হিমালয় পর্বতমালা

দক্ষিণ এশিয়ার উত্তরে অবস্থিত পর্বতশ্রেণি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

হিমালয় পর্বতমালাmap

হিমালয় পর্বতমালা (বাংলা উচ্চারণ: [হিমালয়] (শুনুন) এশিয়ার একটি পর্বতশ্রেণী, যা দক্ষিণ এশিয়ার সমভূমিকে তিব্বতীয় মালভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করে। এই পর্বতমালায় পৃথিবীর কিছু সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ অবস্থিত, যার মধ্যে সর্বোচ্চটি হলো মাউন্ট এভারেস্ট। হিমালয়ে ৭,২০০ মিটারের (২৩,৬০০ ফুট) বেশি উচ্চতার ১০০টিরও বেশি পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে।

দ্রুত তথ্য হিমালয় পর্বতমালা, সর্বোচ্চ বিন্দু ...
হিমালয় পর্বতমালা
Thumb
হিমালয় পর্বতমালা, যার সাথে হিন্দুকুশ এবং কারাকোরাম পর্বতমালা অন্তর্ভুক্ত, একটি বিশাল অর্ধবৃত্তাকার আকৃতি যা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত। এই পর্বতমালাটি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গগুলোর অবস্থানস্থল, যার মধ্যে রয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।
সর্বোচ্চ বিন্দু
শিখরমাউন্ট এভারেস্ট,    নেপাল এবং  চীন
উচ্চতা৮,৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট)
তালিকাভুক্তি
  • Alpide belt
  • Larger Himalaya উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
স্থানাঙ্ক২৭°৫৯′ উত্তর ৮৬°৫৫′ পূর্ব
মাপ
দৈর্ঘ্য২,৪০০ কিলোমিটার (১,৫০০ মাইল)
প্রস্থ২৫০ কিমি (১৬০ মা) উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
আয়তন৬,০০,০০০ কিমি (২,৩০,০০০ মা) উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
নামকরণ
স্থানীয় নামHimālaya (সংস্কৃত)
ভূগোল
Thumb
তিব্বতীয় মালভূমির উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম থেকে দেখা মেঘমুক্ত আকাশে মাউন্ট এভারেস্ট এবং এর পার্শ্ববর্তী শৃঙ্গগুলো। চারটি আট হাজারের মিটারের অধিক উচ্চতার পাহাড়- মাকালু (৮,৪৬২ মিটার), এভারেস্ট (৮,৮৪৮ মিটার), চো ওইয়ু (৮,২০১ মিটার), এবং লোৎসে (৮,৫১৬ মিটার)।
Countries[lower-alpha 1]
মহাদেশএশিয়া
ভূতত্ত্ব
পর্বতবিদ্যাআল্পাইন গঠন
শিলার বয়সক্রিটেসিয়াস-থেকে-সিনোজোয়িক
শিলার ধরন
বন্ধ

হিমালয় পাঁচটি দেশের সীমানা ঘিরে রয়েছে: নেপাল, চীন, পাকিস্তান, ভুটান এবং ভারত। কাশ্মীর অঞ্চলে এই পর্বতমালার সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।[3] হিমালয় পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে কারাকোরাম এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালা, উত্তরে তিব্বতীয় মালভূমি এবং দক্ষিণে সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি রয়েছে। বিশ্বের কিছু প্রধান নদী যেমন সিন্ধু, গঙ্গা এবং ত্সাংপো-ব্রহ্মপুত্র হিমালয়ের আশেপাশে উৎপন্ন হয়েছে। এগুলোর সম্মিলিত নদী অববাহিকায় প্রায় ৬০ কোটি মানুষ বাস করে। এর মধ্যে ৫ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ হিমালয়ে বাস করে।[4] হিমালয় দক্ষিণ এশিয়া এবং তিব্বতের সংস্কৃতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। হিমালয়ের অনেক পর্বতশৃঙ্গ হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে কয়েকটির শৃঙ্গে—কঞ্চনজঙ্ঘা (ভারতীয় দিক থেকে), গাংখার পেনসুম, মচ্ছাপুচ্ছরে, নন্দা দেবী এবং তিব্বতীয় ট্রান্সহিমালয়ের কৈলাস পর্বতেপর্বতারোহণ নিষিদ্ধ।

