Loading AI tools
হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে রাক্ষসরাজ রাবণের স্ত্রী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অনুসারে, মন্দোদরী (সংস্কৃত: मंदोदरी Mandodarī, আক্ষরিক অর্থে "কোমল উদর বিশিষ্টা";[2]) ছিলেন লঙ্কার রাক্ষস রাজা রাবণের রাজমহিষী। রামায়ণ-এ তাকে সুন্দরী, ধর্মপ্রাণা ও নীতিপরায়ণা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পৌরাণিক "পঞ্চকন্যা"-র (পঞ্চসতী, যাঁদের নাম উচ্চারণ করলে পাপ দূর হয় বলে হিন্দুদের বিশ্বাস) অন্যতম।
মন্দোদরী ছিলেন অসুররাজ ময়াসুর ও অপ্সরা হেমার কন্যা। মন্দোদরীর তিন পুত্র ছিল: মেঘনাদ (ইন্দ্রজিৎ), অতিকায় ও অক্ষয়কুমার। রামায়ণের কোনো কোনো সংস্করণ অনুযায়ী, মন্দোদরী রামের পত্নী সীতারও গর্ভধারিণী মা। উল্লেখ্য, সীতাকেই তার স্বামী রাবণ অন্যায়ভাবে চুরি করে এনেছিলেন। স্বামীর দোষ সত্ত্বেও মন্দোদরী তাকে ভালবাসতেন এবং তাকে সত্যপথে চলার উপদেশ দিতেন। মন্দোদরী বারবার সীতাকে রামের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাবণকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু রাবণ তার কথায় কর্ণপাত করেননি। রামায়ণে রাবণের প্রতি মন্দোদরীর ভালবাসা ও আনুগত্যের প্রশংসা করা হয়েছে।
রামায়ণের একাধিক সংস্করণে রামের বানরসেনার হাতে মন্দোদরীর হেনস্থার উল্লেখ পাওয়া যায়। কোনো কোনো সংস্করণে বলা হয়েছে, তাকে ব্যবহার করে বানরেরা রাবণের যজ্ঞ ভণ্ডুল করেছিল; কৌশলে তার কাছ থেকে রাবণের মৃত্যুবাণের অবস্থান জেনে নিয়েছিলেন।
উত্তর রামায়ণ গ্রন্থে মন্দোদরীর জন্মবৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে: ঋষি কশ্যপের পুত্র ময়াসুর হেমা নামে এক অপ্সরাকে বিবাহ করেন। তাদের দুই পুত্র হয় - মায়াবী ও দুন্দুভি। কিন্তু তারা অনেক দিন ধরে একটি কন্যাসন্তান প্রাপ্তির ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। তাই তারা শিবের তপস্যা শুরু করেন।[3]
এমন সময় মধুরা নামে এক অপ্সরা কৈলাস পর্বতে শিবের পূজা করতে আসেন। পার্বতীর অনুপস্থিতির সুযোগে শিব রতিক্রিয়ার লিপ্ত হন। পরে পার্বতী ফিরে এসে মধুরার স্তনে শিবের গায়ের ছাই দেখতে পান। ক্রুদ্ধ হয়ে পার্বতী মধুরাকে অভিশাপ দেন বারো বছর ব্যাঙ হয়ে থাকতে। শিব মধুরাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন যে বারো বছর পরে সে আবার এক সুন্দরী নারীতে পরিণত হবে এবং এক মহাপরাক্রমী বীরের সঙ্গে তার বিবাহ হবে। বারো বছর পর মধুরা পুনরায় এক সুন্দরী নারীতে পরিণত হন। তখন তিনি কুয়োর ভিতর থেকে চিৎকার করতে থাকেন। কাছেই ময়াসুর ও হেমা তপস্যা করছিলেন। তারা তার ডাকে সাড়া দেন এবং তাকে পালিতা কন্যারূপে গ্রহণ করেন। তারা তাকে মন্দোদরী নামে প্রতিপালন করতে থাকেন।[3]
মায়াসুরের বাড়িতে এসে রাবণ মন্দোদরীর প্রেমে পড়ে। অনতিকাল পরেই রাবণ বৈদিক মতে মন্দোদরীকে বিবাহ করেন। রাবণের ঔরসে মন্দোদরীর তিনটি পুত্র জন্মায়: মেঘনাদ, অতিকায় ও অক্ষয়কুমার।[3]
