ঋগ্বেদ (সংস্কৃত: ऋग्वेदः ṛgvedaḥ, ঋক "স্তব"[১] ও বেদ "জ্ঞান" থেকে) হল প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত স্তোত্রাবলির একটি সংকলন। বেদের চারটি খণ্ডের মাঝে প্রথম অংশটি ঋগ্বেদ।[২][৩] এটি সনাতন ধর্মের আদি উৎস। এটি বিশ্বের প্রথম গ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি[তথ্যসূত্র প্রয়োজন], যা আজ পর্যন্ত কোনো না কোনো ভাবে সমাজে টিকে রয়েছে। এই গ্রন্থই সনাতন ধর্মের মূল পাঠ।
ঋগ্বেদ | |
---|---|
তথ্য | |
ধর্ম | সনাতন ধর্ম |
ভাষা | বৈদিক সংস্কৃত |
যুগ | আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-১২০০ অব্দ[note ১] |
অধ্যায় | ১০টি মণ্ডল |
ঋগ্বেদ গ্রন্থের চারটি স্তর লক্ষিত হয়। যথা: "সংহিতা", "ব্রাহ্মণ", "আরণ্যক" ও "উপনিষদ্"।[note ২] "ঋগ্বেদ সংহিতা" অংশটি হল এই গ্রন্থের মূল অংশ। এই অংশে দশটি "মণ্ডল"-এ (খণ্ড) ১,০২৮টি "সূক্ত" (স্তোত্র) সংকলিত হয়েছে এবং সব ক’টি সূক্তে মোট মন্ত্রের (ঋগ্বেদে মন্ত্রগুলিকে "ঋক" বলা হয়, যার নামকরণ "ঋগ্বেদ" নামের অনুসারে করা হয়েছে) সংখ্যা ১০,৫৫২। দশটি মণ্ডলের মধ্যে দ্বিতীয় থেকে নবম মণ্ডল পর্যন্ত অংশটিই প্রাচীনতম। এই অংশে সংকলিত সূক্তগুলিতে বিশ্বতত্ত্ব ও দেবতাদের স্তবস্তোত্রাদি আলোচিত হয়েছে।[৪][৫] অপেক্ষাকৃত নবীনতর মণ্ডল দু’টির (প্রথম ও দশম মণ্ডল) সূক্তসমূহে আলোচ্য বিষয় হল দর্শন ও অনুমানমূলক প্রশ্নাবলি,[৫] সমাজে দানের মতো সদ্গুণাবলি,[৬] মহাবিশ্বের উৎপত্তি-সংক্রান্ত প্রশ্নাবলি এবং ঈশ্বরের প্রকৃতি,[৭][৮] এবং অন্যান্য অধিবিদ্যামূলক বিষয়াবলি।[৯] ঋগ্বেদে, ত্র্যম্বক-মন্ত্র বা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র (৭.৫৯.১২ ) মৃত্যু প্রতিরোধ করার জন্য বর্ণিত হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত গায়ত্রী মন্ত্রও (ঋ০ ৩.৬২.১০ ) এর মধ্যেও উল্লেখ আছে। ঋগ্বেদে, অনেক ধরনের লোক-উপযোগী-সূক্ত, দর্শন-সূক্ত, সংস্কার-সূক্ত রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, রোগ-প্রতিরোধ-সূক্ত (ঋ০ ১০.১৩৭.১-৭), শ্রী সূক্ত বা লক্ষ্মী সূক্ত (ঋগ্বেদের পরিশিষ্ট সূক্তের খিলসুক্তে), দর্শনের নাসাদিয়-সুক্ত (ঋ০ ১০.১২৯.১-৭) এবং হিরণ্যগর্ভ সূক্ত ( ঋ০ ১.১২১.১-১০) এবং বিবাহ ইত্যাদি সূক্তগুলি (আর. ১০.৮৫.১-৪৭) বর্ণিত হয়েছে, যেগুলিতে জ্ঞান বিজ্ঞানের চূড়ান্ত পরিণতি দৃশ্যমান।
ঋগ্বেদ হল বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় লিখিত প্রাচীনতম গ্রন্থ।[১০] এটির আদি স্তরগুলি হল যে কোনও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় লিখিত প্রাচীনতম অদ্যাবধি অস্তিত্বমান গ্রন্থের অন্যতম।[১১][note ৩] খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকে ঋগ্বেদের ধ্বনি ও পাঠ মৌখিকভাবে পরম্পরাগতভাবে প্রচলিত ছিল।[১৩][১৪][১৫] সাংস্কৃতিক ভাষাতত্ত্ব ও ভাষাবিজ্ঞান-সংক্রান্ত ইঙ্গিত করে যে ঋগ্বেদ সংহিতার বৃহদংশ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে (বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলে) রচিত হয়েছিল।[১৬][১৭][১৮] যদিও কোনও কোনও গবেষক আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ থেকে ১১০০ অব্দের মধ্যবর্তী এক বৃহত্তর সময়কালকে ঋগ্বেদ সংহিতা রচনার তারিখ হিসেবে গ্রহণ করেন।[১৯][২০][note ১]
