Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ম্যাডিসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ও ড্যান কাউন্টির আসন। ২০১৯ সালে এর প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ২,৫৯,৬৮০।[1] এটি জনসংখ্যায় উইসকনসিনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও যুক্তরাষ্ট্রের ৮২তম বৃহত্তম শহর। ম্যাডিসন উইসকনসিনের সবচেয়ে বর্ধিষ্ণু শহর।[2] এটি ম্যাডিসন মেট্রোপলিটন এলাকার প্রধান অংশ।
মেন্ডোটা হ্রদ, মনোনা হ্রদ, কেগোনসা হ্রদ ও ওয়াসেবা হ্রদের চতুর্দিকে অবস্থিত ভূমি ও স্থলসন্ধিতে এর অবস্থান। উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয় এখানেই অবস্থিত । এছাড়াও এখানে রয়েছে উইসকনসিন রাজ্য ক্যাপিটল ভবন ও হেনরি ভিলাস চিড়িয়াখানা। ম্যাডিসন বরাবরই প্রগতিশীল কার্যক্রমের কেন্দ্র। ম্যাডিসনের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ভূমিকা বিদ্যমান।[3][4]
ম্যাডিসনে অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় অবস্থিত। সেগুলো হলো- এপিক সিস্টেমস, আমেরিকান ফ্যামিলি ইনস্যুরেন্স, প্রোমেগা, আমেরিকান গার্ল , সাব-জিরো ও ল্যান্ডস এন্ড। এছাড়াও ম্যাডিসনে গুগলের আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে।[5]
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেমস ম্যাডিসনের নামানুসারে শহরটির নাম হয় ম্যাডিসন।
ইউরোপীয়দের আগমনের পূর্বে ১২,০০০ বছর ধরে ম্যাডিসনে মানববসতি ছিল।[6] ১৮০০ সালের দিকে এটি হো-চাঙ্ক বা উইনিবাগো নামে পরিচিত ছিল। আদিবাসী আমেরিকানরা একে তায়কোপেরা অভিহিত করত, যার অর্থ চার হ্রদের(মেন্ডোটা হ্রদ, মনোনা হ্রদ, ওয়াসেবা হ্রদ,কেগোনসা হ্রদ) ভূমি।
১৮২৯ সালে ম্যাডিসনে ইউরোপীয় আধিপত্যের সূচনা হয়। মেন্ডোটা হ্রদ ও মনোনা হ্রদের স্থলসন্ধিতে ফেডারেল আদালতের বিচারক জেমস ডুয়ান ডোটি ৪ বর্গকিলোমিটার জমি ক্রয় করেন। তিনি জমি ক্রয়ের জন্য ১,৫০০ ডলার ব্যয় করেন। ১৮৩৬ সালে উইসকনসিন ভূখণ্ড সৃষ্টি হলে বেলমন্ট শহরে বিধানসভার কার্যক্রম শুরু হয়। ডোটি বিধানসভার সদস্যদের মহিষের চামড়ার পোশাকদানের প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি ভোটারদের হ্রাসকৃত মূল্যে জমিদানেও সম্মত হন।[7] তিনি জেমস স্লটারের সাহায্যে ম্যাডিসন এবং সিটি অব ফোর লেকস শহর একীভূত করেন।
ডোটি জেমস ম্যাডিসনের নামানুসারে শহরটির নাম দেন ম্যাডিসন। এছাড়াও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী ৩৯ ব্যক্তির নাম অনুযায়ী শহরগুলোর সড়কের নামকরণ করেন।[8] ১৮৩৬ সালের ২৮ নভেম্বর বিধানসভা ম্যাডিসন শহরকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
১৮৩৭ সালে উইসকনসিন ক্যাপিটল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ও ১৮৩৮ সালে বিধানসভার সদস্যরা সেখানে প্রথম সাক্ষাৎ করেন। ১৮৩৯ সালের ৯ অক্টোবর কিন্টজিং প্রিচেট ড্যান কাউন্টির নিবন্ধকের কার্যালয়ে মানচিত্র জমা দেন।[9] ১৮৪৬ সালে একটি গ্রাম হিসেবে ম্যাডিসন স্থানীয় শাসনের আওতাভুক্ত হয়। তখন এর বাসিন্দা ছিলেন ৬২৬ জন। ১৮৪৮ সালে উইসকনসিন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর ম্যাডিসন আগের মতই এর রাজধানী থেকে যায়। পরের বছর এখানে উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৪ সালে মিলওয়াকি-মিসিসিপি রেলসড়ক ম্যাডিসনকে সংযুক্ত করে। ১৮৫৬ সালে এর একটি অংশ শহর হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়; বাকি অংশ টাউন অব ম্যাডিসন নামে অপর একটি ক্ষুদ্র শহর হিসেবে স্বীকৃতি পায়।[10] ১৮৬৩ সালে একটি নতুন ক্যাপিটল ভবন নির্মিত হলেও ১৯০৪ সালে এটি পুড়ে যায়। ১৯০৬-১৯১৭ সালে তৃতীয়বার ক্যাপিটল ভবন নির্মিত হয়। [11]
