Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মানব চালিত পরিবহন হল মানুষ এর পেশি শক্তি দিয়ে ব্যক্তি এবং/বা পন্যের পরিবহন। পশু চালিত পরিবহন এর মত, অনাদিকাল থেকে হাটা, দৌড়ান এবং সাঁতার এর মতই মানব চালিত পরিবহনের প্রচলন ছিল। আধুনিক প্রযুক্তি মেশিন দিয়ে মানব শক্তিকে উন্নত করেছে।
যদিও গাড়ি গতি এবং বহন ক্ষমতা বাড়িয়েছে, তারপরও বেশ কিছু ধরনের মানব চালিত পরিবহন কম খরচ, অবসর, শারীরিক ব্যায়াম এবং পরিবেশবাদের জন্য এখনও জনপ্রিয়। বিশেষ করে অনুন্নত এবং দুর্গম এলাকায় মানব চালিত পরিবহনই একমাত্র ভরসা।
১৯৮৯ সালে সমগ্র আমেরিকা রেসে একটি দল(টিম স্ট্রবেরী)[1] প্রত্যেক সাইকেল আরোহীর শক্তি পরিমাপ করতে পিছন চাকায় হাব, সেন্সর এবং হাতলে প্রসেসর বসানো একটি পরীক্ষামূলক ডিভাইস ব্যবহার করে ছিল।
পরীক্ষাগারের পরীক্ষায় একজন মধ্যম আকারের সাইকেল আরোহী ১ ঘণ্টার ও বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতি কেজিতে ৩ ওয়াট(যেমন ৭০ কেজির আরোহীর ক্ষেত্রে প্রায় ২০০ ওয়াট), সেরা শৌখিন আরোহী প্রতি কেজিতে ৫ ওয়াট এবং সেরা ক্রীড়াবিদ প্রতি কেজিতে ৬ ওয়াট শক্তি অর্জন করতে পারে। সেরা পূর্ণগতির ট্রাক-সাইকেল আরোহী মুহুর্তের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০০০ ওয়াট বা প্রতি কেজিতে ২৫ ওয়াট তুলতে পারে, সেরা সড়ক সাইকেল আরোহী ৫ ঘণ্টার সড়ক দৌড় শেষ করার শেষ সময়ে মুহুর্তেই তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ১৬০০ থেকে ১৭০০ ওয়াট তুলতে পারে।
সবচেয়ে দক্ষ মানুষের চালিত ভুমির যানবাহন হল বাইসাইকেল[3]। একই শক্তি রুপান্তরের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সাধারণ সাইকেলের তুলনায় হেলানো সাইকেল(রিকম্বেন্ট বাইসাইকেল) সমতল ভুমি বা পাহাড়ের ঢালে বায়ুগতিবিদ্যার কারণে অনেক দ্রুত চলে।
ঠান্ডা এবং/অথবা আর্দ্র দেশগুলিতে আবহাওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়ায় ভেলোমোবাইল ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। মালবাহী বাইসাইকেলগুলি পণ্য পরিবহন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। রিক্সা ট্যাক্সিক্যাব হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
২০১৬ সালে নেভাদার ব্যাটল মাউন্টেন এ এ্যারোভেলো সাইকেল আরোহী টড রেইচর্ট মানব শক্তিচালিত গতির রেকর্ড অর্জন করেছেন যা প্রতি ঘণ্টায় ১৪২.০৪ কিমি বা ৮৮.২৬ মাইল।[4]
১৯৯৫ এর ৩ অক্টোবর ইউটা এর বনভিলের সল্টফ্লাটে ডাচ সাইকেল আরোহী ফ্রেড রমপেলবার্গ প্রতি ঘণ্টায় ২৬৮.৮ কিমি বা ১৬৭.০ মাইল এর রেকর্ড করছিলেন যখন সাইকেল আরোহণ ছিল মোটর চালিত গতি-গাড়ির জাগরনের মুহুর্তে।[5] গতি- গাড়ির জাগরণ বায়ুর গতিজনিত বিপরীতটান কমিয়ে দেয় যা রম্পেলবার্গ ০ এর কাছাকাছ নিয়ে গিয়েছিল।[6]
