ভারতের রাষ্ট্রপতি

ভারতের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ভারতের রাষ্ট্রপতি

ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান[] রাষ্ট্রপতি ভারতের আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগের সকল শাখার আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং ভারতের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। ভারতের রাষ্ট্রপতির দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ স্থগিত, হ্রাস বা দণ্ডিতকে ক্ষমা করার অধিকার রয়েছে।[]

দ্রুত তথ্য ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, সম্বোধনরীতি ...
ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি
Thumb
Thumb
ভারতের জাতীয় পতাকা
Thumb
দায়িত্ব
দ্রৌপদী মুর্মু

২৫ জুলাই ২০২২ থেকে
সম্বোধনরীতিমাননীয় রাষ্ট্রপতি/ রাষ্ট্রপতি মহোদয়
(ভারতে)
মান্যবর/Her Excellency
(বহির্ভারতে)[]
বাসভবনরাষ্ট্রপতি ভবন
মেয়াদকালপাঁচ বছর, পুনর্নির্বাচনযোগ্য
সর্বপ্রথমড. রাজেন্দ্র প্রসাদ
২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০
গঠনভারতীয় সংবিধান
২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০
বেতন৫,০০,০০০ ভারতীয় টাকা (৭,০০০ মার্কিন ডলার) প্রতিমাসে[]
ওয়েবসাইটভারতে রাষ্ট্রপতি
বন্ধ

রাষ্ট্রপতি এক নির্বাচকমণ্ডলীর দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয় ভারতীয় সংসদ (লোকসভারাজ্যসভা) এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার সদস্যদের নিয়ে। রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর।[] অতীতে দেখা গিয়েছে যে, শাসক দলের (লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল) মনোনীত প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি পুনরায় নির্বাচনে লড়তে পারেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যাতে নির্বাচকমণ্ডলীতে প্রতি রাজ্যের জনসংখ্যা ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধায়কদের প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা এবং রাজ্য বিধানসভার সদস্যসংখ্যার সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্যসংখ্যার সামঞ্জস্যবিধান করা যায়। কোনো প্রার্থী এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট পেতে ব্যর্থ হলে, একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পরাজয়শীল প্রার্থীদের ভোট অন্য প্রার্থীতে হস্তান্তরিত হতে থাকে (এবং সেই সঙ্গে সেই প্রার্থী নির্বাচন থেকে বাদ পড়তে থাকেন), যতক্ষণ না একজন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেন। ভারতের উপরাষ্ট্রপতি অবশ্য লোকসভা ও রাজ্যসভার সকল সদস্যের (নির্বাচিত ও মনোনীত) প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন।[]

যদিও ভারতীয় সংবিধানের ৫৩ অনুচ্ছেদে[] বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি তাঁর ক্ষমতা সরাসরি প্রয়োগ করতে পারেন,[] তবুও, কয়েকটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্ট্রপতির সব ক্ষমতাই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীন। ভারতের রাষ্ট্রপতি নতুন দিল্লিতে একটি এস্টেটে বাস করেন। এই এস্টেটটি রাষ্ট্রপতি ভবন নামে পরিচিত।[] রাষ্ট্রপতির অবসরযাপনের জন্য ছারাব্রা, শিমলাহায়দ্রাবাদে তিনটি রিট্রিট বিল্ডিং রয়েছে। হায়দ্রাবাদের রিট্রিট ভবনটির নাম রাষ্ট্রপতি নিলয়ম।

২৫ জুলাই, ২০০৭ প্রতিভা দেবীসিংহ পাতিল ভারতের দ্বাদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। তিনিই দেশের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি।[১০]

১৯ জুলাই, ২০১২ ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের ফল ২২ জুলাই ঘোষিত হয়েছে। প্রণব মুখোপাধ্যায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। ২৫ জুলাই বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল তার কার্যভার ত্যাগ করেছেন। একই সাথে প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন।[১১]

উৎস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এর অধিভুক্ত একটি অধিরাজ্য বা ডোমিনিয়নে পরিণত হয়। যদিও ভারতের ডোমিনিয়ন মর্যাদা ছিল সাময়িক। কারণ, ভারতের রাজনৈতিক নেতারা আগেকার ঔপনিবেশিক রাজশক্তিকে চিরকালের জন্য ভারতের সর্বোচ্চ পদে দেখতে চাননি।