ঋগ্বেদের কয়েকটি ঋক ও সূক্ত হিন্দু সামাজিক অনুষ্ঠান (যেমন বিবাহ) ও প্রার্থনার সময় পঠিত হয়। এই কারণে ঋগ্বেদ সম্ভবত পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ যা এখনও ব্যবহৃত হয়ে চলেছে।[২১][২২]
ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই বইটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরানি আবেস্তার স্তোত্রগুলি ঋগ্বেদের শ্লোকের অনুরূপ রয়েছে, যা অগ্নি, বায়ু, জল, সোম ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ভারতীয় দেবতার বর্ণনা করে।
রচনাকাল ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
রচনাকাল নিরূপণ
ঋগ্বেদের রচনাকাল নিরূপণে পণ্ডিত সমাজে বিতর্ক রয়েছে। জেমিসন ও ব্রেরেটন তাঁদের ঋগ্বেদ অনুবাদে (২০১৪) এই গ্রন্থের রচনাকাল সম্পর্কে বলেছেন, সেটি "তর্ক ও পুনর্বিবেচনার বিষয় এবং ভবিষ্যতেও তা-ই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে"। তারিখ সংক্রান্ত প্রস্তাবনাগুলির সব ক’টিই করা হয়েছে সূক্তগুলির রচনাশৈলী ও সেগুলির বিষয়বস্তুর নিরিখে।[২৩] সাংস্কৃতিক ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে এই গ্রন্থের একটি বৃহৎ অংশের রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের দ্বিতীয়ার্ধ।[note ১] একটি আদি ইন্দো-আর্য ভাষায় রচিত হওয়ায় সূক্তগুলি নিশ্চিতরূপেই মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দ নাগাদ সংঘটিত ইন্দো-ইরানীয় বিচ্ছেদের পরবর্তীকালের রচনা।[২৪] ঋগ্বেদের মূল অংশের রচনার যুক্তিগ্রাহ্য তারিখটি উত্তর সিরিয়া ও ইরাকের মিতান্নি নথির রচনাকালের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ) অনুরূপ। উল্লেখ্য, এই নথিটিতেও বরুণ, মিত্র ও ইন্দ্রের মতো বৈদিক দেবতার উল্লেখ করা হয়েছে।[২৫][২৬] অন্যান্য প্রমাণগুলি ইঙ্গিত করে যে এই গ্রন্থের রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের কাছাকাছি কোনও এক সময়ে।[২৭][২৮]
ঋগ্বেদের মূল অংশের সর্বজনগ্রাহ্য সময়কাল হল পরবর্তী ব্রোঞ্জ যুগ। এই কারণে এই গ্রন্থ অল্প কয়েকটি সুদীর্ঘকাল স্থায়ী নিরবচ্ছিন্ন প্রথার অন্যতম উদাহরণে পরিণত হয়েছে। সাধারণভাবে এই গ্রন্থের রচনাকাল ধরা হয় মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়টিকে।[note ১] মাইকেল উইটজেলের মতে, ঋগ্বেদ প্রাথমিকভাবে সংকলনের আকারে গ্রথিত হয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ নাগাদ ঋগ্বৈদিক যুগের শেষভাগে। এই সময়টি ছিল কুরু রাজ্যের আদি যুগ।[২৯] আস্কো পারপোলার মতে, ঋগ্বেদ প্রণালীবদ্ধ হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দ নাগাদ, যেটি ছিল কুরু রাজ্যের সমসাময়িক কালে।[৩০]
ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
অন্যান্য ইন্দো-আর্য পাঠের চেয়ে ঋগ্বেদের পাঠ অনেক বেশি প্রাচীন। ম্যাক্স মুলার ও রুডলফ রথের সময় হতেই এটি ছিল পশ্চিমা বৃত্তির মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। ঋগ্বেদ হতে প্রারম্ভিক বৈদিক ধর্মের ধারণা পাওয়া যায়। শুরুর দিকের ইরানী আবেস্তার সাথে ভাষাগত ও সংস্কৃতির গভীর মিল রয়েছে, [৩১] [৩২] প্রোটো-ইন্দো-ইরানীয় সময় থেকে উদ্ভূত, [৩৩] প্রায়শই প্রাথমিক অ্যান্দ্রোনোভো সংস্কৃতির সাথে যুক্ত (অথবা বরং, প্রাথমিক আন্দ্রোনোভোর মধ্যে সিন্তাস্তা সংস্কৃতি ) দিগন্ত) এর গ. ২০০০খিস্টপূর্ব।[৩৪]