ভারতীয় টেকটনিক প্লেটের ইউরেশীয় প্লেটের নিচে অধোগমন দ্বারা উত্থিত হওয়ায়, হিমালয় পর্বতমালা ২,৪০০ কিলোমিটার (১,৫০০ মাইল) দীর্ঘ একটি দুর্গম পথ ধরে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম থেকে পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তৃত হয়েছে।[5] এর পশ্চিম প্রান্ত, নঙ্গা পর্বত, সিন্ধু নদীর উত্তরতম বাকের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত। এর পূর্ব প্রান্ত, নামচা বারওয়া, ইয়ারলুং সাংপো নদীর বৃহৎ বাকের ঠিক পশ্চিমে অবস্থিত। পর্বতমালাটির প্রস্থ পশ্চিমে ৩৫০ কিলোমিটার (২২০ মাইল) থেকে পূর্বে ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়।[6]

নাম

হিমালয় পর্বতমালার নামটি সংস্কৃত শব্দ হিমালয় (हिमालय) থেকে এসেছে, যার অর্থ "শীতের নিবাস"।[7] এটি হিম (हिम, "শীত, তুষার"[8]) এবং আ-লায় (आलय, "গৃহ, বাসস্থান, বাস"[9]) শব্দদুটির সমন্বয়ে গঠিত।[10] [11] ইংরেজিতে এটি সাধারণত 'Himalayas' নামে পরিচিত।

হিমালয় নেপালি এবং হিন্দিতে হিমালয় (हिमालय), কুমায়ুনীতে হিমালয় (हिमाल), তিব্বতীতে হিমালয় (ཧི་མ་ལ་ཡ་) বা 'গঙ্গার দেশ' (གངས་ཅན་ལྗོངས་), সিংহলিতে হিমালয় (লেখ্যরূপ හිමාලය), উর্দুতে হিমালয় পর্বতমালা (سلسلہ کوہ ہمالیہ), বাংলায় হিমালয় পর্বতমালা এবং চীনা ভাষায় 喜马拉雅山脈 (Xǐmǎlāyǎ Shānmài) নামে পরিচিত।

হিন্দু ধর্মে, হিমালয় পর্বতমালাকে দেবতা হিমবৎ (Sanskrit: हिमवत्) বা হিমবান্ (Sanskrit: हिमवान्) হিসেবে পূজা করা হয়।[12] হিমবৎ বা হিমবান্ শব্দটির অর্থ "শীতের রাজা" বা "পর্বতের স্বামী"।

পশ্চিমা সাহিত্যে, কিছু লেখক হিমালয়কে Himalaya নামে উল্লেখ করেছেন। এটি পূর্বে Himmaleh নামেও লেখা হত, যেমন এমিলি ডিকিনসন এর কবিতা[13] এবং হেনরি ডেভিড থরো এর প্রবন্ধে[14] পাওয়া যায়।

ভূগোল এবং মূল বৈশিষ্ট্য

হিমালয় পর্বতমালায় রয়েছে একটি সমান্তর পর্বতশ্রেণী: দক্ষিণে শিবালিক পর্বতশ্রেণি; নিম্ন হিমালয় পর্বতশ্রেণী; মহান হিমালয় (যা সর্বোচ্চ এবং কেন্দ্রীয় পর্বতমালা) এবং উত্তরে তিব্বতীয় হিমালয়[15] কারাকোরামকে সাধারণত হিমালয় থেকে আলাদা বলে বিবেচনা করা হয়।

