শারীরিক ব্যায়াম
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শারীরিক ব্যায়াম বা শরীরচর্চা হল যেকোন শারীরিক কার্যক্রম যা শারীরিক সুস্থতা রক্ষা বা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর অপর একটি অর্থ হল শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত আন্দোলন | বিভিন্ন কারণে ব্যায়াম করা হয়, যেমন- মাংসপেশী ও সংবহন তন্ত্র সবল করা, ক্রীড়া-নৈপুন্য বৃদ্ধি করা, শারীরিক ওজন হ্রাস করা বা রক্ষা করা কিংবা শুধু উপভোগ করা। নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। হৃদ্ররোগ, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা রোধে শারীরিক ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করতে, ইতিবাচক আত্মসম্মান বৃদ্ধিতে, সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায়, ব্যক্তির যৌন আবেদন বৃদ্ধি, শরীরের সঠিক অনুপাত অর্জনে শারীরিক ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুস্বাস্থ্যের স্থূলতা একটি সমকালীন বিশ্বব্যাপী সমস্যা। ব্যায়াম শরীরের স্থূলতা রোধে কাজ করে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা শারীরিক ব্যায়ামকে “অলৌকিক” এবং “আশ্চর্যজনক” ঔষধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা রক্ষার্থে ব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রমাণিত।
মানব শরীরের উপর প্রভাবের ভিত্তিতে শারীরিক ব্যায়ামকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়:[1]
অভিযোজন প্রকার | সহনশীলতা প্রশিক্ষণ প্রভাব |
শক্তি প্রশিক্ষণ প্রভাব |
উৎস |
---|---|---|---|
পেশী হাইপারট্রফি | ↔ | ↑ ↑ ↑ | [5] |
পেশীর শক্তি ও ক্ষমতা | ↔ ↓ | ↑ ↑ ↑ | [5] |
পেশী তন্তুর মাপ | ↔ ↑ | ↑ ↑ ↑ | [5] |
ম্যায়োফ্রাইবিলার প্রোটিন সংশ্লেষ | ↔ ↑ | ↑ ↑ ↑ | [5] |
স্নায়বপেশী অভিযোজন | ↔ ↑ | ↑ ↑ ↑ | [5] |
অ্যানোরিবিক ক্ষমতা | ↑ | ↑ ↑ | [5] |
ল্যাকটেট সহনশীলতা | ↑ ↑ | ↔ ↑ | [5] |
ধৈর্য ধারণক্ষমতা | ↑ ↑ ↑ | ↔ ↑ | [5] |
কৈশিক বৃদ্ধি (আঙ্গিওজেনেসিস) | ↑ ↑ | ↔ | [5] |
মাইটোকন্দ্রিয়াল জৈবজনন | ↑ ↑ | ↔ ↑ | [5] |
মাইটোকন্ড্রিয়াল ঘনত্ব এবং অক্সিডেটিভ ফাংশন | ↑ ↑ ↑ | ↔ ↑ | [5] |
হাড়ের খনিজ ঘনত্ব | ↑ ↑ | ↑ ↑ | [5] |
স্ফীত চিহ্নিতকারী | ↓ ↓ | ↓ | [5] |
নমনীয়তা | ↑ | ↑ | [5] |
অঙ্গবিন্যাস | ↔ | ↑ | [5] |
দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ক্রিয়াকলাপ এর ক্ষমতা | ↔ ↑ | ↑ ↑ | [5] |
বেসাল বিপাকীয় হার | ↑ | ↑ ↑ | [5] |
শতকরা শরীরের চর্বি | ↓ ↓ | ↓ | [5] |
চর্বিহীন শরীরের ভর | ↔ | ↑ ↑ | [5] |
বিশ্রামরত অবস্থায় ইনসুলিন মাত্রা | ↓ | ↓ | [5] |
ইনসুলিন সংবেদনশীলতা | ↑ ↑ | ↑ ↑ | [5] |
গ্লুকোজ চ্যালেঞ্জের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া | ↓ ↓ | ↓ ↓ | [5] |
বিশ্রামের হৃৎস্পন্দন | ↓ ↓ | ↔ | [5] |
স্ট্রোক ভলিউম (বিশ্রাম এবং সর্বাধিক) | ↑ ↑ | ↔ | [5] |
সিস্টোলিক রক্তচাপ (বিশ্রাম) | ↔ ↓ | ↔ | [5] |
ডায়স্টোলিক রক্তচাপ (বিশ্রাম) | ↔ ↓ | ↔ ↓ | [5] |
কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি প্রোফাইল | ↓ ↓ ↓ | ↓ | [5] |
টেবিল টীকা
|
শারীরিক সুস্থতা বজায় ও শরীরের ওজনের ভারসাম্য রাখার ক্ষেত্রে ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়া শরীরের হাড়ের দৃঢ়তা বজায় রাখা, মাংসপেশীর সবলতা এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহের স্বাভাবিক চলনক্ষমতা বজায় রাখতে ব্যায়াম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। শরীর ও মনস্তত্ত্বের সার্বিক সুস্থ্যতা বজায়, অস্ত্রপ্রচারকালীন ঝুকি হ্রাস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যায়ামের ইতিবাচক ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে। ব্যায়াম করার সময় শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশীর সংকোচন ঘটে, এসময় মাইয়োকিন নামের এক জাতীয় রাসায়নিক প্রদার্থ শরীরে নিঃসৃত হয় যা নতুন টিস্যুর উৎপাদনে, টিস্যুর মেরামত এবং প্রদাহী রোগসমূহের ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
শারীরিক ব্যায়াম শরীরে করটিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, করটিসল বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য দায়ী। ব্যায়াম থুতুতে নাইট্রাইটের মাত্রা বৃদ্ধি করে, এটি নাইট্রিক অক্সাইডে পরিবর্তিত হয় ফলে শরীরের কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অ্যাথলেটদের থুতুতে নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা দ্বারা তাদের প্রশিক্ষণের অবস্থা নির্ণয় করা হয়।
খাওয়ার আগে সহনশীলতা বৃদ্ধিকারী ব্যায়ামসমূহ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শারীরিক ব্যায়ামের অভাব হৃদরোগের প্রবণতা ১৭% বৃদ্ধি করে, বার্ধক্য অর্জন ত্বরাণ্বিত করে এবং স্তন ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১০% বৃদ্ধি করে। সবাত ও অবাত, দুই ধরনের ব্যায়ামই হৃদযন্ত্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্যায়ামের কারণে হৃদযন্ত্রের প্রাচীরের পুরুত্ব বৃদ্ধি পায়, যা শরীরের জন্য উপকারী।
ব্যায়ামের কারণে সব মানুষ সমান উপকৃত হয় না। তবে স্বাভাবিকভাবে প্রায় সবারই ব্যায়ামের কারণে শারীরিক সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে সবাত ব্যায়ামের ফলে। এর ফলে অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এসমস্ত উপকারের সাথে সঠিক পুষ্টি গ্রহণও সম্পর্কিত। ব্যায়ামের কারণে শরীরের সার্বিক অবস্থার উন্নতি মানুষভেদে বিভিন্ন – এটা অ্যাথলেটদের সাথে সাধারণ মানুষদের অন্যতম বড় শারীরবৃত্তীয় পার্থক্য। গবেষণায় দেখা গেছে মধ্য বয়সে নিয়মিত ব্যায়ামের কারণে পরবর্তিতে শারীরিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.