সাধারণ কিংবা অভিজাত হোক, ঋগ্বেদ বৈদিক যুগের সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেয় না। [৩৫] শুধুমাত্র গো পালন এবং অশ্বারোহনের মতো ইঙ্গিতগুলো হতে প্রাচীন ভারতীয় সমাজ সম্পর্কে খুব সাধারণ একটি ধারণা প্রদান করে।
পাঠ
ঋগ্বেদের যে পাঠটি আজ পাওয়া যায় সেটির মূল ভিত্তি লৌহযুগের (নিচে কালনির্ধারণ দেখুন) একটি সংকলন। এই পাঠটি দশটি মন্ডলে বিভক্ত, যা বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের লেখা হয়। ২ থেকে ৭ মণ্ডল হল ঋগ্বেদের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সূক্ষ্ম মন্ডল। এই মন্ডল মোট পাঠ্যের ৩৮ শতাংশ। এই সংকলনটি থেকে ‘গোত্রীয় গ্রন্থাবলি’ (মন্ত্রদ্রষ্টা, দেবতা ও ছন্দ অনুসারে ২য়-৭ম মণ্ডল[৩৬]) পরবর্তীকালে সম্পাদিত একটি সংস্করণ পাওয়া যায়। এই পরবর্তীকালীন সংকলনটি আবার অন্যান্য বেদসমূহের সঙ্গে মুখে মুখে সম্পাদিত একটি সংকলন। এই সংকলনে পরবর্তীকালে কিছু প্রক্ষিপ্ত বিষয় যুক্ত হয়েছিল, যা মূল ঋগ্বেদের কঠোর বিন্যাস-প্রণালীর সঙ্গে বেমানান। এর সঙ্গে বৈদিক সংস্কৃতের বিশুদ্ধ উচ্চারণ পদ্ধতির মধ্যেও কিছু পরিবর্তন (যেমন সন্ধির নিয়ামন[৩৭]) এসেছিল।
অন্যান্য বেদসমূহের মতো সম্পাদিত পাঠটির একাধিক সংস্করণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে পদপাঠ সংস্করণটি গুরুত্বপূর্ণ। এটি পৌস আকারে রচিত এবং মুখস্থ করার সুবিধার্থে প্রতিটি শব্দ এখানে পৃথক আকারে লিখিত। এছাড়া সংহিতাপাঠও গুরুত্বপূর্ণ। এটি সন্ধির নিয়মানুসারে লিখিত (প্রতিসখ্য বিধানে বর্ণিত নিয়মানুসারে)। এটি হল আবৃত্তি-উপযোগী মুখস্থ রাখার সংস্করণ।
পদপাঠ ও সংহিতাপাঠ বিশ্বাসযোগ্যতা ও অর্থগতদিক থেকে ঋগ্বেদের মূল পাঠের সবচেয়ে নিকটবর্তী।[৩৮] প্রায় এক হাজার বছর ধরে ঋগ্বেদের মূল পাঠ সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে মুখে মুখে সংরক্ষিত হয়েছিল।[২৫] এটি করার জন্য মুখে মুখে প্রচলিত রাখার প্রথাটিকে একটি বিশেষ উচ্চারণভঙ্গি দেওয়া হয়েছিল। এর জন্য সংস্কৃত সমাসবদ্ধ শব্দগুলির ব্যাসবাক্য এবং বৈচিত্র্য দান করা হয়েছিল। কোথাও কোথাও ব্যাকরণগত পরিবর্তনও আনা হয়েছিল। শব্দের এই পরিমার্জনার সঙ্গে সঙ্গেই অঙ্গসংস্থানবিদ্যা ও ধ্বনিবিজ্ঞানের একটি সমৃদ্ধ প্রথা গড়ে উঠেছিল। সম্ভবত গুপ্তযুগের (খ্রিস্টীয় ৪র্থ-৬ষ্ঠ শতাব্দী) আগে ঋগ্বেদ লিখিত হয়নি। গুপ্তযুগে ব্রাহ্মী লিপি সুপ্রচলিত হয়েছিল (ঋগ্বেদের প্রাচীনতম বিদ্যমান পাণ্ডুলিপিগুলি পরবর্তী মধ্যযুগের)।[৩৯] যদিও মুখে মুখে প্রচলিত রাখার প্রথাটি আজও আছে।
ঋগ্বেদের আদি পাঠ (যেটি ঋষিগণ অনুমোদন করেছেন) বিদ্যমান সংহিতাপাঠের পাঠের সঙ্গে কাছাকাছি গেলেও সম্পূর্ণ এক নয়। তবে ছন্দ ও অন্যান্য দিক থেকে এর কিছু অংশ অন্তত একই ধাঁচে লেখা।[৪০]
ঋগ্বেদের বিন্যাস
মণ্ডল
ঋগ্বেদে মোট দশটি মণ্ডল রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মণ্ডল ছোট আবার কিছু বড়। কতগুলো সুক্ত মিলে মণ্ডল গঠিত হয়।
সুক্ত
সমগ্র বেদে ১০২৮ টি সুক্ত রয়েছে।
মন্ত্র বা ঋক
প্রতিটি সুক্তে রয়েছে ঋক বা মন্ত্র । সমগ্র বেদে মোট ১০,৫৮০টি ঋক রয়েছে।