গ্রেগ কোলডজিয়েজিক্ক, ১৭ জুলাই, ২০০৬ এ ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকায় একটি রেস ট্র্যাকে আন্তর্জাতিক মানব চালিত যানবাহন সমিতি এবং গিনেজ বিশ্ব রেকর্ড উভয় দ্বারা স্বীকৃত দুটি বিশ্ব রেকর্ড বানিয়েছিল। প্রথম রেকর্ড হল মানব শক্তি দ্বারা ২৪ ঘণ্টা ভ্রমণে সর্বাধিক দূরত্ব অতিক্রমের জন্য(১০৪১ কিমি বা ৬৪৭ মাইল) এবং দ্বিতীয়টি হল বিশ্বের দ্রুততম সময় ট্রায়াল (১০০০কিমি বা ৬২১ মাইল) জন্য (২৩ ঘণ্টা, ২ মিনিট)।[7] ৬ আগস্ট, ২০১০ এ ক্রিস্টিয়ান ভন অ্যাসেবার্গ তার মিলান এসএল ভেলোমোবাইল দিয়ে ১০০০ কিমি ১৯ ঘণ্টা ২৭ মিনিট এবং ১২১৯ কিমি ২৪ ঘণ্টায় অতিক্রম করে উভয় রেকর্ড ভাঙ্গেন। একই রেসে ১২ ঘণ্টার রেকর্ড বাড়িয়ে ৬৬৪.৯৭ কিমি(৪১৩ মাইল) করেন যা গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৫৫.৪১ কিমি বা ৩৪ মাইল।[8]
১৯৬৯ এ ছোট শহর উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় শিল্পীরা চলমান ভাস্কর্য এর রেস শুরু করে যা এখন বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২ মাইল(৬৮ কিমি) এর, তিন দিনের পথ এর, মানব চালিত ভাষ্কর্যের রেস এবং কাউন্টি বিস্তৃত ইভেন্ট এ। এটা প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৩৬ সালে পেডেলিয়ানথ সম্পূর্ণ মানব ক্ষমতার অধীনে স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করে কিন্তু ইটালিয়ান প্রতিযোগিতার পুরস্কারটি অর্জনের জন্য এই দুরত্ব যথেষ্ট ছিল না যার জন্য এটি নির্মিত হয়েছিল। পাইলট এর উল্লেখযোগ্য শক্তি এবং ধৈর্যের ফলাফল এই ফ্লাইট হতে বোঝা যায় এবং এটি সাধারণ মানুষের অর্জনযোগ্য নয়। ১৯৩৭ এবং ১৯৩৮ সালে গুলতি (Catapult) ব্যবস্থা ব্যবহার করে ৯ মিটার (৩০ ফুট) উচ্চতায় প্লেনটি চালু করে আবার চেষ্টা করা হয়েছিল। গুলতি (Catapult) ব্যবস্থায় বিমানটি সফলভাবে প্রতিযোগিতায় উল্লিখিত ১ কিমি (০.৬২ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করেছে, কিন্তু টেকঅফ পদ্ধতির কারণে পুরস্কার পায়নি।[9][10][11]
৯ নভেম্বর ১৯৬১ সালে সাউথহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটির মানব চালিত বিমান দিয়ে ডেরেক পিগগট প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নিয়মিত সম্ভাব্য মানব শক্তিচালিত বিমানের উড্ডয়ন এবং অবতরণ(গ্লাইডারের মত নয়) করেছিলেন।
সম্ভবত সবচেয়ে সুপরিচিত মানুষের চালিত বিমান হল গসামের অ্যালবাট্রস, যা ১৯৭৯ সালে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছিল।
এফএআই দ্বারা স্বীকৃত বর্তমান দূরত্ব এবং সময়কালের রেকর্ড হল, ৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট এ ১১৫.১১ কিমি (৭১.৫৩ মি) এর একটি সরল দূরত্ব, যা ১৯৮৮ সালের ২৩ এপ্রিল এ ক্রিট এর হেরাক্লিওন থেকে স্যান্টোরিন পর্যন্ত কানেলস কানেলোপোলোস পরিচালিত একটি এমআইটি দ্যডালাস ৮৮ দিয়ে অর্জিত হয়েছিল।
বর্তমান গতি রেকর্ড মোনার্ক বি এর, ১৯৮৩ সালে এমআইটি'র একটি দল দ্বারা নির্মিত বিমানে ১.৫ কিলোমিটার (১ মাইল) ত্রিকোণাকার কোর্সে ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা (১৯ মাইল) এর উপর গতির জন্য ২০০০০ পাউন্ডের ক্রিমার পুরস্কার জিতেছিল।
