Loading AI tools
ভারতের ত্রয়োদশ প্রধানমন্ত্রী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মনমোহন সিংহ (গুরুমুখী: ਮਨਮੋਹਨ ਸਿੰਘ ম্যন্মোহ্যন্ সিঙ্গ্ ; জন্ম ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩২) ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রাক্তন এবং চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী। ইনিই প্রথম শিখ ধর্মাবলম্বী প্রধানমন্ত্রী। পেশায় শ্রী সিং একজন অর্থনীতিবিদ। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারতের যোজনা কমিশনের সহ অধ্যক্ষ এবং ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভারতের অর্থ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বর্তমানে চতুর্থ বারের জন্য আসাম থেকে একজন রাজ্যসভা সদস্য হিসাবেও মনোনীত হন।
উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্মত অবস্থায় আনতে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদের উইকিকরণ প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে সম্পর্কিত আন্তঃসংযোগ প্রয়োগের মাধ্যমে নিবন্ধের উন্নয়নে সহায়তা করুন। |
মনমোহন সিং ਮਨਮੋਹਨ ਸਿੰਘ | |
---|---|
১৪তম ভারতের প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২২ মে ২০০৪ – ২৬ মে ২০১৪ | |
রাষ্ট্রপতি | এ.পি.জে. আব্দুল কালাম প্রতিভা পাতিল প্রণব মুখোপাধ্যায় |
পূর্বসূরী | অটল বিহারী বাজপেয়ী |
উত্তরসূরী | নরেন্দ্র মোদী |
ভারতের বিদেশমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৬ নভেম্বর ২০০৫ – ২৪ অক্টোবর ২০০৬ | |
পূর্বসূরী | কে. নটবর সিং |
উত্তরসূরী | প্রণব মুখোপাধ্যায় |
ভারতের অর্থমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৩০ নভেম্বর ২০০৮ – ২৪ জানুয়ারি ২০০৯ | |
পূর্বসূরী | পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম |
উত্তরসূরী | প্রণব মুখোপাধ্যায় |
কাজের মেয়াদ ২১ জুন ১৯৯১ – ১৬ মে ১৯৯৬ | |
প্রধানমন্ত্রী | নরসিমা রাও |
পূর্বসূরী | মধু দণ্ডবতে |
উত্তরসূরী | যশবন্ত সিং |
ডেপুটি চেয়ারপার্সন ভারতের পরিকল্পনা কমিশন | |
কাজের মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি ১৯৮৫ – ৩১ আগস্ট ১৯৮৭ | |
প্রধানমন্ত্রী | রাজীব গান্ধী |
পূর্বসূরী | পি. ভি. নরসিংহ রাও |
উত্তরসূরী | শিব শংকর |
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পঞ্চদশ গভর্নর | |
কাজের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮২ – ১৫ জানুয়ারি ১৯৮৫ | |
পূর্বসূরী | Indraprasad Gordhanbhai Patel |
উত্তরসূরী | নরেন্দ্র মোদী |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | Gah, ব্রিটিশ ভারত | ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩২
রাজনৈতিক দল | UPA-ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
দাম্পত্য সঙ্গী | গুরুশরণ কাউর |
সন্তান | Upinder Singh Daman Singh Amrit Singh |
বাসস্থান | 7 Race Course Road, নয়া দিল্লী, ভারত |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, চণ্ডীগড় সেন্ট জনস কলেজ, কেমব্রিজ নাফিল্ড কলেজ,অক্সফোর্ড |
জীবিকা | অর্থনীতিবিদ |
ধর্ম | শিখধর্ম |
স্বাক্ষর |
শ্রী সিং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্নাতক। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভার্নর হিসাবে, ভারতীয় যোজনা কমিশনের সহ-সভাপতি হিসাবে কার্যভার পালনের পর ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও এর মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত। অর্থমন্ত্রী হিসাবে কার্যকালে ১৯৯১ সালে ভারতীয় অর্থনীতির পুনর্গঠনের ফলস্বরূপ, লাইসেন্স রাজ প্রথার অবলুপ্তির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান বিশেষভাবে প্রসংশিত হন।[1]
