হাঁপানি
শ্বাসকষ্ট সম্বলিত রোগ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হাঁপানি একটি শ্বাসকষ্ট সংবলিত রোগ। কার্যত এটি শ্বাসনালির অসুখ। এর ইংরেজি নাম অ্যাজমা যা এসেছে গ্রিক শব্দ Asthma থেকে। বাংলায় হাঁপানি। যার অর্থ হাঁপান বা হাঁ-করে শ্বাস নেয়া। হাঁপানি বলতে আমরা বুঝি শ্বাসপথে বায়ু চলাচলে বাধা সৃষ্টির জন্য শ্বাসকষ্ট।
হাঁপানি / Asthma | |
---|---|
প্রতিশব্দ | অ্যাজমা |
![]() | |
পিক ফ্লো মিটার এক্সপাইরোটারি ফ্লো-এর সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ণয় করে, এটির পর্যবেক্ষণ ও নির্ণয় উভয়রই গুরুত্ব আছে। [১] | |
বিশেষত্ব | শ্বসনতন্ত্রবিদ্যা |
লক্ষণ | সাঁসাঁ করে নিঃশ্বাস, কাশি, বুকে টানটানতা, শ্বাসকষ্টের পুনরাবৃত্ত[২] |
স্থিতিকাল | দীর্ঘ মেয়াদী[৩] |
কারণ | বংশগত[৪] |
ঝুঁকির কারণ | বায়ু দূষণ, অতিসংবেদনশীলকারক[৩] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | উপসর্গ উপর ভিত্তি করে, থেরাপি প্রতিক্রিয়া, সিপ্রোমেট্রি[৫] |
চিকিৎসা | ট্রিগার পরিহার করে, কর্টিকোস্টেরয়েড, স্যালবুটামল-এর শ্বাসগ্রহণ করা, হোমিওপ্যাথি |
সংঘটনের হার | ৩৫৮ মিলিয়ন (২০১৫)[৬] |
মৃতের সংখ্যা | ৩৯৭,১০০ (২০১৫)[৭] |
হাঁপানি হল ফুসফুসীয় শ্বাসনালির দীর্ঘ মেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ।[৩] এর বৈশিষ্ট্য হল রোগটি বিভিন্ন মাত্রায় ও বার বার লক্ষন দেখা দেওয়া এবং পরবর্তীতে চিকিৎসা না করলে খারাপ হতে থাকা, শ্বসনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হওয়া, এবং সহজেই বা অল্পতেই ব্রঙ্কোস্পাজম বা শ্বাসনালি সরু হয়ে যাওয়ার মত অবস্থায় চলে যাওয়া যার ফলে হাঁপানি বেড়ে যায়।[৮][৯] লক্ষনগুলোর মধ্যে আছে শো শো শব্দ হওয়া, কাশি, বুকে চাপ অনুভব করা (বুকের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া), এবং স্বল্প মাত্রায় শ্বাস নিতে পারা।[২] এগুলো এক দিনে একাধিকবার হতে পারে আবার এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে হতে পারে।[৩] ব্যক্তিভেদে হাঁপানির লক্ষনগুলো রাতে বেড়ে যেতে পারে বা ভারি কাজ বা ব্যায়াম বা খেলাধুলা করলেও বেড়ে যেতে পারে।[৩]
হাঁপানি জিনগত এবং পরিবেশগত কারণে হয় বলে ধারণা করা হয়।[৪] পরিবেশগত কারনগুলোর মধ্যে আছে বায়ু দূষন এবং বাতাসে এ্যালার্জেন বা এ্যালার্জি উদ্রেককারী উপাদানের উপস্থিতি।[৩] অন্য কারনগুলো হল এসপিরিনজাতীয় ঔষধ এবং বেটা ব্লক করে এমন এমন ঔষধ সেবন করা।[৩] লক্ষনের ধরন দেখে পরীক্ষা করা হয়, তার ভিত্তিতে যে ঔষধ প্রয়োগ করা হয় তা ব্যক্তির উপর কীভাবে কাজ করছে তা দেখা হয় (দীর্ঘ মেয়াদে) এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয় স্পাইরোমেট্রি। [৫] হাঁপানি কতটুকু জটিল তা বুঝার জন্য লক্ষনগুলো কত দ্রুত দেখা দেয় তা দেখা হয়, সেই সাথে এক সেকেন্ডে প্রশ্বাসের ভলিউম কতটুকু তাও যোগ করা হয় যাকে (FEV1)বলে এবং পিক ফ্লো ব্যবহার করা হয়।[১০] এটপিক এবং নন এটপিক হিসেবেও একে ভাগ করা হয় যেখানে এটপিক হল টাইপ ১ ধরনের সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দেখানো।[১১][১২]
এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করাতে পারে এমন কোন ঔষধ তেরী হয়নি, কিন্তু এটিকে সহজেই চিকিৎসা করে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাখা যায়।[৩] উপসর্গগুলো দেখা দেবার পূর্বেই যে কারনগুলো হাঁপানির উদ্রেক করে যেমন এ্যালার্জেন, শ্বাসতন্ত্রের প্রতি হুমকি এমন পরিবেশ বা উপাদান, সেগুলো বন্ধ করতে পারলে এবং সেই সাথে কর্টিকোস্টেরয়েড গ্রহণ করলে হাঁপানির উপসর্গগুলো বন্ধ করা যায়।[১৩][১৪] শুধুমাত্র কর্টিকোস্টেরয়েড দিয়ে যদি হাঁপানি নিয়ন্ত্রিত না হয়, তাহলেদীর্ঘ-মেয়াদি বেটা এগনিস্ট অথবা এন্টিলিউকোট্রিন এজেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।[১৫][১৬] যখন দ্রুত হাঁপানি বাড়তে থাকে তখন শ্বাসের সাথে গ্রহণ করা যেতে পারে স্বল্প মেয়াদি বেটা-২ এগনিস্ট যেমনসালবিউটেমল এবং কর্টিকোস্টেরয়েড যা দ্রুত রোগীর অবস্থা উন্নতি করে।[১৭] মারাত্মক উপসর্গের ক্ষেত্রে রোগীকে শিরায় কর্টিকোস্টেরয়েড, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।[১৮]
সারা বিশ্বের প্রায় ১৫ কোটিরও বেশি মানুষ অ্যাজমা বা হাঁপানীতে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫০ হাজার লোক এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং মাত্র পাঁচ শাতংশ রোগী চিকিৎসা লাভ করে।
উপসর্গসমূহ
হাঁপানির বৈশিষ্ট্য হল বারবার শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে শো শো শব্দ হওয়া ও কষ্টসহকারে শ্বাস নেয়া, বুকে চাপ ধরা বা বুকের পেশি শক্ত হওয়া, শ্বাস প্রশ্বাসের স্বল্পতা (শ্বাসকষ্ট) এবং কাশি।[১৯] উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ফুসফুস থেকে কফ তৈরি হতে পারে কিন্তু তা সহজে বের হতে চায় না।[২০] হাঁপানির মাত্রা কমে আরোগ্য লাভের সময় থুতু বেরিয়ে আসতে পারে যা দেখতে সাদা জলের মত হয় যা ইওসিনোফিল (শ্বেত রক্ত কনিকা) কারণে হয়।[২১] হাঁপানির উপসর্গ সাধারণত রাতে এবং ভোরের দিকে বেশি হতে দেখা যায়। আর কারো কারো পরিশ্রমসাধ্য কাজ যেমন ব্যায়াম, দৌড় ইত্যাদি করলে হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে। আবার ঠান্ডা আবহাওয়াতেও কারো কারো হাঁপানি বেড়ে যায়।[২২] কিছু কিছু হাঁপানি রোগী খুব কমই উপসর্গগুলোতে ভোগেন যেখানে অন্যরা ঘন ঘন এবং লাগাতর আক্রান্ত হন।[২৩]
প্রকারভেদ
মানবদেহে হাঁপানি তিনভাবে প্রকাশ হতে পারেঃ
- আপাত সুস্খ লোকের হঠাৎ শ্বাসকষ্ট আরম্ভ হয়ে কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টা পরে কষ্ট উপশম এবং রোগী আবার নিজেকে সুস্খ মনে করেন।
- শ্বাসকষ্ট হঠাৎ আরম্ভ হয়ে আর কমে না; উপরন্তু বেড়ে যেতে থাকে। কোনো ওষুধে হাঁপানি কমে না। যদি এ অবস্খা বারো ঘণ্টার বেশি স্খায়ী হয়, তবে সে ধরনের হাঁপানিকে বলা হয় স্ট্যাটাস অ্যাজম্যাটিকাস বা অবিরাম তীব্র হাঁপানি।
- একশ্রেণীর রোগীর শ্বাসপথে বাতাস চলাচলে সব সময়েই অল্প বাধা থাকে। বহু দিন এ অবস্খা থাকার ফলে কষ্টের অনুভূতি কম হয় এবং রোগী অল্প কষ্ট অনুভব করেন। কোনো কারণে শ্বাসপথে বায়ু চলাচলে আরো বাধার সৃষ্টি হলে তখনই হাঁপানির কষ্ট অনুভূত হয়।
কারণ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
