Loading AI tools
ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠী যারা সিলেটি ভাষায় কথা বলে উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সিলেটি (সিলেটি: ꠍꠤꠟꠐꠤ) হচ্ছে একটি ইন্দো-আর্য ভাষিক জনগণ যারা সিলেটি ভাষায় কথা বলে এবং বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ ও ভারতের রাজ্য আসামের বরাক উপত্যকায় বাস করে। বাংলাদেশ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিলেটি ভারতের শিলং (মেঘালয়) ও ত্রিপুরা এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে বসবাস করে। সিলেটি আঞ্চলিক পরিচয় মূলত ভাষা এবং সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত যেটি সিলেটিদের সাংস্কৃতিক এবং জাতিগত বাঙালি পরিচয়ের সঙ্গেও একইসঙ্গে সমানভাবে সংযোজিত।[2][3][4]
ꠍꠤꠟꠐꠤ সিলেটি | |
---|---|
মোট জনসংখ্যা | |
আনু. ~২কোটি ১৮লাখ [1] | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
বাংলাদেশ (সিলেট বিভাগ) ভারত (বরাক উপত্যকা, ত্রিপুরা, শিলং) মধ্যপ্রাচ্য (জিসিসি দেশগুলো) পশ্চিমবিশ্ব (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র) | |
ভাষা | |
সিলেটি (প্রধান), বাংলা (অধিকাংশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে) | |
ধর্ম | |
ইসলাম (সংখ্যাগুরু), হিন্দু (বৃহৎ সংখ্যালঘু) ছোট সংখ্যালঘু: | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
ইন্দো-আর্য সম্প্রদায় |
মৌলভীবাজার জেলার পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনে প্রমাণিত আছে যে দশম শতাব্দীর রাজা শ্রীচন্দ্রের আমলে, শ্রীহট্টের (সিলেটের পূর্বনাম) অধিবাসীদেরকে (স্থানীয় লোকদেরকে) "বঙাল" নাম দিয়ে পরিচিতি দেওয়া হতো এবং ব্রাহ্মণ অভিবাসীদেরকে "দেশান্তরীয়" ডাকা হতো।[5]
১৯৪৭-এর দেশ ভাগের আগমুহূর্ত পর্যন্ত, সিলেটিরা ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসামের সাথে ছিল।[6] সিলেটি প্রবাসী মূলত অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতার প্রয়োজনে আবির্ভূত হয়, অন্যদিকে উন্নততর কর্মসংস্থান সন্ধানী অল্পবয়সী যুবকেরা সিলেটি প্রবাসী প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দেন।[7] ব্রিটিশ রাজের অস্থিরতার সময়, সিলেটের যেসব যুবকেরা ব্রিটিশ বণিক হিসেবে কাজ করত, তারা উন্নততর জীবন সন্ধানের জন্য জাহাজ ছেড়ে লন্ডনে নেমে পড়ে এবং অন্যরা মাতৃভূমিতে প্রবেশের জন্য বিকল্প পথ খুঁজে পায়, যা শৃঙ্খল স্থানান্তর ঘটায় এবং লন্ডনের পূর্ব প্রান্তে কর্মক্ষেত্রের আশেপাশে তাদের স্থান করে দেয়। ফলে লুটন, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, লিডস, ব্র্যাডফোর্ড, ওল্ডহ্যাম ইত্যাদির মতো শিল্প নগরী এবং শহরগুলিতে ভাল কাজের পরিবেশ লাভ করায় বিপুল পরিমাণ সিলেটি এসব জায়গায় আসতে থাকে।[8] সিলেটিরা একটি নাবিক জাতি; সমুদ্র যাত্রা সমস্ত সিলেটিদের রক্তে সমাহিত হয়ে আছে, এবং যা সিলেটের যুবকদের জন্য একটি দুঃসাহসিক অভিযান ছিল; এবং ব্রিটিশ রাজ কর্তৃক ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন অনুসারে তাদের জমিদারি পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত দেশের সমগ্র সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন এবং সমুদ্রে যাওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। সিলেটের তরুণরা প্রধানত কলকাতা, মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে উঠে। প্রথম দিককার কিছু সিলেটি নাবিক ব্রিটেন এবং আমেরিকা পরিদর্শন