শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

গোলাম আযম

বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

গোলাম আযম
Remove ads

অধ্যাপক গোলাম আযম (৭ নভেম্বর ১৯২২ – ২৩ অক্টোবর ২০১৪)[] ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এর একজন রাজনীতিবীদ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী।[][] তিনি ২০০০ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন।[] গোলাম আযম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন।[][] তিনি ২০০০ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[][১০][১১][১২]

দ্রুত তথ্য গোলাম আজম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ...
Remove ads

জামায়াতে ইসলামীর নেতা হিসেবে তিনি বিতর্কিত শান্তি বাস্তবায়ন বা শান্তি কমিটির একজন সদস্য ছিলেন, যে কমিটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী অন্যান্য পাকিস্তানি বাঙালি নেতাদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল।[১৩] এছাড়াও তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তার জন্য গঠিত আধাসামরিক বাহিনী আলবদররাজাকার গঠনেরও অভিযোগ রয়েছে।[১৪] এই মিলিশিয়ারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করা মুক্তিবাহিনীর বিরোধিতা করেছিল এবং এরাও যুদ্ধাপরাধের অভিযুগে অভিযুক্ত।[১৩][১৫][১৬][১৭] তার আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, ১৯৭১ সালে তিনি একজন বেসামরিক সাধারণ নাগরিক ছিলেন বলে তার পক্ষে সেনাবাহিনী পরিচালনা বা কোন ধরনের সামরিক বহিনীর কমান্ডার হওয়ার সুযোগ ছিল না।[১৮] স্বাধীনতার বিরোধিতা সহ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে লিপ্ত থাকার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালের ১৮ এপ্রিল গোলাম আযম সহ ৪২ জন রাজনৈতিক ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল করেছিল।[১৯][২০][২১] গোলাম আযম ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার অনুমতি ব্যতীত বা ভিসাবিহীন অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করেন।[২২][২৩]

তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, মানবাধীকারকর্মী ও লেখিকা সুলতানা কামাল বলেন, “নিষ্ঠুরতার দিক দিয়ে গোলাম আযম ছিলেন জার্মানির সাবেক শাসক হিটলারের সমকক্ষ যিনি গণহত্যা কার্যকর ও জাতিগত নির্মূলে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন।”[২৪] এই কথার জবাবে আযমের আইনজীবীরা বলেন, “এটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক ও বানোয়াট। হিটলারের পক্ষে এটা করা সম্ভব ছিল কারণ তার কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিল কিন্তু গোলাম আযমের কোন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিল না। ১৯৭১ সালে জেনারেল টিক্কা খানইয়াহিয়া খানের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিল।”

১১ জানুয়ারি ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।[২৫][২৬] মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ১১ই জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গোলাম আযমের পক্ষে করা জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন। আদেশে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামিনের কোনো বিধান নেই। এ ছাড়া মামলার এ পর্যায়ে জামিন দেওয়া সম্ভব নয়।[২৭][২৮][২৯][৩০][৩১] ১৫ জুলাই ২০১৩ সালে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল।[৩২][৩৩][৩৪][৩৫]

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এই বিচারের সমালোচনা করেছিলেন।  হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, যারা প্রথমদিকে বিচারের সমর্থক ছিল এবং পরবর্তীকালে “প্রসিকিউশন এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বিচার বিভাগীয় পক্ষপাতিত্ব ও একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি” এর সমালোচনা করে, বিচারিক প্রক্রিয়াটিকে গভীরভাবে ত্রুটিযুক্ত এবং আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচারের মান পূরণ করতে অক্ষম বলে অভিহিত করে।[৩৬][৩৭][৩৮][৩৯] উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি ২০১২ আইসিটি স্কাইপ বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল।[৪০]

