Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সালমান আল ফারিসী (আরবি: سلمان الفارسي) ছিলেন রাসূল হযরত মুহাম্মদের একজন সাহাবী। তিনি সাসানিয়ান সাম্রাজ্যে একজন জরথুস্ট্রিয়ান হিসাবে বেড়ে ওঠেন, তারপর খ্রিস্টধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং পরবর্তীতে ইয়াসরিব শহরে, যা পরে মদিনায় পরিণত হয়, রাসূল হযরত মুহাম্মদের সাথে দেখা করার পরে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। অন্যান্য সাহাবীদের সাথে তার পরবর্তী কিছু সাক্ষাতের সময়, তাকে কুনিয়াহ আবু আবদুল্লাহ "আব্দুল্লাহর পিতা" বলে উল্লেখ করেছিলেন। খন্দকের যুদ্ধকালীন মক্কার কুরাইশরা যখন মদীনা আক্রমণ করে, তার পরামর্শে মদিনার চারপাশে একটি পরিখা খনন করা হয়েছিল (একটি সাসানীয় সামরিক কৌশল)।[৩] কিছু ঐতিহাসিকের মতে, তিনি ইরাকের আল-মাদাইন-এর গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হন এবং জনপ্রিয় মত অনুসারে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) সালমানকে তার পরিবারের অংশ হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন।[৪] হযরত মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তিনি হযরত মুহাম্মদের চাচাতো ভাই আলীর অনুসারী ছিলেন।[৫]
সালমান Salman আরবি: سلمان | |
---|---|
খেতাব: আল-ফারিসী আরবি: الفارسي, আল-মুহাম্মদী, আবু আল কিতাবায়ান, লুগমান লুকমান আল-হাকিম, ও পাক | |
জন্মসাল | আনু. ৫৬৮ CE |
জন্মস্থান | কাজিরান, ইরান |
জাতিতত্ত্ব | ফারসি |
যে জন্য পরিচিত | মুহাম্মদ(সঃ) এবং আলী এর একজন বিশ্বস্ত সহচর |
প্রভাবিত | আল্লাহ, মুহাম্মদ, আলী, এবং আহল আল-বাইত |
মৃত্যু | ৬৫৬[১] |
কবর স্থান | আল মাদাইন, ইরাক |
পুত্র | আবদুল্লাহ |
ধর্ম | ইসলাম |
সম্প্রদায় | মুসলিম |
কাজ | ফারসি ভাষায় কুরআনের আংশিক অনুবাদ[২] |
সালমানের জন্ম তারিখ ও স্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, তার জন্ম তারিখ ৫৩১ থেকে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।[৬] সালমান ফার্স প্রদেশের কাজেরুন শহরে বা ইসপাহান প্রদেশের ইসপাহান শহরে রৌজবেহ খোশনুদান নামে জন্মগ্রহণকারী একজন পার্সিয়ান ছিলেন।[৪][৭][৮] একটি হাদিসের অনুসারে, সালমান ও তার পূর্বপুরুষকে রামহরমোজের সাথে সরম্পর্কযুক্ত করা হয়।[৯][১০][১১] তিনি তার জীবনের প্রথম ষোল বছর জরথুস্ট্রিয়ান মাগুস বা পুরোহিত হওয়ার জন্য অধ্যয়নে নিমগ্ন ছিলেন, যার পরে তিনি একটি অগ্নি মন্দিরের পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর তিন বছর পর, ৫৮৭ সালে তিনি একটি নেস্টোরিয়ান খ্রিস্টান দলের সাথে স্বাক্ষাত পান এবং তাদের দ্বারা প্রভাবিত হন। তার পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি তাদের সাথে যোগ দিতে পরিবার ত্যাগ করেন।[১২] পরে তাকে আটকাতে তার পরিবার তাকে বন্দী করে কিন্তু তিনি পালিয়ে যান।[১২]
সত্যের অন্বেষণে নিজ ধারণা নিয়ে আলোচনা করার জন্য সালমান মধ্যপ্রাচ্যের চারপাশে ঘুরে ঘুরে পুরোহিত, ধর্মতত্ত্ববিদ এবং পণ্ডিতদের স্বাক্ষাত গ্রহণ করেন, প্রাথমিকভাবে মসুলে (প্রাচীন নিনেভে) তিনি বসতি স্থাপন করেছিলেন।[১২] সিরিয়ায় অবস্থানকালে, তিনি হযরত মুহাম্মদের কথা শুনেছিলেন, সালমানের সর্বশেষ খ্রিস্টান শিক্ষক মৃত্যুশয্যায় যার আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।