করে এবং কর্মসংস্থান চায়; যদিও ম্যাগনা কার্টা লিবার্টটামের অনুসারে, তাদের উপর কোন আইনানুগ নিষেধাজ্ঞা ছিল না যাতে তারা স্বাধীনভাবে ব্রিটেন প্রবেশ করতে বা বের হতে পারে; কিছু লেখক বিক্ষিপ্তভাবে বলেন যে সিলেটি নাবিকরা জানত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে যেরূপ প্রয়োজন ছিল, মাতৃভূমিতে প্রবেশে তেমন অভিপ্রায় ঘোষণা করতে হয় না। প্রথম দিকের সংগৃহীত ইতিহাস সিলেটি প্রবাসী এবং সিলেটি নাবিকদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ নির্দেশ করে।[9]
সিলেটি প্রবাসী বলতে সিলেট বিভাগের বংশোদ্ভূতদের বোঝায়, যারা সিলেট বিভাগ থেকে এসেছেন, এবং সিলেটের সাথে যাদের একটি নির্দিষ্ট দেশে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সিলেটি প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ, বিশেষত যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও মধ্য প্রাচ্য এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ মিলিয়ে। ২০০৮-এর একটি গবেষণায় দেখা যায়, ব্রিটেনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সিলেটি প্রবাসী বসবাস করে, যেখানে ৫,০০,০০০ লোক সিলেটি ভাষায় কথা বলে, যা যুক্তরাজ্যে বাস করা মোট বাংলাদেশীদের ৯৫%।[10] ২০০৯ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এর প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি।[11] বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সিলেটি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণ করা ব্যতীত বাংলাদেশে সিলেটিরা প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত হয়েছে এবং উন্নয়ন উদ্যোগের অভাবে সিলেটি সম্প্রদায়ের লোকেরা চরমভাবে সরকারি উদ্যোগের অভাব বোধ করছে।[12] নব্য-শাস্ত্রীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, দরিদ্র লোকেরা সবচেয়ে ধনী দেশগুলোতে পাড়ি জমাবে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার লোকেরা আরো বেশি জনবিরল অঞ্চলে চলে যাবে। যদিও এই তত্ত্ব স্পষ্টভাবে সমাধান করা হয়নি। মেধা পাচার মূলত হৃদয় থেকে হৃদয়ের একটি স্থানান্তর ছিল, বিশেষত অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে, যখন সিলেটের তরুণরা আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক জনসংখ্যার বাংলাদেশ থেকে স্পিটলফীল্ডের জনাকীর্ণ রাস্তায় চলে আসে, বাংলাদেশের সকল এলাকা থেকে দরিদ্ররা সিলেট চলে আসে একটি উন্নততর জীবনের জন্য, যা সিলেটে অধিক জনসংখ্যা এবং সম্পদের অপ্রাপ্যতা সৃষ্টি করে। [13]
সিলেটিরা ইতিহাস জুড়ে সংস্কৃত সাহিত্যে অবদান রেখেছে। ১৫ শতকে, জগদীশ তর্কালঙ্কার বেশ কয়েকটি সংস্কৃত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, যার মধ্যে অনেকগুলি অসংখ্য খণ্ডে তৈরি হয়েছিল। তর্কালঙ্কারের 'শব্দশক্তিপ্রকাশিকা' ছিল সংস্কৃত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিখ্যাত পাঠ্যপুস্তক। তাঁর সমসাময়িক, লাউড়ের অদ্বৈত আচার্য, যোগবশিষ্ঠ-ভৈষ্ঠ এবং গীতা বৈশ্য নামে দুটি মধ্যযুগীয় সংস্কৃত গ্রন্থ রচনা করেন।[14] ১৬ শতকে, সিলেটের বিখ্যাত লেখকদ্বয় মুরারি গুপ্ত চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রথম সংস্কৃত জীবনী রচনা করেন এবং রঘুনাথ শিরোমণি সংস্কৃতে ৪০টি গ্রন্থ রচনা করেন।[15][16] হিন্দুধর্মের প্রধান গ্রন্থ মহাভারতের প্রথম বাংলা অনুবাদ ১৭ শতকে সিলেটের শ্রী সঞ্জয় লিখেছিলেন।[17][18]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.