ভারতে ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রতিনিধি ছিলেন গভর্নর-জেনারেল। এই পদে প্রথম নিযুক্ত হ্ন অ্যাডমিরাল অফ দ্য ফ্লিট লুই মাউন্টব্যাটেন। তিনিই ছিলেন ভারতের শেষ ব্রিটিশ ভাইসরয়। কিছুদিন পরে মাউন্টব্যাটেনের স্থলাভিষিক্ত হন চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী। তিনিই একমাত্র ভারতীয় যিনি ভারতে ব্রিটিশ গভর্নর-জেনারেলের পদ অলংকৃত করেছিলেন। ইতোমধ্যে স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার জন্য ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের নেতৃত্বে গঠিত হয় ভারতীয় গণপরিষদভারতের সংবিধান সাক্ষরিত হয় ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর। এই সংবিধান কার্যকর হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি।[১২]

নতুন সংবিধানে ভারতকে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।[১৩] এই সংবিধান বলে, গভর্নর-জেনারেলের পদ ও রাজার ক্ষমতা অবলুপ্ত করা হয়। পরিবর্তে একটি নতুন রাষ্ট্রপতির পদ চালু করা হয়। ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন।[১৪] ভারতে ব্রিটিশরাজের কর্তৃত্বের অবসান ঘটলেও, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চেয়েছিলেন যে, ভারত কমনওয়েলথ-এর সদস্যপদ বজায় রাখুক।[১৫] এর আগে কোনো দেশ প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হলে, তা আর কমনওয়েলথ-এর সদস্য থাকত না। কিন্তু অন্যান্য কমনওয়েলথ-সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর ব্রিটেনের রাজা (বা রানি) কমনওয়েলথ-এর আনুষ্ঠানিক প্রধানে পরিণত হয়েছিলেন। তাই ভারতীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় রাজার ক্ষমতা বিলুপ্ত হলেও, ভারতের কমনওয়েলথ-সদস্যপদ বজায় রাখতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ভারতের পরেও অনেক দেশ যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে কমনওয়েলথ-এর সদস্য থেকে যায়।[১৬]

ক্ষমতা ও কর্তব্য

সারাংশ
প্রসঙ্গ

সংসদীয়

রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষের (লোকসভারাজ্যসভা) অধিবেশন আহ্বান ও প্রত্যাহার করেন। তিনি লোকসভা ভেঙে দিতে পারেন।[১৭] তবে এই ক্ষমতা তার স্বেচ্ছাধীন নয়, নিছকই নিয়মতান্ত্রিক। এই ব্যাপারে তাকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ মেনে চলতে হয়।

প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণটি দেন রাষ্ট্রপতি। বছরের প্রথম সংসদীয় অধিবেশনের প্রথম উদ্বোধনী ভাষণটিও তিনিই দেন। তার এই ভাষণটি আসলে নতুন সরকারি নীতির রূপরেখা মাত্র।[১৮]

সংসদে পাস হওয়া প্রতিটি বিল আইনে পরিণত হয় রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে। রাষ্ট্রপতি চাইলে কোনো বিল (অর্থবিল বা সংবিধান সংশোধন-মূলক বিল বাদে) পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন। পুনর্বিবেচনার পর সেই বিলটি সংশোধিত বা অসংশোধিত যে আকারেই রাষ্ট্রপতির কাছে ফিরুক না কেন, তিনি তাতে সাক্ষর করতে বাধ্য থাকেন। তবে তিনি পকেট ভেটো প্রয়োগ করে বিলটিকে আটকে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিলটি আর সংসদেও ফিরে যায় না, রাষ্ট্রপতি-কর্তৃক স্বাক্ষরিতও হয় না।Gupta, V. P. (২৬ আগস্ট ২০০২)। "The President's role"Education Collections। ১৬ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১২</ref>[১৯]

সংসদের কোনো কক্ষের অধিবেশনা না থাকলে বা সরকার জরুরি মনে করলে, রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করে অন্তর্বর্তীকালীন আইন চালু করতে পারেন। তবে এই অন্তর্বর্তীকালীন আইনকে পরে সংসদে পেশ করে আইন মোতাবেক পাস করাতে হয়। সংসদে পাস না হলে সংসদের অধিবেশন বসার ছয় সপ্তাহ পরে কোনো অর্ডিন্যান্সের বৈধতা থাকে না।[২০]

কার্যনির্বাহী ক্ষমতা

ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকে রাষ্ট্রপতির হাতে।[২১] তিনি লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলের (বা জোটের) নেতাকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। তারপর প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে তিনি মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে তাদের পোর্টফোলিও বণ্টন করে দেন।[২২]

মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা রাষ্ট্রপতির 'সন্তোষে'র ভিত্তিতে তাদের পদে আসীন থাকেন। বাস্তব ক্ষেত্রে, অবশ্য মন্ত্রীপরিষদকে লোকসভার সমর্থনের ভিত্তিতে পদে থাকতে হয়। যদি রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছামতো কোনো মন্ত্রীকে পদচ্যূত করেন, তবে সাংবিধানিক সংকট দেখা যায়। তাই লোকসভার সমর্থন থাকলে মন্ত্রীপরিষদকে ক্ষমতাচ্যূত করা যায় না।

রাষ্ট্রপতি একাধিক পদাধিকারীকে নিয়োগ করেন। এঁদের মধ্যে আছেন:[২২]

  • রাজ্যের রাজ্যপাল;
  • সুপ্রিম কোর্টহাইকোর্টগুলির প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতি;
  • ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল;
  • কম্পট্রোলার ও অডিটার জেনারেল;
  • প্রধান ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার;
  • ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ;
  • অন্যান্য দেশে নিযুক্ত অ্যাম্বাস্যাডার ও হাই কমিশনার;[২৩][২৪]

রাষ্ট্রপতি অন্যান্য রাষ্ট্রের অ্যাম্বাস্যাডার বা হাই কমিশনারদের কাছ থেকে আস্থাপত্র বা ক্রেডেন্সিয়াল পেয়ে থাকেন।[২৫]

রাষ্ট্রপতি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বা কম্যান্ডার-ইন-চিফ।[২৬]

রাষ্ট্রপতি দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডহ্রাস (বিশেষত মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে) করতে পারেন।[২৭]

অপরাধীকে ক্ষমা করা সংক্রান্ত অধিকারটি প্রয়োগ করতে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হয় না বা লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠের মত মানতে হয় না। তবে অন্যান্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাকে প্রধানমন্ত্রী ও ক্যাবিনেটের পরামর্শ মানতে হয়।[২৮][২৯]

অর্থনৈতিক ক্ষমতা

সকল অর্থবিল একমাত্র রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমেই সংসদে পেশ করা যেতে পারে। তিনি বার্ষিক বাজেট ও পরিপূরক বাজেট অধিবেশনের আগে সংসদে ভাষণ দেন। তার অনুমোদন ছাড়া সংসদে কোনো অর্থবিল আনা যায় না। রাষ্ট্রপতি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটি অর্থ কমিশন গঠন করেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে তবেই নৈমিত্তিক তহবিল বা কন্টিজেন্সি ফান্ড থেকে টাকা তোলা যায়।[৩০][৩১]

বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা

রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে এবং প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে অন্যান্য বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন। সংসদের দুই কক্ষে কোনো বিচারপতির অপসারণের পক্ষে প্রস্তাব দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটে পাস হলে, তবেই রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে অপসারিত করতে পারেন।[৩২]

রাষ্ট্রপতি কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণ মকুব করতে পারেন, সাময়িকভাবে হ্রাস করতে পারেন, বিশেষ ক্ষেত্রে মুলতুবি করতে পারেন, বা লঘু করতে পারেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে তিনি দণ্ডের চরিত্র না বদলে একটির বদলে অপর দণ্ডের ব্যবস্থা করতে পারেন।[৩৩]

রাষ্ট্রপতি কয়েকটি বিচারবিভাগীয় সুবিধা ভোগ করেন:

  • কার্যকালে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা জারি করা যায় না।[৩৪]
  • তিনি তাঁর কাজের জন্য আইনত আদালতে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন না।[৩৫]

কূটনৈতিক ক্ষমতা

সব আন্তর্জাতিক সনদ ও চুক্তি রাষ্ট্রপতির নামে স্বাক্ষরিত হয়।[৩৬] যদিও সনদ বা চুক্তির ব্যাপারে যাবতীয় আলোচনা চালান প্রধানমন্ত্রী ও তার ক্যাবিনেট (বিশেষত বিদেশমন্ত্রী)। তাছাড়া এই সব সনদ ও চুক্তিকে সংসদে পাস করাতে হয়। সেই সব আন্তর্জাতিক ফোরাম ও অন্যান্য বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন, যেগুলি মূলত নামসর্বস্ব। রাষ্ট্রপতি ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস-এ কর্মরত ও অন্যান্য কূটনীতিকদের সঙ্গে মতামত আদানপ্রদান করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি দেশের প্রথম নাগরিক।[২৩]