[৭] পরবর্তীতে এবং আরব উপদ্বীপে তার যাত্রার সময়, তার সাথে প্রতারণতা করা হয়েছিল এবং মদিনার একজন ইহুদীর কাছে তাঁকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। হযরত মুহম্মদের সাথে স্বাক্ষাতের পরে, একজন সাধক তাকে যে লক্ষণগুলি বর্ণনা করেছিলেন সেগুলি তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মুহাম্মদের সাহায্যে তার স্বাধীনতা লাভ করেন।[৪][৭] সালমানই প্রথম ইরানি যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। সূত্র অনুসারে, সালমান বদর যুদ্ধের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন, কিন্তু যেহেতু খন্দকের যুদ্ধের আগে তিনি একজন ক্রীতদাস ছিলেন, তাই তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।[৬]
আবু হুরায়রা সালমানকে "আবু আল-কিতাবায়েন" ("দুটি বইয়ের জনক"; অর্থাৎ বাইবেল এবং কুরআন) বলে উল্লেখ করেছেন এবং আলী তাকে "লুকমান আল- হাকিম" ("লুকমান- জ্ঞানী," কুরআনে বর্ণিত একজন জ্ঞানী ব্যক্তি)।[১৩] যখনই মানুষজন তার বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, সালমান উত্তর দিতেন: "আমি সালমান, আদম সন্তান।"[১৪]
মদীনা শহরকে ১০,০০০ আরবীয় অমুসলিম সেনাবাহিনী থেকে রক্ষার জন্য শহরটির চারপাশেিএকটি বড় পরিখা খননের পরামর্শ দেন। হযরত মুহাম্মদ (দ.) এবং তার সাহাবীগণ এই পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করেন কারণ এটি নিরাপদ ছিল, এবং অমুসলিম সেনাবাহিনীর বেশি সংখ্যক সদস্যের হতাহতের সম্ভাবনা বেশি ছিল।[৪][৭][৮][১২]
যদিও কিছু সূত্র সালমানকে মুহাজিরুনের দলভুক্ত হওয়ার পক্ষে মত দেয়,,[১৫] অন্যান্য সূত্র বর্ণনা করে যে খন্দকের যুদ্ধের সময়, মুহাজিরুনদের একজন বলেছিলেন "সালমান আমাদের,মুহাজিরুন, একজন,", কিন্তু মদিনার মুসলমানরা এটিকে চ্যালেঞ্জ করেছিল (যারা আনসার নামেও পরিচিত। আনসার)। দুই গ্রুপের মধ্যে একটি প্রাণবন্ত তর্ক শুরু হয় যেখানে তাদের প্রত্যেকে দাবি করে যে সালমান তাদের দলভুক্ত, অন্য দলের নয়। হযরত মুহাম্মদ (দ.) ঘটনাস্থলে এসে যুক্তি উপস্থাপন শুনলেন। তিনি তাদের দাবী শুনে বিস্মিত হয়েছিলেন কিন্তু তিনি এই বলে যুক্তির অবসান ঘটান যে, "সালমান মুহাজিরও নয় আনসারও নয়। তিনি আমাদের একজন। তিনি আহলে বায়াতের একজন।"[১৬]
সালমান সাসানিয়ান সাম্রাজ্যে মুসলিমদের পারস্য বিজয়ের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এবং ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবন আল-খাত্তাবের সময়ে এর পতনের পর সাসানিদের রাজধানী চেটেসিফোনের প্রথম গভর্নর হন।[৮] তথাপি, অন্য কয়েকটি সূত্র অনুসারে[১২], হযরত মুহাম্মদের (দ.) ওফাতের পর, তিনি ৬৫৬ সাল পর্যন্ত লোকসমাজ থেকে দূরে চলে যান, যখন হযরত আলী খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হন তখন তিনি ফিরে আসেন এবং ৮৮ বছর বয়সে হযরত আলী সালমানকে আল-মাদাইন, যা বর্তমানে ইরাকে অবস্থিত, শহরের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত করেন।[১২]
তিনি ফার্সি ভাষায় কুরআনের অনুবাদ করেন, এবং এভাবেই তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন যিনি কুরআনকে একটি বিদেশী ভাষায় ব্যাখ্যা ও অনুবাদ করেন। সালমান তার ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত কবিতাটি রচনা করেছিলেন বলে জানা যায়:
সুস্থ হৃদয় ও উপযুক্ত বিধানের অভাবে মধ্যেও আমি পরমাত্মার দিকে অগ্রসরমান,
যদিও পরামাত্মার দিকে অগ্রসরমান কালে বিধানগ্রহণ ভয়াবহ কাজ।[১৭][১৮]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.