Loading AI tools
আসাম রাজ্যের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কাছাড় জেলা, (অসমীয়া: কাছাৰ), ভারতের উত্তরপূর্বে অবস্থিত আসাম রাজ্যের একটি জেলা। এই জেলাটির সদর শিলচর শহরে রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে জেলাটি দক্ষিণ ডিমাসার হিড়িম্ব রাজ্যের অংশ ছিল। কাছাড় জেলার আয়তন ৩৭৮৬ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২০১১ এর জনগণনা অনুযায়ী ১,৭৩৬,৩৯১। বাংলা ভাষা এই জেলায় সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃত।
কাছাড় | |
---|---|
জেলা | |
আসামের মানচিত্রে কাছাড় জেলার অবস্থান | |
রাষ্ট্র | ভারত |
রাজ্য | অসম |
বিভাগ | বরাক উপত্যকা |
জেলাসদর | শিলচর |
আয়তন | |
• মোট | ৩,৭৮৬ বর্গকিমি (১,৪৬২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১৭,৩৬,৩৯১ |
• জনঘনত্ব | ৪৬০/বর্গকিমি (১,২০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারী | বাংলা, ইংরাজী |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-AS-CA (আইএন-এএস-সিএ) |
ওয়েবসাইট | http://cachar.gov.in/ |
কাছাড়ের সদর শহর শিলচর আসামের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। এই জেলার একমাত্র বিমানবন্দর শিলচরে অবস্থিত। শিলচরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ভারতের অন্যতম সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। বরাক নদী এই অঞ্চলের প্রধান নদী। কাছাড় সহ করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা নিয়ে গঠিক দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকা বিভাগ। দেশভাগের পূর্বে এটি বৃহত্তর সিলেটের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কাছাড় নামটি একটি ডিমাসা শব্দ "কাছাড়ি" থেকে এসেছে। কাছাড়ের মুল ইতিহাস কাছাড়ি রাজ্য স্থাপনের সময় থেকে শুরু হয়। জেলাটিতে একটি নগর এবং দুটি ছোট শহর রয়েছ, এগুলি হলো যথাক্রমে- শিলচর, লক্ষীপুর এবং সোনাই।
কাছাড়ি রাজারা নিজেদের 'হেড়ম্বের প্রভু' বলে মনে করতো। এই কারণেই অনুমান করা হয় যে, কাছাড়ি রাজ্যের পুরানো নাম হেড়ম্ব ছিল এবং ডিমাপুরের নামও এই হেড়ম্বপুর নামের অপভ্রংশ। হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতে উল্লেখযোগ্যভাবে হেড়ম্ব বা হিড়িম্ব রক্ষকুলের ও তার রাজত্বের বর্ণনা দেওয়া রয়েছে এবং তার ভগিনী হিড়িম্বার সাথে দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমের বিবাহ ও তাদের পুত্র ঘটোৎকচের কাহিনী বর্ণিত আছে। কাছাড় এবং ডিমা হাসাওয়ের কাছাড়িরা নিজেদের বোড়ো যাযাবর জাতির একটি অংশ বলে মনে করেন। ইয়াং সিকিয়াং নদীর উচ্চ অংশে জনপ্রিয় ও ক্ষমতাদখলের প্রতিযোগীতার ফলে তারা আসামে নেমে আসে এবং ত্রিপুরা রাজ্যের সন্নিকটে নিজেদের রাজ্য স্থাপন করে।
খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আসামে আগত শান-থাই পরিবারের অহোম জনগোষ্ঠীর লোকের আগমনের সাথে কাছাড়ের ইতিহাস জড়িত। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষদিক থেকে বহু বছর দিখৌ নদী অহম ও কাছাড়ি সাম্রাজ্যের সীমানা নির্ধারণ করতো। এই নদীর তীরেই অহোম এবং কাছাড়ি রাজারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কাছাড়িরা অহমদের ওপর জয় লাভ করে ১২০ জনকে হত্যা করে ও বিজয়স্মরিক হিসাবে একটি মেয়ে, দুটি হাতি ও বারোজন ক্রীতদাস লাভ করে। ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে কাছাড়িরা আবার অহম অঞ্চলে আক্রমণ করে উদ্যত হয় এবং পরাজিত হয়, ফলে কাছাড়ি রাজা রাজকন্যার সাথে অহম রাজার বিবাহ নিশ্চিত করেন। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে কাছাড়ের রাজা অহমের রাজাকে নিজের বোনকে দেন এবং পণ হিসাবে একটি হাতি, ৫০০ তলোয়ার, ১০০ কুলি ও নগদ হাজার মুদ্রা দেন।
১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে কাছাড়িরা ধানসিঁড়ি উপত্যকা ও নগাঁওয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে আবার অহমরা কাছাড়িদের যুদ্ধে পরাস্ত করে রাজধানী ডিমাপুরের দখল নেয়। কাছাড়ি রাজধানী ডিমাপুর থেকে জঙ্গলাচ্ছাদিত মাহুর নদীর তীরে মাইবং-এ স্থানান্তরিত করেন।
১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে রাজা রুদ্র সিং পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান চালান। কাছাড়িদের পক্ষে ৩৭৫০০ জনের সৈন্যদলকে আটকানো সহজ ছিল না, ফলে কাছাড়ি রাজা তাম্রধ্বজ পরাস্ত হন।[১] এরপর তিনি আরো দক্ষিণে খাসপুরে পলায়ন করেন। অনুমান করা হয় এই সময় থেকেই কাছাড়ি রাজ্যের রাজারা পাহাড় ছেড়ে কাছাড়ের সমতলে বসতিস্থাপন করে ও খাসপুরকে রাজ্যের রাজধানী বানায়। কাছাড়ি রাজা শূরদর্প নারায়ণ প্রজাদের মধ্যে খুব পরিচিতি পান। তিনি খাসপুরের মহলকে দুর্গবেষ্টিত করে তোলেন এবং বহুস্থানে ইটের তেরী মন্দির নির্মাণ করেন।
মণিপুরের রাজা জয় সিংহ ব্রহ্মদেশের আক্রমণে ভীত হয়ে বর্তমান শিলচর নগরের নিকট যাত্রাপুরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সৈন্য মণিপুরের রাজার অনুরোধে রাজ্য পুণর্দখল করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রবেশ করে শিলচর শহরে পৌছালে কাছাড়ে প্রথম ব্রিটিশের আগমন ঘটে। ব্রিটিশ সৈন্যদল সেখানে একবছর যাবৎকাল স্থায়ী হয় কিন্তু প্রতিকুল পরিবেশে বহু সেনার মৃৃত্যু ও রোগগ্রস্থ হলে সেনাপ্রধান ভেরেলেস্ট ব্রহ্মদেশের দিকে অগ্রসর হননি।
রাজা কৃৃষ্ণচন্দ্র ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুধর্মে দীক্ষিত হন। তার কিছুবছর পরে বর্মী সৈন্যদের সহযোগীতায় মণিপুরের রাজা মার্জিত সিংহ কাছাড়ের শেষ রাজা গোবিন্দচন্দ্রকে বিতাড়িত করেন। এরপর বর্মীদেরদ্বারা চালিত হয়ে মার্জিত সিং কাছাড় থেকে সুরমা উপত্যকার দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু সুরমা উপত্যকাতে কর্তব্যরত দায়িত্বে আসীন ব্রিটিশ সেনা বর্মীসেনাদের বিতাড়িত করেন এবং গোবিন্দ চন্দ্রকে তার রাজত্ব হস্তান্তর করেন। এর প্রতিদান হিসাবে তিনি বার্ষিক ১০,০০০ টাকা কর দিতে রাজি হন। রাজা তার বাসভূমি হরিটিকরে স্থানান্তরিত করেন কিন্তু ১৮৩০ এ মণিপুরী আততায়ীদের হাতে হত হন। ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দের একটি চুক্তির মাধ্যমে এই অঞ্চল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা ভাবা হয় ও প্রয়াত রাজার কোনো উত্তরাধিকার না থাকার অযুহাতে ১৮৩২ এর ১৪ই আগস্ট তারিখে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে যুক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়। এই প্রসঙ্গে ব্রিটিশ সরকার টমাস ফিশারকে ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসাবে কাছাড়ে পাঠান। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে কাছাড়ের পূর্বদিকের বিস্তৃত জিরিবাম অঞ্চল মণিপুরকে দিয়ে দেওয়া হয়। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে তুলারামের রাজ্য বর্তমান ডিমা হাসাও অঞ্চলও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং হাফলং মহকুমা হিসাবে কাছাড় জেলার অঙ্গীভূত হয়। ইতিহাস বিদদের মতে ১৮৩৬ থেকে ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনাধীন জেলা রূপে ঢাকা কমিশনের অধীন থাকে এই অঞ্চলটি।[২]
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকালে এই জেলার জনসাধারণের সক্রিয় কার্যকলাপ ও বিপুল সমর্থন জেলাটির ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করেছে। নেতাদের মধ্যে কামিনী কুমার চন্দ, তার পুত্র অরুণ কুমার চন্দ এবং আব্দুল মতলিব মজুমদার প্রমুখের নাম অগ্রগণ্য। যখন অরুণ কুমার চন্দ বাঙালি হিন্দুদের মতৈক্য গঠন করছিলেন তখন আব্দুল মতলিব বাঙালি ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাজন আটকাতে মুসলমানদের নেতৃত্ব দেন। মজুমদার এবং প্রাক্তন ভারতের পঞ্চম রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদর যুগ্ম প্রচেষ্টায় পূর্ব ভারতে মুসলিমদের জন্য আলাদা পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবীর বিরোধী একটি শক্তিশালী মুসলিম সংগঠন গড়ে ওঠে। উঠতি মুসলিম লীগকে জনপ্রিয়তাকে আটকাতে তাঁরা আসামে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ আন্দোলন করেন। জমিয়ত ছিল একটি মুসলিম জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিদের সংগঠন যা কংগ্রেসের সাথে জোটবদ্ধ ছিল। ভারতে স্বাধীনতার ঠিক পূর্বেই ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ১৯৪৫ এর সাধারণ নির্বাচনে তিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হাইলাকান্দি কেন্দ্রের ভবিষ্যত মুসলিম লীগমুক্ত করেন। তাঁর এই বিজয় মুসলিম লীগের কাছাড় সহ সমগ্র দক্ষিণ আসামকে পাকিস্তানে যুক্ত করার স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আসামের সুরমা উপত্যকা অঞ্চল (বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত) ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভারত বিভাজনকালে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের উত্তেজিতা উভয়কেই প্রান্তীয় করে তুলেছিল। সিলেটে গণভোটের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চল পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মজুমদার ও আসামের গৃহমন্ত্রী বসন্তকুমার দাস মিলিত প্রচেষ্টার বরাক উপত্যকার জায়গায় জায়গায় আলাপ ও পদযাত্রা করে জনসাধারণকে ধর্মের ভিত্তিকে বিভাজনের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২০শে ফেব্রুয়ারি মজুমদার শিলচরে আসাম নেশনালিস্ট মুসলিম কনভেনশনের ডাক দেন। এরপরে ১৯৪৭ এর ৮ই জুন শিলচরে একটি বড়ো আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।[৩] ২০শে ফেব্রুয়ারি ও ৮ই জুনে ডাকা আলোচনাসভা দুটিই সফল হয়। বাকী বেশকিছু নেতাদের মতো তিনিও বরাক উপত্যকা এবং বিশেষভাবে করিমগঞ্জ জেলাকে আসামের অন্তর্ভুক্ত রাখতে সহায়ক ছিলেন।[৪][৫] তিনি রেডক্লিফ কমিশনের মাধ্যমে সিলেটের করিমগঞ্জকে ভারতের আসামে অন্তর্ভুক্ত রাখতে চেয়েছিলেন।