Loading AI tools
২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর পূর্ব দিল্লিতে একের পর এক দাঙ্গা এবং সহিংসতার ঘটনা শুরু হয়, যার ফলে ৪৯ জন নিহত হন[1][4][5] এবং প্রায় ২০০ জন আহত হন।[6][7] নাগরিকত্ব সংশোধন আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধক (এনপিআর) সম্পর্কিত বিষয়গুলির বিরুদ্ধে যখন কিছু মানুষের বিক্ষোভ চলছিল, সেই সময়ে এক বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন বিধায়ক কপিল মিশ্র বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্য একটি চূড়ান্ত সময় সীমা জারি করে বলেন যে বিক্ষোভ বন্ধ করা না হলে তিনি বিষয়টি নিজের হাতে তুলে নেবেন। তার এই মন্তব্যের পরের দিন উত্তর পূর্ব দিল্লিতে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে যার ফলে পুলিশ এবং বেসামরিক নাগরিক মারা যায়।
উত্তর পূর্ব দিল্লি দাঙ্গা | |
---|---|
তারিখ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ – ১ মার্চ ২০২০ (৭ দিন)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
অবস্থান | ২৮.৬৯৩৬° উত্তর ৭৭.৩০৭৩° পূর্ব |
কারণ | নাগরিকত্ব সংশোধন আইন |
লক্ষ্য | নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ রোধ করা |
পদ্ধতি | দাঙ্গা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা, গুলি চালানো |
অবস্থা | চলছে |
ক্ষয়ক্ষতি | |
নিহত | ৪৯[1] |
আহত | ২০০+[2] |
গ্রেপ্তার | ৬০০[3] |
২৪ ফেব্রুয়ারি কিছু লোক নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং হেড কনস্টেবল রতন লাল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন এবং সহিংস সংঘর্ষের কারণে ছয়জন বিক্ষোভকারী মারা যায়।[8][9][lower-alpha 1] ভজনপুরায় কিছু লোকজন একটি পেট্রোল পাম্প আক্রমণ করে, আজাদির স্লোগান দেয় ও পেট্রোল বোমা, লাঠি, অস্ত্র বহন করে এবং উপলব্ধ নগদ টাকা লুটের পরে গাড়ি ও পেট্রোল ট্যাঙ্ক পুড়িয়ে দেয়।[10][11][12] পরে সেই রাতেই উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে একটি ভিড় দু'জনকে লাঠি ও পাথর দিয়ে মারধর করে। তাদের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।[12] কিছু মানুষের একটি ভিড় ১৭০ টি গাড়ি সমেত একটি বিশাল পার্কিংয়ের জায়গা আগুনে পুড়িয়ে দেয়।[13]
পরের দিন, উত্তর পূর্ব দিল্লিতে একটি দাঙ্গা শুরু হয়, জনতা মানুষেরদের সম্পত্তি ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায় ।[14][15][16] দাঙ্গা বেশ কয়েক দিন অব্যাহত ছিল এবং সেখানে সম্পত্তিগুলির ব্যাপক ধ্বংস হয় । যাতে হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মের লোক ছিল।[15] মসজিদ[17] ও মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়,[18] এবং বেশ কয়েকটি স্কুল, দোকান, ঘর এবং যানবাহনে দাঙ্গাকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়;[19] সব মিলিয়ে ৪৯ জন নিহত হয়[1] এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়।[2] হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই সহিংসতার শিকার হয়।[14][20][21][22] জাফরাবাদ ও মৌজপুরের মধ্যবর্তী এলাকায়, যেখানে হিন্দু ও মুসলমানদের মিশ্র জনসংখ্যা রয়েছে, সেখানে তারা একে অপরকে রক্ষা করে এবং সেখানকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করা থেকে বাইরের জনতাকে রোধ করতে ব্যারিকেড করে ঐক্য প্রদর্শন করে স্থানীয় জনতা।[23][24]
দিল্লি পুলিশ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।[25] দাঙ্গা নিয়ে রিপোর্টিং করা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বলেন যে তাদের লোকজন সিএএ সমর্থক এবং সিএএ বিরোধী উভয়ের থেকে হুমকি পায়।[26] ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ ১২৩ টি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে এবং সহিংসতায় জড়িত ৬০০ জনকে গ্রেপ্তার করে।[3]