প্রধান বিষয়
ঋগ্বেদ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নে দেওয়া হল-
- ঋগ্বেদ পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ যা বর্তমানে পাওয়া যায়।
- ঋগ্বেদের অনেক স্তোত্রে বিভিন্ন বৈদিক দেবতার প্রশংসাকারী মন্ত্র রয়েছে। যদিও ঋগ্বেদে অন্যান্য ধরনের স্তোত্রও রয়েছে, তবে দেবতাদের প্রশংসাকারী স্তোত্রগুলি প্রাধান্য পেয়েছে।
- ঋগ্বেদে তেত্রিশ প্রকার দেবতার উল্লেখ আছে। এই বেদে সূর্য, ঊষা ও অদিতির মতো দেবতাদের বর্ণনা করা হয়েছে। এতে অগ্নিকে বলা হয়েছে আশির্ষা, অপাদ, ঘৃতমুখ, ঘৃত পুষ্ট, ঘৃত-লোম, অর্চিলোম এবং বভ্রলোম। এতে ইন্দ্রকে সর্বমাত্য এবং সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঋগ্বেদে ইন্দ্রের প্রশংসায় ২৫০টি ঋচা আছে। ঋগ্বেদের একটি মণ্ডলে একটি মাত্র দেবতার প্রশংসায় মন্ত্র আছে, তিনি হলেন সোম দেবতা।
- বহুদেববাদ, একেশ্বরবাদ, অখণ্ডতা এই বেদে উল্লেখ আছে।
- ঋগ্বেদের নাসাদীয় সূক্তে নির্গুণ ব্রহ্ম বর্ণিত হয়েছে।
- এই বেদে আর্যদের বাসস্থানের জন্য 'সপ্ত সিন্ধুবাহ' শব্দটি সর্বত্র ব্যবহৃত হয়েছে।
- এতে কতিপয় অনার্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যেমন- পিসাকাচ, সীমিয়াম্ ইত্যাদি। এতে অনার্যদের বলা হয়েছে 'অব্রত' (ব্রত না পালনকারী), 'মৃদ্ধাবাচ' (অস্পষ্ট বাণীর বক্তা), 'অনাস' (চ্যাপ্টা নাক)।
- এই বেদে প্রায় ২৫টি নদীর কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী সিন্ধুকে আরও বর্ণনা করা হয়েছে। সরস্বতীকে সবচেয়ে পবিত্র নদী হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং সরস্বতীর কথাও বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। এতে গঙ্গা একবার এবং যমুনা তিনবার ব্যবহার করা হয়েছে।
- ঋগ্বেদে রাজার পদ ছিল বংশগত। ঋগ্বেদে সুতা, রথকর ও কর্মার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা রাজ্যাভিষেকের সময় উপস্থিত ছিলেন। রাজাসহ এঁদের সংখ্যা ছিল ১২ জন।
- ঋগ্বেদে 'ভাই' শব্দটি তাঁত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং 'তাতার' তাঁত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
- ঋগ্বেদের নবম মন্ডলে সোম রসের প্রশংসা করা হয়েছে।
- ঋগ্বেদের দশম মন্ডলে পুরুষসূক্ত বর্ণিত হয়েছে।
- " অসতো মা সদ্গময় " বাক্যটি ঋগ্বেদ থেকে নেওয়া হয়েছে। সূর্য ( সাবিত্রীকে সম্বোধন করা " গায়ত্রী মন্ত্র " ) ঋগ্বেদে উল্লেখ আছে।
- এই বেদে গরুর জন্য 'অহন্যা' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
- ঋগ্বেদে এমন মেয়েদের উদাহরণ রয়েছে যারা দীর্ঘকাল বা আজীবন অবিবাহিত ছিল। এই মেয়েদের বলা হত 'অমাজু'।
- এই বেদে হিরণ্যপিন্ডের বর্ণনা আছে। এই বেদে 'তক্ষন' বা 'ত্বরাষ্ট্র' বর্ণিত হয়েছে। ঋগ্বেদেও বহুবার আশ্বিনের উল্লেখ আছে। আশ্বিনকে নাসত্য ( আশ্বিনী কুমার )ও বলা হয়।
- এই বেদের সপ্তম মণ্ডলে সুদাস এবং দশজন রাজার মধ্যে যুদ্ধের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেটি পুরুষ্নি ( রবি ) নদীর তীরে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে সুদাস বিজয়ী হয়।