[৬] অরুণ কুমার চন্দ , গোপীনাথ বরদলৈ ১৯৪৬ এ ডাকা ক্যাবিনেট মিশনে যোগ দিতে অস্বীকার করলেও আইনকর্তা হিসাবে সামাজিক কাজ করতে তাদের উদ্দীপিত করেন ও শিলচরে গুরুচরণ কলেজকে উন্নত করতে তৎপর হন। তার অকালপ্রয়াণ ঘটলে বাঙালি হিন্দু সমাজ একজন ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদী নেতাকে হারায়।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার মুহূর্তে সারা পূর্বভারত জুড়ে চরম বিশৃৃঙ্খলা দেখা যায়। হিন্দুদের প্রবণতা ছিল নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতের দিকে পালিয়ে আসা আবার ভারতের মুসলিমদের প্রবণতা ছিল আসাম থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার। চরম বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গায় ব্যপক সংখ্যক প্রাণহানি হয়, যা ১৯৫০ আবারো হয়। একমাত্র মজুমদারই কাছাড়ের ক্যাবিনেট মিশনে সদস্য হিসাবে তার সহযোগী এবং সমমনষ্কদের নিয়ে কাছাড় জেলাতে হিন্দু এবং মুসলমান উভয়কে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি কাছাড়ে আগত শরণার্থীদের শরণার্থী শিবিরে নিরাপত্তা দেওয়া ও তাদের পুণর্বাসনের দায়িত্বও নিয়েছিলেন।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে এবং পরবর্তীকালে কাছাড় জেলাতে ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৬ অবধি আসাম ক্যাবিনেটের সদস্য মইনুল হক চৌধুরী বেশ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অধীনে তিনি শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। স্বর্গীয় অরুণ কুমার চন্দর স্ত্রী জ্যোৎস্না চন্দ ভারতীয় বিধানসভায় শিলচরকে উপস্থাপন করতেন।
১৭ই আগস্ট ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সিলেট জেলার সাড়েতিনটি থানা করিমগঞ্জ মহকুমারূপে ভারতের কাছাড় জেলাতে যুক্ত হয়। ১৯৮৩ তে জুলাই মাস পূর্বতন কাছাড় জেলা থেকে করিমগঞ্জ মহকুমা জেলাতে উন্নীত হয়।[৭] আবার ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে কাছাড় জেলা থেকে নতুন হাইলাকান্দি জেলা ও কাছাড় জেলা তেরী করা হয়।[৭] আবার ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে কাছাড় থেকে পৃৃথক করা জিরিবাম অঞ্চলটি ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে একটি নতুন ক্ষুদ্র জেলার মর্যাদা পায়।
কাছাড় জেলাটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে জেলাটির কেন্দ্র ও পশ্চিমভাগের সমতলভুমি অবধি ভূপ্রকৃৃতির তারতম্য লক্ষনীয়। জল জমে থাকার কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সমগ্র জেলার ২০% জমিতে কৃৃষিকাজ সম্ভব নয়। আবার নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে বৃষ্টির অভাবে চাষজমিতে ক্ষরা দেখা যায়। মাটি ছিদ্রযুক্ত ফলে আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা কম ফলে ভূমিক্ষয়প্রবণ। জেলাটির জলস্তর কম। কাছাড়ের প্রধান নদী বরাক নদী যা বরবক্র নামে ও পরিচিত ছিল। নদীটির একাধিক ছোটো উপনদী রয়েছে যা উত্তর ও দক্ষিণের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এসে মিলিত হয়েছে। বরাক নদী জেলাটির অভ্যন্তরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত এবং সাম মণিপুর সীমানা নির্ধারণ করেছে। বার্ষিক গড় বৃৃষ্টিপাত ৩০০০ মিলিমিটারের বেশি।
কাছাড় জেলার ২২৩৬ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল বনভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত, যা জেলাটির আয়তনের ৫৯%।[৮] বরাইল বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য এই জেলার অন্যতম আকর্ষণ।
কাছাড় জেলা একটি কৃৃষিপ্রধান জেলা এবং মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০% লোক কৃৃষিজীবি। ধান এই জেলার প্রধান উৎপাদিত ফসল, তাছাড়াও সরষে, দানাশষ্য, পাট ও ব্যপকহারে উৎপাদিত হয়। জেলাটিতে বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে ঋতুভিত্তিক ফসল ফলানো হয়। প্রাথমিকভাবে কৃৃষিকাজ থেকে জেলাটির মোট আয়ের সরাসরি ৪০% আসে আবার কৃৃষিজাত পদার্থ ১৪% আয়ের উৎস।
কাছাড় জেলা হলো আসামে অন্যতম শিল্প-অনুন্নত একটি জেলা।[৯]
ধর্ম অনুযায়ী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা:[১৩]
আসাম রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এই জেলাটি একটি বাঙালি প্রধান জেলা। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ লোকই স্থানীয় সিলেটী ভাষায় কথা বলেন। বাঙালি ছাড়াও চাকরিসুত্রে আসা হিন্দিভাষী এবং মণিপুরীরা অনেক সংখ্যায় বাস করেন। জেলাটির ভাষাভিত্তিক পাইচিত্র নিম্নরূপ:
মোট জনসংখ্যা ১৪৪৪৯২১(২০০১ জনগণনা) ও ১৭৩৬৩৯১(২০১১ জনগণনা)। রাজ্যে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্রমাঙ্ক ৩৩ টি জেলার মধ্যে ২য়। আসাম রাজ্যের ৫.৫৭% লোক কাছাড় জেলাতে বাস করেন। জেলার জনঘনত্ব ২০০১ সালে ৩৮২ ছিল এবং ২০১১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫৯ হয়েছে। জেলাটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০০১-২০১১ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃৃদ্ধির হার ২০.১৯% , যা ১৯৯১-২০১১ সালের ১৮.৮৯% বৃদ্ধির হারের থেকে বেশি। জেলাটিতে লিঙ্গানুপাত ২০১১ অনুযায়ী ৯৫৯(সমগ্র) এবং শিশু(০-৬ বৎ) লিঙ্গানুপাত ৯৫৪।[১৫] জেলাটিতে ৬ বছর অনুর্দ্ধ শিশু সংখ্যা ২৫৬৭৭৪ জন, যা সমগ্র জনসংখ্যার ১৪.৭৯%।
কাছাড় জেলার নদনদীগুলি নিম্নরূপ:
কাছাড় জেলাতে অবস্থিত রাজ্য সড়ক ও জাতীয় সড়কগুলি হলো যথাক্রমে:
কাছাড় জেলা রেলপথে আসাম রাজ্যে রাজধানী গুয়াহাটি ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যুক্ত। জেলার রেলপথটি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলপথের লামডিং রেলবিভাগের অন্তর্গত। জেলাটির ওপর দিয়ে আরোনাই সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস (২য় দীর্ঘতম), তিরুবনন্তপুরম-শিলচর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস (৩য় দীর্ঘতম), হামসফর এক্সপ্রেস (৯ম দীর্ঘতম), শিয়ালদহ-শিলচর কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, নতুন দিল্লি-শিলচর সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস প্রভৃৃতি ট্রেন দীর্ঘায়িত। জেলাটির স্টেশনগুলি হলো:
শিলচর বিমানবন্দরটি শিলচর শহরের নিকটে অবস্থিত, যা মূল শহর থেকে প্রায় ২২কিলোমিটার দূরে কুম্ভীরগ্রামে অবস্থিত। এই বিমানবন্দর ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ সরকার চালু করে। এটি কিড়িগ্রাম এয়ার বেস হিসাবেও পরিচিত। এই বিমানবন্দর থেকে অসামরিক বিমান পরিবহন চালু রয়েছে। একই সঙ্গে এটি ভারতীয় বায়ু সেনার একটি বিমান ঘাটি।[১৬] এই বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টি বিমান ওঠা-নামা করে এবং সপ্তাহে মোট প্রায় ৩০ টি বিমান চলাচল করে। এই বিমানবন্দরটি উত্তর-পূর্ব ভারত-এর চতুর্থ বৃহত্তম ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ২০১৮-২০১৯ সালে এই বিমানবন্দরের যাত্রী পরিবহন সংখ্যা ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬৬৫ এবং বিমান চলাচলের সংখ্যা ৩,৩৮০ টি। শিলচর বিমানবন্দরটি সমুদ্র পৃষ্ঠের থেকে ৩৩৮ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এটি ৩৬.৭০ একর জমির আওতাভুক্ত। বিমানবন্দরটিতে শুধুমাত্র একটি অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল আছে এবং এটি যাত্রীদের জন্য আধুনিক সুবিধাগুলি দিয়ে সজ্জিত।
এই বিমানবন্দর থেকে গৌহাটি, কলকাতা, ইম্ফল, আগরতলা ও যোরহাট বিমানবন্দরে বিমান পরিচালনা করা হয়।
কাছাড় জেলাতে উত্তর পূর্ব ভারতের কিছু বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলাসদর শিলচর শহর আসামে শিক্ষার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। শিলচর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে দরগাকোণাতে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যা একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়।[১৭] শিলচর শহরে একটি রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।[১৮] দক্ষিণ আসামের একমাত্র চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি শিলচর শহরে অবস্থিত।[১৯]
জেলাটিতে একাধিক ডিগ্রী কলেজ রয়েছে।
জেলাটির কিছু বিখ্যাত বিদ্যালয় হলো:
কাছাড় জেলা দুটি মহকুমাতে বিভক্ত , যথা:
পাঁচটি তশিল হলো : ১) কাটিগড়া তহশিল ২) উধারবন্দ তহশিল ৩) শিলচর তহশিল ৪) সোনাই তহশিল ৫) লক্ষীপুর তহশিল
জেলাটিতে ১৫ টি উন্নয়ন ব্লক রয়েছে। সেগুলি হল-
কাছাড় জেলাটির উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে বিস্তীর্ণ অতিবৃষ্টি অরণ্য অঞ্চল রয়েছে, যা ক্রান্তীয় চিরসবুজ বনাঞ্চল জলবায়ুর অন্তর্গত। জেলাটি বাঘ, এশীয় হাতি, উল্লুক, বনগরু প্রভৃতি প্রাণীর বাসস্থান। কাছাড়ের বনাঞ্চল কোনোকালের জীববৈচিত্র দ্বারা পরিপূর্ণ হলেও মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও তার কুফল এই বৈচিত্র হ্রাসের কারণ। প্রাপ্ত দুষ্পাপ্র কিছু প্রজাতি হলো, উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, উল্টোলেজি বানর, খাটোলেজি বানর, কালোমুখ প্যারাপাখি, বাদি হাঁস প্রভৃৃতি। এশীয় হাতি বর্তমানে লুপ্তপ্রায় একটি প্রজাতি।[২০][২১] দক্ষিণভাগের বনভূমি স্থানীয়দের কাছে ধলেশ্বরী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত হলেও তা অনুমোদিত নয়।[২২][২৩] কাছড় তথা সমগ্র বরাক উপত্যকা অঞ্চলের একমাত্র অভয়ারণ্য বরাইল বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যটি এই জেলাতেই অবস্থিত। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত পরিবেশবিদ ডাঃ আনোয়ার উদ্দিন চৌধুরী এই প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন।[২৪] অভয়ারণ্যটি ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞাপিত হয় ও ভারতীয় অভয়ারণ্যের তালিকাবদ্ধ হয়।[২৫]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.