রাবণের দোষ সত্ত্বেও মন্দোদরী তাকে ভালবাসতেন এবং তার পরাক্রমের জন্য গর্ব অনুভব করতেন। নারীর প্রতি রাবণের দুর্বলতাও মন্দোদরী খুব ভালভাবে অবগত ছিলেন।[1][4] ধর্মপ্রাণা নারী হিসেবে মন্দোদরী রাবণকে সঠিক পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করতেন। কিন্তু রাবণ সর্বদাই তার উপদেশ উপেক্ষা করতেন। রাবণ যখন মানুষের ভাগ্যনিয়ন্ত্রক দেবগোষ্ঠী নবগ্রহকে পরাভূত করেন, তখন মন্দোদরী তাকে বারণ করেছিলেন। তিনি বেদবতীকে অপমান করতেও বারণ করেছিলেন। উল্লেখ্য, বেদবতীই জন্মান্তরে সীতা রূপে রাবণের মৃত্যুর কারণ হন।[1]
রাবণ বিষ্ণুর অবতার তথা অযোধ্যার নির্বাসিত যুবরাজ রামের স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে আনেন। মন্দোদরী সীতাকে রামের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও, রাবণ তাতে কর্ণপাত করেননি। মন্দোদরী জানতেন, সীতার প্রতি রাবণের আকর্ষণ তার মৃত্যুর কারণ হবে।[1][4]
বাল্মীকি রামায়ণে মন্দোদরীকে সুন্দরী নারীর রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। রামের বানর বার্তাবাহক হনুমান সীতার সন্ধানে লঙ্কায় এলে, তিনি মন্দোদরীর সৌন্দর্যে বিস্মিত হয়ে প্রথমে তাকেই সীতা বলে ভুল করেন।[3] শেষে যখন হনুমান সীতাকে খুঁজে পান তখন রাবণ সীতাকে ভয় দেখাচ্ছিলেন। রাবণ ভয় দেখিয়ে সীতাকে বিবাহে রাজি করাতে চাইছিলেন। কিন্তু সীতা তা করতে অস্বীকার করলে, তিনি তরবারি নিষ্কাষিত করে সীতার মুণ্ডচ্ছেদ করতে যান। মন্দোদরী সেই সময় রাবণকে বাধা দিয়ে সীতার প্রাণরক্ষা করেন। মন্দোদরী বলেন যে, নারীহত্যা মহাপাপ। তাই সীতাকে হত্যা করা রাবণের শোভা পায় না। মন্দোদরী উপদেশ দেন, রাবণ যেন সীতাকে বিবাহের ইচ্ছা ত্যাগ করে তার অন্যান্য মহিষীদের সম্ভোগ করেন।[5] মন্দোদরী সীতাকে তার অপেক্ষা কম সুন্দরী ও নিচকূলজাত মনে করলেও, রামের প্রতি সীতার ভক্তি সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন এবং সীতাকে দেবী শচী ও রোহিণীর সঙ্গে তুলনা করেন।[4]
শান্তিপূর্ণ উপায় সীতা উদ্ধারের আশা না দেখে শেষ পর্যন্ত রাম রাবণের বিরুদ্ধে লঙ্কায় যুদ্ধ ঘোষণা করে দেন। শেষ যুদ্ধের আগে মন্দোদরী শেষবার রাবণকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছিল।[6] শেষ পর্যন্ত মন্দোদরী এক বাধ্য ও বিশ্বস্ত স্ত্রীর মতো রাবণের পাশে এসে দাঁড়ান।[4] যদিও তিনি তার পুত্র মেঘনাদকে রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার উপদেশ দিয়েছিলেন।[7]
