শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত অপরাধসমূহের বিচার ট্রাইব্যুনাল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ) (ইংরেজি ভাষায়: International Crimes Tribunal (Bangladesh), সংক্ষেপে ICT (Bangladesh)) বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি অপরাধ ট্রাইবুনাল যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের বিচার করা। এর আওতায় পড়ে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ।[১] বাংলাদেশে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলটির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ইশতেহার ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা। সে নির্বাচনে তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বিজয়ী হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ ২০০৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব পেশ করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।[২] অবশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ ট্রাইবুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়।[৩]
Remove ads
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ট্রাইব্যুনাল গঠন
১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার বিষয়ে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশে বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মাঝে ব্যাপক সচেতনতার সৃষ্টি হয়।[৪][৫] আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই গণদাবি অন্তর্ভুক্ত করে। ২০০৮-এর ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয় লাভ করার পর পরই নির্বাচিত দল আওয়ামী লীগ কর্তৃক গঠিত সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে।[৬][৭] এরপর ২০০৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করা হয়।[২]
বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীসহ সিনিয়র সাংসদরা প্রস্তাবটিকে সমর্থন জানালে স্পিকার তা অনুমোদন দেওয়া হবে কিনা এই প্রশ্ন ভোটে নেন। মৌখিক ভোটে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।[৮][৯]
সংসদে গৃহীত প্রস্তাবের বাস্তবায়নে সরকার বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী অভিযুক্তদের তদন্ত এবং বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত ঘোষণাটি আসে ২০০৯ সালের ২৫শে মার্চ।[১০][১১] বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ এবং শীর্ষ আইনজীবীদের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে সরকার ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার ২০০৯ সালের ২১শে মে বিশেষজ্ঞদের মতামত চেয়ে ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টটি আইন কমিশনে পাঠায়।[১১] এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইন কমিশন দেশের বিশেষজ্ঞ আইনজীবী, বিচারপতি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আরও কয়েকজন আইনজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালে প্রণীত ট্রাইব্যুনালে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে সংশোধন আনার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়।[১১][১২] অতঃপর আইন কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা করে ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনকে যুগোপযোগী করার জন্য ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কিছু সংশোধনী জাতীয় সংসদে মৌখিক ভোটে পাশ করা হয়।[১৩][১৪]
সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকেও বিচারের আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা এবং 'ট্রাইব্যুনাল স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করবে' এই মর্মে সুস্পষ্ট আইনগত বিধান সন্নিবেশ করা সহ আরও কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়।[১৩] অবশেষে স্বাধীনতা লাভের ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়।[৩] এরই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার এবং তাদের অপরাধের বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয় ট্রাইব্যুনাল। নাগরিক সমাজের দাবি এবং তাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুরাতন হাইকোর্ট ভবনকে আদালত হিসেবে প্রস্তুত করা হয়।
Remove ads
অবকাঠামো
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ট্রাইব্যুনাল-১
২০১০ সালের ২৫শে মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন ১৯৭৩-এর ৬ ধারার বলে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় । সেই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয় বিচারপতি মো. নিজামুল হক এবং অন্য দুজন বিচারক ছিলেন বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদ । পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২২শে মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠিত হওয়ার পর এটিএম ফজলে কবীর প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে সরে গিয়ে দ্বিতীয়টির চেয়ারম্যানের পদ গ্রহণ করেন । [১৫] তার স্থলাভিষিক্ত হন হাইকোর্টের বিচারপতি আনোয়ারুল হক । [১৬] এর মধ্যে নিজামুল হক ও ফজলে কবীর বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত বিচারপতি এবং জহির আহমেদের জেলা পর্যায়ে ৩০ বছর বিচারক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে । [১৭] অসুস্থতার জন্য বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদ অব্যাহতি চাইলে তাকে অব্যাহতি দিয়ে তার স্হলে হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন কে নিয়োগ দেয়া হয় ২৯ আগস্ট ২০১২ তারিখে । ১১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক পদত্যাগ করলে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীরকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয় ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে । ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান হন একই ট্রাইব্যুনাল এর সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান । ট্রাইব্যুনাল-২ এর নতুন সদস্য হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া । ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীর ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে স্বাভাবিক অবসরে গেলে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ হাইকোর্টের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম কে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয় । বিচারপতি আনোয়ারুল হক কে চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ শাহিনুর ইসলাম ও হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী কে সদস্য করে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে ট্রাইব্যুনাল-১ পূূর্নগঠন করা হয় । ট্রাইব্যুনাল-২ কে নিস্ক্রিয় করা হয় । বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া কে হাইকোর্টে ফেরত পাঠানো হয় ।