২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর অপ্রত্যাশিত ভাবেই শ্রী সিং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ এলায়েন্স (UPA) জোটের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে মনোনীত হন। ২২ মে ২০০৪ সালে তিনি প্রথম মনমোহন সিং মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। শ্রী সিংহের মন্ত্রিসভা প্রথম পাঁচ বছর সরকারি অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা দূরীকরণ, দরিদ্র চাষীদের ঋণ মুক্তি এবং শিল্প-মুখী অর্থনীতি ও কর নীতির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলো।
২০০৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জয়লাভের পর ২২ মে ২০০৯ শ্রী সিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন এবং তিনিই জওহরলাল নেহরুর পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পুরো পাঁচ বছর কার্যভার সম্পাদনের পর পুনরায় নির্বাচিত হন।
মনমোহন সিং পঞ্জাবের গাহ (অধুনা পাকিস্তানের চকওয়াল জেলা) তে ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক শিখ পরিবারে পিতা গুরুমুখ সিং ও মাতা অমৃত কৌর এর সন্তান রূপে জন্মগ্রহণ করেন. শৈশবেই তিনি তার মাকে হারান এবং তাঁকে মানুষ করেন তার পিতামহী যাঁর কাছে তিনি খুবই আদরের ছিলেন। তিনি খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন, যেহেতু তাঁদের গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিলনা তাই তাঁকে লন্ঠনের আলোতে লেখা পড়া শিখতে হয়েছিল.ভারত ভাগের পর তিনি অমৃতসরে চলে আসেন.শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করেছেন ও ১৯৫২ এবং ১৯৫৪ সালে চন্ডিগড়ের পঞ্জাব বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী পান. অর্থনীতিতে সন্মানিক স্নাতক ডিগ্রীর লাভের জন্য তিনি সেন্ট জন্স মহাবিদ্যালয়ের একজন সদস্য হিসাবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে যান.(অক্সব্রিজ-এর ঐতিহ্য অনুযাই একজন সন্মানিক স্নাতক ডিগ্রী ধারী পরে মাস্টার ডিগ্রী লাভের অধিকারী হন) বৈশিষ্টপূর্ণ ফলাফলের জন্য ১৯৫৫ ও ১৯৫৭ সালে তিনি রাইটস পুরস্কার অর্জন করেন.মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন মেধাবী ছাত্রবৃত্তি প্রাপকদের মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন. ন্যুফিল্ড মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে তিনি 1962 সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে DPhilডিগ্রী অর্জন করেন. তাঁর গবেষণা পত্রের বিষয় ছিল "১৯৫১ থেকে ১৯৬০ এই সময় কালে রপ্তানি বাণিজ্যে ভারতের ভূমিকা, রপ্তানি বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ ও নীতির বৈশিষ্ট সমূহ" এবং গবেষণা পত্রের পরিদর্শক ছিলেন ডক্টর আই এম ডি লিটল এই গবেষণা পত্রের ভিত্তিতেই তিনি "ইন্দিযাস এক্সপোর্ট ট্রেন্ডস এন্ড প্রসপেক্টস ফর সেল্ফ-সাস্তেন্দ গ্রোথ" নামে একটি পুস্তক রচনা করেন.[2]
১৯৯৭ সালে আলবার্তো বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আইন বিষয়ে সান্মানিক ডক্টরস উপাধি প্রদান করে. ২০০৬ সালের জুন মাসে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সন্মানিক Doctor of Civil Lawসাধারণ আইনের বিষয় ডক্টরস উপাধি প্রদান করে ও সেই বছরেই অক্টোবর মাসে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে একই উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর সম্মানার্থে সেন্ট জোনস বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর নামে, "ডক্টর মনমোহন সিং স্কলারশিপ" এই নামে একটি PhD ছাত্রবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করে।
