Loading AI tools
বাংলাদেশের সরকারি কলেজ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত একটি সরকারি কলেজ। এটি কুমিল্লা জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত ও পূর্বতন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার সর্বপ্রাচীন কলেজ। কুমিল্লা অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রাণী ও ভারতসম্রাজ্ঞী মহারাণী ভিক্টোরিয়ার নামে ১৮৯৯ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজটি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ।[১]
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ | |
ধরন | সরকারি কলেজ |
---|---|
স্থাপিত | ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯৯ |
অধিভুক্তি | কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড |
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি | জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় |
ইআইআইএন | ১০৫৮২২ |
অধ্যক্ষ | অধ্যাপক আবুল বাশার ভূঁইয়া |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ২০০ (প্রায়) |
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ | ৩০০ (সম্ভাব্য) |
শিক্ষার্থী | ৩৫ হাজার (প্রায়) |
অবস্থান | , ২৩.৪৫৯৮১৪° উত্তর ৯১.১৮২২৮৬° পূর্ব |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে |
ওয়েবসাইট | www |
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ অবিভক্ত কুমিল্লা জেলা তথা চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কুমিল্লার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী ও জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি প্রভূত পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন। কলেজটি প্রতিষ্ঠালাভের পর ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার তাঁকে রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করে। তার স্মৃতি রক্ষার্থে ভিক্টোরিয়া কলেজের ইন্টারমেডিয়েট শাখায় প্রধান ফটকে শ্বেতপাথর দিয়ে তাঁর একটি আবক্ষ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।[২]
কুমিল্লার ব্যবসায়ী ও জমিদার আনন্দচন্দ্র রায় ঠিকাদারি ব্যবসা ও জমিদারি থেকে প্রভূত সম্পত্তি আয় করেন এবং সেই আয়ের অর্থায়নে ১৮৮৬ সালে কুমিল্লায় "রায় এন্ট্রান্স স্কুল" নামে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৮ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার "জুবিলি জয়ন্তী"র স্মারক স্বরূপ এটিকে 'ভিক্টোরিয়া স্কুল' নামে নামকরণ করা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৯৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জমি ও নগদ অর্থ ব্যয় করেন, ফলশ্রুতিতে স্কুলটি কলেজে উন্নীত হয় এবং 'ভিক্টোরিয়া কলেজ' নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একই বছর এই কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবেও তালিকাভুক্ত হয়। ১৯০২ সালে এক প্রচন্ড অগ্নিকান্ডের ফলে এই কলেজটি সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত হয়। কিছু কাল পরেই প্রতিষ্ঠাতা আনন্দচন্দ্র রায় কর্তৃক এর পুননির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। ১৮৯৯ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ একটি টালির ঘর দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ও বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার এ. রসুল, কুমিল্লার নবাব হোচ্চাম হায়দার চৌধুরী, লাকসামের নবাব ফয়জুন্নেসা প্রমুখ ব্যক্তিত্বের আর্থানুকূল্যে বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক শাখার অধ্যক্ষের কক্ষ, অফিসকক্ষ, লাইব্রেরী ও অধ্যাপক মিলনায়তনটি নির্মিত হয়। ১৯০৪ সালে একটি ট্রাস্ট ডিডের মাধ্যমে স্কুল ও কলেজটিকে পৃথক করা হয়। এ সময়ে কলেজে একটি পরিচালনা পর্ষদও ছিল। এই পরিচালনা পর্ষদ ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কলেজ অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা আনন্দচন্দ্র রায়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। আনন্দচন্দ্র রায় ছিলেন এই পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সম্পাদক। ১৯০৪ সালের টাস্ট ডিডে মূলত শ্রী আনন্দচন্দ্র রায়কে কলেজ গভর্নিং বডির আজীবন সম্পাদক রাখার স্বপক্ষে একটি রেজুলেশন ঘোষণা করা হয়। ১৯০৮ সালে ২৪শে মার্চ, শ্রীআনন্দচন্দ্র রায় তৎকালীন পার্বত্য ত্রিপুরার রাজা রাধাকিশোর দেববর্মণ মাণিক্য ও পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের ত্রিপুরা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট এ.এইচ. ক্লেটন সাহেবের সঙ্গে আরেকটি ‘ট্রাস্ট চুক্তি’-তে স্বাক্ষর করেন। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কলেজের সার্বিক উন্নতি বিধান। কারণ-এই ‘ট্রাস্ট চুক্তি’র আরোপিত শর্ত অনুসারে পার্বত্য ত্রিপুরার রাজা কলেজ, বোর্ডিং হাউস এবং অধ্যক্ষের বাসভবনের উদ্দেশ্যে ট্রাস্টিগণকে বিনামূল্যে জমি দিবেন, কলেজের জন্য পাকা ভবন নির্মাণের খরচ বাবদ ৫০০০ রুপি প্রদান করবেন, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য ৫০০০ রুপি এবং বার্ষিক ৫০০ রুপি স্থায়ী অনুদান কলেজকে প্রদান করবেন। এছাড়াও চুক্তি অনুসারে প্রতিষ্ঠাতা আনন্দ চন্দ্র রায় তাঁর জীবনের সময়কালে কলেজকে বার্ষিক ৩০০ রুপি অনুদান প্রদান করবেন। এছাড়া কলেজসমূহের গ্র্যান্ট ইন এইড হিসেবে ভিক্টোরিয়া কলেজ পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের সরকার থেকে স্পেশাল গ্র্যান্ট হিসেবে এককালীন ২৮০০০ টাকা এবং রিকুরিং গ্র্যান্ট হিসেবে প্রতি বছর ২৫০০ টাকা করে পাবে বলেও সাব্যস্ত হয়।[১]