বাল্মীকি রামায়ণ-এর বর্ণনা অনুযায়ী: সকল পুত্র ও যোদ্ধা নিহত হলে রাবণ বিজয় সুনিশ্চিত করতে এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। রাম হনুমান ও বানর-যুবরাজ অঙ্গদের নেতৃত্বে এক বানর সৈন্যদল যজ্ঞ পণ্ড করার জন্য প্রেরণ করেন। অঙ্গদ মন্দোদরীকে রাবণের সামনে টেনে নিয়ে আসেন। মন্দোদরী রাবণের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকেন। তিনি রাবণকে মনে করিয়ে দেন যে, রাম যা করছেন তা তার স্ত্রীর জন্যই করছেন। ক্রুদ্ধ হয়ে রাবণ যজ্ঞাসন থেকে উঠে আসেন এবং অঙ্গদকে তরবারি দিয়ে আঘাত করতে যান। যজ্ঞ পণ্ড হয়। অঙ্গদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়ায় তিনি মন্দোদরীকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যান। মন্দোদরী পুনরায় সীতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাবণের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু রাবণ তাতে কর্ণপাত করেননি।[8] রামায়ণের অন্যান্য সংস্করণে আরও ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কৃত্তিবাসী রামায়ণ-এ বলা হয়েছে, বানরেরা মন্দোদরীকে টেনে এনে তার পোশাক ছিঁড়ে দিয়েছিলেন। বিচিত্র রামায়ণ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, হনুমান মন্দোদরীর হেনস্থা করেছিলেন। থাই রামায়ণ রামাকিয়েন-এ মন্দোদরীর প্রতীকী ধর্ষণের উল্লেখ আছে। এখানে বলা হয়েছে, হনুমান রাবণের রূপ ধরে এসে মন্দোদরীকে সম্ভোগ করেন। এর ফলে মন্দোদরীর সতীত্ব নষ্ট হয় এবং যেহেতু মন্দোদরীর সতীত্বই রাবণের জীবন রক্ষা করছিল, সেহেতু এই ঘটনা রাবণের মৃত্যুর কারণ হয়।[9]
শেষ যুদ্ধে রাম রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। সাধারণ বাণে রাম রাবণকে বধ করতে সক্ষম হননি। তাকে একটি বিশেষ মৃত্যুবাণের সাহায্য নিতে হয়েছিল। বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে, ইন্দ্র রামকে এই বাণটি দিয়েছিলেন। কিন্তু রামায়ণের অন্যান্য সংস্করণে বলা হয়েছে, বাণটি মন্দোদরীর শয়নকক্ষে তার শয্যার নিচে লুকানো ছিল। মন্দোদরী যখন রাবণের মঙ্গলকামনায় পার্বতীর পূজা করছিলেন, সেই সময় হনুমান ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে মন্দোদরীর কাছে আসেন। তিনি মন্দোদরীর বিশ্বাস অর্জন করে সুকৌশলে রাবণের মৃত্যুবাণ কোথায় আছে, তা জেনে নেন। পরে হনুমান বাণটি চুরি করে রামকে দেন। রাম সেই বাণ দিয়ে রাবণ বধ করেন।[10] তারপর বিধ্বস্ত অবস্থায় রাবণের মৃতদেহের কাছে এসে শোক প্রকাশ করতে থাকেন মন্দোদরী।[4][11] উক্ত যুদ্ধে মন্দোদরী তার স্বামী, পুত্র ও সকল নিকটাত্মীয়কে হারিয়েছিলেন।[12]
রাবণের মৃত্যুর পর, রামের উপদেশ অনুযায়ী বিভীষণ মন্দোদরীকে বিবাহ করেন। যদিও বিভীষণের নিজেরও এক স্ত্রী ছিল। একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, রাবণ মাতৃতান্ত্রিক জাতির প্রতিনিধি ছিলেন। তাই তার মৃত্যুর পর শাসনক্ষমতা পেতে বিভীষণ রাজমহিষীকে বিবাহ করতে বাধ্য হন।[13] অপর একটি মতে, রাজমহিষীকে বিবাহ করা সম্ভবত অনার্য সভ্যতার লক্ষণ।[12] মন্দোদরী ও বিভীষণের বিবাহ ছিল "রাজনৈতিক কূটবুদ্ধিপ্রসূত"। এই বিবাহ কোনোভাবেই "পারস্পরিক দৈহিক আকর্ষণে"র ভিত্তিতে হয়নি।[13] সম্ভবত রাজ্যের উন্নতি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে এবং রাজকীয় ক্ষমতা ভোগ করতে মন্দোদরী বিভীষণকে বিবাহ করতে রাজি হয়েছিলেন।[12]
বাল্মীকি রামায়ণে মন্দোদরীকে সীতার মা বলে উল্লেখ করা না হলেও, পরবর্তীকালে রচিত রামায়ণের কয়েকটি সংস্করণে মন্দোদরীকে সীতার মা, অথবা অন্তত তার জন্মের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অদ্ভুত রামায়ণ-এর বর্ণনা অনুযায়ী: রাবণ ঋষিদের হত্যা করে তাদের রক্ত একটি বৃহৎ কলসে সঞ্চয় করে রাখতেন। ঋষি গৃৎসমদ দেবী লক্ষ্মীকে কন্যারূপে পাওয়ার জন্য তপস্যা করছিলেন। তিনি দর্ভ ঘাস থেকে দুগ্ধ সংগ্রহ করে তা মন্ত্রপূত করে একটি পাত্রে সঞ্চয় করছিলেন যাতে লক্ষ্মী সেখানে অবতীর্ণ হতে পারেন। রাবণ এই দুগ্ধ ঋষিরক্তের কলসে ঢেলে দেন। ঋষিরক্তকে বলা হয় সকল বিষের চেয়েও বিষাক্ত। মন্দোদরী রাবণের অপকর্মে মর্মাহত হয়ে তাই এই বিষাক্ত রক্ত পান করে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু রক্ত পান করার ফলে গৃৎসমদ সঞ্চিত দুগ্ধের প্রভাবে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। লক্ষ্মী তার গর্ভে প্রবেশ করেন। মন্দোদরী তার কন্যার ভ্রুণটি কুরুক্ষেত্রে মাটির তলায় প্রোথিত করেন। রাজা জনক তা আবিষ্কার করেন এবং কন্যার নাম রাখেন সীতা।[14][15]
দেবীভাগবত পুরাণ-এ বলা হয়েছে: রাবণ যখন মন্দোদরীকে বিবাহ করতে চান, তখন ময়াসুর রাবণকে সাবধান করে বলেন যে, মন্দোদরীর কোষ্ঠীতে আছে, তার প্রথম সন্তান তার বংশের ধ্বংসের কারণ হবে। তাই এই সন্তানটিকে জন্মমাত্রই হত্যা করতে হবে। ময়াসুরের উপদেশ অগ্রাহ্য করে রাবণ মন্দোদরীর প্রথম সন্তানকে একটি ঝুড়িতে করে জনকের নগরীতে রেখে আসেন। জনক তাকে দেখতে পান এবং সীতারূপে পালন করেন।[14] বাসুদেবহিন্দি, উত্তর পুরাণ ইত্যাদি জৈন রামায়ণেও সীতাকে রাবণ ও মন্দোদরীর কন্যা বলা হয়েছে। এই সব গ্রন্থেও আছে যে, সীতা রাবণ ও তার বংশের ধ্বংসের কারণ হবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল বলে, রাবণ তাকে পরিত্যাগ করেন।[16]
মালয় সেরি রামা ও জাভানিজ রামা কেলিং গ্রন্থে রয়েছে, রাবণ রামের মা মন্দোদরীকে বিবাহ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার পরিবর্তে তারই মতো দেখতে এক ছদ্ম-মন্দোদরীকে রাবণ বিবাহ করেন। রামের পিতা সেই ছদ্ম-মন্দোদরীকে সম্ভোগ করেছিলেন। তার ঔরসে ছদ্ম-মন্দোদরীর গর্ভে সীতার জন্ম হয়। এইভাবে সীতা নামেমাত্র রাবণের কন্যারূপে পরিচিত হন।[17]
আনন্দ রামায়ণ অনুসারে, রাজা পদ্মাক্ষের পদ্মা নামে এক কন্যা ছিল। তিনি ছিলেন লক্ষ্মীর অবতার। যখন পদ্মার বিবাহ স্থির হয়, তখন রাক্ষসরা রাজাকে হত্যা করে। শোকাহতা পদ্মা আগুনে ঝাঁপ দেন। রাবণ যখন পদ্মার দেহটি পান তখন তা পাঁচটি রত্নে পরিণত হয়েছিল। রাবণ একটি পেটিকায় ভরে সেটিকে লঙ্কায় নিয়ে আসেন। মন্দোদরী পেটিকা খুলে ভিতরে পদ্মাকে দেখতে পান। তিনি রাবণকে উপদেশ দেন পিতার মৃত্যুর কারণ দুর্ভাগিনী পদ্মা সহ পেটিকাটি জলে ভাসিয়ে দিতে। রাবণ যখন পেটিকার ঢাকনা বন্ধ করছিলেন, তখন পদ্মা রাবণকে অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, তিনি লঙ্কায় ফিরে আসবেন এবং রাবণের মৃত্যুর কারণ হবেন। রাবণ পেটিকাটি জনকের নগরীতে প্রোথিত করেন। জনক পদ্মাকে পেয়ে সীতারূপে পালন করেন।
