ওয়াহ্'য়িরূপে পাঠানো হইয়াছে তাহা পাঠ কর"। "আল্লাহর কথা কেহ পরিবর্তন করিতে পারে না " (১৮ঃ২৭)। ৪ঃ১৬৪; ৪০ঃ৭৮ - এ বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাঁহাকে কতক নবীর কথা বলিয়াছেন এবং কতক নবীর কথা বলেন নাই।
রাসূল এর উপর অবতীর্ণ ওহী থেকেই উম্মুল কিতাব (৪৩ঃ৪) এর মূল বিষয়বস্তু ধারণা করে নেয়া যায়। সেগুলো হল, আল্লাহর সত্তা, বিশ্ব সৃষ্টি - বিশেষত মানব সৃজন, ভাল ও মন্দ আত্না-সমূহের সৃষ্টি, শেষ বিচার, জান্নাত,জাহান্নাম, পূর্ববর্তী নবী গনের অভিজ্ঞতা, আল্লাহর ইবাদত ও সামাজিক জীবন সম্বন্ধীয় যাবতীয় আইন-কানুন এবং বিশেষ বিশেষ আইন (৪ঃ১০৩, ১২৭,১৩৮; ৩৩ঃ৬)। বার মাসের উল্লেখ প্রসঙ্গে (৯ঃ৩৬) এবং ২২ঃ৪ -এ শয়তান কর্তৃক মানবকে প্রলুব্ধ করার প্রয়াস প্রসঙ্গে বিশ্ব সৃজন-তত্ত্বের আভাষ দেয়া হয়েছে। এমনকি, বিশ্বে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে এবং সংঘটিত হবে তার সব কিছুই ঐ উম্মুল কিতাবে আছে (১০ঃ৬১; ২৭ঃ৭৫; ৩৪ঃ৩; ৬ঃ৩৮,৫৯; ১১ঃ৬; ২০ঃ৫১; ১৭ঃ৫৮)।
কুরআনের অনেকগুলি নামের মধ্যে বিশেষ চারটি নাম হল আল-কুরআন, আল-ফুরকান, আল-কিতাব ও আয-যিক্'র। ‘আল-কুরআন’ নামের অর্থ 'যাহা পঠিত হয়'। এটি বহু আয়াত ও সূরার সংকলন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কুরআনের প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দটি হল ‘ইকরা’-'পাঠকর'। ‘আল-ফুরকান’ নামের অর্থ পার্থক্যকারী, সত্য ও মিথ্যার, আলো ও অন্ধকারের এবং ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্যকারী। ‘আল্-কিতাব’ অর্থ লিখিত গ্রন্থ যা যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ‘আয-যিক্'র’ নামের অর্থ উপদেশ যা আল্লাহ্-তা‘আলা স্বীয় বান্দাগণকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের নিমিত্তে দিয়েছেন।
মুসলমানদের মতে এটি আল্লাহর বাণী, যা ইসলামের নবি ও রাসুল মুহাম্মাদের উপর আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়। তাদের মতে এটি একটি মুজিজা বা অলৌকিক গ্রন্থ যা মানব জাতির পথনির্দেশক। মুসলমানদের বিশ্বাস, কুরআনে মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে এবং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।[20]
ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, হেরা গুহায় অবস্থানকালে মুহাম্মাদের নিকট প্রথম কুরআনের বাণী প্রেরিত হয়। এরপর ২৩ বছর ধরে তার নিকট কুরআনের বাণী প্রেরিত হয়। হাদিস ও মুসলিম ইতিহাস অনুসারে, মুহাম্মাদ মদীনায় হিজরত করে একটি স্বাধীন মুসলিম সম্প্রদায় গঠন করার পর তিনি তাঁর অনেক সাহাবাকে কুরআন তেলাওয়াত ও এর শিক্ষা গ্রহণ করে ছড়িয়ে দিতে আদেশ দেন, যা নিয়মিত অবতীর্ণ হতো। বলা হয় যে, কিছু কুরাইশ যাদেরকে বদর যুদ্ধে বন্দী করা হয়েছিল, তারা কিছু মুসলিমকে তৎকালীন সরল লিখন পদ্ধতি শেখানোর পর তাদের স্বাধীনতা ফিরে পায়। এইভাবে মুসলমানদের একটি দল ধীরে ধীরে সাক্ষর হয়ে ওঠে। প্রাথমিকভাবে, খেজুরের ডাল, হাড় ইত্যাদিতে কুরআনের আয়াত লিখিত হয়। যাইহোক, ৬৩২ সালে মুহাম্মদের মৃত্যুর সময় কুরআন বইয়ের আকারে লিপিবদ্ধ ছিল না।[21][22][23] আলেমদের মধ্যে এ ব্যাপারে ঐকমত্য আছে যে মুহাম্মাদ নিজে আয়াতগুলো লেখেননি।[24]