Remove ads

জন্ম ও বংশ

গোলাম আযম ৭ নভেম্বর ১৯২২ (বাংলা ১৩২৯ সালের ৫ই অগ্রহায়ণ) সালে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারস্থ শাহ সাহেব বাড়িতে (তার নানাবাড়ীতে) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মাওলানা গোলাম কবীর ও সৈয়দা আশরফুন্নেসার জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর পৈত্রিক বাড়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীরগাঁও গ্রামের মৌলবী বাড়ী। তাঁর নসবনামা নিম্নস্বরূপঃ গোলাম আযম ইবনে গোলাম কবীর ইবনে শেখ আব্দুস সোবহান ইবনে শেখ শেহাবউদ্দীন ইবনে শেখ বখতিয়ার ইবনে শেখ জকী আল-আরবী।[৪১][৪২] তাঁর মা ছিলেন সৈয়দ বংশীয় পীর পরিবারের কন্যা এবং শাহ আহসানুল্লাহ সাহেবের বংশধর[৪১][৪৩]

Remove ads

শিক্ষা জীবন

তিনি নিজ গ্রাম বীরগাঁর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা ও ঢাকা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর জিএস (জেনারেল সেক্রেটারি) পদে দায়িত্ব পালন করেন।[৪৪] তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে তৎকালীন সময়ে সংঘটিত হওয়া বাংলা ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ডাকসু’র জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন তিনি ২৭ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে ডাকসু'র পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন, যাতে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করা হয়। বাংলা ভাষা আন্দোলনে শরীক হওয়ার কারণে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের হাতে তিন বার গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং তাকে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়।[৪৫][৪৬][৪৭][৪৮][৪৯][৫০][৫১] তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর বিএ এবং ১৯৫০ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।[৫২]

Remove ads

কর্মজীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ছাত্রজীবন শেষে গোলাম আযম ১৯৫০ সালেই তবলিগ জামায়াতের তৎপরতার সাথে জড়িত হন। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি তবলিগ জামায়াতের রংপুরের আমির ছিলেন। ১৯৫০ সালের ৩রা ডিসেম্বর তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। গোলাম আযম তমদ্দুন মজলিসের কাজেও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে পড়েন ১৯৫২ সালে। ১৯৫৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি তমদ্দুন মজলিসের রংপুর জেলার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪৬][৫৩]

১৯৫৪ সালেই গোলাম আযম সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদীর ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হন। ১৯৫৪ সালের ২২ এপ্রিল তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালের এপ্রিলে জামায়াতে ইসলামীতে সহযোগী (মুত্তাফিক) হিসেবে যোগদান করার পর ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হয়ে রংপুর কারাগারে অবস্থানকালেই জামায়াতের রুকন হন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। এর এক বছর পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এবং রাজশাহী বিভাগীয় আমিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ক্রমেই দলে তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও ১৯৫৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক পদ গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খান সরকারবিরোধীতার জন্য মৌলবাদী ধর্মীয় কাজকর্মের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ও আযম গ্রেফতার হন। তাকে আট মাস আটক করে রাখা হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির (সভাপতি) পদে অধিষ্ঠিত হন এবং এই পদটি তাকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে হয়েছিল। তিনি ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান গণতান্ত্রিক জোট গঠনের অন্যতম অংশগ্রহণকারী।[৫২] দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।[৫৪] গোলাম আযম জামায়াতে ইসলামীর তাত্ত্বিক নেতা বা গুরু হিসেবেও পরিচিত।[৫৫]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

১৯৭০-এর নির্বাচন

পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর (পাকিস্তান গণতান্ত্রিক দল, জাতীয় আওয়ামী দল, জামায়াত উলমা-ই-ইসলাম ও পাকিস্তান জাতীয় লীগসহ) সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে গোলাম আযম আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনের জন্য প্রস্ততি নিতে শুরু করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে পাবলিক মিটিং-এ ভাঙ্গচুর, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর শারীরিক আক্রমণ ও পার্টি অফিসের লুটপাট ও ধ্বংসের জন্য অভিযুক্ত করা হয়।[৫৬] ১৯৭০ সালে আযম যখন জামায়াতের প্রধান তখন জামায়াতে ইসলামীর র‍্যালিসহ, কিছু রাজনৈতিক র‍্যালি সশস্ত্র গুন্ডাদের হামলার শিকার হয় এবং অভিযোগ করা হয় এই হামলার উসকানি দিয়েছে আওয়ামী লীগ[৫৭][৫৮]

Remove ads

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভূমিকা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গোলাম আযম রাজনৈতিক অবস্থান নেন ও পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা করেন[৫৯] এবং বারবার আওয়ামী লীগ ও মুক্তিবাহিনীকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকেন।[৬০] পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয় এবং ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। আযমের বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য ২৫ মার্চের পর থেকে জামায়াতের মুখপত্র বলে পরিচিত দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত। ২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি ভারতের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানিদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে।...আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্ব পাকিস্তানি মুসলমানদের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না।"[৬১][৬২] ২০ জুন ১৯৭১ সালে করা একটি মন্তব্যে গোলাম আযম পাকিস্তানের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। মন্তব্যটি ছিল, “পাকিস্তনি বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রায় সকল সন্ত্রাসীদের হটিয়ে দিয়েছে।”[৬০]

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১১ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গঠিত শান্তি কমিটিতে আযম গূরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ও তিনি এই আন্দোলনকে ভারতের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন।[১৩][৬৩] আরো মনে করা হয়, আযম এই সংস্থার একজন প্রাতিষ্ঠাতা সদস্য।[১৩] গোলাম আযমের জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও বিহারিদের দ্বারা শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল।[৬৪] অভিযোগ করা হয়, শান্তি কমিটির সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করত। তারা স্থানীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম যেমন হিন্দুদের সম্পদ ও জমি দখল করে সেগুলো পূণঃবিতরন করত। বিশেষ করে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরা শান্তি কমিটির হয়রানির শিকার হয়েছে বেশি। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ১ কোটি মানুষ পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।[১৪] শান্তি কমিটির সদস্যরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে রাজাকার সদস্য সংগ্রহ করত। রাজাকারের জন্য প্রাথমিকভাবে আযমের জামায়াতে ইসলামী থেকে ৯৫ জন সদস্যকে সংগ্রহ করা হয় যাদেরকে খুলনার শাহজাহান আলী সড়কের আনসার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।[৬৫] এছাড়া যুদ্ধের সময় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান আশরাফ হোসাইন জামালপুর জেলায় ২২ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মিলিশিয়া বাহিনী আলবদর গঠন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১২ এপ্রিল ১৯৭১ সালে আযম ও মতিউর রহমান নিজামী এই স্বাধীনতা আন্দোলনকে ভারতের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে একটি বিক্ষোভের ডাক দেন ও তাতে নেতৃত্ব দেন।[৬৬]

Thumb
৬ এপ্রিল, ১৯৭১ এ গভর্নর টিক্কা খানের সংঙ্গে বৈঠকরত গোলাম আযম ও নূরুল আমিনসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ১২ জন শান্তি কমিটির রাজনৈতিক নেতা।[৬৭]

মুক্তিযুদ্ধের সময় আযম প্রায়ই পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণ করতেন, পাকিস্তানের নেতাদের সাথে যুদ্ধ সম্পর্কিত আলোচনা করতেন।[৬৮] ৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের দুস্কৃতিকারী বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন যে তার দল এদের দমনে সর্বাত্ত্বক চেষ্টা করছে এবং এ কারণেই দুস্কৃতকারীদের হাতে বহু জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে।[৬৯] আযম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল টিক্কা খানসহ অন্যান্য সেনা অফিসারদের সাথে বৈঠক করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার বিশদ আলোচনা করেন।[৬৮]

১২ আগস্ট ১৯৭১ সালে দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি বক্তব্যে বলেন, “তথাকথিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকারীরা ইসলাম ও পাকিস্তানের শত্রু।”[৭০] তিনি ভারতের বিরুদ্ধে আন্দোলনেরও ডাক দেন।[৭১] গোলাম আযমকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবেও অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগে বলা হয় সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে তিনি রাও ফরমান আলীর সাথে এক গোপন বৈঠক করে এই হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা তৈরি করেন।[৭২] উল্লেখ্য ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রামে গোলাম আযমের পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালের একটি সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ দুই কিস্তিতে ছাপা হয়। এই সাক্ষাৎকারে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে তার দলের সদস্যদের সংঘর্ষের বিভিন্ন বিবরণ ও পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থতির ওপর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,

"বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জামায়াতকে মনে করতো পহেলা নম্বরের দুশমন। তারা তালিকা তৈরি করেছে এবং জামায়াতের লোকদের বেছে বেছে হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর লুট করছে জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এতদসত্বেও জামায়াত কর্মীরা রাজাকারে ভর্তি হয়ে দেশের প্রতিরক্ষায় বাধ্য। কেননা তারা জানে 'বাংলাদেশ' ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কোন স্থান হতে পারে না। জামায়াত কর্মীরা শহীদ হতে পারে কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে না।" (দৈনিক সংগ্রাম, ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১)

[৭৩][৭৪]

Remove ads

অভিযোগ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

২০ জুন, ১৯৭১ সালে আযম লাহোরে ঘোষণা করেন শেখ মুজিবুর রাহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা স্বাধীনতার আন্দোলন করছে।[৭৫] ১২ আগস্ট, ১৯৭১ সালে দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি বার্তায় গোলাম আযম বলেন, তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের কর্মীরা ইসলাম ও পাকিস্তানের শত্রু।[৭৬] আযম তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং অভিযোগগুলো প্রমাণ করার জন্য তথ্য-উপাত্ত বা প্রমাণ হাজির করতে বলেন।[৭৭] পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী থাকার কথা স্বীকার করেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেন।[৬৩]

সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান তাদের শাসনকে বৈধ করার জন্য একটি নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। ১২ই অক্টোবর ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন ২৫ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর-এর মধ্যে একটি নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। গোলাম আযম এই নির্বাচনে আংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৫ আক্টোবর পাকিস্তনি সরকার হঠাৎ করেই ঘোষণা করে নির্বাচনের জন্য কোনপ্রকার প্রতিদ্বন্দিতা ছাড়াই ১৫ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। ২ নভেম্বর-এর ঘোষণা অনুযায়ী ৫৩ জন প্রার্থী নির্বাচনের জন্য কোন প্রকার প্রতিদ্বন্দিতা ছাড়াই যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।[৭৮] এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে জামায়াত ১৪টি আসনে নির্বাচিত হয়।[৭৯] মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “আযম ছিলেন জার্মানির সাবেক শাসক হিটলারের সমকক্ষ যিনি নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যায় নিয়োজিত ছিলেন।”[২৪] এর জবাবে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, “তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যার সকল ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল, তাহলে কেন তার একটি কমিটির প্রয়োজন হবে? হিটলারের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একমাত্র হিটলারই যথেষ্ট ছিল।[৮০] যাইহোক নিউইয়র্ক টাইমস ১৯৯২ সালে এক প্রতিবেদনে দাবি করে, গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তার বিরোধিতার জন্য ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে।[৮১]

Remove ads

১৯৭১-এর পর বাংলাদেশ বিরোধী তদবির

সারাংশ
প্রসঙ্গ

পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনী জয় লাভ করে ও ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে একটি নতুন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের জন্ম হয়। গোলাম আযম ১৯৭১ সালের পরও তার বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানের অনেক নেতাকে এই নতুন জন্ম নেওয়া দেশকে স্বীকৃতি না দিতে তদবির করেন। তার এই তদবির সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ বিবরণ ঢাকা বিশ্বব্যিালয়ের অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের লেখায় পাওয়া যায়।[২২] অধ্যাপক আনিসুজ্জামান গোলাম আযমের বিরূদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ১৯৯২ সালে গঠিত গণআদালতে উপস্থাপন করেন। এই গণআদালত জাহানারা ইমাম ও অন্যান্যদের দ্বারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গঠিত হয়েছিল। জাহানারা ইমাম এই অভিনব গণআদালতে গোলাম আযমের বিচারের দাবি তুলেছিলেন এবং হাজার হাজার জনতা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছিল।[৮২]

দৈনিক প্রথম আলো অনুসারে, তিনজন বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা গোলাম আযমের বিরোদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। বাঙালি সাংস্কৃতির বিরূদ্ধে গোলাম আযমের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উত্থাপন করেন সাইদ শামসুল হক, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।[২২] আনিসুজ্জামানের উপত্থাপিত অভিযোগের কিছু বিশেষ অংশ হল,[২২]

  • ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হলে গোলাম আযম পাকিস্তানে বসে মাহমুদ আলী ও খাজা খয়েরউদ্দীনের মতো দেশদ্রোহীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি নামে একটি সংগঠনের সূচনা করেন এবং বিভিন্ন দেশে পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার আয়োজন করতে থাকেন। তিনি এই উদ্দেশ্যে দীর্ঘকাল পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির বলে পরিচয় দিতেন।
  • ১৯৭২ সালে গোলাম আযম লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করেন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র উচ্ছেদ করে আবার এই ভূখণ্ডকে পাকিস্তানের অংশে পরিনত করার ষড়যন্ত্র করেন। ১৯৭৩-এ ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন অফ স্টুডেন্টস ইসলামিক সোসাইটিজের বার্ষিক সম্মেলনে এবং লেসটারে অনুষ্ঠিত ইউকে ইসলামিক কমিশনের বার্ষিক সভায় তিনি বাংলাদেশ বিরোধী বক্তৃতা দেন। ১৯৭৪-এ মাহমুদ আলীসহ কয়েকজন পাকিস্তানিকে নিয়ে তিনি পূর্ব লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির একটি বৈঠক করেন। বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে দেখে এই সভায় স্থির করা হয় যে, তারা এখন থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে একটি কনফেডারেশন গঠনের আন্দোলন করবেন। এই সভায় গোলাম আযম ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাংলাদেশে ফিরে অভ্যন্তর থেকে কাজ চালানোর প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন। ১৯৭৭-এ লন্ডনের হোলি ট্রিনিটি চার্চ কলেজে অনুষ্ঠিত একটি সভায় তিনি এ কথারই পুনরাবৃত্তি করেন এবং সেই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আগমন করেন।
  • ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে গোলাম আযম রিয়াদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামি যুব সম্মেলনে যোগদান করেন ও পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল মুসলিম রাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি সাতবার সৌদি বাদশার সঙ্গে সাক্ষাত করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে অনুরোধ করেন। ১৯৭৪ সালে রাবেতায়ে আলমে ইসলামির উদ্যোগে মক্কায় অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এবং ১৯৭৭ সালে কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি সভায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন।
  • অনুরূপভাবে গোলাম আযম ১৯৭৩ সালে বেনগাজিতে অনুষ্ঠিত ইসলামি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য লবিং করেন। একই বছরে ত্রিপোলিতে অনুষ্ঠিত ইসলামি যুব সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হানিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
  • ১৯৭৩ সালে গোলাম আযম মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অফ আমেরিকা এন্ড কানাডার বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানে পরিণত করতে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান।
  • ১৯৭৭ সালে গোলাম আযম ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামিক ফেডারেশন অফ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশবিরোধী বক্তৃতা করেন।[২২]
Remove ads

বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন

১৯৭৮ সালে গোলাম আযম পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদী ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। কিন্তু তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে কোন প্রকার বৈধ ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে অবস্থান করেন এবং তার জন্মসূত্রে এদেশে থাকার অধিকার রয়েছে এই অধিকারবলে দেশত্যাগে অস্বীকৃতি জানান।[২২][২৩] ২০০০ সালের পর গোলাম আযম সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। তার উত্তরসূরী হলেন আরেক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী[]

Remove ads

গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

১১ জানুয়ারি ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কর্তৃক গোলাম আযম ১৯৭১ সালে মানবতা ও শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেফতার হন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন ও তাকে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। যাইহোক তিন ঘণ্টা পর তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে মেডিকেল চেক আপে পাঠানো হয়। ডেইলি স্টার অনুসারে, ১৫ জানুয়ারি একটি মেডিকেল টিম দ্বারা আযম বিচারের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও, তিনি হাসপাতালের কারাগার কক্ষে থাকার অনুমতি পান।[৮৩][৮৪] একই পত্রিকায় পরে বলা হয়, তার শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়।[৮৫]

কারারুদ্ধ করার পর থেকে আযমের স্বাস্থ্য অতি দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে।[৮৬] তার স্ত্রী সয়ৈদা আফিফা আযম কয়েকটি সংবাদপত্রে তার স্বামীর চিকিৎসার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আযম ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ছে এবং অপুষ্টিজনিত কারণে এক মাসে ৩ কিলোগ্রাম ওজন হারিয়েছে।[৬০] তিনি আযমের চিকিৎসাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে অভিযোগ করেন যদিও তাকে হাসপাতালের কারাগার কক্ষে রাখা হয়েছে।[৮৭][৮৮] আযমের স্ত্রী আরো অভিযোগ করেন তার সাথে পরিবারের লোকদের সাক্ষাত ও বই সরবরাহ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। এটাকে তিনি এক প্রকার মানসিক নির্যাতন বলে উল্লেখ করেন।[৮৯] ডেইলি স্টার প্রতিবেদনে বলে, আযমের স্ত্রী ও আইনজীবীদের তার সাথে ১৮ ফেব্রুয়ারি সাক্ষাত করার অনুমতি দেওয়া হয় কিন্তু তার ভাতিজাকে কারাগার কক্ষে প্রবেশের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বাধা দেওয়া হয়।[৯০][৯১]

বিভিন্ন দেশের ইসলামিক কর্মীরা গোলাম আযমকে গ্রেফতারের ঘটনা অমানবিক বলে উল্লেখ করেন ও এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন। আন্তর্জাতিক মুসলিম স্কলারস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউসূফ আল-কারযাভী এই গ্রেফতারকে “মর্যাদাহানিকর” বলে উল্লেখ করেন ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাকে অতিশীঘ্রই মুক্তি দেওয়ার অহ্বান জানান। তিনি তার মন্তব্যে বলেন, “অধ্যাপক গোলাম আযম ও তার সহকারী পণ্ডিতবৃন্দদের এবং ইসলামিক কর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত ৪০ বছর পূর্বের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অযৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নয়।”[৯২]

গোলাম আযমের এই বিচারিক প্রক্রিয়াকে অন্তজার্তিক কয়েকটি সংস্থা সমালোচনা করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে, জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল[৯৩][৯৪][৯৫] যদিও গোলাম আযমের পূর্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দুজনকে (দেলোয়ার হোসেন সাঈদীমুহাম্মদ কামারুজ্জামান) একই মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও অপরজনকে (আব্দুল কাদের মোল্লা) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছে।

Remove ads

রায়

১৫ জুলাই ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন।[৩৫] গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫ ধরনের ৬১টি অভিযোগ আনা হয়। যার সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। ৬১টি অভিযোগের মধ্যে— মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মোট ৬টি, মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনার অভিযোগ ৩টি, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ ২৮টি, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ২৩টি এবং হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে একটি।[৩৪] প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগে ১০ বছর করে ২০ বছর, তৃতীয় অভিযোগে ২০ বছর, চতুর্থ অভিযোগে ২০ বছর, পঞ্চম অভিযোগে ৩০ বছর কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, “তিনি (গোলাম আযম) যে অপরাধ করেছেন, তা মৃত্যুদণ্ডতুল্য। কিন্তু তাঁর বয়স বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।”[৩২][৩৫]

Remove ads

মৃত্যু

গোলাম আযম ২৩ অক্টোবর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারের বর্ণনানুযায়ী তিনি রাত দশটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।[৯৬] ২৫ অক্টোবর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুকাররমে জোহরের নামাজের পর তার জানাযার নামাজ আদায় করা হয়। তার জানাযায় বহু লোকের সমাগম ঘটে। জানাযার ইমামতি করেন গোলাম আযমের সন্তান আবদুল্লাহিল আমান আযমী। এ সময় বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদে তার জানাযার বিরোধিতা করে বেশকিছু সংগঠনের কর্মীরা পুলিশের বাধার মুখে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে। জানাযার পর পুলিশি নিরাপত্তায় তার মরদেহ মগবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় বিদ্রোহকারী সংগঠনের কিছু কর্মী লাশবাহী যানে জুতা নিক্ষেপের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে মগবাজারে গোলাম আযমের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।[৯৭]

প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ

  1. বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটনাবহুল ৭৫ সাল (আগস্ট ও নভেম্বর বিপ্লব)[৯৮]
  2. Islam the only divine & complete code of life[৯৯]
  3. স্বাধিন বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন[১০০]
  4. শেখ হাসিনার দুঃ শাসনের ৫ বছর[১০১]
  5. শ্রমিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান[১০২]
  6. চিন্তাধারা[১০৩]
  7. ৩৭ বছর পর এ ইস্যু নিয়ে মাতামাতির আসল গরজ কী[১০৪]
  8. বাংলাদেশের জনগণের নিকট ১৫ আগস্ট কি শেখ মুজিব কি জাতির পিতা[১০৫]
  9. দেশ গড়ার ডাক[১০৬]
  10. বাংলাদেশে ইসলামী ঐক্যপ্রচেষ্টার ইতিহাস[১০৭]
  11. জাতীয় সংসদে রাজনৈতিক দলের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতি[১০৮]
  12. শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামী রুপরেখা[১০৯]
  13. রাষ্ট্রক্ষমতার উত্থান-পতনে আল্লাহ তাআলার ভূমিকা[১১০]
  14. রাজনৈতিক দলের সংস্কার[১১১]
  15. Political Thoughts of Abul A'la Mawdudi[১১২]
  16. সৎ লোকের এতো অভাব কেন[১১৩]
  17. অমুসলিম নাগরিক ও জামায়াতে ইসলামী[১১৪]
  18. কুরআনে ঘোষিত মুসলিম শাসকদের ৪ দফা কর্মসূচী[১১৫]
  19. ষ্টাডী সার্কেল[১১৬]
  20. মুসলিম মা বোনদের ভাবনার বিষয়[১১৭]
  21. Establishment of Deen Islam[১১৮]
  22. কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতিঃ উদ্ভাবনা, প্রস্তাবনা ও আন্দোলন[১১৯]
  23. জীবনে যা দেখলাম - প্রথম খন্ড[১২০]
  24. জীবনে যা দেখলাম - দ্বিতীয় খন্ড[১২১]
  25. জীবনে যা দেখলাম - তৃতীয় খন্ড[১২২]
  26. জীবনে যা দেখলাম - চতুর্থ খন্ড[১২৩]
  27. জীবনে যা দেখলাম - পঞ্চম খন্ড[১২৪]
  28. জীবনে যা দেখলাম - ষষ্ঠ খন্ড[১২৫]
  29. জীবনে যা দেখলাম - সপ্তম খন্ড[১২৬]
  30. জীবনে যা দেখলাম - অষ্টম খন্ড[১২৭]
  31. জীবনে যা দেখলাম - নবম খন্ড[১২৮]
  32. ইসলাম ও গণতন্ত্র[১২৯]
  33. ইসলাম ও বিজ্ঞান[১৩০]
  34. ইকামাতে দ্বীন[১৩১]
  35. আমার বাংলাদেশ[১৩২]
  36. সহজ বাংলায় আল কুরআনের অনুবাদ - ১ম খন্ড[১৩৩]
  37. সহজ বাংলায় আল কুরআনের অনুবাদ - ২য় খন্ড[১৩৪]
  38. সহজ বাংলায় আল কুরআনের অনুবাদ - ৩য় খন্ড[১৩৫]
  39. মনটাকে কাজ দিন[১৩৬]
  40. কিশোর মনে ভাবনা জাগে[১৩৭]
  41. কিশোর মনে ভাবনা জাগে[১৩৭]
  42. বাইয়াতের হাকিকাত[১৩৮]
  43. জামায়াতে ইসলামীর কর্মনীতি[১৩৯]
  44. জীবন্ত নামায[১৪০]
  45. পলাশী থেকে বাংলাদেশ[১৪১]
  46. ইসলামী ঐক্য ইসলামী আন্দোলন[১৪২]
  47. ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ[১৪৩]
  48. কুরআন বুঝা সহজ[১৪৪]
  49. মযবুত ঈমান[১৪৫]
  50. পরিপূর্ণ জীবনবিধান হিসেবে ইসলামের সহজ পরিচয়[১৪৬]
  51. আল্লাহর দুয়ারে ধরণা[১৪৭]
  52. আদম সৃষ্টির হাকিকত[১৪৮]
  53. একজন মানুষঃ যিনি দুনিয়া ও আখিরাতের অত্যাবশ্যক[১৪৯]
  54. দীন ইসলামের শিক্ষাদানে বুনিয়াদী গলদ[১৫০]
  55. দ্বীন ইসলামের ১৫ টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক ধারণা[১৫১]
  56. বিয়ে তালাক ফারায়েয[১৫২]
  57. বাংলাদেশী বনাম বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ[১৫৩]
  58. আসুন আল্লাহর সৈনিক হই[১৫৪]
  59. আধুনিক পরিবেশে ইসলাম[১৫৫]
  60. মযবুত ঈমান সহীহ ইলম নেক আমল[১৫৬]
  61. মানবজাতির স্রষ্টা যিনি - বিধানদাতাও একমাত্র তিনি[১৫৭]
  62. খাঁটি মুমিনের সহীহ জযবা[১৫৮]
  63. জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য[১৫৯]
  64. ইসলামী সভ্যতা বনাম পাশ্চাত্য সভ্যতা[১৬০]
  65. ইসলামী ঐক্যমঞ্চ চাই[১৬১]
  66. ইসলামী আন্দোলনঃ সাফল্য ও বিভ্রান্তি[১৬২]
  67. প্রশ্নোত্তর[১৬৩]
  68. ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রাথমিক পুঁজি[১৬৪]
  69. নবী জীবনের আদর্শ[১৬৫]
  70. নাফস রুহ কালব[১৬৬]
  71. মুমিনের জেলখানা[১৬৭]
  72. মুহতারাম আলেমসমাজ ও দীনদারদের খিদমতে জরুরি প্রশ্ন[১৬৮]
  73. মসজিদের ইমামদের মর্যাদা ও দায়িত্ব[১৬৯]
  74. যুক্তির কষ্টিপাথরে জন্মনিয়ন্ত্রণ[১৭০]
  75. রুকনিয়াতের আসল চেতনা[১৭১]
  76. রাসূলগণকে আল্লাহ তাআলা কী দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন?[১৭২]
  77. ইসলামী পুনরুজ্জীবনে মাওলানা মওদূদীর অবদান[১৭৩]
  78. মুসলিম নেতাদের এ দশা কেন? প্রতিকারই বা কি?[১৭৪]
  79. মাওলানা মওদূদীকে (র) যেমন দেখেছি[১৭৫]
  80. কুরআনে ঘোষিত মুসলিম শাসকদের ৪ দফা কর্মসূচী[১৭৬]
  81. কর্মীদের ৭দফা[১৭৭]
  82. রাজনৈতিক সংকটের মূলে আওয়ামী লীগের আদর্শিক অধঃপতন অগণতান্ত্রিক আচারণ ও পরাশক্তির দালালী[১৭৮]
  83. আদর্শ রুকন[১৭৯]
  84. শেখ হাসিনার হিংস্র রাজনীতি[১৮০]
  85. তাকদীর তাওয়াক্কুল সবর শোকর[১৮১]
  86. বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী[১৮২]
  87. আল্লাহর খিলাফত প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি[১৮৩]
  88. আযানের মাধ্যেমে কাদেরকে নামাযে ডাকা হয়[১৮৪]
  89. সীরাতুন্নবী সা. সংকলন[১৮৫]
  90. আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন[১৮৬]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads