Loading AI tools
বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং অভিনেতা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কাজী হায়াৎ (জন্ম ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭) বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং অভিনেতা। তিনি ১৯৭৪ সালে পরিচালক মমতাজ আলীর সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৭৬-১৯৭৭ মৌসুমে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের সাথে সীমানা পেরিয়ে ছবিতেও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭৯ সালে দি ফাদার ছবিটি পরিচালনার মধ্যে দিয়ে পূর্ণ-পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তার বেশিরভাগ ছবিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সমসাময়িক জনদুর্ভোগের চিত্র ফুঁটিয়ে তোলেন।
কাজী হায়াৎ | |
---|---|
জন্ম | কাজী হায়াৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা |
কর্মজীবন | ১৯৭৪ – বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | রমিসা হায়াৎ |
সন্তান | কাজী মারুফ (পুত্র) |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
কাজী হায়াৎ অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন।[1] তার পরিচালিত অন্যতম চলচ্চিত্রসমূহ হল দাঙ্গা (১৯৯২), ত্রাস (১৯৯২), চাঁদাবাজ (১৯৯৩), সিপাহী (১৯৯৪), দেশপ্রেমিক (১৯৯৪), লাভ স্টোরি: প্রেমের গল্প (১৯৯৫), আম্মাজান (১৯৯৯), ইতিহাস (২০০২), কাবুলিওয়ালা (২০০৬) এবং ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না (২০১০)।
কাজী হায়াৎ তার চলচ্চিত্র জীবনে আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও অন্যান্য চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ সর্বমোট ৭৩টি চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি চারটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। দাঙ্গা চলচ্চিত্রের জন্য আফ্রো-এশিয়ো সরিডরি কমিটি এ্যাওয়ার্ড কর্তৃক প্রদেয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্র পরিচালনা এবং লেখনীর জন্য তিনি চারটি ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে নয়টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং লেখনীর জন্য তিনটি বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।
কাজী হায়াৎ ১৯৪৭ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলায় অবস্থিত কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের তারাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
কাজী হায়াৎ প্রথমে ১৯৭৪ সালে মমতাজ আলীর সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। পরে আলমগীর কবিরের সাথে সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭) ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।[2] তিনি পূর্ণ-পরিচালক হিসেবে ১৯৭৯ সালে দি ফাদার ছবিটি পরিচালনা করেন।[3] এতে অভিনয় করেন প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন জন নেপিয়ার অ্যাডামস, বুলবুল আহমেদ ও সুচরিতা। এই ছবির "আয় খুকু আয়" গানটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। পরের বছর নির্মাণ করেন দিলদার আলী। এরপর একে একে নির্মাণ করেন খোকন সোনা (১৯৮২), রাজবাড়ী (১৯৮৪), মনা পাগলা (১৯৮৪ ), পাগলী (১৯৮৫), বেরহম (১৯৮৫)। ১৯৮৭ সালে এটিএম শামসুজ্জামান ও তার যৌথ লেখনীতে আফতাব খান টুলু পরিচালনা করেন দায়ী কে?। ছবিটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এবং এটিএম শামসুজ্জামান শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার লাভ করেন।[4] এছাড়া কাজী হায়াৎ শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের জন্য এবং এটিএম শামসুজ্জামান শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার জন্য বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। আশির দশকের শেষের দিকে তিনি নির্মাণ করেন যন্ত্রণা (১৯৮৮) এবং আইন-আদালত (১৯৮৯)।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি রচনা ও পরিচালনা করেন অপরাধ-নাট্যধর্মী দাঙ্গা (১৯৯২), ত্রাস (১৯৯২), এবং চাঁদাবাজ (১৯৯৩)। ত্রাস ছবিটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এবং চাঁদাবাজ ছবিটির জন্য শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করেন সিপাহী ও দেশপ্রেমিক। একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের সংগ্রামী জীবনের বাস্তবতা নিয়ে নির্মিত দেশপ্রেমিক ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন আলমগীর, মান্না, চম্পা। ছবিটি আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রের সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে এবং কাজী হায়াৎ শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরের বছর রমিসা হায়াতের কাহিনীতে তিনি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন রোম্যান্টিক-নাট্যধর্মী লাভ স্টোরি: প্রেমের গল্প (১৯৯৫)। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রোজী সিদ্দিকী, পল্লব, ও রাইসুল ইসলাম আসাদ।
১৯৯৭ সালে কাজী হায়াৎ রচনা ও পরিচালনা করেন দেশদ্রোহী, লুটতরাজ, পাগলা বাবুল এবং ১৯৯৮ সালে নির্মাণ করেন তেজী। ১৯৯৯ সালে রচনা ও পরিচালনা করেন আম্মাজান, জবরদখল ও ধর। আম্মাজান ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন শবনম[5] এবং তার ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন মান্না। এই চলচ্চিত্রের জন্য কাজী হায়াৎ শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করে এবং কাজী হায়াৎ শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০০ সালে নির্মাণ করেন জখম, কষ্ট, ঝড়, ধাওয়া, ও বর্তমান। পরের বছর নির্মাণ করেন ক্রোধ, আব্বাজান, পাঞ্জা, তান্ডবলীলা। ২০০২ সালে তিনি রচনা, প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন ইতিহাস। এই ছবিতে অভিষেক হয় তার পুত্র কাজী মারুফের[6] এবং চিত্রনায়িকা রত্নার।[7] এই ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে এবং তার পুত্র মারুফ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।[8] এছাড়া কাজী হায়াৎ শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার জন্য এবং কাজী মারুফ শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। পরের বছর তিনি আবার তার পুত্র মারুফকে নিয়ে নির্মাণ করেন অন্ধকার এবং মান্নাকে নিয়ে মিনিস্টার।
২০০৪ সালে তিনি রচনা ও পরিচালনা করেন অন্য মানুষ। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন কাজী মারুফ ও শাবনূর। পরের বছর নির্মাণ করেন সমাজকে বদলে দাও। ২০০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত কাবুলিওয়ালা ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেন কাবুলিওয়ালা। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন মান্না, এবং অন্যান্য প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন প্রার্থনা ফারদিন দিঘী, সুব্রত বড়ুয়া ও দোয়েল।[9] ২০০০ এর দশকের শেষের দিকে তার পুত্র মারুফকে নিয়ে নির্মাণ করেন ক্যাপ্টেন মারুফ (২০০৭) ও শ্রমিক নেতা (২০০৯)।
২০১০ এর দশকের শুরুতে তিনি নির্মাণ করেন অশান্ত মন (২০১০), আমার স্বপ্ন (২০১০), বড় লোকের দশদিন গরিবের একদিন (২০১০), ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না (২০১০), ও পিতা পুত্রের গল্প (২০১১)। ২০১২ সালে তিনি নির্মাণ করেন মানিক রতন দুই ভাই।[10] পরের বছর নির্মাণ করেন ইভটিজিং।[11] পরে তার পুত্র মারুফকে নিয়ে নির্মাণ করেন সর্বনাশা ইয়াবা (২০১৪) ও ছিন্নমূল (২০১৬)। ছিন্নমূল কাজী হায়াতের পঞ্চাশতম চলচ্চিত্র।[12]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.