মুহাম্মাদ এর জীবদ্দশায় তার তত্ত্বাবধানে প্রথম পূর্ণ কুরআন লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু এগুলো এক জায়গায় একত্রিত করা হয়নি। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর এর যুগে দ্বাদশ হিজরি সালে ইয়ামামার যুদ্ধ সত্তর জন হাফেজে কুরআন শাহাদাত বরণ করেন।এতে হযরত ওমর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি খলিফা আবু বকর কে বলেন,
“ | "এভাবে জিহাদে হাফেজগন শহীদ হতে থাকলে কুরআনের অনেক অংশ বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। অতএব, আপনি কুরআন মাজিদ একত্রে সংকলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।" | ” |
প্রথমে আবু বকর রাজি না হলেও ওমর এর অনুরোধে রাজি হন। কুরআন সংরক্ষণের এ দ্বায়িত্ব মুহাম্মাদ এর সময়ের ওহি লেখক সাহাবি যায়েদ ইবনে সাবিত এর উপর প্রদান করা হয়।
যায়েদ ইবনে সাবিত নিজে হাফেজে কুরআন ছিলেন। তিনি কুরআন সংকলন করার ব্যাপারে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন। একটি হলো-কুরআনের আয়াতটি সংশ্লিষ্ট সাহাবা মুখস্থ বলবেন, অপরটি হলো তিনি মুহাম্মাদ এর সময়ে লিখিত ঐ আয়াতটি প্রদর্শন করবেন। তিনি লিখিত ছাড়া কুরআনের আয়াত সত্যায়নের জন্য যথেষ্ট মনে করেননি। তিনি বহু যাচাই বাছাই করার পর সাহাবায়ে কেরামের নিকট রক্ষিত মুহাম্মাদ এর জীবদ্দশায় লিখিত বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি থেকে সে সময়ের আবিষ্কৃত বিশেষ কাগজে গ্রন্থাকারে কুরআন লিপিবদ্ধ (যা সউফ নামে পরিচিত[25]) করেন। লিপিবদ্ধ কুরআনটি হযরত আবু বকর এর তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। তার ওফাতের পর এটি হযরত ওমর এর হেফাজতে থাকে। তার শাহাদাতের পর তারই ওসিয়ত অনুসারে কুরআনের এ প্রতিলিপিটি মুহাম্মাদ এর স্ত্রী বিবি হাফসা এর নিকট গচ্ছিত থাকে। তৃতীয় খলিফা উসমান এর যুগে ইসলামি সম্রাজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ইসলামের এ প্রসারের ফলে বিভিন্ন জাতি ও ভাষাভাষী লোকেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। তাদের অনেকেই কুরআনের গঠন পদ্ধতি অনুসরণ করে কুরআনের বিশেষ শব্দ উচ্চারণ করতে পারত না। বিশেষ করে আরমেনিয়া এবং আজারবাইজান যুদ্ধে সমবেত মুসলমানদের কুরআন পাঠ পদ্ধতির বিভিন্নতা দেখে বিশিষ্ট সাহাবি হুযাইফা, খলিফা উসমান কে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি অবিলম্বে এ নিয়ে নেতৃস্থানীয় সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করে চার জন বিশিষ্ট সাহাবা সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করেন। এ চার জন সাহাবা হচ্ছেন-
হযরত উসমান এর উদ্যোগে হিজরি ২৪ সালে শেষবারের মতো কুরআন সংকলনের এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বোর্ড হযরত হাফসা এর নিকট সংরক্ষিত মূল কপিটি সংগ্রহ করেন।[27][28] উক্ত বোর্ড পূর্বলিখিত প্রতিলিপিটি অনুসরণ করে পাঠ ও উচ্চারনের বিভিন্নতা দূর করার জন্য শুধু কুরাইশি উচ্চারণ ও ভাষায় তার আরও সাতটি প্রতিলিপি প্রস্তুত করেন। বর্ণিত আছে যে, সাতটি প্রতিলিপি তৈরি করে মক্কা, শাম, ইয়েমেন,বাহরাইন, বসরা ও কুফা প্রদেশে একটি করে প্রেরণ করা হয়। আর রাজধানী মদিনাতে একটি কপি খলিফার নিকট সংরক্ষিত রাখা হয়।[29] এরপর বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য বিক্ষিপ্তভাবে সংরক্ষিত প্রতিলিপিগুলো সকলের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়।[30] এভাবে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রা.-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পবিত্র কুরআন সংকলিত ও বিভিন্ন প্রদেশে প্রেরিত হয় বিধায় তাকে "جمع القرآن " বা কুরআন সংগ্রহকারী বলা হয়।