সংসদের উভয় সভায় নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন (সিএএ) পাসের প্রতিক্রিয়ায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতজুড়ে কিছু মানুষ প্রতিবাদ শুরু করে।[27][28][29][30] বিক্ষোভকারীরা কেবল সিএএ-র নাগরিকত্ব সম্পর্কিত ইস্যুগুলির বিরুদ্ধে নয়, জাতীয় নাগরিক নিবন্ধক (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধকের (এনপিআর) বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেন।[31] ২০২০ সালের ২২-২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যবর্তী রাতে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির সিলামপুর-জাফরাবাদ সড়কের এক প্রান্তে প্রায় ৫০০ থেকে ১,০০০ জন নারী বিক্ষোভকারীরা একটি বিক্ষোভ শুরু করেন। এই বিক্ষোভ সিলামপুর মেট্রো স্টেশনের প্রবেশ এবং প্রস্থান পথকে অবরুদ্ধ করে।[32][33] বিক্ষোভকারীদের মতে, এই বিক্ষোভটি ভীম সেনাবাহিনী কর্তৃক ডাকা ভারত বন্ধের সাথে যুক্ত ছিল এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল। পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।[34]
২০২০ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্ব দিল্লি জেলার ডিসিপি বেদ প্রকাশ সূর্যর উপস্থিতিতে স্থানীয় বিজেপি নেতা এবং সাবেক বিধানসভার সদস্য কপিল মিশ্র সিএএবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জনসভায় প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখেন।[lower-alpha 2][35] কপিল মিশ্র তিন দিনের সময়ের মধ্যে পুলিশকে জাফরাবাদ ও চাঁদবাগ এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাদের ব্যর্থতার ঘটনায় বিষয়টিকে নিজের হাতে নেওয়ার এবং "শান্তিতে না থাকার" হুমকি দিয়েছিলেন।[36][37] সমাবেশের পরে সদস্য কপিল নিজেই টুইটারে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তাঁর সমাবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিএএ-এর সমর্থক এবং বিরোধীদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়।[38]
"कपिल मिश्रा आग लगा के घर में घुस गया, हम जैसों के बेटे मर रहे हैं"
(কপিল মিশ্র আগুন লাগিয়ে তার বাড়িতে ফিরে গেলেন, যখন আমাদের বাচ্চারা মারা যাচ্ছে।)
-- রাহুল সোলঙ্কির বাবা, দাঙ্গার সময় আক্রমণে মারা যাওয়া এক তরুণ (রাহুল সোলঙ্কি)।[39]
সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের অনেকে কপিল মিশ্রকে সংঘর্ষের জন্য উদ্বুদ্ধ করার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং তার তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থার জন্য বলেন।[39]
বিজেপির পূর্ব দিল্লির সাংসদ গৌতম গম্ভীর বলেন যে "কপিল মিশ্রের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়" এবং তারা কোন দলেরই হোক না কেন সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলেন।[38] দিল্লি বিজেপি প্রধান মনোজ তিওয়ারি তার পর থেকে (যারা স্লোগান দিয়েছিলেন) বিজেপির পরাজয়ের কারণ হিসেবে দলীয় প্রার্থী কপিল মিশ্রের ঘৃণ্য বক্তৃতাকে দায়ী করেন।[15]
কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্ররোচিত করার অভিযোগে তিনটি অভিযোগ (একটি রিপোর্টের জন্য দুটি পুলিশ অভিযোগ এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন) দায়ের করা হয়। আম আদমি পার্টির (এএপি) কর্পোরেটর রেশমা নাদিম প্রথম অভিযোগ দায়ের করেন এবং দ্বিতীয়টি হাসিব উল হাসান দায়ের করেন। অভিযোগগুলিতে অভিযোগ করা হয়েছে যে কপিল মিশ্র প্রকাশ্যে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেন, জনগণকে উজ্জীবিত করেন এবং তিনি সহিংসতার কারণ। ২৫ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে কোনও রকমের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকে।[36]
২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কপিল মিশ্র ধারাবাহিক টুইটে লিখেছিলেন যে "সত্য কথা বলার" জন্য এবং সিএএ সমর্থন করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে "বিশাল বিদ্বেষমূলক প্রচার" থেকে তিনি ভয় পান না।[40] তিনি ভিডিও টুইট করেন এবং লিখেছিলেন "জাফরাবাদকে খালি করা হয়েছে, সেখানে আর কোনও শাহীনবাগ হবে না"।[41] পরের দিন, তিনি টুইট করে তার সমালোচকদের লক্ষ্য করে বলেন- যে বা যারা বুরহান ওয়ানী এবং আফজাল গুরু'কে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে বিবেচনা করেন না, তারা তাঁর গ্রেপ্তারের দাবি করছেন।[42]
২৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩.৩০ টা থেকে ৪ টার মধ্যে, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা কপিল মিশ্র এবং তার সমর্থকরা "জাফরাবাদ [অবরোধ]" এর জবাব দেওয়ার জন্য মৌজপুর চকের একটি প্রতিবাদ স্থানে পৌঁছান।[43] কপিল মিশ্র তখন সিএএর বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশে বক্তব্য রেখেন[lower-alpha 3][14] এবং বলেন পুলিশ তিন দিনের মধ্যে জাফরাবাদ ও চাঁদবাগ এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হলে বিষয়টি তার নিজের হাতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার হুমকি প্রদান করেন।[36][38][44] এটি ব্যাপকভাবে উদ্বেগজনক কারণ হিসাবে গণ্য হয়:[15][45] তবে কপিল মিশ্র অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করেন।[46]
প্রায় পৌনে ৪ টার দিকে মৌজপুর চক এবং একটি মন্দিরের কাছে সিএএএর সমর্থক সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ করেছিল বলে জানা যায়। কপিল মিশ্রের ভাষণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কারাওয়াল নগর, মৌজপুর চক, বাবরপুর এবং চাঁদ বাগের সিএএ সমর্থক ও সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।[43][47] জনতা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।[48][49]
২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জাফরাবাদ ও মৌজপুরে সহিংস সংঘর্ষ হয় এবং এতে এক পুলিশ হেড কনস্টেবল রতন লাল ও একজন প্রতিবাদকারী মারা যান।[8][50][51][52] প্রাথমিকভাবে জানা গেছে যে গোকুলপুরীতে তাঁর মাথায় পাথর আঘাতের কারণে তিনি মারা গিয়েছিলেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুসারে রতন লালের দেহে মারাত্মক গুলির আঘাত পাওয়া যায়।[53] সিএএ-এর সমর্থক বিক্ষোভকারী এবং সিএএ বিরোধী বিক্ষোভকারীরা একে অপরের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং উভয় পক্ষ থেকে পাথর ছোঁড়া হয়। সহিংসতার সময় বেশ কয়েকটি বাড়ি, যানবাহন ও দোকান ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ কর্মীরা চাঁদবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ ব্যবহার করে।[7][51][54] পরে জানা গেছে যে সহিংসতার সময় চারজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়।[8]
ভজনপুরায় প্রায় ২০০০ জন জনতা আজাদির স্লোগান দিতে দিতে পেট্রোল বোমা, লাঠি ও অস্ত্র বহন করে একটি পেট্রোল পাম্প আক্রমণ করে। তারা নগদ লুট করার পরে মালিক ও কর্মচারীদের লাঠিপেটা করে, যানবাহন ও পেট্রোল ট্যাঙ্ককে আগুন ধরিয়ে দেয়।[10][11]
সিলামপুর, জাফরাবাদ, মৌজপুর, কর্দমপুরী, বাবরপুর, গোকুলপুরী ও শিবপুরী অঞ্চলে সহিংসতার খবর পাওয়া যায়।[55][56] সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ১৪৪ ধারা (সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা) আরোপ করা হয়, কিন্তু দাঙ্গাকারীদের সক্রিয় দেখা যায়।[57][58][59]
শিববিহারে, বিকেলে বেশ কয়েকটি দোকান এবং বাড়িগুলিতে পেট্রোল বোমা ও অ্যাসিডের বোতল নিয়ে নিকটবর্তী আকসা মসজিদের এক ভিড় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থান থেকে শ্রমিকদের বিকৃত লাশ উদ্ধার করা হয়।[12][60] ভিড় ১৭০ টি গাড়ি সমেত একটি বিশাল পার্কিং জায়গা পুড়িয়ে দেয়।[12][13] সন্ধ্যায়, একটি টায়ারের বাজারে আগুন দেওয়া হয়।[52][61] পরে সেদিন রাত সাড়ে দশটার দিকে একটি ভিড় উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে মনু কুমার ও তার বাবা বিনোদ কুমারকে "আল্লাহ-হু-আকবার" শ্লোগান দিয়ে লাঠিপেটা করে ও পাথর ছোঁড়া হয়। বিনোদ কুমার ঘটনাস্থলেই মারা যান।[12][60] এই দিন, এক হেড কনস্টেবল রতন লাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং পরবর্তী সহিংসতায় চারজন নাগরিক মারা যান।[8][51][52]
দিল্লি ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে যে ২৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্ব দিল্লির অঞ্চলগুলি থেকে ৪৫ জন ফোন কল করেন এবং তিন জন ফায়ারম্যান আহত হয়। ফোন কল অনুযায়ী আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়ার সময়, ফায়ার ইঞ্জিনকে পাথর দিয়ে আক্রমণ করা হয় এবং দাঙ্গাবাজরা অন্য একটি ফায়ার ইঞ্জিনে আগুন ধরিয়ে দেয়।[62]
২৫ ফেব্রুয়ারি মৌজপুর, ব্রহ্মপুরী ও এর আশেপাশের এলাকায় পাথর ছোঁড়ার খবর প্রকাশির হয়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা অঞ্চলে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স মোতায়েন করা হয়।[62]
অশোক নগরের একটি মসজিদে ভাঙচুর চালানো হয় । এছাড়া, মসজিদের কার্পেট পোড়ানো হয় ।[6][63] একদল উন্মত্ত জনতা মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়দের মতে আক্রমণকারীরা এলাকার বাইরে থেকে এসেছে।[17] গোকুলপুরীর আরেকটি মসজিদেও ভাঙচুর চালানো হয়।[64]
বেলা তিনটার দিকে হিন্দু ও মুসলিম উন্মত্ত জনতাদের মাঝে সংঘর্ষ হয়।[65] সেখানে গুলি ও পাথরের ব্যবহার করা হয়। পুলিশ সংঘর্ষের এক ঘণ্টা পর উপস্থিত জয়। মুসলমানদের দোকান ও যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়।[65]
সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের মাঝে ৭০ জন বন্দুকের গুলিতে আহত হয়েছিল। উত্তর পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা, চাঁদবাগ ও কারোয়াল নগরে লাঠি, রড নিয়ে একদল লোককে মহড়া দিতে দেখা যায়।[7] রাত দশটায় উত্তর পূর্ব দিল্লিতে থাকা পুলিশকে লোক দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়।[62]
ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর অফিসার অঙ্কিত শর্মার মৃত্যুতে আম আদমি পার্টির স্থানীয় নেতা তাহির হুসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।[66][67]
এনএসএ অজিত দোভাল সন্ধ্যায় উত্তর পূর্ব দিল্লির সহিংসতা প্রভাবিত অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তবে, পরে রাতেই কারাওয়াল নগর, মৌজপুর এবং ভজনপুরা থেকে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও মব লিচিংয়ের খবর প্রকাশিত হয়।[68]
সেদিন পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এক হাজার, পাঁচশত জরুরি কল করা হয়। বেশ কয়েকটি হাসপাতাল থেকে বিলম্বিত ময়না তদন্তের অভিযোগ ওঠে এবং নাগরিক বলে দাবি করা প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দাঙ্গার জন্য কপিল মিশ্রকে দোষারোপ করেন, একজন ব্যক্তি বলেন যে একটি ভিড় পাথর ও তরোয়াল দিয়ে তাদের আক্রমণ করে তাকবীরের জপ করার সময়।[69]
শিববিহারে, সকাল ৭ টা থেকে সকাল ৯ টার মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। আহত তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই সময়ে একটি গোডাউন, দুটি দোকান এবং একটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়ে যায়।[70]
দিনে অন্য একটি হত্যার সাথে, মৃতের সংখ্যা ৪২ -এ পৌঁছায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে বলে ধরে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা ৬০ বছর বয়সের এক নেকড়া সংগ্রহকারীকে আক্রমণ করা হয় এবং মাথায় আঘাতের কারণে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা জান।
দিনটিতে কোনও নতুন সহিংসতার ঘটনা পুলিশে রিপোর্ট করা হয়নি, কিছু দোকান আবার চালু হওয়ার সাথে দাঙ্গা শেষ হয়।[71] সামাজিক মিডিয়াতে উত্তেজক সামগ্রী পোস্ট করা লোকজনের বিরুদ্ধে ১৩ টি মামলা দায়ের করা হয়। রবি শঙ্কর ব্রহ্মপুরীর মতো দাঙ্গা-আক্রান্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেন।[72]
১ মার্চ, আরও তিনটি মৃতদেহ পাওয়া যায়, দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা ৪৬ জনে উন্নীত হয়। দু'জনের মৃতদেহ ভাগীরথী বিহার খালে পাওয়া যায় এবং অন্যটি গোকালপুরীর খালে পাওয়া যায়।[73] জাফরাবাদের মুসলিম ও হিন্দু বাসিন্দারা মিলে একটি শান্তি মিছিলের আয়োজন করে।[74]
দাঙ্গা চলাকালীন সাংবাদিকদের উপর হামলা চালানোর বেশ কয়েকটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি মৌজপুর অঞ্চলে রিপোর্ট করার সময় জেকে ২৪x৭ নিউজ-এর এক সাংবাদিককে গুলি করা হয়।[26] ক্যামেরাম্যানের সাথে এনডিটিভির দুজন সাংবাদিক ওই এলাকার একটি মসজিদে আগুন জ্বালানোর দৃশ্যধারণ করার সময় জনতা ছত্রভঙ্গ করে। এক সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে আরও আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য ওই গণমাধ্যম দলের একজন মহিলা সাংবাদিককে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে হয় ।[75]
২৫ ফেব্রুয়ারি, দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একজন ফটো সাংবাদিককে কিছু লোক আগুন ধরিয়ে দেওয়া একটি ভবনের ছবি তুলতে গিয়ে তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে।[26] পরে এই প্রতিবেদকের সাথে অন্য একজন দাঙ্গাকারীর দেখা হয়, যিনি তাকে তার ধর্ম প্রমাণ করার দাবি করেন।[26]
বেশ কয়েক জন সাংবাদিক দাঙ্গাকারীদের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা টুইটারে শেয়ার করেন। টাইমস নাউয়ের এক সাংবাদিক টুইট করেন যে তিনি বিক্ষোভকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। তিনি বলেছিলেন যে ঘটনাস্থল থেকে পালানোর জন্য তাকে পাথর ও লাঠি বহনকারী জনতার কাছে অনুরোধ করতে হয়।[26] রয়টার্স,[76] ইন্ডিয়া টুডে,[77] সিএনএন-নিউজ ১৮[78] এর সাংবাদিকরা তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন যে তাদের উপর নির্যাতন ও লাঞ্ছনা করা হয়।[26]
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে যে কারাওয়াল নগরে সহিংসতার নথিভুক্ত করা তার এক ফটোগ্রাফারের একটি মোটরসাইকেলে মুখোশধারী জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়। মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার পরে জনতা তাকে হুমকি দেয় এবং গালি দেয় এবং তাঁর ক্যামেরায় মেমরি কার্ডটি জব্দ করে। তারা তার অফিসিয়াল পরিচয়পত্রের জন্য জিজ্ঞাসা করে এবং তাকে এলাকাটি ছেড়ে দেওয়ার আগে এটির একটি ছবি নেয়।[79]
এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া ২৫ ফেব্রুয়ারিতে একটি বিবৃতি জারি করে, যাতে সাংবাদিকদের উপর হামলা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং দিল্লি পুলিশকে এই ঘটনাগুলি তদন্ত করতে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।[80][81]
সহিংসতার বেশ কয়েকটি ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ২৫ ফেব্রুয়ারি বলেন যে পুলিশ তার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ এ পৌঁছে যাওয়ার কারণে সহিংসতা বন্ধে সেনাবাহিনীকে নামাতে বলেন।[6][89][90]
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটারে একটি বার্তা শেয়ার করেন, যাতে লোকেরা শান্তি বজায় রাখতে বলেন।[91]
এএপি নেতা সঞ্জয় সিং, একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যাতে লক্ষ্মী নগরের বিজেপি বিধায়ক অভয় বর্মাকে দেখা যায় ভিড়ের নেতৃত্ব দিয়ে স্লোগান তুলতে- পুলিশ কে হাতিয়ারোঁ কো, গোলি মারো সালোন কো (অনু. পুলিশের খুনিদের, গুলি কর), জো হিন্দু হিত কি বাত কারেগা, ওহি দেশ পে রাজ কারেগা। (অনু. যারা হিন্দুদের কল্যাণ নিয়ে কথা বলেন, কেবল তারা দেশে শাসন করবেন) এবং জয় শ্রী রাম। সঞ্জয় সিং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে "শান্তি পুনরুদ্ধারের ভান করে সর্বদলীয় বৈঠক করার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং বলেন তাদের বিধায়ক দাঙ্গা উস্কানিতে ব্যস্ত রয়েছেন।" এরই মধ্যে অভয় বর্মা দাবি করেছিলেন যে স্লোগানটি সাধারণ জনগণের দ্বারা উত্থাপিত হয়।[92]
কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী একটি সংবাদ সম্মেলন করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন যে সহিংসতা বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পদত্যাগ করা উচিত। তিনি পর্যাপ্ত সংখ্যক সুরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের জন্য বলেন।[89]
২৬ ফেব্রুয়ারি, ইউএস আন্তর্জাতিক কমিশন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াল ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) দাঙ্গা নিয়ে "গুরুতর উদ্বেগ" জানিয়েছিল এবং ভারত সরকারকে তারা যে বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্তই হোক না কেন লোকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে।[93] মার্কিন সিনেটর এবং ২০২০ মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স এবং অন্যান্য আমেরিকান রাজনীতিবিদরা এই ঘটনা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রতিক্রিয়া হিসাবে, ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেছিলেন যে এই মন্তব্যগুলি "সত্যই ভুল ছিল", "বিভ্রান্তিকর" এবং "ইস্যুটির রাজনীতিকরণের লক্ষ্যে" ছিল।[94] বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ তার নিন্দার কারণে স্যান্ডার্সকে নির্বাচনের হস্তক্ষেপের হুমকি প্রদান করেন।[95] মার্কিন নাগরিকদের সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য একটি ভ্রমণ উপদেশ জারি করে।[96]
২৭ ফেব্রুয়ারি, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচলেট বলেন, "বিপুল সংখ্যক ভারতীয় এবং কিছু সম্প্রদায়ের লোকেরা - এই আইনটির বিরোধিতা করেছে, এবং দেশটির ধর্মনিরপেক্ষতার দীর্ঘ ঐতিহ্যের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে"। তিনি নাগরিকত্ব আইন এবং দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক হামলার সময় "পুলিশ নিষ্ক্রিয়তার" প্রতিবেদনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।[70] বাংলাদেশের বারোজন বিশিষ্ট নাগরিকও সেদিন সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের ব্যর্থতা তার প্রতিবেশী দেশগুলিতে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যা এই অঞ্চলে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে।[97] দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করার উপায়ের জন্য দেং জিয়াওপিংয়ের ১৯৮৯সালের তিয়ানানমন স্কয়ার বিক্ষোভ পরিচালনা থেকে শিক্ষা নিতে বলেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়।[98]
২ মার্চ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে দিল্লির দাঙ্গা "পরিকল্পিত গণহত্যা" ছিল।[99]
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের কারণে এই সহিংসতা পরিকল্পিত ভাবে প্রচারিত হয়।[100] দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী আনতে অস্বীকার করে মন্ত্রক জানিয়েছিল যে এলাকাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশ সদস্যের সংখ্যা অপর্যাপ্ত রয়েছে। এলাকায় ৬,০০০ এরও বেশি পুলিশ ও আধাসামরিক কর্মী মোতায়েন করা হয়।[7]
২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির সকালে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সভাপতিত্বে সহিংসতাগ্রস্থ অঞ্চলগুলির সমস্ত দলের বিধায়ক এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেশ কয়েকজন বিধায়ক যথেষ্ট পুলিশ সদস্য মোতায়েনের অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।[62] স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভাপতিত্বে পরবর্তী বৈঠকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং দিল্লির লেফটেন্যান্ট-গভর্নর অনিল বাইজাল এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। সহিংসতা রোধে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্তের সাথে বৈঠকটি শেষ হয়। অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানান যে অমিত শাহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ উপস্থিতির আশ্বাস দিয়েছেন।[62]
জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা, অজিত দোভালকে এই অঞ্চলে শান্তি পুনঃস্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।[89] ২৬ ফেব্রুয়ারি, অজিত দোভাল সহিংসতাগ্রস্থ অঞ্চলগুলিতে ভ্রমণ করেন এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন ও শান্তি পুনঃস্থাপনের আশ্বাস প্রদান করেন।[101]
২৭ ফেব্রুয়ারি, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ফরিস্তা স্কিমের আওতায় সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে আহতদের নিখরচায় চিকিৎসা দেওয়ার ঘোষণা করেন। যে সকল অঞ্চলে কারফিউ আরোপিত হয়েছিল সেখানে সরকার ত্রাণ সরবরাহ করতে এনজিওর সহায়তায় ব্যবস্থা করে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ১০ লক্ষ টাকা (১৪,০০০ মার্কিন ডলার) ক্ষতিপূরণ, ১ লক্ষ টাকা (১,৪০০ মার্কিন ডলার) প্রাক্তন গ্রাটিয়া এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ টাকা ($৭,০০০ ডলার) ক্ষতিপূরণও ঘোষণা করেন।[70] তিনি আরও ঘোষণা করেন যে দিল্লি সরকার দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নয়টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছে। যাদের ঘর পুরোপুরি পুড়ে গেছে, তাদের জন্য তাৎক্ষনিক ২৫,০০০ টাকা (মার্কিন ডলার 350) সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়।
আবাসিক কল্যাণ সমিতি এবং এনজিওর সহায়তায় খাদ্য এবং অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।[102] বিজেপি নেতা তাজিন্দর বগ্গা এবং কপিল মিশ্র গণ-অর্থায়নের মাধ্যমে দিল্লি দাঙ্গার শিকার হিন্দুদের জন্য ১ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেন।[103]
২০২০ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, দিল্লি পুলিশ জানায় যে সহিংসতা তদন্তের জন্য দুটি বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠন করা হয়েছে।[104] ডিসিপি জয় তিরকি এবং ডিসিপি রাজেশ দেওকে প্রতিটি টিমে চার সহকারী কমিশনার সহ যথাক্রমে এই এসআইটির প্রধান নিযুক্ত করা হয়।[105] অপরাধ শাখার অতিরিক্ত কমিশনার বি সিং এসআইটি-এর কাজ তদারকি করেন। ২০২০ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, পুলিশ ফরেনসিক দলগুলিকেও জানানো হয় যারা প্রমাণ সংগ্রহের জন্য অপরাধের দৃশ্য দেখেছিল।[106]
২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ ১২৩ টি এফআইআর রেজিস্ট্রি করে এবং সহিংসতায় জড়িত প্রায় ৬০০ জনকে আটক করা হয়।[3] কিছু সক্রিয় অংশগ্রহণকারীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং অস্ত্র আইনের অধীনে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তাদের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজন অভিযোগ করেছে যে তাদের আটক করা অবস্থায় নির্যাতন করা হয়।[107][108][109]
পুলিশ রিপোর্ট এবং সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার চেয়ে দিল্লি হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়।[62] এটি ২৫ ফেব্রুয়ারি জরুরি শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। তবে আদালত জানিয়েছে যে আবেদনের শুনানি হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। কর্মী হর্ষ মন্দার এবং ফারাহ নকভীর দায়ের করা আবেদনে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ছাড়াও এই ঘটনা তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) চেয়েও আবেদন করা হয়। এই আবেদনে দিল্লির ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভারতীয় সেনাকে মোতায়েন করার জন্য অনুরোধ করা হয়।[62]
২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে আদালত দাঙ্গা ক্ষতিগ্রস্তদের নিকটস্থ সরকারি বা বেসরকারী হাসপাতালে পৌঁছানোর নিরাপদ উত্তরণ প্রদানের আবেদনের শুনানি শুরু করে।[110][111] মধ্যরাতের শুনানিতে আদালত পুলিশকে সুরক্ষা প্রদান এবং সমস্ত ক্ষতিগ্রস্তকে তাদের নিকটস্থ হাসপাতালে পৌঁছাতে সহায়তা করার জন্য নির্দেশ দেয়। বেঞ্চ পুলিশকে সম্মতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্যও নির্দেশনাদেয়, যাতে আহত ক্ষতিগ্রস্তদের এবং তাদের দেওয়া চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়।[112][113][114]
