Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সন্ধি বাংলা ব্যাকরণে শব্দগঠনের একটি মাধ্যম। এর অর্থ মিলন। সন্নিহিত দুটি ধ্বনি মিলিয়ে একটি ধ্বনিতে পরিণত হওয়াকে বা পরস্পর সন্নিহিত দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। সন্ধি বাংলা ব্যাকরণের ধ্বনিতত্ব অংশে আলোচিত হয়। ধ্বনিগত মাধুর্য এবং স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা সন্ধির উদ্দেশ্য। যেকোনো পদের সঙ্গে সন্ধি হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হতে পারে। তবে বাংলা অব্যয় পদের সঙ্গে সন্ধি হয় না।
সন্ধির দ্বারা দুটি শব্দকে মিলিয়ে একটি নতুন শব্দ তৈরি করা হয়। যেমন — দেব শব্দটির অর্থ দেবতা এবং আলয় শব্দের অর্থ গৃহ। এই দুটি শব্দ মিলে তৈরি হয় দেবালয়, যার অর্থ দেবতার থাকার স্থান বা গৃহ।
সন্ধি শব্দটির বিশ্লেষিত রূপ সম + √ধি + ই,[lower-alpha 1][1] অর্থাৎ সমদিকে ধাবিত হওয়া বা মিলিত হওয়া। বাংলা ব্যাকরণমতে, দুটি শব্দের মধ্যে প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনি এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথম ধ্বনি যদি একইভাবে উচ্চারিত হয় বা তাদের উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি হয় তবে ধ্বনিদ্বয় পরস্পর সংযুক্ত হওয়া অর্থাৎ শব্দ দুটি মিলিত হয়ে এক শব্দে পরিণত হলে সেখানে সন্ধি হয়।[2] উদাহরণস্বরূপ, বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়। এখানে বিদ্যা ও আলয় শব্দদ্বয় মিলিত হয়ে বিদ্যালয় শব্দটি গঠন করেছে।
সন্ধির উদ্দেশ্য হল:
সন্ধি প্রধানত দুই প্রকার।
স্বরধ্বনির সাথে স্বরধ্বনির সন্ধি হলে স্বরসন্ধি হয়। যেমন, সিংহাসন = সিংহ + আসন (সিংহ = স্+ই+ং+হ্+অ ; আসন = আ+স্+অ+ন্+অ), বিদ্যালয় = বিদ্যা + আলয়, হিমালয় = হিম + আলয়।
উদাহরণ: সিংহাসন = সিংহ + আসন (স্+ই+ং+হ্+অ + আ+স্+অ+ন্+অ = স্+ই+ং+হ্+আ+স্+অ+ন্+অ = সিংহাসন)
উদাহরণ: সতীশ = সতী + ঈশ (স্+অ+ত্+ঈ + ঈ+শ্+অ = স্+অ+ত্+ঈ+শ্+অ = সতীশ)
উদাহরণ: বধূৎসব = বধূ + উৎসব (ব্+অ+ধ্+ঊ + উ+ত্+স্+অ+ব্+অ = ব্+অ+ধ্+ঊ+ত্+স্+অ+ব্+অ = বধূৎসব)
উদাহরণ: মহেশ = মহা + ঈশ (ম্+অ+হ্+আ + ঈ+শ্+অ = ম্+অ+হ্+এ+শ্+অ = মহেশ)
উদাহরণ: বঙ্গোপসাগর = বঙ্গ + উপসাগর (ব্+অ+ঙ্+গ্+অ + উ+প্+অ+স্+আ+গ্+অ+র্+অ = ব্+অ+ঙ্+গ্+ও+প্+অ+স্+আ+গ্+অ+র্+অ = বঙ্গোপসাগর)
উদাহরণ: সপ্তর্ষি = সপ্ত + ঋষি (স্+অ+প্+ত্+অ + ঋ+ষ্+ই = স্+অ+প্+ত্+অ+র্+ষ্+ই = সপ্তর্ষি)
৭.আ/আ + ঋত = আর্
উদাহরণ: ক্ষুধা + ঋত = ক্ষুধার্ত
উদাহরণ: জনৈক = জন + এক
উদাহরণ: পরমৌষধ = পরম + ঔষধ
বনৌষধি= বন+ ওষধি
উদাহরণ: ন্যূন = নি + ঊন
উদাহরণ: অনু + অয় = অন্বয়
উদাহরণ: পিত্রিচ্ছা = পিতৃ + ইচ্ছা
উদাহরণ: নয়ন = নে + অন
উদাহরণ: গায়ক = গৈ + অক
উদাহরণ: গবেষণা = গো + এষণা
উদাহরণ: নাবিক = নৌ + ইক
স্বরে আর ব্যঞ্জনে অথবা ব্যঞ্জনে ও ব্যঞ্জনে অথবা ব্যঞ্জনে ও স্বরে সন্ধি হলে ব্যঞ্জন সন্ধি হয়। যেমন, বিপজ্জনক = বিপদ + জনক (বিপদ = ব্+ই+প্+অ+দ্+অ; জনক = জ্+অ+ন্+অ+ক্+অ)। ব্যঞ্জনসন্ধি মূলত কথ্য রীতিতে সীমাবদ্ধ। প্রকৃত বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি মূলত সমীভবনের নিয়মে হয়ে থাকে।
ষড়ঋতু = ষট্ + ঋতু
মৃন্ময় = মৃৎ + ময়
বিপজ্জনক = বিপদ্ + জনক
উচ্ছেদ = উৎ + ছেদ
তল্লিখিত = তদ্ + লিখিত
সংগীত/সঙ্গীত = সম্ + গীত
বশংবদ = বশম্ + বদ
পরিচ্ছেদ = পরি + ছেদ
উদ্ধত = উৎ + হত
উচ্ছ্বাস = উৎ + শ্বাস
দৃষ্টি = দৃশ্ + তি
ষষ্ঠ = ষষ্ + থ
বিসর্গসন্ধি ব্যঞ্জন সন্ধির অন্তর্গত। বিসর্গ সন্ধির প্রকারভেদগুলো হচ্ছেঃ র জাত বিসর্গ এবং স জাত বিসর্গ। বিসর্গসন্ধি র্ ও স্ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যেমন, আশীর্বাদ = আশীঃ + বাদ (আশীঃ = আ+শ্+ঈ+ঃ; বাদ = ব্+আ+দ্+অ)
উদাহরণ: পরিস্কার= পরিঃ + কার, নিষ্কর= নিঃ + কর
উদাহরণ: ততোধিক= ততঃ + অধিক, মনোমোহন= মনঃ + মোহন
উদাহরণ: অন্তস্থ= অন্তঃ + স্থ, নিস্তব্ধ= নিঃ + স্তব্ধ
যেসব সন্ধিসমূহ স্বরসন্ধি বা ব্যঞ্জনসন্ধি বা বিসর্গসন্ধির নিয়মগুলো মেনে চলে না, তাদেরকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। তৎসম শব্দের সন্ধিতেই শুধু নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি হয়।
কুল + অটা = কুলটা, গো + অক্ষ = গবাক্ষ, প্র + ঊঢ়= প্রৌঢ়, মার্ত + অণ্ড = মার্তণ্ড, শুদ্ধ + ওদন = শুদ্ধোদন।
আ + চর্য = আশ্চর্য, গো + পদ = গোষ্পদ, বন + পতি = বনস্পতি, বৃহৎ + পতি = বৃহস্পতি, তৎ + কর = তস্কর, পর + পর = পরস্পর, মনস্ + ঈষা = মনীষা, ষট্ + দশ = ষোড়শ, এক + দশ = একাদশ, পতৎ + অঞ্জলি= পতঞ্জলি।
নিপাতনে সিদ্ধ তৎসম "বিসর্গসন্ধি"
অহঃ + অহ = অহরহ, অহঃ + নিশ = অহর্নিশ, আঃ + পদ = আস্পদ।[4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.