তিনি D.Phil - এর পড়াশোনা শেষ করার পর ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত UNCTAD -এর হয়ে কাজ করেন। ৭০-এর দশকে তিনি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং ভারত সরকারের অর্থ ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবে ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হন এবং এই পদে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আসীন ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত ভারতীয় যোজনা আয়োগ সহ সভাপতি ছিলেন।
১৯৯১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, পি ভি নরসিমহা রাও শ্রী সিং কে অর্থমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করেন.সেই সময় ভারত বর্ষ এক অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন ছিল. রাও এবং সিং সেই সময় ভারতীয় অর্থনীতিকে সমাজবাদী অর্থনীতি থেকে মুক্ত পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে পরিবর্তিত করার সিদ্ধান্ত নেন. এই অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ব্যবস্থা, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যের স্থায়িত্ব ও উন্নতির পরিপন্থী, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক পুঁজি নিবেশের পথে বাধা সৃষ্টিকারী লাইসেন্স রাজ ব্যবস্থার অবলুপ্তিতে সহায়তা করে এবং সরকারী ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির ব্যক্তি মালিকানাধীনে পরিণত করার প্রক্রিয়ার শুরু হয়. এই অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ভারতের বার্ষিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কে শতকরা ৩ থেকে বাড়িয়ে শতকরা ৮-৯ তে নিয়ে যেতে বিশেষ সহায়তা করেছে. যাইহোক, এই অর্থনৈতিক পুর্ণর্গঠন স্বত্তেও অন্যান্য সরকারি ক্ষেত্র গুলিতে অসফলতার কারণে ১৯৯৬ এ রাও সরকার নির্বাচনে পরাজিত হয়।
প্রাথমিক ভাবে শ্রী সিং ১৯৯১[3] সালে সংসদের রাজ্য সভায় মনোনীত হন এবং পরে ২০০১ ও ২০০৭ সালে আবার পুনর্নির্বাচিত হন।১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সালে পর্যন্ত যখন ভারতীয় জনতা দলের সরকার ছিল তখন শ্রী সিং রাজ্য সভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন ১৯৯৮ সালে তিনি লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দিল্লী আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দিতা করেন কিন্তু তাতে জয়লাভ করতে পারেননি।
২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস লোক সভায় সর্বাপেক্ষা অধিক আসনে জয়লাভ করে একমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল রূপে প্রতীয়মান হয়ে প্রতিদ্বন্দিরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক জোট(NDA)কে হতবাক করে দেয়। এক বিস্ময়কর পদক্ষেপের মাধ্যমে ঐক্যবধ্য প্রগতিশীল জোট (UPA)এর সভানেত্রী, শ্রীমতি সনিয়া গাঁধী শ্রী মনমোহন সিং কে একজন প্রয়োগবিদ অ্যাখ্যা দেন ও ইউ পি এ এর তরফে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী রূপে ঘোষণা করেন।যদিও তিনি কখনো লোক সভা নির্বাচনে জয়লাভ করেননি, তবুও তাঁর অবিতর্কিত সুনাম এবং শ্রীমতী সনিয়া গাঁধীর মনোনয়ন তাঁকে UPA জোটের এবং বাম জোটের সমর্থন লাভে সাহায্য করেছে.ভারত বর্ষের মতো একটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রধান দেশে, তিনি ২২ মে ২০০৪ তারিখে প্রথম অহিন্দু ও শিখ ধর্মাবলম্বী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।