হিমালয় পর্বতের বক্ররেখার মাঝখানে নেপালের ধৌলাগিরি এবং অন্নপূর্ণার ৮,০০০ মিটার (২৬,০০০ ফুট) উচু শৃঙ্গগুলো অবস্থিত, যেগুলো কালীগন্ডকী গিরিখাত দ্বারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। গিরিখাতটি হিমালয়কে পশ্চিম এবং পূর্ব অংশে বিভক্ত করে। উভয়ই পরিবেশগত এবং ভূ-আকৃতিগতভাবে – কালীগন্ডকীর শীর্ষস্থানে অবস্থিত গিরিপথ, কোরা লা, এভারেস্ট এবং কে২ (কারাকোরাম রেঞ্জের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ) এর মধ্যে অবস্থিত সর্বনিম্ন বিন্দু। অন্নপূর্ণার পূর্বদিকে ৮,০০০ মিটার (৫ মাইল) মানসলু এবং সীমান্তের ওপারে তিব্বতে শিশাপাংমার শৃঙ্গগুলো রয়েছে। এগুলোর দক্ষিণে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু এবং হিমালয়ের বৃহত্তম শহর অবস্থিত। কাঠমান্ডু উপত্যকার পূর্বদিকে ভোটে/সান কোসি নদীর উপত্যকা অবস্থিত যা তিব্বতে উৎপন্ন হয় এবং নেপালচীনের মধ্যে প্রধান স্থলপথ হিসেবে কাজ করে। এখানকার স্থলপথটির নাম আরনিকো হাইওয়ে/চীন জাতীয় সড়ক ৩১৮। এরও পূর্বদিকে মহালঙ্গুর হিমালয় অবস্থিত যেখানে বিশ্বের ছয়টি সর্বোচ্চ পর্বতের চারটি অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে: চো ইয়ু, এভারেস্ট, লোৎসে এবং মকালু। এভারেস্টের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ট্রেকিংয়ের জন্য জনপ্রিয় খুম্বু অঞ্চল এখানে পাওয়া যায়। অরুন নদী এই পর্বতগুলোর উত্তর ঢালের পানি থেকে উৎপন্ন হয় দক্ষিণে মকালুর পূর্বদিকের পর্বতমালায় প্রবাহিত হয়।

নেপালের সুদূর পূর্ব প্রান্তে, ভারতের সীমান্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালা বিস্তৃত হয়েছে, যা বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত, ৮,০০০ মিটার উচ্চতার পর্বতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পূর্বেরটি এবং ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্গার পূর্ব দিকটি ভারতের সিকিম রাজ্যে অবস্থিত। পূর্বে স্বাধীন রাজ্য ছিল সিকিম। ভারত থেকে লাসা, তিব্বতে যাওয়ার প্রধান রাস্তাটি সিকিমের মধ্য দিয়ে গিয়ে থিব্বতে নাথুলা গিরিপথ অতিক্রম করে। সিকিমের পূর্ব দিকে অবস্থিত প্রাচীন বৌদ্ধ রাজ্য ভুটান। ভুটানের সর্বোচ্চ পর্বত গাংখার পুন্সুম, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ অজেয় পর্বতগুলোর মধ্যে একটি। এই অঞ্চলের হিমালয় পর্বতমালা ক্রমশ ক্রমশ রুক্ষ হয়ে উঠছে।এখানে ঘন অরণ্যে আচ্ছাদিত খাড়া উপত্যকা রয়েছে। হিমালয় পর্বতমালা সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং তিব্বতের মধ্য দিয়ে অবিরত থাকে, এরপর তিব্বতে অবস্থিত ইয়ারলুং জাংপো নদীর বক্ররেখার অভ্যন্তরে অবস্থিত নামচে বারওয়ার শৃঙ্গে পূর্ব দিকে শেষ হয়। জাংপোর অন্য পাশে, পূর্ব দিকে, কাংরি গারপো পর্বতমালা অবস্থিত। তবে জাংপোর উত্তরে অবস্থিত গ্যালারি পেরি সহ উচ্চ পর্বতমালাকেও কখনও কখনও হিমালয় পর্বতমালার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ধৌলাগিরি থেকে পশ্চিমে নেপালের পশ্চিমাঞ্চল কিছুটা দূরবর্তী এবং এখানে কোনো বড় উচ্চ পর্বত নেই, তবে এখানে রয়েছে রারা হ্রদ, যা নেপালের বৃহত্তম হ্রদ। কর্ণালী নদী তিব্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে এই অঞ্চলের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরও পশ্চিমে, ভারতের সীমানা সংলগ্ন হয়ে শারদা নদী বরাবর চলে গেছে এবং চীনের জন্য এটি বাণিজ্যিক পথ হিসাবে কাজ করে। এখানে তিব্বতীয় মালভূমিতে রয়েছে গুরলা মাণ্ডহাটার উচ্চ শৃঙ্গ। এই হ্রদ মানসরোবরের এপারে কৈলাস পর্বতমালায় অবস্থিত পবিত্র কৈলাস পর্বত, যা হিমালয়ের চারটি প্রধান নদীর উৎসের কাছাকাছি অবস্থিত। এটি হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ, সুফি ও বোনপো ধর্মে শ্রদ্ধেয়। উত্তরাখণ্ডে, হিমালয়কে আঞ্চলিকভাবে কুমায়ুন এবং গড়োয়াল হিমালয় নামে ভাগ করা হয়েছে, যেখানে রয়েছে নন্দা দেবী এবং কামেটের উচ্চ শৃঙ্গ। এই রাজ্যটি চার ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থানেরও আবাস, যার মধ্যে রয়েছে গঙ্গোত্রী, পবিত্র গঙ্গা নদীর উৎস, যমুনোত্রী, যমুনা নদীর উৎস এবং বদ্রীনাথকেদারনাথের মন্দির

