Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বিটা ব্লকার (β-ব্লকার) হচ্ছে এক শ্রেণির ওষুধ যা প্রধানত হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং প্রথমবার হার্ট অ্যাটাকের (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) পর হৃৎপিণ্ডকে পুনরায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয় (সেকেন্ডারি প্রতিরোধ)।[1] বিটা ব্লকার উচ্চ রক্তচাপ-এর চিকিৎসার জন্যও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যদিও বর্তমানে এই শ্রেণির ওষুধ উচ্চ রক্তচাপ-এর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের প্রথম পছন্দ নয়।[2]
ঔষধ শ্রেণী | |
ব্যবহার | উচ্চ রক্তচাপ, অ্যারিথমিয়া ইত্যাদি |
---|---|
জৈবিক লক্ষ্য | বিটা রিসেপ্টর |
এটিসি কোড | C07 |
বহিঃসংযোগ | |
MeSH | D000319 |
এএইচএফএস/Drugs.com | ড্রাগের শ্রেণীসমূহ |
কনজিউমার রিপোর্টস | সেরা বিক্রীত ড্রাগস |
ওয়েবএমডি | medicinenet rxlist |
বিটা ব্লকার কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া,উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বহুল মাত্রায় ব্যবহৃত হয়।,[3][4]
১৯৬২ সালে, স্যার জেমস ডব্লিউ ব্ল্যাক [5] প্রথম চিকিৎসাগতভাবে উল্লেখযোগ্য বিটা ব্লকার, প্রোপ্রানোলল এবং প্রোনেথেলল তৈরি করেন; যা পরবর্তীতে অ্যানজাইনা পেক্টরিস এর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বৈপ্লবিক উন্নতি সাধন করে [6]। অনেকেই মনে করেন তাঁর এই আবিষ্কার বিশ শতকের ক্লিনিকাল মেডিসিন ও ফার্মাকোলজিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান।[7]
মানবদেহে প্রাকৃতিকিভাবে উৎপাদিত ক্যাটেকোলামিন শ্রেণির হরমোন, যেমন: এপিনেফ্রিন (অ্যাড্রেনালিন) এবং নরএপিনেফ্রিন (নরঅ্যাড্রেনালিন) সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের বিটা-অ্যাড্রেনারজিক রিসেপ্টরের সঙ্গে বাইন্ড করার মাধ্যমে ফাইট-অর-ফ্লাইট রেসপন্স নিয়ন্ত্রণ করে।[8] বিটা ব্লকার উক্ত রিসেপ্টরসমূহ ব্লক করে। কিছু কিছু বিটা ব্লকার সব ধরনের অ্যাড্রেনারজিক বিটা রিসেপ্টর ব্লক করে, আবার কিছু কিছু মাত্র এক ধরনের রিসেপ্টর ব্লক করে। এখন পর্যন্ত তিন ধরনের বিটা রিসেপ্টরের কথা জানা যায়, যারা হলো β১, β২ এবং β৩।[9] β১ রিসেপ্টর প্রধানত হৃৎপিণ্ড এবং বৃক্কে[10], β২ রিসেপ্টর প্রধানত ফুসফুস, পরিপাক তন্ত্র, যকৃৎ, জরায়ু, ভাস্কুলার মসৃণ পেশি এবং ঐচ্ছিক পেশিতে [10] এবং β৩ রিসেপ্টর ফ্যাট টিস্যুতে (ব্রাউন অ্যাডিপোস কলা) থাকে।[11]
বিটা রিসেপ্টর হৃৎপিণ্ডের পেশি, মসৃণ পেশি, শ্বসনতন্ত্র, ধমনি, বৃক্ক এবং সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের অন্তর্গত নানা টিস্যুতে (কলা) অবস্থিত। এরা বিভিন্ন স্ট্রেস রেস্পন্সের জন্য দায়ী, বিশেষ করে এপিনেফ্রিনের উপস্থিতিতে। বিটা ব্লকার এক ধরনের কমপিটিটিভ অ্যান্টাগনিস্ট হিসেবে রিসেপ্টরে বাইন্ড করে এবং ক্যাটেকোলামিন এবং রিসেপ্টরের সংযুক্তি রুদ্ধ করে। এর ফলে স্ট্রেস হরমোনের কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
প্রাথমিক উচ্চ-রক্তচাপের চিকিৎসার ক্ষেত্রে, মূলত অ্যাটেনললের ওপর করা কিছু গবেষণার মেটা-অ্যানালাইসিসে দেখা যায় যে, বিটা ব্লকার স্ট্রোক এবং অন্যান্য রক্তসংবহনতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধে প্লাসিবোর থেকে অধিক কার্যকর। তবে এরা মূত্রবর্ধক, রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন সিস্টেম ইনহিবিটর (যেমন এসিই ইনহিবিটর) অথবা ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারের মতো কার্যকর নয়।[12][13][14][15]
প্রতিটি বিটা ব্লকারের ফার্মাকোলজিতে বড় পার্থক্য রয়েছে। তাই সব বিটা ব্লকার নিচের সকল চিকিৎসা নির্দেশনায় উপযোগী নয়।
বিটা-ব্লকারের নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে:
এছাড়া নিম্নোক্ত ক্ষেত্রেও বিটা-ব্লকার ব্যবহার করা হয়:[30]
যদিও বিটা ব্লকার হৃৎপিণ্ডের সংকোচনশীলতা কমিয়ে দেয় বলে একসময় কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওরের জন্য ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হতো, ১৯৯০ এর শেষের দিকে বিটা ব্লকার নিয়ে করা গবেষণা কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওরে মৃত্যুহার কমানোর প্রমাণ দেখিয়েছে।[33][34][35] কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওরে বিসোপ্রলল, কারভেডিলল এবং সাসটেইন্ড-রিলিজ মেটোপ্রোলল এসিই ইনহিবিটর এবং মূত্রবর্ধকের পাশাপাশি ব্যবহৃত হয়। যদিও এক্ষেত্রে সাধারণত অন্যান্য রোগের থেকে অনেক কম ডোসেজ ব্যবহার করা হয়। বিটা ব্লকার শুধু কমপেন্সেটেড, স্টেবল (সাধারণত ক্রোনিক) কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসায়ই ব্যবহৃত হয়। একিউট ডিকমপেন্সেটেড হার্ট ফেইলিওরে বিটা ব্লকার ইজেকশন ফ্র্যাকশন আরও কমিয়ে দেয়, যা রোগীর বর্তমান সমস্যা ও লক্ষণগুলো আরও গুরুতর করে তোলে।
বিটা ব্লকার মূলত তাদের হার্ট রেট হ্রাসকারী প্রভাব বা এফেক্টের জন্য সুপরিচিত। কিন্তু কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওরের ব্যবস্থাপনায় এটিই বিটা ব্লকারের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বা এফেক্ট নয়, আরও সুফল রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বিটা ব্লকার হৃৎপিণ্ডে সিমপ্যাথোলাইটিক β১ অ্যাক্টিভিটি এবং বিটা অ্যাড্রেনোসেপ্টর ইনহিবিশনের পাশাপাশি বৃক্কের রেনিন-অ্যানজিওটেনসিন সিস্টেমে (রেনিন-অ্যানজিওটেনসিন-অ্যালডোস্টেরন অ্যাাক্সিস) প্রভাব ফেলে। বিটা ব্লকারের প্রভাবে রেনিন নিঃসরণ হ্রাস পায়, যা এক্সট্রাসেলুলার ফ্লুইডের আয়তন কমিয়ে এবং রক্তের অক্সিজেন-পরিবহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের অক্সিজেন-চাহিদা কমিয়ে দেয়। হার্ট ফেইলিওরে দেখা দেওয়া বিভিন্ন সমস্যার মূলে রয়েছে হৃৎপিণ্ডে ক্যাটেকোলামিনের অ্যাক্টিভিটি বেড়ে যাওয়া। অধিক স্ট্রেস হরমোনের নানা ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়, যেমন: অধিক অক্সিজেনের চাহিদা, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে ইনফ্ল্যামেটরি মিডিয়েটরের বিস্তার, হৃৎপিণ্ডের টিস্যুর অস্বাভাবিক পুনর্গঠন। এর ফলে হৃৎপেশীর সংকোচনের ফলপ্রদতা ও পরিমাণ কমে যায় এবং ইজেকশন ফ্র্যাকশনের অবনতি ঘটে।[36] বিটা ব্লকার এই অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত সিমপ্যাথেটিক অ্যাক্টিভিটি রোধ করে এবং ধীরে ধীরে ইজেকশন ফ্র্যাকশন স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসে।
বিভিন্ন ট্রায়ালে দেখা গেছে বিটা ব্লকার ১৩ মাসের একটি পর্যায়কালে কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওর-জনিত মৃত্যুর ঝুঁকি ৪.৫% কমাতে সক্ষম হয়েছে। মৃত্যু কমানোর পাশাপাশি হাসপাতাল ভিজিট এবং ভর্তি হওয়ার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সক্ষম হয়েছে।[37]
কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওরে বিটা ব্লকারের থেরাপিউটিক ব্যবহার খুবই স্বল্প ডোজ দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়। যা সাধারণত শুরু করা হয় টার্গেট ডোজের ১/৮ দিয়ে। রোগীর হৃৎপিণ্ড ক্যাটেকোলামিনের স্টিমুলেশন বা সিম্প্যাথেটিক অ্যাক্টিভেশন এবং অ্যাড্রেনার্জিক ড্রাইভের অভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করবে।[38]
যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাংজিওলাইটিক (উদ্বেগরোধক) হিসেবে বিটা ব্লকারের ব্যবহার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃক অনুমোদিত নয়।[39] তবে গত ২৫ বছরে বিভিন্ন কনট্রোলড ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে বিটা ব্লকার উদ্বেগমূলক ব্যাধির চিকিৎসায় উপযোগী, যদিও এক্ষেত্রে এরা কীভাবে কাজ করে তা সম্পূর্ণ জানা যায়নি।[40] ফাইট-অর-ফ্লাইট রেসপন্সের (একিউট স্ট্রেস রেসপন্স) শারীরবৃত্তীয় লক্ষণগুলো (বুক ধড়ফড়, ঠাণ্ডা হাত, হাইপারভেন্টিলেশন বা শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, ঘাম ইত্যাদি) অনেকটা দূরীভূত হয়। এতে উদ্বিগ্ন ব্যক্তির কাজে মনোযোগী হতে সুবিধা হয়।
সংগীতজ্ঞ, বক্তা, অভিনেতা এবং পেশাদার নৃত্যশিল্পীরা স্টেইজ ফ্রাইট বা পারফরমেন্স অ্যাংজাইটি ও ট্রেমর প্রতিরোধ করার জন্য বিটা ব্লকার ব্যবহার করেন। স্টেইজ ফ্রাইটের জন্য বিটা ব্লকারের ব্যবহারের কথা প্রথম জানা যায় দ্য ল্যান্সেট মেডিক্যাল জার্নালে, ১৯৭৬ সালে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ৫১টি অরকেস্ট্রার অংশগ্রহণে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ সিম্ফনি অরকেস্ট্রা মিউজিশিয়ানস-এর করা একটি জরিপে দেখা যায়, ২৭% সংগীতশিল্পীই কখনো বিটা ব্লকার ব্যবহার করেছেন, যাদের ৭০ শতাংশই ওষুধগুলো বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন, চিকিৎসকের কাছ থেকে নয়।[41] বিটা ব্লকার অব্যয়বহুল এবং এদের বেশ নিরাপদ মনে করা হয়। এছাড়া এরা সংগীতশিল্পীদের পারফরমেন্সে কারিগরি দিক থেকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে অনেকে, যেমন "দ্য ইনার গেইম অফ মিউজিক"-এর লেখক ব্যারি গ্রিন এবং প্রাক্তন অলিম্পিক ডাইভিং কোচ ডন গ্রিন, যিনি জুলিয়ার্ডের শিক্ষার্থীদের প্রাকৃতিকভাবে স্টেইজ ফ্রাইট দূর করতে শেখান, বলেন বিটা ব্লকার ব্যবহারে শিল্পীদের পারফরমেন্স "প্রাণহীন এবং নকল" মনে হতে পারে।[41]
কার্ডিয়াক সার্জারি শুরুর ঠিক আগে বিটা ব্লকারের ব্যবহার অ্যারিথমিয়া (হার্ট ডিসরিথমিয়া) এবং এট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের ঝুঁকি কমাতে পারে।[42] যদিও এ দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অন্য ধরনের সার্জারির আগে বিটা ব্লকার সেবন করলে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্টো বেড়ে যেতে পারে। নন-কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য বিটা ব্লকারের ব্যবহার এট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন ও মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের ঝুঁকি হয়তো কিছুটা কমাতে পারে (তবে এ দাবির পক্ষেও শক্তিশালী কোনো প্রমাণ নেই)। তবে, মাঝারি-নিশ্চয়তাযুক্ত কিছু তথ্য পাওয়া যায় যে, বিটা ব্লকারের এ ব্যবহার হাইপোটেনশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।[43] আবার নন-কার্ডিয়াক সার্জারিতে বিটা ব্লকারের পেরিঅপারেটিভ ব্যবহার ব্র্যাডিকার্ডিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে-এমন নিম্ন-নিশ্চয়তাযুক্ত কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।[43]
বিটা ব্লকার হৃদস্পন্দনের হার হ্রাস ও স্থিতিশীল করে এবং ট্রেমর কমায়। তাই যেসব খেলায় নির্ভুল নিশানা প্রয়োজন সেসব খেলায় বেটা ব্লকার ব্যবহৃত হয়। এসব খেলার মধ্যে রয়েছে আর্চারি, শুটিং, গলফ,[44] স্নুকার[44] ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি[45] কিছু কিছু খেলার জন্য বিটা ব্লকার নিষিদ্ধ করেছে। ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ৫০-মিটার পিস্তল রৌপ্য পদকজয়ী এবং ১০-মিটার এয়ার পিস্তল ব্রোঞ্জ পদকজয়ী কিম জং-সু এর দেহে প্রোপ্রানোললের উপস্থিতি পাওয়ায় তাকে অলিম্পিক থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং পদকদ্বয় কেড়ে নেওয়া হয়।[46]
অনুরূপ কারণে শল্যচিকিৎসকরা বিটা ব্লকার ব্যবহার করেন।
ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল সংগীতজ্ঞরা ৭০ এর দশক থেকে মঞ্চ-ভীতি ও মঞ্চ-উদ্বেগ দূর করার জন্য বিটা ব্লকার ব্যবহার করে আসছেন।[47]
বিটা ব্লকার ব্যবহার-সম্পর্কিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে: বমি-বমি-ভাব, ডায়রিয়া, ব্রংকোস্প্যাসম, শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা হাত-পা, রেইনৌ সিন্ড্রোমের তীব্রতা, ব্র্যাডিকার্ডিয়া (ব্র্যাডিঅ্যারিথমিয়া বা অস্বাভাবিক কম হার্ট রেট), কম রক্তচাপ, হার্ট ফেইলিওর, হার্ট ব্লক (হৃৎপিণ্ডের ইলেক্ট্রিক কন্ডাকশন সিস্টেমের ব্লকেজ), অবসাদ, মাথা ঝিম ঝিম করা ও ঘোরা, চুলপড়া, দৃষ্টির সমস্যা, অমূলক প্রত্যক্ষণ বিভ্রম (হ্যালুসিনেশন), অনিদ্রা, দুঃস্বপ্ন, যৌন অসামঞ্জস্য, ইরেকটাইল ডিসফাঙ্কশন এবং/অথবা গ্লুকোজ ও লিপিড বিপাকে পরিবর্তন বা অসামঞ্জস্য। সম্মিলিত α1/β অ্যান্টাগনিস্ট থেরাপি অনেক সময় অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারভেডিললের ব্যবহারের সঙ্গে জেনারেলাইজড এডেমার যোগসূত্র রয়েছে।[48] ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার ভেদ করার অধিক প্রবণতার কারণে অন্যান্য বিটা ব্লকারের থেকে লাইপোফিলিক বিটা ব্লকার, যেমন প্রোপ্রানোলল এবং মেটোপ্রোললের ব্যবহারে বিভিন্ন নিদ্রা অসামঞ্জস্য যেমন অনিদ্রা, দুঃস্বপ্ন ইত্যাদি বেশি দেখা যায়।[49]
β2-অ্যাড্রেনারজিক রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্ট অ্যাক্টিভিটির বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলো (ব্রঙ্কোস্প্যাসম, পেরিফেরাল ভেসোডাইলেশান, ভেসোকনস্ট্রিকশান, গ্লুকোজ এবং লিপিড বিপাকে পরিবর্তন) β১-সিলেক্টিভ অ্যান্টাগনিস্টের (যাদের "কার্ডিওসিলেক্টিভ" বলা হয়) ক্ষেত্রে কম পরিলক্ষিত হয়। তবে উচ্চমাত্রায় সেবনের ক্ষেত্রে রিসেপ্টর সিলেক্টিভিটি হ্রাস পায়। বিটা ব্লকেড, বিশেষ করে ম্যাক্যুলা ডেন্সার বিটা-১ রিসেপ্টর ব্লকেড, রেনিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে, ফলে অ্যাল্ডোস্ট্রেরোনের নিঃসরণ হ্রাস পায়। যা হাইপোনেইট্রিমিয়া এবং হাইপারক্যালিমিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
বিটা ব্লকেডের কারণে হাইপোগ্লাইসিমিয়া হতে পারে, কারণ বিটা-২ রিসেপ্টরসমূহ সাধারণত যকৃতে গ্লাইকোজেনোলাইসিস নিয়ন্ত্রণ করে বা বৃদ্ধি করে, এবং অগ্নাশয়ে গ্লুকাগন হরমোন নিঃসৃত করে। এর সম্মিলিত ফলাফলে প্লাজমা গ্লুকোজ বৃদ্ধি পায়। তাই বিটা-২ রোধ প্লাজমা গ্লুকোজ হ্রাস করে। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বিটা-১ ব্লকারের মেটাবলিক সাইড এফেক্ট কম হয়। তবে ইনসুলিন-জনিত হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত হৃৎস্পন্দন একটি বড় লক্ষণ, যা বিটা ব্লকারের কারণে ঢাকা পড়ে যেতে পারে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া অলক্ষ্য রয়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যাকে বিটা ব্লকার-জনিত হাইপোগ্লাইসেমিয়ার অসচেতনতা বলা হয়। তাই ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে বিটা ব্লকার অতি সচেতনভাবে ব্যবহার করা উচিত।[50]
২০০৭ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, হাইপারটেনশনের জন্য মূত্রবর্ধক ও বিটা ব্লকারের ব্যবহার রোগীর ডায়াবেটিস মেলিটাস-আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে এসিই ইনহিবিটর এবং অ্যাংজিওটেনসিন ২ রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্টের ব্যবহার উল্টো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।[51] ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণে গ্রেট ব্রিটেনের ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন মূত্রবর্ধক ও বিটা ব্লকারকে হাইপারটেনশানের প্রথম চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করাকে নিরুৎসাহিত করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের গাইডলাইনে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই।[52]
বিটা ব্লকার সিলেক্টিভ আলফা-অ্যাড্রেনারজিক অ্যাগোনিস্ট ওভারডোজের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা সম্পূর্ন অনুচিত। শুধু বিটা রিসেপ্টরের ব্লকেড রক্তচাপ বৃদ্ধি করে, করোনারি রক্তপ্রবাহ, বাম ভেন্ট্রিকুলার ফাঙ্কশান, কার্ডিয়াক আউটপুট ও টিস্যু পারফিউশান হ্রাস করে, যদিও আলফা-অ্যাড্রেনারজিক সিস্টেম স্টিমুলেশনে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারে না।[চিকিৎসাবিদ্যার তথ্যসূত্র প্রয়োজন] লাইপোফিলিক বিটা ব্লকার, যেমন প্রোপ্রানলল, মেটোপ্রোলল, ল্যাবেটালল ইত্যাদি মেটঅ্যাম্ফেটামিন ওভারডোজ-জনিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং কার্ডিওভাসকুলার টক্সিসিটির চিকিৎসা ব্যবহার করা যেতে পারে।[53] মেটঅ্যাম্ফেটামিন ওভারডোজ-জনিত ট্যাকিকার্ডিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় মিক্সড আলফা এবং বিটা ব্লকার ল্যাবেটালল বেশ কার্যকর।[54] "অপরিবর্তিত আলফা স্টিমুলেশন" সমস্যাটি মেটঅ্যাম্ফেটামিন টক্সিসিটির চিকিৎসায় বিটা ব্লকারের ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।[54] স্টিমুলেন্ট ওভারডোজের ফলে সৃষ্ট হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিসের ব্যবস্থাপনার জন্য অন্যান্য উচ্চ রক্তচাপরোধী ঔষধের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভেসোডাইলেটর, যেমন নাইট্রোগ্লিসারিন, বিভিন্ন মূত্রবর্ধক, যেমন ফিউরোসেমাইড, আলফা ব্লকার, যেমন ফেন্টোলামিন।[55]
বিটা ব্লকারের কন্ট্রাইন্ডিকেশনের মধ্যে রয়েছে:[56]
ন্যাশনাল হার্ট, লাং, অ্যান্ড ব্লাড ইন্সটিটিউট (এনএইচএলবিআই) এর ২০০৭ অ্যাজমা গাইডলাইন অ্যাজমা-আক্রান্তদের জন্য নন-সিলেকটিভ বিটা ব্লকার ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয় এবং কার্ডিওসিলেক্টিভ বিটা ব্লকারকে সমর্থন করে।[57]
হালকা থেকে মাঝারি রেসপাইরেটরি উপসর্গযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রয়োজন হলে সম্ভাব্য সর্বনিম্ন ডোজে কার্ডিওসিলেক্টিভ বিটা ব্লকার (β১ ব্লকার) দেওয়া যেতে পারে।[58][59] β২ অ্যাগোনিস্ট বিটা ব্লকার-জনিত ব্রঙ্কোস্প্যাসম কিছুটা উপশম করতে পারে। এরা নন-সিলেক্টিভ বিটা ব্লকার-জনিত সমস্যার থেকে সিলেক্টিভ বিটা ব্লকারের কারণে বেড়ে যাওয়া অ্যাজমা এবং/অথবা ক্রোনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের চিকিৎসায় অধিক কার্যকর।[60]
এপিনেফ্রিন আসন্ন হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আগাম বার্তা দেয়।[61]
বিটা ব্লকারের এপিনেফ্রিন-বিরোধী প্রভাব গ্লাইকোজেনোলাইসিসে পরিবর্তন ঘটিয়ে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়ার বিভিন্ন লক্ষণ যেমন ট্যাকিকার্ডিয়া, বুক ধড়ফড়, ডায়াফোরেসিস, ট্রেমর ইত্যাদি আড়াল করার ফলে পরোক্ষভাবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিস-আক্রান্ত বিটা ব্লকার ব্যবহারকারীদের রক্তের গ্লুকোজ লেভেলের নিবিড় পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হঠাৎ সেবন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে থাইরয়েড স্টর্ম হতে পারে।[62]
পেইসমেকারের অনুপস্থিতিতে বিটা ব্লকার এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডে ইলেক্ট্রিক কন্ডাকশন অনেক কমিয়ে ফেলতে পারে, যার ফলে হার্ট রেট এবং কার্ডিয়াক আউটপুট হ্রাস পায়। ওলফ্-পার্কিনসন-হোয়াইট সিন্ড্রোম প্রদর্শনকারী ট্যাকিকার্ডিক রোগীদের ক্ষেত্রে বিটা ব্লকার বেশ সাবধানে ব্যবহার করা উচিত, কারণ এর ফলে কোনো কোনো রোগীর মারাত্মক অ্যারিথমিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এট্রিওভেন্ট্রিকুলার নোডের কন্ডাকশান মন্থর হওয়ার কারণে অ্যাকসেসরি প্যাথওয়ে দিয়ে কন্ডাকশান হয়। যদি রোগীর এট্রিয়াল ফ্লাটার সৃষ্টি হয়, এটা ১:১ কন্ডাকশানে পরিণত হতে পারে, যার ফলে ভেন্ট্রিকুলার রেট অনেক বেড়ে যেতে পারে। এমনকি এট্রিয়াল ফাইব্রিলিশনের ক্ষেত্রে ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশনও সৃষ্টি হতে পারে।
ওভারডোজের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হরমোন গ্লুকাগন[63][64] হৃৎসংকোচনের শক্তি বাড়ায়, ইন্ট্রাসেলুলার (অন্তঃকোষীয়) সাইক্লিক অ্যাডেনোসাইন মনোফসফেটের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং ভাসকুলার রেসিস্ট্যান্স হ্রাস করে। তাই বিটা ব্লকার কার্ডিওটক্সিসিটির রোগীদের জন্য গ্লুকাগন কার্যকর।[65][66] কোনো ধরনের ঔষধের মাধ্যমে কাজ না হলে তবেই সাধারণত কার্ডিয়াক পেসিং ব্যবহার করা হয়।
β২ রিসেপ্টর ব্লকেড-জনিত ব্রঙ্কোস্প্যাসমের রোগীদের চিকিৎসায় ইপরাট্রোপিয়ামের মতো অ্যান্টিকোলিনার্জিক ড্রাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। এরা হৃদরোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিটা অ্যাগোনিস্টের তুলনায় অধিক নিরাপদ। বিটা ব্লকার বিষক্রিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহারোপযোগী অন্যান্য ওষুধের মধ্যে রয়েছে সালবিউটামল এবং আইসোপ্রেনালিন।
এপিনেফ্রিন এবং নরএপিনেফ্রিন-জনিত β1 রিসেপ্টরের স্টিমুলেশন হৃৎপিণ্ডে একটি পজিটিভ ক্রোনোট্রপিক এবং আইনোট্রপিক প্রভাব সৃষ্টি করে এবং হৃৎসঞ্চালনের বেগ এবং স্বয়ংক্রিয়তা বৃদ্ধি করে।[67] কিডনিতে β1 রিসেপ্টরের স্টিমুলেশন রেনিন নিঃসরণ ঘটায়।[68] β2 রিসেপ্টরের উদ্দীপনা মসৃণ পেশীকে শিথিল করে,[69] ঐচ্ছিক পেশীতে ট্রেমর তৈরি করে,[70] এবং লিভার এবং ঐচ্ছিক পেশীতে গ্লাইকোজেনোলাইসিস বাড়ায়।[71] β3 রিসেপ্টরের স্টিমুলেশন লাইপোলাইসিস বৃদ্ধি করে।[72]
বিটা ব্লকার এই সাধারণ এপিনেফ্রিন এবং নরএপিনেফ্রিন-জনিত সিমপ্যাথেটিক অ্যাকশন রোধ (ইনহিবিট) করে,[9] তবে বিশ্রামরত ব্যক্তির ওপর এর প্রভাব খুবই নগন্য।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অর্থাৎ এরা হার্ট রেট, হৃৎসংকোচনের শক্তি,[73] ট্রেমর[74] এবং গ্লাইকোজেনোলাইসিসের ওপর মানসিক উত্তেজনা এবং শারীরিক পরিশ্রমের প্রভাব কমিয়ে আনে। বিটা ব্লকার ব্যবহারের ফলে অ্যাজমার লক্ষণসমূহ গুরুতর হতে পারে, কারণ বিটা ব্লকার ফুসফুসের ব্রংকাস সংকুচিত করে (ব্রঙ্কোকন্সট্রিকশান)।[75]
যেহেতু β২ অ্যাড্রেনোসেপ্টর ভাস্কুলার মসৃণ পেশির শিথিলতা নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা রাখে, বিটা ব্লকারের ব্যবহার কিছুটা ভেসোকন্সট্রিকশান সৃষ্টি করতে পারে। অবশ্য α১ রিসেপ্টরের ভেসোকন্সট্রিকশান β২ রিসেপ্টরের ভেসোকন্সট্রিকটিং অ্যাক্টিভিটি অপেক্ষা বেশি শক্তিশালী হওয়ায় বিটা ব্লকারের এই প্রভাব তেমন কোনো পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে না। কারণ α১ রিসেপ্টরের ইফেক্ট অধিকতর ডমিন্যান্ট। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিটা ব্লকার সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তার করে হৃৎপিণ্ডে। নতুন তৃতীয় প্রজন্মের বিটা ব্লকার আলফা-অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টরের ব্লকেডের মাধ্যমে ভেসোডায়লেশন সৃষ্টি করতে সক্ষম।[76]
ননসিলেক্টিভ বিটা ব্লকার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।[77] কীভাবে বিটা ব্লকার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে কার্ডিয়াক আউটপুটের হ্রাসপ্রাপ্তি (যা ঘটে নেগেটিভ ক্রোনোট্রপিক এবং আইনোট্রপিক এফেক্টের ফলে)[78] একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। রেনিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যাওয়া আরেকটি সম্ভাব্য কারণ। আবার লাইপোফিলিক বিটা ব্লকারসমূহ (মূলত যেগুলো ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার ভেদ করতে পারে, যেমন প্রোপ্রানলল) কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে একটি অ্যান্টিসিম্প্যাথেটিক এফেক্ট তৈরি করে, যাকে আরও একটি সম্ভাব্য কারণ ধরা যেতে পারে।
বিটা ব্লকারের অ্যান্টিঅ্যাংজাইনাল এফেক্টের মূলে রয়েছে এদের নেগেটিভ ক্রোনোট্রপিক এবং আইনোট্রপিক এফেক্ট, যাদের সম্মিলিত প্রভাবে হৃৎপিণ্ডের কাজ এবং অক্সিজেন চাহিদা হ্রাস পায়। বিটা ব্লকারের নেগেটিভ ক্রোনোট্রপিক বৈশিষ্ট্যর ফলেই মূলত এরা হার্ট রেট নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। একেক রোগের জন্য বিটা ব্লকারের ডোসেজ টাইট্রেট করে সুষমভাবে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়।
বিটা ব্লকারের অ্যান্টিঅ্যারিথমিক এফেক্ট কাজ করে সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের ব্লকেডের মাধ্যমে। সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের ব্লকেডের কারণে সাইনাস নোড ফাংকশান এবং এভি নোডের কন্ডাকশান হ্রাস পায় আর এট্রিয়াল রিফ্র্যাকটরি পিরিয়ডের কাল বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে সোটাললের উল্লেখযোগ্য অ্যান্টিঅ্যারিথমিক এফেক্ট রয়েছে এবং এটি পটাশিয়াম চ্যানেল ব্লকেডের মাধ্যমে অ্যাকশন পটেনশিয়ালের কাল দীর্ঘায়িত করে।
রেনিন নিঃসরণের সময় সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের ব্লকেডের ফলে রেনিন-অ্যাংজিওটেনসিন-অ্যাল্ডোস্টেরন সিস্টেমের মাধ্যমে অ্যাল্ডোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পায়। এছাড়া সোডিয়াম এবং পানির রিটেনশন কমার ফলে গড় রক্তচাপ হ্রাস পায়।
ইনট্রিনসিক সিম্প্যাথোমিমেটিক এফেক্ট নামেও পরিচিত। এ টার্মটি যে সকল বিটা ব্লকার একই সঙ্গে কম্পিটিটিভভাবে বিটা রিসেপ্টরে অ্যাগোনিসম এবং অ্যান্টাগোনিসম-উভয়ই প্রদর্শন করে, তাদের জন্যই ব্যবহৃত হয়। অ্যাক্টিভিটির ধরন সাধারণত এজেন্টের (এক্ষেত্রে বিটা ব্লকার) কনসেন্ট্রেশন এবং অ্যান্টাগনাইজড এজেন্টের (সাধারণত বিভিন্ন ক্যাটেকোলামিনের মতো এন্ডোজেনাস যৌগ) কনসেন্ট্রেশনের ওপর নির্ভর করে।
কিছু বিটা ব্লকার (যেমন অক্সপ্রেনোলল, পিনডোলল, পেনবিউটোলল, ল্যাবেটালল এবং অ্যাসিবিউটোলল) ইনট্রিনসিক সিম্প্যাথোমিমেটিক অ্যাক্টিভিটি প্রদর্শন করে। এই বিটা ব্লকারগুলো β-রিসেপ্টরের অ্যান্টাগনিস্ট হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কিছুটা অ্যাগোনিস্ট অ্যাক্টিভিটিও প্রদর্শন করে। তাই এই এজেন্টগুলো দীর্ঘদিন বিটা ব্লকার ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া-জনিত ব্র্যাডিকার্ডিক রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহারোপযোগী।
আইএসএ প্রদর্শনকারী এজেন্টসমূহ অ্যাংজাইনা-আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা অনুচিত, কারণ এর ফলে অ্যাংজাইনা আরও তীব্র হতে পারে। মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের (হৃৎপেশির রক্তাভাবজনিত মৃত্যু) পরও ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া এই এজেন্টগুলো অ্যাংজাইনা ও ট্যাকিকার্ডিয়ার চিকিৎসায় অন্যান্য বিটা ব্লকারের থেকে কম কার্যকর হতে পারে।[79]
কিছু কিছু বিটা ব্লকার (যেমন ল্যাবেটালল এবং কারভেডিলল) উভয় β এবং α১-অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টরের অ্যান্টাগনিজম প্রদর্শন করে, যা বাড়তি আর্টারিওলার ভেসোডায়লেটিং অ্যাকশন সৃষ্টি করে।[80][81]
ননসিলেক্টিভ বিটা ব্লকার β১ এবং β২-উভয় ধরনের রিসেপ্টরেই অ্যান্টাগনিজম প্রদর্শন করে।[82]
β১-সিলেক্টিভ বিটা ব্লকাররা কার্ডিওসিলেক্টিভ বিটা ব্লকার নামে পরিচিত।[82] কার্ডিয়াক অ্যাড্রেনোসেপ্টরের ব্লকেড সাইক্লিক অ্যাডেনোসাইন মনোফসফেটের (সিএএমপি) ওপর কাজ করে। হৃৎকোষে সেকেন্ড মেসেঞ্জার হিসেবে সিএএমপি এলটিসিসি এবং রায়ানোডাইন রিসেপ্টরকে ফসফোরিলেইট করার মাধ্যমে অন্তঃকোষীয় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যার ফলে পেশির সংকোচন ঘটে। β১ রিসেপ্টরের ব্লকেড সিএএমপির ফসফোরিলেশন করাকে বাধা দেয়, যা আইনোট্রপিক এবং ক্রোনোট্রপিক এফেক্ট হ্রাস করে। এখানে লক্ষণীয় যে, কোনো এজেন্ট কার্ডিওসিলেক্টিভ বা শুধু হৃৎপিণ্ডের β১ রিসেপ্টরে কাজ করলেও ইনট্রিনসিক সিম্প্যাথোমিমেটিক অ্যাক্টিভিটি উপস্থিত থাকতে পারে।
ট্রেমর, পোর্টাল হাইপারটেনশন, ভ্যারিসিয়াল ব্লিডিং এর চিকিৎসার জন্য একমাত্র নির্দেশিত এজেন্ট প্রোপ্রানোলল। ফিওক্রোমোসাইটোমার চিকিৎসার জন্য α-ব্লকারের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়।[48]
বিটা-১ অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টরের অ্যান্টাগনিজমের জন্য বিটা ব্লকার নতুন মেলাটোনিন সংশ্লেষণ এবং পাইনিয়াল গ্ল্যান্ড থেকে এর নিঃসরণ ব্যহত করে। কিছু কিছু বিটা ব্লকারের নিউরোসাইকিয়াট্রিক প্রতিক্রিয়ার (যেমন: ঘুম ভেঙে যাওয়া, অনিদ্রা) সম্ভাব্য কারণ এটাই হতে পারে।[100]
কিছু প্রি-ক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল গবেষণা দাবি করে বিটা ব্লকার ক্যান্সার চিকিৎসায় উপযোগী হতে পারে।[101][102] তবে অন্যান্য গবেষণা ক্যান্সারমুক্তি এবং বিটা ব্লকার ব্যবহারের মাঝে কোনো যোগসূত্র খুঁজে পায়নি।[103][104] এছাড়া ২০১৭ সালের একটি মেটা-অ্যানালাইসিস স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিটা ব্লকার ব্যবহারের কোনো সুফল প্রমাণ করতে পারেনি।[105]
বিটা ব্লকার স্কিটজয়েড পার্সোনালিটি ডিসর্ডারের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়েছে।[106] তবে স্কিটজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগের পাশাপাশি বিটা ব্লকার ব্যবহারের ফলপ্রসূতার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না।[107]
বিটা ব্লকার সেবনকারীদের জন্য কন্ট্রাস্ট এজেন্ট কন্ট্রাইন্ডিকেটেড নয়।[108]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.