ইসলামী পরিভাষা অনুযায়ী, কুরআনের অলৌকিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এই বিশ্বাসকে ইজায বলা হয়। মুসলমানরা বিশ্বাস করে আল কুরআন একটি ঐশ্বিক গ্রন্থ যা কোনো মানুষের পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয় ও যা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত কার্যকর এবং এর মাধ্যমে এই গ্রন্থ মুহাম্মাদের নবীত্বের মর্যাদার অনুমোদনে প্রদত্ত মূল প্রমাণ। কুরআনেই অননুকরণীয়তা ধারণাটির উৎপত্তি, যেখানে পাঁচটি ভিন্ন আয়াতে এর বিরোধীদের কুরআনের মত কিছু তৈরী করতে আহ্বান করা হয়: "যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন রচনা করার জন্য মানুষ ও জ্বীন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন রচনা করতে পারবেনা।"[31] নবম শতাব্দী থেকে অসংখ্য রচনা প্রকাশিত হয়েছে যাতে কুরআন ও এর শৈলী ও বিষয়বস্তু নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। আল জুরজানি (মৃত্যু ১০৭৮) ও আল বাকিলানি (মৃত্যু ১০১৩) সহ মধ্যযুগীয় মুসলিম পণ্ডিতেরা এই বিষয়ে লিখেছেন, এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং কুরআন অধ্যয়নের জন্য ভাষাগত পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও অন্যরা বলেছেন যে কুরআনে মহৎ ধারণা আছে, অন্তর্নিহিত অর্থ আছে, এই গ্রন্থ যুগ যুগ ধরে এর সতেজতা বজায় রেখেছে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কিছু পণ্ডিত বলেন যে কুরআনে বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে যা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কুরআনের অলৌকিকতার মতবাদ প্রমাণে মুহাম্মাদের নিরক্ষরতার উপর আরও জোর দেওয়া হয় যেহেতু নিরক্ষর মুহাম্মাদের পক্ষে এই গ্রন্থ রচনা মোটেই সম্ভব নয়।[32][33]
নামাজে বিশুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা আবশ্যক। নামাজে কিরাআত তিলাওয়াতের বিষয়াবলী জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব। ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে সুরা মিলানো ওয়াজিব। কমপক্ষে তিন আয়াত বা তিন আয়াতের সমপরিমাণ বড় এক আয়াত তিলাওয়াত করতে হবে।
এছাড়াও কুরআন ইসলামী শিল্প ও বিশেষ করে তথাকথিত কুরআনী চারুলিপি ও চিত্রায়নের পদ্ধতিকে অনুপ্রাণিত করেছে।[34] কুরআনে কখনোই চিত্র ব্যবহার করা হয়নি তবে অনেক কুরআনে পাতার প্রান্তে, সূরার মাঝখানে বা শুরুতে বিভিন্ন ধাঁচে অলঙ্করণ করে সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থাপনা, মসজিদের বাতি, ধাতব বা মৃৎপাত্রে কুরআনের আয়াত মুদ্রিত হয়েছে।
