ছুলি
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ছুলি বা আমবাত(ইংরেজিতে “আর্টিকারিয়া” একটি ল্যাটিন শব্দ “আর্টিকা” হতে এসেছে যা অর্থ করলে দাঁড়ায় “পুড়ে যাওয়া”),[৪] সাধারণত যা বুঝায় একধরনের চর্মরোগ যা ফ্যাকাসে লাল রংয়ের, উত্থিত, চামড়ার উপর ছোট ছোট লাল ফুঁসকুড়ির মত দেখায় । ছুলি বা আমবাত চামড়ার উপর একটি জ্বলন্ত বা যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে ।[৫]
ছুলি | |
---|---|
প্রতিশব্দ | Urticaria |
বাহুতে ছুলি | |
বিশেষত্ব | চর্মবিজ্ঞান, রোগশয্যা রোগ-প্রতিরোধ বিদ্যা, এলার্জোলজি |
লক্ষণ | লাল, উত্থাপিত, চুলকানি দাগ[১] |
স্থিতিকাল | কয়েক দিন[১] |
কারণ | সংক্রমণের পর, এলার্জি প্রতিক্রিয়া এর ফলাফল[২] |
ঝুঁকির কারণ | হে ফেভার, হাঁপানি[৩] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | লক্ষণগুলির উপর ভিত্তি করে, প্যাচ পরীক্ষা[২] |
চিকিৎসা | অ্যান্টিহিস্টামিন, কর্টিকোস্টেরয়েড, এন্টি লিউকোটিন[২] |
সংঘটনের হার | ~২০%[২] |

এগুলো সাধারণত অ্যালার্জিক কারণে হয়ে থাকে, তবে অনেক ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক কারণ ব্যতিরেকে অন্য কারণেও রক্তস্ফোট হয়ে থাকে ।
অধিকাংশ দীর্ঘস্থায়ী রক্তস্ফোট অজানা ইডিওপ্যাথিক কারণে হয়ে থাকে । প্রায় ৫০% রোগীর ক্ষেত্রে যাদের দীর্ঘস্থায়ী ছুলি হয়, এর কারণ একটি স্বয়ংক্রিয় ইমিউন প্রতিক্রিয়া ।[৬]
লক্ষণ ও উপসর্গ
ছুলি বা আমবাতের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে ত্বকের কোনও অংশে লাল রংয়ের ফুঁসকুড়ির মত দেখতে কোনো কিছুর আবির্ভাব হওয়া । এগুলি আকারে পিন এর সমান অথবা কয়েক ইঞ্চি ব্যাসের হতে পারে ।
আক্রান্ত স্থানে কখনও কখনও জ্বালা-পোড়ার মত অনুভূতি হতে পারে ।
কারণ
ছুলি বা আমবাত হওয়র কারণকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে । পরিবেশে অবস্থিত বিভিন্ন উপাদান ছুলি বা আমবাত হওয়ার কারণ ঘটাতে পারে, এর মধ্যে গ্রহণকৃত ঔষধ[৭], খাবার কিংবা পরিবেশের অন্যান্য উপাদান[৮] অন্তর্ভুক্ত। গ্রীষ্মের গরম আবহাওয়া ও বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগের সংক্রমণ বেশি হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেট খেলে সমস্যাটি হতে পারে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলেও এটি হয়। একই কক্ষে অনেক মানুষ থাকলে, একই জিনিসপত্র ব্যবহার করলে ও অপরিচ্ছন্ন থাকলে এ ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে।
রোগ নির্ণয়
দীর্ঘস্থায়ী ছুলি বা আমবাতের কারণ খুব কম ক্ষেত্রেই শনাক্ত করা যেতে পারে ।[৯] কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগ সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়ার জন্য একটি দীর্ঘ সময়ের নিয়মিত এলার্জি টেস্টিং করার জন্য অনুরোধ করা হয়ে থাকে ।[১০][১১] দীর্ঘস্থায়ী ছুলিতে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণ এলার্জি টেস্টিং এর মাধ্যমে কোনও ফল পাওয়া গেছে বলে এখনও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি ।[১০][১১] তাই দীর্ঘমেয়াদী ছুলিতে আক্রান্ত রোগীর জন্য সাধারণ এলার্জি টেস্টিং সুপারিশযোগ্য নয় ।[৯][১২]
রোগ ব্যবস্থাপনা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী ছুলি উভয়ের ক্ষেত্রে থেরাপির প্রধান অবলম্বন হল রোগ সম্পর্কে রোগীর শিক্ষা, ছুলি বা আমবাত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণসমূহ এড়িয়ে চলা এবং এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা ।
দীর্ঘমেয়াদী ছুলি বা আমবাতের চিকিৎসা কঠিন হতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে রোগের ফলাফল হিসাবে রোগীর বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অক্ষমতা দেখা দিতে পারে ।
এন্টিহিস্টামিন
চিকিৎসার প্রথম ধাপ হচ্ছে হিস্টামিন এইচ ওয়ান রিসেপ্টর এর প্রতিবন্ধক হিসাবে যে সকল এন্টিহিস্টামিন কাজ করে তা ব্যবহার করা । প্রথম জেনারেশনের এন্টিহিস্টামিন যেমন ডাইফেনহাইড্রামিন(বেনাড্রিল), হাইড্রোঅক্সিজিন(আটারাক্স), কেন্দ্রীয় ও পেরিফেরাল উভয় এইচ ওয়ান রিসেপ্টরকে ব্লক করে এবং খুবই উপশমকারী হতে পারে । দ্বিতীয় জেনারেশনের এন্টিহিস্টামিনগুলো যেমন লোরাটাডিন(ক্লারিটিন), সেটিরিজিন(জাইরটেক) অথবা ডেসলোরাটাডিন(ক্লারিনেক্স) ইত্যাদির ব্যবহারও এক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারিতা দিতে পারে । সর্বাধিক উপকারিতা লাভের জন্য শুধুমাত্র রোগের তীব্রতার সময় ঔষধ সেবন না করে প্রতিদিন এন্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা উচিত ।[১৩]
সিস্টেমিক স্টেরয়েড ব্যবহার
ক্রনিক ছুলি উপশমে অনেক ক্ষেত্রে গ্লুকোকর্ডিকয়েড ব্যবহার যথেষ্ট কার্যকর, তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন অ্যাড্রিনাল প্রতিরোধ, ওজন বৃদ্ধি, অস্টিওপরোসিস সমস্যা, হাইপারগ্লাইসেমিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে । সেইহেতু এসকল ওষুধ দীর্ঘসময় ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়ে থাকে ।[১৪]
লিউকোট্রিন-রিসেপ্টর এন্টাগোনিস্ট
মাস্ট সেল হতে হিস্টামিন এর সাথে লিউকোট্রিন নির্গত হয় । মন্টেলিউকাস্ট এবং জাফিরলিউকাস্ট এর মতো ওষুধগুলো লিউকোট্রিন রিসেপ্টর ব্লক করে এবং ছুলি রোগের উপশমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । তবে এ ওষুধগুলো এনএসএআইডি(NSAID) সংশ্লিষ্ট ক্রনিক ছুলিতে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর হয়ে থাকে ।
অন্যান্য চিকিৎসা
দুরারোগ্য ছুলি উপসর্গ উপশমে ব্যবহৃত অন্যান্য ওষুধ হতে পারে প্রদাহবিরোধী ওষুধ । ওমালিজুমাব এবং ইমিউনোসাপ্রেসানট সম্ভাব্য প্রদাহরোধী ওষুধ হতে পারে যে ওষুধগুলোতে ডেপসন, সালফাসেলাজিন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ইত্যাদি উপাদান রয়েছে । ডেপসন হচ্ছে একটি সালফোন এন্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট যা প্রোস্টাগ্লানডিন ও লিউকোট্রিন এর কার্যকলাপকে দমন করে থাকে । এ সকল ওষুধ দুরারোগ্য ছুলির চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।[১৫]
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.