ট্রাইব্যুনাল-২
বিচার প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করতে তিন সদস্যবিশিষ্ট নতুন আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২২শে মার্চ । এর নাম হয় ICT-2 বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ । দ্বিতীয় এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুুক্ত হন প্রথম ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর । অন্য দুজন সদস্য হলেন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও প্রথম ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বিচারপতি মোহাম্মদ শাহিনুর ইসলাম । [১৬] ১১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক পদত্যাগ করলে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীরকে ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয় । ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয় একই ট্রাইব্যুনাল এর সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান কে, বিচারপতি মোহাম্মদ শাহিনুর ইসলাম এর সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল-২ এর নতুন সদস্য হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া । ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক কে চেয়ারম্যান করে ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য মো. শাহিনুর ইসলাম ও হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী কে সদস্য করে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠন করা হয়, ট্রাইব্যুনাল-২ কে নিস্ক্রিয় করা হয় ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেল
২০১০ সালের ২৫শে মার্চ প্রথম ট্রাইব্যুনালের জন্য ১২-সদস্যবিশিষ্ট একটি আইনজীবী প্যানেল গঠন করা হয়েছিল। প্যানেলের প্রধান তথা চিফ প্রসিকিউটর ছিলেন গোলাম আরিফ। বাকি ১১ জন আইনজীবী ছিলেন সৈয়দ রেজাউর রহমান, গোলাম হাসনাইন, রানা দাশগুপ্ত, জহিরুল হক, নুরুল ইসলাম, সৈয়দ হায়দার আলী, খন্দকার আবদুল মান্নান, মোশারফ হোসেন, জিয়াদ-আল-মালুম, সানজিদা খানম ও সুলতান মাহমুদ।[১৫]
তদন্তকারী সংস্থা
ট্রাইব্যুনাল ও আইনজীবী প্যানেল গঠনের পাশাপাশি প্রাক্তন জেলা জজ ও আইন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবদুল মতিনে সমন্বয়ে ৭ সদস্যের একটি তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগ দেয়া হয়েছিল একই দিনে। সংস্থার অন্য সদস্যরা ছিলেন: পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আবদুর রহিম, সাবেক উপমহাপরিদর্শক কুতুবুর রহমান, মেজর (অব.) এ এস এম সামসুল আরেফিন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মীর শহীদুল ইসলাম, একই বিভাগের পরিদর্শক নুরুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাক খান।[১৫]
বিচারালয়
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত পুরাতন হাইকোর্ট ভবনকে আদালত হিসেবে প্রস্তুত করে একে ট্রাইব্যুনালের বিচারালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[১৫]
Remove ads
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারপতিবৃন্দ
Remove ads
অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
Remove ads
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবীতে গণ-আন্দোলন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে ট্রাইব্যুনাল যুদ্বাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লাকে ৩টি মামলায় ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ২টি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। এই রায় বাংলাদেশের মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবীতে ওইদিনই ছাত্র, শিক্ষক সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার মানুষ জড় হতে থাকে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে। শাহবাগের এই প্রতিবাদ অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন অংশে। শাহবাগসহ সারা বাংলাদেশেই 'যুদ্ধাপরাধী'র ফাঁসির দাবীতে গঠিত হয় গনজাগরণ মঞ্চ[২৪]।কিন্তু শাহবাগে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে রয়েছে নাস্তিক ব্লগাররা, এই অভিযোগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম নামক একটি সংগঠন সক্রিয় হয়ে উঠে।[২৫] ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে শাহবাগ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।[২৬] কিন্তু তার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমে দৈনিক ইনকিলাব ও এর পরপরই দৈনিক আমার দেশ ধারাবাহিক আকারে কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে দাবী করা হয় যে ব্লগার রাজীব মুসলমানদের শেষ নবী মুহাম্মাদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছে।[২৭] এর পরপর হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফা দাবী এবং এরকম কটূক্তিকারীদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। এ সময়ই শাহবাগ আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়[২৮]।
Remove ads
বিতর্ক
সারাংশ
প্রসঙ্গ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ ট্রাইব্যুনালের কাজের বিরোধিতা করে বলেছে, Bangladesh: Death Sentence Violates Fair Trial Standards[২৯] ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনজীবী ব্রিটিশ লর্ড কার্লাইল এ বিচার প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কড়া সমালোচনা করে বলেছে - ট্রাইব্যুনাল পুরোপুরিভাবে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করছে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরো বলেছে, প্রথম থেকে এই বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক ত্রুটি ছিল, তার কিছু কিছু সংশোধন করা হলেও এখনও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হলে এজন্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশাপাশি যাদের বিচার করা হচ্ছে, তাদের মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।[৩০]