কুরআনে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মোট ১১৪টি সূরা রয়েছে। সকল সূরা মিলিয়ে মোট আয়াতের (আয়াত আরবি শব্দ, এর সাহিত্যিক অর্থ নিদর্শন) সংখ্যা প্রায় ৬,২৩৬ (মতান্তরে ৬৩৪৮টি অথবা ৬৬৬৬টি)।[35] প্রত্যেকটি সূরার একটি নাম রয়েছে। নামকরণ বিভিন্ন উপায়ে করা হয়েছে; তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূরার অভ্যন্তরে ব্যবহৃত কোনো শব্দকেই নাম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এমন নামও পাওয়া যায় যা সূরার অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হয় নি যেমন সূরা ফাতিহা। ফাতিহা শব্দটি এ সূরার কোথাও নেই। সূরাগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট সজ্জা রয়েছে। সজ্জাকরণ তাদের অবতরণের ধারাবাহিকতা অনুসারে করা হয় নি। বরং দেখা যায় অনেকটা বড় থেকে ছোট সূরা অনুযায়ী সাজানো। অবশ্য একথাও পুরোপুরি সঠিক নয়। সজ্জার প্রকৃত কারণ কারও জানা নেই। অনেক ক্ষেত্রে বড় সূরাও ছোট সূরার পরে এসেছে। তবে একটি সূরা বা তার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ধারাবাহিকতার সাথেই অবতীর্ণ হয়েছিল বলে মুসলমানদের ধারণা। কুরআনের সজ্জাটি মানুষের মুখস্থকরণের সুবিধার সৃষ্টি করেছে।
হিজ্ব বা মানজিল হচ্ছে কুরআনের প্রথম সূরা (সূরা ফাতিহা) ব্যতীত অন্য সূরাগুলো নিয়ে করা একটি শ্রেণি। হিজ্ব মুফাস্সিল একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করা। এতে ৭টি মানজিলের মাধ্যমে সবগুলো সূরাকে একসাথে করা হয়েছে।[36] মানজিলগুলো হচ্ছে:
কুরআনে মোট ৩০ টি পারা বা অধ্যায় রয়েছে। ১১৪টি পূর্নাঙ্গ সূরা রয়েছে। সূরাগুলো বিভিন্ন আকারের হলেও কুরআনের পারাগুলো প্রায় সমান আকারের। কুরআন মুখস্থকরণের ক্ষেত্রে সাধারণতম পারা অনুযায়ী শিক্ষা করানো হয়। যে সকল স্থানে সমগ্র কুরআন পাঠের আয়োজন করা হয় সেখানেও এই পারা অনুযায়ী করা হয়।
কুরআনের বিষয়বস্তু আল্লাহর অস্তিত্ব এবং পুনরুত্থান সহ মৌলিক ইসলামী বিশ্বাসসমূহ বর্ণনা করে। পূর্বের নবিগণের বিবরণ, নৈতিক ও আইনগত বিষয়, মুহাম্মাদের সময়ের ঐতিহাসিক ঘটনা, দানশীলতা ও নামাজের কাহিনীও কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনের আয়াতে ঠিক-বেঠিক সম্পর্কে সাধারণ উপদেশ রয়েছে এবং এতে বর্ণিত ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সাধারণ নৈতিক পাঠের রূপরেখা প্রদান করে। প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত আয়াতগুলোকে মুসলিমরা কুরআন এর বার্তার সত্যতার ইঙ্গিত হিসাবে ব্যাখ্যা করে।[37]
কুরআনের কেন্দ্রীয় ধারণা হলো একেশ্বরবাদ। আল্লাহ জীবন্ত, শাশ্বত, সর্বব্যাপী এবং সর্বশক্তিমান হিসেবে বর্ণিত (দেখুন কুরআন ২:২০, ২:২৯, ২:২৫৫)। আল্লাহর শক্তিমত্তা তার সৃষ্টির ক্ষমতায় সর্বোপরি আবির্ভূত হয়। তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর স্রষ্টা (দেখুন কুরআন ১৩:১৬, ২:২৫৩, ৫০:৩৮ ইত্যাদি)। কুরআন এর মতে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ নির্ভরতার দিক দিয়ে সকল মানুষ সমান এবং এই সত্যকে স্বীকার করা ও তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত।
কুরআনে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য বিভিন্ন আয়াতে সৃষ্টিতাত্ত্বিক যুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ,মহাবিশ্ব প্রবর্তিত হয়েছে সুতরাং এর একজন প্রবর্তক প্রয়োজন এবং যা কিছু বিদ্যমান, সবকিছুর অস্তিত্বের জন্যই একটি যথার্থ কারণ থাকতে হবে। এছাড়া, এক্ষেত্রে মহাবিশ্বের কথাও প্রায়ই উল্লেখ করা হয়েছে: "যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোন অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?"[38][39]
কুরআন এ উল্লেখিত নবী-রাসুলগণ হলেন
ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্য এবং ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ইসা বাউলাতা কুরআনের সাহিত্যিক গঠনপ্রণালি সম্বন্ধে নিম্ন প্রকারের মন্তব্য করেছেন।[40]
“ | কুরআনের বার্তাগুলো বিভিন্ন সাহিত্যিক গঠনে প্রকাশিত হয়েছে, যা আরবি সাহিত্যের সবচেয়ে নিখুঁত লিখিত রচনা হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। কুরআনের ভাষার উপর ভিত্তি করেই আরবি ব্যাকরণ রচিত হয়েছে, এবং মুসলিম অলঙ্কার শাস্ত্রবিদদের বর্ণনামতে, কুরআনের বাগধারাগুলো ভীষণ সুন্দর এবং মহিমান্বিত হিসেবে বিবেচিত হয়... উপসংহারে একথা বলা যেতে পারে যে, কুরআন এর বার্তা প্রকাশ করার নিমিত্তে বিপুল প্রকার ও শ্রেণির সাহিত্যিক উপাদানের সফল প্রয়োগ ঘটিয়েছে। | ” |
কুরআনের ব্যাখ্যা কোরআন নিজেই দেয়।
কুরআনের আয়াতের অর্থ, ব্যাখ্যা এবং তাদের তাৎপর্য খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে যাকে তাফসীর বলা হয়। তাফসীর মুসলিমদের প্রাচীনতম কেতাবি কার্যক্রমগুলির একটি। কুরআন অনুসারে, মুহাম্মাদ প্রথম ব্যক্তি যিনি মুসলমানদের জন্য আয়াতের অর্থ বর্ণনা করেন।[41] অন্যান্য প্রারম্ভিক দৃষ্টান্তের মধ্যে কয়েকজন সাহাবা যেমন আবু বকর, উমর ইবনুল খাত্তাব, উসমান ইবন আফফান, আলী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, উবাই ইবনে কাব, জায়েদ ইবনে সাবিত, আবু মুসা আশয়ারী এবং আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের।[42] সে সময় ব্যাখ্যা-পদ্ধতি, আয়াতের সাহিত্যিক দিকগুলির ব্যাখ্যা, এর শানে নুযূল এবং মাঝে মাঝে অন্য আয়াতের সাহায্যে কোনো আয়াতের ব্যাখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যদি আয়াতটি কোন ঐতিহাসিক ঘটনা সম্বন্ধীয় হয়, তাহলে কখনও কখনও মুহাম্মাদ এর কিছু হাদিস বর্ণনা করে এর অর্থ স্পষ্ট করা হতো।[43]
যেহেতু কুরআন ধ্রুপদী আরবী ভাষায় উচ্চারিত হয়, পরবর্তী ধর্মান্তরিতদের অনেকেই (অধিকাংশই অ-আরব) সবসময় কুরআন এর আরবি বুঝতো না, আরবী ভাষায় সাবলীল ব্যক্তির কাছে যেসব অভিব্যক্তি সুস্পষ্ট তা তারা বুঝতে সক্ষম ছিলো না। আরবী ভাষার ভাষ্যকাররা এই অভিব্যক্তিগুলো ব্যাখ্যা করেছেন এবং মুহাম্মাদের নবীত্বের শুরুতে কোন আয়াতগুলো প্রকাশিত হয়েছে, যা প্রাচীনতম মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য উপযুক্ত, এবং কোনগুলো পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়েছে তা চিহ্নিত করেছেন, এর ভিত্তিতে পুরাতন পাঠ্যগুলো (মানসুখ) বাতিল (নাসিখ) করা হয়েছে।[44][45] তবে অন্যান্য কিছু আলেমগণ মনে করেন যে কুরআনের কোন আয়াত বাতিল করা হয়নি।[46]
বিভিন্ন আলেমদের দ্বারা কুরআনের বেশ কিছু ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে। জনপ্রিয় কয়েকটি হলো তাফসির ইবনে কাসির, তাফসির আল জালালাইন, তাফহিমুল কুরআনতাফসির আল-তাবারি, তাফসির আল কবির। তাফসীরের আরও আধুনিক কাজ হলো মাআরিফুল কুরআন।