সৃষ্টির প্রক্রিয়া' প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে আলফ্রেড ওয়েগন্যারের মহিসঞ্চরণ তত্ত্ব অনুযায়ী একটি মহাদেশ ও মহাসাগর ছিলো।ভূতকীয় পাতের নড়াচড়ায় মহাদেশ ভেঙে যায়। ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান পাত ও ইউরিয়েশিয়ান পাতের সংঘর্ষের ফলে এটির উৎপত্তি। হিমালয় একটি ভঙ্গিল পর্বত।

ধর্মসমূহ

Thumb
তক্তসাং মঠ বা Tiger's Nest, ভূটান
Thumb
কাশ্মীর উপত্যকা এর উত্তর হিমালয়ে অবস্থিত হিন্দুদের নিকট পবিত্র হরমুখ পর্বত

হিমালয়ের সাথে জড়িত বহু সাংস্কৃতিক এবং পৌরাণিক গুরুত্ব রয়েছে। জৈন ধর্মে, হিমালয় পর্বতমালার অষ্টপদ পর্বত একটি পবিত্র স্থান যেখানে প্রথম জৈন তীর্থঙ্কর ঋষভনাথ মোক্ষ লাভ করেছিলেন। বিশ্বাস করা হয় যে ঋষভনাথের নির্বাণ লাভের পর, তার পুত্র ভরত, ২৪টি তীর্থঙ্করের তিনটি স্তূপ এবং চব্বিশটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন এবং সেখানে তাদের মূর্তিগুলি মূল্যবান পাথর দিয়ে খচিত করা হয়েছিল এবং তিনি এর নামকরণ করেছিলেন সিংহনিষ্‌ধ[16] [17] হিন্দুধর্মে, হিমালয়কে হিমবত, সমস্ত পর্বতের রাজা এবং দেবী পার্বতীর পিতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। [18] হিমালয়কে দেবী গঙ্গা (গঙ্গা নদীর মূর্তিমান রূপ) এর পিতা হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। [19] হিন্দুদের সবচেয়ে পবিত্র তীর্থস্থানগুলির মধ্যে দুটি হল পশুপতিনাথ এবং মুক্তিনাথের মন্দির কমপ্লেক্স, শালিগ্রাম নামে পবিত্র কালো পাথরের উপস্থিতির কারণে শালিগ্রাম নামেও বিখ্যাত। [20]

বৌদ্ধধর্মেও হিমালয়ের বহু গুরুত্ব আছে। পারো তক্তসাং হল ভুটানের পবিত্র স্থান যেখানে বৌদ্ধধর্মের সূচনা হয়েছিল। [21] মুক্তিনাথ তিব্বতীয় বৌদ্ধদের তীর্থস্থানও বটে। তারা বিশ্বাস করে যে পপলার উদ্যানের গাছগুলি চৌরাশিজন প্রাচীন ভারতীয় বৌদ্ধ জাদুকর বা মহাসিদ্ধদের হাঁটার যষ্টি থেকে এসেছে। তারা শালগ্রামকে গাও জাগপা নামে বিখ্যাত তিব্বতি সর্প দেবতার প্রতিনিধি বলে মনে করে। [22] হিমালয়ের মানুষের বৈচিত্র্য বিভিন্ন উপায়ে দেখা যায়। তাদের স্থাপনা, ভাষা, উপভাষা, বিশ্বাস এবং আচারের পাশাপাশি তাদের পোশাকের মাধ্যমে এই বৈচিত্র্য দেখা যায়। [22] ঘরের আকার এবং উপকরণ তাদের ব্যবহারিক চাহিদা এবং বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে। হিমালয় জনগণের মধ্যে বৈচিত্র্যের আরেকটি উদাহরণ হল, হাতে বোনা বস্ত্রসমূহ যা তাদের জাতিগত পটভূমিতে অনন্য রঙ এবং নিদর্শন প্রদর্শন করে। কিছু লোক গহনাকে খুব গুরুত্ব দেয়। রাই এবং লিম্বু মহিলারা তাদের গহনার মাধ্যমে তাদের সম্পদ দেখানোর জন্য বড় সোনার কানের দুল এবং নাকের আংটি ধারণ করে। [22] বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, ইসলাম এবং হিন্দুধর্মে হিমালয়ের বেশ কয়েকটি স্থানের ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। ধর্মীয় স্থানের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল পারো তক্তসাং। বলা হয়, এস্থান থেকে পদ্মসম্ভব ভুটানে বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। [23]

হিমালয়, তিব্বত, ভুটানে এবং লাদাখ, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, স্পিতি এবং দার্জিলিং- এর ভারতীয় অঞ্চলে বজ্রযান বৌদ্ধ স্থানগুলির শাখা অবস্থিত। দালাই লামার বাসস্থান সহ তিব্বতে ৬,০০০ টিরও বেশি মঠ ছিল। [24] ভুটান, সিকিম এবং লাদাখেও অসংখ্য মঠ রয়েছে। [25]

সম্পদ

হিমালয় ঔষধি সম্পদের বৈচিত্র্যময় আবাসস্থল। বনের বৃক্ষগুলি হাজার বছর ধরে সাধারণ কাশি থেকে শুরু করে সর্প দংশন চিকিৎসার জন্য পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। [20] গাছের বিভিন্ন অংশ - মূল, ফুল, কান্ড, পাতা এবং বাকল - বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাবিস পিন্ড্রো গাছের বাকলের নির্যাস কাশি এবং ব্রঙ্কাইটিসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। আন্দ্রাচনে কর্ডিফোলিয়ার পাতা এবং কান্ডের কাই ক্ষতের জন্য এবং সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ক্যালিকার্পা আর্বোরিয়ার ছাল ত্বকের রোগে ব্যবহৃত হয়। [20] হিমালয়ের প্রায় এক পঞ্চমাংশ স্থান জুড়ে নগ্নবীজি উদ্ভিদ, সপুষ্পক উদ্ভিদ এবং টেরিডোফাইটের ঔষধি সম্পদ পাওয়া যায় এবং আরও অনেক কিছু আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। [20]

কিছু এশীয় এবং আফ্রিকান দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই প্রেসক্রিপশনের পরিবর্তে ঔষধি গাছের উপর নির্ভরশীল। [18] যেহেতু বহু লোক হিমালয়ে তাদের নিরাময়ের একমাত্র উৎস হিসাবে ঔষধি গাছ ব্যবহার করে, তাই এই বৃক্ষগুলো আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এটি এই অঞ্চলের অভ্যন্তরে এবং বাইরে অর্থনৈতিক তথা আধুনিক শিল্প বিকাশে অবদান রাখে। [18] তবে একমাত্র সমস্যা হল স্থানীয়রা দ্রুত হিমালয়ের জঙ্গলগুলোকে, প্রায়ই অবৈধভাবে, কাঠের জন্য নিধন করছে। [26]