গৃহযুদ্ধের সময় এটি ইউনিয়ন বাহিনীর কার্যপরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। মিলওয়াকি, পূর্ব ওয়াশিংটন, উইনিবাগো ও নর্থ স্ট্রিটের সংযোগস্থল ইউনিয়ন কর্নার্স নামে পরিচিত, কারণ ইউনিয়ন বাহিনী কনফেডারেটদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার আগে এখানে একটি সরাইখানায় বিরতি নিত। সামরিক প্রশিক্ষণ, চিকিৎসাদান ও কনফেডারেট সৈন্যদের আটকে রাখার জন্য এখানে র্যান্ডাল শিবির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল,যা গৃহযুদ্ধের পর এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশে পরিণত হয়। ১৯১৭ সালে সেখানে একটি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়।
১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে ম্যাডিসনের মিফলিন ও বাসেট স্ট্রিটে প্রতিসংস্কৃতির (Counter culture) সূচনা ঘটে। সেখানে অনোকগুলো ত্রিতল অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ছিল, যেখানে প্রতিসংস্কৃতি সমর্থনকারী ছাত্ররা বসবাস করত। রিপাবলিকান পার্টির মেয়র বিল ডাইকের শাসনামলে কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের সংঘাত ক্রমশ তীব্র হয়ে ওঠে।
১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে এখানকার অধিবাসীরা ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে। ১৯৬৭ সালে ডাউ কেমিক্যাল কোম্পানিতে সংঘটিত বিক্ষোভে ৭৪ জন আহত হন। ১৯৬৯ সালে আফ্রিকান-আমেরিকানদের অধিকার আদায়ের জন্য ধর্মঘট সংঘটিত হয়। ১৯৭০ সালে তারা সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে আগুন লাগিয়ে দেয়। একই বছর সেনাবাহিনীর গাণিতিক গবেষণা কেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটে, যার ফলে রবার্ট ফাসনাখট নামক একজন গবেষক মারা যান।
১৯৭৯ সালের "দি ওয়ার অ্যাট হোম" তথ্যচিত্রে ম্যাডিসনের যুদ্ধবিরোধী সংগ্রাম চিত্রিত হয়েছে। ডেভিস মারানিসের ২০০৪ সালের "দে মার্চড ইনটু সানলাইট" গ্রন্থেও এর বর্ণনা রয়েছে।
২০১১ সালে গভর্নর স্কট ওয়াকার একটি বিল প্রস্তাব করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল সরকারি কর্মজীবীদের শ্রম ইউনিয়নের দর কষাকষির ক্ষমতা সীমিতকরণ।[12] ১০,০০০-১,০০,০০০ মানুষ ম্যাডিসনে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। [13]
ম্যাডিসন মধ্য-দক্ষিণ উইসকনসিনে অবস্থিত। এর অবস্থান মিলওয়াকি শহরের ৭৭ মাইল পশ্চিমে ও শিকাগো শহরের ১২২ মাইল উত্তর-পশ্চিমে।
আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ম্যাডিসনের আয়তন ৯৪.০৩ বর্গমাইল। এর ৭৬.৭৯ বর্গমাইল স্থল ও ১৭.২৪ বর্গমাইল জল।[14]
ইয়ারাহা থেকে উৎপন্ন চারটি হ্রদের প্রবাহের কারণে শহরটির আরেক নাম চার হ্রদের শহর। তবে ওয়াবেসা ও কেগোনসা হ্রদ ম্যাডিসনের অভ্যন্তরে নয়; বরঞ্চ এর পশ্চিমে অবস্থিত। উইংগ্রা নামক একটি ক্ষুদ্র হ্রদও এ শহরে প্রবাহিত হয়।
ম্যাডিসনের জলবায়ু আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। শীতকালে কখনো কখনো তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। যদিও গ্রীষ্মকালে অধিকাংশ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়, শীতকালেও প্রচুর বৃষ্টি হয়।
২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ম্যাডিসন শহরের জনসংখ্যা ২,৩৩,২০৯। শহরে ৪৭,৮২৪টি পরিবার বসবাস করছিল। শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,১৭২.৬ জন। বাসিন্দাদের ৭৮.৯% শ্বেতাঙ্গ, ৭.৩% কৃষ্ণাঙ্গ, ০.৪% আদিবাসী ও ৭.৪% এশীয়। বাসিন্দাদের ৬.৮% হিস্পানিক অথবা লাতিনো।
২০০০ সালের তথ্যানুযায়ী পরিবারগুলোর গড় আয় ৫৯,৮৪০ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৩৬,৭১৮ ও নারীদের গড় আয় ৩০,৫৫১ ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ২৩,৪৯৮ ডলার। ৫.৮% পরিবার ও ১৫% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের ১১.৪% এর বয়স ১৮ এর নিচে ও ৪.৫% এর বয়স ৬৫ এর উপরে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.