হাঁপানি জটিল পরিবেশগত এবং জেনেটিক মিথস্ক্রিয়াগুলির সংমিশ্রণ দ্বারা সৃষ্ট হয় যার কারনগুলি এখনো সম্পূর্ণভাবে বোধগম্য হয় নি।[২৪][২৫] এই কারণে এর তীব্রতা এবং চিকিত্সার প্রতিক্রিয়া উভয়কেই প্রভাবিত করে।[২৬] এটা বিশ্বাস করা হয় যে হাঁপানির সাম্প্রতিক বর্ধিত হারগুলি পরিবর্তনশীল এপিজেনেটিক্স ( ডিএনএ সিকোয়েন্সের সাথে সম্পর্কিত) এবং একটি পরিবর্তিত জীবন পরিবেশের কারণে ঘটে থাকে।[২৭] ১২ বছর বয়সের আগে হাঁপানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা জিনগত প্রভাবের কারণে বেশি হয়, যেখানে ১২ বছর বয়সের পরে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা পরিবেশগত প্রভাবের কারণে বেশি হয়।[২৮]
পরিবেশগত
অ্যালার্জেন, বায়ু দূষণ এবং অন্যান্য পরিবেশগত রাসায়নিক সহ অনেক পরিবেশগত কারণগুলি হাঁপানির বিকাশ এবং বৃদ্ধির হয়।[২৯] কিছু পদার্থ আছে যেগুলি ব্যক্তিদের হাঁপানির কারণ হিসাবে পরিচিত এবং তাদের বলা হয় অ্যাজমাজেন। কিছু সাধারণ হাঁপানির কারনগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যামোনিয়া, ল্যাটেক্স, কীটনাশক, সোল্ডার এবং ঢালাইয়ের ধোঁয়া, ধাতু বা কাঠের ধূলিকণা, যানবাহন মেরামতে আইসোসায়ানেট পেইন্ট স্প্রে করা, ফর্মালডিহাইড, গ্লুটারালডিহাইড, অ্যানহাইড্রাইডস, আঠালো, রং, ধাতব কাজ করা তরল, তেলের কুয়াশা, ছত্রাক ইত্যাদি।[৩০][৩১] গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরে ধূমপান হাঁপানির মতো লক্ষণগুলির একটি বড় ঝুঁকির তৈরি করে।[৩২] ট্রাফিক দূষণ বা উচ্চ ওজোন স্তরের[৩৩] মতো পরিবেশগত কারণগুলি থেকে সৃষ্ট নিম্ন বায়ুর গুণমানের কারণে হাঁপানির বিকাশ এবং হাঁপানির তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।[৩৪] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের ক্ষেত্রে অর্ধেকেরও বেশি ঘটনা এমন এলাকায় ঘটে যেখানে বায়ুর মান EPA মানের নিচে থাকে।[৩৫] নিম্ন আয়ের এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিম্ন বায়ুর গুণমান সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।[৩৬]
গৃহমধ্যস্থ উদ্বায়ী জৈব যৌগের সংস্পর্শ হাঁপানির জন্য একটি ট্রিগার হতে পারে; উদাহরণস্বরূপ ফর্মালডিহাইড এক্সপোজার।[৩৭] PVC- এর কিছু নির্দিষ্ট প্রকারের Phthalates শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় ক্ষেত্রেই হাঁপানির সাথে যুক্ত।[৩৮][৩৯] যদিও কীটনাশকের সংস্পর্শে হাঁপানির বিকাশের হয় এই কারণটি এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।[৪০][৪১] একটি মেটা-বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্যাসের চুলাগুলি হাঁপানির জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটটি ক্ষেত্রে প্রায় একজনকে এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে।[৪২]
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল (অ্যাসিটামিনোফেন) বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং হাঁপানির মধ্যে সম্পর্ক সমর্থন করে না।[৪৩][৪৪] ২০১৪ সালের একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে প্যারাসিটামল ব্যবহার এবং হাঁপানির মধ্যে সম্পর্ক নেই যখন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বিবেচনা করা হয়।[৪৫] গর্ভাবস্থায় মায়েদের মানসিক চাপ শিশুর হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।[৪৬]
হাঁপানি ঘরের মধ্যকার অ্যালার্জেনের সংস্পর্শের সাথে সম্পর্কিত।[৪৭] সাধারণ গৃহমধ্যস্থ অ্যালার্জেনের মধ্যে রয়েছে ধুলোর মাইট, তেলাপোকা, পশুর খুশকি (পশম বা পালকের টুকরো) এবং ছাতা/ছত্রাক।[৪৮][৪৯] আক্রান্ত হবার পর ধূলিকণা কমানোর প্রচেষ্টা রোগীর লক্ষণগুলির জন্য অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।[৫০][৫১] ভবনগুলি মেরামত করে ছত্রাক কমানোর প্রচেষ্টা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হাঁপানির লক্ষণগুলিকে কমাতে সাহায্য করতে পারে তবে এটির পক্ষে প্রমান কম৷[৫২] কিছু ভাইরাল শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, যেমন respiratory syncytial virus এবং রাইনোভাইরাস[৫৩] ছোট বাচ্চারা আক্রান্ত হলে হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।[৫৪] তবে কিছু অন্যান্য সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে পারে।[৫৫]
হাইজিন হাইপোথিসিস
হাইজিন হাইপোথিসিস বিশ্বব্যাপী হাঁপানির বর্ধিত হারের অন্য একটি ব্যাখা দাড় করাতে চেয়েছে। এই মতবাদে শৈশবকালে, অ-প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসাকে হাঁপানি বাড়ার কারন হিসেবে ধরা হয়। কারন কিছু উপকারী প্যাথোজেন রয়েছে যা হাঁপানী রোধ করে। যদিও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাতে গিয়েই প্রত্যক্ষ এবং অনিচ্ছাকৃত ফলাফল হিসাবে এটি ঘটে থাকে।[৫৬][৫৭] সেইসাথে ধরা হয়েছে যে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংস্পর্শ হ্রাসের কারণ হল আংশিকভাবে, পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক সমাজে ছোট পরিবার গঠনের প্রবণতা।[৫৮] শৈশবকালে ব্যাকটেরিয়া এন্ডোটক্সিনের সংস্পর্শে হাঁপানির বিকাশ রোধ করতে পারে, তবে বয়স্ক বয়সে এই ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে ব্রঙ্কোকনস্ট্রিকশনকে উস্কে দিতে পারে।[৫৯] হাইজিন হাইপোথিসিসকে সমর্থনকারী প্রমাণের মধ্যে রয়েছে খামারে এবং পোষা প্রাণীর সাথে পরিবারে হাঁপানির হার কম।[৬০]
পূর্বে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হাঁপানির বিকাশের সাথে যুক্ত।[৬১] এছাড়াও, সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে ডেলিভারি হলে অ্যাজমার ঝুঁকির (২০-৮০% আনুমানিক) বাড়ে। এই বর্ধিত ঝুঁকি স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার অভাবকে দায়ী করা হয়। যে ব্যাকটেরিয়াগুলো নবজাতক বার্থ ক্যানেলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে অর্জিত হতো।[৬২][৬৩] হাঁপানি এবং আর্থিক সমৃদ্ধির মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে কারণ কম ধনী ব্যক্তিদের প্রায়শই ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংস্পর্শ বেশি থাকে।[৬৪]
চিকিৎসা অবস্থা
অ্যাটোপিক একজিমা, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এবং হাঁপানির এ ত্রয়ীকে অ্যাটোপি বলা হয়।[৬৫] কোন ব্যক্তির হাঁপানি হওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ঝুঁকির কারণ হল অ্যাটোপিক রোগের [৬৬] ইতিহাস থাকা। যাদের একজিমা বা হে ফিভার আছে তাদের মধ্যে হাঁপানি অনেক বেশি হারে দেখা দেয়।[৬৭] হাঁপানি ইওসিনোফিলিক গ্রানুলোমাটোসিসের সাথে পলিয়েঞ্জাইটিস (পূর্বে চুর্গ-স্ট্রস সিনড্রোম নামে পরিচিত) সাথে যুক্ত। এটি একটি অটোইমিউন রোগ এবং ভাস্কুলাইটিস।[৬৮] নির্দিষ্ট ধরণের হাইভস/ছুলি আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও হাঁপানির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।[৬৯]
স্থূলতা এবং হাঁপানির ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে এবং উভয়ই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।[৭০][৭১] চর্বি জমা হওয়ার কারণে শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং অ্যাডিপোজ টিস্যু একটি প্রদাহজনক অবস্থার দিকে ধাবিত হয়। এমন ঘটনা সহ আরো বেশ কয়েকটি কারণে স্থুলতা এবং হাঁপানি সম্পর্কযুক্ত।[৭২]
প্রোপ্রানোললের মতো বিটা ব্লকার ওষুধ এর প্রতি যারা সংবেদনশীল তাদের মধ্যে হাঁপানি শুরু করতে পারে।[৭৩] তবে কার্ডিওসিলেক্টিভ বিটা-ব্লকার যারা হালকা বা মাঝারি রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে নিরাপদ বলে মনে হয়।[৭৪][৭৫] অন্যান্য ওষুধ যা হাঁপানির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলি হল অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটরস, অ্যাসপিরিন এবং NSAIDs৷[৭৬] গর্ভাবস্থায় অ্যাসিড-দমনকারী ওষুধের ( প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরস এবং এইচ২ ব্লকার ) ব্যবহার শিশুর হাঁপানির ঝুঁকি বাড়ায়।[৭৭]
উত্তেজনা
কিছু ব্যক্তির কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে স্থিতিশীল হাঁপানি থাকবে এবং তারপরে হঠাৎ করে তীব্র হাঁপানির একটি পর্ব তৈরি হয়।[৭৮] বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন কারণের প্রতি হাঁপানীর প্রতিক্রিয়া দেখায়। বেশিরভাগ ব্যক্তিই বেশ কয়েকটি ট্রিগারিং এজেন্টের কারণে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।[৭৯]
ঘরোয়া কারণগুলি যেগুলি হাঁপানির তীব্রতা বাড়াতে পারে তার মধ্যে রয়েছে ধুলো, পশুর খুশকি (বিশেষ করে বিড়াল এবং কুকুরের চুল), তেলাপোকার অ্যালার্জেন এবং ছত্রাক।[৮০][৮১] সুগন্ধি নারী ও শিশুদের মধ্যে তীব্র আক্রমণের একটি সাধারণ কারণ। উপরের শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ উভয়ই রোগটিকে আরও খারাপ করতে পারে।[৮২] মানসিক চাপের উপসর্গগুলির কারণে অবস্থা খারাপ হতে পারে। এটা মনে করা হয় যে স্ট্রেস ইমিউন সিস্টেমকে পরিবর্তন করে এবং এইভাবে অ্যালার্জেন এবং প্রদাহ তৈরীকারী শ্বাসনালীতে প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া বাড়ায়।[৮৩][৮৪]
স্কুল-বয়সী শিশুদের মধ্যে হাঁপানির তীব্রতা শরৎকালে চরমে ওঠে, বাচ্চাদের স্কুলে যোগ দেবার পরপরই। এটি দুর্বল চিকিত্সা, অ্যালার্জেন এবং ভাইরাল এক্সপোজার বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা, সহনশীলতা সহ বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণে হাপানি বাড়াতে পারে। শরতের উদ্বেগ কমানোর সম্ভাব্য পন্থা হল, যদিও ব্যয়বহুল, স্কুলে ফেরার চার থেকে ছয় সপ্তাহ আগে মৌসুমী ওমালিজুমাব চিকিত্সা নেয়া যা শরতের হাঁপানির তীব্রতা হ্রাস করতে পারে।[৮৫]
চিকিৎসা
- হাঁপানী উপশমের প্রথম ঔষধ হলো ইনহেলার। এটা দুরকমের হয়, স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী। শ্বাস কষ্টের তাৎক্ষনিক উপশমের জন্য কয়েক রকম ঔষধ ইনহেলারের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়, যেমন, সালবুটামল, সালমেটেরোল, এবং ফোরমোটেরোল।
- হাঁপানীর আক্রমণ যেন না হয় তার জন্য ব্যবহার করা হয় স্টেরয়েড ইনহেলার। সাধারনত ফ্লুটিকাস্ন ও বুডিসোনাইড স্টেরয়েড ইনহেলার হিসাবে পাওয়া যায়। এলোপ্যাথিতে হাঁপানীর চিকিৎসায় স্টেরয়েড ইনহেলার অপরিহার্য।
- উপশমকারী দীর্ঘ মেয়াদী ঔষধ ও প্রতিরোধকারী স্টেরয়েড এক সংগে একই ইনহেলারে বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহারে এই সকল ঔষধের কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।
- হাঁপানী প্রতিরোধক হিসাবে অন্য যে ঔষধটি ব্যবহার করা হয় তার নাম মন্টিলুকাষ্ট। এটি শ্বাসনালির প্রদাহ কমিয়ে হাঁপানী আক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
- থিওফাইলিন- এই ঔষধটি শ্বাসনালির মধ্যে চক্রাকারে যে মাংশপেশী থাকে, হাঁপানীর আক্রমণের সময় যা সংকুচিত হয়ে পড়ে, সেটিকে শিথিল করে দেয়, ফলে শ্বাসনালির ভেতরের প্রশস্ততা বৃদ্ধি পায়।
- মুখে খাবার স্টেরয়েড- এটি ট্যাবলেট অথবা সিরাপ আকারে পাওয়া যায়। হাঁপানীর তীব্র আক্রমণের সময় এটি কয়েকদিন ব্যবহার করতে হয়।
প্রতিরোধ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
হাঁপানির বিকাশ রোধে নেয়া বিভিন্ন ব্যবস্থার কার্যকারিতার প্রমাণ দুর্বল।[৮৬] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাকের ধোঁয়া, বায়ু দূষণ, পারফিউম সহ রাসায়নিক বিষাক্ততা ছড়ায় এবং নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতো ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করার সুপারিশ করে৷[৮৭][৮৮] অন্যান্য প্রচেষ্টা চালানো যেতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে: জরায়ুতে ধোঁয়ার এক্সপোজার সীমিত করা, স্তন্যপান করানো এবং ডে কেয়ার বা বড় পরিবারগুলিতে একসাথে থাকা। কিন্তু এই ইঙ্গিতের জন্য সুপারিশ করার মতো কোনোটিই যথেষ্ট সমর্থিত নয়।[৮৯]
পোষা প্রাণীর সংস্পর্ষ দায়ী হতে পারে[৯০] অন্য সময়ে পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে আসার ফলাফলগুলি অনিশ্চিত। সুপারিশ করা হয় যে পোষা প্রাণীকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যদি একজন ব্যক্তির পোষা প্রাণীর প্রতি অ্যালার্জির লক্ষণ থাকে। [৯১]
গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যপান করানোর সময় খাদ্যতালিকাগত বিধিনিষেধ শিশুদের হাঁপানি প্রতিরোধে কার্যকর বলে প্রমান পাওয়া যায়নি এবং সুপারিশ করা হয় না।[৯২] ওমেগা -৩ সেবন, ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ কিছু গবেষণায় সম্ভাব্য সংকট প্রতিরোধে সাহায্য করে বলে জানা যায়। তবে প্রমাণের জন্য আরো গবেষনা প্রয়োজন।[৯৩]
কর্মক্ষেত্র থেকে সংবেদনশীল বস্তুগুলো ব্যক্তিদের কাছ থেকে হ্রাস বা নির্মূল করা কার্যকর হতে পারে।[৯৪] বার্ষিক ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে কিনা তা স্পষ্ট নয়।[৯৫] টিকাদান, তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা সুপারিশ করা হয়।[৯৬] ধূমপানে নিষেধাজ্ঞা হাঁপানির তীব্রতা কমাতে কার্যকর।[৯৭]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.