১৮৯৯ সাল থেকেই কলেজটি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। এ সময়ে এই কলেজে এফ.এ স্ট্যান্ডার্ড চালু হয়। এর কিছুকাল পরেই চালু হয় আই.এ স্ট্যান্ডার্ড। ১৯০৪ সালের পূর্বে এই কলেজে অন্য কোন বিভাগ বা স্নাতক শ্রেণী চালু করা সম্ভব ছিল না। ১৯১৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯১৮ সালের দিকে কলেজের নতুন একটি একাডেমিক ভবন নির্মিত হয় এবং ঐ বছরই স্নাতক শ্রেণি খোলার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি আসে। বিজ্ঞান বিষয়ক উচ্চমাধ্যমিক (আই.এসসি) অধিভুক্তি আসে ১৯২৪ সালে। এই কলেজে বিশ দশকের (১৯২৫) মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে দেশ বিভাগ (১৯৪৭) পর্যন্ত ইংরেজি, গণিত, সংস্কৃত, রাজনীতি বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও আরবী বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক সম্মান কোর্স চালু হয়। তখন অনার্স কোর্স ছিল দুই বছর ব্যাপী। পাস কোর্সও তাই। স্নাতকোত্তর বা এম.এ কোর্সও দুই বছর পড়ানো হতো। ১৯৪২ সালে এ কলেজে বি.এসসি কোর্স চালু হয়। এবং ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে বি.কম কোর্স শুরু হয়। এর কিছুকাল আগে থেকেই অর্থাৎ, ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে এখানে উচ্চমাধ্যমিকে আই.কম চালু ছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখায় বিভক্ত হয়।[১]
১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে কলেজে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। পরে ১৯৭১-৭২ সালের দিকে একাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, রাজনীতি বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৬৪ সালের ২৩ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রাম বিভাগের সব কলেজ এর অধীনে চলে যায়। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে এই কলেজে বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে এমএ খোলা হয় এবং তা প্রায় এক বছরের মতো চালু ছিল। ১৯৮২ সালে এই কলেজে আইসিএমএ কোর্স চালু হয়। ১৯৫৮-৫৯ সালের দিকে এ কলেজে নাইট শিফট চালু হয়। তা ১৯৬৮ সালে ১লা মে নাগাদ চালু ছিল। ১৯৬৮ সালের পয়লা মে কলেজটি সরকারি হয়। এরপর থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নাম পরিবর্তন হয়ে কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ নামকরণ হয়। ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসেবে মর্যাদা পায়। এরপর থেকে ডিগ্রি শাখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়। বর্তমানে কলেজে ২৫টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে। এবং এগুলোর প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ে চালু আছে মাস্টার্স কোর্স।[১]
মহান মুক্তিযুদ্ধে ভিক্টোরিয়া কলেজের ৩৩৪ জন ছাত্র অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জন মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন।[২]
বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ এবং ৪ টি অনুষদের অধীনে মোট ২৫ টি বিষয়ে অনার্স ও ২৩ টি বিষয়ে মাস্টার্স চালু আছে। ৪ টি অনুষদে স্নাতক (পাস) কোর্স চালু রয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে বর্তমানে ৪ টি অনুষদের অধীনে নিম্নোক্ত বিভাগ সমূহ রয়েছে।
অনুষদের নাম | বিভাগ সমূহ |
---|---|
কলা অনুষদ | বাংলা বিভাগ ইংরেজি বিভাগ আরবি ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগ ইতিহাস বিভাগ ইসলামের ইতিহাস বিভাগ দর্শন বিভাগ সংস্কৃত বিভাগ এবং কলা অনুষদের অধীনে বি.এ (পাস) |
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ | হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ মার্কেটিং বিভাগ এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অধীনে বি.বিএস (পাস) |
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ | রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ অর্থনীতি বিভাগ সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ সমাজকর্ম বিভাগ এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে বি.এসএস (পাস) |
বিজ্ঞান অনুষদ | পদার্থ বিভাগ রসায়ন বিভাগ গণিত বিভাগ পরিসংখ্যান বিভাগ প্রাণিবিদ্যা বিভাগ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ নৃ-বিজ্ঞান মৃত্তিকা বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে বি.এসসি (পাস) |
অধ্যক্ষ | দায়িত্বকাল |
---|---|
অধ্যক্ষ সত্যেন্দ্রনাথ বসু | (?-১৯৪৭) |
ড. আখতার হামিদ খান | ১৯৫০-৫৮ |
অধ্যাপক আব্দুর রশীদ | |
অধ্যাপক রুহুল আমিন ভুঁইয়া | (২০১৯-২০২১) |
ড. আবু জাফর খান | (২০২১-২০২৪) |
আবুল বাশার ভূঁইয়া | ২০২৪-বর্তমান[৩] |
কলেজে রয়েছে বিএনসিসি (সেনা), বিএনসিসি (বিমান), রেড ক্রিসেন্ট, ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক পরিষদ, ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার, রোভার স্কাউট, ক্যাম্পাস বার্তা, রক্তদাতা সংগঠন বাঁধন,পদার্থবিজ্ঞান সমিতি, রসায়ন সমিতি,বোটানী সোসাইটি,ম্যাথ অ্যাসোসিয়েশন, ক্যারিয়ার ক্লাব ও বিজ্ঞান ক্লাব। ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতি-কুভিকসাস।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.