- ঋগ্বেদে বহু গ্রামের সমষ্টিকে 'বিশ' এবং বহু বিশের দলকে 'জন' বলা হয়েছে। ঋগ্বেদে 'জন' ২৭৫বার এবং 'বিশ' ১৭০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। 'জনপদ' একটি বৃহৎ প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে ঋগ্বেদে একবারই উল্লেখ করা হয়েছে। জনগণের প্রধানকে বলা হত 'রাজন' বা রাজা। আর্যদের পাঁচটি গোত্রের কারণে তাদের ঋগ্বেদে 'পঞ্চজন' বলা হয়েছে - এগুলি হল- পুরু, যদু, অনু, তুর্বাশু এবং দ্রহয়ু।
- 'বিদথ' ছিল প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। ঋগ্বেদে এটি ১২২বার উল্লেখ করা হয়েছে। 'সমিতি' ৯বার এবং 'সভা' ৮বার উল্লেখ করা হয়েছে।
- ঋগ্বেদে ২৪ বার কৃষির কথা বলা হয়েছে।
- ঋগ্বেদে বস্ত্রের জন্য বস্ত্র, বাস ও বসন শব্দের উল্লেখ আছে। এই বেদে 'ভীষক'কে দেবতাদের ডাক্তার বলা হয়েছে।
- এই বেদে শুধুমাত্র হিমালয় পর্বত এবং তার একটি শৃঙ্গ মুঞ্জবন্তের উল্লেখ আছে।
দেবতা এবং ঋষি
বেদের অন্যান্য অংশের মতো ঋগ্বেদেও বহু দেবতার প্রত্যক্ষ হয়। ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলো দেবতাদের উদ্দেশ্যে স্তুত হয়েছে। অগ্নি, ইন্দ্র এবং সোম হল প্রধান দেবতা। অন্যান্য দেবতারা হলেন বিষ্ণু, রুদ্র (পরবর্তীকালে শিবের সমার্থক), প্রজাপতি (পরবর্তীতে ব্রহ্মা) প্রভৃতি।[৪১] বৈদিক দেবীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। এঁদের মধ্যে ঊষা, পৃথিবী, অদিতি, সরস্বতী, সাবিত্রী, বাক, রাত্রি, অরণ্যানী ইত্যাদি ঋগ্বেদে বর্ণিত।.[৪২] শ্রী বা লক্ষ্মীও পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে আছেন।[৪৩] প্রকৃতপক্ষে, বেদে প্রত্যেক দেবতা এক একটি বিশেষ জ্ঞান বা পার্থিব প্রাকৃতিক শক্তির প্রকাশক।[৪৪][৪৫]
ঋগ্বেদের শাখা
শৌনকের চরণব্যূহ-এ ঋগ্বেদের পাঁচটি শাখার তালিকা আছে। এগুলি হল: শাকল, বাষ্কল, অশ্বলায়ন, সংখ্যায়ন ও মাণ্ডুক্যায়ন। এগুলির মধ্যে শাকল ও বাষ্কল শাখাদুটিই এখন প্রচলিত আছে। ঋগ্বেদের বাষ্কল শাখায় খিলানি রয়েছে, যা শাকল শাখায় নেই। তবে বর্তমানে পুনেতে রক্ষিত একটি শাকল শাখার কাশ্মীরী পাণ্ডুলিপিতে খিলানি দেখা যায়। শাকল শাখায় ঐতরেয় ব্রাহ্মণ এবং বাষ্কল শাখায় কৌষীতকী ব্রাহ্মণ রয়েছে। যদিও অশ্বলায়ন শখার সূত্র সাহিত্য গর্গ্য নারায়ণের একটি ‘বৃত্তি’ বা ভাষ্য পাওয়া যায়। এই সূত্রে একটি শ্রৌত ও একটি গৃহ্য সূত্র আছে। গর্গ্য নারায়ণের এই ভাষ্যটি ১১শ শতাব্দীতে রচিত দেবস্বামীর একটি দীর্ঘ ভাষ্যের ভিত্তিতে রচিত।[৪৬]
ঋষিদের নাম হতে এসব শাখার নামকরণ হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ শাখাই বিলুপ্ত। কেবল কয়েকটি শাখা পাওয়া যায়। কাশিকাবৃত্তি গ্রন্থ ও কল্পসূত্রে ঋক্শাখার যেসব নাম দৃষ্ট হয় সেগুলো হল:
|
|
|
|
|
|
|
|
ভাষ্য
ঋগ্বেদ সংহিতার প্রায় ১৫টি ভাষ্য পাওয়া যায়। কেবল স্কন্দস্বামী এবং সায়ণাচার্য সম্পূর্ণ ঋগ্বেদের ভাষ্য রচনা করেছিলেন। প্রাচীনতম ভাষ্য কে লিখেছেন তা বলা মুশকিল, তবে সবচেয়ে বিখ্যাত উপলব্ধ প্রাচীন ভাষ্য হল সায়ণাচার্যের। সায়ণাচার্যের আগেকার ভাষ্যকাররা আরও গুপ্ত ভাষ্যকার হয়ে উঠেছিলেন। যাস্ক খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে(সম্ভবত) বৈদিক শব্দের অর্থ দিয়ে একটি কোষ লিখেছিলেন। কিন্তু সায়ণই একমাত্র ভাষ্যকার যার চারটি বেদের ভাষ্য পাওয়া যায়। ঋগ্বেদের প্রেক্ষাপটে এই ভাষ্যকারগণ ঋগ্বেদের ভাষ্য ক্রমানুসারে লিখেছেন-
- স্কন্দ স্বামী (সম্পূর্ণ ঋগ্বেদ) (যাজ্ঞিক) - ঐতিহাসিক গ্রন্থ অনুসারে, কুমারিল-শঙ্করের সময়ে বেদের অর্থ বোঝা ও ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। স্কন্দ স্বামীর সময়কালও একই বলে মনে করা হয় - ৬২৫খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি। এই খ্যাতি যে স্কন্দ স্বামী শতপথ ব্রাহ্মণের একজন ভাষ্যকার হরিস্বামীকে (৬৩৮খ্রিস্টাব্দ) তার ভাষ্য শিখিয়েছিলেন ঋগ্বেদভাষ্যের প্রথমাষ্টকের শেষে প্রাপ্ত শ্লোক থেকে জানা যায় যে স্কন্দ স্বামী ছিলেন গুজরাটের ভালভীর বাসিন্দা। এতে প্রতিটি স্তোত্রের শুরুতে ঋষি-দেবতা ও সেই স্তোত্রের শ্লোক উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি উপস্থাপন করা হয়. এটা বিশ্বাস করা হয় যে স্কন্দ স্বামী শুধুমাত্র প্রথম চারটি মন্ডলের উপর তার ভাষ্য লিখেছিলেন, বাকি অংশ নারায়ণ এবং উদগীথা একসাথে সম্পন্ন করেছিলেন।
- নারায়ণ (ঋগ্বেদের পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম অষ্টকের অংশবিশেষ।) (যাজ্ঞিক)
- উদ্গীথ (ঋগ্বেদের ১০।৫।৫,৭ থেকে ১০।৮৩।৫ ঋক পর্যন্ত) (যাজ্ঞিক)
- হস্তামলক (বিলুপ্ত)
- লক্ষণ (বিলুপ্ত)
- ধানুঙ্কযজ্বা (বিলুপ্ত)
- মাধব ভট্ট - বিখ্যাত ভাষ্যকারদের মধ্যে মাধব নামে চারজন ভাষ্যকার একটি সামবেদ ভাষ্যকার হিসাবে পরিচিত, বাকি তিনটি ঋক - কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে এই তিনটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। একজন হলেন সায়ণাচার্য স্বয়ং যিনি তাঁর বড় ভাই মাধবের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভাষ্য লিখেছেন এবং নাম দিয়েছেন মাধবী ভাষা। কিছু পণ্ডিত বেঙ্কট মাধবকে মাধব মনে করেন কিন্তু তা হওয়া কঠিন বলে মনে হয়। বেঙ্কট মাধব নামে একজন ভাষ্যকারের দ্বারা পাওয়া আংশিক ঋত্বিক দেখায় যে বেদ সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞান ছিল উচ্চ স্তরের। এমনকি বেঙ্কট মাধব ও স্কন্দ স্বামীর ওপরও তাঁর ভাষ্যের প্রভাব পাওয়া যায়। এ থেকে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর সময়কাল স্কন্দ স্বামীরও আগে ছিল।
- বেঙ্কট মাধব (যাজ্ঞিক) - তার ভাষ্য খুবই সংক্ষিপ্ত। এতে কোনো ব্যাকরণগত মন্তব্য এবং অন্য কোনো মন্তব্য নেই। এর মধ্যে একটি বিশেষ বিষয় হল ব্রাহ্মণ গ্রন্থ থেকে সুন্দরভাবে প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
- ধানুষ্কায়জ্বা - বিক্রমের ষোড়শ শতাব্দীর আগে, বেদের ভাষ্যকার ধনুষ্কায়জওয়া-এর উল্লেখ আছে যিনি তিনটি বেদের ভাষ্য রচনা করেছিলেন।
- আনন্দতীর্থ (ঋগ্বেদের প্রথম চল্লিশটি সুক্ত)(বৈষ্ণবীয় ভক্তিমার্গিক) - চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বৈষ্ণবাচার্য অন্নতীর্থজী ঋগ্বেদের কিছু মন্ত্রের উপর তাঁর ভাষ্য লিখেছেন।
- আত্মানন্দ (ঋগ্বেদের অস্যবামীয় সুক্ত ১-১৬৪) (অদ্বৈত-বেদান্তনিষ্ঠ) - ঋগ্বেদের ভাষ্য, যেখানে সর্বদা যজ্ঞ ও দেবতা পাওয়া যায়, তাঁর লেখা ভাষ্য আধ্যাত্মিক মনে হয়।
- সায়ণ (সম্পূর্ণ ঋগ্বেদ) (যজ্ঞনিষ্ঠ বা অধিদৈবিক) - এটি মধ্যযুগের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, সম্পূর্ণ এবং কার্যকরী ভাষ্য। বিজয়নগরের মহারাজা বুক্কা ( ভুক্কারায় ) তার আধ্যাত্মিক গুরু এবং রাজনীতিবিদ অমাত্য মাধবাচার্যকে বেদের উপর মন্তব্য করার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। পামাঞ্চু এই বিশাল দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তার ছোট ভাই সায়ানের হাতে এই দায়িত্ব তুলে দেন। তিনি তার বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার দিয়ে শুধু এই ধারাভাষ্য সম্পাদনা করেননি, 24 বছর ধরে অধিনায়কত্বের দায়িত্বও পালন করেন।
- রাবণ (আধ্যাত্মিক)
- মুদ্গল (ঋগ্বেদের প্রথম অষ্টক সম্পুর্ণ এবং চতুর্থ অষ্টকের পাঁচটি অধ্যায়)(যাজ্ঞিক)
- চতুর্বেদস্বামী (শ্রীকৃষ্ণনিষ্ঠ)(পণ্ডিত সমাজে অগ্রহণীয়)
- দেবস্বামী (বিলুপ্ত)
- স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী (ঋগ্বেদের ৭।২।২ পর্যন্ত) (ব্যাপকভাবে প্রসংসীত ও সমালোচিত)
জরাথুস্ট্রবাদের আবেস্তার সঙ্গে সাদৃশ্য
ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই বইটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরানি আবেস্তার স্তোত্রগুলি ঋগ্বেদের শ্লোকের অনুরূপ রয়েছে, যা অগ্নি, বায়ু, জল, সোম ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ভারতীয় দেবতার বর্ণনা করে। ঋগ্বেদে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রিক ধর্ম ও জরাথুস্ট্রবাদের যেন্দ আবেস্তা নামক ধর্মগ্রন্থ সঙ্গে ধর্মীয় উপাদানের প্রত্যক্ষ সাদৃশ্য করেছে, যেমনঃ অহুর থেকে অসুর, দেইব থেকে দেব, আহুরা মাজদা থেকে একেশ্বরবাদ, বরুণ, বিষ্ণু ও গরুদ, অগ্নিপুজা, হোম নামক পানীয় থেকে সোম নামক স্বর্গীয় সুধা, ভারতীয় ও পারসিকদের বাকযুদ্ধ থেকে দেবাসুরের যুদ্ধ, আর্য থেকে আর্য, মিত্রদেব, দিয়াউসপিত্র দেব (বৃহস্পতি দেব), ইয়াস্না থেকে ইয়যোনা বা যজ্ঞ, নারীয়সঙ্ঘ থেকে নরাশংস, অন্দ্র থেকে ইন্দ্র, গান্দারেওয়া থেকে গন্ধর্ব, বজ্র, বায়ু, মন্ত্র, যম, আহুতি, হুমাতা থেকে সুমতি ইত্যাদি।[৪৭][৪৮]
১৯ শতকে, আবেস্তাই ফার্সি এবং ঋগ্বৈদিক উভয় ভাষাই পশ্চিমা পণ্ডিতদের কাছে নতুন ছিল এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি শীঘ্রই সামনে আসে। তারা দেখলেন যে আবেস্তই ফার্সি এবং ঋগ্বৈদিক ভাষার শব্দগুলিকে কিছু সহজ নিয়মে একটি থেকে অন্যটিতে অনুবাদ করা যেতে পারে এবং উভয়ই ব্যাকরণগতভাবে খুব কাছাকাছি। ভাষাতাত্ত্বিক এবং পণ্ডিত আব্রাহাম জ্যাকসন তার ১৮৯২ সালের বই "সংস্কৃত এবং আবেস্তাই বর্ণমালা এবং এর প্রতিবর্ণীকরণের সাথে আবেস্তাই ব্যাকরণের তুলনা" তে ঋগ্বৈদিক ভাষায় একটি আবেস্তাই ধর্মীয় শ্লোক সরাসরি অনুবাদ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ:
|
|
|
|
নীচে ঋগ্বেদ এবং আবেস্তা এর তুলনামূলক ভাষাগত বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত সমজাতীয় পদগুলির একটি তালিকা দেওয়া হল। উভয় সংগ্রহই প্রোটো-ইন্দো-ইরানীদের থেকে পৃথক হয়ে (আনুমানিক দ্বিতীয় সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্ব) তাদের নিজ নিজ ভারতীয় ও ইরানি শাখায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরের প্রস্তাবিত সময় থেকে নেওয়া।[৪৯][৫০][৫১]
বৈদিক সংস্কৃত | আবেস্তা | সাধারণ অর্থ |
---|---|---|
অপ | অবন | "জল," অপস "জলাদি"[৫১] |
অপাং নপাত, অপাম নপাত | অপাম নপাত | "জলের সন্তান"[৫১] |
অর্যমন | আইর্যমন | "আর্যত্ব" (সাহি:** "আর্য সম্প্রদায়ের সদস্য")[৫১] |
ঋত | আশা/আর্ত | "সক্রিয় সত্য", থেকে "আদেশ" ও "ন্যায়নিষ্ঠতা" পর্যন্ত[৫০][৫১] |
অথর্বন | আত্রাউয়ান, আতাউরুন অতর | "পুরোহিত"[৫০] |
অহি | অঝি, (অজি) | "ড্রাগন, সাপ", "নাগ"[৫১] |
দাইবা, দেব | দাএব, (দাএউয়া) | একটি স্বর্গত শ্রেণী |
মনু | মনু | "মানুষ"[৫১] |
মিত্র | মিথ্র, মিত্র | "শপথ, অঙ্গীকার"[৫০][৫১] |
অসুর | অহুর | আরেকটি আত্মার শ্রেণী[৫০][৫১] |
অসুর মেধা/অসুর মহৎ (असुर मेधा) | অহুর মাজদা | "জ্ঞানের প্রভু, মহাপ্রভু"[৫২] |
সর্বতৎ | হাউরুউয়াতাত | "অক্ষত", "পরিপূর্ণতা"[৫৩][৫৪][৫৫] |
সরস্বতী (আরদ্রাবী শুরা অনাহিতা, आर्द्रावी शूरा अनाहिता) | হরক্সবইতি (অরদুউই সুরা অনহিতা) | একটি বিতর্কিত (সাধারণত পৌরাণিক হিসেবে বিবেচিত) নদী, একটি নদী দেবী[৫৬][৫৭] |
সৌম্য, সোম | হোম | একটি দেবতুল্য গাছ[৫০][৫১] |
সূর্য, স্বর | হবর, ক্সবর | সূর্য, পাশাপাশি গ্রিক হেলিওস, লাতিন সোল, ইংরেজি. সান-এর সমজাতীয়[৫৩] |
তপতি | তপইতি | সম্ভাব্য আগুন/সৌরদেবী; দেখুন তবিতি (একটি সম্ভাব্য হেলেনাইজড সিথিয়ান নাম)। লাতিন তেপিও এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি পরিভাষার সমজাতীয়। [৫৩] |
ভ্রত্র-/ব্রত্রগ্ন/ব্রিত্রবন | বেরেথ্র, বেরেত্র (তুলনা. বেরেথ্রগ্ন, বেরেথ্রয়ন) | "বাঁধা"[৫০][৫১] |
যম | যিম | সৌরদেবতা বিবসবান্ত,বিউউয়াহুউয়ান্তের পুত্র[৫১] |
য়জ্ঞ, যজ্ঞ | ইয়স্ন, বস্তু: ইয়জত | "উপাসনা, উৎসর্গ, অর্ঘ্য"[৫০][৫১] |
গন্ধর্ব | গন্দরেও | "স্বর্গীয় সত্ত্বা"[৫১] |
নসত্য | নঘইথ্য | "যমজ বৈদিক দেবতা যারা ঊষা, চিকিৎসা আর জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত"[৫১] |
অমরত্ব | অমেরেতত | "অমরত্ব"[৫১] |
পোসা | অপাওশা | "'খরার দৈত্য'"[৫১] |
আশ্মান | আসমান | "'আকাশ, সর্বোচ্চ স্বর্গ'"[৫৩] |
অঙ্গিরা মন্যু | অংরা মইন্যু | "'ধ্বংসাত্মক/দুষ্ট আত্মা, আত্মা, রাগ, প্রবৃত্তি, আবেগ, ক্রোধ, ঐশী জ্ঞানের শিক্ষক'"[৫১] |
মন্যু | মনিয়ু | "'রাগ, ক্রোধ'"[৫১] |
সর্ব | হর্ব | "'রুদ্র, বৈদিক বাতাসের দেবতা, শিব'"[৫৩] |
মধু | মদু | "'মধু'"[৫১] |
ভুত | বুইতি | "'প্রেত'"[৫১] |
মন্ত্র | মন্থ্র | "'পবিত্র জাদুবাক্য'"[৫১] |
অরমতি | অরমইতি | "'পুণ্য'" |
অমৃত | অমেশা | "'অমরত্বের নির্যাস'"[৫১] |
অমৃত স্পন্দ (अमृत स्पन्द) | অমেশা স্পেন্তা | "'অমরত্বের পবিত্র নির্যাস'" |
সুমতি | হুমাতা | "'শুভ চিন্তা'"[৫১][৫৩] |
সুক্ত | হুক্ত | "'শুভ বাক্য'"[৫১] |
নরাশংস | নইরিয়সঙ্ঘ | "'প্রশংসিতমানব'"[৫১] |
বায়ু | বাইইউ | "'বাতাস'"[৫১] |
বজ্র | বয্র | "'বিদ্যুৎচমক'"[৫১] |
ঊষা | উশাহ | "'ভোর'"[৫১] |
অহুতি | অজুইতি | "'অঞ্জলি'"[৫১] |
পুরমধি | পুরেন্দি[৫১] | |
ভগ | বগ | "'"প্রভু, পৃষ্ঠপোষক, সম্পদ, সমৃদ্ধি, ভাগ্যের ভাগীদার / ভাগ্যবান'"[৫১] |
উসিজ | উসিজ | "'"পুরোহিত'"[৫১] |
ত্রিত্ব | থ্রিত | "'"তৃতীয়'"[৫১] |
মাস | মাহ | "'"চাঁদ, মাস'"[৫১] |
বিবস্বন্ত | বিবনহবন্ত | "'" জ্বলে ওঠা, প্রভাতী'"[৫১] |
দ্রুহ | দ্রুজ | "'"দুরাত্মা'"[৫১] |
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
পাদটীকা
গ্রন্থপঞ্জি
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.