উল্লেখযোগ্য পর্বত শৃঙ্গ

আরও তথ্য শৃঙ্গের নাম, অন্য নাম এবং অর্থ ...
শৃঙ্গের নামঅন্য নাম এবং অর্থউচ্চতা (মি)উচ্চতা (ফু)প্রথম আরোহণটীকা
এভারেস্টসগরমাথা -"আকাশচুম্বী চূড়া",
চোমোলংমা অথবা কোমোলংমা -"মহাবিশ্বের মাতা"
৮,৮৪৮২৯,০২৮১৯৫৩চীন ও নেপাল সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ।
কে-টু (K2)চোগো গাংড়ি৮,৬১১২৮,২৫১১৯৫৪পাকিস্তান ও চীনের জিনজিয়ান সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। আরোহণের জন্য বিপজ্জনক পর্বতের অন্যতম।
কাঞ্চনজঙ্ঘাKangchen Dzö-nga, "তুষারের পাঁচ রত্ন"৮,৫৮৬২৮,১৬৯১৯৫৫বিশ্বের ৩য় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, ভারতের সর্বোচ্চ (সিকিম) এবং নেপালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
লোৎসে" দক্ষিণ শৃঙ্গ "৮,৫১৬২৭,৯৪০১৯৫৬পৃথিবীর ৪র্থ উচ্চতম। নেপাল এবং তিবেতের মধ্যে অবস্থিত, এভারেষ্টের ছায়াতে।
মাকালু" মহান কাল "৮,৪৬২২৭,৭৬৫১৯৫৫নেপালে অবস্থিত বিশ্বের ৫ম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
চো ওইয়ুQowowuyag, " বৈদূর্য দেবতা "৮,২০১২৬,৯০৫১৯৫৪পৃথিবীর ৬ষ্ঠ উচ্চতম। নেপালে অবস্থিত।
ধবলগিরিশ্বেত পর্বত৮,১৬৭২৬,৭৬৪১৯৬০নেপালে অবস্থিত বিশ্বের ৭ম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
মানাসলুকুতাং, " আত্মার পর্বত "৮,১৫৬২৬,৭৫৮১৯৫৬পৃথিবীর ৮ম উচ্চতম। গুরখা হিমাল, নেপালে অবস্থিত।
নাংগা পর্বতনাংগাপর্বত শৃঙ্গ অথবা দিয়ামির, "নগ্ন পর্বত"৮,১২৫২৬,৬৫৮১৯৫৩পাকিস্তানে অবস্থিত বিশ্বের ৯ম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। আরোহণের জন্য বিপজ্জনক পর্বতের অন্যতম।
অন্নপূর্ণা"শস্য দেবী"৮,০৯১২৬,৫৪৫১৬৫০নেপালে অবস্থিত বিশ্বের ১০ম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
গাশারব্রুম ১" সুন্দর পর্বত "৮,০৮০২৬,৫০৯১৯৫৮পৃথিবীর ১১তম উচ্চতম পর্বত। পাকিস্তানের কারাকোরামে অবস্থিত।
ব্রড পিকফাইচান কাংরি৮,০৪৭২৬,৪০১১৯৫৭পৃথিবীর ১২তম উচ্চতম পর্বত। পাকিস্তানের কারাকোরামে অবস্থিত।
গাশারব্রুম ২৮,০৩৫২৬,৩৬২১৯৫৬পৃথিবীর ১৩তম উচ্চতম পর্বত। পাকিস্তানের কারাকোরামে অবস্থিত।
শিশাপাংমাXixiabangma, "গ্রাসসি প্লাইন্সের ওপর শিখর "৮,০১৩২৬,০৮৯১৯৬৪পৃথিবী ১৪তম উচ্চতম পর্বত। তিব্বতে অবস্থিত, এইটি তিব্বতের মধ্যে উচ্চতম চূড়া wholly।
নন্দা দেবী"আশীর্বাদ-দাত্রী দেবী"৭,৮১৭২৫,৬৪৫১৯৩৬ভারতের উত্তরখন্ডে অবস্থিত।
বন্ধ

চিত্রশালা

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.