পরদিন আবেদনের শুনানি চলাকালীন আদালত কপিল মিশ্রের বক্তৃতার ভিডিও ক্লিপটি দেখে। আদালত তারপরে বিজেপির তিন নেতা কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর এবং পার্বশ বর্মার ঘৃণ্য ভাষণ সম্পর্কিত মামলা দায়েরকালে পুলিশকে "সচেতন সিদ্ধান্ত" নিতে বলে।[115][116]
২৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে এই আবেদনের শুনানির সভাপতিত্বকারী বিচারপতি এস মুরালিধরকে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে স্থানান্তর করা হয়। বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার জন্য দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করতে বা মামলা দায়ের করতে ব্যর্থতার জন্য দিল্লি পুলিশকে তীব্র নিন্দা জানিছিলেন।[19] তবে সরকারি সূত্রগুলি জানিয়েছে যে এটি একটি রুটিন ট্রান্সফার যা সুপ্রিম কোর্ট একপক্ষকাল আগে সুপারিশ করে।[117] বিবিসি নিউজ জানিয়েছে যে তার "দংশনমূলক মন্তব্যগুলি তার স্থানান্তরকে ত্বরান্বিত করতে পারে"। এই মামলা থেকে তাকে অপসারণের সংবাদটি উদ্বেগ প্রকাশকারী অনেক ভারতীয় দ্বারা সমালোচিত হয়।[19] কংগ্রেস পার্টি তার স্থানান্তরকে অভিযুক্ত বিজেপি নেতাদের সুরক্ষার পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে।[118] দিল্লি হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এই স্থানান্তরের সমালোচনা করে এবং সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামটিকে এটি প্রত্যাহার করতে বলে।[119]
প্রাক্তন প্রধান তথ্য কমিশনার ওয়াজাহাট হাবিবুল্লাহ এবং সামাজিক কর্মী সৈয়দ বাহাদুর আব্বাস নকভীর সাথে ভীম সেনা প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ রাবণ, ২৩ ফেব্রুয়ারির রাত থেকে সংঘটিত ঘটনাগুলির বিষয়ে পুলিশকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। তাঁর আবেদনে কপিল মিশ্রকে "দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়া ও পরিকল্পনা করার" অভিযোগও করা হয়।[120] শাহীনবাগের সরকারি সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের অপসারণ সম্পর্কিত একটি বিষয়ে হস্তক্ষেপে অ্যাডভোকেট মেহমুদ প্রচা'র মাধ্যমে এই আবেদন করা হয় এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি হওয়ার কথা বলা হয়।[62][121]
২৬ ফেব্রুয়ারি, বিষয়টি শুনানি করার সময় সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি পুলিশকে উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং সহিংসতা বন্ধ করতে যথেষ্ট ব্যবস্থা না করার জন্য সমালোচনা করে। আদালত আরও যোগ করেছে যে পুলিশ যদি সহিংসতা প্ররোচিত করে তাদের উপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করত, তবে এই সহিংসতা রোধ করা যেত। দিল্লি হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট দিল্লির ঘটনার বিষয়ে কোন আবেদন জানায়নি।[122]
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এ ২৮ শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে দিল্লীতে মুসলিম হত্যার কথা বলে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে আসতে না দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, মুসলিম লীগ এবং ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মত ইসলামী দলগুলো।[123][124][125][126] প্রেসক্লাবের সামনে আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশ ও বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ মানব বন্ধন করে।[127][128] সিলেট, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশেই জুম্মার নামাজের পর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল হয়।[129][130][131][132]
বরিশালে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিবাদ জানায়।[133]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.