শ্রী সিংএর কার্যকালে তাঁর মন্ত্রিসভা দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট মোচন, দরিদ্র চাষীদের ঋণ মকুব, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ও শিল্পমুখী অর্থনীতি এবং কর ব্যবস্থার দিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব আরোপ করে যার ফলে ২০০২ সালের পর দেশ এক বিশেষ অর্থনৈতিক বিস্তৃতির পথে উপস্থাপিত হয়।যাইহোক, দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজে সঠিক গতি আনয়নে ব্যর্থতার জন্য তাঁর সরকার কে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে.[4]
মনমোহন সিংের সরকার, নরসিমহা রাও এর কালে গৃহীত বাস্তব ধর্মী বিদেশ নীতি, যা ভারতীয় জনতা পার্টি এর অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার দ্বারা অনুসৃত হয়েছে, তাই বজায় রেখেছে. প্রধানমন্ত্রী তার পূর্বসুরী, অটল বিহারী বাজপেয়ী-এর গৃহীত পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ার নীতিকেই বজায় রেখেছেন. দুদেশেরই উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বিনিময় সফর তার কার্যকালের বৈশিষ্ট, যা কাশ্মির রাজ্যে নাশকতামূলক কার্যকলাপের হ্রাস ও উন্নতিতে সহায়ক হয়েছে. তার কার্জকালেই গণতান্ত্রিক চিনের সঙ্গে সীমা সমস্যার সমাধানের প্রচেষ্টা করা হয়েছে.2006 সালের নভেম্বর মাসে চিনের রাষ্ট্রপতি, হু জিনতাও ভারত পরিদর্শন করেন ও তার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রী সিং 2008 এর জানুয়ারি তে চীন পরিদর্শন করেন. ভারত-চীন পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতির এক বিশেষ নিদর্শন হলো প্রায় ৪ দশক বন্ধ থাকার পর নাথুলা পাসের পুনর্ব্যবহার. 2007 সালে চীন গনত্রন্ত্রই ছিল ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের সর্বাপেক্ষা বৃহত অংশীদার, যার ফলস্বরূপ 2007 সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের আর্থিক মূল্য 60 কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে. যাইহোক, এক ক্রমব্রধমান বাণিজ্যিক অসাম্যও বিদ্যমান. আফগানিস্থানের কাছে বৃহত্তম সহায়ক হিসাবে ভারতের আফগানিস্থানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি সাধিত হয়েছে.[5] 2008 সালে আফগানিস্থানের রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাইয়ের দিল্লী পরিদর্শন কালে মনমোহন সিং আফগানিস্থানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিসেবা, পরিকাঠামো ও সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সহায়তা বৃদ্ধি করেন.
সরে সিংের সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার প্রতি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভারত-মার্কিন অসামরিক পারমাণবিক চুক্তির বিষয় প্ররম্ভিক আলোচনার জন্য তিনি 2005 সালের জুলাই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন. এর পর 2006 মার্চে জর্জ ডব্লু বুশের সফল ভারত পরিদর্শন যখন আণবিক চুক্তির ঘোষণা, যার ফলে ভারত মার্কিন আণবিক জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পাবে এবংIAEA এও অসামরিক আণবিক চুল্লি গুলি পরিদর্শনের অনুমতি পাবে. দু বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচনার ও IAEA, নিউক্লিয়ার সাপলায়ার্স গ্রুপ এবং মার্কিন কংগ্রেস এর অনুমোদনের পর ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে 2008 এর 10 অক্টোবর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়.[6]
শ্রী সিংের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কার্যকালে, জাপান ও অন্যান্য ইউরোপীয় সংযুক্ত দেশগুলি যেমন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি প্রবৃতির সঙ্গে ভারত বর্ষের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে. ইরানের সঙ্গে সম্পর্কও অব্যাহত রয়েছে এবং ইরান-পাকিস্তান-ভারত গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে আলোচনা চলছে। 2006 এপ্রিলে নতুন দিল্লিতে ভারত-আফ্রিকা শীর্ষসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে 15 টি আফ্রিকান দেশের নেতারা অংশগ্রহণ করেন। অন্যান্য উন্নতিশীল দেশগুলির, বিশেষত ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি সাধন হয়েছে.শ্রী সিং 2003 সালে প্রতিষ্ঠিত "ব্রাসিলিয়া দিক্লারেশন" এর অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছেন এবং IBSA ডায়ালগ ফোরাম গঠিত হয়েছে.[7]
মনমোহন সিংের সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধন আরও বিস্তৃত করতে বিশেষ ভাবে আগ্রহী.2003 থেকে দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক[8] পুঁজি নিবেশ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সামরিক অন্গ্শিদারিতে ইস্রায়েল রাশিয়ার প্রতদ্বন্দী.[9] যদিও কিছু কুটনৈতিক বিষয়ের ওপর, বিশেষত যুদ্ধার্স্ত্রের মূল্য বৃদ্ধি ও তার ভারতে[10] সরবরাহ বিহ্সয় প্রভৃতি নিয়ে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে, তবু দুদেশের সম্পর্ক দৃঢ়ই আছে এবং ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সামরিক, পারমবিক শক্তি ও মহাকাশ অভিযান প্রবৃতি বিষয় বিভিন্ন চুক্তিও স্বাক্ষরিত হচ্ছে.[11]
ড:সিং ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম দুজনেই একটি সময়ের অংশীদার যখন ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ছিল 8-9 শতাংশ.সিং বিশেষ ভাবে বাজেট ঘাটির ওপর নজর দিয়েছেন.2007 সালে ভারতীয় অর্থনীতি একটি ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি হিসাবে পরিগণিত হয়. 2007 সালে ভারতের GDP বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল 9 যা ছিল তৎকালীন সর্বোচ্চ হার এবং পৃথিবীতে দ্বিতীয় দ্রুত উন্নতিশীল দেশ বলেও পরচিতি লাভ করেছিল.[12][13] প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ড:সিং, তিনি এবং পি ভি নরসিমহা রাও যে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজ 1991 সালে শুরু করেছিলেন তা অব্যাহত রাখেন.শ্রী বাজপেইয়ের সরকার যে 'সুবর্ণ চতুর্ভুজ' এবং হাই-ওয়ে আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করেছিলেন, শ্রী সিংের সরকার তা অব্যাহত রেখেছেন. শ্রী সিং দেশের ব্যাঙ্কিং, আর্থিক ব্যবস্থার এবং সরকারী ক্ষেত্রের সংস্থাগুলির উন্নয়ন মূলক পুনর্গঠনের জন্যও কাজ করছেন.অর্থ মন্ত্রক চাষীদের ঋণ মুকুবের ব্যাপারেও কাজ করছেন. এবং শিল্পমুখী নীতি নির্ধারণের জন্যও কাজ করছেন.তার কার্যকালে আর্থিক অপর্যাপ্ততা শতকরা 4.5 থেকে শতকরা 3.1 তে নেমে এসেছে. সিংের সরকার জটিল বিক্রয় করের পরিবর্ত হিসাবে VAT কর ব্যবস্থার প্রচলন করেন.2007 সালে ও 2008 এর গড়ার দিকে মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা বিশ্বব্যাপী এক বিশাল আকার ধারণ করে.[14] ডঃ সিংহের সরকার ভারতীয় রিসার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে সম-তালে কাজ করেন.নভেম্বর 2008 এ পুনরায় একক সংখ্যায় পর্যবসিত হওয়ার আগে এটি জুন-নভেম্বর 2008 এ দুই-সংখ্যায় পৌঁছেছিলো.
2005 সালে প্রধানমন্ত্রী সিং এবং তার সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য উদ্যোগ শুরু করেন যার ফলে লক্ষ্যাধিক জন-স্বাস্থ্য কর্মীকে কাজে লাগানো হয়.'টাইম' পত্রিকায়- প্রখ্যাত মার্কিন অর্থনীতিবিদ, জেফ্রি সাচস এর দ্বারা-এই প্রবন্ধের গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়েছে.
ড : সিং ঘোষণা করেন যে অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, গুজরাত, ওড়িশা, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ ও হিমাচল প্রদেশে আরও আট টি ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ্যা সংস্থা চালু করা হবে.সিং সরকার তাঁদের পূর্বসুরী, শ্রী বাজপেয়ীর প্রচলিত সর্ব শিক্ষা অভিযান কে চালু রেখেছেন. অশিক্ষা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা সারা ভারত ব্যাপী বিশেষত গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলিতে বিদ্যালয় স্থাপন ও দ্বিপ্রহরিক ভজন ব্যবস্থার প্রচলন ও উন্নয়নের প্রচেষ্টা করেছে. বিহারের প্রাচীনকালের নালন্দা বিশ্যাবিদ্যালায় কে আবার চালু করা হবে.
নাশকতামূলক নকশাল কার্য-কলাপ দ্বারা পশ্চিম ও মধ্য ভারতের গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলিতে ভীতিপ্রদ অবস্থার সৃষ্টি, POTA আইনের পুনর্প্রবর্তন এবং বিভিন্ন স্থানে যেমন, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, আমেদাবাদ, দিল্লি ও জয়পুরে বোমা বিস্ফোরণ প্রবৃতি দমনে ব্যর্থতার জন্য, ড: সিংের সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি দ্বারা সমালোচিত হয়েছেন. যাইহোক, সিং সরকার মৌলবাদী নাসকতাবাদী দল, স্টুডেনটস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া (SIMI)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছেন. সিং সরকারের কার্যকালে কাশ্মীরের নাশকতামূলক কার্য-কলাপ উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে.
তার কার্যকালে সংসদে ২০০৫ সালে গুরুত্বপূর্ণ NREGA আইন ও RTI আইন গৃহীত হয়. বিভিন্ন ডিগ্রীর ক্ষেত্রে NREGA -এর সফল কার্যকারিতা এবং দেশ থেকে অশুদ্ধিতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে RTI -এর গুরুত্ব প্রমাণিত.
একজন মানুষ, যিনি যে রাজ্যে বসবাস করেননা সেই রাজ্য থেকে রাজ্য সাভার সসদস্যও হতে পারেন না, এই যুক্তিতে কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল সিংের লোক সভার সদস্যতা নিয়ে তার সমালোচনা করেছেন কারণ তিনি অসম থেকে মনোনীত রাজ্য সভা সদস্য.[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বিরোধী দল, ভারতীয় জনতা দল (BJP)-এর প্রতিপত্তিশালী সদস্য লাল কৃষ্ণ আদবানি, মনমোহন সিংকে "সর্বকালের দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী" রূপে ব্যাখ্যা করেন.[15] বিরোধী দলগুলি, বিশেষত BJP, এই বলে দোষারোপ করে যে ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ এলায়েন্সের সভানেত্রী, সনিয়া গাঁধী সরকারি কার্যকলাপে প্রধানমন্ত্রীর থেকে অধিক ক্ষমতা ভোগ করেন. মনমোহন সিং ও সরকারি আমলারা এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করেন.[16][17]
ড:মনমোহন সিং এমন একজন প্রধানমন্ত্রী যিনি কখনো লোক সভা নির্বাচনে জয়লাভ করেননি. 22 জুলাই 2008 এযখন কমিউনিশ্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্ক্সবআদী) নেতৃত্বাধীন বাম জোট, সরকারের ইন্দো-মার্কিন পারমাণবিক চুক্তির দ্বারা IAEA -এর দিকে অগ্রসর হবার প্রতিবাদে সরকার থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে তখন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) লোক সভায় প্রথম বারের জন্যে অনাস্থা প্রস্তাবের সম্মুখীন হয়. রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার আহভান জানান.দুদিনের তর্ক-বির্তর্কের পর 275-256 আস্থা ভোটে UPA জয়লাভ করে. সরকারের কিছু জোট সঙ্গীর বিরুদ্ধে কিছু বিরোধী লোক সভা সদস্য কে ঘুষ প্রদানের দ্বারা অনাস্থা ভোট না দিতে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বিরোধী দল BJP-র অভিযোগের কারণে আস্থা ভোট প্রদান প্রায় এক ঘণ্টার জন্য ব্যাহত হয়.
ভারতীয় লোক সাভার ১৫ তম সাধারণ নির্বাচন 16 এপ্রিল 2009 থেকে 13 মে 2009 মধ্যে পাঁচটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়. 16 মে 2009 নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়.[18] পূর্ণ পাঁচ বছর কার্যকাল অতিক্রান্তের পর 1962 সালে জওহরলাল নেহরুর প্রধানমন্ত্রী রূপে পুনর্নির্বাচিত হবার পর, সিংই প্রথম পুনর্নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী যাঁর নেতৃত্বে, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, তামিল নাডু, কেরালা, পশ্চিম বঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশে শক্তি সঞ্চয়ের পর সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) সরকার গঠন করে। [19] জোট সঙ্গীদের সহায়তায় লোক সভার 543 জন সদস্যের মধ্যে 322 জনের সমর্থন লাভে কংগ্রেস তার সন্তোষজনক সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণে সমর্থ হয়.বিরোধীরা তাদের পরাজয় স্বীকার করে নেয় এবং জানায় যে সিং যে "দুর্বল পি এম" এই সুনির্দিষ্ট অভিযোগটি ভুল ছিলো বরং এটাই সিং কে জয়লাভে সাহায্য করেছে.এটা বিজেপিতে অন্তর্কলহের সৃষ্টি করে এবং বহু বিশিষ্ট BJP নেতা শ্রী আদভানির সমালোচনা করেন.[20] [21]
শ্রী সিং গুর্শরণ কৌর কে 1958 সালে বিবাহ করেন এবং তাঁদের তিনটি কন্যা সন্তান আছে .[22] তার জ্যেষ্ঠ কন্ন্যা, উপিন্দর সিং দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস কলেজের|সেন্ট স্টিফেনস কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক এবং ছটি পুস্তকের রচয়িতা যার মধ্যে "এন্সেন্ট দিল্লি"(1999) এবং "এ হিস্ট্রি অফ এন্সেন্ট এন্ড আর্লি মেদিঅভাল ইন্ডিয়া" (২০০৮).[23] তার দ্বিতীয়া কন্ন্যা দমন সিং সেন্ট স্টিফেনস কলেজ, নতুন দিল্লির একজন স্নাতক ও ইন্স্তিতিউত অফ রুরাল ম্যানেজমেন্ট}, আনন্দ, গুজরাত এবং "দ্য লাস্ট ফ্রন্টিয়ার":পিপল এন্ড ফরেস্তস ইন মিজোরাম" এর রচয়িতা ও "নাইন বাই নাইন" নামে একটি নভেলেরও rochoitaa.[24] সিংহের কনিথ্য়া কন্ন্যা অমৃতা সিংহ আমেরিকান সিভিল লিবারেতিস ইউনিয়ন এর একজন কর্মরত আইনজীবী [25] and is married to বার্টন বীবে , যিনি একজন বুদ্ধিগত সম্পত্তি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ সহ অধ্যাপক. সিং হৃদযন্ত্র ঘটিত অসুস্থতায় অসুস্থ এবং তার 1990 সালে করনারী বাইপাস অস্ত্রপ্রচার ও 2004 সালে অন্জিযপ্লাস্তি অস্ত্রপ্রচার হয়.24 জানুয়ারি 2009 তে ইন্ডিয়ান ইন্স্তীতুত অফ মেডিকাল সাইন্সেস (AIIMS)- এ তার দ্বিতীয় বারের জন্য বাইপাস অস্ত্রপ্রচার করা হয় এবং তখন ডাক্তারা তার হৃদযন্ত্রের পূর্বেকার কয়েকটি জোরের রদবদল করেন.AIIMS এর ডাক্তারদের সহায়তায় শল্য চিকিৎসক রমাকান্ত পান্ডা পুনর্বার তার বাইপাস অস্ত্রপ্রচার করেন।[26] ২০০৯ সালের ৪ মার্চ তিনি তার কাজে পুররায় যোগদান করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.