কুরআন অনুবাদ করা সবসময়ই সমস্যাজনক এবং জটিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অনেকে বলেন যে কুরআনের পাঠ্য অন্য ভাষায় রূপান্তর করা সম্ভব নয়।[47] উপরন্তু, প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে একটি আরবি শব্দের বিভিন্ন অর্থ থাকতে পারে, যা একটি যথাযথ অনুবাদ প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে আরও কঠিন করে তোলে।[48]
তা সত্ত্বেও, কুরআন অধিকাংশ আফ্রিকান, এশীয় এবং ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে।[32] ইসলামের প্রথম যুগে, সপ্তম শতাব্দীতে, সালমান আল-ফারসি সূরা ফাতিহাকে ফারসি ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কুরআন অনুবাদের সূচনা করেন।[49] ইতোপূর্বে মুহাম্মাদ, আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাশী বা নিগাস ও বাইজেন্টাইনের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নিকট পাঠানো চিঠিতে কুরআনের আংশিক অনুবাদ প্রেরণ করেন।[48] হিন্দু রাজা মেহরুকের অনুরোধে আবদুল্লাহ বিন উমর বিন আব্দুল আজিজের নির্দেশে ৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে আলওয়ারে (সিন্ধু, ভারত, বর্তমানে পাকিস্তান) ভারতীয় উপমহাদেশের অধিবাসীদের জন্য কুরআনের আরেকটি অনুবাদ সম্পন্ন হয়।[50]
কুরআনের প্রথম সম্পূর্ণ অনুবাদ ফার্সি ভাষায় ১০ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। সামানি সম্রাট প্রথম মনসুরের শাসনামলে (৯৬১-৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ), তার উদ্যোগে, খোরাসানের একদল পণ্ডিত আরবী ভাষায় লিখিত তাফসির আল-তাবারী কে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন। পরবর্তীতে একাদশ শতাব্দীতে আবু মনসুর আব্দুল্লাহ আল-আনসারির একজন ছাত্র ফার্সি ভাষায় কুরআনের একটি সম্পূর্ণ তাফসীর লেখেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে, নাজম আল-দীন আবু হাফস আল-নাসাফি ফার্সি ভাষায় কুরআন অনুবাদ করেন। তিনটি বইয়ের পাণ্ডুলিপিই পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৩৬ সাল পর্যন্ত ১০২ টি ভাষায় কুরআন অনুবাদিত হয়েছিল।[48] বর্তমানে পৃথিবীর প্রধান ভাষাগুলোর প্রায় সবগুলোতেই কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ রয়েছে। ২০১০ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত ১৮তম আন্তর্জাতিক কুরআন প্রদর্শনীতে ১১২টি ভাষায় অনুবাদিত কুরআন উপস্থাপিত হয়।[51]
১১৪৩ খ্রিস্টাব্দে পিটার দ্য ভেনারেবল এর জন্য লাতিন ভাষায় রবার্ট কেটন এর করা কুরআন এর অনুবাদটি পাশ্চাত্য ভাষায় কুরআন এর প্রথম অনুবাদ ছিল।[52] ১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি ভাষায় আন্দ্রে দু রায়ার এর অনুবাদটি ব্যবহার করে ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে আলেকজানডার রস্ কুরআনের প্রথম ইংরেজী অনুবাদটি সম্পন্ন করেন। ১৭৩৪ সালে জর্জ সেল কুরআনের প্রথম পাণ্ডিত্যপূর্ণ অনুবাদ ইংরেজিতে প্রকাশ করেন; আরেকটি ১৯৩৭ সালে রিচার্ড বেল কর্তৃক এবং আরও একটি ১৯৫৫ সালে আর্থার জন আর্বেরি কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এই সকল অনুবাদকেরাই অমুসলিম ছিলেন। মুসলিমদের দ্বারাও ইংরেজিতে কুরআন অনুবাদিত হয়েছে। আধুনিক ইংরেজিতে মুসলিম অনুবাদকদের প্রকাশিত কুরআন এর মধ্যে রয়েছে দ্য অক্সফোর্ড ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক কর্তৃক প্রকাশিত মুহাম্মাদ আবদেল হালিম এর অনুবাদ, ড. মুস্তাফা খাত্তাব এর অনুবাদ দ্য ক্লিয়ার কুরআন, সহিহ ইন্টারন্যাশনাল অনুবাদ ইত্যাদি।