অহল্যা দ্রৌপদী কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা
পঞ্চকন্যা স্মরে নিত্যং মহাপাতক নাশনম্।।
অহল্যা, দ্রৌপদী, কুন্তী, তারা ও মন্দোদরী - এই পঞ্চকন্যাকে নিত্য স্মরণ করলে মহাপাপগুলি দূরীভূত হয়।[18]
রক্ষণশীল হিন্দুরা দৈনিক পূজার সময় "পঞ্চকন্যা"কে স্মরণ করেন। যদিও তাঁদের কেউই সাধারণ দৃষ্টিতে আদর্শ নারী ছিলেন না।[19][20] মন্দোদরী, অহল্যা ও তারা রামায়ণের চরিত্র। অন্যদিকে দ্রৌপদী ও কুন্তী মহাভারত-এর চরিত্র।[12] পঞ্চভূতের মধ্যে মন্দোদরী জলের প্রতীক। তাঁর "উপরিভাগ অশান্ত ও অন্তঃস্থল ছিল আধ্যাত্মিক গভীরতায় পূর্ণ"।[1] লেখক ধনলক্ষ্মী আয়ার বলেছেন:[1]
তাঁর কাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কয়েকজনের আচরণের ভিত্তিতে কোনো গোষ্ঠীর বিশ্বজনীন খলতা মহৎকে মেঘাচ্ছন্ন করতে পারে না। মন্দোদরী এই জাতীয় ব্যক্তির উদাহরণ। তিনি ছিলেন সাদাসিধা। আনুগত্যের প্রশ্নে তাঁর দৃঢ়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কামনাবাসনায় আচ্ছন্ন এক যুগে জ্ঞানের আলোক তাঁকে শক্ত বাস্তবতাবোধ প্রদান করেছিল। যখন অযৌক্তিতা মুখ্য হয়ে ওঠে, তখন তিনি মনের মধ্যে যুক্তি-জাগরণের যন্ত্র হয়ে ওঠেন। তাঁর মতামত বারবার প্রত্যাখ্যাত হলেও তিনি তাঁর পন্থা ত্যাগ করেননি। তাঁর কাছে ধর্মের পথ ছিল অন্তর্মুখী পথ। বাইরে তিনি ছিলেন এক কর্তব্যপরায়ণ স্ত্রী। মন্দোদরী ভাবতেন যে, স্বামীর কাজ সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেই নৈতিকতার ক্ষেত্রে স্বামীর প্রতি তাঁর কর্তব্য সারা হয়ে যায়। তিনি স্বামীকে জোর করে বাধা দেননি। জোর করে বাধা দেওয়াকে তিনি কর্তব্যও মনে করেননি।
রামায়ণে মন্দোদরীর ভূমিকা সংক্ষিপ্ত। তাকে এক ধর্মপ্রাণা ও নীতিপরায়ণা রাজমহিষীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।[1][4] প্রভাতী মুখোপাধ্যায়ের মতে, পঞ্চকন্যার অন্যান্যদের তুলনায় মন্দোদরীর জীবন "কম বর্ণময় ও কম ঘটনাবহুল"। তিনি আরও বলেছেন, "মন্দোদরী বিশেষ গুরুত্ব পাননি। তাঁর ছবিটিতে বস্তুগত অভাব বোধ হয় এবং তা শীঘ্রই ক্ষীণ হয়ে আসে।"[4] যদিও, স্বামীর প্রতি তার ভালবাসা ও আনুগত্য বিশেষ গুরুত্বের দাবি রেখেছে।[20] পঞ্চকন্যা: উইমেন অফ সাবস্ট্যান্স গ্রন্থের রচয়িতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, "বাল্মীকি তাঁর (মন্দোদরী) সম্পর্কে বিশেষ কিছু লেখেননি। শুধু এটুকুই উল্লেখ করার মতো যে তিনি সীতাকে ফিরিয়ে দিতে বলেছিলেন এবং সীতাকে ধর্ষণ করার থেকে রাবণকে নিরস্ত করেছিলেন।"[12]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.