প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যবেক্ষিত মানব শক্তিচালিত হেলিকপ্টার দ্য ভিঞ্চি তৃতীয় মাটি ছেড়ে ছিল ১৯৮৯ সালে। ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর ক্যাল পল সান লুইস ওবিস্পো এ ছাত্ররা ডিজাইন এবং নির্মান করেছিল। এটি ৭.১ সেকেন্ডে ৮ ইঞ্চি (২০ সেমি) উচ্চতায় উড়ে। দ্বিতীয়টি ছিল ১৯৯৪ সালে ইউরি আই, জাপানে নিহন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নকশা এবং নির্মান করেছিল। এটি ১৯.৪৬ সেকেন্ডে ৮ ইঞ্চি (২০ সেমি) উচ্চতায় উড়ে। ১৩ জুন ২০১৩ তারিখে, এরিভেলো এটলাস ফ্লাইটটি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রথম ছিল যা ৬৪ সেকেন্ড স্থায়ী এবং ৩.৩ মিটার উচ্চতা পৌঁছে সিকরস্কি পুরস্কার জিতেছে।
ফরাসি আবিষ্কর্তারা মানুষের চালিত আকাশযান এবং বেলুন তৈরি করেছে। এইক্ষেত্রে সৌর বেলুন এবং সৌর আকাশযান হল নতুন।[12] কারণ প্লবতা দিয়ে উড়ে এবং মানব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয়।[13][14]
মানব শক্তিচালিত জলযানের মধ্যে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক, ঐতিহাসিক এবং সুপরিচিত ঐতিহ্যবাহী এবং খেলাধুলারযান যেমন ক্যানু, দাঁড় টানা নৌকা এবং গ্যালি। পরিচালনার জন্য জল পাখা এবং জল চাকা যুক্ত আরো আধুনিক নৌকার ক্ষেত্রে মানুষের শক্তিচালিত নৌকা শব্দটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। এগুলো প্যাডেল বা বৈঠার তুলনায় আরো দক্ষ এবং বিশেষ করে এতে হাতের পেশীর তুলনায় শক্তিশালী পায়ের পেশী ব্যবহার করতে হয়, এমনকি অ-ক্রীড়াবিদদের ক্ষেত্রেও এগুলো দক্ষ। এক্ষেত্রে সামনে যাওয়ার জন্য কিছুটা দক্ষতা থাকতে হবে এবং পেডালসের মত যান রিসোর্টে বেশ জনপ্রিয়।
হাইড্রোফয়েলে পানির বাধা কম থাকায় মানব শক্তি দিয়ে সর্বোচ্চ গতি তোলা যায় এবং অল্প জায়গায় অন্যান্য নৌকার থেকে দ্রুত ঘোরান যায়। ২০০৮ সালের ২৮ অক্টোবর এমআইটি প্রফেসর মার্ক ড্রেলা পানিতে বিশ্ব গতির রেকর্ড তৈরি করেন, যিনি মানব চালিত হাইড্রোফয়েল, ডিকাভেটেটর, দিয়ে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস এর বস্টন এ ১০০ মিটারের কোর্সে ১৮.৫ নট (ঘণ্টায় ২১.৩ মাইল)(সেকেন্ডে ৯.৫৩ মিটার) দ্রুতি তৈরি করেছিলেন।
১৯৮৯ সালে, ফ্লোরিডায় ১৭টি যান নিয়ে প্রথম মানব-চালিত আন্তর্জাতিক সাবমেরিন রেস (আইএসআর) অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আরও ৯ টি রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো দুই বছর পর পর ফ্লোরিডার জল থেকে সরিয়ে নৌবাহিনীর সারফেস ওয়ারফেয়ার সেন্টারের কার্ডারক বিভাগ এর ডেভিড টেলর মডেল অববাহিকায় অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালে ৯ম আইএসআর এ (যেখানে ২৩ টি সাবমেরিন অংশগ্রহণ করেছিল) অনেক নতুন রেকর্ড গড়েছিলঃএকক যানের ক্ষেত্রে ওমর টিমের ওমর৫, ২০০৪ সালে ওমর ৪ এর করা ৭.১৯ নটের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন গতির রেকর্ড ৮.০৩৫ নট অর্জন করেছিল। এছাড়াও ওমর ৬, নন-প্রপেলার চালিত যানের জন্য ৪.৬৪২ নটের গতির একটি রেকর্ড ছিনিয়ে নেয়।[15]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.