পাঞ্জাবের মোগা জেলায় কুরআন এর প্রাচীনতম গুরমুখী অনুবাদ পাওয়া গিয়েছে, যা ১৯১১ সালে মুদ্রিত হয়েছিল।[53]
কুরআনের যথাযথ তেলাওয়াত হলো তাজবিদ নামের একটি পৃথক শৃঙ্খলার বিষয় যা কীভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত, প্রতিটি স্বতন্ত্র বর্ণনামূলক উচ্চারণ কীভাবে করা উচিত, যে স্থানে বিরতি থাকা উচিত সেখানে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন, উচ্চারণের ক্ষেত্রে যেখানে উচ্চারণটি দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত, যেখানে বর্ণগুলি এক সাথে শোনা উচিত এবং যেখানে সেগুলি পৃথক রাখা উচিত ইত্যাদি বিষয়গুলি বিশদভাবে নির্ধারণ করে। বলা যেতে পারে যে, এই অনুশাসনটি কুরআনের সঠিক তেলাওয়াতের আইন ও পদ্ধতিগুলি অধ্যয়ন করে এবং তিনটি মূল ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে: ব্যঞ্জনধ্বনি এবং স্বরধ্বনির যথাযথ উচ্চারণ (কুরআনীয় ধ্বনির উচ্চারণ), আবৃত্তিতে বিরতি দেওয়ার নিয়ম এবং পুনরায় শুরুকরণের নিয়ম, এবং আবৃত্তির বাদ্যযন্ত্র এবং সুমধুর বৈশিষ্ট্য।[54]
কুরআনের ভুল তেলাওয়াত এড়াতে, তেলাওয়াতকারীরা একজন উপযুক্ত শিক্ষকের সাথে প্রশিক্ষণের একটি প্রোগ্রাম অনুসরণ করেন। তাজবিদ বিধিগুলির জন্য উল্লেখ হিসাবে ব্যবহৃত দুটি জনপ্রিয় গ্রন্থ হলো ইবনে আল-জাজারি রচিত মাতন আল-জাজারিয়াহ[55] এবং সুলায়মান আল জামজুরি রচিত তুহফাত আল-আতফাল।
এল মিনশাবি, আল-হুসারি, আবদুল বাসিত, মোস্তফা ইসমাইল এর মতো কয়েকজন মিশরীয় তেলাওয়াতকারীর তেলাওয়াত, তেলাওয়াতের বর্তমান শৈলীর বিকাশে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল।[56][57][58][59]:৮৩ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশ্ব-স্তরের তেলাওয়াতের জন্য সুপরিচিত, যা প্রমাণিত হয়েছে জাকার্তার মারিয়া উলফাহ এর মতো মহিলা তেলাওয়াতকারীদের জনপ্রিয়তায়।[54]
তেলাওয়াত দুই প্রকার:
১৯ শতকে ব্যাপকভাবে মুদ্রণ প্রচলিত হওয়ার পূর্বে, কুরআন ক্যালিগ্রাফার ও অনুলিপিকারীদের তৈরিকৃত অনুলিপির মাধ্যমেই হস্তান্তরিত হতো। প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপিগুলো হেজাজি লিপিতে লেখা হয়েছিল। হেজাজি শৈলীর পাণ্ডুলিপি অন্তত এটা নিশ্চিত করে যে লিখিতভাবে কোরআন এর প্রসার প্রাথমিক পর্যায়েই শুরু হয়েছিল। সম্ভবত নবম শতাব্দীতে, লেখাগুলোতে পুরু রেখার ব্যবহার শুরু হয়, যা ঐতিহ্যগতভাবে কুফিক লিপি নামে পরিচিত। নবম শতাব্দীর শেষের দিকে, কুরআনের অনুলিপিগুলোতে নতুন ধরনের লিপি আবির্ভূত হতে শুরু করে যা পূর্ববর্তী লিপিকে প্রতিস্থাপন করে। পূর্ববর্তী শৈলীর ব্যবহার বন্ধ করার কারণ ছিল যে, ঐ পদ্ধতিতে অনুলিপি তৈরী করতে অনেক সময় লাগতো কিন্তু সেসময় অনুলিপির চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছিল। অনুলিপিকারীরা তাই লেখার সহজ শৈলীটিই বেছে নেয়। একাদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে, ব্যবহৃত শৈলী ছিল প্রাথমিকভাবে নাসখ, মুহাক্কাক, রায়হানি এবং কিছু বিরল ক্ষেত্রে সুলুস লিপি। নাসখ খুব ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। উত্তর আফ্রিকা এবং ইবেরিয়াতে, মাগরিবি শৈলী অধিক জনপ্রিয় ছিল। আরও স্বতন্ত্র হলো বিহারী লিপি যা শুধুমাত্র ভারতের উত্তরাঞ্চলেই ব্যবহৃত হয়েছিল। নাস্তালিক শৈলী ফার্সি বিশ্বে খুব কমই ব্যবহৃত হয়।[61][62]
শুরুতে, কুরআন বিন্দু বা হরকত সহ লেখা হতো না। এই বৈশিষ্ট্য সর্বশেষ সাহাবাহদের জীবদ্দশার শেষ পর্যায়ে যোগ করা হয়। যেহেতু অধিকাংশ মুসলিমদের জন্যই পাণ্ডুলিপি কেনা খুবই ব্যয়বহুল ছিল, তাই কুরআনের কপিগুলো মসজিদে রাখা হতো যাতে তা জনগণের কাছে সুলভ হয়। উৎপাদনশীলতার দিক থেকে, উসমানীয় অনুলিপিকারীরাই সর্বোত্তম নিদর্শন তৈরী করে। এর কারণ ছিল ব্যাপক চাহিদা, মুদ্রণ পদ্ধতির অজনপ্রিয়তা এবং নান্দনিকতা।[63][64]
কিছু অমুসলিম দল যেমন বাহাই এবং দ্রুজরা কোরআনকে পবিত্র মনে করে। একেশ্বর সার্বজনীনবাদীরাও কুরআন থেকে অনুপ্রেরণা চাইতে পারেন। কুরআনের সাথে ডায়াতেসারন, জেমসের প্রোটোয়েভেঞ্জেলিয়াম, ইনফ্যান্সি গসপেল অব থমাস, স্যুডো-ম্যাথিউ গসপেল এবং আরবী ইনফ্যান্সি গসপেলের সাথে কিছু আখ্যানের মিল রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।[66][67][68] একজন পণ্ডিত পরামর্শ দিয়েছেন যে একটি গসপেল হারমনি হিসেবে ডায়াতেসারনকে ক্রিশ্চিয়ান গসপেলের একটি পাঠ্য হিসেবে ধারণা করা হয়েছে।[69]
তিনি সত্যসহ তোমার প্রতি গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যা পূর্ববর্তী বিষয়ের সত্যতা প্রতিপাদনকারী এবং এর পূর্বে তাওরাত ও ইঞ্জিল অবতীর্ণ করেছিলেন।[70]
কুরআনে পূর্বের কিতাবগুলোর (তওরাত ও ইঞ্জিল) সাথে তার সম্পর্ককে তাদের অনন্য উৎপত্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে এগুলো সবই এক আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছে।[71]
ক্রিস্টোফ লাক্সেনবার্গের (দ্য সিরো-আরামাইক রিডিং অব দ্য কোরান বইয়ে) মতে কুরআনের ভাষা সিরিয়াক ভাষার অনুরূপ ছিল। কুরআনে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের পবিত্র বই (তানাক, বাইবেল) এবং ভক্তিমূলক সাহিত্যে বর্ণিত অনেক মানুষের কাহিনী এবং ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, যদিও এর বিস্তারিত বিবরণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।[72] অ্যাডাম, এনোচ, নুহ, ইবার, শেলা, অব্রাহাম, লূত, ইসমাইল, ইস্ হাক, যাকোব, যোষেফ, জেথ্রো, দায়ূদ, শলোমন, এলিয়, ইলীশায়, যোনা, হারোণ, মোশি, জাকারিয়া, বাপ্তিস্মদাতা ও যীশুকে ঈশ্বরের নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত, কুরআনে অন্য যে কোন ব্যক্তির তুলনায় মূসাকে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।[73] ঈসাকে মুহাম্মদ (সাঃ) এর চেয়ে বেশি উল্লেখ করা হয় (মুহাম্মদ নামকে প্রায়ই 'নবি' বা 'রাসুল' বলে উল্লেখ করা হয়), অন্যদিকে মরিয়মকে নতুন টেস্টামেন্টের চেয়ে কুরআনে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।[74]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.