সামরিক ক্ষমতা

রাষ্ট্রপতি ভারতের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি যুদ্ধঘোষণা ও শান্তিঘোষণা করতে পারেন।[২৩] তবে সামরিক বাহিনীর প্রধানগণ, সামরিক সচিব ও রাষ্ট্রপতির সামরিক উপসচিবের মধ্যে আলোচনাক্রমে সংসদের অনুমোদনক্রমেই তিনি তা করতে পারেন। সব সামরিক চুক্তি তার নামে সাক্ষরিত হয়।[]

ক্ষমা-সংক্রান্ত ক্ষমতা

ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭২ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে অপরাধীকে ক্ষমা করার অধিকারী:[২৩]

  • কেন্দ্রীয় আইনে অপরাধী সাব্যস্তদের ক্ষেত্রে
  • সামরিক আদালতে অপরাধী সাব্যস্তদের ক্ষেত্রে
  • মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে।[]

জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা

রাষ্ট্রপতি তিন ধরনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন: জাতীয়, রাজ্য ও অর্থনৈতিক।[৩৭][৩৮]

জাতীয় জরুরি অবস্থা

যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা সশস্ত্র বিদ্রোহের ক্ষেত্রে সমগ্র ভারতে বা ভারতের অংশবিশেষে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যায়। এই রকম জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়েছিল ১৯৬২ (ভারত-চীন যুদ্ধ), ১৯৭১ (ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ),[৩৯] ১৯৭৫-৭৭ ("আভ্যন্তরিন গোলমাল"-এর প্রেক্ষিতে ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক ঘোষিত) সালে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫২ অনুসারে, কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের লিখিত অনুরোধেই রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন। তবে এই ঘোষণা এক মাসের মধ্যে সংসদে পাস করাতে হয়। ছয় মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যায়। তবে সংসদের অনুমোদনক্রমে তা ছয় মাস ছয় মাস করে মোট ৩ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়।[৪০]

এই জাতীয় জরুরি অবস্থা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রদ করা যায়।[৪১] স্বাধীনতার অধিকারের অন্তর্গত দশটি অধিকারও স্বাভাবিকভাবেই রদ হয়। যদিও জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করা যায় না (অনুচ্ছেদ ২১)।[৪২]

রাষ্ট্রপতি রাজ্যতালিকার ৬৬টি বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারেন।[৪৩] তাছাড়া, অর্থবিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।[৪৪] জরুরি অবস্থার সময় লোকসভার মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। তবে তা এমনভাবে বাড়ানো যায় না, যাতে তা জরুরি অবস্থা সমাপ্তির পর ৬ মাসের বেশি কার্যকর থাকে।[৪৫]

রাষ্ট্রপতি শাসন

কোনো রাজ্যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে সেই রাজ্যে রাজ্যস্তরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। একে বলে রাষ্ট্রপতি শাসন[২৩]

রাজ্যপালের প্রতিবেদন বা অন্য কোনো সরকারি সূত্র থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে, কোনো রাজ্য সাংবিধানিক পথে রাজ্য পরিচালনায় অক্ষম হয়ে পড়েছে, তাহলে তিনি সেই রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেন। তবে এই ব্যবস্থাটিকে দুই মাসের মধ্যে সংসদের অনুমোদন নিতে হয়।

ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদের অধীনে কমপক্ষে ছয় মাস থেকে অনধিক তিন বছর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রাখা যায়। রাষ্ট্রপতি শাসনের স্বাভাবিক মেয়াদ ছয় মাস। কিন্তু এই মেয়ার ছয় মাস করে অনধিক তিন বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। তার বেশি সময় রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়ার বাড়াতে হলে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। পাঞ্জাবজম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা করা হয়েছিল।

এই ধরনের জরুরি অবস্থার সময় রাষ্ট্রপতি রাজ্যের শাসনবিভাগের যাবতীয় দায়িত্ব নেন এবং রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির হয়ে রাজ্য পরিচালনা করেন। বিধানসভা হয় ভেঙে দেওয়া হয়, নয়তো অকার্যকর থাকে। এই সময় সংসদ রাজ্য তালিকার ৬৬টি বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। [৪৬] সব ধরনের অর্থবিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।

নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে।

  1. অনুচ্ছেদ ৩৫৬  রাজ্যে যদি সাংবিধানিক শাসনকাঠামো ভেঙে পড়ে। [৪৭]
  2. অনুচ্ছেদ ৩৬৫  রাজ্য যদি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে কাজ করতে ব্যর্থ হয়।[২১][৪৮]

এই ধরনের জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে ২ মাসের মধ্যে সংসদের অনুমতি নিতে হয়। এই ধরনের জরুরি অবস্থা ৬ মাস করে বাড়াতে বাড়াতে ৩ বছর অবধি জারি রাখা যায়। যদিও দুটি কারণে এক বছরের মধ্যেই এই জরুরি অবস্থা আরও বাড়ানো যায়, যদি—

  1. দেশে বা নির্দিষ্ট রাজ্যে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি হয়।
  2. নির্বাচন কমিশন সেখানে নির্বাচন পরিচালনা করা কষ্টকর মনে করেন।

২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি ভারতে শেষবারের মতো রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় ঝাড়খণ্ড রাজ্যে।[৪৯][৫০]

অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা

রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে, ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা বিপন্ন হচ্ছে,[৫১] তবে তিনি সংবিধানের ৩৬০ অনুচ্ছেদের অধীনে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।[৫২] এই ধরনের জরুরি অবস্থাও দুই মাসের মধ্যে সংবিধান কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। ভারতে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা একবারও জারি করা হয়নি। দেশের আর্থিক অবস্থা বিপন্ন হলে ভারতের স্বর্ণ সঞ্চয় বিক্রয় করে জরুরি অবস্থা এড়ানো হয়েছে।

অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা রাষ্ট্রপতি-কর্তৃক এই ব্যবস্থা প্রত্যাহৃত না করা অবধি অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি থাকে।[৫৩]

এই সময় রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি সহ সব সরকারি আধিকারিকের বেতন কমিয়ে দিতে পারেন। রাজ্য বিধানসভার সব অর্থবিল রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে অনুমোদিত করাতে হয়। রাষ্ট্রপতিও রাজ্যগুলিকে কিছু কিছু অর্থনৈতিক নীতিনির্দেশনার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে পারেন।[৫৪]

নির্বাচন প্রক্রিয়া

যোগ্যতা

সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর যোগ্যতার উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নিচের যোগ্যতাগুলি থাকা প্রয়োজন:

  • তাকে ভারতের নাগরিক হতে হয়
  • তার বয়স ৩৫ বছর বা তার বেশি হতে হয়
  • তার লোকসভা প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন[৩৮]

ভারত সরকার বা কোনো রাজ্য সরকার বা কোনো স্থানীয় বা অন্য কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ লাভজনক পদে আসীন ব্যক্তিরা রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হতে পারেন না।

তবে নিম্নোক্ত কয়েকজন পদাধিকারী রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হতে পারেন:

  • ক্ষমতাসীন উপরাষ্ট্রপতি
  • কোনো রাজ্যের রাজ্যপাল।
  • কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী সহ) ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী[২২]

তবে এই পদাধিকারীদের কেউ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে কার্যভার গ্রহণের দিনের মধ্যেই তাদের পূর্বতন পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়।[৫৫]

১৯৫২ সালের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম নির্বাচক মণ্ডলীর ৫০ জন দ্বারা প্রস্তাবিত ও ৫০ জন দ্বারা সমর্থিত হতে হয়। তবেই তার নাম ব্যালেটে মুদ্রিত হয়।[৫৬]

ভেটো ক্ষমতা

সাংবিধানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি অনেকগুলো ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী। রাষ্ট্রপতি যে-কোন বিলে সম্মতি প্রদান বা স্বাক্ষর না-ও করতে পারেন যা অবশ্যম্ভাবী ভেটো হিসেবে পরিচিত। ভেটো প্রয়োগের ফলে তিনি বিলকে পুনরায় সংসদে ফেরত পাঠাতে পারেন। এ সীমিত আকারের ভেটোকে পাশ কাটানোর জন্যে সংসদে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে উতরানো সম্ভব। এছাড়াও রাষ্ট্রপতি অনির্দিষ্টকালের জন্যে বিলের উপর কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যা কখনো কখনো পকেট ভেটো নামে পরিচিত।[৫৭][৫৮]

ভারতের রাষ্ট্রপতি

ভারতের জীবিত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিগণ

বর্তমানে ভারতের ১জন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জীবিত রয়েছেন:

আরও দেখুন

ভারতের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.