মার্চ ২০১৩ সালে দি ইকোনমিস্ট সাপ্তাহিক এই বিচার ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগ সরকারের হস্তক্ষেপ, অভিযুক্তদের জন্য যথেষ্ট সময় না দেওয়া, অভিযুক্তদের সাক্ষী পাচার এবং নিরপেক্ষতা বিতর্কে বিচারকদের পদত্যাগ উল্লেখ করে সমালোচনা করে।[৩১]
যুক্তরাজ্যে অবস্থিত আইনজীবীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশন ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর তাদের মতামতে বলেন, অভিযুক্তদের বিচারকালীন অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আইন বাংলাদেশ কর্তৃক স্বীকৃত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের ১৪ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন, যা ট্রাইব্যুনালকে সমালোচনার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ আইনটি সংশোধনীর জন্য ১৪টি সুপারিশ করে তারা।[৩২]
যুগোশ্লাভিয়া এবং রুয়ান্ডার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইনজীবী স্টিভেন কে কিউসি, ব্রিটিশ আইনজ্ঞ জন কামেহ ও টবি ক্যাডম্যান এই বিচারের অন্যতম সমালোচক ছিলেন। তারা এর আগে অনুমোদন আইন এবং ২০০৯ সালের সংশোধনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন, এবং বলেছিলেন: ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বর্তমান ব্যবস্থা এবং এর আইনে আন্তর্জাতিক মান অন্তর্ভুক্ত নয়, যা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়।’ তারা গণমাধ্যম কর্মীদের সতর্কতার সঙ্গে সংবাদ সংগ্রহের আহবান জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকরা যেন কোনোভাবেই বিচারের আগে মিডিয়া ট্রায়াল করে না ফেলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক মান, নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিচার কাজ সম্পন্ন করার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তারা।[৩২][৩৩]
বিচারের শুরু থেকেই জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের এই বিচারের কঠোর সমালোচনা করে আসছিল এবং বিচারের নানান অসংগতির বিরুদ্ধে সরব ছিল। ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো এক অভিমতে অভিযুক্তদের আইনগত সহযোগিতা এবং সাক্ষ্যগ্রহণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা দেখতে পায়। বিচারের পূর্বে আটকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অবশ্যই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে বলে অভিমত জানায়। ট্রাইব্যুনাল আট আসামির মধ্যে ছয়জনকে এক বছরের অধিককাল ধরে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই আটক করে রাখা, এটি সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৯ অনুচ্ছেদ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের ৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। তারা আন্তর্জাতিক আইনের যথাযথ প্রতিপালন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।[৩২]
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসিতে জাতিসংঘ গভীর উদ্বেগ জানায়। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুনের বরাতে বলা হয়, 'বিশেষ এই মামলাটি যেভাবে চলেছে তাতে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড এবং বিশেষ করে এই ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন জাতিসংঘ মহাসচিব।'[৩৪]
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলও মতিউর রহমান নিজামীসহ বাংলাদেশে বিরোধী দলের দুই নেতার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বলে, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমগুলো ন্যায্য বিচার এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মান পূরণ করেনি।[৩৫]
এছাড়া মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে তুরস্ক ঢাকা থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয় এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান তীব্র ভাষায় এই ফাঁসির নিন্দা করেন। তুরস্কের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বাংলাদেশের "বিরাট এক ভুল" বলে আখ্যায়িত করেন।[৩৬]
তদুপরি যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডস সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়কে প্রত্যাখ্যান করে।[৩৭]
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারীতে উইকিলিকস দ্বারা প্রকাশিত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি তারবার্তা থেকে জানা যায় যে, এই বিচার সরকারবিরোধী সমালোচকদের উদ্বেগকে আরও জোরদার করে, এবং এতে সামান্য সন্দেহ আছে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কট্টরপন্থীরা বিশ্বাস করে যে জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলিকে এভাবে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।[৩৮]
স্কাইপ কেলেঙ্কারি
২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নিজামুল হক এবং ব্রাসেলসে অবস্থিত একজন বাংলাদেশী আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে স্কাইপ কথোপকথন এবং ইমেল ফাঁসের ঘটনা ঘটে। দি ইকোনমিস্টের মতে, রেকর্ডিং এবং ইমেইলগুলি দেখে বুঝা যায় যে, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যনির্বাহীর উপর দ্রুত বিচারের জন্য চাপ এবং হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছিল। জিয়াউদ্দিন প্রসিকিউটর জায়েদ-আল-মালুম সহ অন্যান্য প্রসিকিউটরদেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন আর প্রসিকিউটররা কীভাবে তাদের মামলা চালাবে সে সম্পর্কেও সে নিজামুল হককে অবহিত করেছিলেন। এর ফলশ্রুতিতে বিচারক, উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্রপক্ষের মধ্যে অনৈতিক সংযোগ তৈরী হয়েছিল।[৩৯] যার ফলে, ১১ ই ডিসেম্বর ২০১২ এ, নিজামুল হক ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে আইসিটি-১ এর চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিচার কার্যের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্ন করে, জামায়াতে ইসলামী এই ট্রাইব্যুনাল বাতিল করার দাবি করে। কিন্তু আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন যে, নিজামুল হকের পদত্যাগ বিচারের কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত করবে না। [৪০] ১৩ ডিসেম্বর, তদানীন্তন দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের প্রধান (আইসিটি -২) ফজলে কবিরকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয়। [৪১]
Remove ads
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads